আপনি কি নিশ্চিত যে, আপনার কাছে সত্য রয়েছে? কেন?
‘তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানো, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।’—রোমীয় ১২:২.
১. যুদ্ধের সময়ে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট ধর্মীয় নেতারা কী করেছে?
ঈশ্বর কি চান যে, খ্রিস্টানরা যুদ্ধে যাবে এবং অন্য দেশের লোকেদের হত্যা করবে? বিগত ১০০ বছরে, খ্রিস্টান বলে দাবি করে এমন অনেকে, যুদ্ধে একে অপরকে হত্যা করেছে। ক্যাথলিকরা ক্যাথলিকদের হত্যা করেছে আর প্রোটেস্টান্টরা প্রোটেস্টান্টদের হত্যা করেছে। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট ধর্মীয় নেতারা, এমনকী তাদের সেনাবাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্রকে আশীর্বাদ করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, খ্রিস্টান বলে দাবি করে এমন লোকেদের মধ্যে বার বার নৃশংসতা ঘটেছে।
২, ৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং এরপর সংঘটিত অন্যান্য যুদ্ধের সময় যিহোবার সাক্ষিরা কী করেছে এবং কেন?
২ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যিহোবার সাক্ষিরা কী করেছে? তারা নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। তারা বিভিন্ন জাতির মধ্যে সংঘটিত সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। কেন? কারণ তারা যিশুর শিক্ষার প্রতি বাধ্য থাকতে চেয়েছিল এবং তিনি যে-উপায়ে অন্যদের প্রতি প্রেম দেখাতেন, তা অনুকরণ করতে চেয়েছিল। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) এ ছাড়া, সাক্ষিরা করিন্থীয়দের উদ্দেশে পৌলের বলা বাক্যের নীতিগুলো মনে রেখেছিল এবং তাদের পরিস্থিতিতে সেগুলো কাজে লাগিয়েছিল।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১০:৩, ৪.
৩ সত্য খ্রিস্টানরা কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, তা নির্ণয়ের জন্য বাইবেলকে তাদের নির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করে। তাই, তাদের বিবেক তাদেরকে যুদ্ধে যেতে অথবা লড়াই করা শিখতে প্ররোচিত করে না। যেহেতু যিহোবার সাক্ষিরা সত্য খ্রিস্টান হিসেবে জীবনযাপন করার চেষ্টা করে, তাই তাদের মধ্যে হাজার হাজার ব্যক্তি তাড়িত হয়েছে। যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে বিভিন্ন কারাগারে ও শ্রমশিবিরে কষ্টভোগ করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যখন জার্মানিতে নাতসি শাসন চলছিল, তখন কাউকে কাউকে এমনকী হত্যাও করা হয়েছে। ইউরোপে তাড়নার সেই পুরো সময়জুড়ে, যিহোবার সাক্ষিরা যিহোবার রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে কখনোই ভুলে যায়নি। যখনই সম্ভব, তখনই তারা প্রচার করেছে। এমনকী তাদেরকে যখন কারাগারে ও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, সেই সময়েও তারা প্রচার করেছে।a এর বহুবছর পর ১৯৯৪ সালে, সাক্ষিরা রুয়ান্ডার গণহত্যায় অংশ নেয়নি। এ ছাড়া, যে-যুদ্ধের কারণে প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়া বিভক্ত হয়েছিল, সেই যুদ্ধে তারা নিরপেক্ষ থেকেছে।
৪. লোকেরা যখন যিহোবার সাক্ষিদের নিরপেক্ষতা লক্ষ করে, তখন তারা প্রায়ই কী বলে থাকে?
৪ যিহোবার সাক্ষিরা যুদ্ধের সময়ে নিরপেক্ষ থেকেছে। আর তাই সারা পৃথিবীর অনেক লোক বলে, সাক্ষিরা সত্যিই ঈশ্বর ও তাদের প্রতিবেশীদের ভালোবাসে এবং তারা হল সত্য খ্রিস্টান। যিহোবার সাক্ষিরাই হল সত্য খ্রিস্টান, লোকেদের এই বিশ্বাসের পিছনে আরও কী কারণ রয়েছে?
ইতিহাসের সর্ববৃহৎ শিক্ষামূলক কাজ
৫. যিশুর শিষ্যদের কোন পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছিল?
৫ যিশু অন্যদের কাছে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার হল পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই, পরিচর্যা শুরু করার অল্পসময় পরেই তিনি এই প্রচার কাজ করার জন্য ১২ জন শিষ্যকে বাছাই করেছিলেন, যে-কাজ পরে পুরো পৃথিবীতে করা হবে। এরপর, যিশু আরও ৭০ জন শিষ্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। (লূক ৬:১৩; ১০:১) যিশু তাঁর শিষ্যদের কীভাবে একজন শিক্ষক হয়ে ওঠা যায়, সেই বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি প্রথমে তাদেরকে অন্যান্য যিহুদির কাছে শিক্ষা দিতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তবে পরে তিনি তাদেরকে অন্যান্য জাতির লোকের কাছেও সুসমাচার প্রচার করতে বলেছিলেন। যিহুদি শিষ্যদের জন্য ন-যিহুদি লোকেদের কাছে প্রচার করার বিষয়টা এক বিরাট পরিবর্তন ছিল!—প্রেরিত ১:৮.
৬. কোন বিষয়টা পিতরকে এটা বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কোনো একটা জাতি অন্য জাতির চেয়ে বড়ো নয়?
৬ সবচেয়ে প্রথমে যে-অচ্ছিন্নত্বক ন-যিহুদি একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন কর্ণীলিয়। কর্ণীলিয়ের কাছে প্রচার করার জন্য যিহোবা প্রেরিত পিতরকে তার বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। পিতর তখন বুঝতে পেরেছিলেন, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কোনো একটা জাতির অন্য জাতির চেয়ে বড়ো নয়। যিহোবার ইচ্ছা ছিল, বিভিন্ন জাতির লোকেরা সত্য শুনবে এবং তা গ্রহণ করবে। তাই, কর্ণীলিয় ও তার পরিবারকে পিতর বাপ্তাইজিত হতে বলেছিলেন। (প্রেরিত ১০:৯-৪৮) সেই দিন থেকে পিতর এবং যিশুর অন্যান্য শিষ্য, সমস্ত জাতির লোকের কাছে প্রচার করেছিল।
৭, ৮. লোকেদের সুসমাচার শুনতে সাহায্য করার জন্য যিহোবার সাক্ষিরা কী করেছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৭ আমাদের দিনে, যারা যিহোবার সংগঠনে নেতৃত্ব দেয়, তারা সারা পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার ও শিক্ষাদানের কাজকে উদ্যোগের সঙ্গে সমর্থন এবং সংগঠিত করে। এখন সারা পৃথিবীতে প্রায় আশি লক্ষ যিহোবার সাক্ষি রয়েছে। তারা উদ্যোগের সঙ্গে ৬০০-রও বেশি ভাষায় প্রচার করছে আর এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা ঘরে ঘরে এবং রাস্তায় প্রচার করে থাকে। সাক্ষ্যদানের সময় অনেক ভাষার সাহিত্যাদি প্রদর্শন করার জন্য তারা মাঝে মাঝে টেবিল এবং ট্রলি ব্যবহার করে। লোকেরা যিহোবার সাক্ষিদের শনাক্ত করতে পারে কারণ একমাত্র তারাই এসব উপায়ে প্রচার করে থাকে।
৮ যিহোবার সংগঠন ২,৯০০-রও বেশি ভাই ও বোনকে বাইবেল এবং বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি অনুবাদ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এসব সাহিত্যাদি এমন ভাষাগুলোতেও অনুবাদ করা হয়, যেগুলো খুব একটা পরিচিত নয়। যেমন, স্পেনের যিহোবার সাক্ষিরা এখন ক্যাটালান ভাষায় বাইবেল সাহিত্যাদি অনুবাদ করে। বেশি দিন আগের কথা নয়, ভ্যালেনসিয়া এবং অ্যালিক্যান্টে শহরে, বেলিরিক দ্বীপপুঞ্জে ও সেইসঙ্গে অ্যানডরাতে আরও বেশি লোক ক্যাটালান ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। বর্তমানে লক্ষ লক্ষ লোক ক্যাটালান ভাষায় কথা বলে। যিহোবার সাক্ষিদের অনুবাদ কাজের ফলে ক্যাটালানভাষী লোকেদের জন্য এমন ভাষার সাহিত্যাদি ও সভার ব্যবস্থা রয়েছে, যে-ভাষা তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে।
৯, ১০. কোন বিষয়টা প্রমাণ দেয় যে, যিহোবার সংগঠন চায় যেন সমস্ত লোক সত্য জানুক?
৯ বাইবেল সাহিত্যাদি অনুবাদ করার এবং লোকেদেরকে তাদের নিজেদের ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার এই কাজ সারা পৃথিবীতে করা হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, মেক্সিকোতে অধিকাংশ লোক যদিও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে, কিন্তু অনেকে ঘরে আরেকটা ভাষায় কথা বলেই বড়ো হয়েছে। এইরকম একটা ভাষার নাম হচ্ছে মায়া। মায়া অনুবাদ দলকে সেই দেশের এমন এক অংশে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, যেখানে লোকেরা মায়া ভাষায় কথা বলে। যেহেতু অনুবাদকরা প্রতিদিন মায়া ভাষা শোনে এবং সেই ভাষায় কথা বলে, তাই প্রকাশনাগুলো এমনভাবে অনুবাদ করা হয়, যা মায়া লোকেরা সহজেই বুঝতে পারে। আরেকটা উদাহরণ হল নেপাল। সেই দেশে প্রায় ১২০টা ভাষায় কথা বলা হয়। নেপালের জনসংখ্যা ২ কোটি ৯০ লক্ষের ওপরে। সেখানে ১ কোটিরও বেশি লোকের প্রথম ভাষা হচ্ছে নেপালি এবং অন্য অনেকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে নেপালি ব্যবহার করে থাকে। তাই, আমাদের ভাই-বোনেরা নেপালি ভাষায় বাইবেল সাহিত্যাদি অনুবাদ করছে।
১০ বর্তমানে যে অনেক ভাষায় অনুবাদ কাজ হচ্ছে, এই বিষয়টা প্রমাণ দেয়, যিহোবার সংগঠন সারা পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার করার দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। যিহোবার সাক্ষিরা লক্ষ লক্ষ কপি ট্র্যাক্ট, ব্রোশার এবং পত্রিকা বিতরণ করেছে, তবে তারা তাদের সাহিত্যাদি বিক্রি করে না। এর পরিবর্তে, সাক্ষিরা স্বেচ্ছাকৃত দান দিয়ে এই কাজে সমর্থন করে। তারা যিশুর এই নির্দেশনা অনুসরণ করে: “তোমরা বিনামূল্যে পাইয়াছ, বিনামূল্যেই দান করিও।”—মথি ১০:৮.
অনুবাদক দল লো জার্মান ভাষায় প্রকাশনা প্রস্তুত করছে (৮, ৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)
লো জার্মান ভাষার প্রকাশনা প্যারাগুয়েতে ব্যবহার করা হয় (এ ছাড়া, শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন)
১১, ১২. যেহেতু আমরা সারা পৃথিবীতে প্রচার করি ও শিক্ষা দিই, তাই অনেক লোক কী বলে থাকে?
১১ যিহোবার সাক্ষিরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে আর তাই তারা সমস্ত জাতির ও সংস্কৃতির লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনেক ত্যাগস্বীকার করে থাকে। অনেক সাক্ষি তাদের জীবনকে সাদাসিধে করেছে, আরেকটা ভাষা শিখেছে এবং ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। যেহেতু আমরা সারা পৃথিবীতে প্রচার করি ও শিক্ষা দিই, তাই অনেকে বলে থাকে, যিহোবার সাক্ষিরা যিশু খ্রিস্টের প্রকৃত অনুসারী।
১২ সাক্ষিরা এই বিষয়গুলো করে থাকে কারণ তারা এই ব্যাপারে নিশ্চিত, তারা সত্য খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু, বিশেষভাবে কোন কারণে আমাদের ভাই-বোনেরা নিশ্চিত হয়েছে যে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে?—পড়ুন, রোমীয় ১৪:১৭, ১৮.
যে-কারণে তারা নিশ্চিত যে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে
১৩. কীভাবে সাক্ষিরা তাদের সংগঠনকে শুচি রাখে?
১৩ যে-সমস্ত কারণে আমাদের ভাই-বোনেরা নিশ্চিত হয়েছে যে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে, সেই ব্যাপারে তারা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছে। দীর্ঘসময় ধরে যিহোবার সেবা করছেন এমন একজন ভাই বলেছেন: “যিহোবার সংগঠনকে নৈতিকভাবে শুচি ও অকলুষিত রাখার জন্য যথাসাধ্য করা হয়, তা সেটার জন্য যাকেই পরামর্শ দেওয়ার অথবা শাসন করার প্রয়োজন হোক না কেন।” কীভাবে যিহোবার লোকেরা এই উচ্চমান বজায় রাখে? তারা প্রত্যেকে বাইবেলে ঈশ্বর যা বলেছেন, তা পালন করার এবং যিশু ও তাঁর শিষ্যদের অনুকরণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। তুলনামূলকভাবে অল্পসংখ্যক সাক্ষি, সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে ঈশ্বরের মান অনুসরণ করা প্রত্যাখ্যান করেছে আর তাই তাদের সমাজচ্যুত করা হয়েছে অর্থাৎ তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। অধিকাংশ যিহোবার সাক্ষি এমন উপায়ে জীবনযাপন করে, যা যিহোবার চোখে শুচি। অনেক ব্যক্তি, যারা অতীতে ঈশ্বর অনুমোদন করেন না এমন কাজ করেছিল, তারা এখন পরিবর্তন হয়েছে এবং ঈশ্বরের মান অনুসরণ করছে।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৬:৯-১১.
১৪. মণ্ডলী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর অনেকে কোন পরিবর্তন করেছে আর এর ফল কী হয়েছে?
১৪ বাইবেল খ্রিস্টানদের এই নির্দেশ দেয়, যারা ঈশ্বরের বাধ্য হতে চায় না, তাদেরকে যেন মণ্ডলী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আনন্দের বিষয়টা হল, তাদের মধ্যে হাজার হাজার ব্যক্তি পরে তাদের কাজের জন্য অনেক দুঃখিত হয়েছে এবং ফিরে এসেছে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ২:৬-৮.) যেহেতু সাক্ষিরা তাদের আচরণের জন্য এক নির্দেশক হিসেবে সবসময়ই বাইবেল ব্যবহার করে, তাই মণ্ডলী শুচি রয়েছে। এটা তাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, তাদের সংগঠনকেই ঈশ্বর অনুমোদন করেন। যদিও অনেক গির্জা তাদের সদস্যদেরকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাপন করতে দেয়, কিন্তু সাক্ষিরা যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে। এই কারণে অনেক লোক নিশ্চিত হয়েছে, যিহোবার সাক্ষিদের কাছে সত্য রয়েছে।
১৫. কোন বিষয়টা একজন ভাইকে নিশ্চিত করেছে যে, তার কাছে সত্য রয়েছে?
১৫ অন্যান্য সাক্ষি কেন মনে করে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে? ৫৪ বছর বয়সি একজন ভাই, কিশোর বয়স থেকে যিহোবার সেবা করছেন। তিনি বলেন, এইরকম মনে করার পিছনে ভিত্তি হচ্ছে, তিনটে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস বা স্তম্ভ: (১) ঈশ্বর আছেন, (২) বাইবেল ঈশ্বরের কাছ থেকে এবং (৩) বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিরা পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছে। তিনি বলেন: “বছরের পর বছর ধরে অধ্যয়ন করার সময় আমি সবসময় এই স্তম্ভগুলো পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছি আর এগুলোর ভিত্তি আসলেই মজবুত কি না, সেটা নিজেকে জিজ্ঞেস করেছি। বছরের পর বছর ধরে প্রতিটা বিষয়ের প্রমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, আমার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে এবং আমার এই দৃঢ়প্রত্যয়কে আরও গভীর করেছে, আসলেই আমাদের কাছে সত্য রয়েছে।”
১৬. কেন একজন বোন নিশ্চিত হয়েছেন, তার কাছে সত্য রয়েছে?
১৬ নিউ ইয়র্কে যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে সেবারত একজন বিবাহিত বোন এই ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন যে, কোন বিষয়টা তাকে নিশ্চিত করেছে, তার কাছে সত্য রয়েছে। তিনি বলেন, একমাত্র যিহোবার সংগঠনই অন্যদের কাছে যিহোবার নাম সম্বন্ধে জানিয়ে থাকে, যে-নামটা বাইবেলে প্রায় ৭,০০০ বার রয়েছে। এ ছাড়া, তিনি ২ বংশাবলি ১৬:৯ পদ থেকেও উৎসাহিত হয়েছেন, যেখানে বলা আছে: “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” তিনি মন্তব্য করেন: “সত্য আমাকে শিখিয়েছে, কীভাবে আমি এমন একাগ্র হৃদয় গড়ে তুলতে পারি, যার ফলে যিহোবা আমার প্রতি উদারভাবে তাঁর বল দেখাতে পারেন। যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক হচ্ছে আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান বিষয়। আর ঈশ্বর বিষয়ক গভীর ও বিস্তারিত জ্ঞান, যা আমাকে টিকিয়ে রেখেছে, তা প্রদান করার জন্য যিশুর ভূমিকাকে আমি উপলব্ধি করি।”
১৭. আগে নাস্তিক ছিলেন এমন একজন ভাই কোন বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন এবং কেন?
১৭ একজন ভাই, যিনি আগে নাস্তিক ছিলেন, তিনি বলেন: “সৃষ্টি দেখে আমি নিশ্চিত হয়েছি, ঈশ্বর চান মানবজাতি জীবনকে উপভোগ করুক আর তাই তিনি চিরকাল দুঃখকষ্ট থাকতে দেবেন না। এ ছাড়া, এই জগৎ যেখানে দিন দিন অধার্মিকতায় নিমজ্জিত হচ্ছে, সেখানে যিহোবার লোকেরা বিশ্বাস, উদ্যম ও প্রেমে আরও উন্নতি করছে। একমাত্র যিহোবার আত্মাই আধুনিক সময়ের এই আশ্চর্য কাজ ঘটাতে পারে।”—পড়ুন, ১ পিতর ৪:১-৪.
১৮. কেন দু-জন ভাই মনে করেন, তাদের কাছে সত্য রয়েছে আর আপনি এই বিষয়ে কী মনে করেন?
১৮ দীর্ঘসময় ধরে সত্যে রয়েছেন এমন আরেকজন ভাই এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, কেন তিনি মনে করেন, তার কাছে সত্য রয়েছে: “বছরের পর বছর ধরে আমি যা অধ্যয়ন করছি, সেটা আমাকে নিশ্চিত করেছে, সাক্ষিরা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্ট ধর্মের আদর্শ ফিরিয়ে আনার জন্য গুরুত্বের সঙ্গে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করার সময় আমি নিজে যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বব্যাপী একতা লক্ষ করেছি। বাইবেলের সত্য আমাকে পরিতৃপ্তি ও আনন্দ এনে দিয়েছে।” একজন ভাই, যার বয়স ৬০ বছরেরও বেশি, তিনি বলেছেন, যিহোবার সাক্ষিরা সত্যিই যিশুকে বিশ্বাস করে। তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমরা মনোযোগ সহকারে যিশুর জীবন ও পরিচর্যা নিয়ে অধ্যয়ন করেছি এবং তাঁর উদাহরণ উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমরা যিশুর মাধ্যমে ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আমাদের জীবনধারায় রদবদল করেছি। আমরা আমাদের পরিত্রাণের ভিত্তি হিসেবে খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানকে শনাক্ত করেছি। আর আমরা জানি, তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। আমাদের কাছে সেই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষিদের নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য রয়েছে।”—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৩-৮.
অন্যদের কাছে সত্য সম্বন্ধে বলুন
১৯, ২০. (ক) রোমের মণ্ডলীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে পৌল কোন দায়িত্ব সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন? (খ) যিহোবার সমস্ত দাসকে কী করতে হবে?
১৯ সত্য খ্রিস্টানরা লোকেদের সত্যিই ভালোবাসে। সেই কারণে আমরা যা শিখেছি, সেগুলো আমাদেরকে অন্যদের কাছে জানাতে হবে। পৌল রোমের মণ্ডলীকে বলেছিলেন, যিশুর প্রকৃত অনুসারীদের প্রচার করার দায়িত্ব রয়েছে। তিনি লিখেছিলেন: “তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে। কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্ম্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য।”—রোমীয় ১০:৯, ১০.
২০ যিহোবার সাক্ষিরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে আর তারা জানে, অন্যদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে পারা এক সম্মানের বিষয়। তাই, অন্যদেরকে বাইবেল সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি, আপনার কাছে যে সত্য রয়েছে, তা আপনার জীবনযাপনের মাধ্যমে তাদের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যস্থাপন করুন।
a যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ১৯১-১৯৮, ৪৪৮-৪৫৪ পৃষ্ঠা দেখুন।