আপনার বিশ্বাস ও আত্মিক স্বাস্থ্য বজায় রাখুন
“তুমি আমার কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছ, সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে ও প্রেমে ধারণ কর।”—২ তীমথিয় ১:১৩.
১. কেন দৈহিক স্বাস্থ্য এক অমূল্য সম্পদ যা রক্ষা করা দরকার?
উত্তম স্বাস্থ্য হল মূল্যবান সম্পদ। যখন আমাদের উত্তম স্বাস্থ্য থাকে, তখন আমরা অনেক কিছু করতে পারি এবং জীবন আরও উপভোগ করতে পারি। কিন্তু যখন আমরা দীর্ঘকাল ধরে অসুস্থ বা কমজোর বোধ করি, তখন জীবন অনেক কষ্টকর হয়। অবশ্য, উত্তম স্বাস্থ্যকে বজায় রাখতে হবে। অনেকে তাদের শরীরের যত্ন নেয় না বা সেই জিনিসগুলি করে যা রোগ নিয়ে আসে। যারা অবশ্য তাদের শরীরের প্রতি যত্ন নেয়, সাধারণত তারা তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় উত্তম স্বাস্থ্য ও বল উপভোগ করে।
২. (ক) কেন আত্মিক স্বাস্থ্য দৈহিক স্বাস্থ্যের থেকে আরও মূল্যবান? (খ) বিশ্বাসে স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য কি প্রয়োজন?
২ আত্মিক স্বাস্থ্য দৈহিক স্বাস্থ্য থেকে অনেক বেশি মূল্যবান। সব থেকে উত্তম স্বাস্থ্য ঈশ্বরের যে অনন্ত জীবনের দান তা নিয়ে আসতে পারে না। ভাল আত্মিক স্বাস্থ্য আসে শুদ্ধ উপাসনা ও বিশ্বাস যা সঠিক জ্ঞানের ভিত্তি হওয়ার ফলস্বরূপ আসে। (যোহন ১৭:৩; ইব্রীয় ১১:৬; যাকোব ১:২৭) প্রেরিত পৌল বলেন: “সেইরূপে প্রাচীনদিগকে বল, যেন তাঁহারা মিতাচারী, ধীর, সংযত [এবং] বিশ্বাসে, প্রেমে, ধৈর্য্যে নিরাময় হন।” (তীত ২:২) যে কেহ ইচ্ছা করেন বিশ্বাসে স্বাস্থ্যবান হতে তাদের এর জন্য অনেক চেষ্টা করতে হবে ও তার প্রতি নিয়মিত সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। উত্তম আত্মিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিপদ আসতে পারে আমাদের নিজেদের মধ্যে থেকে বা বাইরে থেকে। আমাদের এই বিপদগুলি সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হবে যদি আমরা এই অসুস্থ জগতে বিশ্বাস ও আত্মিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে চাই।
এই জগত কতখানি অসুস্থ?
৩, ৪. কি ভাবে লোকেদের আচরণে এই জগতের নৈতিক অসুস্থতা প্রকাশ পায়?
৩ এই সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই যে এই জগত নৈতিক দিক দিয়ে খুব অসুস্থ। এই জগতের প্রত্যেক “অঙ্গে” আমরা রোগ দেখতে পাই—তার ধর্মগুলিতে, রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, অর্থনৈতিক সংগঠনগুলিতে, এবং তার মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে। অল্প সংখ্যক লোক ঈশ্বরের আইনের প্রতি সম্মান দেখায় যা তিনি দিয়েছেন মানুষের উপকারার্থে। আর যেমন ইতিহাস দেখায় যে, নৈতিক অধঃপতন অবশ্যই পরিচালনা করে দৈহিক রোগ ও সমস্যার দিকে। আশ্চর্যজনকরূপে, বেশির ভাগ লোক এই রোগগ্রস্ত নৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে আরোগ্যের কোন ব্যবস্থা করতে চায় না কারণ তারা যে বিষয়গুলি এইগুলির কারণ সেই বিষয়গুলিকে ভালবাসে।
৪ এই জগৎ কতটা অসুস্থ! রোমাঞ্চ বোধ পেতে গিয়ে অথবা বাস্তবকে এড়াতে গিয়ে, অনেকে তাদের জীবনকে নষ্ট করেছে মাদকদ্রব্য ও নেশাকর ঔষধের অপব্যবহার করার মাধ্যমে। প্রচণ্ডতা সর্বস্থানে রয়েছে, জীবনের কোন মূল্য নেই, জেলখানাগুলি অপরাধকারীদের দ্বারা পূর্ণ ও উপচে পড়ছে। অনেক দেশে, সমস্ত বিবাহের অর্ধেক বিবাহ বিচ্ছেদে শেষ হয়। আর ছেলেমেয়েদের সঠিক পরিচালনা না থাকাতে তারা অপরাধী হিসাবে গড়ে উঠে। যেহেতু যৌন অনৈতিকতা দারুন বেড়ে গেছে, এডস ও অন্যান্য যৌন রোগ সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৫. কি করে যিশাইয় প্রাচীন যিহুদার কথা বর্ণনা করেন?
৫ ঈশ্বর এই অসুস্থ জগৎ সম্বন্ধে ঠিক তাই বলতে পারেন যা তিনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন যিশাইয়কে ভাববানী করতে সেই বিপথগামী যিহূদার বিরুদ্ধে: “অপরাধে ভারগ্রস্ত লোক, দুষ্কর্ম্মকারীদের বংশ, নষ্টাচারী সন্তানগণ; তহারা যিহোবাকে ত্যাগ করিয়াছে, ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অবজ্ঞা করিয়াছে, বিপথে গিয়াছে, পরাঙ্মুখ হইয়াছে। তোমারা আর কেন প্রহারিত হইবে? হইলে অধিক বিদ্রোহাচরণ করিবে; সমুদয় মস্তক ব্যথিত ও সমুদয় হৃদয় দুর্বল হইয়াছে।”—যিশাইয় ১:৪-৬.
৬. প্রাচীন যিহুদা ও আমাদের দিনে, যিহোবা যে ভাল হবার আপিল করছেন তার ফল কি হয়েছে?
৬ যিহোবা যে আপিল করেন “সদাচরণ শিক্ষা কর” তা যিহূদাতে বেশিরভাগ লোকেরা শোনেনা। (যিশাইয় ১:১৬-২০) ইহাই পরে যিরূশালেমের ধ্বংস ও যিহুদিদের বন্দীত্বে নিয়ে যায় বাবিলনে। কেবলমাত্র অল্প সংখ্যক বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা বেঁচে যায় যারা সেই অসুস্থ জাতির মধ্যে ঈশ্বরের আশীর্বাদে রক্ষিত হয়। ঠিক তেমনি আজ, যে জগৎ মাথা থেকে পা পর্যন্ত অসুস্থ, কেবলমাত্র অল্প ব্যক্তিরা ভাল শিক্ষা করতে চায়। এই বিশ্বস্ত যিহোবার সেবকেরা এখন আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাদের আত্মিক স্বাস্থ্যকে ও বিশ্বাস এখন রক্ষা করতে, সেই আশা নিয়ে যা হচ্ছে ঈশ্বরের নতুন জগতে সিদ্ধ দৈহিক স্বাস্থ্য ও অনন্ত জীবন পাবার।—২পিতর ৩:১৩; প্রকাশিতবাক্য ২১:১-৪.
এই অসুস্থ জগতে আত্মিক বিপদগুলি
৭. (ক) কি বিপদগুলি আমাদের বিশ্বাস ও আত্মিক স্বাস্থ্যকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে? (খ) তিনটি জিনিষ যাহা আমাদের আত্মিক স্বাস্থ্যকে বিপদে ফেলে তার সমনা করা সমন্ধে শাস্ত্র আমাদের কি বলে?
৭ বিশ্বাস ও আত্মিক সাস্থ্য রক্ষা করা এক চ্যালেঞ্জ কারণ এই জগতের নৈতিক অসুস্থতা খুব সংক্রামক। খ্রীষ্টানদের তাদের নিজেদের জন্মসুত্রে পাওয়া অসিদ্ধতার সাথেও মোকাবিলা করতে হয়। (রোমীয় ৭:২১-২৫) আরও শয়তান যে “জগতের অধিপতি,” সে আমাদের দৈহিক দুর্বলতাগুলি জানে এবং প্রলোভন করতে দারুণ পারদর্শী। (যোহন ১৪:৩০; ১ যোহন ৫:১৯) এই তিন প্রধাণ বিপদ যা হচ্ছে আমাদের আত্মিক স্বাস্থ্য ও বিশ্বাসকে বিপন্ন করে—তা হল মাংস, জগত, এবং দিয়াবল—এই তিনটিই হল ভীষণ ভয়ানক। ইহা সম্ভব যে আমরা “জগতের অংশ হব না যদিও আমরা তাতে বাস করি। আমরা ‘ঈশ্বরের আত্মার মাধ্যলে চলেও কেন দৈহিক আঙ্ক্ষাকা পূরণ করব না।’ আর ঐশিক শক্তির মাধ্যমে আমরা “দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার।” (যোহন ১৭:১৫, ১৬; গালাতীয় ৫:১৬; ইফিষীয় ৬:১১; ২ করিন্থীয় ২:১১) আসুন এখন আমরা দেখি কি করে এই তিন বস্তু যা আমাদের বিশ্বাস ও আত্মিক স্বাস্থের বিপদ সরূপ তা মোকাবিলা করতে পারি।
৮. যীশু যে শক্তিগুলি আমাদের মধ্যে আত্মিক্তার বিরুদ্ধে কাজ করে সেই সম্বন্ধে কি ভাবে বর্ণনা দেন?
৮ আমাদের অসিদ্ধ মনুষ্য স্বভাবের মধ্যে সেই শক্তিগুলি রয়েছে যা আমাদের পাপ করাতে পারে এবং আমাদের আত্মিকভাবে অসুস্থ করতে পারে। (যাকোব ১:১৪, ১৫) আমাদের যে আক্ষরিক হৃদয় আছে তার ক্ষেত্রে ইহা বিশেষ করে সত্য। যীশু বলেন: “কেননা ভিতর হইতে, মনুষ্যদের অন্তঃকরণ হইতে, কুচিন্তা বাহির হয় বেশ্যা গমন, চৌর্য্য, নরহত্যা, ব্যভিচার, লোভ, দুষ্টতা, ছল, লম্পটতা, কুদৃষ্টি, নিন্দা, অভিমান ও মূর্খতা, এই সকল মন্দ বিষয় ভিতর হইতে বাহির হয়, এবং মনুষ্যকে অশুচি করে।”—মার্ক ৭:২১-২৩.
৯. (ক) আমাদর আক্ষরিক হৃদয়ে কি আকাঙ্ক্ষাগুলি বদ্ধমূল? (খ) হিতোপদেশ ৪:২০-২৩, অনুসারে কি করে আমরা হৃদয়কে রক্ষা করতে পারি?
৯ যদিও হৃদয় হচ্ছে মন্দ আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল, ঈশ্বরীয় ব্যক্তির জন্য তা হচ্ছে যিহোবাকে শ্রদ্ধা এবং যা ন্যায় তার প্রতি প্রেম দেখাবার কেন্দ্রস্থল। (মথি ২২:৩৭; ইফিষীয় ৪:২০-২৪) আমাদের ক্ষেত্রে ভাল না খারাপ কোনটা বিরাজ করবে তা নির্ভর করছে আমরা অন্তরে কি গ্রহণ করছি তার উপর। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের উপদেশ দেয়: “বৎস আমার বাক্যে অবধান কর, আমার কথায় কর্ণপাত কর। তাহা তোমার দৃষ্টির বহির্ভূত না হউক, তোমার হৃদয় মধ্যে তাহা রাখ। কেননা যাহারা তাহা পায়, তাহাদের পক্ষে তাহা জীবন, তাহা তাহাদের সর্ব্বাঙ্গের স্বাস্থ্যস্বরূপ। সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।”—হিতোপদেশ ৪:২০-২৩.
১০. কি ভাবে আমাদের মাংসিক দুর্বলতা আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও আবেগকে প্রভাবিত করে?
১০ আমাদের দৈহিক দুর্বলতা আমাদের চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে পরিচালনা করে। কে নেই যে মাঝে, মাঝে নিরূৎসাহ, অধৈর্য, বা কোন কারণে অসন্তুষ্ট হয় না? যদি আমরা একই দৈহিক যে ভাবগুলি আছে সেগুলিকে তাড়াতাড়ি শুধরে নিই, তা আমাদের আত্মিক স্বাস্থ্যকে রক্ষা করবে। কিন্তু গর্ব ও উচ্চাআকাঙ্ক্ষা সহজে আমাদের হৃদয় মূল গাড়তে পারে। লোভ ও অতিরিক্ত সুখ বিলাসের আকাঙ্ক্ষা এবং আমোদ প্রমোদ আমাদের উপর কবজা করতে পারে। আর যৌন আকাঙ্ক্ষা, যদিও তা স্বাভাবিক কারণ যেভাবে ঈশ্বর আমাদের তৈরি করেছেন, তা আমাদের অতি চতুরতার সাথে বিপথে নিয়ে যেতে পারে। এই আত্মিক অসুস্থতা যাতে আমাদের মধ্যে গড়ে না উঠে আমাদের উচিত, আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঈশ্বরের আত্মার যে গুণ তা গড়ে তোলা, নিজেদের শিক্ষিত করে তোলা “যাহা মন্দ তাহা ঘৃণা করতে” এবং “যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হতে।”—রোমীয় ১২:৯; গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
আত্মিক রোগর বাইরের উৎসগুলি
১১. (ক) জাগতিক কি চিন্তাধারা ও কাজ খুব সংক্রামক? (খ) যীশু যেমন বলেন সেই অনুসারে, কি ভাবে আমরা আমাদের হৃদয়ের উপর দৃষ্টি রাখতে পারি?
১১ আত্মিক সংক্রামক রোগ আসতে পারে বাইরের থেকে। ইহা সংক্রামিত হতে পারে তাদের কাছ থেকে যারা আত্মিকভাবে মৃত। (ইফিষীয় ২:১-৩) যদি আমরা তাদের খুব কাছে যাই, আমরা তাদের জীবনধারা ও মানসিকতা গড়ে তুলতে পারি। জাগতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া, টাকা পয়সাকে ভালবাসা, এবং সব থেকে ভাল বস্তুবাদের জিনিসগুলি উপভোগ করা, আর জীবনে উপভোগ করে সময় কাটানো হল জগতের লোকদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এই বিষয়গুলির জন্য আকাঙ্ক্ষা খুব সংক্রামক, আর যদি আমরা খুব অল্প ভাবে তার মধ্যে জড়িয়ে পড়ি তা আমাদের আত্মিক দিক দিয়ে মন্থর করে দিতে পারে। যীশু সবধান করেছিলেন: “কিন্তু আপনাদের বিষয় সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতলনিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে।”—লূক ২১:৩৪,৩৫.
১২. কি করে ভূল শিক্ষা ও চিন্তা আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে?
১২ জগতের যে ভুল চিন্তাধারা আছে তা আমাদের প্রভাবিত করতে পারে। পৌল সাবধান করেন “কেননা এমন সময় আসিবে, যে সময় লোকেরা নিরাময় শিক্ষা সহ্য করিবে না, কিন্ত কানচুলকানি বিশিষ্ট হইয়া আপন আপন অভিলাষ অনুসারে আপনাদের জন্য রাশি রাশি গুরু ধরিবে এবং সত্য হইতে কান ফিরাইয়া গল্পের দিকে বিপথে যাইবে।” (২ তীমথিয় ৪:৩, ৪) ভাক্ত শিক্ষা ঠিক পচা ঘায়ের মত। (২ তীমথিয় ২:১৬, ১৭) যখন তা একবার শুরু হয়, আপনার মাংসের এক অংশ মরে যায় কারণ সেই অংশ থেকে জীবনদায়ী যে রক্ত তা চলাচল করা বন্ধ হয়ে গেছে।
১৩. যদি আত্মিক অসুস্থতা পচা ঘায়ের মত হয়, কি করা উচিত?
১৩ কত দ্রুত এই পচা ঘা ছড়াতে পারে! আপনাকে বাঁচাবার জন্য হয়ত, ডাক্তাররা আপনার দেহের এক অংশ কেটে ফেলতে পারে। সেই কারণে যদি, সন্দেহ, বা ভাক্তশিক্ষা আপনাকে ভয় দেখায় ও আপনাকে আত্মিকভাবে অশুদ্ধ করবার চেষ্টা করে, সেইগুলিকে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলুন! (তুলনা করুন মথি ৫:২৯, ৩০) মণ্ডলী প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। তাদের মত হবেন না যাদের পৌল ব্যাখ্যা করেছেন, “বিতণ্ডা ও বাগযুদ্ধের বিষয়ে রোগগ্রস্ত হইয়াছে” কারণ তারা “নিরাময় শিক্ষা” গ্রহণ করে না।—১ তীমথিয় ৬:৩, ৪.
১৪. মণ্ডলীর আত্মিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে মণ্ডলীর প্রাচীনরা কি করা আবশ্যক মনে করতে পারেন?
১৪ মণ্ডলীর আত্মিক স্বাস্থকে রক্ষা করার জন্য প্রাচীণদের উচিত “শিক্ষানুরূপ বিশ্বসনীয় বাক্য ধরিয়া থাকেন, এবং প্রতিকূলবাদীদের দোষ ব্যক্ত করিতে সমর্থ হন।” (তীত ১:৯, ১৩, ১৬; ২:১) হয়ত এইরূপ ব্যক্তিকে আবার আত্মিক স্বাস্থ্যে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। (২ তীমথিয় ২:২৩-২৬) কিন্ত যদি তারা কোন পরিবর্তন না করে মিথ্যা শিক্ষা দিয়ে যেতে থাকে তাহলে কি? তাহলে, তখন, তাদের পৃথকীকরণ করতে হবে। তাদের সমাজচ্যুত করা হয়, আর আমরা তাদের থেকে দূরে থাকি যাতে তাদের আত্মিক রোগে আমরা সংক্রামিত না হই।—রোমীয় ১৬:১৭, ১৮; ১ করিন্থীয় ৫:৯-১৩; তীত ৩:৯-১১.
১৫. ঈশ্বরের লোকদের আত্মিক স্বাস্থ্য দুর্বল করার জন্য দিয়াবল, কোন দুইটি প্রধাণ উপায় ব্যবহার করছে?
১৫ তৃতীয় বিপদের উৎস আমাদের বিশ্বাস ও স্বাস্থের বিরুদ্ধে হল দিয়াবল। (ইফিষীয় ৬:১১, ১২) আমাদের দিনেও সে চেষ্টা করেছে যিহোবার লোকদের বিশ্বাসকে দুর্বল করতে তাড়নার মাধ্যমে, যার মধ্যে যুক্ত হচ্ছে, বিরাট উন্মত্ত জনতার দ্বারা আক্রান্ত হওয়া, প্রহার, কারাগারে বন্দি, ও মৃত্যুর হুমকি। (প্রকাশিতবাক্য ২:১০) যেহেতু শয়তান এই চাতুরিগুলির দ্বারা খুব কম সফল হয় ঈশ্বরের কোন দাসের বিশ্বস্ততা ভাঙ্গতে, সে এই জগতের আকর্ষনকে ব্যবহার করে, যার সে হচ্ছে ঈশ্বর, যাতে কেউ কেউ পড়ে যায়।—২করিন্থীয় ৪:৪; ১১:৩, ১৪.
১৬. কি রক্ষার ব্যবস্থা আমাদের কাছে আছে যার দ্বারা আমরা দিয়াবলের আক্রমণ থেকে আমাদের বিশ্বাস ও আত্মিক স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে পারি?
১৬ কি করে আমরা দিয়াবলের যে আক্রমণ তা সামনা করতে পারি? ঈশ্বরের সব যুদ্ধ সজ্জ্যা পরিধান করে। আমাদের ‘বিশ্বাসের বড় ঢালকে পরিধান করতে হবে, যার দ্বারা সমস্ত অগ্নিবানকে প্রতিরোধ করতে পারি’ যা শয়তান আমাদের উপর নিক্ষেপ করে। যীশুর কথা অনুসারে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত “আমাদের পরিক্ষাতে আনিও না, কিন্তু মন্দ হইতে রক্ষা কর।” (ইফিষীয় ৬:১১-১৮; মথি ৬:১৩) যদি আমরা এইরূপ ভাবে প্রার্থনা করি ও সেই অনুসারে কাজ করি, আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার সাহায্য আশা করতে পারি এবং শয়তানের সকল অগ্নিবানকে রুখতে পারি।
বিশ্বাসে স্বাস্থ্যবান থাকা
১৭. আত্মিক স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য, কত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা “উপযুক্ত সময় খাদ্য” এবং নিয়মিত খ্রীষ্টীয় কার্য্যে অংশ নিই?
১৭ ভাল দৈহিক স্বাস্থ্য রাখতে গেলে প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেওয়া খুব বড় ভূমিকা রাখে। ভাল পুষ্টিদায়ক খাদ্য, সঠিক বেয়াম, এবং শরীর ও মনের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ঠিক তেমন, আত্মিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে গেলে, ইহা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা ঈশ্বরের নির্দেশিত পুষ্টিদায়ক আত্মিক “উপযুক্ত সময় খাদ্য” যা সরবরাহ করছেন “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” তা গ্রহণ করি। এই জগতের যে মূল্যহীন আত্মিক খাদ্য তা আমরা প্রত্যাখান করব, আমাদের বাইবেল অধ্যয়ন করতে হবে ও অন্য সব খ্রীষ্টীয় সাহিত্যগুলি এবং ঈশ্বরের লোকদের সাথে নিয়মিত একত্র হতে হবে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; ইব্রীয় ১০:২৪,২৫) আমাদের সেই বেয়ামের প্রয়োজন যা “প্রভুর কার্য্যে সর্বদা উপচিয়া পড়” তার ফলস্বরূপ আসে তাহল খ্রীষ্টীয় পরিচর্য্যা ও অন্যান্য খ্রীষ্টীয় কাজগুলি।—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.
১৮. “সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ,” কি এবং কেন সেগুলিকে মনে ও হৃদয়ে রাখা দরকার?
১৮ বিশ্বাসে উত্তম স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য, ঈশ্বরদত্ত সব বন্দোবস্তের পূর্ণ লাভ নিন। যেমন পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন: “তুমি আমার কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছ, সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে ও প্রেমে ধারন কর। তোমার কাছে যে উত্তম ধন গচ্ছিত আছে, তাহা যিনি আমাদের অন্তরে বাস করেন, সেই পবিত্র আত্মার দ্বারা রক্ষা কর।” (২ তীমথিয় ১:১৩, ১৪) একটি ভাষার শব্দের একটি ধারা আছে। ঠিক তেমন, “বিশুদ্ধ ওষ্ঠ” বাইবেলের সত্যগুলির একটি ধারা আছে তার ভিত্তি হচ্ছে সেই বিষয়ের উপর যা হল যিহোবার সার্বভৌমত্ব জাহির করা রাজ্যের মাধ্যমে। (সফনিয় ৩:৯) আমাদের এই স্বাস্থ্যবান কথাগুলির ধারাকে মনে ও হৃদয়ে রাখতে হবে যদি আমরা আমাদের বিশ্বাস ও আত্মিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে চাই। তা নাহলে, ইহা আমাদের জন্য গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। আর করিন্থ মণ্ডলীতে সম্ভবত তাই হয়েছিল, সেখানে কেউ কেউ “দুর্বল ও পীড়িত” ছিল কারণ তাদের আত্মিক বোধগম্যতা ছিল না।—১ করিন্থীয় ১১:২৯-৩২.
১৯. (ক) যদি আত্মিক ব্যাধি গড়ে উঠে থাকে, কি করা উচিত? (খ) প্রাচীনরা কি করতে পারেন যদি একজন ব্যক্তি আত্মিকভাবে পীড়িত হন?
১৯ কি করা উচিত যদি আপনার মধ্যে আত্মিক অসুস্থতা গড়ে উঠে থাকে? প্রেমময় সাহায্যের অবশ্যই প্রয়োজন আছে ও তা আছে, কারণ যাকোব বলেন: “তোমাদের মধ্যে কেহ কি রোগগ্রস্ত? সে মণ্ডলীর প্রাচীণবর্গকে আহবান করুক এবং তাঁহারা যিহোবার নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করুন।” (যাকোব ৫:১৪, NW) হ্যাঁ, প্রাচীনদের ডাকুন। যারা হচ্ছেন আত্মিক ডাক্তার, এবং তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনার আত্মিক অসুস্থতার মূলে পৌঁছাতে। তারা মৃদুভাবে অথচ কার্যকারী জনক রূপে ঈশ্বরের বাক্যের যে তৈল তা লাগিয়ে দেবে। আপনি যদি ভূল করে থাকেন কিন্তু তার জন্য অনুতপ্ত, তবে নিশ্চিত থাকুন যে যিহোবা আপনাকে সত্যই ক্ষমা করবেন। (গীতসংহিতা ১০৩:৮-১৪) যখন প্রাচীনরা আপনার জন্য আপনার সাথে প্রার্থনা করেন, আপনি কি আশা করতে পারেন? যাকোব উত্তর দেন: “তাহাতে বিশ্বাসের প্রার্থনা সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে, এবং যিহোবা তাহাকে উঠাইবেন; আর সে যদি পাপ করিয়া থাকে, তবে তাহার মোচন হইবে।—যাকোব ৫:১৫, NW.
আত্মিক স্বাস্থ্য অনন্তজীবনে নিয়ে যায়
২০. (ক) প্রথম শতাব্দীর গভারনিং বডি আত্মিক স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য কি উপদেশ দেন? (খ) কি আমাদের সাহায্য করবে যখন আমরা নতূন জগতের অপেক্ষা করছি?
২০ “তোমাদের মঙ্গল হউক! এই কথাগুলির দ্বারা, প্রথম শতাব্দীর গর্ভনিং বডি যিহোবার লোকদের তাদের পত্র শেষ করেছিলেন যার মধ্যে “প্রয়োজনীয় বিষয়” যা খ্রীষ্টানদের জন্য ছিল। তাদের বলা হয় “প্রতিমার প্রসাদ এবং রক্ত ও গলাটিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস ও ব্যভিচার হইতে পৃথক থাকা তোমাদের উচিত।” (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) ভাল আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য দেওয়া ওই নির্দেশ এখন প্রযজ্য। যখন আমরা অপেক্ষা করছি সেই নতুন জগতের জন্য, আমরা আমাদের বিশ্বাসকে এবং আত্মিক স্বাস্থ্যকে ধরে রাখতে পারি যদি উৎসাহের সাথে রাজ্যের প্রচার করে যান ও যিহোবার নামকে উচ্চে এই অসুস্থ জগতে ধরে রাখেন। এই ভাবে ব্যস্ত থাকার দ্বারা আমরা অধৈর্য হব না সেই নতুন জগত সম্বন্ধে যার আশীর্বাদ এখন খুব নিকটে। সত্যই, “আশাসিদ্ধির বিলম্ব হৃদয়ের পীড়াজনক কিন্ত বাঞ্ছার সিদ্ধি জীবন বৃক্ষ।”—হিতোপদেশ ১৩:১২.
২১. কি আশীর্বাদ আমাদের জন্য গচ্ছিত আছে যদি আমরা সাফল্যের সাথে এই পীড়িত জগতে আত্মিক স্বাস্থ্য রক্ষা করি?
২১ যারা তাকে ভালবাসে তাদের জন্য যিহোবা যে উত্তম আশীর্বাদ রেখেছেন তা হারাবেন না। এই জগতের প্রভাবকে প্রতিরোধ করা, আমাদের রক্ত মাংসের সাথে যুদ্ধ করা, এবং শয়তানের জ্বলন্ত অগ্নিবানগুলিকে ফিরিয়ে দেওয়া নিষ্ফল যাবে না। যিহোবার নতুন পরিস্থিতি, আপনি আপনার নিজের চোখ দিয়ে দেখবেন “আর নগরবাসী কেহ বলিবে না: ‘আমি পীড়িত।’” (যিশাইয় ৩৩:২৪) ইহা সত্য হবে কারণ ঈশ্বর যে ব্যবস্থা করেছেন যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির দ্বারা, যিনি “আমাদের দুর্বলতা সকল গ্রহণ করিলেন ও ব্যাধি সকল বহন করিলেন।” (মথি ৮:১৭; যিশাইয় ৫৩:৪) আপনি সেই রূপক নদী থেকে পান করতে পারবেন “জীবন জলের নদী” আর ভক্ষন করতে পারবেন “জীবন বৃক্ষ” থেকে যার পাতাগুলি “জাতিগণের আরোগ্য নিমিত্তক।” (প্রকাশিতবাক্য ২২:১, ২) অন্তহীন জীবন, সিদ্ধতা ও সুখে, আপনার পুরস্কার হবে এই অসুস্থ জগতে বিশ্বাস ও আত্মিক সাস্থ্য বজায় রাখার জন্য। (W89 10/1)
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ কেন বিশ্বাসে স্বাস্থ্যবান হওয়া ভাল স্বাস্থ্যের থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ?
◻ কি তিনটে জিনিষ আমাদের আত্মিক স্বাস্থ্যকে নষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রধাণ বিপদ স্বরূপ?
◻ ভাল আত্মিক স্বাস্থের সাথে রূপক হৃদয়ের কি সর্ম্পক্য আছে?
◻ কেউ যদি আত্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে কি করা উচিত?
[Pictures on page 24]
এমনকি অসুস্থ জগতে, সবল বিশ্বাস ও ভাল স্বাস্থ্য রাখা সম্ভব
[Pictures on page 26]
ভাল আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য দরকার খ্রীষ্টীয় কাজ এবং সঠিক সময়ে আত্মিক খাদ্য গ্রহণ করা