প্রথমে এই সুসমাচার প্রচারিত হওয়া আবশ্যক
“অগ্রে সর্ব্বজাতির কাছে সুসমাচার প্রচারিত হওয়া আবশ্যক।”—মার্ক ১৩:১০.
১, ২. যিহোবার সাক্ষীদের শনাক্তিচিহ্ন কী এবং কেন?
যিহোবার সাক্ষীরা কেন এত অধ্যাবসায়ের সাথে প্রচার কাজ করে? সত্যই, জগদ্ব্যাপী জনসাধারণ্যে পরিচর্যার জন্য আমরা পরিচিত, তা ঘরে ঘরে, রাস্তায় অথবা রীতিবহির্ভূতভাবেই হোক। যে কোন উপযুক্ত সময়ে আমরা নিজেদের যিহোবার সাক্ষী হিসাবে চিহ্নিত আর আমাদের এই মূল্যবান সুসমাচার কৌশলের সাথে উপস্থাপন করি। তাই, আমরা বলতে পারি যে এই পরিচর্যা কাজ আমাদের শনাক্তিচিহ্ন!—কলসীয় ৪:৬.
২ শুধু এই বিষয়ে চিন্তা করুন—যখন লোকেরা দেখে তাদের এলাকায় একদল উত্তমরূপে পোশাকপরিচ্ছদ পরা পুরুষ, স্ত্রী আর ছেলেমেয়ে হাতে ব্রিফকেস্ নিয়ে, সাধারণত তারা প্রথমে কী মনে করে? তারা কি মনে করে ‘ঐ দেখ ক্যাথলিকরা (অথবা অর্থডক্সরা) আবার আসছে!’ কিংবা ‘পেন্টিকস্টালরা (বা বাপটিস্টরা) আবার আসছে!’ না। তারা জানে এই ধর্মগুলি সপরিবারে ঘরে ঘরে প্রচার কাজ করে না। হয়ত কিছু ধর্মীয় দল কিছু “মিশনারীকে” কোন বিশেষ এলাকায় দুই বছরের জন্য পাঠায় কিন্তু তাদের ধর্মের অন্য সদস্যেরা এইরকম কোন পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করে না। অন্যদের কাছে উদ্দীপনার সাথে উপযুক্ত সুযোগ ব্যবহার করে এই বার্তা জানানোর জন্য একমাত্র যিহোবার সাক্ষীরা জগদ্ব্যাপী পরিচিত। আর তারা তাদের পত্রিকা প্রহরীদুর্গ আর আওয়েক!-এর জন্য পরিচিত।—যিশাইয় ৪৩:১০-১২; প্রেরিত ১:৮.
খ্রীষ্টীয় জগতের পাদ্রিদের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য
৩, ৪. অনেক ক্ষেত্রে খ্রীষ্টীয় পাদ্রিবর্গকে প্রচার-মাধ্যমে কিভাবে তুলে ধরে?
৩ বিপরীতে, সংবাদ পত্রে বার বার কিছু দেশের পাদ্রিবর্গদের শিশুকামী, অনৈতিক প্রতারক আর অসৎ হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মাংসের কাজ সকল আর তাদের অত্যধিক বিলাশপূর্ণ জীবনধারা সকলের চক্ষুগোচর হয়ে থাকে। একজন জনপ্রিয় গীতিকার তার গানে এটি ভাল করে বর্ণনা করে “যীশু কি তাঁর টেলিভিশন প্রোগ্রামে রোলেক্স পরবেন?” [অতিমূল্যবান সোনার ঘড়ি] তিনি এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন: “যদি যীশু আবার পৃথিবীতে আসতেন তাহলে কি তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি হতেন? তার দ্বিতীয় ঘর কি পাম স্প্রিংসে [ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ধনী সমাজ] হত আর তিনি যে কত ধনী তা লুকাবার চেষ্টা করত?” কত যথাযথ যাকোবের বাক্যগুলি: “তোমরা পৃথিবীতে সুখভোগ ও বিলাস করিয়াছ, তোমরা হত্যার দিনে আপন আপন হৃদয় তৃপ্ত করিয়াছ।”—যাকোব ৫:৫; গালাতীয় ৫:১৯-২১.
৪ রাজনীতিবিদ্দের পাদ্রিবর্গের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর এমনকি তাদের রাজনৈতিক প্রার্থী হিসাবে ভোটে অংশগ্রহণ করা দেখায় যে তারা আজকের দিনের অধ্যাপক আর ফরীশীদের মত। ঠিক একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আর ক্যানাডার মত। দেশগুলিতে মামলা আর বিচার পাদ্রিবর্গের বিরুদ্ধে যাওয়ার ফলে অত্যন্ত উঁচু মূল্য দিতে হচ্ছে, ধর্মীয় সম্পদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, বাচ্চা আর প্রাপ্তবয়স্কদের পাদ্রিবর্গের সাথে লম্পটতার ফলে।—মথি ২৩:১-৩.
৫. কেন খ্রীষ্টীয় পাদ্রিবর্গ “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” হিসাবে নিজেদের প্রমাণিত করতে পারেনি?
৫ তাই যীশু তাঁর দিনের পাদ্রিবর্গের বিষয়ে যথাযথরূপে বলতে পেরেছিলেন: “হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা চূণকাম করা কবরের তুল্য; তাহা বাহিরে দেখিতে সুন্দর বটে, কিন্তু ভিতরে মরা মানুষের অস্থি ও সর্ব্বপ্রকার অশুচিতা ভরা। তদ্রূপ তোমরাও বাহিরে লোকদের কাছে ধার্ম্মিক বলিয়া দেখাইয়া থাক, কিন্তু ভিতরে তোমরা কাপট্য ও অধর্ম্মে পরিপূর্ণ।” তাই ঈশ্বর খ্রীষ্টীয় জগতের পাদ্রিবর্গ, তারা ক্যাথলিক, প্রটেস্টান্ট, অর্থডক্স অথবা কোন সম্প্রদায়ের নয়, যাই হোক না কেন তাদের ঈশ্বর প্রচার করার কাজ দেননি। কারণ তারা ভবিষ্যদ্বাণী করা “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” প্রমাণিত হয়নি।—মথি ২৩:২৭, ২৮; ২৪:৪৫-৪৭.
কেন সুসমাচার অগ্রে প্রচার করা হবে?
৬. কোন্ ঘটনাগুলি শীঘ্রই ঘটতে চলেছে?
৬ যীশুর সংক্ষিপ্ত আদেশ সমুদয় জগতে প্রচার করার বিষয়ে শুধু মার্ক “অগ্রে কথাটি ব্যবহার করেছেন। (মার্ক ১৩:১০; তুলনা করুন মথি ২৪:১৪.) জে. বি. ফিলিপসের সংস্করণটি বলে: “শেষ আসবার আগে সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচারিত হবে।” “অগ্রে” ক্রিয়া-বিশেষণ ব্যবহারের অর্থ হল যে আরও ঘটনা ঘটবে পৃথিবীব্যাপী প্রচার কাজের পরে। সেই ঘটনাগুলির অন্তর্ভুক্ত হলে প্রতিজ্ঞাত মহাক্লেশ আর নতুন জগতের উপরে খ্রীষ্টের ধার্মিক শাসনব্যবস্থা।—মথি ২৪:২১-৩১; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬; ২১:১-৪.
৭. কেন ঈশ্বর চান যে সুসমাচার প্রথমে করা হোক?
৭ তাহলে কেন ঈশ্বর চান প্রথমে সুসমাচার প্রচার করা হোক? একটি কারণ, তিনি হলেন প্রেমের, ন্যায়বিচারের, প্রজ্ঞার আর শক্তির ঈশ্বর। যীশুর বাক্য যা লেখা আছে মথি ২৪:১৪ আর মার্ক ১৩:১০ পদে, তার পরিপূর্ণতা আমরা যিহোবার গুণাবলির উত্তম প্রদর্শন দেখতে পাই। আমরা সংক্ষেপে এক একটি গুণাবলিকে পরীক্ষা করি এবং দেখি যে তা কিভাবে প্রচার কাজের সাথে সংযুক্ত।
সুসমাচার এবং যিহোবার প্রেম
৮. সুসমাচার প্রচার কিভাবে ঈশ্বরের প্রেম প্রকাশ করে? (১ যোহন ৪:৭-১৬)
৮ কিভাবে সুসমাচার প্রচার যিহোবার প্রেম প্রতিফলিত করে? প্রথমত, এই বার্তা শুধুমাত্র একটি জাতি অথবা দলের জন্য নয়। এই সুসমাচার “সর্ব্বজাতির” জন্য। ঈশ্বর যিহোবা মনুষ্য পরিবারকে এত ভালবাসেন যে তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠালেন, শুধু একটি জাতির জন্য নয় কিন্তু সমুদয় মানবজাতির পাপের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান হওয়ার জন্য। প্রেরিত যোহন লেখেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। কেননা ঈশ্বর জগতের বিচার করিতে পুত্ত্রকে জগতে প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু জগৎ যেন তাঁহার দ্বারা পরিত্রাণ পায়।” (যোহন ৩:১৬, ১৭) যে সুসমাচার এক নতুন শান্তি, সমন্বয় আর ন্যায়বিচারের পৃথিবী প্রতিজ্ঞা করে, নিশ্চয়ই সেই ঈশ্বরের প্রেমের প্রমাণ।—২ পিতর ৩:১৩.
সুসমাচার এবং যিহোবার শক্তি
৯. যিহোবা কেন খ্রীষ্টিয় জগতের শক্তিশালী ধর্মগুলিকে ব্যবহার করেননি সুসমাচার প্রচার করার জন্য?
৯ কী করে সুসমাচার প্রচারের দ্বারা যিহোবার শক্তি প্রদর্শিত হচ্ছে? চিন্তা করুন, তাঁর কাজ সম্পাদন করার জন্য তিনি কাকে ব্যবহার করেছেন? তিনি কি খ্রীষ্টীয় জগতের শক্তিশালী ধর্মীয় সংগঠনগুলি যেমন রোমান ক্যাথলিক গির্জা অথবা বিশিষ্ট প্রটেস্টান্ট সম্প্রদায়গুলিকে ব্যবহার করেছেন? না, রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কের ফলে তাদের অযোগ্য করা হয়েছে। (যোহন ১৫:১৯; ১৭:১৪; যাকোব ৪:৪) তাদের ধন এবং ধনী শাসক শ্রেণীর সাথে তাদের সংযোগ আর প্রভাব, যিহোবাকে খুশি করেনি, তাদের পরম্পরা-ভিত্তিক ঈশ্বরতত্ত্বও করেনি। ঈশ্বরের ইচ্ছা পরিপূর্ণ করার জন্য মানুষের শক্তি ব্যবহৃত হয় না।—সখরিয় ৪:৬.
১০. ঈশ্বর কাদের মনোনীত করেছেন প্রচার কাজ করার জন্য?
১০ সেটি ঠিক এইরকম যেমন প্রেরিত পৌল করিন্থ মণ্ডলীর প্রতি লেখা চিঠিতে বর্ণনা করেন: “হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদের আহ্বান দেখ, যেহেতুক মাংস অনুসারে জ্ঞানবান্ অনেক নাই, পরাক্রমী অনেক নাই, উচ্চ পদস্থ অনেক নাই; কিন্তু ঈশ্বর জগতীস্থ মূর্খ বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন জ্ঞানবান্দিগকে লজ্জা দেন; এবং ঈশ্বর জগতের দুর্ব্বল বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন শক্তিমন্ত বিষয় সকলকে লজ্জা দেন; এবং জগতের যাহা যাহা নীচ ও যাহা যাহা তুচ্ছ, যাহা যাহা কিছু নয়, সেই সকল ঈশ্বর মনোনীত করিলেন, যেন, যাহা যাহা আছে, সে সকল অকিঞ্চন করেন; যেন কোন মর্ত্ত্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে শ্লাঘা না করে।”—১ করিন্থীয় ১:২৬-২৯.
১১. সাক্ষীদের সম্বন্ধে কোন্ বিষয়গুলি তাদের অদ্বিতীয় করেছে?
১১ যিহোবার সাক্ষীদের সংগঠনে খুব কম ধনী ব্যক্তি আছে আর নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে কোন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ্ নেই। তাদের কঠোর নিরপেক্ষতা রাজনীতির ক্ষেত্রে দেখায় যে তারা কোন রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে না। অপরপক্ষে, তারা এই বিংশ শতাব্দীতে বেশির ভাগ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের প্ররোচনার জন্য জঘন্য নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। তবুও, নাৎসিবাদ, চণ্ডনীতিবাদ, সাম্যবাদ আর স্বাদেশিকতার শিষ্যদের মিথ্যা ধর্মের কাছ থেকে কঠোর বিরোধিতা সত্ত্বেও যিহোবার সাক্ষীরা শুধু প্রচার কাজ করছে না কিন্তু সারা জগদ্ব্যাপী তাদের সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়েও চলেছে।—যিশাইয় ৬০:২২.
১২. কেন সাক্ষীরা সফলতা অর্জন করেছে?
১২ সাক্ষীদের সফলতার কারণ কী? যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রতিজ্ঞা করেন: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” তাহলে তাদের সফলতার উৎস কী? যীশু বলেন “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে।” ঠিক তেমনি আজকের দিনে জগদ্ব্যাপী পরিচর্যার সফলতার কারণ মানুষের ক্ষমতা নয় কিন্তু ঈশ্বর থেকে শক্তির ফলে। ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঈশ্বর থেকে শক্তির ফলে। ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিক্ষামূলক কাজকে সম্পন্ন করতে আপাতদৃষ্টিতে দুর্ব্বল লোকেদের ঈশ্বর ব্যবহার করেন।—প্রেরিত ১:৮; যিশাইয় ৫৪:১৩.
সুসমাচার এবং যিহোবার প্রজ্ঞা
১৩. (ক) সাক্ষীরা কেন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে আর বিনা-বেতনে কাজ করে? (খ) যিহোবা কি করে শয়তানের টিট্কারির প্রত্যুত্তর দিয়েছেন?
১৩ সুসমাচার স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা প্রচারিত হচ্ছে। যীশু বলেছিলেন, “তোমরা বিনামূল্যে পাইয়াছ, বিনামূল্যেই দান করিও।” (মথি ১০:৮) তাই ঈশ্বরের সেবা করার জন্য কোন যিহোবার সাক্ষী বেতন পায় না, তারা চায়ও না। এমনকি তাদের সভাগুলিতে চাঁদা নেওয়া হয় না। তারা খুশি হয় সম্পূর্ণরূপে নিঃস্বার্থ পরিচর্যা দিতে যাতে করে ঈশ্বরকে যে টিট্কারি দিচ্ছে শয়তান দিয়াবল তাকে উত্তর দিতে পারে। ঈশ্বরের আত্মিক বিরোধি আসলে বলতে চেয়েছে যে মানুষ নিঃস্বার্থে ঈশ্বরের সেবা করবে না। প্রজ্ঞার ফলে যিহোবা তর্কাতীত উত্তর দিয়েছেন শয়তানের টিট্কারিকে—লক্ষ লক্ষ বিশ্বস্ত খ্রীষ্টীয় সাক্ষীরা ঘরে ঘরে, রাস্তায় আর রীতিবহির্ভূতরূপে সুসমাচার প্রচার করছে।—ইয়োব ১:৮-১১; ২:৩-৫; হিতোপদেশ ২৭:১১.
১৪. পৌল যা ইঙ্গিত করেন সেই “গুপ্ত জ্ঞান” কী?
১৪ সুসমাচার প্রচারের বিষয়ে ঈশ্বরের প্রজ্ঞার আরও একটি প্রমাণ হল যে রাজ্যের প্রতিজ্ঞাটিই ঈশ্বরের প্রজ্ঞার প্রকাশ। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তথাপি আমরা সিদ্ধদের মধ্যে জ্ঞানের কথা কহিতেছি, কিন্তু সেই জ্ঞান এই যুগের নয়, এবং এই যুগের শাসনকর্ত্তাদেরও নয়, ইঁহারা ত অকিঞ্চন হইয়া পড়িতেছেন। কিন্তু আমরা নিগূঢ়তত্ত্বরূপে ঈশ্বরের সেই জ্ঞানের কথা কহিতেছি, সেই গুপ্ত জ্ঞান, যাহা ঈশ্বর আমাদের প্রতাপের জন্য যুগপর্য্যায়ের পূর্ব্বে নিরূপণ করিয়াছিলেন।” সেই “গুপ্ত জ্ঞান”-এর অর্থ হল ঈশ্বরের প্রজ্ঞার পথে যার মাধ্যমে, এদনে যে বিদ্রোহ সূত্রপাত হয় তা তিনি শেষ করবেন। প্রজ্ঞার সেই নিগূঢ়তত্ত্ব যীশুর কাছে প্রকাশিত হয়, কারণ তিনি হলেন ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচারের মুখ্য চরিত্র।a—১ করিন্থীয় ২:৬, ৭; কলসীয় ১:২৬-২৮.
সুসমাচার এবং ঈশ্বরের ন্যায়বিচার
১৫. আমরা কী করে জানতে পারি যে যিহোবা হচ্ছেন ন্যায়বিচারের ঈশ্বর? (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪; গীত ৩৩:৫)
১৫ মার্ক ১৩:১০ পদে লেখা “অগ্রে” কথাটির সঙ্গে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব আমরা বিশেষভাবে বুঝতে পারি। যিহোবার ন্যায় তাঁর প্রেমময় করুণার সঙ্গে মিলিত। তিনি তাঁর ভাববাদী যিরমিয়ের মাধ্যমে বলেন: “যে ব্যক্তি শ্লাঘা করে, সে এই বিষয়ের শ্লাঘা করুক যে, সে বুঝিতে পারে ও আমার এই পরিচয় পাইয়াছে যে, আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে আমি প্রীত, ইহা সদাপ্রভু কহেন।”—যিরমিয় ৯:২৪.
১৬. কী করে আমরা উদাহরণ দ্বারা বুঝতে পারি যে ন্যায়বিচার করার আগে সাবধান করার প্রয়োজন?
১৬ যিহোবার ন্যায় কিভাবে সুসমাচার প্রচার করার দ্বারা দেখানো হচ্ছে? একটি উদাহরণের দ্বারা আমরা সেটাকে বুঝবার চেষ্টা করি, একজন মা সুস্বাদু চকোলেট কেক বানিয়েছেন সন্ধ্যেবেলা যখন অতিথিরা আসবে তখন খাওয়ার জন্য। যদি তিনি তার ছেলেমেয়েদের কখন সেই কেকটি খাওয়া হবে, না বলেন আর রান্না ঘরের টেবিলে সেটি রেখে যান, তাহলে ছেলেমেয়েদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কী হবে? আমরা কোন একসময়ে নিশ্চয়ই ছোট ছিলাম! কোন একটি বাচ্চা আঙ্গুল দিয়ে তা চেখে দেখতে চাইবে! এখন যদি মা তাদের আগে সাবধান করে না দেন তাহলে তার কোন দৃঢ় ভিত্তিমূল থাকবে না সংশোধন করার জন্য। কিন্তু অপরপক্ষে যদি তিনি পরিষ্কাররূপে বলে থাকেন যে, যখন অতিথিরা আসবে তখন কেক খাওয়া হবে তাই কেউ যেন কেকটাতে হাত না দেয়, তাহলে তিনি পরিষ্কাররূপে সাবধান করে দিয়েছেন। যদি ছেলেমেয়েরা অবাধ্য হয় তাহলে তিনি কঠোর আর ন্যায্য সংশোধন করতে পারেন।—হিতোপদেশ ২৯:১৫.
১৭. উনিশশো উনিশ সাল থেকে কিভাবে যিহোবা বিশেষরূপে ন্যায় প্রদর্শন করেছেন?
১৭ ন্যায়পরায়ণতার ফলে যিহোবা সাবধান না করে দিয়ে জগৎ পরিস্থিতির উপরে তাঁর বিচার নিয়ে আসবেন না। ফলতঃ, বিশেষত ১৯১৯ সাল থেকে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের “যাতনার” পর থেকে, যিহোবা তাঁর সাক্ষীদের পৃথিবীব্যাপী উদ্যমতার সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করার জন্য ব্যবহার করেছেন। (মথি ২৪:৭, ৮, ১৪) তাই জাতিগণ বলতে পারে না যে তারা এই অতুলনীয় সাবধানবাণী শোনেনি।
জগদ্ব্যাপী কতটা প্রচার কাজ করা হয়েছে?
১৮. (ক) সাক্ষীদের বিচ্ছিন্ন এলাকায় প্রচার করার কী প্রমাণ রয়েছে? (খ) আপনি অন্য আরও কোন উদাহরণ জানেন কী?
১৮ জগদ্ব্যাপী এই শিক্ষামূলক কাজ কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে তার ইঙ্গিত আমরা এই বই থেকে পেতে পারি শেষ স্থান—উত্তরদিকে যাত্রা (ইংরাজি)। বইটির লেখক বলেন যে, যখন তিনি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ফুলা, যা স্কট্ল্যান্ডের শেট্ল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের উত্তরদিকে অবস্থিত তার সামুদ্রিক নকশা পরীক্ষা করেন তখন তা ইঙ্গিত করে “দ্বীপের চারিদিকে WKS (wrecks) ধ্বংসাবশেষ, RKS (rocks) পাথর, LDGS (ledges) সংঙ্কীর্ণ শৈলশিরা, আর OBS (obstructions) অবরোধ আছে।” এই “নকশাগুলি সম্ভাব্য সমুদ্রগামী নাবিকদের সাবধান করে দিত যাতে তারা দূরে সরে থাকে। ফুলার সমুদ্র যেন বিপদজনক মাইনে ভরা ছিল ফলে পোতে ভ্রমণকারী, দিনে প্রমোদ-ভ্রমণকারী আর এমনকি ইংল্যান্ডের রাণীর পৌর সংস্থার লোকেদের পক্ষেও এই দ্বীপটিতে যাওয়া কষ্টকর ছিল—কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে আমি জানতে পারলাম যে—যিহোবার সাক্ষীদের পক্ষে তা ছিল না।” তিনি আরও বলেন: “ঠিক যেমন তারা বড় বড় শহরগুলির বস্তি থেকে তৃতীয় বিশ্ব পর্যন্ত ধর্মান্তরিত করার জন্য ব্যক্তিদের খুঁজেছে, ঠিক তেমনি তারা সুদূর ফুলাতে তাদের বিশ্বাস ছড়িয়েছে।” তিনি স্বীকার করেন যে এক স্থানীয় নিবাসী অ্যান্ড্রু কিছু মাস আগে তার বাড়ির দরজার সামনে প্রহরীদুর্গ পান। তারপর তিনি আরও বলেন: “এক সপ্তাহ বাদে আমি [ডানিশ ভাষায় আওয়েক!] ফেরস-এ [উত্তর সাগর দ্বীপপুঞ্জ] আর দুই মাস বাদে গ্রীণল্যান্ডের নুক-এ [ডানিশ ভাষায় প্রহরীদুর্গ] দেখতে পাই। উত্তর অক্ষাংশে যিহোবার সাক্ষীদের এই প্রচার কাজের কত সুন্দর প্রামাণিক সাক্ষ্য!
সাক্ষীদের কী সাহায্য করে চালিয়ে যেতে?
১৯, ২০. (ক) যিহোবার সাক্ষীদের প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে কী সাহায্য করে? (খ) কোন্ প্রশ্নগুলির পরে উত্তর দেওয়া হবে?
১৯ সত্যই, অনেক দিনের সাক্ষী হলেও, ঘরে ঘরে গিয়ে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা সহজ নয়। তাহলে সাক্ষীদের কী সাহায্য করে চালিয়ে যেতে? তাদের খ্রীষ্টীয় উৎসর্গীকরণ আর দায়িত্ববোধ। পৌল লেখেন: “কারণ আমি যদিও সুসমাচার প্রচার করি, তবু আমার শ্লাঘা করিবার কিছুই নাই; কেননা অবশ্য বহনীয় ভার আমার উপরে অর্পিত; ধিক্ আমাকে, যদি আমি সুসমাচার প্রচার না করি।” সত্য খ্রীষ্টানদের কাছে জীবন-দায়ক বার্তা আছে, তাহলে কী করে তারা সেই বার্তাকে নিজেদের কাছে রাখতে পারে? রক্তের দায়ের যে নীতি যা বিপদের সময়ে সাবধান না করার ফলে আসতে, এটি হল সুসমাচার প্রচার করার আবশ্যক কারণ।—১ করিন্থীয় ৯:১৬; যিহিষ্কেল ৩:১৭-২১.
২০ কী করে তাহলে সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে? সাক্ষীদের সফলতার চাবিকাঠি কী? পরিচর্যার ও সংগঠনের কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি সাহায্য করে তাদের সত্য ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য? আমাদের পরের প্রবন্ধ এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেবে।
[পাদটীকাগুলো]
a ঈশ্বরের প্রজ্ঞা আর “নিগূঢ়তত্ত্বের” উপর আরও তথ্য জানবার জন্য ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যাণ্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়ার্ক ইনক. দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্ট, খন্ড ২-এর, পৃষ্ঠা ১১৯০ দেখুন।
আপনার কী মনে আছে?
▫ যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে পাদ্রিবর্গদের পার্থক্য কোথায়?
▫ সুসমাচার প্রচারের দ্বারা কিভাবে ঈশ্বরের প্রেম, শক্তি আর প্রজ্ঞা প্রতিফলিত করে?
▫ সুসমাচার প্রচারের দ্বারা কিভাবে ঈশ্বরের ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়?
▫ পরিচর্যায় যিহোবার সাক্ষীদের কী সাহায্য করে চালিয়ে যেতে?
[Pictures on page 24]
লোকেরা যতই বিচ্ছিন্ন হোক না কেন, যিহোবার সাক্ষীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে চায়