পাঠ ৮
মূলভাব এবং প্রধান বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া
১-৪. কোনো বক্তৃতার মূলভাব বলতে কী বোঝায়, তা ব্যাখ্যা করুন।
১ প্রতিটা বক্তৃতার একটা মূলভাব থাকা প্রয়োজন, যাতে এটা নির্দেশনা দিতে পারে ও এর সব অংশকে সঠিকভাবে যুক্ত করতে পারে। আপনার মূলভাব যা-ই হোক না কেন, এটা পুরো বক্তৃতা জুড়ে পরিব্যাপ্ত হতে হবে। এটা হচ্ছে আপনার বক্তৃতার সারমর্ম; এটা হয়তো একটা বাক্যে প্রকাশ করা যেতে পারে কিন্তু তা সত্ত্বেও, এটা উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর প্রত্যেকটা দিককে অন্তর্ভুক্ত করবে। মূলভাব শ্রোতাদের মধ্যে প্রত্যেকের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত আর তা হবে, যদি কিনা এটার ওপর সঠিকভাবে জোর দেওয়া হয়।
২ কোনো বক্তৃতার মূলভাব এক বিস্তারিত বিষয় নয়, যেমন “বিশ্বাস”; মূলভাব হচ্ছে সেই নির্দিষ্ট দিক, যে-দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়বস্তু আলোচনা করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, মূলভাব হতে পারে, “আপনার বিশ্বাস—এটা কতদূর পর্যন্ত পৌঁছায়?” অথবা এটা হতে পারে, “ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য যে-বিশ্বাসের প্রয়োজন” অথবা “আপনার বিশ্বাসের ভিত্তি” বা “বিশ্বাসে বৃদ্ধি পেয়ে চলুন।” যদিও এই মূলভাবগুলোর সবকটাই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে কিন্তু সেগুলোর প্রতিটাই বিষয়টাকে এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকে এবং তা তুলে ধরার জন্য সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন যুক্তির প্রয়োজন হয়।
৩ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো মূলভাব বাছাই করার আগে বিষয়বস্তু সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু, বক্তৃতার আউটলাইনের ওপর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করার আগে বা প্রধান বিষয়গুলো বাছাই করার আগে মূলভাব স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রত্যেক গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের পর আপনি হয়তো যিহোবার সাক্ষিদের সংগঠন সম্বন্ধে আলোচনা করতে চাইতে পারেন। সেটা এক বিস্তারিত বিষয়। এই বিষয়ের ওপর আপনি কী বলবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আপনাকে আপনার শ্রোতা এবং আপনার বক্তৃতার উদ্দেশ্য বিবেচনা করতে হবে। এর ওপর ভিত্তি করে আপনি একটা মূলভাব বাছাই করবেন। আপনি যদি কোনো নতুন ব্যক্তিকে পরিচর্যা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করে থাকেন, তাহলে আপনি হয়তো এটা দেখানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা ঘরে ঘরে প্রচার করার দ্বারা যিশু খ্রিস্টকে অনুকরণ করে। সেটাই হবে আপনার মূলভাব। আপনি যা কিছু বলেন, তার সমস্তই যিহোবার সাক্ষিরা শিরোনামের বিস্তারিত বিষয়ের সেই নির্দিষ্ট দিকটাকে সম্প্রসারিত করার জন্যই বলা হবে।
৪ কীভাবে আপনি আপনার বক্তৃতায় একটা মূলভাবের ওপর জোর দিতে পারেন? প্রথমত, আপনাকে একটা উপযুক্ত মূলভাব বাছাই করতে হবে, যেটা আপনার উদ্দেশ্যের সঙ্গে খাপ খায়। এজন্য পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন। মূলভাব বাছাই করার পর, এটাকে কেন্দ্র করে আপনার বক্তৃতা সম্প্রসারিত করলে, এটার ওপর প্রায় স্বাভাবিকভাবেই জোর দেওয়া হবে, যদি আপনি আপনার প্রস্তুতকৃত আউটলাইনের ওপর ভিত্তি করে বক্তৃতা দেন। তবে, আসল বক্তৃতাদানের সময় মাঝে মাঝে মূলভাবের মধ্যে থাকা মূল শব্দগুলোকে বা প্রধান ধারণাকে পুনরাবৃত্তি করা, আরও সহজেই নিশ্চিত করবে যে মূলভাবকে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে।
৫, ৬. কীভাবে আপনি নির্ণয় করতে পারেন যে, কোনো মূলভাব উপযুক্ত হয়েছে কি না?
৫ উপযুক্ত মূলভাব। ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ একটা উপযুক্ত মূলভাব থাকা প্রায়ই তেমন সমস্যার বিষয় হয় না, কারণ বেশির ভাগ সময়ই আপনাকে একটা মূলভাব দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, আপনাকে যেসমস্ত বক্তৃতা দিতে বলা হয়ে থাকে, সেগুলোর প্রতিটার বেলায় তা সত্য হবে না। তাই, মূলভাবের প্রতি মনোযোগপূর্বক বিবেচনা দেখানো বিজ্ঞতার কাজ।
৬ একটা মূলভাব উপযুক্ত কি না, তা কোন বিষয়টা নির্ণয় করে? বেশ কয়েকটা বিষয়। আপনাকে আপনার শ্রোতা, আপনার উদ্দেশ্য এবং যে-বিষয়বস্তুর ওপর আপনাকে বক্তৃতা দিতে বলা হয়েছে, তা বিবেচনা করতে হবে। আপনি যদি দেখেন যে, আপনি যে-বক্তৃতাগুলো দিচ্ছেন তাতে মূলভাবের ওপর কোনো জোর দেওয়া হচ্ছে না, তাহলে হতে পারে যে আপনি আসলে কোনো প্রধান ধারণাকে কেন্দ্র করে আপনার বক্তৃতাকে গড়ে তুলছেন না। আপনি হয়তো বক্তৃতার মধ্যে এমন অনেক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করছেন, যেগুলো আসলে মূলভাবের ক্ষেত্রে তেমন কোনো অবদানই রাখে না।
৭, ৮. কিছু উপায় দেখান, যেগুলোর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মূলভাবের ওপর জোর দিতে পারেন।
৭ মূলভাবের শব্দগুলোর বা ধারণার পুনরাবৃত্তি। একটা যে-উপায়ে কোনো বক্তৃতার সমস্ত অংশকে মূলভাবের ওপর জোর দেওয়ার জন্য তৈরি করা যেতে পারে তা হচ্ছে, মূলভাবে বলা মূল শব্দগুলোকে অথবা মূলভাবের প্রধান ধারণাকে পুনরাবৃত্তি করা। আসুন এই ক্ষেত্রে আমরা একটা প্রেমের গানের উদাহরণ বিবেচনা করি। পুরো গানেই গায়ক মূলভাব প্রকাশ করেন আর সেটা হচ্ছে, যে-ব্যক্তির প্রতি তিনি মুগ্ধ হয়েছেন, তার প্রতি অনুভূত প্রেম। তিনি হয়তো বিভিন্ন উপায়ে এই মূলভাবকে পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। তিনি হয়তো ‘প্রেম’ শব্দটির বিভিন্ন রূপ ব্যবহার করতে পারেন। অধিকন্তু, তিনি হয়তো সমার্থ শব্দ, বাক্যালঙ্কার, কাব্যিক ভাষা বা অন্যান্য দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতে পারেন। তা সত্ত্বেও, গানটা একই মূলভাবকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়।
৮ বক্তৃতার মূলভাবের বেলায়ও তা-ই হওয়া উচিত। প্রেমের ধারণা, যা গান জুড়ে বার বার পুনরাবৃত্ত হয়ে থাকে, সেটার মতো আপনিও হয়তো বক্তৃতা দেওয়ার সময় মূলভাব থেকে মূল শব্দগুলোকে পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। বিভিন্ন রূপ হিসেবে, আপনি সেই মূল শব্দগুলোর সমার্থ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন বা মূলভাবকে একটু ভিন্নভাবে পুনরায় প্রকাশ করতে পারেন। এইরকম উপায় ব্যবহার করা, মূলভাবকে সেই প্রধান ধারণায় পরিণত করবে, যা আপনার শ্রোতারা মনে রাখবে।
**********
৯-১৩. কোনো বক্তৃতায় প্রধান বিষয়গুলো কী, তা ব্যাখ্যা করুন। উদাহরণ দিন।
৯ আপনার বক্তৃতার মূলভাব নির্ণয় করার পর, প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পরবর্তী ধাপটা হচ্ছে, সেই প্রধান বিষয়গুলো বাছাই করা, যেগুলো আপনি মূলভাবটা সম্প্রসারিত করার সময় ব্যবহার করবেন বলে পরিকল্পনা করেছেন। আপনার স্পিচ কাউন্সেল স্লিপ-এ এই বিষয়টাকে “প্রধান বিষয়গুলো লক্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা” হিসেবে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে।
১০ কোনো একটি বক্তৃতায় প্রধান বিষয়গুলো কী? সেগুলো কেবল আগ্রহজনক ধারণা বা বিষয়ই নয়, যেগুলো বক্তৃতায় সংক্ষেপে বলা হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে বক্তৃতার প্রধান বিভাগ, এমন বিভিন্ন ধারণা, যা কিছুটা সবিস্তারে সম্প্রসারিত করা হয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে মুদির দোকানের শেলফে লাগানো লেবেল বা চিহ্নের মতো, যা একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে যে, শেলফের একটা বিভাগে কী রয়েছে এবং সেগুলো নির্ধারণ করে যে, সেই বিভাগে কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে ও সেখান থেকে কোন বিষয় বের করে দেওয়া উচিত। সিরিয়াল লেবেলের অধীনে জ্যাম ও জেলি থাকবে না আর সেগুলো থাকলে তা লোকেদের কেবল বিভ্রান্তই করবে। কফি ও চা চিহ্নের অধীনে চাল থাকবে না। শেলফের লেবেলগুলো যদি অতিরিক্ত মালপত্রে বোঝাই থাকার কারণে ঢাকা পড়ে যায়, তাহলে কোনোকিছু খুঁজে বের করা মুশকিল হবে। কিন্তু, চিহ্নগুলো যদি স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তাহলে একজন ব্যক্তি দ্রুত শনাক্ত করতে পারেন যে, তার সামনে কোন জিনিসগুলো রয়েছে। আপনার বক্তৃতার প্রধান বিষয়গুলোর বেলায়ও একই কথা বলা যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত সেগুলো বোঝা যাবে ও মনে রাখা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার শ্রোতাদের আপনার প্রতি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দেওয়ার জন্য বেশ কম ইঙ্গিতের প্রয়োজন হবে।
১১ আরেকটা বিষয়। প্রধান বিষয়গুলোর বাছাই ও ব্যবহার, শ্রোতা ও বক্তৃতার উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিভিন্ন হবে। এই কারণে বিদ্যালয় অধ্যক্ষের উচিত ছাত্র বা ছাত্রী যে-মূল বিষয়গুলো বাছাই করেছেন, তা তিনি কীভাবে ব্যবহার করেন, সেটার ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা, সেই ব্যক্তিগত বাছাইগুলোর ওপর ভিত্তি করে নয়, যা পরামর্শদাতা হয়তো আগেই তৈরি করেছেন।
১২ শুধুমাত্র অপরিহার্য বিষয়গুলোকে বাছাই করুন। তাই, জিজ্ঞেস করুন, কী একটা বিষয়কে অপরিহার্য করে তোলে? সেটাই অপরিহার্য, যদি আপনি বিষয়টা ছাড়া আপনার বক্তৃতার উদ্দেশ্য সম্পাদন করতে না পারেন। উদাহরণস্বরূপ, মুক্তির মূল্যের শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত নন এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনায়, পৃথিবীতে যিশুর মনুষ্যপ্রকৃতি সম্বন্ধে জানানো অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তা না হলে তাঁর বলিদানের সমরূপ গুণটি প্রদর্শন করা অসম্ভব হবে। তাই, আপনি এটাকে আলোচনার প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে একটা হিসেবে বিবেচনা করবেন। কিন্তু, আপনি যদি ইতিমধ্যেই এই ব্যক্তির কাছে প্রমাণ দিয়ে থাকেন যে, ত্রিত্ব এক মিথ্যা মতবাদ, তাহলে একজন মানুষ হিসেবে যিশু যে-পদমর্যাদা লাভ করেছিলেন, সেটা হয়তো কেবলমাত্র এক গৌণ বিষয় হবে কারণ ইতিমধ্যেই এটা গৃহীত হয়েছে। আর এই কারণে যিশুর মুক্তির মূল্যের সমরূপ মূল্য প্রতিষ্ঠা করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। সেই ক্ষেত্রে যিশুর মনুষ্যপ্রকৃতি সম্বন্ধে বিবেচনা তখন আর এক অপরিহার্য বিষয় হবে না।
১৩ তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আমার শ্রোতারা ইতিমধ্যেই কী জানে? আমার উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য আমাকে কোন বিষয়টা প্রতিষ্ঠা করতে হবে? যদি আপনি প্রথম প্রশ্নটার উত্তর জানেন, তাহলে আপনি আপনার বিষয়বস্তু সংগ্রহ করার দ্বারা দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন আর তা জানা সমস্ত বিষয়কে কিছু সময়ের জন্য একদিকে আলাদা করে এবং বাকি বিষয়গুলোকে সম্ভাব্য সবচেয়ে কমসংখ্যক দলে ভাগে ভাগে সাজিয়ে তা করতে পারেন। এভাবে আপনি শ্রোতাদের সামনে কোন ধরনের আধ্যাত্মিক খাদ্য উপস্থাপন করছেন, সেই বিষয়ে এই দলগুলোই আপনার শনাক্তকারী চিহ্ন হয়ে উঠবে। এই লেবেলগুলো বা প্রধান বিষয়গুলো কখনো যেন ঢাকা না পড়ে বা আড়াল না হয়। এগুলোই হচ্ছে আপনার প্রধান বিষয়, যা লক্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে হবে।
১৪-১৭. কেন আমাদের অনেকগুলো প্রধান বিষয় থাকা উচিত নয়, তার কারণগুলো বলুন।
১৪ অনেকগুলো প্রধান বিষয় নয়। যেকোনো বিষয়ের মধ্যেই শুধুমাত্র অল্প কয়েকটা অপরিহার্য বিষয় থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলোকে এক হাতের আঙুল দিয়েই গণনা করা যায়। এই বিষয়টা সত্য, তা সেগুলোকে উপস্থাপন করার জন্য আপনার হাতে যতখানি সময়ই থাকুক না কেন। অনেকগুলো বিষয়কে লক্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে সাধারণ ফাঁদে পড়বেন না। একটা মুদির দোকান যখন খুব বেশি বড় হয় এবং সেখানে অনেক বিভাগ থাকে, তখন নির্দেশনার জন্য একজন ব্যক্তিকে হয়তো জিজ্ঞেস করতে হতে পারে। আপনার শ্রোতারা এক বসায় বিভিন্ন ধরনের ধারণা কেবলমাত্র যুক্তিসংগতভাবেই উপলব্ধি করতে পারে। আর আপনার বক্তৃতা যত দীর্ঘ হবে, সেটাকে তত সরল করতে হবে এবং আপনার মূল বিষয়গুলোকে তত জোরালো ও তীক্ষ্ণভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। তাই, আপনার শ্রোতাদেরকে অনেক বিষয় মনে রাখানোর চেষ্টা করবেন না। সেই বিষয়গুলো বাছাই করুন, যেগুলো আপনি মনে করেন যে তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে আর এরপর আপনার পুরো সময় এই বিষয়গুলো বলায় ব্যয় করুন।
১৫ কোন বিষয়টা নির্ধারণ করে যে, অনেকগুলো প্রধান বিষয় রয়েছে কি না? সহজভাবে বললে, কোনো ধারণা বাদ দিয়েও যদি বক্তৃতার উদ্দেশ্য সম্পাদিত হয়, তাহলে সেই বিষয়টা একটা মূল বিষয় নয়। বক্তৃতাটি সম্পাদন করার জন্য আপনি হয়তো কোনো সংযোজক বা অনুস্মারক হিসেবে সেই বিষয়টা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিন্তু এটাকে সেই বিষয়গুলোর মতো এতটা লক্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা উচিত নয় যে, সেগুলোকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়।
১৬ আরেকটা বিষয় হল, প্রত্যেকটা বিষয়কে সফলভাবে, দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে সম্প্রসারিত করার জন্য আপনার পর্যাপ্ত সময় লাগবে। যদি অল্পসময়ের মধ্যে অনেক কথা বলতে হয়, তাহলে যে-বিষয়গুলো শ্রোতাদের জানা রয়েছে, সেগুলো অল্পকথায় বলুন। অপরিচিত সমস্ত বিষয় উন্মোচন করুন ও সেগুলোকে এতটা স্পষ্ট করে তুলে ধরুন, যাতে শ্রোতাদের জন্য সেগুলো ভুলে যাওয়া কঠিন হয়।
১৭ শেষে, আপনার বক্তৃতায় সরলতার এক ছাপ থাকতে হবে। এটা সবসময় উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না। এটা হয়তো আপনার বিষয়গুলোকে ঠিক যেভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, সেটার ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি এমন একটা দোকানে যান, যেখানে মেঝের মাঝখানে সমস্ত জিনিসপত্র জমা করে রাখা হয়েছে, তাহলে সেগুলো দেখতে জিনিসপত্রে বোঝাই মনে হবে ও খুবই বিশৃঙ্খল দেখা যাবে। আপনার কোনোকিছু পেতে অসুবিধা হবে। কিন্তু, সবকিছু যখন সঠিকভাবে সাজানো হয় এবং সম্পর্কযুক্ত সমস্ত জিনিস একসঙ্গে একভাগে রাখা হয় এবং বিভাগকে চিহ্নের দ্বারা শনাক্তিকৃত করা হয়, তখন এর ফল বেশ ভাল হয় এবং যেকোনো জিনিসই সহজে খুঁজে বের করা যেতে পারে। শুধুমাত্র অল্প কয়েকটা প্রধান ধারণার অধীনে আপনার ধারণাগুলোকে ভাগ করে নিয়ে আপনার বক্তৃতাকে সরল রাখুন।
১৮. কীভাবে প্রধান বিষয়গুলো সম্প্রসারিত করা উচিত?
১৮ প্রধান ধারণাগুলো আলাদা আলাদাভাবে সম্প্রসারিত করা। প্রত্যেকটা প্রধান ধারণাকে আলাদা আলাদাভাবে তুলে ধরতে হবে। প্রত্যেকটাকে আলাদা আলাদাভাবে সম্প্রসারিত করতে হবে। এটা আপনার বক্তৃতার ভূমিকায় বা উপসংহারে কোনো সংক্ষিপ্ত আউটলাইন বা প্রধান শিরোনামগুলো সারাংশ করায় বাধা দেয় না। কিন্তু, বক্তৃতার প্রধান অংশে আপনার একবারে কেবল একটা প্রধান ধারণা সম্বন্ধে কথা বলা উচিত, শুধুমাত্র সেই বিজড়িত ধারণা বা পূর্ববর্তী কথাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা, যা হয়তো সংযোগ দেখানোর ও জোর দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হতে পারে। বিষয়ভিত্তিক আউটলাইন তৈরি করতে শেখা এই বিষয়টা নির্ণয়ে বিরাট সাহায্য করবে যে, প্রধান বিষয়গুলো আলাদা আলাদাভাবে সম্প্রসারিত করা হয়েছে কি না।
১৯-২১. উপবিষয়গুলোকে কীভাবে ব্যবহার করা উচিত?
১৯ উপবিষয়গুলো প্রধান ধারণাগুলোর ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করে। প্রমাণের বিষয়গুলো, শাস্ত্রপদ বা অন্যান্য উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর প্রধান ধারণার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত ও এটাকে বিশদভাবে বর্ণনা করা উচিত।
২০ প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, সব গৌণ বিষয় বিশ্লেষণ করুন এবং শুধুমাত্র সেই বিষয়টা রাখুন, যা হয় স্পষ্ট করার, প্রমাণ করার বা বিষয়টাকে বিশদভাবে বর্ণনা করার জন্য প্রধান বিষয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি অবদান রাখে। অপ্রাসঙ্গিক যেকোনো কিছুই বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত। এটা বিষয়টাকে শুধুমাত্র বিভ্রান্তিকরই করবে।
২১ প্রধান ধারণার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো বিষয়, আপনি যা বলেন সেই ধারণার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত হওয়া উচিত। প্রয়োগ করার বিষয়টা শ্রোতাদের ওপর ছেড়ে দেবেন না। সংযোগকে স্পষ্ট করুন। সংযোগটা কোথায় রয়েছে, তা বলুন। যে-বিষয়টা বলা হয় না, তা সাধারণত বোঝা যাবে না। এটা প্রধান ধারণাকে প্রকাশ করে এমন মূল শব্দগুলোকে পুনরাবৃত্তি করার দ্বারা অথবা মাঝে মাঝে প্রধান বিষয়ের ধারণাকে পুনরাবৃত্তি করার দ্বারা করা যেতে পারে। যখন আপনি আপনার সব উপবিষয়ের দ্বারা বক্তৃতার প্রধান বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করার কৌশলের ওপর দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং প্রত্যেকটা প্রধান বিষয়কে মূলভাবের সঙ্গে যুক্ত করেন, তখন আপনার বক্তৃতাগুলো মনোরমভাবে সরল হবে, যা দেওয়া সহজ হবে ও ভোলা কঠিন হবে।