ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • bt অধ্যায় ১৫ পৃষ্ঠা ১১৭-১২৩
  • ‘তিনি মণ্ডলীগুলোকে শক্তিশালী করলেন’

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ‘তিনি মণ্ডলীগুলোকে শক্তিশালী করলেন’
  • ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • ‘চলো, ফিরে যাই এবং দেখি, ভাইয়েরা কেমন আছে’ (প্রেরিত ১৫:৩৬)
  • “তাদের মধ্যে এমন ঝগড়া হল” (প্রেরিত ১৫:৩৭-৪১)
  • মণ্ডলীর ‘ভাইয়েরা তীমথিয়ের খুব প্রশংসা করে’ (প্রেরিত ১৬:১-৩)
  • “মণ্ডলীগুলো বিশ্বাসে দৃঢ় হতে থাকল” (প্রেরিত ১৬:৪, ৫)
  • তীমথিয়—সেবা করতে প্রস্তুত ও ইচ্ছুক
    ২০০৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • মার্ক ‘পরিচর্য্যা বিষয়ে বড় উপকারী’
    ২০১০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • তীমথিয়—‘বিশ্বাস সম্বন্ধে যথার্থ বৎস’
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বার্ণবা—সেই “প্রবোধের সন্তান”
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
bt অধ্যায় ১৫ পৃষ্ঠা ১১৭-১২৩

অধ্যায় ১৫

‘তিনি মণ্ডলীগুলোকে শক্তিশালী করলেন’

ভ্রমণ অধ্যক্ষদের সাহায্যে মণ্ডলীগুলো বিশ্বাসে দৃঢ় হতে থাকল

প্রেরিত ১৫:৩৬–১৬:৫ পদের উপর ভিত্তি করে

১-৩. (ক) পৌলের নতুন সঙ্গী কে ছিলেন এবং তিনি কেমন ব্যক্তি ছিলেন? (খ) এই অধ্যায়ে আমরা কী জানতে পারব?

প্রেরিত পৌল আর একজন যুবক একটা এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন, হাঁটতে হাঁটতে পৌল মাঝে মধ্যেই সেই যুবকের দিকে তাকাচ্ছেন। এই উদ্যমী যুবকের নাম তীমথিয়, যার বয়স প্রায় ২০ বছর। তীমথিয় প্রথম বার মিশনারি যাত্রায় যাচ্ছেন। তারা যতই লুস্ত্রা ও ইকনিয় নগর ফেলে এগিয়ে চলেছেন, ততই তীমথিয় তার বাড়ি থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন। এই যাত্রায় তাদের প্রতি কী কী ঘটবে? এই বিষয়ে পৌলের অল্প কিছু ধারণা আছে কারণ এটা ছিল তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রা। তিনি ভালো করেই জানেন যে, তাদের অনেক বিপদজনক পরিস্থিতি ও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তিনি হয়তো চিন্তা করছেন যুবক তীমথিয় কীভাবে এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করবেন?

২ তীমথিয় নিজেকে এই কাজের জন্য অযোগ্য বলে মনে করেন, কিন্তু তার উপর পৌলের পুরোপুরি আস্থা ছিল। এখন তাদের মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করতে হবে এবং ভাই-বোনদের শক্তিশালী করতে হবে। তাদের খুব মন দিয়ে এবং একমত হয়ে এই কাজ করতে হবে। পৌল জানতেন, এই কাজের জন্য এমন একজন সঙ্গীর প্রয়োজন, যার সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করা যাবে। কেন? এর একটা কারণ হতে পারে, কিছু দিন আগে পৌল ও বার্ণবার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল এবং এর ফলে তারা দু-জন আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন।

৩ এই অধ্যায়ে আমরা শিখব যে, ভাই-বোনদের সঙ্গে কোনো মতবিরোধ দেখা দিলে কীভাবে তা মিটমাট করা যায়। আমরা এটাও জানতে পারব, কেন পৌল তীমথিয়কে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আর বর্তমানে সীমা অধ্যক্ষেরা কীভাবে তাদের দায়িত্বগুলো পালন করেন।

‘চলো, ফিরে যাই এবং দেখি, ভাইয়েরা কেমন আছে’ (প্রেরিত ১৫:৩৬)

৪. পৌল কোন কোন কারণে ভাই-বোনদের সঙ্গে আবারও দেখা করতে চেয়েছিলেন?

৪ আগের অধ্যায়ে আমরা যেমন দেখেছি, পৌল, বার্ণবা, যিহূদা ও সীল আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীতে আসেন এবং ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে পরিচালকগোষ্ঠী যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সম্বন্ধে তাদের জানান আর শক্তিশালী করেন। এরপর পৌল কী করেন? তিনি পরের যাত্রার পরিকল্পনার বিষয়ে বার্ণবাকে বলেন, “চলো, যে-সমস্ত নগরে গিয়ে আমরা যিহোবার বাক্য প্রচার করেছিলাম, সেইসমস্ত নগরে ফিরে যাই এবং দেখি, ভাইয়েরা কেমন আছে।” (প্রেরিত ১৫:৩৬) পৌল সেই নতুন খ্রিস্টানদের সঙ্গে শুধুমাত্র দেখা করতে যাওয়ার জন্য বলছিলেন না। প্রেরিত বই স্পষ্টভাবে জানায় যে, তাদের সঙ্গে দেখা করার দুটো বিশেষ কারণ ছিল। প্রথমত, পরিচালকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত মণ্ডলীগুলোকে জানানো। (প্রেরিত ১৬:৪) দ্বিতীয়ত, ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে মণ্ডলীর ভাই-বোনদের উৎসাহিত করা এবং তাদের বিশ্বাস দৃঢ় করা। (রোমীয় ১:১১, ১২) প্রেরিতদের মতো বর্তমানে যিহোবার সংগঠন কী করে?

৫. বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী কীভাবে মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশনা দেয় এবং শক্তিশালী করে?

৫ বর্তমানে, যিশু পরিচালকগোষ্ঠীর মাধ্যমে মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। পরিচালকগোষ্ঠীর অভিষিক্ত ভাইয়েরা চিঠি, সভা, ছাপানো কিংবা অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে ও সেইসঙ্গে অন্যান্য উপায়ে মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং শক্তিশালী করছেন। এই পরিচালকগোষ্ঠী সমস্ত মণ্ডলীকে ভালোভাবে জানতে চায় আর তাই তারা সীমা অধ্যক্ষদের ব্যবস্থা করেছে। পরিচালকগোষ্ঠী সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার দক্ষ প্রাচীনদের সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেছে।

৬, ৭. সীমা অধ্যক্ষেরা কোন কোন দায়িত্ব পালন করেন?

৬ সীমা অধ্যক্ষেরা যখন কোনো মণ্ডলী পরিদর্শন করেন, তখন তারা সেই মণ্ডলীর সমস্ত ভাই-বোনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেন এবং তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করেন। কীভাবে তারা তা করেন? তারা পৌলের মতো ভ্রমণ অধ্যক্ষকে অনুকরণ করেন। পৌল তার সহঅধ্যক্ষ তীমথিয়কে, উৎসাহিত করে বলেন: “তুমি বাক্য প্রচার করো; সুবিধাজনক সময়ে হোক কিংবা কঠিন সময়ে হোক, তুমি তৎপরতার মনোভাব বজায় রেখে প্রচার করো; সম্পূর্ণ ধৈর্য সহকারে এবং উত্তমভাবে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে তিরস্কার করো, দৃঢ়ভাবে সাবধান করো, উৎসাহিত করো . . . সুসমাচার প্রচারকের কাজ করো।”—২ তীম. ৪:২, ৫.

৭ এই শাস্ত্রপদের কথা অনুযায়ী সীমা অধ্যক্ষেরা মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করার সময় ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন উপায়ে প্রচার কাজ করেন। যে-সীমা অধ্যক্ষেরা বিবাহিত তাদের স্ত্রীরাও এই কাজে অংশ নেন। ভাই-বোনেরা যখন দেখে যে, সীমা অধ্যক্ষেরা প্রচার কাজকে খুব ভালোবাসেন আর লোকদের ভালোভাবে শেখান, তখন তারা আরও উদ্যোগী হয়ে ওঠে। (রোমীয় ১২:১১; ২ তীম. ২:১৫) সীমা অধ্যক্ষেরা এবং তাদের স্ত্রীরাও ভাই-বোনদের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখান এবং তাদের জন্য অনেক ত্যাগস্বীকার করেন। এলাকা বিপদজনক হোক কিংবা আবহাওয়া খারাপ থাকুক, তারা মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করেন। (ফিলি. ২:৩, ৪) এ ছাড়া, সীমা অধ্যক্ষেরা বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়ার মাধ্যমে মণ্ডলীগুলোকে শিক্ষা ও পরামর্শ দেন আর তাদের উৎসাহিত করেন। আমরা যদি সীমা অধ্যক্ষদের উদাহরণের প্রতি মনোযোগ দিই এবং তাদের মতো বিশ্বাসকে দৃঢ় করার চেষ্টা করি, তা হলে আমরা উপকৃত হব।—ইব্রীয় ১৩:৭.

“তাদের মধ্যে এমন ঝগড়া হল” (প্রেরিত ১৫:৩৭-৪১)

৮. পৌলের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে বার্ণবা কী করেছিলেন?

৮ পৌল যখন বার্ণবাকে বলেন যে, তারা আবারও সেই নগরগুলোতে গিয়ে দেখে আসবেন “ভাইয়েরা কেমন আছে,” তখন বার্ণবা রাজি হয়ে যান। (প্রেরিত ১৫:৩৬) পৌল ও বার্ণবা আগেও একসঙ্গে কাজ করেছেন, তাই তারা একে অন্যকে খুব ভালোভাবে বোঝেন। এ ছাড়া, তারা সেই নগরের ভাই-বোনদের আগে থেকে জানতেন। (প্রেরিত ১৩:২–১৪:২৮) তাই, তারা চিন্তা করেন এবারও একসঙ্গে গেলে ভালো হয়। কিন্তু, তখনই একটা সমস্যা দেখা দেয়। প্রেরিত ১৫:৩৭ পদ বলে: “আর বার্ণবা সঙ্গে করে যোহনকে নিয়ে যেতে চাইলেন, যাকে মার্ক বলে ডাকা হয়।” বার্ণবা পৌলের কাছে অনুমতি চাননি বরং নিজেই ঠিক করে নেন যে, এই মিশনারি যাত্রায় তিনি মার্ককে তার সঙ্গে “নিয়ে যেতে” চান।

৯. পৌল কেন বার্ণবার কথায় রাজি হননি?

৯ কিন্তু, পৌল বার্ণবার কথায় রাজি হননি। কেন? বিবরণ জানায়: “কিন্তু, পৌল মনে করলেন, যে-ব্যক্তি পাম্ফুলিয়াতে তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে আর কাজ করেনি, তাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।” (প্রেরিত ১৫:৩৮) পৌল ও বার্ণবার প্রথম মিশনারি যাত্রায় মার্ক যদিও তাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে থাকেননি। (প্রেরিত ১২:২৫; ১৩:১৩) পাম্ফুলিয়াতে থাকার সময় মার্ক তাদের ছেড়ে জেরুসালেমে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। বাইবেল এটা জানায় না যে, কেন তিনি এমনটা করেছিলেন। কিন্তু, এটা মনে হয় যে, পৌলের এই বিষয়টাই খারাপ লেগেছিল। তাই, আবারও মার্কের উপর নির্ভর করা তার জন্য কঠিন ছিল।

১০. পৌল ও বার্ণবার মধ্যে কী হয়েছিল আর এর ফলে কী ঘটেছিল?

১০ বার্ণবা তবুও মার্ককে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন। অন্যদিকে, পৌলও কোনোমতেই মার্ককে নিয়ে যেতে রাজি হন না। প্রেরিত ১৫:৩৯ পদ বলে: “এতে তাদের মধ্যে এমন ঝগড়া হল যে, তারা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেন।” বার্ণবা মার্ককে নিয়ে জাহাজে করে সাইপ্রাসে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। আর পৌল তার পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। বিবরণ বলে: “অন্যদিকে, পৌল সীলকে সঙ্গে নিলেন। পরে ভাইয়েরা পৌলকে যিহোবার মহাদয়ার উপর ছেড়ে দিলে পৌল সেখান থেকে চলে গেলেন।” (প্রেরিত ১৫:৪০) পৌল ও সীল “সিরিয়া ও কিলিকিয়া দিয়ে যেতে যেতে মণ্ডলীগুলোকে শক্তিশালী করলেন।”—প্রেরিত ১৫:৪১.

১১. কেন পৌল ও বার্ণবা একে অন্যকে ক্ষমা করতে পেরেছিলেন এবং এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১১ এই বিবরণ দেখায় যে, আমরা অসিদ্ধ এবং আমাদের সবার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। পৌল ও বার্ণবাকে পরিচালকগোষ্ঠী তাদের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিল। পৌল হয়তো নিজেও পরবর্তী সময় পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য হয়েছিলেন। তাদের দু-জনের মধ্যে ভালো গুণ থাকা সত্ত্বেও, তারা তাদের মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু, এই ঝগড়ার কারণে কি তাদের বন্ধুত্ব ভেঙে গিয়েছিল? তারা কি সারাজীবন একে অন্যের উপর রেগে ছিলেন? না। তাদের মধ্যে দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও, তারা নম্র ছিলেন এবং খ্রিস্টের মতো মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তাই, পরবর্তী সময় তারা একে অন্যকে ক্ষমা করে দেন এবং আবারও ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন। (ইফি. ৪:১-৩) পরে, পৌল ও মার্ক তারাও একসঙ্গে মিলে কাজ করেন।a—কল. ৪:১০.

১২. বর্তমানে অধ্যক্ষদের পৌল ও বার্ণবার মতো কোন গুণগুলো দেখাতে হবে?

১২ এটা ঠিক যে, পৌল ও বার্ণবার মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছিল, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তারা দু-জন বদমেজাজি ছিলেন। বার্ণবা ভাই-বোনদের খুব ভালোবাসতেন এবং সবসময় তাদের সাহায্য করতেন। তার এই ভালো গুণের জন্যই প্রেরিতেরা তাকে বার্ণবা বলে ডাকতেন, যার অর্থ হল “সান্ত্বনার পুত্র,” যদিও তার আসল নাম ছিল যোষেফ। (প্রেরিত ৪:৩৬) পৌলও অন্যদের জন্য চিন্তা করতেন এবং নম্রতা দেখাতেন। (১ থিষল. ২:৭, ৮) বর্তমানে, সমস্ত প্রাচীন ও সীমা অধ্যক্ষদেরও পৌল ও বার্ণবার মতো নম্রতা দেখানো উচিত এবং সহপ্রাচীনদের প্রতি ও সেইসঙ্গে পুরো মণ্ডলীর প্রতি নম্রতা দেখানো উচিত।—১ পিতর ৫:২, ৩.

মণ্ডলীর ‘ভাইয়েরা তীমথিয়ের খুব প্রশংসা করে’ (প্রেরিত ১৬:১-৩)

১৩, ১৪. (ক) তীমথিয় কে ছিলেন আর পৌল তার সঙ্গে কখন এবং কীভাবে দেখা করেছিলেন? (খ) কেন পৌল তীমথিয়ের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন? (গ) তীমথিয়কে কোন কার্যভার দেওয়া হয়েছিল?

১৩ পৌল তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় গালাতিয়ার রোমীয় প্রদেশে যান, যেখানে ইতিমধ্যেই কিছু মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। শেষে “পৌল দর্বী ও লুস্ত্রা নগরে গেলেন।” বিবরণ আরও জানায়, “সেখানে তীমথিয় নামে একজন শিষ্য ছিলেন। তার মা ছিলেন যিহুদি এবং একজন শিষ্য, কিন্তু তার বাবা ছিলেন গ্রিক।”—প্রেরিত ১৬:১.b

১৪ এমনটা মনে করা হয়, প্রায় ৪৭ খ্রিস্টাব্দে পৌল যখন তার প্রথম মিশনারি যাত্রায় লুস্ত্রায় এসেছিলেন, তখন তিনি তীমথিয়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এখন দু-তিন বছর পর পৌল যখন তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় আবারও এখানে আসেন, তখন তিনি যুবক তীমথিয়ের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন। কেন? কারণ মণ্ডলীর ভাইয়েরা ‘তীমথিয়ের খুব প্রশংসা করে।’ কেবলমাত্র তীমথিয়ের মণ্ডলীতেই নয় সেইসঙ্গে আশেপাশের মণ্ডলীগুলোতেও তার অনেক সুনাম ছিল। যেমন, এর মধ্যে একটা হল ইকনিয় মণ্ডলী, যেটা লুস্ত্রা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। (প্রেরিত ১৬:২) পরে পবিত্র শক্তির নির্দেশনায় লুস্ত্রার প্রাচীনেরা তীমথিয়কে এক গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার দেন। তারা তাকে ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেন, যেন তিনি পৌল ও সীলকে সাহায্য করতে পারেন। —প্রেরিত ১৬:৩.

১৫, ১৬. কেন ভাইয়েরা তীমথিয়ের প্রশংসা করেছিল?

১৫ কীভাবে তীমথিয় এত কম বয়সে সুনাম অর্জন করেছিলেন? তিনি খুব বুদ্ধিমান কিংবা দেখতে সুন্দর ছিলেন বলে? না কি তার অনেক দক্ষতা ছিল বলে? বেশিরভাগই লোকেরা এই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেয়। এক সময় ভাববাদী শমূয়েলও এমনটাই করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, “মানুষ যেভাবে দেখে, ঈশ্বর সেভাবে দেখেন না। মানুষ শুধু বাইরের চেহারা দেখে, কিন্তু যিহোবা হৃদয় দেখেন।” (১ শমূ. ১৬:৭, NW) ভাইয়েরা শুধুমাত্র তীমথিয়ের বাইরের বিষয়গুলো দেখে নয় বরং তার ভিতরে যে-গুণগুলো রয়েছে, তা দেখে তার প্রশংসা করেছিল।

১৬ পরবর্তী সময়, প্রেরিত পৌলও তীমথিয়ের ভালো গুণগুলোর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তীমথিয়ের মতো ভালো স্বভাব আর কারো নেই। তিনি ভাইদের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখান আর মণ্ডলীর জন্যও অনেক পরিশ্রম করেন। (ফিলি. ২:২০-২২) শুধু তাই নয়, তীমথিয় তার “নিষ্কপট বিশ্বাসের” জন্যও পরিচিত ছিলেন।—২ তীম. ১:৫.

১৭. তীমথিয়ের মতো হওয়ার জন্য বর্তমানে যুবক-যুবতীরা কী করতে পারে?

১৭ বর্তমানে, অনেক যুবক-যুবতী তীমথিয়ের মতো নিজেদের মধ্যে খ্রিস্টীয় গুণ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে। এভাবে, তারা অল্প বয়স থেকেই যিহোবা এবং ভাই-বোনদের কাছে সুনাম অর্জন করে। (হিতো. ২২:১; ১ তীম. ৪:১৫) তারা দু-রকমভাবে জীবনযাপন করে না অর্থাৎ ভাই-বোনদের কাছে একরকম আর বন্ধুদের কাছে অন্যরকম হওয়ার চেষ্টা করে না। (গীত. ২৬:৪) তীমথিয়ের মতো এই যুবক-যুবতীরা যিহোবার সেবায় অনেক কিছু করতে পারে। তারা যখন প্রকাশক হয় এবং যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নেয়, তখন মণ্ডলীতে সবাই খুব খুশি হয়।

“মণ্ডলীগুলো বিশ্বাসে দৃঢ় হতে থাকল” (প্রেরিত ১৬:৪, ৫)

১৮. (ক) বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করার সময় পৌল ও তীমথিয় কী করেছিলেন? (খ) এর ফলে মণ্ডলীগুলো কীভাবে উপকৃত হয়েছিল?

১৮ পৌল ও তীমথিয় অনেক বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করেন। ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে তারা বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করেন এবং পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে যা-কিছু কার্যভার পান, তা সম্পন্ন করেন। বাইবেল বলে, “তারা বিভিন্ন নগরের মধ্য দিয়ে যেতে লাগলেন এবং জেরুসালেমের প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা যে-সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেগুলো তাদের জানালেন, যাতে তারা সেগুলো পালন করে।” (প্রেরিত ১৬:৪) মণ্ডলীগুলো জেরুসালেমের প্রেরিতদের ও প্রাচীনদের দেওয়া নির্দেশনাগুলো নিশ্চয়ই মেনে নিয়েছিল। এই কারণে “মণ্ডলীগুলো বিশ্বাসে দৃঢ় হতে থাকল এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে লাগল।”—প্রেরিত ১৬:৫.

১৯, ২০. কেন খ্রিস্টানেরা “নেতৃত্ব নেন” এমন ভাইদের নির্দেশনাকে মেনে চলে?

১৯ বর্তমানেও, যখন আমরা “নেতৃত্ব নেন” এমন ভাইদের নির্দেশনাকে আনন্দের সঙ্গে মেনে নিই, তখন অনেক আশীর্বাদ পাই। (ইব্রীয় ১৩:১৭) বর্তমান জগৎ দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তাই “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” আমাদের যেকোনো নির্দেশনা দিক না কেন, তা দ্রুত মেনে চলা উচিত। (মথি ২৪:৪৫; ১ করি. ৭:২৯-৩১) এমনটা করার ফলে, আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে আর আমরা জগতের অশুচিতা থেকে পৃথক থাকতে পারব।—যাকোব ১:২৭.

২০ এটা সত্য যে, খ্রিস্টান প্রাচীন এবং পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্যেরা অসিদ্ধ, ঠিক যেমন প্রথম শতাব্দীতে পৌল, বার্ণবা, মার্ক এবং অন্যান্য অভিষিক্ত প্রাচীনেরা অসিদ্ধ ছিলেন। (রোমীয় ৫:১২; যাকোব ৩:২) কিন্তু তা সত্ত্বেও, আমরা পরিচালকগোষ্ঠীর উপর আস্থা রাখতে পারি। পরিচালকগোষ্ঠী যেকোনো পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের বাক্য মেনে চলে এবং প্রেরিতদের উদাহরণ নিখুঁতভাবে অনুকরণ করে। (২ তীম. ১:১৩, ১৪) তাই, বর্তমানে মণ্ডলীগুলো ক্রমাগত বিশ্বাসে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

তীমথিয় “সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য” কঠোর পরিশ্রম করেন

তীমথিয় সত্যিই প্রেরিত পৌলের এক ভালো সাহায্যকারী ছিলেন। তারা দু-জনে প্রায় ১১ বছর একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, পৌল তীমথিয়ের সম্বন্ধে লেখেন: “তোমাদের কাছে পাঠানোর জন্য তীমথিয়ের মতো এমন আর কেউ নেই, যে প্রকৃতই তোমাদের জন্য চিন্তা করবে। . . . তোমরা তীমথিয়ের উত্তম উদাহরণের কথা জান যে, বাবার সঙ্গে সন্তান যেমন কাজ করে, তেমনই তিনি সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে দাসত্ব করেছেন।” (ফিলি. ২:২০, ২২) তীমথিয় প্রচারের কাজে নিজেকে পুরোপুরি বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাই, তিনি পৌলের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন। তিনি আমাদের জন্যও এক উত্তম উদাহরণ।

তীমথিয়।

তীমথিয়ের বাবা গ্রিক ছিলেন আর মা যিহুদি। তিনি সম্ভবত লুস্ত্রা নগরে বড়ো হয়েছিলেন। তার মা উনীকী ও দিদিমা লোয়ী তাকে একদম ছোটো থেকেই শাস্ত্র সম্বন্ধে শেখাতে শুরু করেছিলেন। (প্রেরিত ১৬:১, ৩; ২ তীম. ১:৫; ৩:১৪, ১৫) এই তিন জন সম্ভবত, সেই সময়ে খ্রিস্টান হয়েছিলেন, যখন প্রেরিত পৌল তার প্রথম মিশনারি যাত্রায় লুস্ত্রায় এসেছিলেন।

কিছু বছর পর, যখন পৌল তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় লুস্ত্রায় আসেন, তখন তীমথিয়ের বয়স সম্ভবত ২০ বছর ছিল। “লুস্ত্রা ও ইকনিয়ের ভাইয়েরা তীমথিয়ের খুব প্রশংসা করত।” (প্রেরিত ১৬:২) ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির অনুপ্রেরণায় এই যুবক সম্বন্ধে কিছু “ভবিষ্যদ্‌বাণী” করা হয়েছিল। সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী পৌল এবং সেখানকার প্রাচীনেরা সিদ্ধান্ত নেন যে, তারা তীমথিয়কে এক বিশেষ কার্যভার দেবেন। (১ তীম. ১:১৮; ৪:১৪; ২ তীম. ১:৬) তাকে পৌলের সঙ্গী হয়ে মিশনারি যাত্রায় যেতে হত। এরজন্য তাকে তার পরিবার থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে। এ ছাড়া, তাকে ত্বকচ্ছেদ করাতে হবে, যাতে তার জন্য যিহুদিরা বিঘ্ন না পায়।—প্রেরিত ১৬:৩.

তীমথিয় তার মিশনারি যাত্রার সময় বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রচার করেন। তিনি পৌল ও সীলের সঙ্গে ফিলিপীতে, পরে সীলের সঙ্গে বিরয়াতে প্রচার করেন। আর থিষলনীকীতে একা একাই প্রচার করেন। করিন্থে আবারও যখন পৌলের সঙ্গে তার দেখা হয়, তখন তিনি তাকে থিষলনীকীর ভাইয়েরা যে, ক্লেশের মধ্যেও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছে, সেই বিষয়ে ভালো খবর দেন। (প্রেরিত ১৬:৬–১৭:১৪; ১ থিষল. ৩:২-৬) এরপর, পৌল ইফিষে থাকার সময় করিন্থ মণ্ডলীর বিষয়ে এমন কিছু শোনেন, যার ফলে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। আর তখন তিনি তীমথিয়কে করিন্থে পাঠানোর কথা চিন্তা করেন। (১ করি. ৪:১৭) পরে যখন তীমথিয় ও ইরাস্ত পৌলের সঙ্গে ইফিষে ছিলেন, তখন পৌল তাদের ম্যাসিডোনিয়ায় পাঠান। কিন্তু, পৌল যখন করিন্থ থেকে রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে চিঠি লেখেন, তখন ইতিমধ্যেই তীমথিয় পৌলের কাছে ফিরে গিয়েছেন। (প্রেরিত ১৯:২২; রোমীয় ১৬:২১) এই কয়েকটা উদাহরণ দেখায় যে, তীমথিয় সুসমাচারের জন্য কত দূরদূরান্তে ভ্রমণ করেছিলেন!

পৌল তীমথিয়কে উৎসাহিত করে বলেন: “তুমি যুবক বলে কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে।” (১ তীম. ৪:১২) এখানে পৌল যেভাবে তাকে উৎসাহিত করেন, সেখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, তীমথিয় হয়তো তার কার্যভারের জন্য নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতেন। পৌলের সম্পূর্ণ আস্থা ছিল যে, তীমথিয় তার কার্যভার ভালোভাবে সম্পন্ন করবেন। তাই, তিনি তীমথিয়কে এমন একটা মণ্ডলীতে পাঠান, যেখানে কিছু সমস্যা চলছিল আর এই নির্দেশনা দেন, “কয়েক জনকে এই আদেশ দাও, যেন তারা মিথ্যা শিক্ষা ছড়িয়ে না দেয়।” (১ তীম. ১:৩) পৌল তাকে প্রাচীন ও পরিচারক দাস নিযুক্ত করার অধিকারও দিয়েছিলেন।—১ তীম. ৫:২২.

তীমথিয়ের ভালো গুণগুলোর জন্য পৌল তাকে খুবই ভালোবাসতেন। বাইবেল জানায়, পৌল তীমথিয়কে নিজের ছেলের মত মনে করতেন। তীমথিয় পৌলের খুবই ঘনিষ্ঠ আর নির্ভরযোগ্য সঙ্গী ছিলেন। তাই তিনি লেখেন যে, তিনি তীমথিয়ের কান্নার কথা মনে করেন আর তাকে দেখার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী হয়ে আছেন এবং প্রার্থনা করার সময় তিনি তার কথা উল্লেখ করেন। এমনটা মনে হয়, তীমথিয়ের পেটের কোনো অসুখ ছিল যে-কারণে তিনি “বার বার অসুস্থ” হয়ে পড়তেন। পৌল একজন বাবার মতোই তীমথিয়ের জন্য চিন্তা করতেন, তাই তিনি তাকে কিছু পরামর্শ দেন।—১ তীম. ৫:২৩; ২ তীম. ১:৩, ৪.

পৌল যখন প্রথম বার রোমে বন্দি হন, তখন তাকে সাহায্য করার জন্য তীমথিয় তার সঙ্গে ছিলেন। কিছু সময়ের জন্য তীমথিয়ও বন্দি অবস্থায় ছিলেন এবং কষ্টভোগ করেছিলেন। (ফিলী. ১; ইব্রীয় ১৩:২৩) পৌল যখন বুঝতে পারেন, খুব শীঘ্রই তিনি মারা যাবেন, তখন তিনি তীমথিয়কে লেখেন: “তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার কাছে আসার জন্য যথাসাধ্য করো।” (২ তীম. ৪:৬-৯) এখান থেকে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তীমথিয় তার এই প্রিয় বন্ধু এবং পরামর্শদাতার সঙ্গে শেষ বারের মত দেখা করতে পেরেছিলেন কি না সেই বিষয়ে বাইবেল কিছু জানায় না।

মার্ক ঈশ্বরের সেবায় বেশ কিছু বিশেষ সুযোগ পান

মার্ক লিখিত সুসমাচারের বই জানায়, কিছু লোক যখন যিশুকে ধরতে এসেছিল, তখন তারা “একজন যুবক” ব্যক্তিকেও ধরার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, সেই যুবক “উলঙ্গ অবস্থাতেই পালিয়ে গেল।” (মার্ক ১৪:৫১, ৫২) এই ঘটনার কথা কেবলমাত্র মার্কই উল্লেখ করেছেন। এর মানে সেই যুবক হয়তো মার্ক নিজেই ছিলেন আর তিনি যিশুর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। এই মার্ক, যোহন মার্ক নামেও পরিচিত।

একজন বয়স্ক ব্যক্তি কিছু বলছেন আর মার্ক তার কথা শুনে শুনে লিখছেন।

এই ঘটনার প্রায় ১১ বছর পর, হেরোদ আগ্রিপ্প খ্রিস্টানদের উপর তাড়না করতে শুরু করেন। সেই সময়ে জেরুসালেম মণ্ডলীর “বেশ কয়েক জন” প্রার্থনা করার জন্য মরিয়ম নামে একজন বোনের বাড়িতে একত্রিত হন। এই মরিয়ম মার্কের মা ছিলেন। পিতরকে যখন একজন স্বর্গদূত কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন, তখন তিনি এই মরিয়মের বাড়িতেই গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১২:১২) এই বাড়িতেই মার্ক বড়ো হয়েছিলেন আর হয়তো এই বাড়িতেই খ্রিস্টীয় সভাগুলো হত। তাই, যিশুর প্রাথমিক শিষ্যদের সঙ্গে মার্কের ভালো পরিচয় ছিল এবং তারা মার্কের উপর ভালো প্রভাব ফেলেছিল।

মার্ক মণ্ডলীর অনেক অধ্যক্ষের সঙ্গে সেবা করেছিলেন। এমনটা মনে করা হয়, তিনি সবার প্রথমে তার আত্মীয় বার্ণবা এবং প্রেরিত পৌলের সঙ্গে সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় সেবা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ১২:২৫) এরপর যখন বার্ণবা ও পৌল তাদের প্রথম মিশনারি যাত্রায় গিয়েছিলেন, তখন মার্কও তাদের সঙ্গে যান। তারা প্রথমে সাইপ্রাসে আর পরে এশিয়া মাইনরে যান। বাইবেল বলে, এখান থেকে মার্ক জেরুসালেমে ফিরে গিয়েছিলেন, কিন্তু কেন তা জানায় না। (প্রেরিত ১৩:৪, ১৩) মার্ককে নিয়ে বার্ণবা ও পৌলের মধ্যে ঝগড়া হওয়ার পর, মার্ক ও বার্ণবা সাইপ্রাসে মিশনারি যাত্রা চালিয়ে যান।—প্রেরিত ১৫:৩৬-৩৯.

৬০ অথবা ৬১ খ্রিস্টাব্দে মার্ক আবারও পৌলের সঙ্গে রোমে সেবা করেন, যেখানে পৌল বন্দি ছিলেন। এখান থেকে বোঝা যায়, তারা তাদের ঝগড়া মিটমাট করে নিয়েছিলেন। পৌল কলসীয় মণ্ডলীর উদ্দেশে লিখেছিলেন: “আমার সহবন্দি আরিষ্টার্খ এবং বার্ণবার আত্মীয় মার্কও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন (যার বিষয়ে তোমরা ইতিমধ্যে এই আদেশ পেয়েছ যে, তিনি যদি তোমাদের কাছে আসেন, তা হলে তোমরা তাকে সাদরে গ্রহণ করবে)।” (কল. ৪:১০) এর থেকে বোঝা যায়, পৌল মার্ককে কলসীয়তে পাঠানোর কথা চিন্তা করছিলেন, যেন মার্ক মণ্ডলীকে সাহায্য করতে পারেন।

মার্ক ৬২ থেকে ৬৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রেরিত পিতরের সঙ্গে ব্যাবিলনেও সেবা করেছিলেন। যেমন, আমরা এই বইয়ের ১০ অধ্যায়ে পড়েছিলাম, তাদের দু-জনের মধ্যে ইতিমধ্যেই এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কারণ পিতর যুবক মার্ককে “আমার ছেলের মতো” বলে সম্বোধন করেছিলেন।—১ পিতর ৫:১৩.

পরে, ৬৫ খ্রিস্টাব্দে পৌলকে যখন দ্বিতীয় বার রোমে বন্দি করা হয়েছিল, তখন তিনি তীমথিয়কে, যিনি ইফিষে ছিলেন, একটা চিঠি লেখেন। তিনি বলেন, “তুমি মার্ককে সঙ্গে করে নিয়ে এসো, কারণ আমার সেবা কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করতে পারবেন।” (২ তীম. ৪:১১) সেই সময় মার্ক ইফিষে ছিলেন। পৌলের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মার্ক দ্রুত রোমে চলে যান। তার এই ভালো গুণের জন্য তিনি পৌল, বার্ণবা ও পিতরের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন।

মার্ক সবচেয়ে বিশেষ যে-সম্মান পেয়েছিলেন, তা হল তিনি ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় সুসমাচারের একটা বই লিখেছিলেন। কিছু ব্যক্তি মনে করে, মার্ক বেশিরভাগ তথ্য পিতরের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। আর এটা হয়তো সঠিক কারণ এই বইয়ে এমন নিখুঁত তথ্য রয়েছে, যা শুধুমাত্র পিতরই বলতে পারতেন, যিনি সেই ঘটনাগুলো নিজের চোখে দেখেছিলেন। তবে, মার্ক এই বইটি রোমে থাকার সময় লিখেছিলেন, পিতরের সঙ্গে ব্যাবিলনে থাকার সময় নয়। তিনি তার বইয়ে অনেক ল্যাটিন শব্দ ব্যবহার করেছেন আর অনেক ইব্রীয় শব্দকে এমনভাবে অনুবাদ করেছেন, যাতে ন-যিহুদিরা সহজেই বুঝতে পারে। এটা থেকে বোঝা যায়, মার্ক তার বই লেখার সময়ে ন-যিহুদিদের কথা মাথায় রেখেছিলেন।

a “মার্ক ঈশ্বরের সেবায় বেশ কিছু বিশেষ সুযোগ পান” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b “তীমথিয় ‘সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য’ কঠোর পরিশ্রম করেন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার