লোভের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে সফল হোন
“যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে . . . পতিত হয়।”—১ তীমথিয় ৬:৯.
১. ফাঁদ সম্বন্ধে আমাদের চিন্তিত থাকা উচিৎ কেন?
“ফাঁদ” কথাটি হয়ত একজন শিকারির কথা মনে করিয়ে দিতে পারে, যে অসতর্ক শিকারকে ধরার জন্য একটি যন্ত্র লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু ঈশ্বর স্পষ্টভাবে বলেছেন যে আমাদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক ফাঁদ এইরকম আক্ষরিক কোন যন্ত্র-কৌশল নয়, কিন্তু যে বিষয়ের দ্বারা আমরা আত্মিক এবং নৈতিকভাবে ফাঁদে পড়তে পারি। এই ধরনের ফাঁদ পাততে দিয়াবল খুবই দক্ষ।—২ করিন্থীয় ২:১১; ২ তীমথিয় ২:২৪-২৬.
২. (ক) বিপজ্জনক ফাঁদ এড়িয়ে চলতে যিহোবা কিভাবে আমাদের সাহায্য করেন? (খ) কোন্ বিশেষ ধরনের ফাঁদের উপর এখন মনোযোগ দেওয়া হয়েছে?
২ শয়তানের বিভিন্ন ধরনের বহু ফাঁদের কয়েকটিকে শনাক্ত করে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর আমাদের সাবধান করে দেন যে যদি আমরা মূর্খের মত, অবিবেচকের মত, অথবা যে সম্বন্ধে আমাদের বলা উচিৎ নয় সেই সম্বন্ধে কথা বলি, তাহলে আমাদের ওষ্ঠ অথবা মুখ একটি ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে। (হিতোপদেশ ১৮:৭; ২০:২৫) গর্ব আরেকটি ফাঁদ হতে পারে, যারা অল্পেতে রেগে ওঠে তাদের সান্নিধ্যে থাকাও যেমন ফাঁদ হতে পারে। (হিতোপদেশ ২২:২৪, ২৫; ২৯:২৫) কিন্তু আসুন আমরা আরেকটি ফাঁদ সম্বন্ধে দেখি: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে।” (১ তীমথিয় ৬:৯) এই ফাঁদের পিছনে কি আছে অথবা তার কারণ সম্বন্ধে “লোভ” কথাটির মাধ্যমে সংক্ষেপে প্রকাশ করা যায়। যদিও যে কোন ভাবে ধনী হওয়ার মনোভাবের মাধ্যমে লোভের প্রকাশ দেখা যায়, কিন্তু আসলে লোভের ফাঁদের বিভিন্ন দিক আছে।
বিপদ সম্বন্ধে যিহোবা আমাদের সাবধান করেন
৩, ৪. লোভ সম্বন্ধে প্রাচীন মানব-ইতিহাসে কী শিক্ষা পাওয়া যায়?
৩ সাধারণত, লোভ হল আরও পাওয়ার অবৈধ অথবা অত্যধিক আকাঙ্ক্ষা, তা সে টাকাপয়সা, বস্তুসম্পদ, ক্ষমতা, যৌন পরিতৃপ্তি, যাই হোক না কেন। লোভের ফাঁদের বিপদে পড়ায় আমরাই প্রথম নই। বহুদিন আগে, এদোন উদ্যানে, লোভ প্রথমে হবা এবং তারপরে আদমকে ফাঁদে ফেলেছিল। হবার তুলনায় তার সঙ্গী আরও অভিজ্ঞ ছিল এবং যিহোবা নিজে তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঈশ্বর তাদের একটি সুন্দর বাগানে থাকতে দিয়েছিলেন। তারা দূষণহীন জমিতে উৎপন্ন বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাদ্য উপভোগ করতে পারত। সিদ্ধ সন্তান লাভের আশা তারা রাখতে পারত, যাদের সাথে তারা অনন্তকাল বেঁচে থেকে ঈশ্বরের সেবা করতে পারত। (আদিপুস্তক ১:২৭-৩১; ২:১৫) যে কোন মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য এইসব কি যথেষ্ট ছিল না?
৪ কিন্তু, যথেষ্ট থাকলেই যে লোভের ফাঁদ এড়িয়ে চলা যায় তা নয়। ঈশ্বরের মত হওয়ার আশায়, আরও স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশায় হবা ফাঁদে পড়েছিল। আর মনে হয় যে আদম তার সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গ সবসময়ে পেতে চেয়েছিল, তার মূল্য যাই হোক না কেন। যেহেতু, এমনকি এই সিদ্ধ মানুষেরাও লোভের ফাঁদে পড়েছিল, সুতরাং আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন যে আমাদের জন্য লোভ কেন বিপদের কারণ হতে পারে।
৫. লোভের ফাঁদ এড়িয়ে চলা আমাদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ?
৫ লোভের ফাঁদে পড়া থেকে আমাদের সাবধান থাকা উচিৎ কারণ প্রেরিত পৌল আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন: “তোমরা কি জান না যে, অধার্ম্মিকেরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না? ভ্রান্ত হইও না; যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী . . . তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) পৌল আমাদের আরও বলেছেন: “বেশ্যাগমন ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়।” (ইফিষীয় ৫:৩) সুতরাং, আমাদের অসিদ্ধ দেহকে সন্তুষ্ট করার জন্য লোভ যেন এমনকি আমাদের কথাবার্তার বিষয়ও না হয়।
৬, ৭. (ক) লোভ যে কত প্রবল হতে পারে, বাইবেলের কোন্ উদাহরণগুলি তা দেখিয়ে দেয়? (খ) এই উদাহরণগুলি আমাদের কাছে কেন সাবধানবাণীস্বরূপ হওয়া উচিৎ?
৬ যিহোবা বহু উদাহরণ লিখে রেখেও লোভের বিপদ সম্বন্ধে আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন। আখনের লোভ সম্বন্ধে চিন্তা করুন। ঈশ্বর বলেছিলেন যে যিরীহো শহর ধ্বংস করতে হবে কিন্তু সেখানকার সোনা, রূপো, তামা আর লোহা সব তাঁর ধনভাণ্ডারের জন্য রাখা হবে। প্রথমে আখন হয়ত সেই আদেশ অনুযায়ী কাজ করবে বলে ভেবেছিল, কিন্তু লোভ তাকে ফাঁদে ফেলে দেয়। যিরীহোতে পৌঁছাবার পর, তার মনে হয়েছিল সে যেন জলের দরে জিনিসপত্র কেনার সুযোগ পাচ্ছে, যার মধ্যে ছিল ঠিক তার জন্য উপযুক্ত একটি সুন্দর পোশাক। হাজার হাজার টাকা মূল্যের সোনা-রূপা তুলে নিয়ে সে হয়ত ভেবেছিল, ‘কত ধনসম্পদ! চুরি করার মত বিনামূল্যেই আমি এইসব পেতে পারি।’ চুরিই বলা চলে! যে সব জিনিস ধ্বংস করা অথবা জমা দেওয়া উচিৎ ছিল তা পাওয়ার চেষ্টা করে সে ঈশ্বরের কাছ থেকে চুরি করে এবং এইজন্য আখনকে জীবন হারাতে হয়। (যিহোশূয় ৬:১৭-১৯; ৭:২০-২৬) আরও, গেহসি এবং ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার উদাহরণ সম্বন্ধে চিন্তা করুন।—২ রাজাবলি ৫:৮-২৭; যোহন ৬:৬৪; ১২:২-৬.
৭ আমাদের লক্ষ্য করা উচিৎ যে উপরে উল্লিখিত তিনজন ব্যক্তি পৌত্তলিক ছিল না, যাদের যিহোবার মান সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই। বরং যিহোবার সঙ্গে তাদের উৎসর্গীকৃত সম্পর্ক ছিল। সকলেই কিছু কিছু অলৌকিক কাজ দেখেছিল যার দ্বারা ঈশ্বরের শক্তি সম্বন্ধে এবং তাঁর অনুগ্রহ বজায় রাখার গুরুত্ব সম্বন্ধে তাদের ধারণা হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু, লোভের ফাঁদ তাদের পতনের কারণ ছিল। আমরা যদি নিজেদের কোন প্রকার লোভের দ্বারা ফাঁদে ফেলি, তাহলে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদেরও সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে। কী কী প্রকারের লোভ আমাদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক হতে পারে?
ধনসম্পদ অথবা বস্তুসামগ্রীর লোভের ফাঁদ
৮. ধনসম্পদ সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের কী সতর্কবার্তা দেয়?
৮ টাকাপয়সার প্রতি ভালবাসা, ধনসম্পদের জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা গড়ে ওঠার বিরুদ্ধে, অধিকাংশ খ্রীষ্টানেরা বাইবেলের স্পষ্ট সাবধানবাণী শুনেছে। আসুন আমরা এই সাবধানবাণীর কয়েকটি আবার আলোচনা করি, যেগুলি দেওয়া আছে মথি ৬:২৪-৩৩; লূক ১২:১৩-২১; এবং ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০ পদে। আপনি হয়ত মনে করতে পারেন যে আপনি সেই সব উপদেশ মেনে নিয়ে তা পালন করেন, কিন্তু আখন, গেহসি এবং যিহূদাও কি বলত না যে তারাও এই উপদেশের সঙ্গে একমত ছিল? স্পষ্টতই, শুধুমাত্র মনে মনে সম্মত হওয়ার থেকে আরও বেশি কিছু আমাদের করতে হবে। আমাদের সাবধান থাকতে হবে যে ধনসম্পদ অথবা বস্তুসামগ্রীর প্রতি লোভ যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত না করে।
৯. জিনিসপত্র কেনা সম্বন্ধে আমাদের মনোভাব কেন পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ?
৯ প্রতিদিন আমাদের কিছু না কিছু কিনতে হয়—খাদ্যসামগ্রী, জামাকাপড় এবং বাড়ির জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র। (আদিপুস্তক ৪২:১-৩; ২ রাজাবলি ১২:১১, ১২; হিতোপদেশ ৩১:১৪, ১৬; লূক ৯:১৩; ১৭:২৮; ২২:৩৬) কিন্তু ব্যবসা-জগৎ আরও বেশি এবং আরও আধুনিক জিনিসপত্র পাওয়ার ইচ্ছাকে জাগিয়ে তোলে। সংবাদপত্র, বিভিন্ন পত্রিকা এবং টিভির পর্দায় বিজ্ঞাপনগুলি লোভকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য ছদ্মবেশী আবেদন ছাড়া আর কিছুই নয়। সারি সারি ব্লাউজ, কোট, পোশাক ও সোয়েটার এবং তাকের পর তাক সাজানো নতুন জুতো, ইলেক্ট্রনিক্ যন্ত্রপাতি এবং ক্যামেরাসহ দোকানগুলির মাধ্যমেও এইরকম আকর্ষণ আসতে পারে। খ্রীষ্টানদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিৎ, ‘দোকানবাজার করা কি আমার জীবনের একটি মুখ্য উদ্দেশ্য অথবা আনন্দজনক বিষয় হয়ে উঠেছে?’ ‘কোন নতুন জিনিসপত্র কি আমার সত্যিই প্রয়োজন, অথবা ব্যবসা-জগৎ আমার মধ্যে লোভ জাগিয়ে তুলছে?’—১ যোহন ২:১৬.
১০. পুরুষদের জন্য লোভের কোন্ ফাঁদ বিশেষভাবে বিপজ্জনক?
১০ মহিলাদের জন্য দোকানবাজার করা যদি একটি সাধারণ ফাঁদ হয়, তাহলে অসংখ্য পুরুষের ক্ষেত্রে ফাঁদ হল আরও বেশি টাকা রোজগার করা। যীশু এই বিষয়টি সম্বন্ধে উদাহরণ দিয়েছিলেন একজন ধনী ব্যক্তির মাধ্যমে, যার উপার্জন খুবই ভাল ছিল কিন্তু তবুও সে তার ‘গোলাঘর ভেঙ্গে আরও বড় বড় গোলাঘর নির্মাণ করতে এবং তার মধ্যে তার সমস্ত শস্য এবং দ্রব্য রাখতে’ চেয়েছিল। লোভের বিপদ সম্বন্ধে যীশু কোন সন্দেহ রাখেননি: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও।” (লূক ১২:১৫-২১) আমরা ধনী অথবা দরিদ্র, যাই হই না কেন, এই উপদেশ আমাদের পালন করা উচিৎ।
১১. আরও বেশি টাকাপয়সা পাওয়ার লোভে একজন খ্রীষ্টান কিভাবে ফাঁদে পড়তে পারেন?
১১ টাকাপয়সার প্রতি অথবা টাকাপয়সার মাধ্যমে যা কেনা যায় তার প্রতি লোভকে প্রায়ই আড়ালে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। হয়ত আর্থিক নিরাপত্তা লাভ করার জন্য, একটি বিপজ্জনক অথচ তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার জন্য সারা জীবনে একমাত্র কোন সুযোগের মাধ্যমে লোভ দেখানো হতে পারে। অথবা সন্দেহজনক বা বেআইনি ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ রোজগার করতে অনেকে প্রলোভিত হতে পারে। এই লোভী মনোবৃত্তি আমাদের বশবর্তী করতে পারে, ফাঁদে ফেলতে পারে। (গীতসংহিতা ৬২:১০; হিতোপদেশ ১১:১; ২০:১০) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে কয়েকজন এই আশা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে যে বিশ্বস্ত ভাইবোনেরা তাদের প্রধান খরিদ্দার হবে। তাদের উদ্দেশ্য যদি ‘স্বহস্তে সদ্ব্যাপারে পরিশ্রম করে’ কোন প্রয়োজনীয় সামগ্রী অথবা সাহায্য দেওয়া না হয়, কিন্তু সহখ্রীষ্টানদের সুযোগ নিয়ে তাড়াতাড়ি টাকাপয়সা অর্জন করা হয়, তাহলে তারা লোভের বশে কাজ করছে। (ইফিষীয় ৪:২৮; হিতোপদেশ ২০:২১; ৩১:১৭-১৯, ২৪; ২ থিষলনীকীয় ৩:৮-১২) অর্থলোভ অনেককে জুয়াখেলা, ঘোড়দৌড়ে বাজি রাখা এবং লটারির প্রতি নিয়ে গেছে। অন্যেরা, ক্ষতিপূরণ হিসাবে মোটা টাকার অঙ্ক পাওয়ার আশায়, সমবেদনা এবং যুক্তিতর্ক ত্যাগ করে তাড়াহুড়ো করে মামলা শুরু করে দিয়েছে।
১২. কেন আমরা বলতে পারি যে টাকাপয়সার লোভকে অতিক্রম করা যায়?
১২ এই সমস্ত বিষয়ে আমাদের আত্ম-পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ যাতে আমরা প্রকৃতই বুঝতে পারি লোভ আমাদের মধ্যে কাজ করছে কিনা। যদি করেও, তাহলেও আমরা পরিবর্তন করতে পারি। মনে রাখবেন যে সক্কেয় নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন। (লূক ১৯:১-১০) কেউ যদি লক্ষ্য করে যে ধনসম্পদ অথবা বস্তুসামগ্রীর লোভ একটি সমস্যা হতে পারে, তাহলে সক্কেয়র মত সেই ফাঁদ এড়িয়ে চলতে তাকেও একইরকম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে।—যিরমিয় ১৭:৯.
জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে লোভ
১৩. অন্য কোন্ লোভের ফাঁদের দিকে গীতসংহিতা ১০:১৮ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায়?
১৩ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের চাইতে টাকাপয়সা এবং বস্তুসামগ্রীর প্রতি লোভের বিপদ উপলব্ধি করা অনেকের পক্ষে আরও সহজ। গ্রীক ভাষা সম্বন্ধে একটি অভিধান জানায়, যে শব্দসমষ্টিকে “লোভ” অথবা “আকাঙ্ক্ষা” হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে তার সঙ্গে “ক্ষমতা এবং বস্তুসম্পদ ‘আরও পাওয়ার’ ইচ্ছা জড়িয়ে রয়েছে।” হ্যাঁ, অন্যদের উপরে ক্ষমতা পাওয়ার লোভে, হয়ত আমাদের কর্তৃত্বাধীনে তারা যাতে তটস্থ হয়ে থাকে সেই ইচ্ছার দ্বারা আমরা ফাঁদে পড়তে পারি।—গীতসংহিতা ১০:১৮.
১৪. কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে ক্ষমতা লাভ করার ইচ্ছা ক্ষতিকারক হয়েছে?
১৪ প্রাচীনকাল থেকেই অসিদ্ধ মানুষ অন্যদের উপরে ক্ষমতা লাভ করতে ভালবাসে। মানব পাপের দুঃখজনক ফলস্বরূপ, বহু স্বামীরা যে তাদের স্ত্রীদের উপরে “কর্ত্তৃত্ব” করবে, তা ঈশ্বর আগে থেকেই বুঝেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১৬) যাইহোক, এই অসিদ্ধতা বৈবাহিক জীবনের বাইরেও দেখা যায়। বহু হাজার বছর পরে, বাইবেলের একজন লেখক উল্লেখ করেছিলেন যে মানুষ “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।” (উপদেশক ৮:৯) আপনি হয়ত জানেন যে রাজনৈতিক এবং শাসনব্যবস্থাসংক্রান্ত ব্যাপারে এই বিষয়টি কত সত্য, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রেও যে আমরা আরও বেশি ক্ষমতা অথবা কর্তৃত্ব পাওয়ার জন্য প্রবল প্রচেষ্টা করছি, তা কি হতে পারে?
১৫, ১৬. কোন্ কোন্ বিষয়ে একজন খ্রীষ্টান আরও বেশি ক্ষমতালাভের আকাঙ্ক্ষার ফাঁদে পড়তে পারেন? (ফিলিপীয় ২:৩)
১৫ আমাদের সকলকে অন্যান্য মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়—আমাদের পরিবার অথবা আত্মীয়স্বজনদের, আমাদের কার্যক্ষেত্রে অথবা স্কুলে সহকর্মী ও সহপাঠীদের, বন্ধুদের এবং আমাদের মণ্ডলীতে অন্যদের সাথে আমাদের দেখা হয়। কখনও কখনও, অথবা প্রায়ই হয়ত কী করা হবে এবং কিভাবে ও কখন তা করা হবে, সেই সম্বন্ধে আমাদের মতামত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া এমনিতে ভুল অথবা খারাপ নয়। কিন্তু, আমরা কি নিজেদের মতামত জাহির করতে অতিরিক্ত উপভোগ করি? আমাদের সিদ্ধান্তই শেষ কথা হবে তা কি আরও বেশি করে আমরা চাই? জাগতিক কর্তৃপক্ষ এবং মালিকেরা এই মনোভাবে দেখায় নিজেদের চারিপাশে জি-হুজুরের দল রেখে, যারা কোন বিষয়ে মতবিরোধ করবে না এবং যারা তাদের উর্ধতন ব্যক্তির ক্ষমতা লাভের প্রচেষ্টাকে কোন বাধা দেবে না।
১৬ সহখ্রীষ্টানদের সাথে ব্যবহার করার সময়ে এই ফাঁদটি এড়িয়ে চলতে হবে। যীশু বলেছিলেন: “তোমরা জান, পরজাতীয়দের অধিপতিরা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং যাহারা মহান্, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। তোমাদের মধ্যে সেরূপ হইবে না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে।” (মথি ২০:২৫, ২৬) নিজেদের মধ্যে, পরিচারক দাসেদের সঙ্গে এবং অন্যান্যদের সঙ্গে আচরণে খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের ব্যবহারে যেন এইরকম নম্রতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একজন পরিচালক অধ্যক্ষের মধ্যে কি ক্ষমতা লাভের ইচ্ছা দেখা যেতে পারে, যিনি শুধুমাত্র তুচ্ছ বিষয়ে অন্যান্য প্রাচীনদের মতামত নেন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে সব সিদ্ধান্ত নিজেই নেন? তিনি কি কার্যভার বন্টন করে নিতে প্রকৃতই ইচ্ছুক? কোন পরিচারক দাস ক্ষেত্রের পরিচর্যা সভা নেওয়ার সময়ে যদি অত্যধিক কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, এমনকি নিয়ম স্থাপন করেন, তাহলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।—১ করিন্থীয় ৪:২১; ৯:১৮; ২ করিন্থীয় ১০:৮; ১৩:১০; ১ থিষলনীকীয় ২:৬, ৭.
১৭. লোভের ফাঁদ আলোচনা করার সময়ে খাওয়া-দাওয়ার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া উপযুক্ত কেন?
১৭ খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকে লোভের ফাঁদে পড়ে। অবশ্যই খাদ্য গ্রহণ করা এবং পান করে আনন্দ পাওয়া স্বাভাবিক; বাইবেল তা অনুমোদন করে। (উপদেশক ৫:১৮) কিন্তু, ক্রমে ক্রমে এই বিষয়ে একটি আকাঙ্ক্ষা গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়, যা শুধুমাত্র উপভোগ করা এবং যথেষ্ট পাওয়ার চাইতেও আরও অনেক বেশি কিছু আশা করে। এই বিষয়ে যদি ঈশ্বরের সেবকদের মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না, তাহলে হিতোপদেশ ২৩:২০ পদে ঈশ্বরের বাক্যে কেন বলা হয়েছে: “মদ্যপায়ীদের সঙ্গী হইও না, পেটুক মাংসভোজীদের সঙ্গী হইও না”? কিন্তু, এই ফাঁদ আমরা কিভাবে এড়িয়ে চলতে পারি?
১৮. খাওয়াদাওয়া এবং পান করা সম্বন্ধে কোন্ আত্ম-পরীক্ষা আমাদের করা উচিৎ?
১৮ ঈশ্বর চান না যে তাঁর লোকেরা সাধু-সন্ন্যাসীদের মত খুবই সাধারণ খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। (উপদেশক ২:২৪, ২৫) কিন্তু খাদ্য এবং পানীয়কে যে আমরা আমাদের কথাবার্তা এবং চিন্তার মুখ্য বিষয় করে তুলি, তাও তিনি অনুমোদন করেন না। আমরা নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে পারি: ‘যদি আমি কোন ভোজ খেয়ে থাকি অথবা খাওয়ার আশা রাখি, তাহলে সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে প্রায়ই কি আমি অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে উঠি?’ ‘আমি কি সবসময়ে খাওয়া অথবা পান করার প্রসঙ্গে কথা বলি?’ অন্যদের বাড়িতে অতিথি হয়ে অথবা খ্রীষ্টীয় সম্মেলনের সময়ে যে ভোজ আমরা প্রস্তুত করিনি অথবা যার জন্য আমাদের কিছু খরচ হয়নি, তার প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া থেকেও লোভের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তখন কি আমরা অস্বাভাবিকরকম বেশি খাওয়াদাওয়া করি? আমাদের মনে থাকতে পারে যে এষৌ খাদ্যকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়েছিল, যার জন্য তার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়েছিল।—ইব্রীয় ১২:১৬.
১৯. যৌন অভিলাষ সম্পর্কে লোভ কিভাবে একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে?
১৯ আরেকটি ফাঁদের প্রতি পৌল অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছেন: “বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, যেমন পবিত্রগণের উপযুক্ত।” (ইফিষীয় ৪:১৭-১৯; ৫:৩) বাস্তবিকই, যৌন অভিলাষ লোভে পরিণত হতে পারে। অবশ্যই, বিবাহ-বন্ধনের মধ্যে এই অভিলাষ উপযুক্তরূপে প্রকাশ করা যেতে পারে। এই অভিলাষের সঙ্গে জড়িত গভীর স্নেহ, বহু বছর ধরে স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কিন্তু, খুব অল্প লোকেই অস্বীকার করবে যে আধুনিক জগৎ যৌন অভিলাষের প্রতি অত্যধিক জোর দেয়, যে আচরণ আসলে পৌলের উল্লিখিত লোভের প্রতিচ্ছবি, তা সাধারণ হিসাবে উপস্থাপন করে। যৌন অভিলাষ সম্বন্ধে এই ভুল ধারণা বিশেষত তারাই অনুমোদন করে নেয়, যারা বর্তমানে বহু সিনেমা, ভিডিও, পত্রিকা, এমনকি আমোদপ্রমোদের জায়গায় যে অনৈতিকতা এবং নগ্নতা সাধারণভাবে দেখানো হয়, তা দেখে।
২০. যৌন বিষয়ে লোভ সম্বন্ধে খ্রীষ্টানেরা কিভাবে সতর্কতা দেখাতে পারে?
২০ বৎশেবার সঙ্গে দায়ূদের পাপ দেখায় যে ঈশ্বরের একজন সেবকও যৌন আকাঙ্ক্ষার ফাঁদে পড়তে পারে। যদিও নিজের বিবাহসঙ্গীদের সাথে দায়ূদ আনন্দ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি অবৈধ যৌন আকাঙ্ক্ষাকে বাড়তে দেন। উরিয়ের স্ত্রীর আকর্ষণীয়তা লক্ষ্য করে, তার সাথে যৌন অভিলাষ পূর্ণ করার জন্য দায়ূদ তার চিন্তাধারা—এবং কাজকে—অবাধে প্রশ্রয় দেন। (২ শমূয়েল ১১:২-৪; যাকোব ১:১৪, ১৫) এই ধরনের লোভ আমাদের অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি বিবাহের মধ্যেও লোভ এড়িয়ে চলা উচিৎ। এর অন্তর্ভুক্ত অস্বাভাবিক যৌন আচরণ না করা। এই বিষয়ে যে স্বামী লোভ এড়িয়ে চলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তিনি তার সঙ্গীর জন্য প্রকৃতই চিন্তিত হবেন, যাতে তারা দুজনে পরিবার পরিকল্পনা সম্বন্ধে যে পদ্ধতি বেছে নেবেন, তাতে যেন তার স্ত্রীর আনন্দ অথবা ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের চাইতে তার নিজের আনন্দকে বড় করে দেখা না হয়।—ফিলিপীয় ২:৪.
লোভ এড়িয়ে চলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন
২১. লোভ সম্বন্ধে এই আলোচনার দ্বারা আমাদের কেন নিরুৎসাহ হওয়া উচিৎ নয়?
২১ কোন সন্দেহ থাকার জন্য যিহোবা সাবধান অথবা সতর্ক করে দেন না। তিনি জানেন যে তাঁর উৎসর্গীকৃত সেবকেরা বিশ্বস্তভাবে তাঁর পরিচর্যা করতে চায় এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই তা করে যাবে। একত্রে তাঁর লোকেদের সম্বন্ধে, তিনি শয়তানের সঙ্গে ইয়োব সম্বন্ধে কথা বলার সময়ে যা বলেছিলেন, সেই রকম কিছু বলতে পারেন: “আমার দাস ইয়োবের উপরে কি তোমার মন পড়িয়াছে? কেননা তাহার তুল্য সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই?” (ইয়োব ১:৮) আমাদের প্রেমময়, নির্ভরশীল স্বর্গীয় পিতা, বিভিন্ন ধরনের লোভের সঙ্গে জড়িত বিপজ্জনক ফাঁদ সম্বন্ধে আমাদের সচেতন করে দেন কারণ তিনি চান যে আমরা যেন নিষ্কলঙ্কভাবে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকি।
২২. এই পরীক্ষার দ্বারা যদি কোন বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কী করা উচিৎ?
২২ আমারা প্রত্যেকে লোভ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি এবং এই মন্দ জগতের প্রভাবে আমাদের মধ্যে তা হয়ত আরও বেশি প্রবল হয়ে উঠেছে। ধনসম্পদ, বস্তুসামগ্রী, ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বাধিকার, খাদ্য অথবা যৌন অভিলাষ—এই বিষয়গুলির ক্ষেত্রে লোভ সম্বন্ধে পরীক্ষা করার সময়ে আপনি যদি নিজের মধ্যে কোন দুর্বলতা লক্ষ্য করেন তাহলে কী? তাহলে যীশুর উপদেশ হৃদয়ে গ্রহণ করুন: “তোমার হস্ত যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া ফেল; দুই হস্ত লইয়া নরকে, সেই অনির্ব্বাণ অগ্নিতে, যাওয়া অপেক্ষা, বরং নুলা হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল।” (মার্ক ৯:৪৩) আপনার মনোভাব অথবা উদ্দেশ্যে যে কোন প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করুন। লোভের মারাত্মক ফাঁদ এড়িয়ে চলুন। তাহলে, ঈশ্বরের সাহায্যে আপনি “জীবনে প্রবেশ” করতে পারবেন। (w93 8/1)
আমি কী শিখেছি?
▫ লোভের ফাঁদ সম্বন্ধে আমাদের কেন সাবধান থাকা উচিৎ?
▫ ধনসম্পদ অথবা বস্তুসামগ্রী পাওয়ার লোভ কী কী উপায়ে আমাদের ফাঁদে ফেলতে পারে?
▫ জীবনের অন্যান্য বিষয়ে লোভ কিভাবে আমাদের ফাঁদে ফেলতে পারে?
▫ লোভ সম্বন্ধে যদি আমাদের কোন দুর্বলতা থাকে, তাহলে আমাদের মনোভাব কী হওয়া উচিৎ?