ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৫ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ১৬-২০
  • বিশ্বাস দ্বারা চলুন, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়!

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • বিশ্বাস দ্বারা চলুন, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়!
  • ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ” প্রত্যাখ্যান করা
  • বস্তুবাদিতার ফাঁদ এড়িয়ে চলা
  • শেষের প্রতি দৃষ্টি রাখা
  • বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলা—কতটা বিপদজনক?
  • বিশ্বাস দ্বারা চলার জন্য সংকল্পবদ্ধ হোন
  • ‘বিশ্বাস দ্বারা চলা, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়’
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • মোশি একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি
    ২০১৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • মোশির বিশ্বাস অনুকরণ করুন
    ২০১৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলুন
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৫ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ১৬-২০

বিশ্বাস দ্বারা চলুন, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়!

“আমরা বিশ্বাস দ্বারা চলি, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়।”—২ করিন্থীয় ৫:৭.

১. কী দেখায় যে, প্রেরিত পৌল বিশ্বাস দ্বারা চলেছিলেন, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়?

বছরটা হল সা.কা. ৫৫ সাল। শৌল নামে পরিচিত একজন ব্যক্তি, খ্রিস্টানদের একজন তাড়নাকারী, খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার পর তখন প্রায় ২০ বছর কেটে গিয়েছে। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাসকে কমে যেতে বা দুর্বল হয়ে পড়তে দেননি। যদিও তিনি আক্ষরিক চোখ দিয়ে স্বর্গীয় বাস্তবতা দেখেননি কিন্তু তিনি বিশ্বাসে দৃঢ় আছেন। তাই, স্বর্গীয় আশা ছিল এমন অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কাছে লেখার সময় প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “আমরা বিশ্বাস দ্বারা চলি, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়।”—২ করিন্থীয় ৫:৭.

২, ৩. (ক) কীভাবে আমরা দেখাই যে, আমরা বিশ্বাস দ্বারা চলি? (খ) বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলার মানে কী?

২ বিশ্বাস দ্বারা চলার জন্য আমাদের জীবনকে পরিচালিত করার যে-ক্ষমতা ঈশ্বরের রয়েছে, তাতে পূর্ণরূপে নির্ভর করা প্রয়োজন। এই বিষয়ে আমাদের পুরোপুরি প্রত্যয়ী হতে হবে যে, আমাদের জন্য কোনটা সবচেয়ে উপকারী তা ঈশ্বর জানেন। (গীতসংহিতা ১১৯:৬৬) জীবনে আমরা যখন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিই এবং সেই অনুযায়ী কাজ করি, তখন “যা কিছু আমরা চোখে দেখতে পাই না তার অস্তিত্ব” বিবেচনা করি। (ইব্রীয় ১১:১, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) এগুলোর অন্তর্ভুক্ত প্রতিজ্ঞাত ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী।’ (২ পিতর ৩:১৩) অন্যদিকে, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলার অর্থ হল আমরা এমন এক জীবনধারা অনুধাবন করি, যেটা আমাদের আক্ষরিক চোখ দিয়ে আমরা যা প্রত্যক্ষ করি পুরোপুরি সেটার দ্বারা পরিচালিত। এটা বিপদজনক কারণ এটা আমাদেরকে ঈশ্বরের সমগ্র ইচ্ছা অবহেলা করার দিকে পরিচালিত করতে পারে।—গীতসংহিতা ৮১:১২; উপদেশক ১১:৯.

৩ আমরা স্বর্গীয় আহ্বানসম্পন্ন “ক্ষুদ্র মেষপাল” অথবা পার্থিব আশাসম্পন্ন “আরও মেষ” যে-ই হই না কেন, আমাদের প্রত্যেকের বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়, বিশ্বাস দ্বারা চলার উপদেশে মনোযোগ দেওয়া উচিত। (লূক ১২:৩২; যোহন ১০:১৬) আসুন আমরা দেখি যে, এই অনুপ্রাণিত পরামর্শ মেনে চলা কীভাবে আমাদের ‘পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগে’ নিমজ্জিত হওয়া থেকে, বস্তুবাদিতার ফাঁদ থেকে এবং এই বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলা থেকে সুরক্ষা করে। এ ছাড়া, আমরা বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলার বিপদ সম্বন্ধেও পরীক্ষা করব।—ইব্রীয় ১১:২৫.

“পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ” প্রত্যাখ্যান করা

৪. মোশি কী বেছে নিয়েছিলেন এবং কেন?

৪ অম্রমের পুত্র মোশি যে-জীবন উপভোগ করতে পারতেন, তা কল্পনা করে দেখুন। প্রাচীন মিশরের রাজবংশে প্রতিপালিত হওয়ায় মোশির ক্ষমতা, ধনসম্পদ এবং প্রতিপত্তি অর্জন করার সম্ভাবনা ছিল। মোশি এইরকম যুক্তি দেখাতে পারতেন: ‘আমি মিশরের উচ্চ প্রশংসিত প্রজ্ঞায় সুশিক্ষিত হয়েছি আর আমি বাক্যে ও কাজে পরাক্রমী। আমি যদি রাজপরিবারের অনুগত থাকি, তা হলে আমি নিপীড়িত ইব্রীয় ভাইদের উপকারের জন্য আমার পদমর্যাদাকে ব্যবহার করতে পারব।’ (প্রেরিত ৭:২২) এর পরিবর্তে, মোশি “ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ” বেছে নিয়েছিলেন। কেন? কী মোশিকে মিশরের সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পরিচালিত করেছিল? বাইবেল উত্তর দেয়: “বিশ্বাসে [মোশি] মিসর ত্যাগ করিলেন, রাজার কোপ হইতে ভীত হন নাই, কারণ যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।” (ইব্রীয় ১১:২৪-২৭) ধার্মিকতার জন্য যিহোবার নিশ্চিত পুরস্কারের প্রতি মোশির বিশ্বাস তাকে পাপ এবং আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করা ও এর ক্ষণিক আমোদপ্রমোদকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছিল।

৫. কীভাবে মোশির উদাহরণ আমাদেরকে উৎসাহিত করে?

৫ আমরাও প্রায়ই এই ধরনের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনের মুখোমুখি হই যেমন: ‘আমার কি এমন ধরনের কাজ অথবা অভ্যাস বাদ দেওয়া উচিত, যা বাইবেলের নীতির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়? আমার কি এমন ধরনের চাকরি করা উচিত, যেটাতে বস্তুগত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে মনে হয় কিন্তু তা আমার আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে অন্তরায় হবে?’ মোশির উদাহরণ আমাদেরকে এমন বাছাইগুলো না করতে উৎসাহিত করে, যা এই জগতের অদূরদর্শিতাকে প্রতিফলিত করে; বরং আমাদের “যিনি অদৃশ্য” তাঁর—যিহোবা ঈশ্বরের—দূরদর্শী প্রজ্ঞার ওপর বিশ্বাস করে চলা প্রয়োজন। মোশির মতো আমরা যেন এই জগতের যেকোনো কিছুর চেয়ে যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্বকে আরও বেশি মূল্যবান বলে গণ্য করি।

৬, ৭. (ক) কীভাবে এষৌ দেখিয়েছিলেন যে, তিনি বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলা বেছে নিয়েছিলেন? (খ) এষৌর মধ্যে আমরা কোন সতর্কতামূলক দৃষ্টান্ত দেখতে পাই?

৬ মোশির সঙ্গে কুলপতি ইস্‌হাকের পুত্র এষৌর তুলনা করুন। এষৌ তাৎক্ষণিক বাসনা চরিতার্থ করা বেছে নিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ২৫:৩০-৩৪) ‘ধর্ম্মবিরূপক হইয়া [‘পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি না দেখিয়ে,’ NW]’ এষৌ, “এক বারের খাদ্যের নিমিত্ত” আপন জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রয় করেছিলেন। (ইব্রীয় ১২:১৬) তার জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রি করার সিদ্ধান্ত কীভাবে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে অথবা তার বংশধরদের ওপর তার কাজ কীরকম প্রভাব ফেলবে, সেই বিষয়ে বিবেচনা করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ছিল। ঈশ্বরের মূল্যবান প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি এষৌ তার চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন, সেগুলোকে তিনি কম মূল্যবান বলে মনে করেছিলেন। তিনি বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলেছিলেন, বিশ্বাস দ্বারা নয়।

৭ এষৌ আজকে আমাদের জন্য চেতনা বা সতর্কতামূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। (১ করিন্থীয় ১০:১১) ছোট বা বড় যা-ই হোক না কেন, আমাদের যখন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন আমরা অবশ্যই শয়তানের জগতের অপপ্রচার দ্বারা প্রতারিত হব না, যে-জগৎ বলে যে তুমি যা চাও এখনই তা তোমাকে পেতে হবে। আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি যে-সিদ্ধান্তগুলো নিই, সেগুলোতে কি এষৌর মতো প্রবণতা প্রকাশ পায়? এখনই আমি যা চাই, সেটার পিছনে ছোটার অর্থ কি এই বোঝাবে যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে? আমার বাছাইগুলো কি ঈশ্বরের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব এবং আমার ভাবি পুরস্কারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে? অন্যদের জন্য আমি কোন ধরনের উদাহরণ স্থাপন করছি?’ আমাদের বাছাইগুলো যদি পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে প্রকাশ করে, তা হলে যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করবেন।—হিতোপদেশ ১০:২২.

বস্তুবাদিতার ফাঁদ এড়িয়ে চলা

৮. লায়দিকেয়ার খ্রিস্টানদের কোন সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছিল এবং কেন সেটা আমাদের জন্য আগ্রহের বিষয়?

৮ প্রথম শতাব্দীর শেষ দিকে প্রেরিত যোহনের কাছে এক দর্শনে গৌরবান্বিত যিশু খ্রিস্ট এশিয়া মাইনরের লায়দিকেয়াস্থ মণ্ডলীর প্রতি এক বার্তা জানিয়েছিলেন। এটি ছিল বস্তুবাদিতার বিরুদ্ধে এক সতর্কতামূলক বার্তা। যদিও লায়দিকেয়ার খ্রিস্টানরা বস্তুগত দিক দিয়ে ধনী ছিল কিন্তু আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল। ক্রমাগত বিশ্বাসে চলার পরিবর্তে তারা বস্তুগত সম্পদকে তাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে অন্ধ করে দিতে দিয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪-১৮) আজকেও বস্তুবাদিতার একইরকম প্রভাব রয়েছে। এটা আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয় এবং আমাদেরকে “ধৈর্য্যপূর্ব্বক” জীবনের ‘ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ানো’ থামিয়ে দেয়। (ইব্রীয় ১২:১) আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে ‘জীবনের সুখভোগ’ আমাদের আধ্যাত্মিক কাজগুলোকে এতটা চেপে রাখবে যে, সেগুলো “চাপা পড়ে” যাবে।—লূক ৮:১৪.

৯. কীভাবে আধ্যাত্মিক খাবারের জন্য সন্তুষ্টি এবং উপলব্ধি আমাদেরকে সুরক্ষা করে?

৯ আধ্যাত্মিক সুরক্ষার একটা চাবিকাঠি হল, এই সংসার বা জগৎকে পূর্ণরূপে ব্যবহার না করে এবং বস্তুগতভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ না করে বরং সন্তুষ্ট হওয়া। (১ করিন্থীয় ৭:৩১; ১ তীমথিয় ৬:৬-৮) আমরা যখন বাহ্য দৃশ্য দ্বারা না চলে বরং বিশ্বাস দ্বারা চলি, তখন আমরা বর্তমান আধ্যাত্মিক পরমদেশে আনন্দ খুঁজে পাই। আমরা যখন পুষ্টিকর আধ্যাত্মিক খাবার খাই, তখন আমরা কি “চিত্তের সুখে আনন্দরব” করি না? (যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪) এ ছাড়া, সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করে আমরা আনন্দিত হই, যারা ঈশ্বরের আত্মার ফলসমূহ গড়ে তোলে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) এটা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবা আধ্যাত্মিক উপায়ে যাকিছু জুগিয়েছেন, তা থেকে আমরা পরিতৃপ্তি এবং সতেজতা খুঁজে পাই!

১০. নিজেদেরকে আমাদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

১০ নিজেদেরকে আমাদের কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘বস্তুগত বিষয়গুলো আমার জীবনে কোন স্থানে রয়েছে? আমার বস্তুগত সম্পদগুলোকে কি আমি এক আনন্দফূর্তিপূর্ণ জীবনযাপন করার অথবা সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করছি? কোন বিষয়টা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে? বাইবেল অধ্যয়ন এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে সাহচর্য নাকি খ্রিস্টীয় দায়িত্বগুলো থেকে দূরে থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো? আমি কি সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোর বেশির ভাগই ক্ষেত্রের পরিচর্যায় এবং বিশুদ্ধ উপাসনার সঙ্গে যুক্ত কাজগুলো করার জন্য ব্যবহার করি, নাকি আমোদপ্রমোদ করার জন্য তা আলাদা করে রাখি?’ বিশ্বাস দ্বারা চলার অর্থ হল, যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর পূর্ণ আস্থা নিয়ে আমরা রাজ্যের কাজে ব্যস্ত থাকি।—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

শেষের প্রতি দৃষ্টি রাখা

১১. কীভাবে বিশ্বাস দ্বারা চলা আমাদেরকে জগতের শেষ যে নিকটে, তা মনে রাখতে সাহায্য করে?

১১ বিশ্বাস দ্বারা চলা আমাদেরকে এই মাংসিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো পরিত্যাগ করতে সাহায্য করে যে, শেষ আসতে এখনও অনেক দেরি আছে অথবা তা আদৌ আসবে না। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীকে যারা হালকাভাবে নেয়, সেই সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিদের বিপরীতে আমরা বুঝতে পারি যে, কীভাবে জগতের ঘটনাগুলো আমাদের দিনের জন্য ঈশ্বরের বাক্যের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পরিপূর্ণ হচ্ছে। (২ পিতর ৩:৩, ৪) উদাহরণস্বরূপ, অধিকাংশ লোকেদের মনোভাব এবং আচরণ কি এই প্রমাণ দেয় না যে, আমরা “শেষ কালে” বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) বিশ্বাসের চোখ দিয়ে আমরা দেখি যে, জগতের চলতি ঘটনাগুলো কেবল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নয়। বরং, এগুলো “[খ্রিস্টের] আগমনের” বা উপস্থিতির ‘এবং যুগান্তের চিহ্ন’ গঠন করে।—মথি ২৪:১-১৪.

১২. লূক ২১:২০, ২১ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো কীভাবে প্রথম শতাব্দীতে পরিপূর্ণ হয়েছিল?

১২ আমাদের সাধারণ কালের প্রথম শতাব্দীর একটা ঘটনা বিবেচনা করুন, যেটার সঙ্গে আমাদের দিনের এক সাদৃশ্য রয়েছে। পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক।” (লূক ২১:২০, ২১) এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতাস্বরূপ সেস্টিয়াস গ্যালাসের আদেশে রোমীয় সৈন্যবাহিনী সা.কা. ৬৬ সালে যিরূশালেম অবরোধ করেছিল। কিন্তু, অপ্রত্যাশিতভাবে সৈন্যরা চলে গিয়েছিল, যা খ্রিস্টানদের ‘পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করিবার’ সংকেত এবং সুযোগ করে দিয়েছিল। সা.কা. ৭০ সালে রোমীয় সৈন্যবাহিনী ফিরে আসে, যিরূশালেম নগর আক্রমণ করে এবং এর মন্দির ধ্বংস করে দেয়। জোসিফাস রিপোর্ট করেন যে, দশ লক্ষেরও বেশি যিহুদি মারা গিয়েছিল এবং ৯৭,০০০ যিহুদিকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই যিহুদি বিধিব্যবস্থার ওপর ঐশিক বিচার এসেছিল। যারা বিশ্বাস দ্বারা চলেছিল এবং যিশুর সতর্কবাণীতে মনোযোগ দিয়েছিল, তারা দুর্যোগ এড়াতে পেরেছিল।

১৩, ১৪. (ক) শীঘ্রই কোন ঘটনাগুলো ঘটতে যাচ্ছে? (খ) বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার প্রতি কেন আমাদের সতর্ক থাকা উচিত?

১৩ অনুরূপ কিছু আমাদের দিনেও ঘটতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন অংশ ঐশিক বিচার সম্পাদনে জড়িত হবে। ঠিক যেমন প্রথম শতাব্দীর রোমীয় সৈন্যবাহিনী প্যাক্স রোমানা (রোমীয় শান্তি) বজায় রাখার জন্য গঠিত হয়েছিল, তেমনই রাষ্ট্রসংঘ আজকে শান্তি রক্ষাকারী হাতিয়ার হতে চায়। যদিও রোমীয় সৈন্যবাহিনী সেই সময়কার পরিচিত জগতের সমস্ত জায়গায় আপেক্ষিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারাই যিরূশালেমের উৎসন্নকারী হয়ে উঠেছিল। একইভাবে আজকে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ইঙ্গিত দেয় যে, রাষ্ট্রসংঘের জঙ্গি দলগুলো ধর্মকে এক বিরক্তিকর বিষয় হিসেবে মনে করবে এবং আধুনিক দিনের যিরূশালেম—খ্রিস্টীয়জগৎ—ও সেইসঙ্গে মহতী বাবিলের বাকি অংশকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১২-১৭) হ্যাঁ, মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য ধ্বংসের মুখে রয়েছে।

১৪ মিথ্যা ধর্মের উৎসন্ন অবস্থা মহাক্লেশের শুরুকে চিহ্নিত করবে। মহাক্লেশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বাকি অংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। (মথি ২৪:২৯, ৩০; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) বিশ্বাস দ্বারা চলা আমাদেরকে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার প্রতি সতর্ক রাখে। আমরা এইরকম মনে করে প্রতারিত হই না যে, রাষ্ট্রসংঘের মতো কোনো মনুষ্য-নির্মিত প্রতিষ্ঠান প্রকৃত শান্তি এবং নিরাপত্তা নিয়ে আসার জন্য ঈশ্বরের মাধ্যম। তা হলে, আমাদের জীবনধারায় কি এইরকম প্রত্যয় দেখানো উচিত নয় যে, “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী”?—সফনিয় ১:১৪.

বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলা—কতটা বিপদজনক?

১৫. ঈশ্বরের আশীর্বাদের অভিজ্ঞতা লাভ করার পরও ইস্রায়েল জাতি কোন ফাঁদে পড়েছিল?

১৫ প্রাচীন ইস্রায়েলের অভিজ্ঞতাগুলো, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলতে দেওয়ার ফলে একজনের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ার বিপদ সম্বন্ধে জানায়। দশটা আঘাত, যা মিশরের মিথ্যা দেবতাদের অবনমিত করেছিল, সেগুলো দেখা সত্ত্বেও এবং লোহিত সাগরের মধ্যে দিয়ে আশ্চর্যজনকভাবে উদ্ধার পাওয়ার পরও ইস্রায়েলীয়রা অবাধ্য হয়ে এক সোনার বাছুর তৈরি করেছিল এবং সেটার উপাসনা করতে শুরু করেছিল। তারা অধৈর্য হয়ে পড়েছিল এবং মোশির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, যার ‘পর্ব্বত হইতে নামিতে বিলম্ব হইতেছিল।’ (যাত্রাপুস্তক ৩২:১-৪) অধৈর্য তাদেরকে আক্ষরিক চোখে দৃশ্যত একটা প্রতিমাকে পূজা করার দিকে পরিচালিত করেছিল। তাদের বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলা ঈশ্বরের অপমান নিয়ে এসেছিল এবং এর ফলে ‘ন্যূনাধিক তিন সহস্র লোকের’ ওপর বিচার এসেছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩২:২৫-২৯) যিহোবার একজন উপাসক যখন এমন সিদ্ধান্তগুলো নেন, যেগুলো যিহোবার ওপর নির্ভরহীনতা এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার ক্ষমতার বিষয়ে তাঁর ওপর আস্থার অভাবের ইঙ্গিত দেয়, তখন তা কতই না দুঃখজনক হয়ে থাকে!

১৬. কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলেছিল?

১৬ অন্যান্য দিক দিয়েও বাহ্যিক বিষয় ইস্রায়েলীয়দের নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছিল। বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলায় তারা শত্রুদের ভয়ে অতিশয় ভীত হয়েছিল। (গণনাপুস্তক ১৩:২৮, ৩২; দ্বিতীয় বিবরণ ১:২৮) এর ফলে তারা মোশির ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এবং তাদের যেধরনের জীবন ছিল তা নিয়ে অভিযোগ করেছিল। বিশ্বাসের এই অভাবের কারণে তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের চেয়ে বরং মন্দ আত্মাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেই মিশরে ফিরে যেতে চেয়েছিল। (গণনাপুস্তক ১৪:১-৪; গীতসংহিতা ১০৬:২৪) তাদের অদৃশ্য রাজার প্রতি তাঁর লোকেদের প্রচণ্ড অসম্মান দেখে যিহোবা নিশ্চয়ই কত আঘাতই না পেয়েছিলেন!

১৭. কোন কারণে ইস্রায়েলীয়রা শমূয়েলের দিনে যিহোবার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেছিল?

১৭ আবারও ভাববাদী শমূয়েলের দিনে অনুগ্রহপ্রাপ্ত ইস্রায়েল জাতি বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলার ফাঁদে পড়েছিল। লোকেরা এমন এক রাজা চেয়েছিল, যাকে তারা দেখতে পাবে। যদিও যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে, তিনিই হলেন তাদের রাজা কিন্তু বিশ্বাস দ্বারা চলার জন্য এই বিষয়টা তাদের পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। (১ শমূয়েল ৮:৪-৯) নিজেদের ক্ষতি ডেকে এনে তারা যিহোবার ত্রুটিহীন নির্দেশনা বোকার মতো প্রত্যাখ্যান করেছিল আর এর পরিবর্তে তাদের চারপাশের জাতিগুলোর মতো হতে চেয়েছিল।—১ শমূয়েল ৮:১৯, ২০.

১৮. বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলার বিপদগুলো সম্বন্ধে আমরা কোন কোন শিক্ষা পেতে পারি?

১৮ যিহোবার আধুনিক দিনের দাস হিসেবে আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের উত্তম সম্পর্ককে মূল্যবান বলে গণ্য করি। অতীতের ঘটনাগুলো থেকে আমরা মূল্যবান শিক্ষাগুলো শিখতে এবং আমাদের জীবনে তা প্রয়োগ করতে আকুল আকাঙ্ক্ষী। (রোমীয় ১৫:৪) ইস্রায়েলীয়রা যখন বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলেছিল, তখন তারা ভুলে গিয়েছিল যে, মোশির মাধ্যমে ঈশ্বর তাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরাও ভুলে যেতে পারি যে, যিহোবা ঈশ্বর এবং মহান মোশি যিশু খ্রিস্ট আজকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে নির্দেশনা দিচ্ছে। (প্রকাশিত বাক্য ১:১২-১৬) যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশ সম্বন্ধে মানব দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যদি তা পোষণ করি, তা হলে সেটা আমাদের অভিযোগ করার মনোভাবের দিকে এবং যিহোবার প্রতিনিধিদের ও সেইসঙ্গে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে জোগানো আধ্যাত্মিক খাবারের প্রতি আমাদের উপলব্ধি হারিয়ে ফেলার দিকে পরিচালিত করতে পারে।—মথি ২৪:৪৫.

বিশ্বাস দ্বারা চলার জন্য সংকল্পবদ্ধ হোন

১৯, ২০. আপনি কী করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন এবং কেন?

১৯ “আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে,” বাইবেল বলে, “রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত।” (ইফিষীয় ৬:১২) আমাদের প্রধান শত্রু হল শয়তান দিয়াবল। তার লক্ষ্য হল যিহোবার ওপর আমাদের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেওয়া। যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেকোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে সে উপেক্ষা করবে না। (১ পিতর ৫:৮) শয়তানের বিধিব্যবস্থার বাহ্যিক বিষয়ের দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে কী আমাদের রক্ষা করবে? বিশ্বাস দ্বারা চলা, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়! যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর নির্ভর করা এবং আস্থা রাখা ‘আমাদের বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন হওয়া’ থেকে রক্ষা করবে। (১ তীমথিয় ১:১৯) তা হলে, যেকোনোভাবেই হোক, আসুন আমরা ক্রমাগত বিশ্বাস দ্বারা চলার ক্ষেত্রে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই ও যিহোবার আশীর্বাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি। আর নিকট ভবিষ্যতে ঘটবে এমন সমস্তকিছু থেকে যাতে আমরা রক্ষা পেতে পারি, সেইজন্য আমরা যেন প্রার্থনা করে চলি।—লূক ২১:৩৬.

২০ বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয় কিন্তু বিশ্বাস দ্বারা চলার সময় আমাদের জন্য এক চমৎকার আদর্শ রয়েছে। “খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন,” বাইবেল বলে, “এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) পরের প্রবন্ধ আলোচনা করবে যে, কীভাবে আমরা তাঁর মতো করে চলতে পারি।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয় কিন্তু বিশ্বাস দ্বারা চলার বিষয়ে মোশি এবং এষৌর উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন?

• বস্তুবাদিতা এড়ানোর একটা চাবিকাঠি কী?

• কীভাবে বিশ্বাস দ্বারা চলা আমাদের এইরকম মনে করা এড়াতে সাহায্য করে যে, শেষ অনেক দূরে?

• কেন বাহ্য দৃশ্য দ্বারা চলা বিপদজনক?

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

মোশি বিশ্বাস দ্বারা চলেছিলেন

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমোদপ্রমোদ কি প্রায়ই আপনাকে ঈশতান্ত্রিক কাজগুলো থেকে দূরে রাখে?

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের বাক্যে মনোযোগ দেওয়া কীভাবে আপনাকে সুরক্ষা করে?

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার