ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯১ ১২/১ পৃষ্ঠা ১০-১৫
  • “ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ”
  • ১৯৯১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • চার প্রকৃতির প্রেম
  • কেন বিশ্বাস ও প্রত্যাশা থেকে শ্রেষ্ঠ?
  • প্রজ্ঞা, ন্যায় ও শক্তি অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ?
  • আত্মার ফলগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ
  • প্রেম (আগাপে)—কী এবং কী নয়
    ১৯৯৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সেই ঈশ্বরকে ভালবাসুন, যিনি আপনাকে ভালবাসেন
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • প্রেমে গেঁথে উঠুন
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “প্রেমে চল”
    যিহোবার নিকটবর্তী হোন
আরও দেখুন
১৯৯১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯১ ১২/১ পৃষ্ঠা ১০-১৫

“ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ”

“আর এখন বিশ্বাস, প্রত্যাশা, প্রেম এই তিনটি আছে, আর ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ট।”—১ করিন্থীয় ১৩:১৩.

১. প্রেম সম্বন্ধে এক নরবিজ্ঞানী কি বলেন?

জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ এক নরবিজ্ঞানী একবার বলেন: “আমাদের মনুষ্যজাতির ইতিহাসে আমরা এই প্রথমবার জানতে পারি যে, মানুষের মূল মনস্তত্ত্বগত প্রয়োজনীয়তার মধ্যে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ হল প্রেম। এটি মানুষের সমস্ত প্রয়োজনীয়তার কেন্দ্রে অবস্থিত, ঠিক যেমন সূর্য্য আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত, ও গ্রহগুলি তাকে পরিভ্রমণ করে চলেছে . . . যে শিশু ভালবাসা পায়নি সে জৈব রাসায়নিক দিক দিয়ে, শারীরিক দিক দিয়ে ও মানসিক দিক দিয়ে যে শিশু ভালবাসা পেয়েছে তার থেকে অনেক পৃথক। এমন কি প্রথমে উল্লিখিত শিশুর থেকে পরেরটি পৃথকরূপে বড় হয়। এখন আমরা যা জানতে পারি তা হল মানুষ জন্ম নেয় বাঁচার জন্য, যেন ভালবাসা ও বাঁচা দুইটি এক। ইহা অবশ্য, নূতন কিছু নয়। ইহা প্রদর্শন করে যে পার্বত্য উপদেশ কত সত্য।”

২. (ক) প্রেমের গুরুত্ব প্রেরিত পৌল কিরূপে দেখান? (খ) কোন প্রশ্নগুলি বিবেচনার যোগ্য?

২ হ্যাঁ, মানুষের মঙ্গলজনক বিষয়ে, প্রেমের গুরুত্বপূর্ণতার সত্যতা সম্বন্ধে জাগতিকরূপে শিক্ষিত এই ব্যক্তিটি যা প্রকাশ করেন তা কোন নতুন বিষয় নয়। ইহা এখন এই জগতের শিক্ষিত ব্যক্তিদের দ্বারা প্রশংসনীয় হলেও, ১৯ শতাব্দী পূর্বে ঈশ্বরের বাক্যে প্রকাশিত হয়। সেই কারণে প্রেরিত পৌল লেখেন: “আর এখন বিশ্বাস, প্রত্যাশা ও প্রেম এই তিনটি আছে, আর ইহাদর মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ।” (১ করিন্থীয় ১৩:১৩) আপনি কি জানেন কেন প্রেম, প্রত্যাশা ও বিশ্বাসের থেকে শ্রেষ্ঠ? প্রেম কেন ঈশ্বরের গুণাবলীর এবং তাঁর আত্মার ফলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ?

চার প্রকৃতির প্রেম

৩. অনুরাগপূর্ণ প্রেম সম্পর্কে কোন শাস্ত্রীয় উদাহরণ আছে?

৩ প্রেম প্রদর্শন করতে মানুষের যে ক্ষমতা তা হল মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও প্রেমপূর্ণ চিন্তার প্রকাশ। আগ্রহপূর্ণরূপে, প্রাচীন গ্রীকদের “প্রেমের” সম্বন্ধে চারটি শব্দ ছিল। একটি হল ই’রস্‌, যেটি যৌন আকর্ষণ সম্বন্ধীয় অনুরাগপূর্ণ প্রেমকে বুঝায়। খ্রীষ্টিয় গ্রীক শাস্ত্রের লেখকগণের ই’রস্‌ শব্দটি ব্যবহার করতে কোন সুযোগ ছিল না, যদিও সেপ্টুয়াজিন্ট হিতোপদেশ ৭:১৮ ও ৩০:১৬ পদে এই শব্দের ধরন ব্যবহার করে থাকে এবং অনুরাগপূর্ণ প্রেম সম্বন্ধে ইব্রীয় শাস্ত্রে অন্যান্য জায়গায় উল্লেখ পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা পড়ি যে, ইসহাক রিবিকাকে “প্রেম করিলেন।” (আদিপুস্তক ২৪:৬৭) এই প্রকৃতির ভালবাসা সম্পর্কে সত্যই বৈশিষ্টপূর্ণ উদাহরণ পাওয়া যায় যাকোবের ক্ষেত্রে যিনি প্রথম দর্শনে সুন্দরী রাহেলের প্রেমে পড়েন। এমন কি “যাকোব রাহেলের জন্য সাত বৎসর দাস্য কর্ম্ম করিলেন, রাহেলের প্রতি তাহার অনুরাগ প্রযুক্ত এক এক বৎসর তাহার কাছে এক এক দিন মনে হইল।” (আদিপুস্তক ২৯:৯-১১, ১৭, ২০) পরমগীত পুস্তকটি এক মেষপালক ও এক কুমারীর মধ্যে অনুরাগপূর্ণ প্রেম সম্বন্ধে বলে। কিন্তু যতই জোর দেওয়া যাক না কেন তা অতিশয় হবেনা, যে এই ধরণের প্রেম যা হল পরম সন্তোষ ও আনন্দের উৎস, শুধুমাত্র ঈশ্বরের ধার্মিক মান অনুসারে প্রদর্শন করা উচিৎ। বাইবেল বলে কোন ব্যক্তি তার নিজের আইন সঙ্গত বিবাহিত স্ত্রীর সাথে একমাত্র প্রেমে “সতত মোহিত থাকতে পারে।”—হিতোপদেশ ৫:১৫-২০.

৪. শাস্ত্রে পারিবারিক প্রেমের কিরূপ উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?

৪ তারপর গভীর পারিবারিক প্রেম অথবা স্বাভাবিক স্নেহ আছে যা রক্তের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে, যার জন্য গ্রীকদের শব্দ হল স্টর·জে’। “রক্তের বন্ধন প্রকৃত বন্ধন” বিষয়টি বলা হয় এরই উপর ভিত্তি করে। এই প্রেম সম্বন্ধে আমাদের কাছে এক উত্তম উদাহরণ আছে, যা দুই বোন মরিয়ম ও মার্থার তাদের ভাই লাসারের প্রতি ছিল। তার হঠাৎ মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকার্ত হওয়াই দেখায় যে তাদের কাছে সে অতি প্রিয় ছিল। ও তারা কতই না আনন্দিত হয় যখন যীশু তাদের প্রিয় লাসারকে পুনরায় জীবনে ফিরিয়ে আনেন! (যোহন ১১:১-৪৪) এক মায়ের তার শিশুর প্রতি যে প্রেম থাকে তা এই প্রেমের আর একটি উদাহরণ। (তুলনা করুন ১ থিষলনীকীয় ২:৭) তাই, সিয়োনের প্রতি তার প্রেম এত বেশী ছিল যে সুস্পষ্ট করে তুলতে যিহোবা বলেন তা শিশুর প্রতি মায়ের প্রেমের থেকেও অধিক।—যিশাইয় ৪৯:১৫.

৫. বর্তমানে স্নেহের অভাব কিরূপে প্রকাশ পাচ্ছে?

৫ “স্নেহের” অভাব আর একটি ইঙ্গিত যে আমরা “শেষ কালে” “বিষম সময়ে” বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১, ৩) পারিবারিক প্রেমের অভাবে, কিছু যুবক যুবতী তাদের ঘর থেকে পলায়ণ করে এবং কিছু পূর্ণ বয়সের সন্তানেরা তাদের বয়স্ক পিতামাতাদের অবহেলা করে। (তুলনা করুন হিতোপদেশ ২৩:২২) সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক স্নেহের অভাবে কিছু পিতামাতারা তাদের সন্তানদের এমন কঠোররূপে প্রহার করে যে তাদের হাসপাতালে দিতে হয়। পিতামাতাদের প্রেমের অভাব দেখা যায় যখন কেউ কেউ তাদের সন্তানদের শাসন করতে অসফল হয়। সন্তানদের নিজেদের পথে চলতে দেওয়া প্রেমের প্রকাশ নয় কিন্তু তা হল প্রতিরোধকের পথ অনুসরণ না করা। একজন পিতা যিনি তার সন্তানদের সত্যই ভালবাসেন তিনি প্রয়োজনে তাদের শাসনও করবেন।—হিতোপদেশ ১৩:২৪; ইব্রীয় ১২:৫-১১.

৬. বন্ধুদের মধ্যে স্নেহের শাস্ত্রীয় উদাহরণ দিন।

৬ আর একটি গ্রীক শব্দ হল ফি·লাই’য়া যাহা স্নেহকে বুঝায় (যার সাথে যৌনতার কোন সম্বন্ধ নেই) যা দুজন বন্ধু, দুজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বা স্ত্রীয়ের মধ্যে থাকে। এই প্রেমের বিষয় আমাদের এক উত্তম উদাহরণ আছে যেটি দায়ূদ ও যোনাথনের মধ্যে ছিল। যোনাথন যখন যুদ্ধে নিহত হন তখন দায়ূদ তার প্রতি শোকান্বীত হয়ে বলেন: “হা ভ্রাতা যোনাথন! তোমার জন্য আমি ব্যাকুল। তুমি আমার কাছে অতিশয় মনোহর ছিলে, তোমার ভালবাসা আমার পক্ষে চমৎকার ছিল, রমনীগণের ভালবাসা থেকে অধিক ছিল!” (২ শমূয়েল ১:২৬) আমরা আরও জানি যে খ্রীষ্টের এক বিশেষ স্নেহ ছিল প্রেরিত যোহনের প্রতি, “যীশু যাহাকে ভালবাসিতেন” এমন শিষ্যরূপে তিনি পরিচিত ছিলেন।—যোহন ২০:⁠২.

৭. আ·গা’পে কি প্রকার, ও কিরূপে এই প্রেম দেখান হয়েছে?

৭ কি গ্রীক শব্দ পৌল ব্যবহার করেন, যেখানে তিনি বিশ্বাস, প্রত্যাশা ও প্রেমের উদ্ধৃতি করেন ১ করিন্থীয় ১৩:১৩ পদে এবং বলেন যে, “ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ”? এখানে শব্দটি হল আ·গা’পে, সেই একই শব্দ প্রেরিত যোহন ব্যবহার করেন যখন তিনি বলেন: “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮, ১৬) এই প্রেম নীতির দ্বারা পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত। ইহা স্নেহ এবং আসক্তির সাথে যুক্ত থাকতে পারে অথবা নাও পারে, কিন্তু ইহা এমন এক স্বার্থপরতাহীন আবেগ বা অনুভূতি যা অন্যদের ভাল করায় আগ্রহী, যার জন্য তা করা হচ্ছে তার কোন গুন না থাকলেও বা যে তা দিচ্ছে তার কোন উপকার না হলেও। এই প্রকৃতির প্রেমের কারণে ঈশ্বর তার হৃদয়ের অতি প্রিয় সম্পদ, তার একজাত পুত্র, যীশু খ্রীষ্টকে দান করেন, “যেন যে কেহ তাহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) যেমন পৌল আরও ভালভাবে আমাদের মনে করিয়ে দেন: “বস্তুতঃ ধার্মিকের নিমিত্ত কেহ প্রাণ দিবে না, সজ্জনের নিমিত্ত হয়তো কেহ সাহস করিয়া প্রাণ দিলেও দিতে পারে। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি তার নিজের প্রেম প্রদর্শণ করিয়াদুছন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।” (রোমীয় ৫:৭, ৮) হ্যাঁ, আ·গা’পে, অন্যদের জন্য ভাল করে তাদের জীবনে সামাজিক পদমর্যাদা যাই হোক না কেন অথবা প্রেম প্রদর্শনকারীকে এই প্রেম প্রদর্শনের জন্য যত মূল্য দিতে হোক না কেন।

কেন বিশ্বাস ও প্রত্যাশা থেকে শ্রেষ্ঠ?

৮. কেন আ·গা’পে বিশ্বাসের থেকেও প্রেষ্ঠ?

৮ কেন পৌল বলেন যে এই প্রকৃতির প্রেম (আ·গা’পে) বিশ্বাসের থেকেও শ্রেষ্ঠ? ১ করিন্থীয় ১৩:২ পদে তিনি লেখেন: “আর যদি ভাববাণী প্রাপ্ত হই ও সমস্ত নিগূঢ়তত্বে ও সমস্ত জ্ঞানে পারদর্শী হই, এবং যদি আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকে যাহাতে আমি পর্বত স্থানান্তর করিতে পারি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমি কিছুই নহি। (তুলনা করুন মথি ১৭:২০) হ্যাঁ, আমাদের জ্ঞান অর্জনের এবং বিশ্বাসে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রদুচষ্টা যদি স্বার্থপর উদ্দেশ্যের জন্য হয় তাহলে ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের জন্য কোন উপকার আনবে না। অনুরূপে, যীশু দেখান যে কিছু ব্যক্তি ‘তার নামে ভাববাণী বলবে, ভূত ছাড়াবে, পরাক্রম কার্য্য করবে’ কিন্তু তারা তার অনুমোদন পাবে না।—মথি ৭:২২, ২৩.

৯. কেন প্রেম প্রত্যাশার থেকেও মহৎ?

৯ কেন এই আ·গা’পে রূপ প্রেম প্রত্যাশার থেকেও শ্রেষ্ঠ? কারণ প্রত্যাশা হয়তো আত্মকেন্দ্রিক হতে পারে, একজন ব্যক্তি তার নিজের উপকার সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারেন, কিন্তু “প্রেম স্বার্থ চেষ্টা করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) তাছাড়া, প্রত্যাশা—যেমন “মহাক্লেশ” জীবিত অবস্থায় অতিক্রম করে নূতন জগতে যাওয়া—সমাপ্তি হয় যখন যা আশা করা হয়েছে পূর্ণ হয়। (মথি ২৪:২১) যেমন পৌল বলেন: “কেননা প্রত্যাশায় আমরা পরিত্রাণ প্রাপ্ত হইয়াছি; কিন্তু দৃষ্টিগোচর যে প্রত্যাশা, তাহা প্রত্যাশাই নয়; কেননা যে যাহা দেখে, সে তাহার প্রত্যাশা কেন করিবে? কিন্তু আমরা যাহা দেখিতে না পাই তাহার প্রত্যাশা যদি করি, তবে, ধৈর্য্য সহকারে তাহার অপেক্ষায় থাকি।” (রোমীয় ৮:২৪, ২৫) প্রেম সকলই ধৈর্য্যপূর্বক সহ্য করে ও তাহা কখনও ব্যর্থ হয় না। (১ করিন্থীয় ১৩:৭, ৮) তাই নিঃস্বার্থপর প্রেম (আ·গা’পে) বিশ্বাস অথবা প্রত্যাশার থেকে শ্রেষ্ঠ।

প্রজ্ঞা, ন্যায় ও শক্তি অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ?

১০. প্রেম ঈশ্বরের প্রধান চারটি গুণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তা কেন বলা যেতে পারে?

১০ আসুন আমরা যিহোবা ঈশ্বরের চারটি মৌলিক গুণগুলি বিবেচনা করি: প্রজ্ঞা, ন্যায়, শক্তি ও প্রেম। এটা কি বলা যায় যে প্রেম এই গুণগুলির থেকেও মহৎ? অবশ্যই বলা যেতে পারে। কেন? কেননা ঈশ্বর যা করেন তার পিছনে প্রেমই হল প্রেরণামূলক শক্তি। সেই কারণে প্রেরিত যোহন লেখেন: “ঈশ্বর প্রেম।” হ্যাঁ, যিহোবা ঈশ্বর হলেন প্রেমের প্রতিরূপ। (১ যোহন ৪:৮, ১৬) শাস্ত্রে কোন জায়গায় আমারা পড়ি না যে ঈশ্বর প্রজ্ঞা, ন্যায়, অথবা শক্তি। পরিবর্তে আমাদের বলা হয়েছে, যিহোবার এই গুণগুলি আছে। (ইয়োব ১২:১৩; গীতসংহিতা ১৪৭:৫; দানিয়েল ৪:৩৭) এই চারটি গুণ পূর্ণ সমতায় তাঁর আছে। প্রেমে পরিচালিত হয়ে, যিহোবা তার উদ্দেশ্য সাধন করেন বাকি তিনটি গুণ ব্যবহার করে অথবা এইগুলিকে বিবেচনায় রেখে।

১১. যিহোবাকে বিশ্ব, আত্মিক প্রাণী ও মনুষ্যকে সৃষ্টি করতে কি পরিচালিত করে?

১১ তাহলে, বিশ্ব ও বুদ্ধিসম্পন্ন আত্মিক প্রাণীদের এবং মানুষ্যকে সৃষ্টি করতে যিহোবাকে কি পরিচালিত করেছিল? তা কি প্রজ্ঞা অথবা শক্তি? না, ঈশ্বর কেবলমাত্র তাঁর প্রজ্ঞা ও শক্তিকে সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, আমরা পড়ি: “যিহোবা প্রজ্ঞা দ্বারা পৃথিবীর মূল স্থাপন করিয়াছেন।” (হিতোপদেশ ৩:১৯) তাছাড়া, তার ন্যায় বিচারের গুণের জন্য তা প্রয়োজন ছিলনা স্বাধীন জীবদের সৃষ্টি করার। ঈশ্বরের প্রেম তাকে পরিচালিত করে বুদ্ধিদীপ্ত জীবনের আনন্দ অন্যদের সাথ ভাগ করে নেবার। সেই প্রেম পথ করে দেয় দোষারোপ সরিয়ে দেবার জন্য যা ন্যায়বিচার মানবজাতির উপর আদমের পাপের জন্য এনেছিল। (যোহন ৩:১৬) হাঁ, প্রেমই আগত পার্থিব পরমদেশে বাধ্য মানবজাতিকে জীবিত রাখার উদ্দ্যেশ্যে যিহোবাকে পরিচালিত করে।—লূক ২৩:৪৩.

১২. ঈশ্বরের শক্তি, ন্যায় এবং প্রেমের প্রতি আমরা কিরূপে প্রতিক্রিয়া দেখাবো?

১২ ঈশ্বরের সর্বশক্তির কারণে, আমরা কখনই তার অন্তর্জ্বালা জন্মাবার সাহস করবো না। পৌল প্রশ্ন করেন: “আমরা কি যিহোবার অন্তর্জ্বালা জন্মাইতেছি? তাহা হইতে আমরা কি বলবান?” (১ করিন্থীয় ১০:২২) নিশ্চই, যিহোবা “ঈর্ষা পরায়ণ ঈশ্বর,” মন্দ অর্থে নয়, কিন্তু “স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর।” (যাত্রাপুস্তক ২০:৫, কিং জেমস্‌ ভারশন) খ্রীষ্টানরূপে আমরা ঈশ্বরের অগাধ প্রজ্ঞার বহু প্রকাশ দেখে বিস্মিত হই। (রোমীয় ১১:৩৩-৩৫) তার ন্যায়ের প্রতি মহা সম্মান আমাদের ইচ্ছাকৃত পাপ থেকে দূরে রাখে। (ইব্রীয় ১০:২৬-৩১) কিন্তু প্রেম হল প্রশ্নাতীতরূপে ঈশ্বরের চারটি মৌলিক গুণের মধ্যে শ্রেষ্ট। যিহোবার নিঃস্বার্থ প্রেমই আমাদের তাঁর প্রতি আকর্ষিত করে ও তাকে খুশী করতে ও আরাধনা করতে এবং তার মহান নাম পবিত্র করার জন্য অংশ গহণ করেত পরিচালিত করে।—হিতোপদেশ ২৭:১১.

আত্মার ফলগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ

১৩. ঈশ্বরের আত্মার ফলগুলির মধ্যে প্রেমের স্থান কোথায়?

১৩ গালাতীয় ৫:২২, ২৩ পদে, উল্লিখিত নয়টি ঈশ্বরের আত্মার ফলের মধ্যে প্রেমের স্থান কোথায়? এই ফলগুলি “প্রেম, আনন্দ, শান্তি দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।” উত্তম কারণেই পৌল তালিকায় প্রেমকে প্রথম স্থান দেন। প্রেম কি আনন্দের থেকেও শ্রেষ্ঠ, যে পরবর্তী গুণটি তিনি উল্লেখ করেন? হ্যাঁ, কারণ প্রেম ব্যতিরেকে কোন স্থায়ী আনন্দ উপভোগ করা যায় না। আসলে, প্রেমের অভাব, স্বার্থপরতার জন্যই পৃথিবী আজ এত আনন্দহীন। কিন্তু যিহোবার সাক্ষীদের নিজেদের মধ্যে, ও তাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি প্রেম আছে। তাই আমরা আশা করতে পারি যে তারা আনন্দপূর্ণ হবেন এবং তারা যে এইরূপ হবেন আগে থেকে ভাববাণীতে বলা ছিল তারা “চিত্তের সুখে আনন্দ করিবে।”—যিশাইয় ৬৫:১৪।

১৪. কেন বলা যেতে পারে যে প্রেম, আত্মার ফল শান্তির থেকেও শ্রেষ্ঠ?

১৪ আত্মার ফল শান্তির থেকেও প্রেম শ্রেষ্ঠ। প্রেমের অভাবে, জগত সংঘর্ষে ও বিবাদে পরিপূর্ণ। কিন্তু যিহোবার লোকেরা সারা জগতব্যাপী একে অপরের সাথে শান্তিতে আছে। তাদের ক্ষেত্রে গীতরচকের বাক্যগুলি সত্য: “যিহোবা আপন প্রজাদিগকে শান্তি দিয়া আশীর্ব্বাদ করিবেন।” (গীতসংহিতা ২৯:১১) তাদের কাছে শান্তি আছে, কারণ তাদের কাছে সত্য খ্রীষ্টানদের সনাক্ত করণের চিহ্ন প্রেম আদুছ। (যোহন ১৩:৩৫) একমাত্র প্রেম সমস্ত বিভেদ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলি অতিক্রম করতে পারে, সেগুলি জাতিগত, রাষ্ট্রগত অথবা সংস্কৃতিগত, যে কিছুই হোক না কেন। ইহা “সিদ্ধির যোগবন্ধন।”—কলসীয় ৩:১৪.

১৫. আত্মার ফল দীর্ঘসহিষ্ণুতার সাথে তুলনা করলে প্রেমের সর্বোচ্চ ভূমিকাটি কিরূপে দেখা যায়?

১৫ আমরা প্রেমের সর্বচ্চ ভূমিকাটিও দেখতে পাই দীর্ঘসহিষ্ণুতা, ভুল বা প্ররোচনাকে ধৈর্য্যের সাথে সহ্য করার সাথে তুলনা করার সময়। দীর্ঘসহিষ্ণুতার অর্থ হল ধৈর্য্য ধরা ও তার সাথে ক্রোধে ধীর থাকা। কি কারণে লোকে অধৈর্য্য ও দ্রুত ক্রোধান্বিত হয়? তাহা কি প্রেমের অভাব নয়? যাইহোক, আমাদের স্বর্গীয় পিতা দীর্ঘসহিষ্ণু ও “ক্রোধে ধীর।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬; লূক ১৮:৭) কেন? কারণ তিনি আমাদের প্রেম করেন ও “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয় এমন বাসনা তাহার নাই।”—২ পিতর ৩:⁠৯.

১৬. কিভাবে প্রেমকে, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমনের সাথে তুলনা করা হয়?

১৬ আমরা পূর্বে দেখেছি কেন প্রেম বিশ্বাসের থেকেও শ্রেষ্ঠ, এবং যে কারণগুলি দেওয়া হয় তা অবশিষ্ট আত্মার ফলের প্রতি প্রযোজ্য যেগুলি হল মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, মৃদুতা এবং ইন্দ্রিয়দমন। এই সকলই প্রয়োজনীয় গুনাবলী হলেও তা প্রেম ব্যতীত কোন উপকারে আসে না, এমন কি পৌল ১ করিন্থীয় ১৩:৩ পদে দেখান, যেখানে তিনি লেখেন: “যথাসর্ব্বস্ব যদি দরিদ্রদিগকে খাওয়াইয়া দিই, এবং আপন দেহ দান করি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমার কিছুই লাভ নাই।” অপরক্ষেত্রে, প্রেমই এই সমস্ত গুনাবলী উৎপন্ন করে মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বাস, মৃদুতা এবং ইন্দ্রিয়দমন। তাই, পৌল আরও বলেন প্রেম দয়াশীল তাহা “সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্য পূর্বক সহ্য করে।” হ্যাঁ, “প্রেম কখনও শেষ হয় না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৭, ৮) সেইকারণে বলা যেতে পারে যে অন্য আত্মার গুনগুলি হল প্রেমের প্রকাশ, প্রেমের বিভিন্ন দিক, যা প্রথম গুন বলে বলা হয়েছে। সত্যই, আত্মার যে নয়টি গুন আছে, প্রেম তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।

১৭. প্রেম আত্মার ফলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এই উপসংহারটি কোন শাস্ত্রীয় পদ সমর্থন করে?

১৭ প্রেমই যে ঈশ্বরের আত্মার গুনগুলির মধ্যে মহৎ তাহা সমর্থন করে পৌল উপসংহারে এই কথা বলেন: “তোমরা কাহারও কিছু ধারিও না, কেবল পরস্পর প্রেম ধারিও, কেননা পরকে যে প্রেম করে সে ব্যবস্থা পূর্ণরূপে পালন করিয়াছে . . . এবং আর যে কোন আজ্ঞা থাকুক, সে সকল এই বচনে সঙ্কলিত হইয়াছে, ‘প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিও।’ প্রেম প্রতিবাসীর অনিষ্ট করে না, অতএব প্রেমই ব্যবস্থার পূর্ণসাধন।” (রোমীয় ১৩:৮-১০) সঠিকভাবে, তাই শিষ্য যাকোব এই আইন যা বলে একজনের প্রতিবেশীকে আপনার মত প্রেম করতে তাকে “রাজকীয় ব্যবস্থা” বলে উল্লেখ করেন।—যাকোব ২:৮.

১৮. প্রেম যে শ্রেষ্ঠ গুণ তার আরও কি প্রমাণ আছে?

১৮ আরও সাক্ষ্য কি আছে যা দেখায় যে প্রেম সব থেকে মহৎ গুণ? হাঁ, আছে। যখন একজন অধ্যাপক যীশুকে জিজ্ঞাসা করেন তখন কি ঘটে তা চিন্তা করুন: “সকল আজ্ঞার মধ্যে কোনটি প্রথম?” তিনি হয়ত মনে করেছিলেন যে যীশু দশ আজ্ঞা থেকে একটি উদ্ধৃত করবেন। কিন্তু যীশু উদ্ধৃত করেন দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪, ৫ এবং বলেন: “প্রথমটি এই, ‘হে ইস্রায়েল, শুন; আমাদের ঈশ্বর যিহোবা এক যিহোবা; আর তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে প্রেম করিবে।’” তারপর যীশু যোগ দেন: “দ্বিতীয়টি এই, ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।’ এই দুই আজ্ঞা হইতে বড় আর কোন আজ্ঞা নাই।”—মার্ক ১২:২৮-৩১.

১৯. আ·গা’পের কতকগুলি কি উল্লেখযোগ্য ফল আছে?

১৯ সত্যই, পৌল কোন অত্যুক্তি করেননি যখন তিনি বিশ্বাস, প্রত্যাশা এবং প্রেমের উল্লেখ করে বলেন: “ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ,” প্রেমের প্রদর্শনের ফলে আমাদের স্বর্গীয় পিতার এবং অন্যান্যদের সাথে উত্তম সম্বন্ধ স্থাপন হয়, যাদের মধ্যে মণ্ডলীর ও পরিবারের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত। প্রেম আমাদের প্রতি গঠনমূলক প্রভাব রাখে। পরবর্তী প্রবন্ধ দেখাবে যে প্রেম কত পুরস্কারদায়ক।

আপনি কিভাবে সাড়া দেবেন?

▫ কিভাবে প্রেম বিশ্বাস ও প্রত্যাশা থেকে শ্রেষ্ঠ?

▫ আ·গা’পে কি, এবং কিভাবে এইরূপ প্রেম দেখানো যায়?

▫ কেন প্রেম ঈশ্বরের চার গুণাবলীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ?

▫ কিভাবে প্রেম আত্মার অন্য গুণগুলি অপেক্ষা মহৎ?

[Pictures on page 13]

প্রেম ঈশ্বরকে পরিচালিত করে মানবজাতিকে সৃষ্টি করতে যাতে তারা পৃথিবীতে পরমদেশে জীবন যাপন করতে পারে। আপনি কি সেখানে থাকতে আশা করেন?

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার