বাবামায়েরা, আপনাদের উদাহরণ কী শেখায়?
“প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও। আর প্রেমে চল।”—ইফিষীয় ৫:১, ২.
১. প্রথম মানব দম্পতিকে যিহোবা কোন্ নির্দেশনা দিয়েছিলেন?
যিহোবা পরিবারের উদ্যোক্তা। পৃথিবীর সব পরিবার তাঁর কাছ থেকেই এসেছে কারণ তিনিই প্রথম পরিবার তৈরি করেছিলেন এবং প্রথম দম্পতিকে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) তিনি আদম ও হবাকে তাদের কাজের ব্যাপারে মৌলিক নির্দেশনাও দিয়েছিলেন আর এই কাজগুলো করতে তারা যেন তাদের নিজেদের বুদ্ধি খাটায় তার জন্য তাদেরকে সুযোগ দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৮-৩০; ২:১৫-২২) আদম ও হবা পাপ করার পর, পরিবারগুলোর জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে ওঠে। তবুও, যিহোবা প্রেম দেখিয়ে এমন নির্দেশনা যুগিয়েছেন যা তাঁর দাসেদের এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
২. (ক) লিখিত নিয়ম ছাড়া যিহোবা কাদের মাধ্যমে মৌখিক নির্দেশনা যুগিয়েছিলেন? (খ) বাবামায়েদের নিজেদেরকে কোন্ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উচিত?
২ যিহোবা আমাদের মহান নির্দেশদাতা আর তিনি আমাদের কী করা উচিত বা উচিত নয় তা শুধু লিখেই রাখেননি, কিন্তু এর চেয়েও বেশি কিছু করেছিলেন। প্রাচীনকালে লিখিত নির্দেশনার সঙ্গে তিনি যাজক, ভাববাদী ও পরিবারের মস্তকদের মাধ্যমে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমাদের দিনে মৌখিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি কাদের ব্যবহার করছেন? খ্রীষ্টান প্রাচীন এবং বাবামাদের। আপনি যদি একজন বাবা কিংবা মা হন, আপনি কি আপনার পরিবারকে যিহোবার পথে শিক্ষা দিয়ে আপনার দায়িত্ব পালন করছেন?—হিতোপদেশ ৬:২০-২৩.
৩. কার্যকারীভাবে শিক্ষা দিতে পরিবারের মস্তকেরা যিহোবার কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?
৩ পরিবারের মধ্যে যিহোবার পথের বিষয়ে কীভাবে শেখানো উচিত? যিহোবা এই বিষয়ে নমুনা দেখিয়েছেন। কোন্টা ভাল এবং কোন্টা মন্দ তা তিনি পরিষ্কার করে বলে দেন আর বার বার সেগুলো মনে করিয়ে দেন। (যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫; দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২৩, ২৪; ৫:৮, ৯; ৬:১৪, ১৫; যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৯, ২০) তিনি এমন কিছু প্রশ্ন করেন যেগুলো ভাবিয়ে তোলে। (ইয়োব ৩৮:৪, ৮, ৩১) বিভিন্ন উদাহরণ এবং বাস্তব জীবনের ঘটনাগুলোর মাধ্যমে তিনি আমাদের অনুভূতিকে জাগান এবং আমাদের হৃদয়কে গড়ে তোলেন। (আদিপুস্তক ১৫:৫; দানিয়েল ৩:১-২৯) সুতরাং বাবামায়েরা, ছেলেমেয়েদের শেখানোর সময় আপনারা কি যিহোবার নমুনাকে নকল করার চেষ্টা করেন?
৪. যিহোবা যেভাবে শাসন করেন তার থেকে আমরা কী শিখি আর শাসন করা কেন জরুরি?
৪ যা সঠিক সেই বিষয়ে যিহোবা অটল থাকেন কিন্তু তিনি বোঝেন যে আমরা অসিদ্ধ। তাই এই অসিদ্ধ মানুষদের শাস্তি দেওয়ার আগে তিনি তাদের শেখানোর চেষ্টা করেন, বার বার সতর্ক করে দেন ও বার বার মনে করিয়ে দেন। (আদিপুস্তক ১৯:১৫, ১৬; যিরমিয় ৭:২৩-২৬) আর শাসন করার সময় তিনি প্রচণ্ড হন না বরং সঠিকভাবে তা করেন। (গীতসংহিতা ১০৩:১০, ১১; যিশাইয় ২৮:২৬-২৯) আমরা যদি আমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এইরকম ব্যবহার করি, তবে তা প্রমাণ দেবে যে আমরা যিহোবাকে ভালভাবে জানি আর এর ফলে ছেলেমেয়েদের জন্যও তাঁকে জানা আরও সহজ হয়ে যাবে।—যিরমিয় ২২:১৬; ১ যোহন ৪:৮.
৫. শোনার ক্ষেত্রে বাবামায়েরা যিহোবার কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?
৫ যিহোবা যিনি স্বর্গে থাকেন তিনি একজন প্রেমময় পিতার মতো আমাদের কথা শোনেন। তিনি শুধু আমাদের হুকুম দেন না। তিনি আমাদেরকে উৎসাহিত করেন যেন আমরা তাঁর কাছে আমাদের মনের কথা খুলে বলি। (গীতসংহিতা ৬২:৮) আর আমরা যখন আমাদের এমন কোন অনুভূতি প্রকাশ করি যা ঠিক নয়, তখন তিনি স্বর্গ থেকে আমাদের তিরস্কার করেন না। বরং তিনি ধৈর্য ধরে আমাদেরকে শিক্ষা দেন। তাই, প্রেরিত পৌল যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা কতই না সঠিক: “প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও”! (ইফিষীয় ৪:৩১-৫:১) যে বাবামায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিতে চান তাদের জন্য যিহোবা কত সুন্দর উদাহরণই না দেখিয়েছেন! তিনি এমনই এক উদাহরণ যে আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং আমাদেরকে যিহোবার পথে চলতে প্রেরণা দেয়।
উদাহরণের প্রভাব
৬. বাবামায়ের মনোভাব ও উদাহরণ কীভাবে ছেলেমেয়েদের ওপর ছাপ ফেলে?
৬ শুধু মুখে না বলে কাজে করে দেখালে তা ছোটদের মধ্যে আরও বেশি ছাপ ফেলে। বাবামায়েরা পছন্দ করুন আর নাই বা করুন, তাদের ছেলেমেয়েরা তাদেরকে নকল করবেই। এতে বাবামা হয়তো খুশি হন, আবার কখনও কখনও হয়তো দুঃখও পান যখন তারা শোনেন যে তাদের ছেলেমেয়েরা ঠিক সেই কথাই বলছে যা তারা বলেছিলেন। তাই বাবামায়ের আচরণ ও মনোভাবে যখন আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য গভীর উপলব্ধিবোধ দেখা যায় তখন তা তাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক ভাল প্রভাব ফেলে।—হিতোপদেশ ২০:৭.
৭. যিপ্তহ তার মেয়ের জন্য কেমন উদাহরণ রেখেছিলেন আর এর ফল কী হয়েছিল?
৭ বাবামায়ের উদাহরণের প্রভাব যে ছেলেমেয়েদের ওপর পড়ে তা বাইবেলে সুন্দর করে দেখানো হয়েছে। যিহোবা যিপ্তহের নেতৃত্বে ইস্রায়েলীয়দেরকে অম্মোনীয়দের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী করেছিলেন। আর তিনি একজন বাবাও ছিলেন। অম্মোনের রাজাকে তিনি যেভাবে উত্তর দিয়েছিলেন সেই বিবরণ দেখায় যে ইস্রায়েলের সঙ্গে যিহোবার আচরণের ইতিহাস যিপ্তহ অনেকবার পড়েছিলেন। কারণ তিনি সহজেই সেই ইতিহাস হুবহু বলতে পেরেছিলেন এবং যিহোবার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। তাই কোন সন্দেহই নেই যে যিপ্তহের উদাহরণ তার মেয়েকে বিশ্বাস ও আত্ম-ত্যাগের মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আর এই জন্যই তিনি চিরকুমারী থেকে তার জীবনকে যিহোবার সেবায় বিলিয়ে দিয়েছিলেন।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:১৪-২৭, ৩৪-৪০. যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
৮. (ক) শমূয়েলের বাবামা কোন্ সুন্দর মনোভাব দেখিয়েছিলেন? (খ) তা থেকে শমূয়েল কীভাবে উপকার পেয়েছিলেন?
৮ বালক শমূয়েল উদাহরণযোগ্য ছিলেন আর একজন ভাববাদী হিসেবেও তিনি সারা জীবন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। আপনি কি আপনার ছেলেমেয়েকে তার মতো করে গড়ে তুলতে চান? তাহলে শমূয়েলের বাবামা, ইল্কানা ও হান্না তার সামনে যে উদাহরণ রেখেছিলেন তা দেখুন। যদিও তাদের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না কিন্তু তারা উপাসনা করার জন্য নিয়মিত শীলোতে যেতেন, যেখানে পবিত্র সমাগমতাম্বু ছিল। (১ শমূয়েল ১:৩-৮, ২১) হৃদয়ের কত গভীর থেকে হান্না প্রার্থনা করেছিলেন তা দেখুন। (১ শমূয়েল ১:৯-১৩) লক্ষ্য করুন যে তারা দুজনেই ঈশ্বরের কাছে করা যে কোন মানত রক্ষা করাকে কতটা গুরুত্ব দিতেন। (১ শমূয়েল ১:২২-২৮) কোন সন্দেহ নেই যে তাদের সুন্দর উদাহরণই শমূয়েলকে সেই গুণগুলো গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল যার ফলে তিনি সঠিক পথে চলতে পেরেছিলেন—এমনকি তখনও যখন তার আশেপাশের লোকেরা শুধু ওপর ওপর যিহোবার সেবা করত ও ঈশ্বরের পথের জন্য কোন সম্মানই দেখাত না। সময় মতো যিহোবা শমূয়েলকে তাঁর ভাববাদী করেছিলেন।—১ শমূয়েল ২:১১, ১২; ৩:১-২১.
৯. (ক) তীমথিয়ের ওপর তার ঘরের কোন্ ভাল প্রভাব পড়েছিল? (খ) এর ফলে তীমথিয় কোন্ ধরনের লোক হয়েছিলেন?
৯ আপনি কি চান আপনার ছেলে তীমথিয়ের মতো হোক, যিনি যুবক থাকতেই প্রেরিত পৌলের একজন সঙ্গী হয়েছিলেন? তীমথিয়ের বাবা বিশ্বাসী ছিলেন না কিন্তু তার মা ও দিদিমা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য তার উপলব্ধি গড়ে তুলতে সুন্দর উদাহরণ দেখিয়েছিলেন। এটা নিশ্চিত যে এই উদাহরণ তীমথিয়ের জীবনে এক মজবুত ভিত গড়ে তুলেছিল আর তিনি একজন উত্তম খ্রীষ্টান হয়ে গড়ে উঠেছিলেন। বাইবেল বলে যে তার মা উনীকী ও দিদিমা লোয়ীর ‘অকল্পিত বিশ্বাস’ ছিল। তারা শুধু খ্রীষ্টান হওয়ার ভান করতেন না; তারা তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতেন এবং তারা যুবক তীমথিয়কেও তা করতে শিখিয়েছিলেন। তীমথিয় প্রমাণ দিয়েছিলেন যে তার ওপর নির্ভর করা যায় এবং তিনি মনেপ্রাণে অন্যের মঙ্গল চিন্তা করতেন।—২ তীমথিয় ১:৫; ফিলিপীয় ২:২০-২২.
১০. (ক) ঘরের লোক ছাড়া আমাদের ছেলেমেয়েদের ওপর আর কারা ছাপ ফেলতে পারে? (খ) এই প্রভাবগুলো যখন আমাদের ছেলেমেয়েদের কথাবার্তা ও মনোভাবে দেখা যায় তখন আমাদের কী করা উচিত?
১০ শুধু ঘরের উদাহরণই ছেলেমেয়েদের মনে ছাপ ফেলে না। আমাদের ছেলেমেয়েরা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে স্কুলে যায় যারা তাদের ওপর ছাপ ফেলে থাকে, স্কুলে শিক্ষকেরা আছেন যাদের কাজ হল ছোটদের মনকে গড়ে তোলা, আবার এমন লোকেরাও তাদের ওপর ছাপ ফেলতে পারেন যারা বিশ্বাস করেন যে জাতিগত বা সামাজিক রীতিনীতিগুলো সবার মেনে চলা উচিত। এছাড়া খেলাধূলা জগতের তারকারাও তাদের মধ্যে ছাপ ফেলেন যারা তাদের সাফল্যের জন্য সকলের প্রশংসা পান আর এইরকম নেতা বা কর্তৃপক্ষরাও তাদের ওপর প্রভাব ফেলেন যারা সংবাদের শিরোনামে থাকেন। তাছাড়াও লাখ লাখ শিশু যুদ্ধের নৃশংসতার শিকার হয়েছে। এই প্রভাবগুলো যদি আমাদের ছেলেমেয়েদের কথাবার্তা অথবা আচার ব্যবহারে ফুটে ওঠে তবে কি আমরা অবাক হব? এইরকম হলে আমরা কী করব? তাকে খুব শাসন করলে কিংবা লম্বা চওড়া বক্তৃতা দিলে কি সমস্যাটা মিটে যাবে? তাড়াহুড়ো করে কিছু একটা না করে বরং নিজেদেরকে এই কথা জিজ্ঞেস করাই কি ভাল হবে না, ‘যিহোবা আমাদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেন তার থেকে কি আমি কিছু শিখতে পারি যাতে আমি এই পরিস্থিতিকে সফলভাবে সামলাতে পারি?’—রোমীয় ২:৪ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
১১. বাবামায়েরা যখন ভুল করেন, তখন তা তাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে কীভাবে ছাপ ফেলতে পারে?
১১ এটা ঠিক যে বাবামায়েরাও অসিদ্ধ আর তাই তারাও ভুল করবেন, তারা সবসময় সব পরিস্থিতি ঠিক মতো মোকাবিলা করতে পারেন না। ছেলেমেয়েরা যখন তা বুঝতে পারে, তখন বাবামায়ের জন্য তাদের সম্মান কি কমে যাবে? সেইসময় তা কমে যেতে পারে যদি বাবামায়েরা তাদের দোষ ঢাকার জন্য বিভিন্ন অজুহাত দেখান ও তাদের কর্তৃত্বের অপব্যবহার করেন। কিন্তু, বাবামায়েরা যদি নম্র হন ও সহজেই তাদের ভুলগুলো স্বীকার করেন, তাহলে তাদের সম্মান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় না। এভাবে, তারা তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য এক ভাল উদাহরণ দেখাতে পারবেন আর ছেলেমেয়েরাও বড় হয়ে এইরকম করতে শিখবে।—যাকোব ৪:৬.
আমাদের উদাহরণ কী শেখাতে পারে
১২, ১৩. (ক) ভালবাসার ব্যাপারে ছেলেমেয়েদের কী শেখা দরকার আর কীভাবে আমরা তা সবচেয়ে ভাল উপায়ে শেখাতে পারি? (খ) ছেলেমেয়েদের ভালবাসা সম্বন্ধে শেখা কেন জরুরি?
১২ মুখে শিক্ষা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এক সুন্দর উদাহরণ রাখা যায়, তাহলে তা অনেক ফল নিয়ে আসে। এখন এর কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১৩ নিঃস্বার্থ ভালবাসা দেখানো: ভাল উদাহরণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা পাওয়া যায় আর তার মধ্যে একটা হল ভালবাসার অর্থ কী তা শেখা। “আমরা প্রেম করি, কারণ [ঈশ্বরই] প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।” (১ যোহন ৪:১৯) তিনিই সবচেয়ে বড় ভালবাসা দেখিয়েছেন ও তিনি প্রেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ। এই আগাপে হল সেই ভালবাসা যা নীতির ওপর ভিত্তি করা আর এর বিষয়ে বাইবেলে ১০০ বারেরও বেশি পাওয়া যায়। এই গুণ দিয়েই সত্য খ্রীষ্টানদের চেনা যায়। (যোহন ১৩:৩৫) আমাদের ঈশ্বর ও যীশু খ্রীষ্টকে এভাবেই প্রেম দেখানো উচিত আর সেইসঙ্গে আমাদের একে অন্যের মধ্যেও এই প্রেম থাকা দরকার, এমনকি সেই ব্যক্তিদের জন্যও যাদেরকে আমরা খুব একটা পছন্দ করি না। (মথি ৫:৪৪, ৪৫; ১ যোহন ৫:৩) এই প্রেম শুধু ওপর ওপর নয় কিন্তু হৃদয় থেকে আসা চাই আর তা আমাদের রোজকার জীবনে দেখানো উচিত, তবেই আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের শেখাতে পারব। কথার চেয়ে কাজ আরও বেশি শক্তিশালী। ছেলেমেয়েদের দেখা ও বোঝা দরকার যে পরিবারের মধ্যে ভালবাসা আছে, মায়ামমতা আছে। এই গুণগুলো না থাকলে ছেলেমেয়ের শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত বিকাশে বাধা পড়বে। এছাড়াও ছেলেমেয়েদের দেখতে পাওয়া দরকার যে পরিবার ছাড়াও আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদেরকে ভালবাসা দেখানো হয়।—রোমীয় ১২:১০; ১ পিতর ৩:৮.
১৪. (ক) ছেলেমেয়েদের কীভাবে ভালভাবে কাজ করার বিষয় শেখানো যেতে পারে যাতে তারা নিজেদের কাজে আনন্দ পায়? (খ) আপনার পরিবারে আপনি তা কীভাবে করতে পারেন?
১৪ কাজ করতে শেখা: বেঁচে থাকতে হলে কাজ করতেই হবে। জীবনে পরিতৃপ্তি পেতে চাইলে একজন ব্যক্তির শেখা দরকার যে কীভাবে ভাল কাজ করতে হয়। (উপদেশক ২:২৪; ২ থিষলনীকীয় ৩:১০) কোন বাচ্চাকে যদি এমন একটা কাজ করতে দেওয়া হয় যে সম্বন্ধে তাকে ভাল করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি আর তা ঠিক মতো করা হয়নি বলে যদি তাকে বকা দেওয়া হয়, তাহলে কখনই সে ভাল কাজ করতে শিখবে না। কিন্তু ছেলেমেয়েরা যখন তাদের বাবামার পাশে থেকে হাতেকলমে শেখে ও যদি তাদের কাজের প্রশংসা করা হয়, তাহলে তারা সেই কাজ ভালভাবে শিখে নিতে চাইবে ও সেইসঙ্গে কাজ করে আনন্দও পাবে। কাজ করার সময় বাবামা যদি ঠিক মতো বুঝিয়ে দেন, তাহলে ছেলেমেয়েরা শুধু কাজ করতেই শিখবে না কিন্তু সমস্যা দেখা দিলে সেগুলোকে কীভাবে সামলাতে হয়, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে তাতে লেগে থাকতে হয় এবং কীভাবে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাও শিখবে। এইরকম করলে তারা বুঝতে পারবে যে যিহোবাও কাজ করেন, তিনি সবসময় ভাল কাজ করেন এবং যীশুও তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেন। (আদিপুস্তক ১:৩১; হিতোপদেশ ৮:২৭-৩১; যোহন ৫:১৭) কোন পরিবারের যদি কোন খামার থাকে বা কোন ব্যাবসা থাকে, তাহলে পরিবারের কয়েকজন সদস্য মিলে সেগুলোর দেখাশুনা করতে পারেন। এছাড়াও, মা তার ছেলে কিংবা মেয়েকে রান্না করা বা খাবারের পর ধোয়া মোছার কাজ শেখাতে পারেন। বাবা যদি বাইরে কাজ করেন, তাহলে কোন একটা কাজ তিনি ঘরে তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে করার কথা ভাবতে পারেন। বাবামায়েরা যখন শুধু তাদের হাতের কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্যই নয় কিন্তু ছেলেমেয়েদেরকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখান তখন তা কত উপকারই না নিয়ে আসে!
১৫. বিশ্বাসের বিষয়টা ছেলেমেয়েদের কীভাবে শেখানো যেতে পারে? উদাহরণ দিয়ে বলুন।
১৫ বিপদের মধ্যেও বিশ্বাস বজায় রাখা: বিশ্বাসও আমাদের জীবনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পারিবারিক অধ্যয়নে যখন বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করা হয় তখন ছেলেমেয়েরা শিখতে পারে যে এর মানে কী। তারা হয়তো সেই বিষয়গুলো জানতে চাইতে পারে যা তাদের হৃদয়ে বিশ্বাস জন্মাতে সাহায্য করে। কিন্তু তারা যখন দেখে যে তাদের বাবামা চরম কষ্টের সময়েও অটল বিশ্বাস দেখাচ্ছেন তখন তাদের ওপর এর গভীর ছাপ পড়ে। পানামায় একজন বাইবেল ছাত্রীকে তার স্বামী ভয় দেখিয়েছিলেন যে তিনি যদি যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ না, করেন তাহলে তাকে ঘর থেকে বের করে দেবেন। তবুও, ছোট ছোট চারটে বাচ্চাকে নিয়ে তিনি নিয়মিত ১৬ কিলোমিটার পথ হেঁটে তারপর আরও ৩০ কিলোমিটার বাসে করে কিংডম হলে যেতেন। আর এটাই ছিল তার বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের কিংডম হল। তার সুন্দর উদাহরণ দেখে তার পরিবারের প্রায় ২০ জন সদস্য সত্যের পথে চলতে শুরু করেছেন।
রোজ বাইবেল পড়ে উদাহরণ দেখানো
১৬. কেন প্রত্যেকটা পরিবারকে রোজ বাইবেল পড়তে বলা হয়েছে?
১৬ রোজ বাইবেল পড়ার এক গুরুত্বপূর্ণ রীতি পরিবারে চালু করলে তা থেকে বাবামা উপকার পাবেন আর ছেলেমেয়েদের সামনেও এক ভাল উদাহরণ হবেন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে রোজ বাইবেলের কিছুটা অংশ পড়ুন। আপনি বাইবেলের কতটুকু পড়ছেন সেটা জরুরি নয় কিন্তু আপনি রোজ পড়ছেন কি না সেটাই হল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পড়া এবং কীভাবে পড়া হয় তা হল আরও বেশি জরুরি। ছেলেমেয়েদের জন্য, বাইবেল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আমার বাইবেলের গল্পের বই এর অডিওক্যাসেট শোনানো যেতে পারে যদি তা তারা বোঝে এমন কোন ভাষায় পাওয়া যায়। রোজ ঈশ্বরের বাক্য পড়লে আমরা ঈশ্বরের চিন্তাধারাকে প্রথমে রাখার জন্য সাহায্য পাব। আর একা একা না পড়ে যদি পুরো পরিবারকে নিয়ে পড়া হয়, তাহলে তা পুরো পরিবারকে যিহোবার পথে চলতে সাহায্য করবে। কিছুদিন আগেই হওয়া, “জীবনের জন্য ঈশ্বরের পথ” জেলা সম্মেলনে পরিবারগুলো—প্রাত্যহিক বাইবেল পাঠকে আপনাদের জীবনের পথ করে তুলুন! নাটকে ওই কথাগুলোই বলা হয়েছিল।—গীতসংহিতা ১:১-৩.
১৭. রোজ বাইবেল পড়া ও মূল পদগুলো মনে রাখা কীভাবে ইফিষীয় ৬:৪ পদের পরামর্শ কাজে লাগাতে সাহায্য করতে পারে?
১৭ পুরো পরিবার মিলে বাইবেল পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আমরা সেই কাজটা করছি যে বিষয়ে প্রেরিত পৌল ইফিষের খ্রীষ্টানদেরকে তার অনুপ্রাণিত পত্রে লিখেছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [যিহোবার] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) এই কথার মানে কী? ‘চেতনা প্রদানের’ সত্যিকার অর্থ হল “মনে গেঁথে দেওয়া”; তাই খ্রীষ্টান বাবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন তাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যিহোবা ঈশ্বরের মনকে গেঁথে দেন অর্থাৎ, ছেলেমেয়েরা যেন ঈশ্বরের চিন্তাধারা জানতে পারে তাতে সাহায্য করেন। এটা করতে গিয়ে ছেলেমেয়েদেরকে বাইবেলের মুখ্য পদগুলো মনে রাখার জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে। এই সমস্তকিছু করার লক্ষ্য হল, ছেলেমেয়েদের মনে যেন যিহোবার চিন্তাধারা থাকে যাতে তাদের ইচ্ছা ও চালচলনে দিনে দিনে ঈশ্বরের মানদণ্ড ফুটে ওঠে, তা বাবামা তাদের সঙ্গে থাকুন কিংবা নাই বা থাকুন। আর এটা করার জন্য বাইবেলই হল সবচেয়ে ভাল ভিত্তি।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭.
১৮. বাইবেল পড়ার সময় কী করা যেতে পারে (ক) পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য? (খ) এতে দেওয়া পরামর্শ থেকে উপকার পাওয়ার জন্য? (গ) এতে বলা যিহোবার উদ্দেশ্য অনুসারে চলার জন্য? (ঘ) লোকেদের মনোভাব ও কাজ সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে তা থেকে উপকার পাওয়ার জন্য?
১৮ কিন্তু আমরা যদি চাই যে বাইবেল আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করুক, তাহলে আমাদের অবশ্যই বোঝা দরকার, এটা আসলে কী বলে। এইজন্য হয়তো বাইবেলের কোন কোন অংশ বার বার পড়তে হতে পারে। কিছু কিছু কথাকে ঠিক মতো বোঝার জন্য আমাদের হয়তো অভিধান অথবা শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) ঘাটতে হতে পারে। সেই পদে যদি কোন পরামর্শ বা আজ্ঞা দেওয়া থাকে, তাহলে এটা আমাদের দিনে কীভাবে খাটে সেই বিষয়ে কথা বলার জন্য সময় করে নিন। তারপর আপনি হয়তো জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘এই পরামর্শ কাজে লাগালে আমাদের কী উপকার হবে?’ (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) যদি সেই পদে যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাহলে প্রশ্ন করুন, ‘আমাদের জীবনে তা কীভাবে ছাপ ফেলে?’ আপনি হয়তো এমন কোন ঘটনা পড়ছেন যা লোকেদের মনোভাব ও কাজ নিয়ে আলোচনা করছে। তাদের জীবনে কোন্ কোন্ সমস্যা, কোন্ কোন্ চাপ ছিল? তারা সেগুলোকে কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন? তাদের উদাহরণ থেকে আমরা কীভাবে উপকার পাই? এই ঘটনাগুলো আমাদের দিনের জন্য কী অর্থ রাখে তা আলোচনা করার জন্য সবসময় সময় করে নিন।—রোমীয় ১৫:৪; ১ করিন্থীয় ১০:১১.
১৯. ঈশ্বরের অনুকারী হয়ে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের কোন্ শিক্ষা দিয়ে যাব?
১৯ আমাদের মনে ও হৃদয়ে ঈশ্বরের চিন্তাধারাকে গেঁথে নেওয়ার কী এক সুন্দর উপায়! তা করলে আমরা সত্যিই “প্রিয় বৎসদের ন্যায় . . . ঈশ্বরের অনুকারী” হয়ে উঠব। (ইফিষীয় ৫:১) আর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্যও এক উদাহরণ রাখব, যা তারা অনুকরণ করে চলবে।
আপনার কি মনে আছে?
◻ বাবামায়েরা যিহোবার উদাহরণ থেকে কীভাবে উপকার পেতে পারে?
◻ মুখে বলার সঙ্গে সঙ্গে কেন বাবামাদের ভাল উদারহণও দেখাতে হবে?
◻ কিছু শিক্ষা কী যা ছেলেমেয়েরা বাবামায়ের উদাহরণ দেখে শিখতে পারে?
◻ আমরা কীভাবে পুরো পরিবার মিলে অধ্যয়ন থেকে পুরোপুরি উপকার পেতে পারি?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনেকে পুরো পরিবার মিলে বাইবেল পড়ে আনন্দ পান