মিথ্যা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার
“যিরূশালেমের ভাববাদিগণের মধ্যে জঘন্য ব্যাপার দেখেছি, তাহারা ব্যভিচার করে, ও মিথ্যারূপ পথে চলে . . . তারা সকলে আমার কাছে সদোমের তুল্য, এবং সেখানকার নিবাসীরা ঘমোরার সমান হইয়াছে।”—যিরমিয় ২৩:১৪, NW.
১. যারা ঐশিক শিক্ষায় লিপ্ত থাকে তারা কেন গুরু দায়িত্বভার গ্রহণ করে?
যিনি ঐশিক শিক্ষা দেন অত্যন্ত গুরু দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যাকোব ৩:১ পদ আমাদের সাবধান করে: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, অনেকে উপদেশক হইও না; তোমরা জান, অন্য অপেক্ষা আমাদের ভারী বিচার হইবে।” হ্যাঁ, সাধারণ খ্রীষ্টানদের চাইতে ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষকদের একটি গ্রহণযোগ্য জবাবদিহি করার আরও অধিক গুরু দায়িত্ব আছে। যারা মিথ্যা শিক্ষক বলে প্রমাণিত হবে তাদের জন্য এর অর্থ কী হবে? আসুন, আমরা যিরমিয়ের দিনের পরিস্থিতি লক্ষ্য করি। বর্তমানে যা ঘটছে, এটি কিভাবে তার প্রতিচ্ছবি দিয়েছিল, তা আমরা দেখব।
২, ৩. যিরূশালেমের মিথ্যা শিক্ষকদের সম্বন্ধে যিহোবা যিরমিয়ের মাধ্যমে কী বিচার ঘোষণা করেন?
২ সা.শ.পূ. ৬৪৭ সালে, রাজা যোশিয়ের রাজত্বের ত্রয়োদশ বছরে, যিরমিয়কে যিহোবার ভাববাদীরূপে নিযুক্ত করা হয়েছিল। যিহূদার বিরুদ্ধে যিহোবার একটি অভিযোগ ছিল, তাই তিনি যিরমিয়কে সেটি ঘোষণা করতে পাঠিয়েছিলেন। যিরূশালেমের মিথ্যা ভাববাদীরা বা শিক্ষকেরা, যিহোবার চোখে “জঘন্য ব্যাপার” করছিল। তাদের মন্দ কাজ এত বেড়ে গিয়েছিল যে ঈশ্বর যিরূশালেম ও যিহূদাকে সদোম ও ঘমোরার সাথে তুলনা করেছিলেন। যিরমিয় ২৩ অধ্যায় আমাদের এই সম্বন্ধে বলে। চোদ্দ পদ বলে:
৩ “যিরূশালেমের ভাববাদিগণের মধ্যে জঘন্য ব্যাপার দেখেছি; তাহারা ব্যভিচার করে, ও মিথ্যারূপ পথে চলে, এবং কদাচারীদের হস্ত এমন বলবান্ করে যে, কেহ আপন কুপথ হইতে ফেরে না; তারা সকলে আমার কাছে সদোমের তুল্য, এবং সেখানকার নিবাসীরা ঘমোরার সমান হয়েছে।”
৪. যিরূশালেমের শিক্ষকদের মন্দ নৈতিক উদাহরণ কিভাবে বর্তমান খ্রীষ্টজগতের সমতুল্য?
৪ হ্যাঁ, এই ভাববাদীরা অথবা শিক্ষকেরা নিজেরা অত্যন্ত খারাপ নৈতিক উদাহরণ স্থাপন করেছিল এবং এর ফলে তারা লোকেদেরও তাই করতে উৎসাহ দিয়েছিল। বর্তমানে, খ্রীষ্টজগতের পরিস্থিতি লক্ষ্য করুন! ঠিক যিরমিয়ের দিনের মতই নয় কি? বর্তমানে যাজকবর্গ, ব্যভিচারী ও সমকামীদের নিজেদের পদে থাকতে দেয় ও এমনকি গির্জায় পুরোহিতের কাজও করতে দেয়। গির্জায় তালিকাভুক্ত বহু সদস্যেরাও অনৈতিক হওয়াতে কোন আশ্চর্যের বিষয় আছে কি?
৫. খ্রীষ্টজগতের অনৈতিক অবস্থা কেন সদোম ও ঘমোরার থেকেও খারাপ?
৫ যিহোবা যিরূশালেমের অধিবাসীদের সদোম ও ঘমোরা নিবাসীদের সাথে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু খ্রীষ্টজগতের অনৈতিক অবস্থা সদোম ও ঘমোরার চাইতেও খারাপ। হ্যাঁ, যিহোবার চোখে তা আরও অধিক দূষণীয়। এর শিক্ষকেরা খ্রীষ্টীয় নৈতিক নিয়মগুলি অবজ্ঞা করে! আর তা নৈতিক অধঃপতনের এক পরিবেশ সৃষ্টি করে যার মধ্যে থাকে সমস্ত কিছু মন্দ কাজ করার জন্য চতুর প্রলোভন। এই নৈতিক অবস্থা এত প্রভাব বিস্তার করেছে যে বর্তমানে মন্দকাজকে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়।
“মিথ্যারূপ পথে চলে”
৬. যিরূশালেমের ভাববাদীর মন্দতা সম্বন্ধে যিরমিয় কী বলেন?
৬ এখন, লক্ষ্য করুন যে ১৪ পদ যিরূশালেম সম্বন্ধে কী বলে। তার “মিথ্যারূপ পথে চলে।” এবং ১৫ পদের শেষাংশ বলে: “পামরতা যিরূশালেমের ভাববাদিগণ হইতে উৎপন্ন হইয়া সমস্ত দেশ ব্যাপিয়াছে।” তারপর, ১৬ পদ আরও বলে: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ঐ যে ভাববাদিগণ তোমাদের কাছে ভাববাণী বলে, তাহাদের কথা শুনিও না, তাহারা তোমাদিগকে ভুলায়; তাহারা আপন আপন হৃদয়ের দর্শন বলে, সদাপ্রভুর মুখে শুনিয়া বলে না।”
৭, ৮. খ্রীষ্টজগতের যাজকবর্গেরা কেন যিরূশালেমের মিথ্যা ভাববাদীদের মত এবং গির্জাগামীদের তা কিভাবে প্রভাবিত করেছে?
৭ যিরূশালেমের মিথ্যা ভাববাদীদের মতই, খ্রীষ্টজগতের যাজকবর্গও মিথ্যারূপ পথে চলে, ধর্ম ভ্রষ্ট মতবাদ, ঈশ্বরের বাক্যে যে সকল শিক্ষা খুঁজে পাওয়া যায় না, তা ছড়ায়। এই মিথ্যা শিক্ষাগুলির কয়েকটি কী? আত্মার অমরত্ব, ত্রিত্ব, পুরগাতরী এবং মানুষকে অনন্তকাল যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য নরকাগ্নি। মানুষে যা শুনতে ভালবাসে সেগুলি প্রচার করেও তারা তাদের শ্রোতাদের কানচুলকানি দেয়। তারা বারংবার বলে যে খ্রীষ্টজগৎ কোন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে না কারণ ঈশ্বরের শান্তি তাদের মধ্যে আছে। কিন্তু যাজকবর্গেরা “আপন আপন হৃদয়ের দর্শন বলে।” এটি মিথ্যা। যারা এই মিথ্যাগুলি বিশ্বাস করে তারা আত্মিকভাবে দূষিত হয়েছে। তাদের ধ্বংসের জন্য বিপথে চালিত করা হচ্ছে!
৮ যিহোবা ২১ পদে মিথ্যা ভাববাদীদের কী বলেন তা বিবেচনা করুন: “আমি সেই ভাববাদিগণকে প্রেরণ করি নাই, তাহারা আপনারা দৌড়াইয়াছে; আমি তাহাদিগকে বলি নাই, তাহারা আপনারা ভাববাণী বলিয়াছে।” বর্তমানেও, যাজকবর্গ ঈশ্বর কর্তৃক প্রেরিত হয়নি, এমনকি তারা তাঁর সত্য সকল শিক্ষাও দেয় না। এর ফল? গির্জাগামীদের মধ্যে বাইবেল সম্বন্ধে আশ্চর্যজনক নিরক্ষরতা রয়েছে কারণ তাদের পরিচারকেরা তাদের জাগতিক দর্শনবাদ শিক্ষা দেয়।
৯, ১০. (ক) যিরূশালেমের মিথ্যা শিক্ষকেরা কী ধরনের স্বপ্ন দেখেছিল? (খ) কিভাবে খ্রীষ্টজগতের পাদ্রিরা অনুরূপে “মিথ্যা স্বপ্ন” সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছে?
৯ আরও, যাজকবর্গ বর্তমানে মিথ্যা আশার ব্যাপক প্রচার করেছে। পঁচিশ পদটি লক্ষ্য করুন: “ভাববাদীরা যাহা বলিয়াছে, তাহা আমি শুনিয়াছি, তাহারা আমার নামে মিথ্যা ভাববাণী বলে, যথা, আমি স্বপ্ন দেখিয়াছি, স্বপ্ন দেখিয়াছি।” সেগুলি কী ধরনের স্বপ্ন? বত্রিশ পদ আমাদের বলে: “সদাপ্রভু বলেন, দেখ, আমি তাহাদের বিপক্ষ, যাহারা মিথ্যা স্বপ্নের ভাববাণী বলে ও তাহার বৃত্তান্ত বলে, আপনাদের মিথ্যা কথা ও দাম্ভিকতা দ্বারা আমার প্রজাদিগকে ভ্রান্ত করে; কিন্তু আমি তাহাদিগকে পাঠাই নাই, তাহাদিগকে আজ্ঞা দিই নাই; তাহারা এই লোকদের কিছুমাত্র উপকারী হইতে পারে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন।”
১০ কী মিথ্যা স্বপ্ন বা আশা যাজকবর্গ শিখিয়েছে? কেন, শান্তি এবং সুরক্ষার জন্য বর্তমানে মানুষের একমাত্র আশা হল রাষ্ট্রসঙ্ঘ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তারা রাষ্ট্রসঙ্ঘকে বলেছে “ঐক্য ও শান্তির একমাত্র আশা,” শান্তি ও ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ ধর্মাধিকরণ,” বিশ্বশান্তির জন্য প্রধান পার্থিব আশা।” কী ভ্রান্তি! মানবজাতির একমাত্র আশা হল ঈশ্বরের রাজ্য। কিন্তু যাজকবর্গেরা সেই স্বর্গীয় সরকারের সম্বন্ধে সত্য প্রচার করে না এবং শিক্ষা দেয় না যেটি ছিল যীশুর প্রচারের মুখ্য বিষয়বস্তু।
১১. (ক) যিরূশালেমের মিথ্যা শিক্ষকেরা ঈশ্বরের নামের প্রতি কী মন্দ প্রভাব আনে? (খ) যিরমিয় শ্রেণীর বৈসাদৃশ্যে, ঈশ্বরিক নাম সম্পর্কে বর্তমানের মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষকেরা কী করেছে?
১১ আমাদের ২৭ পদ আরও বলে: “তাহাদের সঙ্কল্প এই, তাহাদের পিতৃপুরুষেরা বালের অনুরাগে যেমন আমাকে ভুলিয়া গিয়াছিল, তদ্রূপ তাহারা আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে আপন আপন স্বপ্নের বৃত্তান্ত কথন দ্বারা আমার প্রজাদিগকে আমার নাম ভুলিয়া যাইতে দিবে।” যিরূশালেমের মিথ্যা ভাববাদীরা ঈশ্বরের নাম ভুলে যেতে দিয়েছিল। বর্তমানের মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষকেরা কি একই ব্যাপার করেনি? আরও খারাপ বিষয় করেছে, তারা ঈশ্বরের নাম যে যিহোবা তা গোপন করেছে। তারা শিক্ষা দেয় যে সেটি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই এবং তাদের বাইবেল অনুবাদগুলি থেকে নামটি সরিয়ে দিয়েছে। যারা লোকেদের ঈশ্বরের নাম যিহোবা বলে শিখায় তাদের তারা তীব্র বিরোধিতা করে। কিন্তু, যিরমিয় শ্রেণী, আত্মা-অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবশিষ্টাংশ, তাদের সঙ্গীদের সাথে যীশু যা করেছিলেন ঠিক তাই করেছে। তারা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিদের ঈশ্বরের নাম শিখিয়েছে।—যোহন ১৭:৬.
তাদের দোষ প্রকাশ করা
১২. (ক) মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষকেরা কেন মহা রক্তপাতের দোষে দোষী? (খ)দুইটি বিশ্বযুদ্ধে যাজকবর্গের ভূমিকা কী ছিল?
১২ যিরমিয় শ্রেণী যাজকবর্গকে মিথ্যা শিক্ষক হিসাবে বারবার প্রকাশ করেছেন, যারা তাদের পালদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, অবশিষ্টাংশেরা এটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে কেন সেই সকল স্বপ্ন-দর্শীরা যিহোবার প্রতিকূল বিচারের যোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার দাসেরা প্রায়ই প্রকাশিত বাক্য ১৮:২৪ পদ উল্লেখ করেছে, যা বলে “যত লোক পৃথিবীতে হত হইয়াছে” মহতী বাবিলের মধ্যে তাদের রক্ত পাওয়া গেছে। ধর্মীয় মত-পার্থক্যের জন্য যতগুলি যুদ্ধ করা হয়েছে সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষকদের উপরে এই রক্তের দায় কত অধিক! তাদের শিক্ষা বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী ও জাতীয় দলের মধ্যে বিদ্বেষ বাড়িয়ে তুলেছে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ সম্বন্ধে, প্রচারকদের অস্ত্র সমারোহ (ইংরাজি) নামক বইটি বলে: “যাজকবর্গেরা [পাদ্রীরা] যুদ্ধকে তার আবেগপ্রবণ আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য ও প্রেরণা দিয়েছে। . . . এইভাবে গির্জা যুদ্ধ-ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়।” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও একই জিনিস ঘটেছিল। যাজকবর্গ যুদ্ধে রত জাতিগুলিকে সমর্থন ও তাদের সৈন্যদলকে আশীর্বাদ করেছিল। খ্রীষ্টজগতে দুটি বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল যেখানে সমধর্মী লোকেরা একে অপরকে হত্যা করেছিল। খ্রীষ্টজগতের মধ্যেই জাগতিক ও ধর্মীয় দলগুলি এখনও রক্তপাত ঘটিয়ে চলেছে। তাদের মিথ্যা শিক্ষা কী ভয়ঙ্কর পরিণতি!
১৩. যিরমিয় ২৩:২২ পদ কিভাবে প্রমাণ করে যে খ্রীষ্টজগতের যাজকবর্গের যিহোবার সাথে কোন সম্পর্ক নেই?
১৩ দয়া করে যিরমিয় ২৩ অধ্যায়, ২২ পদ লক্ষ্য করুন: “তাহারা যদি আমার সভায় দাঁড়াইত, তবে আমার প্রজাদিগকে আমার বাক্য শুনাইত, এবং তাহাদের কুপথ হইতে ও তাহাদের ক্রিয়ার দুষ্টতা হইতে তাহাদিগকে ফিরাইত।” যদি খ্রীষ্টজগতের ধর্মীয় ভাববাদীরা যিহোবার অন্তরঙ্গ দলের মাঝে দাঁড়াত, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসদের মত তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে থাকত তাহলে তারাও ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করত। তারা খ্রীষ্টজগতের লোকেদের ঈশ্বরের নিজের বাক্য শুনাত। পরিবর্তে, অধুনা-দিনের মিথ্যা শিক্ষকেরা, তাদের অনুগামীদের ঈশ্বরের বিপক্ষ, শয়তান দিয়াবলের অন্ধ দাস করে তুলেছে।
১৪. উনিশশো আটান্ন সালে খ্রীষ্টজগতের যাজকদের সম্বন্ধে কোন্ জোরাল সত্য বিষয়গুলি প্রকাশ করা হয়?
১৪ যিরমিয় শ্রেণীদের দ্বারা যাজকবর্গ সম্বন্ধে সত্য উদ্ঘাটন খুবই জোরাল হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৮ সালে, নিউ ইয়র্ক শহরে যিহোবার সাক্ষীবৃন্দের ঐশ্বরিক ইচ্ছা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, ওয়াচটাওয়ার সমিতির উপ-সভাপতি একটি বক্তব্য রেখেছিলেন যা অংশত বলেছিল: “কোন বিপরীত অর্থ বা ইতস্তত না করে আমরা ঘোষণা করেছি যে সমস্ত অপরাধ, অবহেলা, ঘৃণা, বিদ্বেষ, পক্ষপাতিত্ব, . . . এবং উম্মত্ত বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হল ভুল ধর্ম, মিথ্যা ধর্ম; যার পিছনে রয়েছে মানুষের অদৃশ্য শত্রু, শয়তান দিয়াবল। জগতের এই অবস্থার জন্য সবচেয়ে দায়ী হল ধর্মীয় উপদেশক ও নেতারা; আর এদের মধ্যে সবচেয়ে দোষনীয় ব্যক্তিরা হল খ্রীষ্টজগতের ধর্মীয় যাজকবর্গ। . . . প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর, এত বছরের মধ্যে ঈশ্বরের সাথে খ্রীষ্টজগতের সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে যেমন যিরমিয়ের দিনে ইস্রায়েলের সম্পর্ক ছিল ঠিক তেমন। হ্যাঁ, যিরমিয় যিরূশালেমে যা ঘটতে দেখেন তার থেকেও ভয়ঙ্কর এবং বিধ্বস্তকারী ধ্বংস হবে খ্রীষ্টজগতের।”
মিথ্যা শিক্ষকদের বিচার
১৫. যাজকবর্গ শান্তির কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছে? সেগুলি কি পূর্ণ হবে?
১৫ এই সাবধানবাণী সত্ত্বেও, যাজকবর্গ তারপর থেকে কিরূপ আচরণ করেছে? ঠিক যেমন ১৭ পদ বলে: “যাহারা আমাকে অবজ্ঞা করে, তাহাদের কাছে তাহারা অবিরত বলে, সদাপ্রভু বলিয়াছেন, তোমাদের শান্তি হইবে; এবং যাহারা আপন আপন হৃদয়ের কঠিনতায় চলে, তাহাদের প্রত্যেক জনকে বলে, অমঙ্গল তোমাদের কাছে আসিবে না।” তা কি সত্য? না! যাজকবর্গের এই ভাববাণীগুলির কপটতা যিহোবা উম্মোচন করবেন। তারা তাঁর নামে যা বলেছে তা তিনি পূর্ণ করবেন না। তাই, ঈশ্বরের সাথে শান্তির সম্পর্কে যাজকবর্গের মিথ্যা আশ্বাস অত্যন্ত ছলনাপূর্ণ!
১৬. (ক) এই জগতের নৈতিক অবস্থা কী এবং এর জন্য দায়ী কারা? (খ) এই জগতের অধঃপতিত নৈতিক চিন্তাধারা সম্বন্ধে যিরমিয় শ্রেণী কী করছে?
১৬ আপনি কি ভাবছেন, ‘কি, যাজকবর্গের মিথ্যা শিক্ষার দ্বারা আমি প্রতারিত হব? কখনই না!’ কিন্তু অত নিশ্চিত হবেন না! মনে রাখবেন যে যাজকবর্গের মিথ্যা শিক্ষাসকল এক প্রলুব্ধকারী, শোচনীয় নৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। তাদের সহনশীল শিক্ষাগুলি, সমস্ত কিছুই মেনে নেয়, তা যতই অনৈতিক হোক না কেন। এই অধঃপতিত নৈতিক আবহাওয়া আমোদ-প্রমোদ, সিনেমা, টিভি, পত্র-পত্রিকা এবং সঙ্গীতের সমস্ত ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত হয়েছে। তাই যাতে আমরা এই অধঃপতিত অথচ ধূর্তভাবে প্রলুব্ধকারী নৈতিক আবহাওয়ার প্রভাবে না পড়ি, সেইজন্য অবশ্যই সর্বাধিক সাবধানতা গ্রহণ করব। অল্পবয়স্কেরা নিম্নমানের ভিডিও ছবি এবং সঙ্গীতের ফাঁদে পড়তে পারে। স্মরণে রাখবেন যে যাজকবর্গের মিথ্যা শিক্ষা এবং ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলি তুলে ধরতে তাদের ব্যর্থতারই সরাসরি ফল হল বর্তমানে লোকেদের সবকিছুই গ্রহণযোগ্য মেনে নেওয়ার মনোভাব। যিরমিয় শ্রেণী, এই অনৈতিক চিন্তাধারার সাথে যুদ্ধ করছে এবং খ্রীষ্টজগতকে যে মন্দতা ঘিরে ধরেছে, যিহোবার দাসেদের তা পরিত্যাগ করতে সাহায্য করছে।
১৭. (ক) যিরমিয়ের অনুসারে, মন্দ যিরূশালেমের প্রতি কী বিচার আসতে চলেছিল? (খ) শীঘ্রই খ্রীষ্টজগতের প্রতি কী ঘটবে?
১৭ মহান যাজক, যিহোবার কাছ থেকে খ্রীষ্টজগতের মিথ্যা শিক্ষকেরা কী বিচার পাবে? পদ ১৯, ২০, ৩৯ এবং ৪০ উত্তর দেয়: “দেখ, সদাপ্রভুর ঝটিকা, তাঁহার প্রচণ্ড ক্রোধ, হাঁ, ঘূর্ণ্যমান ঝটিকা নির্গত হইতেছে; তাহা দুষ্টদের মস্তকে লাগিবে। যে পর্য্যন্ত সদাপ্রভু আপন মনের অভিপ্রায় সফল ও সিদ্ধ না করেন, সে পর্য্যন্ত তাঁহার ক্রোধ ফিরিবে না; . . . আমি তোমাদিগকে একেবারে তুলিয়া লইব, এবং তোমাদিগকে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে নগর দিয়াছি, তাহা শুদ্ধ তোমাদিগকে আমার নিকট হইতে দূর করিয়া দিব। আর আমি এমন নিত্যস্থায়ী দুর্নাম ও নিত্যস্থায়ী অপমান তোমাদের উপরে রাখিব, যাহা লোকে ভুলিয়া যাইবে না।” মন্দ যিরূশালেম ও তার মন্দিরের প্রতি সে সকল ঘটেছিল, এখন অনুরূপ এক দুর্দশা মন্দ খ্রীষ্টজগতের প্রতি শীঘ্রই ঘটবে।
“যিহোবার ভারবাণী” ঘোষণা করা
১৮, ১৯. যিরমিয় যিহূদার প্রতি যিহোবার কোন্ “ভারবাণী” ঘোষণা করে এবং কোন্ ইঙ্গিতের সাথে?
১৮ সুতরাং, যিরমিয় শ্রেণী ও তাদের সঙ্গীদের দায়িত্ব কী? তেত্রিশ পদ আমাদের বলে: “আর যে সময়ে এই লোকেরা কিম্বা কোন ভাববাদী বা যাজক তোমাকে জিজ্ঞাসা করিবে, সদাপ্রভুর ভারবাণী কি? তখন তুমি তাহাদিগকে বলিবে, তোমরাই ভারবাণী! সদাপ্রভু বলেন, আমি তোমাদিগকে দূর করিয়া দিব।”
১৯ “ভারবাণী”র ইব্রীয় শব্দটির দুই রকমের অর্থ আছে। এটি কোন এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঐশিক ঘোষণাকে উল্লেখ করতে পারে অথবা কোনকিছু যা একজনকে ভারাক্রান্ত বা ক্লান্ত করে তোলে। এখানে “সদাপ্রভুর ভারবাণী” গুরুত্বপূর্ণ ভাববাণীকে উল্লেখ করে—এই ঘোষণা যে যিরূশালেম ধ্বংসের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত। কিন্তু যিরমিয় যিহোবার থেকে প্রাপ্ত যে গুরুত্বপূর্ণ ভাববাণীমূলক ঘোষণাগুলি বারবার করেছিল তা কি লোকেদের শুনতে ভাল লেগেছিল? না, লোকেরা যিরমিয়কে বিদ্রূপ করেছিল: ‘এখন তোমার কাছে কী ভবিষ্যদ্বাণী (ভারবাণী) আছে? আমরা নিশ্চিত যে তোমার ভবিষ্যদ্বাণী আর একটি ক্লান্তিকর ভারবাণী হবে! কিন্তু যিহোবা তাদের কী বলেছিলেন? তা হল এই: “তোমরাই ভারবাণী! আমি তোমাদিগকে দূর করিয়া দিব!” হ্যাঁ এই সকল লোকেরা যিহোবার কাছে ভারস্বরূপ ছিল এবং তিনি আর ভারপ্রাপ্ত না হওয়ার জন্য তাদের দূর করে দেবেন।
২০. বতর্মানে “সদাপ্রভুর ভারবাণী”টি কী?
২০ বর্তমানে যিহোবার “ভারবাণী” কী? তা হল ঈশ্বরের বাক্য থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাববাণীমূলক বার্তা। এটি দণ্ডাজ্ঞাপূর্ণ, খ্রীষ্টজগতের আসন্ন ধ্বংস ঘোষণা করে। যিহোবার লোক হিসাবে “সদাপ্রভুর ভারবাণী” ঘোষণা করার গুরু দায়িত্ব আমাদের আছে। যতই শেষ এগিয়ে আসছে, আমরা অবশ্যই খ্রীষ্টজগতের সকল স্বেচ্ছাচারী লোকেদের বলব, তারা এক “ভারবাণী” স্বরূপ, হ্যাঁ, যিহোবা ঈশ্বরের কাছে এক “ভারবাণী,” এবং খ্রীষ্টজগতকে দুর্দশায় পরিণত করে তিনি শীঘ্রই নিজেকে এই “ভার” থেকে মুক্ত করবেন।
২১. (ক) সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে কেন যিরূশালেম ধ্বংস হয়ে যায়? (খ)যিরূশালেমের ধ্বংসের পর, মিথ্যা ভবিষ্যদ্বক্তা ও যিহোবার সত্য ভবিষ্যদ্বক্তাদের কী হয়, বর্তমানে তা আমাদের কী আস্থা দেয়?
২১ যিরমিয়ের দিনে যিহোবার বিচারজ্ঞা পূর্ণ হয় যখন বাবিলনীয়েরা সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংস করে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, সেই একগুঁয়ে, অবিশ্বাসী ইস্রায়েলীয়দের জন্য তা ছিল ‘দুর্নামজনক, অপমানকর’ অভিজ্ঞতা। (যিরমিয় ২৩:৩৯, ৪০) এটি তাদের দেখিয়েছিল যে যিহোবা, যাকে তারা বারবার অসম্মান করেছে, তিনি অবশেষে পাপের প্রতিফলস্বরূপ তাদের পরিত্যাগ করেছিলেন। তাদের দাম্ভিক মিথ্যা ভবিষ্যদ্বক্তাদের মুখ অবশেষে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যিরমিয় ভাববাণী করেই চলেছিলেন। যিহোবা তাকে পরিত্যাগ করেননি। এই উদাহরণ অনুসারেই, যিহোবা যিরমিয় শ্রেণীকে পরিত্যাগ করবেন না যখন তাঁর গুরুভার সিদ্ধান্ত খ্রীষ্টজগতের যাজকবর্গদের ও তাদের মিথ্যাগুলি যারা বিশ্বাস করে তাদের জীবন নিঃশেষ করে দেবে।
২২. যিহোবার বিচারের মাধ্যমে খ্রীষ্টজগতকে কী পরিস্থিতিতে নিয়ে আসা হবে?
২২ হ্যাঁ, সা.শ.পূ. ৬০৭ সালের পরে যিরূশালেমের যেমন পরিত্যক্ত, বসতিহীন অবস্থা হয়েছিল ঠিক সেইরকমই খ্রীষ্টজগতের অবস্থা হবে যখন তাকে তার ঐশ্বর্য থেকে বঞ্চিত এবং লজ্জাস্করভাবে উম্মোচন করা হবে। এটিই হচ্ছে সেই যথাযোগ্য বিচার যা যিহোবা মিথ্যা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছেন। সেই বিচার ব্যর্থ হবে না। ঠিক যেমন অতীতে যিরমিয়ের সমস্ত অনুপ্রাণিত সাবধান-বার্তাগুলি সত্য হয়েছিল, সেইভাবেই বর্তমান দিনের পরিপূর্ণতায় সেগুলি পূর্ণ হবে। সুতরাং আমরা যেন যিরমিয়ের মত হই। আসুন আমরা যিহোবার ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ ভাববাণী নির্ভয়ে লোকেদের কাছে ঘোষণা করি, যাতে তারা জানতে পারে যে কেন সমস্ত মিথ্যা শিক্ষকদের উপরে তাঁর ধার্মিক বিচার পূর্ণমাত্রায় নেমে আসছে!
পুনরালোচনার প্রশ্ন
▫ যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাচীন যিরূশালেম কতটা মন্দ ছিল?
▫ কিভাবে খ্রীষ্টজগত ‘মিথ্যারূপ পথে চলে’?
▫ অধুনা-দিনের যাজকবর্গের দুর্নাম কিভাবে প্রকাশ হয়েছে?
▫ যিহোবার কোন্ “ভারবাণী এখন ঘোষণা করা হচ্ছে?
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিরূশামের ভাববাদীরা “জঘন্য ব্যাপার” করেছিল
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
“তাহারা আপন আপন হৃদয়ের দর্শন বলে”
[Pictures on page 10]
যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার পরবর্তী অবস্থা খ্রীষ্টজগতের চরম পরিণতিকে চিত্রিত করে