প্রেমের সাথে ঈশ্বরের পালককে পালন করা
“তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর।”—১ পিতর ৫:২.
১, ২. যিহোবার প্রধান গুণ কী এবং কিভাবে সেটি স্বয়ং প্রকাশ পায়?
সম্পূর্ণ পবিত্র শাস্ত্রে এটি পরিষ্কার করা হয়েছে যে প্রেম হল ঈশ্বরের প্রধান গুণ। ১ যোহন ৪:৮ বলে “ঈশ্বর প্রেম।” যেহেতু তাঁর প্রেম কার্যের দ্বারা প্রকাশ পায়, ১ পিতর ৫:৭ পদ বলে যে ঈশ্বর “তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” বাইবেলে যিহোবা যেভাবে তাঁর লোকেদের যত্ন করেন তা মেষপাল যেভাবে তার মেষকে যত্ন করে তার সঙ্গে তুলনা করে: “দেখ, প্রভু সদাপ্রভু সপরাক্রমে . . . তিনি . . . আপন পাল চরাইবেন, তিনি শাবকদিগকে বাহুতে সংগ্রহ করিবেন, এবং কোলে করিয়া বহন করিবেন; দুগ্ধবতী সকলকে তিনি ধীরে ধীরে চালাইবেন।” (যিশাইয় ৪০:১০, ১১) কত সান্ত্বনার সাথে দায়ূদ তাই বলতে পেরেছিলেন যে: “সদাপ্রভু আমার পালক, আমার অভাব হইবে না।”—গীতসংহিতা ২৩:১.
২ এটি সঠিক যে বাইবেল, ঈশ্বর যে ব্যক্তিদের পছন্দ করেন তার সঙ্গে মেষের তুলনা করেন, কারণ মেষেরা তাদের যত্নবান মেষপালকের প্রতি শান্তিপ্রিয়, বশীভূত এবং বাধ্য। প্রেমময় মেষপালক হিসাবে যিহোবা তাঁর মেষতুল্য ব্যক্তিদের খুব যত্ন করেন। তাদের বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক চাহিদা যুগিয়ে এবং এই কঠিন “শেষকালে” দুষ্ট জগতের মধ্যে দিয়ে তাদের তাঁর আগত ধার্মিক নতুন জগতে নিয়ে যাওয়ার দ্বারা তিনি তা করেন।—২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩; মথি ৬:৩১-৩৪; ১০:২৮-৩১; ২ পিতর ৩:১৩.
৩. যিহোবা যেভাবে তাঁর মেষেদের যত্ন নেন গীতরচক তা কিভাবে বর্ণনা করেন?
৩ তাঁর মেষদের প্রতি যিহোবার প্রেমময় যত্ন লক্ষ্য করুন: “ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে। . . . [ধার্ম্মিকেরা] ক্রন্দন করিল, সদাপ্রভু শুনিলেন, তাহাদের সকল সঙ্কট হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিলেন। সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন। ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক, কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:১৫-১৯) কতই না সান্ত্বনা সার্বভৌম মেষপালক তাঁর মেষতুল্য লোকেদের জন্য দেন!
উত্তম মেষপালকের উদাহরণ
৪. ঈশ্বরের পালকে যত্ন করার ক্ষেত্রে যীশুর ভূমিকা কী?
৪ ঈশ্বরের পুত্র, যীশু তাঁর পিতার কাছ থেকে ভালভাবে শেখেন, কারণ বাইবেল যীশুকে “উত্তম মেষপালক” বলে। (যোহন ১০:১১-১৬) ঈশ্বরের পালের প্রতি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রকাশিত বাক্য ৭ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে। ৯ পদে, আমাদের দিনের ঈশ্বরের সেবকদের “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক,” বলা হয়। তার পরে “মেষশাবক ইহাদিগকে পালন করিবেন, এবং জীবন-জলের উনুইয়ের নিকটে গমন করাইবেন, আর ঈশ্বর ইহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” যীশু ঈশ্বরের পালকে সত্যের উনুইয়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন যা অনন্তজীবনের পথে নিয়ে যায়। (যোহন ১৭:৩) লক্ষ্য করুন যে যীশুকে “মেষশাবক” বলা হয়েছে যা তাঁর মেষতুল্য গুণাবলিকে ইঙ্গিত করে, কারণ তিনি হলেন ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যতার মুখ্য উদাহরণ।
৫. যীশু লোকেদের বিষয় কী অনুভব করতেন?
৫ পৃথিবীতে যীশু লোকেদের মধ্যে বাস করেন এবং তাদের করুণ অবস্থা দেখেন। তাদের এই করুণ অবস্থার প্রতি তিনি কিরকম প্রতিক্রিয়া দেখান? “তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।” (মথি ৯:৩৬) পালক বিনা মেষ যেমন শিকারির হাতে খুব কষ্ট পায়, যে মেষদের অযত্নশীল মেষপালক আছে তারাও সেইরকম কষ্ট পায়। কিন্তু, যীশু খুব যত্ন করতেন, কারণ তিনি বলেন: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।”—মথি ১১:২৮-৩০.
৬. অবহেলিতদের প্রতি যীশু কী ধরনের অনুভূতি দেখিয়েছিলেন?
৬ বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বলে যে যীশু প্রেমের সাথে লোকেদের যত্ন করবেন। “সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন . . . যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া দিই, . . . যেন সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করি।” (যিশাইয় ৬১:১, ২; লূক ৪:১৭-২১) যীশু কখনও দরিদ্র আর অভাগীদের নিচু করে দেখেননি। পরিবর্তে তিনি যিশাইয় ৪২:৩ পদ পূর্ণ করেন: “তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না; সধূম শলিতা নির্ব্বাণ করিবেন না; সত্যে তিনি ন্যায়বিচার প্রচলিত করিবেন।” (তুলনা করুন মথি ১২: ১৭-২১.) দরিদ্ররা থেৎলা নলের মত, ঠিক সেই বাতির মত যা জ্বালানির অভাবে নিবে যায়। তাদের ভগ্ন পরিস্থিতি দেখে, যীশু তাদের প্রতি দয়া দেখান এবং তাদের মধ্যে শক্তি আর আশা যোগান, আত্মিক আর দৈহিক দিক দিয়ে তাদের সুস্থ করেন।
৭. যারা তাঁর প্রতি সাড়া দিয়েছিল তাদের যীশু কোথায় পরিচালিত করেন?
৭ অনেক সংখ্যাতে মেষতুল্য ব্যক্তিরা যীশুর প্রতি সাড়া দেয়। তাঁর শিক্ষা এত মর্মস্পর্শী ছিল যে, যে আধিকারিকদের পাঠানো হয়েছিল তাঁকে গ্রেপ্তার করতে তারা রিপোর্ট করে: “এ ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই।” (যোহন ৭:৪৬) কেন ভণ্ড ধর্মীয় নেতারা অভিযোগ করে: “জগৎসংসার উহার পশ্চাদগামী হইয়াছে।”(যোহন ১২:১৯) কিন্তু যীশু নিজের জন্যে সম্মান কিংবা প্রশংসা চাননি। তিনি লোকেদের পিতার প্রতি পরিচালিত করেন। তাঁর অনুকরণ যোগ্য গুণাবলির প্রতি প্রেমের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে যিহোবাকে সেবা করতে তিনি তাদের শিক্ষা দেন: “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত শক্তি ও তোমার সমস্ত চিত্ত দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।”—লূক ১০:২৭, ২৮.
৮. ঈশ্বরের লোকেদের তাঁর প্রতি বাধ্যতা জগতের শাসনকর্তাদের থেকে কিভাবে ভিন্ন?
৮ যিহোবা গৌরবান্বিত হন যখন তাঁর প্রতি, তাদের প্রেমের ভিত্তিতে তাঁর মেষতুল্য লোকেরা তাঁর সার্বিক সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে। তাঁর প্রেমময় গুণাবলির জ্ঞান থাকার ফলে তারা স্বেচ্ছায় তাঁকে সেবা করা বেছে নেয়। এই জগতের নেতাদের থেকেই কতই না ভিন্ন, কারণ তারা তাদের প্রজাদের ভয়ে তাদের প্রতি বাধ্য করায়, অথবা বিদিষ্ট কিংবা তাদের কোন অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য থাকে! যিহোবা কিংবা যীশু সম্বন্ধে কখনও তা বলা যেতে পারে না যা রোমান ক্যাথলিক গির্জার পোপ সম্বন্ধে বলা হয়েছিল: “অনেকে তাকে শ্রদ্ধা করে, সকলে তাকে ভয় করে, কিন্তু কেউ তাকে প্রেম করে না।”—খ্রীষ্টের যাজকেরা—পোপের পদের অপ্রীতিকর দিক, (ইংরাজি) পিটার ডি রোসা কর্তৃক।
ইস্রায়েলে নিষ্ঠুর মেষপালকেরা
৯, ১০. প্রাচীন ইস্রায়েলের এবং প্রথম শতাব্দীর নেতাদের বর্ণনা করুন।
৯ যীশুর মত না হয়ে তাঁর সময়ে ইস্রায়েলের ধর্মীয় নেতাগণ তাদের মেষেদের প্রতি কোন প্রেম দেখাত না। তারা তাদের ইস্রায়েলে প্রাচীন শাসকদের মত ছিল যাদের বিষয়ে যিহোবা বলেন: “ইস্রায়েলের সেই পালকদিগকে ধিক্, যাহারা আপনাদিগকেই পালন করিতেছে। মেষগণকেই পালন করা কি পালকদের কর্ত্তব্য নয়? . . . তোমরা দুর্ব্বলদিগকে সবল কর নাই, পীড়িতের চিকিৎসা কর নাই, ভগ্নাঙ্গের ক্ষত বাঁধ নাই, দূরীকৃতকে ফিরাইয়া আন নাই, হারাণের অন্বেষণ কর নাই, কিন্তু বল ও উপদ্রবপূর্ব্বক তাহাদের শাসন করিয়াছ।”—যিহিষ্কেল ৩৪:২-৪.
১০ ঠিক সেই রাজনৈতিক মেষপালকের মত, প্রথম শতাব্দীর যিহূদী ধর্মীয় নেতারা কঠোর হৃদয়সম্পন্ন ব্যক্তি ছিল। (লূক ১১:৪৭-৫২) এই বিষয়ে উদাহরণ দিতে, যীশু এক যিহূদী সম্বন্ধে বলেন যাকে ছিনতাই, প্রহার এবং প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ছেড়ে যাওয়া হয়। এক ইস্রায়েলীয় যাজক সেই দিক দিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু যিহূদীটিকে দেখে রাস্তার অন্য দিক দিয়ে চলে গেল। একজন লেবীয় তাই করে। তারপরে এক ন-ইস্রায়েলীয়, ঘৃণ্য শমরীয় আসে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি দয়া দেখায়। সে তার ক্ষতস্থানগুলিকে বেঁধে দেয়, তাকে একটি জন্তুর পিঠে তুলে একটি পান্থশালায় নিয়ে যায় এবং তার যত্ন নেয়। সে পান্থশালার মালিককে অর্থ দেয় এবং বলে যদি আরও লাগে তাহলে ফেরার সময় সে মিটিয়ে দিয়ে যাবে।—লূক ১০:৩০-৩৭.
১১, ১২. (ক) যীশুর দিনে ধর্মীয় নেতাদের দুষ্টতা কিভাবে শিখরে পৌঁছেছিল? (খ) রোমীয়রা অবশেষে ধর্মীয় নেতাদের কী করে?
১১ যীশুর দিনে ধর্মীয় নেতারা এত কলুষিত ছিল যে যখন যীশু লাসারকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেন, তখন মহাযাজক এবং ফরীশীরা মহাসভা ডাকে এবং বলে: “আমরা কি করে? এ ব্যক্তি [যীশু] ত অনেক চিহ্ন-কার্য্য করিতেছে। আমরা যদি ইহাকে এইরূপ চলিতে দিই, তবে সকলে ইহাতে বিশ্বাস করিবে; আর রোমীয়েরা আসিয়া আমাদের স্থান ও জাতি উভয়ই কাড়িয়া লইবে।” (যোহন ১১:৪৭, ৪৮) যীশু যে মৃত ব্যক্তির প্রতি যে উত্তম কাজ করেছেন সেই বিষয়ে কোন তাদের চিন্তা ছিল না। তারা তাদের পদ সম্বন্ধে চিন্তিত ছিল। তাই, “সেইদিন অবধি তাহারা [যীশুকে] বধ করিবার মন্ত্রণা করিতে লাগিল।”—যোহন ১১:৫৩.
১২ তাদের দুষ্টতা আরও বাড়িয়ে মহাযাজকেরা তখন, “মন্ত্রণা করিল, যেন লাসারকেও বধ করিতে পারে; কেননা তাঁহারই নিমিত্ত যিহূদীদের মধ্যে অনেকে গিয়া যীশুতে বিশ্বাস করিতে লাগিল।” (যোহন ১২:১০, ১১) স্বার্থপরতার সাথে তাদের পদ রক্ষা করার চেষ্টাতে তারা সফল হয়নি, কারণ যীশু তাদের বলেছিলেন: “তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।” (মথি ২৩:৩৮) এই বাক্যের পরিপূর্ণতাস্বরূপ, সেই বংশে রোমীয়রা আসে এবং ‘তাদের জায়গা এবং তাদের দেশ’ এমনকি তাদের জীবন নিয়ে নেয়।
খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে প্রেমময় মেষপালকেরা
১৩. যিহোবা তাঁর পালকে পালন করার জন্য কাকে পাঠাবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন?
১৩ কঠোর, স্বার্থপর মেষপালকের পরিবর্তে, যিহোবা তাঁর মেষপালকে যত্ন নিতে উত্তম মেষপালক, যীশুকে উঠাবেন। তিনি এও প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি প্রেমময় অধীনস্থ মেষপালকদের উঠাবেন: “আমি তাহাদের উপরে এমন পালকগণকে নিযুক্ত করিব, যাহারা তাহাদিগকে চরাইবে; তখন তাহারা আর ভীত কি নিরাশ হইবে না” (যিরমিয় ২৩:৪) তাই, যেমন প্রথম শতাব্দীতে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে হয়েছিল ঠিক সেইরকম বর্তমানে “প্রত্যেক নগরে প্রাচীনদিগকে নিযুক্ত” করা হয়। (তীত ১:৫) এই আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বয়স্ক ব্যক্তিরা শাস্ত্রতে লেখা যোগ্যতা পূর্ণ করে তারা ‘ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন করে।’—১ পিতর ৫:২; ১ তীমথিয় ৩:১-৭; তীত ১:৭-৯.
১৪, ১৫. (ক) কোন্ মনোভাব শিষ্যরা গড়ে তুলতে কষ্টকর বলে মনে করে? (খ) প্রাচীনদের যে নম্র সেবক হতে হবে তাদের তা দেখানোর জন্য যীশু কী করেন?
১৪ মেষদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাচীনদের “সর্ব্বাপেক্ষা” তাদের প্রতি “একাগ্র ভাবে প্রেম” দেখানো উচিত। (১ পিতর ৪:৮) যীশুর শিষ্যদের তাদের মর্যাদা এবং পদ সম্বন্ধে বেশি চিন্তিত হয়ে তাদের এই শিক্ষা নিতে হয়েছিল। তাই তাঁর দুই শিষ্যের মা যখন যীশুকে বলেন: “আজ্ঞা করুন, যেন আপনার রাজ্যে আমার এই দুই পুত্ত্রের এক জন আপনার দক্ষিণ পার্শ্বে, আর এক জন বাম পার্শ্বে, বসিতে পায়।” অন্য শিষ্যরা তখন রাগান্বিত হল। যীশু তাদের বলেন: “পরজাতী য়দের অধিপতিরা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং যাহারা মহান্, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। তোমাদের মধ্যে সেরূপ হইবে না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে; এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে তোমাদের দাস হইবে”—মথি ২০:২০-২৮.
১৫ আরেকবার যখন শিষ্যরা “কে শ্রেষ্ঠ, পথ পরস্পর এই বিষয়ে বাদানুবাদ” করে যীশু তাদের বলেন: “কেহ যদি প্রথম হইতে ইচ্ছা করে তবে সে সকলের শেষে থাকিবে ও সকলের পরিচারক হইবে।” (মার্ক ৯:৩৪, ৩৫) নত মনোভাব এবং স্বেচ্ছায় সেবা করার বিষয়, তাদের ব্যক্তিত্বের অঙ্গ হওয়া দরকার ছিল। তবুও শিষ্যদের সেই বিষয়টি বুঝতে কঠিন হয়, কেননা যীশু মারা যাবার একদিন আগে তাঁর শেষ সান্ধ্যভোজে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে এই বিষয় নিয়ে ‘বিবাদ’ উৎপন্ন হয়! কিভাবে পালের সেবা করতে হয় যীশু তাদের দেখানো সত্ত্বেও তা ঘটে; তিনি নিজে নম্র হন এবং তাদের পা ধুইয়ে দেন। তিনি বলেন: “আমি প্রভু ও গুরু হইয়া যখন তোমাদের পা ধুইয়া দিলাম, তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধোয়ান উচিত? কেননা আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।”—লূক ২২:২৪; যোহন ১৩:১৪, ১৫.
১৬. প্রাচীনদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণটি সম্বন্ধে ১৮৯৯ সালের প্রহরীদুর্গ কী মন্তব্য করে?
১৬ যিহোবার সাক্ষীরা সবসময় শিক্ষা দিয়েছে যে প্রাচীনেরা যেন এইরকম হন। প্রায় এক শতাব্দী আগে প্রহরীদুর্গ এপ্রিল ১, ১৮৯৯ ১ করিন্থীয় ১৩:১-৮ পদে পৌলের কথাগুলি সম্বন্ধে লক্ষ্য করে এবং বলে: “প্রেরিত স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে জ্ঞান এবং বক্তৃতা কলাকৌশল সবচেয়ে বড় পরীক্ষা নয়, হৃদয়ে যে প্রেম প্রবেশ করে এবং আমাদের জীবন ধারার মাধ্যমে পরিব্যাপ্ত হয় এবং আমাদের মরণশীল দেহকে সক্রিয় এবং চালিত করে তা হল, আসল পরীক্ষা—ঐশিক সম্পর্কের সঠিক প্রমাণ। . . . গির্জার সেবক হিসাবে গৃহীত প্রত্যেকে, যারা পবিত্র বিষয়ের পরিচর্যা করে, তাদের মধ্যে সর্বোপরি যে বিশেষ গুণাবলি থাকা উচিত, তা হল প্রেমের আত্মা। এটি লক্ষ্য করা হয় যে ব্যক্তি নম্রভাবে সেবা করে না তারা “বিপজ্জনক শিক্ষক এবং তারা ভালোর থেকে খারাপ বেশি করবে।”—১ করিন্থীয় ৮:১.
১৭. যে গুণাবলি প্রাচীনদের অবশ্যই থাকা উচিত, কিভাবে বাইবেল তা জোর দেয়?
১৭ তাই, প্রাচীনদিগের তাদের মেষদের উপর ‘কর্ত্তৃত্বকারী’ হওয়া উচিত নয়। (১ পিতর ৫:৩) পরিবর্তে, তারা নেতৃত্বদানে “পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণাচিত্ত” হবে। (ইফিষীয় ৪:৩২) পৌল জোর দেন: “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। . . . আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।”—কলসীয় ৩:১২-১৪.
১৮. (ক) মেষেদের সঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পৌল কী উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন? (খ) কেন মেষেদের প্রয়োজনীয়তা প্রাচীনদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়?
১৮ পৌল তা করতে শিখেছিলেন যখন তিনি বলেন: “কিন্তু যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে, তেমনি তোমাদের মধ্যে কোমল ভাব দেখাইয়াছিলাম; সেইরূপে আমরা তোমাদিগকে স্নেহ করাতে কেবল ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও তোমাদিগকে দিতে সন্তুষ্ট ছিলাম, যেহেতুক তোমরা আমাদের প্রিয়পাত্র হইয়াছিলে।” (১ থিষলনীকীয় ২:৭, ৮) এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনি বলেন: “ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর, দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও।” (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) যে ধরনের সমস্যা মেষেরা প্রাচীনদের কাছে নিয়ে আসুক না কেন তাদের সব সময় হিতোপদেশ ২১:১৩ পদ মনে রাখা উচিত: “যে দরিদ্রের ক্রন্দনে কর্ণ রোধ করে, সে আপনি ডাকিবে, কিন্তু উত্তর পাইবে না।”
১৯. কেন প্রেমময় প্রাচীনেরা এক আশীর্বাদস্বরূপ এবং কিভাবে সেই প্রেমের প্রতি মেষেরা সাড়া দেয়?
১৯ প্রাচীনেরা যারা প্রেমের সাথে পালকে পালন করে তারা মেষদের কাছে এক আশীর্বাদ। যিশাইয় ৩২:২ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করে: “যেমন বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, এক জন মনুষ্য তদ্রূপ হইবেন।” আমরা জেনে খুশি হই য়ে আমাদের অনেক প্রাচীন সতেজ- তার এই সুন্দর বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখেন। তারা নিম্নোক্ত নীতিটি প্রয়োগ করতে শিখেছেন: “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) যখন প্রাচীনেরা এইধরনের প্রেম এবং নম্রতা দেখান, মেষেরা “তাঁহাদের কর্ম্ম প্রযুক্ত তাঁহাদিগকে প্রেমে অতিশয় সমাদর” করার দ্বারা সাড়া দেয়।—১ থিষলনীকীয় ৫:১২, ১৩.
স্বাধীন ইচ্ছার ব্যবহারকে শ্রদ্ধা করা
২০. স্বাধীন ইচ্ছাকে কেন প্রাচীনদের শ্রদ্ধা করা উচিত?
২০ তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে, যিহোবা মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। যদিও প্রাচীনেরা উপদেশ এবং এমনকি শাসন করবেন, কিন্তু তারা অপরের জীবন এবং বিশ্বাস পরিচালিত করবেন না পৌল বলেন: “আমরা যে তোমাদের বিশ্বাসের উপরে প্রভুত্ব করি, এমন নয়, বরং তোমাদের আনন্দের সহকারী হই; কারণ বিশ্বাসেই তোমরা দাঁড়াইয়া আছ।” (২ করিন্থীয় ১:২৪) হ্যাঁ, “প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে।” (গালাতীয় ৬:৫) যিহোবা তাঁর নিয়ম এবং নীতির সীমানার মধ্যে আমাদের অনেক স্বাধীনতা দিয়েছেন। তাই প্রাচীনেরা নিয়ম তৈরি করা এড়িয়ে চলবেন যেখানে শাস্ত্রীয় নীতি লঙ্ঘন করা হয় না। তাদের ব্যক্তিগত অভিমত নিয়ম হিসাবে প্রস্তাব দেওয়া কিংবা যদি কেউ তাদের অভিমতের বিরুদ্ধে যায় তাহলে অহংকার বাধা হওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধ করা উচিত।—২ করিন্থীয় ৩:১৭; ১ পিতর ২:১৬.
২১. ফিলীমনের প্রতি পৌলের মনোভাব থেকে কী শিখতে পারি?
২১ রোমেতে কারারুদ্ধ থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্য করুন পৌল কিভাবে ফিলীমনের সাথে ব্যবহার করেন, যিনি এশিয়া মাইনর কলীসীতে এক খ্রীষ্টীয় দাসের মালিক ছিলেন। ফিলীমনের দাস ওনীষিমঃ রোমে পালিয়ে যায়, খ্রীষ্টান হয় এবং পৌলকে সাহায্য করে। পৌল ফিলীমনকে লেখেন: “আমি তাহাকে আমার কাছে রাখিতে চাহিয়াছিলাম, যেন সুসমাচারের বন্ধনদশায় সে তোমার পরিবর্ত্তে আমার পরিচর্য্যা করে। কিন্তু তোমার সম্মতি বিনা কিছু করিতে ইচ্ছা করিলাম না, যেন তোমার সৌজন্য আবশ্যকতার ফল না হইয়া স্ব-ইচ্ছার ফল হয়।” (ফিলীমন ১৩, ১৪) পৌল ওনীষিমকে ফিলীমনের কাছে ফেরত দিয়ে দেন এবং বলেন যেন একজন খ্রীষ্টীয় ভাই হিসাবে তার সাথে ব্যবহার করা হয়। পৌল জানতেন যে পাল তার নয়; সেটি ঈশ্বরের। তিনি তার মালিক নয় বরং তার সেবক। পৌল ফিলীমনকে আদেশ করেননি; তিনি তার স্বাধীন ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা করেন।
২২. (ক) প্রাচীনদের তাদের পদ সম্বন্ধে কী বোঝা উচিত? (খ) কী ধরনের সংগঠন যিহোবা গড়ে তুলছেন?
২২ যত ঈশ্বরের সংগঠন বাড়ছে, আরও প্রাচীনদের নিযুক্ত করা হচ্ছে। তারা এবং আরও অভিজ্ঞ প্রাচীনেরা, যেন বোঝেন তাদের পদ হল অপরের প্রতি নম্রতার সাথে সেবা করার পদ। এইভাবে ঈশ্বর যেমন তার সংগঠনকে নতুন জগতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সেইভাবে তার সংগঠন সেরকম বাড়তে থাকবে যেমন তিনি চান—উত্তম ভাবে সুসংগঠিত কিন্তু কার্যকারিতার জন্য প্রেম এবং দয়া বলি দেওয়া হবে না তাই, তাঁর সংগঠন মেষতুল্য ব্যক্তিদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে যখন তারা দেখবে যে, “যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আহূত, তাহাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কার্য্য করিতেছে।” এটি আশা করা যেতে পারে এমন একটি সংগঠনের কাছ থেকে যার ভিত্তিমূল হল প্রেম, কারণ “প্রেম কখনও লোপ হয় না।”—রোমীয় ৮:২৮; ১ করিন্থীয় ১৩:৮.
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ বাইবেল কিভাবে তাঁর লোকদের প্রতি যিহোবার যত্নকে বর্ণনা করে?
◻ ঈশ্বরের পালকে যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে যীশুর ভূমিকা কী?
◻ কী মুখ্য বৈশিষ্ট্য প্রাচীনদের থাকা উচিত?
◻ মেষেদের স্বাধীন ইচ্ছাকে কেন প্রাচীনদের বিবেচনা করা উচিত?
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
“উত্তম মেষপালক,” যীশু করুণা দেখিয়েছিলেন
[Pictures on page 15]
কলুষিত ধর্মীয় নেতারা যীশুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে