অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৮
ঈশ্বরের রাজ্য এখন শাসন করছে!
“জগতের রাজ্য আমাদের প্রভুর এবং তাঁর খ্রিস্টের রাজ্য হল।”—প্রকা. ১১:১৫.
গান ১৬ ঈশ্বরের রাজ্যের দিকে গমন!
সারাংশa
১. বর্তমানে কোন ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে আর এটা কোন বিষয়ের প্রমাণ দেয়?
বর্তমানে চারিদিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব, পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে, কথায় কথায় লোকেরা রেগে যাচ্ছে আর মারপিট শুরু করে দিচ্ছে। আধিকারিকেরা লোকদের ঠোকিয়ে যাচ্ছে, তাই তাদের উপর থেকে লোকদের বিশ্বাস ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। সবাই শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করছে। এই সব কিছু দেখে মনে হতে পারে, পরিস্থিতি এইরকমই চলবে, এটা আর কোনো দিন ঠিক হবে না। কিন্তু, এই একই পরিস্থিতি দেখে আমরা বুঝতে পারি, খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কেন? কারণ বাইবেলে অনেক আগে থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল যে, লোকেরা যখন এইরকম আচরণ করবে, তার মানে আমরা “শেষকালে” আছি। (২ তীম. ৩:১-৫) এই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা বিষয়গুলো আজ আমাদের সামনে ঘটছে। এটা প্রমাণ দেয় যে, স্বর্গে যিশু শাসন করতে শুরু করে দিয়েছেন। বাইবেলে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব, যেগুলো শেষকালে অর্থাৎ আমাদের দিনে ঘটছে। এর ফলে, আমাদের বিশ্বাস আরও মজবুত হবে।
প্রকাশিত বাক্য ও দানিয়েলের বইয়ে লেখা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো একটা বড়ো ছবির ছোটো ছোটো টুকরোর মতো। সেগুলো জুড়লে আমরা পুরো ছবি দেখতে পাব অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারব যে, অনেক ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ হয়ে গিয়েছে আর খুব শীঘ্রই শেষ আসবে, ঠিক যেমনটা যিহোবা বলেছিলেন (২ অনুচ্ছেদ দেখুন)
২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব আর কেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
২ এই প্রবন্ধে প্রথমে আমরা একটা ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আলোচনা করব, যেখান থেকে জানতে পারব, কখন ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করেছে। এরপর, আমরা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো থেকে আমরা নিশ্চিত হব যে, যিশু শাসন করতে শুরু করে দিয়েছেন। শেষে আমরা আরও কিছু ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো থেকে আমরা জানতে পারব, কীভাবে ঈশ্বরের রাজ্য তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করে দেবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো একটা বড়ো ছবির ছোটো ছোটো টুকরোর মতো, যেগুলো জুড়লে আমরা পুরো ছবিটা দেখতে পাব। এভাবে আমরা বুঝতে পারব, কোন ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে এবং শেষ একেবারেই কাছে, ঠিক যেমনটা যিহোবা বলেছিলেন।
কখন ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করেছে?
৩. দানিয়েল ৭:১৩, ১৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হই?
৩ দানিয়েল ৭:১৩, ১৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, যিশু খ্রিস্ট হলেন ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা আর তাঁর চেয়ে ভালো রাজা আর কেউ হতে পারে না। এখান থেকে আমরা জানতে পারি, তাঁর রাজ্য চিরকাল ধরে থাকবে এবং সমস্ত জাতির লোক তাঁর “সেবা” করবে। কিন্তু, কখন যিশু শাসন করতে শুরু করেছেন? দানিয়েল বইয়ে আরেকটা ভবিষ্যদ্বাণী দেখায় যে, সাত কাল শেষ হওয়ার পর যিশু শাসন করতে শুরু করবেন। কিন্তু, সাত কাল কখন শেষ হয়?
৪. কীভাবে আমরা দানিয়েল ৪:১০-১৭ পদ থেকে জানতে পারি, যিশু কখন রাজা হয়েছিলেন? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।)
৪ দানিয়েল ৪:১০-১৭ পদ পড়ুন। এই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা ‘সাত কালের’ অর্থ হল ২,৫২০ বছর। এই “সাত কাল” খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে শুরু হয়েছিল, যখন ব্যাবিলন জেরুসালেমের উপর আক্রমণ করেছিল আর সেখানকার রাজাকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকে ২,৫২০ বছর পর্যন্ত ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত কোনো রাজা ছিল না। এই “সাত কাল” ১৯১৪ সালে শেষ হয়েছিল, যখন যিহোবা যিশুকে অর্থাৎ “যাঁহার অধিকার” আছে, তাঁকে তাঁর রাজ্যের রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।b—যিহি. ২১:২৫-২৭.
৫. ‘সাত কালের’ ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হই?
৫ এই ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হই? আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হই, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ করেন। ‘সাত কালের’ ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ হয়েছিল আর ঈশ্বরের রাজ্য নির্দিষ্ট সময়ে শাসন করতে শুরু করেছিল। তাই, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, বাকি ভবিষ্যদ্বাণীগুলোও সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ হবে আর যিহোবার দিন নির্দিষ্ট সময়ে আসবে, “বিলম্ব” বা দেরি করবে না।—হবক্. ২:৩.
কীভাবে আমরা বুঝতে পারি, যিশু শাসন করতে শুরু করে দিয়েছেন?
৬. (ক) এই বিষয়ের কি কোনো চিহ্ন আছে, যিশু খ্রিস্ট স্বর্গে শাসন করতে শুরু করে দিয়েছেন? (খ) প্রকাশিত বাক্য ৬:২-৮ পদে আর কোন প্রমাণ রয়েছে, যিশু শাসন করতে শুরু করে দিয়েছেন?
৬ যিশু স্বর্গে যাওয়ার আগে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তিনি যখন শাসন করতে শুরু করবেন, তখন পৃথিবীতে কী কী হবে। তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধ, খাদ্যের অভাব, ভূমিকম্প এবং “একের-পর-এক স্থানে” মহামারি দেখা দেবে। আমরা দেখেছি, কোভিড-১৯ অতিমারি কীভাবে ছড়িয়েছে। বাইবেল বলে, এই সমস্ত কিছু খ্রিস্টের ‘উপস্থিতির চিহ্ন।’ (মথি ২৪:৩, ৭; লূক ২১:৭, ১০, ১১) যিশু তাঁর শিষ্যদের এই বিষয়ে বলার প্রায় ৬০ বছর পর আরেক বার প্রেরিত যোহনকে বলেছিলেন, তিনি যখন শাসন করতে শুরু করবেন, তখন এই বিষয়গুলো ঘটবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৬:২-৮.) ১৯১৪ সালে যখন যিশু রাজা হন, তখন থেকে আমরা এই সমস্ত কিছু ঘটতে দেখছি।
৭. যিশু রাজা হওয়ার পর থেকেই কেন পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে এসেছে?
৭ যিশু রাজা হওয়ার পর থেকেই কেন পৃথিবীর অবস্থা এত খারাপ হয়ে গিয়েছে? প্রকাশিত বাক্য ৬:২ পদ থেকে আমরা এই বিষয়ে কিছু জানতে পারি। এখানে বলে, যিশু রাজা হওয়ার পর তিনি শয়তান এবং তার মন্দ স্বর্গদূতদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায় বলে, শয়তান এই যুদ্ধে হেরে যায় আর তারপর তাকে এবং মন্দ স্বর্গদূতদের পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে শয়তান পৃথিবীর লোকদের উপর প্রচণ্ড রেগে আছে এবং তাদের উপর অত্যাচার করে চলেছে। এই কারণেই বাইবেল বলে, পৃথিবীর উপর “বিপর্যয়” নেমে এসেছে।—প্রকা. ১২:৭-১২.
খারাপ খবর শুনে আমাদের ভালো লাগে না। কিন্তু, আমরা যখন বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখি, তখন আমরা আরও নিশ্চিত হই যে, ঈশ্বরের রাজ্য স্বর্গে শাসন করতে শুরু করে দিয়েছে (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৮. রাজ্য সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখে আমাদের কেমন লাগে?
৮ এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হই? বর্তমানে, পৃথিবীর অবস্থা আর লোকদের চিন্তাধারা থেকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, যিশু রাজা হয়ে গিয়েছেন। তাই, আমরা যখন দেখি, লোকেরা শুধু নিজেকে নিয়েই চিন্তা করে আর অন্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তখন আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা করা উচিত নয়। আমাদের মনে রাখা উচিত, এগুলো দেখায় যে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে এবং স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করে দিয়েছে! (গীত. ৩৭:১) আমরা আরমাগিদোনের দিকে যত এগিয়ে চলব, ততই সমস্যাগুলো বাড়তে থাকবে। (মার্ক ১৩:৮; ২ তীম. ৩:১৩) আমরা খুব খুশি কারণ যিহোবা আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছেন, কেন পরিস্থিতি এত খারাপ হচ্ছে।
ঈশ্বরের রাজ্য কীভাবে তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করে দেবে?
৯. (ক) দানিয়েল ২:২৮, ৩১-৩৫ পদে শেষ বিশ্বশক্তির বিষয়ে কী বলা হয়েছে? (খ) কখন থেকে এই বিশ্বশক্তি শাসন করতে শুরু করে?
৯ দানিয়েল ২:২৮, ৩১-৩৫ পদ পড়ুন। বর্তমানে এই ভবিষ্যদ্বাণী আমরা আমাদের চোখের সামনে পরিপূর্ণ হতে দেখছি। নবূখদ্নিৎসর একটা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, “উত্তরকালে” অর্থাৎ যিশুর শাসন শুরু হওয়ার পর কী কী ঘটবে। সেই স্বপ্নে তিনি একটা বড়ো মূর্তি দেখেছিলেন, যেটার পা “কিছু লৌহময় ও কিছু মৃত্তিকাময়” ছিল। এটাই শেষ বিশ্বশক্তি এবং ঈশ্বরের রাজ্যের শত্রু হওয়ার কথা ছিল। যিশুর শাসন শুরু হওয়ার পর এই বিশ্বশক্তির পৃথিবীতে শাসন করার কথা ছিল। কে এই বিশ্বশক্তি আর কখন থেকে শাসন শুরু করে? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র হাত মেলায় আর একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করে। এরপর থেকে অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি শাসন করতে শুরু করে। কিন্তু, এই বিশ্বশক্তির সঙ্গে অন্য বিশ্বশক্তিগুলোর কী পার্থক্য রয়েছে? আসুন, দুটো বিষয় লক্ষ করি।
১০. (ক) অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে, তা কেন সঠিক? (খ) আমাদের কোন বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে? (“মাটি থেকে সাবধান!” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১০ প্রথম বিষয়: মূর্তির এক-একটা অংশ এক-একটা বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে আর প্রত্যেকটা অংশ কোনো একটা ধাতু দিয়ে তৈরি, যেমন সোনা অথবা রুপো। কিন্তু, মূর্তির পা অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে, যেটা লোহা ও মাটি দিয়ে তৈরি। মাটি ‘মনুষ্যের বীর্য্য’ বা সাধারণ লোককে চিত্রিত করে। (দানি. ২:৪৩) বর্তমানে, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, এই সাধারণ লোকদের জন্য এর লোহার শক্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছে। ভোটের ফলাফলের বিষয় হোক কিংবা লোকদের অধিকার পাওয়ার বিষয় হোক, আন্দোলন করার বিষয় হোক কিংবা নিজেদের চাহিদা পূরণ করার জন্য ইউনিয়ন তৈরি করার বিষয় হোক, এই সবই সাধারণ লোকদের উপর নির্ভর করে। তাই, এই বিশ্বশক্তি যা করতে চায়, তা সব করতে পারে না।
১১. বর্তমানে অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি শাসন করছে আর এটা জেনে আমরা কীভাবে নিশ্চিত হই, শেষ একেবারেই কাছে?
১১ দ্বিতীয় বিষয়: অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে মূর্তির পা দিয়ে চিত্রিত করা হয়েছে। তার মানে, এটাই হল শেষ বিশ্বশক্তি। বর্তমানে, এই বিশ্বশক্তি শাসন করছে এবং এরপর আর কোনো বিশ্বশক্তি আসবে না। আরমাগিদোনের যুদ্ধে ঈশ্বরের রাজ্য এই বিশ্বশক্তিকে এবং অন্য সরকারগুলোকে চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেবে।c—প্রকা. ১৬:১৩, ১৪, ১৬; ১৯:১৯, ২০.
১২. দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হই?
১২ এই ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হই? দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে প্রমাণ পাই যে, আমরা শেষকালে রয়েছি। আজ থেকে প্রায় ২,৫০০ বছর আগে দানিয়েল বলেছিলেন, ব্যাবিলনের পর আরও চারটে বিশ্বশক্তি আসবে, যেগুলো ঈশ্বরের লোকদের উপর অত্যাচার করবে। তিনি যে-ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি শেষ বিশ্বশক্তি হবে। এখান থেকে আমরা সান্ত্বনা পাই, খুব তাড়াতাড়ি ঈশ্বরের রাজ্য সমস্ত মানুষের সরকারকে ধ্বংস করে দেবে এবং পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করবে।—দানি. ২:৪৪.
১৩. (ক) প্রকাশিত বাক্য ১৭:৯-১২ পদে বলা “অষ্টম রাজা” এবং ‘দশ জন রাজা’ কাদের চিত্রিত করে? (খ) তাদের সম্বন্ধে করা ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
১৩ প্রকাশিত বাক্য ১৭:৯-১২ পদ পড়ুন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল আর এই কারণে শেষকাল সম্বন্ধে বলা বাইবেলের আরেকটা ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছিল। পৃথিবীর নেতারা শান্তি আনার জন্য ১৯২০ সালের জানুয়ারি মাসে লিগ অব নেশন্স তৈরি করেছিল। এরপর, ১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসে লিগ অব্ নেশন্সের জায়গায় জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ (ইউনাইটেড নেশন্স) তৈরি হয়। এই সংগঠনকে বাইবেলে “অষ্টম রাজা” বলা হয়। এটা কোনো বিশ্বশক্তি নয়, কিন্তু পৃথিবীর সরকারগুলো একে ক্ষমতা দেয়। বাইবেলে এই সরকারগুলোকে ‘দশ জন রাজা’ বলা হয়েছে।
১৪-১৫. (ক) প্রকাশিত বাক্য ১৭:৩-৫ পদ “মহতী বাবিল” সম্বন্ধে কী জানায়? (খ) বর্তমানে মিথ্যা ধর্মগুলোর কী হচ্ছে?
১৪ প্রকাশিত বাক্য ১৭:৩-৫ পদ পড়ুন। প্রেরিত যোহন দর্শনে একজন বেশ্যাকে দেখেছিলেন। একে “মহতী বাবিল” বলা হয়। এ পৃথিবীতে থাকা সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে চিত্রিত করে। অনেক বছর ধরে, এর সঙ্গে পৃথিবীর সরকারগুলোর ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং এরা একে অন্যকে সমর্থন করছে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি, যিহোবা ‘দশ জন রাজা’ অর্থাৎ পৃথিবীর সরকারগুলোর হৃদয়ে এই ইচ্ছা দেবেন যেন তারা ‘ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করে’ এবং সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে ধ্বংস করে দেয়।—প্রকা. ১৭:১, ২, ১৬, ১৭.
১৫ কীভাবে আমরা জানতে পারি, মহতী বাবিলকে শীঘ্রই ধ্বংস করা হবে? এর উত্তর জানার জন্য প্রাচীনকালের ব্যাবিলন নগর সম্বন্ধে চিন্তা করুন। এই নগরের বাইরে ইউফ্রেটিস নদী বইত, যেটা সেই নগরকে সুরক্ষিত রাখত। একইভাবে, প্রকাশিত বাক্যে বলা রয়েছে, মহতী বাবিল ‘জল’ দিয়ে ঘেরা রয়েছে। (প্রকা. ১৭:১৫) এই জল লক্ষ লক্ষ ভক্তকে চিত্রিত করে, যারা মিথ্যা ধর্মগুলোকে সমর্থন করে। প্রকাশিত বাক্যে এও বলা রয়েছে, এই “জল শুকিয়ে” যাবে অর্থাৎ অনেক লোক মিথ্যা ধর্মগুলোকে সমর্থন করা বন্ধ করে দেবে। (প্রকা. ১৬:১২) বর্তমানে আমরা দেখতে পাই, এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে। মিথ্যা ধর্মগুলোর উপর থেকে অনেকের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তাই, তারা সমস্যাগুলোর সমাধান করার এবং মনের শান্তি পাওয়ার জন্য অন্যান্য উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে।
১৬. ইউনাইটেড নেশন্সের তৈরি এবং মহতী বাবিলের ধ্বংস সম্বন্ধে করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর বিষয়ে বুঝলে আমরা কীভাবে উপকৃত হব?
১৬ এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হই? আমরা জানি, ইতিমধ্যেই ইউনাইটেড নেশন্স তৈরি হয়ে গিয়েছে আর লোকেরা মিথ্যা ধর্মগুলোকে সমর্থন করা বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই, আমরা দৃঢ় নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা শেষকালে রয়েছি। যদিও মিথ্যা ধর্মের সমর্থকেরা কমে যাচ্ছে, কিন্তু এই কারণে যে মিথ্যা ধর্মগুলো একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, এমন নয়। যিহোবা তাদের ধ্বংস করাবেন। আগে আমরা যেমনটা দেখলাম, যিহোবা ‘দশ জন রাজা’ অর্থাৎ পৃথিবীর সরকারগুলোর হৃদয়ে এই ইচ্ছা দেবেন যেন তারা ‘ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করে।’ মিথ্যা ধর্মগুলোর ধ্বংস হঠাৎই হবে আর এটা দেখে লোকেরা আশ্চর্য হয়ে যাবে।d (প্রকা. ১৮:৮-১০) মহতী বাবিলের ধ্বংস পুরো পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তুলবে আর এই কারণে হয়তো অনেক সমস্যা দেখা দেবে। কিন্তু, ঈশ্বরের লোকেরা আনন্দ করবে। কারণ ঈশ্বরের এক বড়ো শত্রু চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে আর আমরা নিশ্চিত হব, খুব তাড়াতাড়ি এই মন্দ জগৎ থেকে আমরা উদ্ধার পাব।—লূক ২১:২৮.
যিহোবা নিশ্চয়ই আপনাকে রক্ষা করবেন!
১৭-১৮. (ক) আমরা যদি নিজেদের বিশ্বাস বাড়াতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
১৭ দানিয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, শেষকালে “জ্ঞানের বৃদ্ধি” হবে। আর বর্তমানে আমরা সেটাই দেখতে পাই। এখন আমরা শেষকাল সম্বন্ধে করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছি। (দানি. ১২:৪, ৯, ১০) আমরা যখন দেখি যে, বাইবেলে করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো একটার পর একটা পরিপূর্ণ হচ্ছে, তখন যিহোবার প্রতি আমাদের সম্মান আরও গভীর হয় এবং বাইবেলের উপর আমাদের বিশ্বাস বাড়ে। (যিশা. ৪৬:১০; ৫৫:১১) তাই, বাইবেল ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন আর লোকদেরও সাহায্য করুন, যাতে তারা যিহোবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এভাবে, আপনারও বিশ্বাস বাড়তে থাকবে। যিহোবা আমাদের কথা দিয়েছেন, আমরা যদি তাঁর উপর নির্ভর করি, তা হলে তিনি আমাদের সুরক্ষিত রাখবেন এবং সবসময় “শান্তিতেই” রাখবেন।—যিশা. ২৬:৩.
১৮ পরের প্রবন্ধে আমরা যিহোবার লোকদের সম্বন্ধে করা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো বর্তমানে পরিপূর্ণ হচ্ছে। এভাবে আমাদের বিশ্বাস আরও বাড়বে যে, আমরা শেষকালেই রয়েছি। আমরা এও দেখব যে, কীভাবে আমরা বলতে পারি, যিশু আমাদের সঠিক পথ দেখাচ্ছেন।
গান ১৭ হে সাক্ষিরা, এগিয়ে চলো!
a অনেক বছর আগে, ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে করা ভবিষ্যদ্বাণীতে যা বলা হয়েছিল, সেগুলো আজ আমাদের চোখের সামনে পরিপূর্ণ হচ্ছে। ঈশ্বরের রাজ্য স্বর্গে শাসন করতে শুরু করেছে। এই প্রবন্ধে রাজ্য সম্বন্ধে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আমরা আলোচনা করব, যেটার মাধ্যমে যিহোবার উপর আমাদের বিশ্বাস আরও মজবুত হবে। এর ফলে, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে আমরা ভয় পাব না বরং যিহোবার উপর আস্থা রাখতে পারব।
b চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের পাঠ ৩২ বিষয় ৪ এবং jw.org ওয়েবসাইটে ঈশ্বরের রাজ্য ১৯১৪ সালে শাসন করতে শুরু করে শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।
c দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে আরও জানার জন্য ২০১২ সালের ১৫ জুন প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৪-১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।
d খুব শীঘ্রই কোন বিষয়গুলো ঘটবে, তা জানার জন্য ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! (ইংরেজি) বইয়ের অধ্যায় ২১ দেখুন।