পরিচর্যায় আসা বিরোধিতার জন্য প্রস্তুত থাকুন
১. খ্রিস্টান পরিচারকরা কী জানে আর এটা কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপন করে?
১ যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাঁর অনুসারীরা তাড়িত হবে। (যোহন ১৫:২০) যতই আমরা শেষকালের চূড়ান্ত অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং শয়তান আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে, ততই আমরা জানি যে, বিরোধিতা তীব্র হবে। (প্রকা. ১২:১২) তাই, পরিচর্যায় থাকাকালীন কীভাবে আমরা নিজেদের সুরক্ষা করতে পারি? আমাদের যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে পুলিশকে ডাকা কি সঠিক হবে? যারা আমাদের আক্রমণ করে, তাদের বিরুদ্ধে কি আমাদের মামলা দায়ের করা উচিত?
২. কেন খ্রিস্টানদের যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত, যাতে তারা নিজেদের দৈহিক আক্রমণ থেকে সুরক্ষা করতে পারে?
২ জীবন খুবই মূল্যবান: যিহোবা জীবনকে খুবই মূল্যবান বলে গণ্য করেন। তাই, তিনি যখন ইস্রায়েল জাতিকে ব্যবস্থা প্রদান করেছিলেন, তখন তিনি এমন আজ্ঞাগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, যেগুলো জীবন ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। (যাত্রা. ২১:২২-২৯) ঈশ্বরের দাসদের যদিও এখন আর মোশির ব্যবস্থা পালন করতে হয় না, কিন্তু তারা জীবনের উপহারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকে। তাই, খ্রিস্টানরা যখন তাড়নাকারীদের কাছ থেকে দৈহিক আক্রমণের হুমকির মুখোমুখি হয়, তখন তারা নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য উপযুক্তভাবেই পদক্ষেপগুলো নেয়।
৩. আমাদের এলাকায় যদি কোনো বিপদজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তাহলে কী করা উচিত?
৩ যেভাবে নিজেদের সুরক্ষা করা যায়: একাধিক বার যিশু স্থান ত্যাগ করেছিলেন, যখন তিনি উন্মত্ত বিরোধীদের দ্বারা হুমকির মুখোমুখি হয়েছিলেন। (লূক ৪:২৮-৩০; যোহন ৮:৫৯) একইভাবে, আমাদের এলাকায় যদি কোনো বিপদজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তখন সেই এলাকা ত্যাগ করা প্রায়ই বিজ্ঞতার কাজ। যতক্ষণ পর্যন্ত বিরোধিতা কমে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য এলাকাগুলোতে প্রচার করা হয়তো সর্বোত্তম কাজ হতে পারে।—মথি ১০:২৩.
৪. একজন বিরোধী যদি আমাদের জোর করে আটকে রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে আমরা কী করতে পারি?
৪ কিন্তু, একজন বিরোধী যদি আমাদের জোর করে আটকে রাখার কিংবা তার ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে? কী করতে হবে, তা নির্ধারণ করার জন্য প্রত্যেককে পরিস্থিতিগুলো বিবেচনা করতে হবে। তবে, একজন খ্রিস্টান এইরকম আইনবিরুদ্ধ কাজগুলোর কাছে নিষ্ক্রিয়ভাবে নতিস্বীকার করবেন না। আমরা হয়তো প্রতিরোধ করার মাধ্যমে, সম্ভবত বিরোধীকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে, দৈহিক আক্রমণ এড়াতে পারি। একজন খ্রিস্টান যদি মনে করেন যে, তার দৈহিক সুরক্ষা বা এমনকী তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তাহলে তিনি হয়তো উপযুক্তভাবেই আঘাত প্রতিহত করে আক্রমণকারীকে প্রতিরোধ করতে পারেন অথবা এমনকী তাকে হতচকিত করার বা সাময়িকভাবে অক্ষম করার জন্য আঘাত করতে পারেন।—২০০৮ সালের জুন মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১০ ও ১১ পৃষ্ঠার “বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি: কখন আত্মরক্ষা করা যুক্তিসংগত?” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।
৫. আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করার জন্য আমরা জাগতিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন আইনগত ব্যবস্থাগুলো ব্যবহার করতে পারি?
৫ আমাদের কি পুলিশকে ডাকা উচিত? প্রেরিত পৌল তার পরিচর্যার সময় সেই ব্যবস্থাগুলোর সদ্ব্যবহার করেছিলেন, যেগুলো রোমীয় আইন অনুযায়ী তিনি নিতে পারতেন। উদাহরণস্বরূপ, বিরোধীরা যখন মিথ্যা দোষারোপ করেছিল, তখন পৌল তার মামলাটা যাতে কৈসর শোনেন, সেইজন্য আইনগত ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করেছিলেন। (প্রেরিত ২৫:১১) এর আগের একটা ঘটনায় পৌল কোড়া প্রহার এড়ানোর জন্য একজন রোমীয় নাগরিক হিসেবে তার অধিকারকে ব্যবহার করেছিলেন। (প্রেরিত ২২:২৫, ২৯) তাই, খ্রিস্টানরা উপযুক্তভাবেই জাগতিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুরক্ষা লাভ করার চেষ্টা করতে পারে, যারা ‘আমাদের পক্ষে সদাচরণের নিমিত্ত ঈশ্বরেরই পরিচারক।’—রোমীয় ১৩:৪.
৬. আমরা যদি এমন কোনো বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যেখান থেকে আমরা পালিয়ে যেতে পারি না, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
৬ ওপরে উল্লেখিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা যদি পরিচর্যায় থাকার সময় এমন কোনো বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যেখান থেকে আমরা পালিয়ে যেতে পারি না, তাহলে আমাদের তৎক্ষণাৎ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। কেউ কেউ বিজ্ঞতার সঙ্গে তাদের মোবাইল ফোনে এলাকার কাছাকাছি পুলিশ স্টেশনের নম্বর রেখে দিয়েছে, যাতে সমস্যার কোনোরকম লক্ষণ দেখা দিলেই সাহায্যের জন্য পুলিশকে ফোন করতে পারে। যে-ভাইয়েরা ক্ষেত্রের পরিচর্যার সভাগুলো পরিচালনা করে, তাদের সেই ব্যক্তিদের প্রতি লক্ষ রাখা উচিত, যারা তাদের সঙ্গে পরিচর্যায় কাজ করছে।—১ পিতর ৫:২, ৩.
৭. আমরা যখন আমাদের পরিচর্যায় আক্রমণের শিকার হই, তখন মামলা দায়ের করা উপযুক্ত কেন?
৭ আমাদের কি মামলা দায়ের করা উচিত? পরিচর্যায় থাকাকালীন আমরা যদি কোনো গৃহকর্তার দ্বারা আক্রমণের শিকার হই, তাহলে আমাদের কি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা উচিত? কেউ কেউ হয়তো তা করতে না-ও চাইতে পারে, সম্ভবত এই ভয়ের কারণে যে, তারা বাড়তি ঝুটঝামেলার মুখোমুখি হতে পারে কিংবা অবিশ্বাসী আত্মীয়স্বজন অথবা এলাকাবাসীর চোখে মর্যাদা হারাতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি মামলা দায়ের না করি, তাহলে সেটা কি এই বিরোধীদের এই ধারণা দেবে যে, তারা যিহোবার সাক্ষিদেরকে কোনো শাস্তির ঝুঁকি ছাড়াই আক্রমণ করতে পারে? এটা হয়তো এমনকী উদ্ধত জনতাকে তাদের দৌরাত্ম্যপূর্ণ আক্রমণগুলো চালিয়ে যাওয়ার জন্য দুঃসাহসী করে তুলবে। (উপ. ৮:১১) মামলা দায়ের করার মাধ্যমে আমরা হয়তো “সুসমাচারের পক্ষসমর্থনে ও প্রতিপাদন সম্বন্ধে” অংশ নিই এবং তা হয়তো ভবিষ্যতে সেই এলাকায় কাজ করার সময় আমাদের ভাইবোনদের আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।—ফিলি. ১:৭.
৮. তাড়নার হুমকি সত্ত্বেও, কেন আমরা ভয় না পেয়ে প্রচার করতে পারি?
৮ বিরোধীরা সফল হবে না: যদিও খ্রিস্টানরা জানে যে, তারা তাড়না ভোগ করবে কিন্তু এতে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। নিখিলবিশ্বের সর্বমহান ব্যক্তি আমাদের সমর্থন করছেন। (যিশা. ৪১:১০; ইব্রীয় ১৩:৬) যিহোবা সুসমাচার প্রচার করার কাজ বন্ধ করার ক্ষেত্রে বিরোধীদের সফল হতে দেবেন না। (যিশা. ৫৪:১৭) এ ছাড়া, মনে রাখবেন যে, বিরোধিতা সত্ত্বেও পরিচর্যায় বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরা “ঈশ্বরের কাছে সাধুবাদের বিষয়” এবং তিনি অবশেষে তাঁর দাসদের ওপর বিরোধীদের কাছ থেকে আসা যেকোনো আক্রমণ দূর করে দেবেন। (১ পিতর ২:১৯, ২০) যিহোবার সংগঠন আমাদেরকে সমর্থন করছে। আমরা যদি পরিচর্যায় থাকাকালীন আক্রমণের শিকার হই কিংবা কর্তৃপক্ষ যদি এইরকম ধারণা পোষণ করে যে, আমাদের পরিচর্যা আইনকে ভঙ্গ করে, তাহলে আমাদের অবিলম্বে প্রাচীনদের তা জানানো উচিত, যারা পরে শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। এই সংকটময় শেষকালে, ক্ষান্ত না হয়ে সুসমাচার প্রচার করে চলার সময় আমাদের সতর্কতা ও উত্তম বিচারবুদ্ধি প্রদর্শন করা উচিত!—প্রেরিত ৫:৪১, ৪২.