ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • fy অধ্যায় ১৬ পৃষ্ঠা ১৮৩-১৯১
  • আপনার পরিবারের জন্য এক স্থায়ী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আপনার পরিবারের জন্য এক স্থায়ী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন
  • পারিবারিক সুখের রহস্য
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • ইন্দ্রিয়দমনের মূল্য
  • মস্তকপদ সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি
  • ‘শ্রবণে সত্বর হউন’
  • প্রেমের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • যে-পরিবার ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে
  • পরিবার ও আপনার ভবিষ্যৎ
  • পারিবারিক জীবনে ঈশ্বরীয় শান্তি অনুধাবন করুন
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • এক স্থায়ী বিবাহের দুটো চাবিকাঠি
    পারিবারিক সুখের রহস্য
  • ঘরে ঈশ্বরীয় ভক্তি অভ্যাস করুন
    একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করুন
  • বিয়ে—প্রেমময় ঈশ্বরের কাছ থেকে এক উপহার
    “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর”
আরও দেখুন
পারিবারিক সুখের রহস্য
fy অধ্যায় ১৬ পৃষ্ঠা ১৮৩-১৯১

অধ্যায় ষোলো

আপনার পরিবারের জন্য এক স্থায়ী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন

১. পারিবারিক ব্যবস্থার জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য কী ছিল?

যিহোবা যখন আদম ও হবাকে বিয়ের মাধ্যমে একতাবদ্ধ করেছিলেন, তখন আদম সবচেয়ে প্রথম লিপিবদ্ধ ইব্রীয় কাব্য প্রকাশ করার মাধ্যমে তার আনন্দ প্রকাশ করেছিল। (আদিপুস্তক ২:২২, ২৩) কিন্তু, সৃষ্টিকর্তার মনে তাঁর মানব সন্তানদের জন্য কেবল আনন্দ নিয়ে আসার চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল। তিনি চেয়েছিলেন যেন বিবাহিত দম্পতিরা ও পরিবারগুলো তাঁর ইচ্ছা পালন করে। তিনি প্রথম যুগলকে বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।” (আদিপুস্তক ১:২৮) সেটা কত মহান ও পরিতৃপ্তিদায়ক কার্যভারই না ছিল! তারা এবং তাদের ভাবী সন্তানরা কত সুখীই না হতে পারত, যদি কিনা আদম ও হবা সম্পূর্ণ বাধ্যতা সহকারে যিহোবার ইচ্ছা পালন করত!

২, ৩. কীভাবে পরিবারগুলো বর্তমানে সর্বোচ্চ সুখ খুঁজে পেতে পারে?

২ আজকেও, পরিবারগুলো যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য একত্রে কাজ করে, তখন সবচেয়ে সুখী হয়। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ভক্তি সর্ব্ববিষয়ে সুফলদায়িকা, তাহা বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিজ্ঞাযুক্ত।” (১ তীমথিয় ৪:৮) যে-পরিবার ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুযায়ী জীবনযাপন করে এবং বাইবেলে লিপিবদ্ধ যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করে, সেই পরিবার ‘বর্ত্তমান জীবনে’ ‘সুখ’ খুঁজে পাবে। (গীতসংহিতা [সামসঙ্গীত-মালা] ১:১, বাংলা জুবিলী বাইবেল, ২, ৩; ১১৯:১০৫; ২ তীমথিয় ৩:১৬) এমনকি পরিবারের একজন সদস্যও যদি বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগায়, তাহলেও পরিস্থিতি সেই সময়ের চেয়ে আরও ভাল হয়, যখন কেউ কাজে লাগায় না।

৩ এই বইয়ে বাইবেলের এমন অনেক নীতি আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো পরিবারের সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। সম্ভবত আপনি লক্ষ করেছেন যে, এই বইয়ে কিছু নীতি সম্বন্ধে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। কেন? কারণ সেগুলো এমন জোরালো সত্য তুলে ধরে, যেগুলো পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন দিকে সকলের মঙ্গলের জন্য কার্যকারী। যে-পরিবার বাইবেলের এই নীতিগুলো কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে, সেই পরিবার দেখে যে, ঈশ্বরীয় ভক্তি সত্যিই ‘বর্ত্তমান জীবনের প্রতিজ্ঞাযুক্ত।’ আসুন আমরা আবারও সেই গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলোর মধ্যে থেকে চারটে নীতি পরীক্ষা করে দেখি।

ইন্দ্রিয়দমনের মূল্য

৪. কেন একটা বিয়েতে ইন্দ্রিয়দমন অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

৪ রাজা শলোমন বলেছিলেন: “যে আপন আত্মা দমন না করে, সে এমন নগরের তুল্য, যাহা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, যাহার প্রাচীর নাই।” (হিতোপদেশ ২৫:২৮; ২৯:১১) “আপন আত্মা” বা মেজাজ ‘দমন করা’ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়দমন করা সেই ব্যক্তিদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যারা এক সুখী বিবাহ লাভ করতে চায়। ক্ষতিকর আবেগ যেমন, ক্রোধ বা অনৈতিক লালসার কাছে নতিস্বীকার করা এমন ক্ষতি নিয়ে আসবে, যা পূরণ করতে কয়েক বছর লেগে যায়—যদি তা আদৌ পূরণ করা সম্ভব হয়।

৫. কীভাবে একজন অসিদ্ধ মানুষ ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারে আর এর উপকারগুলো কী?

৫ অবশ্য, আদমের কোনো বংশধরই তার অসিদ্ধ মাংসকে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। (রোমীয় ৭:২১, ২২) তা সত্ত্বেও, ইন্দ্রিয়দমন আত্মার একটা ফল। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) তাই, আমরা যদি এই গুণের জন্য প্রার্থনা করি, শাস্ত্রে প্রাপ্ত উপযুক্ত পরামর্শ কাজে লাগাই এবং যারা এই গুণ প্রকাশ করে, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করি ও যারা প্রকাশ করে না, তাদেরকে এড়িয়ে চলি, তাহলে ঈশ্বরের আত্মা আমাদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন উৎপন্ন করবে। (গীতসংহিতা ১১৯:১০০, ১০১, ১৩০; হিতোপদেশ ১৩:২০; ১ পিতর ৪:৭) এই ধরনের এক পদক্ষেপ আমাদেরকে “ব্যভিচার হইতে পলায়ন” করতে সাহায্য করবে, এমনকি সেই সময়েও যখন আমরা প্রলুব্ধ হয়ে থাকি। (১ করিন্থীয় ৬:১৮) আমরা দৌরাত্ম্যকে প্রত্যাখ্যান করতে পারব এবং মদের প্রতি আসক্তিকে এড়িয়ে চলতে বা সেটাকে জয় করতে পারব। আর আমরা ক্রোধ ও কঠিন পরিস্থিতিগুলোর সময় আরও শান্তভাবে আচরণ করব। আমরা সকলে—ও সেইসঙ্গে সন্তানরা—যেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই আত্মার ফল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে শিখি।—গীতসংহিতা ১১৯:১, ২.

মস্তকপদ সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি

৬. (ক) মস্তকপদ সম্বন্ধে ঐশিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা কী? (খ) একজন পুরুষকে অবশ্যই কী মনে রাখতে হবে, যদি তিনি চান যে তার মস্তকপদ পরিবারের জন্য সুখ নিয়ে আসুক?

৬ দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিটা হচ্ছে, মস্তকপদকে স্বীকার করা। পৌল এই বিষয়টার সঠিক বিন্যাস সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জান যে, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) এর অর্থ হল যে, একটা পরিবারে একজন পুরুষ নেতৃত্ব দেবেন, তার স্ত্রী অনুগতভাবে সমর্থন করবেন আর সন্তানরা তাদের বাবা-মায়ের বাধ্য থাকবে। (ইফিষীয় ৫:২২-২৫, ২৮-৩৩; ৬:১-৪) তবে লক্ষ করুন যে, মস্তকপদ একমাত্র তখনই সুখ নিয়ে আসে, যখন তা সঠিক উপায়ে পরিচালনা করা হয়। যে-স্বামীরা ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তারা জানে যে, মস্তকপদ স্বৈরাচারমূলক নয়। তারা তাদের মস্তক যিশুকে অনুকরণ করে। যদিও যিশু “সকলের উপরে উচ্চ মস্তক” ছিলেন, তবুও তিনি “পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে . . . আসিয়াছেন।” (ইফিষীয় ১:২২; মথি ২০:২৮) একইভাবে, একজন খ্রিস্টান পুরুষ নিজের উপকার লাভের জন্য নয় বরং তার স্ত্রী ও সন্তানদের মঙ্গলগুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য মস্তকপদ ব্যবহার করেন।—১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫.

৭. কোন শাস্ত্রীয় নীতিগুলো একজন স্ত্রীকে পরিবারে তার ঈশ্বরদত্ত ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করবে?

৭ স্ত্রীর ক্ষেত্রে, যে-স্ত্রী ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুযায়ী জীবনযাপন করেন, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন না অথবা তার ওপর প্রভুত্ব করার চেষ্টা করেন না। তিনি স্বামীকে সমর্থন করে ও তার সঙ্গে কাজ করে সুখী থাকেন। বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে, “স্বামী স্ত্রীর মস্তক।” (ইফিষীয় ৫:২৩) বিয়ের মাধ্যমে তিনি ‘স্বামীর ব্যবস্থার’ অধীনে আসেন। (রোমীয় ৭:২) একইসঙ্গে, বাইবেল তাকে “অনুরূপ [“পরিপূরক,” NW]” এবং “সহকারিণী” বলে অভিহিত করে। (আদিপুস্তক ২:২০) তিনি সেইসমস্ত গুণাবলি এবং ক্ষমতা প্রদর্শন করে থাকেন, যেগুলোর অভাব স্বামীর রয়েছে ও সেইসঙ্গে তিনি স্বামীকে প্রয়োজনীয় সমর্থন প্রদান করে থাকেন। (হিতোপদেশ ৩১:১০-৩১) এ ছাড়াও, বাইবেল বলে যে, একজন স্ত্রী হলেন “সখী,” যিনি তার সাথির পাশে থেকে কাজ করেন। (মালাখি ২:১৪) এই শাস্ত্রীয় নীতিগুলো একজন স্বামী ও স্ত্রীকে পরস্পরের অবস্থান বুঝতে এবং পরস্পরের প্রতি সঠিক সম্মান ও মর্যাদা দেখিয়ে আচরণ করতে সাহায্য করে।

‘শ্রবণে সত্বর হউন’

৮, ৯. কিছু নীতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করুন, যেগুলো পরিবারের সকলকে তাদের ভাববিনিময়ের দক্ষতাকে উন্নত করতে সাহায্য করবে।

৮ এই বইয়ে প্রায়ই ভাববিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে। কেন? কারণ লোকেরা যখন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে ও সত্যিই পরস্পরের কথা শোনে, তখন সমস্যাগুলোর সমাধান করা আরও সহজ হয়। বার বার এই বিষয়টার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যে, ভাববিনিময় হল দ্বিমুখী একটা রাস্তা। শিষ্য যাকোব এটাকে এভাবে প্রকাশ করেছেন: “তোমাদের প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর . . . হউক।”—যাকোব ১:১৯.

৯ এ ছাড়া, আমরা কীভাবে কথা বলি, সেই বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বেপরোয়া, বিবাদজনক ও চরম সমালোচনাপূর্ণ কথাবার্তা সফল ভাববিনিময় স্থাপন করে না। (হিতোপদেশ ১৫:১; ২১:৯; ২৯:১১, ২০) এমনকি আমরা যা বলি, তা সঠিক হলেও সেটা যদি নিষ্ঠুর, গর্বিত অথবা উদাসীনভাবে প্রকাশ করা হয়, তাহলে সম্ভবত তা ভাল করার চেয়ে বরং ক্ষতিই বেশি করে থাকে। আমাদের কথা রুচিসম্পন্ন, “লবণে আস্বাদযুক্ত” হওয়া উচিত। (কলসীয় ৪:৬) আমাদের কথাবার্তা “রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের” তুল্য হওয়া উচিত। (হিতোপদেশ ২৫:১১) যে-পরিবারগুলো ভালভাবে ভাববিনিময় করতে শেখে, তারা সুখ লাভ করার দিকে এক বিরাট পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রেমের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

১০. বিয়েতে কোন ধরনের প্রেম অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

১০ এই বইয়ে “প্রেম” শব্দটি বার বার এসেছে। মূলত কোন ধরনের প্রেম সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, তা কি আপনি মনে করতে পারেন? এটা ঠিক যে, রোমান্টিক প্রেম (গ্রিক এরস) বিয়েতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আর সফল বিয়েতে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে গভীর স্নেহ ও বন্ধুত্ব (গ্রিক ফিলিয়া) গড়ে ওঠে। কিন্তু, সেই প্রেম আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যা গ্রিক আগাপে শব্দটির দ্বারা চিত্রিত হয়েছে। এই প্রেমই আমরা যিহোবা, যিশু ও প্রতিবেশীদের প্রতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি। (মথি ২২:৩৭-৩৯) এই প্রেমই যিহোবা মানবজাতির প্রতি প্রকাশ করেছেন। (যোহন ৩:১৬) এটা কতই না অপূর্ব যে, আমরা আমাদের বিবাহসাথি ও সন্তানদের জন্য একই ধরনের প্রেম দেখাতে পারি!—১ যোহন ৪:১৯.

১১. কীভাবে প্রেম একটা বিয়ের মঙ্গলের জন্য কাজ করে?

১১ বিয়েতে উৎকৃষ্ট ধরনের প্রেম সত্যিই “সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কলসীয় ৩:১৪) এটা এক দম্পতিকে একত্রে আবদ্ধ করে এবং পরস্পরের ও সন্তানদের জন্য সর্বোত্তমটা করতে অনুপ্রাণিত করে। পরিবারগুলো যখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন প্রেম তাদেরকে বিষয়গুলো একতাবদ্ধভাবে মীমাংসা করতে সাহায্য করে। কোনো দম্পতি যখন বৃদ্ধ হতে থাকে, তখন প্রেম তাদেরকে একে অন্যকে সমর্থন করতে ও পরস্পরের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে সাহায্য করে। “প্রেম . . . স্বার্থ চেষ্টা করে না, . . . সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না।”—১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮.

১২. কেন ঈশ্বরের প্রতি বিবাহিত দম্পতির প্রেম তাদের বিয়েকে শক্তিশালী করে?

১২ বিবাহবন্ধন বিশেষভাবে সেই সময়ে দৃঢ় হয়, যখন তা কেবল বিবাহিত সাথিদের মধ্যে প্রেম দ্বারাই নয় কিন্তু মূলত যিহোবার প্রতি প্রেমের দ্বারা মজবুত হয়ে থাকে। (উপদেশক ৪:৯-১২) কেন? প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।” (১ যোহন ৫:৩) তাই, এক দম্পতি কেবল তাদের সন্তানদের গভীরভাবে ভালবাসে বলেই নয় কিন্তু এটা যিহোবার আজ্ঞা বলে, তাদের সন্তানদের ঈশ্বরীয় ভক্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) তাদের অনৈতিকতা এড়িয়ে চলা উচিত, কেবলমাত্র এই কারণে নয় যে, তারা পরস্পরকে ভালবাসে কিন্তু মূলত এই কারণে যে, তারা যিহোবাকে ভালবাসে, যিনি “ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার . . . করিবেন।” (ইব্রীয় ১৩:৪) এমনকি যদি একজন সঙ্গী বিয়েতে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করেন, তবুও যিহোবার প্রতি প্রেম অন্য সঙ্গীকে বাইবেলের নীতিগুলো মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করবে। বস্তুতপক্ষে, সেই পরিবারগুলোই সুখী, যেখানে পরস্পরের প্রতি প্রেম যিহোবার প্রতি প্রেমের দ্বারা মজবুত হয়ে থাকে!

যে-পরিবার ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে

১৩. কীভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার বিষয়ে এক দৃঢ়সংকল্প একজন ব্যক্তিকে প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করবে?

১৩ একজন খ্রিস্টানের সম্পূর্ণ জীবন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ওপর কেন্দ্রীভূত। (গীতসংহিতা ১৪৩:১০) আসলে, এটাই হল ঈশ্বরীয় ভক্তির অর্থ। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা পরিবারগুলোকে প্রকৃতই “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর” ওপর তাদের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করবে। (ফিলিপীয় ১:৯, ১০, NW) উদাহরণস্বরূপ, যিশু সাবধান করেছিলেন: “আমি পিতার সহিত পুত্ত্রের, মাতার সহিত কন্যার, এবং শাশুড়ীর সহিত বধূর বিচ্ছেদ জন্মাইতে আসিয়াছি; আর আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।” (মথি ১০:৩৫, ৩৬) যিশুর সাবধানবাণী অনুযায়ী, তাঁর অনেক অনুসারী তাদের পরিবারের সদস্যের দ্বারা তাড়িত হয়েছে। কতই না দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক পরিস্থিতি! তা সত্ত্বেও, পারিবারিক বন্ধনগুলোকে যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্টের প্রতি আমাদের প্রেমের গুরুত্বকে হ্রাস করতে দেওয়া উচিত নয়। (মথি ১০:৩৭-৩৯) পারিবারিক বিরোধিতা সত্ত্বেও যদি একজন ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তাহলে বিরোধীরা হয়তো ঈশ্বরীয় ভক্তির উত্তম প্রভাবগুলো দেখে পরিবর্তিত হতে পারে। (১ করিন্থীয় ৭:১২-১৬; ১ পিতর ৩:১, ২) এমনকি তা যদি না-ও হয়, তবুও বিরোধিতার কারণে ঈশ্বরকে সেবা করা বন্ধ করে দিলে কোনো স্থায়ী উপকার লাভ করা যায় না।

১৪. কীভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার আকাঙ্ক্ষা বাবা-মাদেরকে তাদের সন্তানদের সর্বোচ্চ মঙ্গলের জন্য কাজ করতে সাহায্য করবে?

১৪ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা বাবা-মাকে সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সমাজে বাবা-মায়েরা সন্তানদেরকে এক বিনিয়োগ হিসেবে দেখে থাকে আর তারা বৃদ্ধ বয়সে তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের সন্তানদের ওপর নির্ভর করে থাকে। যদিও প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষে তাদের বয়স্ক বাবা-মায়ের যত্ন নেওয়া সঠিক ও উপযুক্ত, তবুও এই ধরনের বিবেচনার কারণে বাবা-মাদের তাদের সন্তানদেরকে এক বস্তুবাদী জীবনধারার পিছনে ছোটার দিকে পরিচালিত করা উচিত নয়। বাবা-মায়েরা যদি সন্তানদেরকে এমনভাবে মানুষ করে তোলে, যার ফলে সন্তানরা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর চেয়ে বরং বস্তুগত বিষয়গুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করে, তাহলে তা সন্তানদের জন্য উপকারজনক হবে না।—১ তীমথিয় ৬:৯.

১৫. কীভাবে তীমথিয়ের মা উনীকী এমন এক মায়ের উত্তম উদাহরণ, যিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছেন?

১৫ এই ক্ষেত্রে, পৌলের অল্পবয়সি বন্ধু তীমথিয়ের মা উনীকী হলেন এক উত্তম উদাহরণ। (২ তীমথিয় ১:৫) যদিও তার স্বামী অবিশ্বাসী ছিলেন, তবুও উনীকী ও সেইসঙ্গে তীমথিয়ের দিদিমা লোয়ী, তীমথিয়কে ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুধাবন করার জন্য সফলভাবে মানুষ করে তুলতে পেরেছিলেন। (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) তীমথিয় যখন যথেষ্ট বড় হয়েছিলেন, তখন উনীকী তাকে বাড়ি ত্যাগ করে পৌলের মিশনারি সঙ্গী হিসেবে রাজ্যের প্রচার কাজ করার জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৬:১-৫) তার ছেলে যখন একজন উল্লেখযোগ্য মিশনারি হয়ে উঠেছিলেন, তখন তিনি কত রোমাঞ্চিতই না হয়েছিলেন! প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে তীমথিয়ের ঈশ্বরীয় ভক্তি তার প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ওপর অনুকূল প্রভাব ফেলেছিল। নিশ্চিতভাবেই, তীমথিয়ের বিশ্বস্ত পরিচর্যার বিবরণ শুনে উনীকী পরিতৃপ্তি ও আনন্দ লাভ করেছিলেন, যদিও তিনি হয়তো বাড়িতে তার সাহচর্যের অভাব বোধ করেছিলেন।—ফিলিপীয় ২:১৯, ২০.

পরিবার ও আপনার ভবিষ্যৎ

১৬. একজন পুত্র হিসেবে যিশু কোন সঠিক চিন্তা প্রদর্শন করেছিলেন কিন্তু তাঁর প্রধান লক্ষ্য কী ছিল?

১৬ যিশু এক ঈশ্বরভয়শীল পরিবারে মানুষ হয়েছিলেন আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে, তাঁর মায়ের জন্য একজন পুত্রের সঠিক চিন্তা প্রদর্শন করেছিলেন। (লূক ২:৫১, ৫২; যোহন ১৯:২৬) কিন্তু, যিশুর প্রধান লক্ষ্য ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছা পরিপূর্ণ করা এবং তাঁর জন্য এর অন্তর্ভুক্ত ছিল মানবজাতি যেন অনন্তজীবন উপভোগ করতে পারে, সেইজন্য পথ খুলে দেওয়া। তিনি সেই সময়ে এটা করেছিলেন, যখন পাপী মানবজাতির জন্য তাঁর সিদ্ধ মানবজীবন এক মুক্তির মূল্য হিসেবে প্রদান করেছিলেন।—মার্ক ১০:৪৫; যোহন ৫:২৮, ২৯.

১৭. যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, তাদের জন্য যিশুর বিশ্বস্ত কাজ কোন গৌরবান্বিত প্রত্যাশা খুলে দিয়েছে?

১৭ যিশুর মৃত্যুর পর, যিহোবা তাঁকে স্বর্গীয় জীবনে উত্থিত করেছিলেন এবং তাঁকে মহান কর্তৃত্ব দান করেছিলেন আর অবশেষে স্বর্গীয় রাজ্যে তাঁকে রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। (মথি ২৮:১৮; রোমীয় ১৪:৯; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) যিশুর বলিদানের কারণে কিছু মানুষের পক্ষে সেই রাজ্যে তাঁর সঙ্গে শাসন করার জন্য মনোনীত হওয়া সম্ভবপর হয়েছিল। এ ছাড়া, এটা বাকি সৎহৃদয়ের মানবজাতির জন্য পরমদেশতুল্য অবস্থায় পুনর্স্থাপিত পৃথিবীতে সিদ্ধ জীবন উপভোগ করার পথ খুলে দিয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ১৪:১, ৪; ২১:৩-৫; ২২:১-৪) আজকে আমাদের জন্য সর্বমহৎ যে-সুযোগগুলো রয়েছে, তার মধ্যে একটা হল এই গৌরবান্বিত সুসমাচার আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে বলা।—মথি ২৪:১৪.

১৮. পরিবার ও ব্যক্তি বিশেষ উভয়ের জন্য কোন অনুস্মারক এবং উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে?

১৮ প্রেরিত পৌল যেমন দেখিয়েছেন যে, ঈশ্বরীয় ভক্তিপূর্ণ এক জীবন অতিবাহিত করা এই প্রতিজ্ঞাযুক্ত যে, লোকেরা “ভবিষ্যৎ” জীবনে সেই আশীর্বাদগুলো লাভ করতে পারবে। নিশ্চিতভাবেই, এটা হল সুখ খুঁজে পাওয়ার সর্বোত্তম উপায়! মনে রাখবেন যে, “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৭) তাই, আপনি একজন সন্তান অথবা বাবা কিংবা মা, স্বামী কিংবা স্ত্রী অথবা সন্তান রয়েছে বা সন্তান নেই এমন একক বাবা কিংবা মা, যা-ই হোন না কেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করুন। এমনকি আপনি যখন চাপের মুখে থাকেন অথবা চরম সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হন, সেই সময়ও কখনো ভুলে যাবেন না যে, আপনি জীবন্ত ঈশ্বরের একজন দাস। এভাবে, আপনার কাজগুলো যেন যিহোবার জন্য আনন্দ নিয়ে আসে। (হিতোপদেশ ২৭:১১) আর আপনার আচরণ যেন এখন ও আসন্ন নতুন জগতের অনন্তজীবনে আপনার জন্য সুখ নিয়ে আসে!

আপনার পরিবারকে সুখী হতে . . . বাইবেলের এই নীতিগুলো কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা যেতে পারে।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

মস্তকপদ সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই পরিবারের মঙ্গলের চেষ্টা করে।—ইফিষীয় ৫:২২-২৫, ২৮-৩৩; ৬:৪.

ভাববিনিময়ের অন্তর্ভুক্ত মনোযোগ দিয়ে শোনা।—যাকোব ১:১৯.

যিহোবার প্রতি প্রেম একটা বিয়েকে মজবুত করবে।—১ যোহন ৫:৩.

ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা একটা পরিবারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।—গীতসংহিতা ১৪৩:১০; ১ তীমথিয় ৪:৮.

অবিবাহিত থাকার দান

প্রত্যেকেই বিয়ে করে না। আর সমস্ত বিবাহিত দম্পতিই সন্তান নেওয়া বেছে নেয় না। যিশু অবিবাহিত ছিলেন আর তিনি অবিবাহিত থাকাকে একটা দান হিসেবে উল্লেখ করেন, যখন তা “স্বর্গ-রাজ্যের নিমিত্তে” হয়ে থাকে। (মথি ১৯:১১, ১২) প্রেরিত পৌলও অবিবাহিত থাকা বেছে নিয়েছিলেন। তিনি অবিবাহিত থাকা ও বিবাহিত হওয়া, উভয়কেই ‘দান’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (১ করিন্থীয় ৭:৭, ৮, ২৫-২৮) তাই, এই বইয়ে যদিও আলোচ্য অধিকাংশ বিষয় বিয়ে ও সন্তান মানুষ করে তোলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তবুও আমাদের অবিবাহিত থাকার এবং বিয়ে করেও সন্তানহীন থাকার সম্ভাব্য আশীর্বাদ ও পুরস্কার সম্বন্ধে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার