আজ ঈশ্বরের অনুকম্পা অনুকরণ করুন
“আইসুন আমরা যিহোবার হস্তে পড়ি, কেননা তঁহার অনুকম্পা প্রচুর।”—২ শমূয়েল ২৪:১৪, (NW).
১. দায়ূদ ঈশ্বরের অনুকম্পা সম্বন্ধে কিরূপ অনুভব করেন, এবং কেন?
রাজা দায়ূদ অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন যে যিহোবা মনুষ্যদের থেকে বেশী অনুকম্পা দেখান। এই বিষয় দৃঢ়প্র্যতয় হয়ে যে ঈশ্বরের পথ, বা তার পথসকল, সব থেকে ভাল, দায়ূদ ইচ্ছা রাখেন সেই পথ শেখার ও সেই পথে গমন করার। (১ বংশাবলি ২১:১৩; গীতসংহিতা ২৫:৪, ৫) আপনি কি দায়ূদের মত অনুভব করেন?
২. গুরুতর পাপের সাথে কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে সেই সম্বন্ধে মথি ১৮:১৫-১৭ পদে যীশু আমাদের কি বলেন?
২ বাইবেল আমাদের সাহায্য করে ঈশ্বরের চিন্তায় গভীর ভাবে ভাবতে, এমন কি সেই বিষয়েও যখন কেউ আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করে থাকে। যীশু তার প্রেরিতদের বলেন, যারা পরে খ্রীষ্টীয় কাজকর্ম্মের তত্ত্বাবধায়ক হবেন: “যদি তোমার ভ্রাতা তোমার নিকটে কোন অপরাধ করে, তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে।” এখানে যে পাপের কথা বলা হয়েছে তা কোন ব্যক্তিগত ভুল বোঝাবুঝি নয় কিন্তু গুরুতর পাপ, যেমন ঠকানো বা মিথ্যা রটনা। যীশু বলেন যে এইরূপ পদক্ষেপ যদি পরিস্থিতির সমাধান না করে এবং যদি সাক্ষীরা থাকে, তাহলে যার বিপক্ষে পাপ করা হয়েছে সে তা প্রমাণ করার জন্য তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারে। ইহাই কি শেষ ধাপ? না। “আর যদি সে [পাপী] তাহাদের কথা অমান্য করে, মণ্ডলীকে বল; আর যদি মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক।”—মথি ১৮:১৫-১৭.
৩. যীশু কি বলতে চান যখন তিনি বলেন যে একজন অপরিবর্ত্তিত দোষীকে “পরজাতীয় ও করগ্রাহীর” মত দেখতে?
৩ যিহুদী হিসাবে, প্রেরিতরা জানতেন যে একজন ব্যক্তিকে “পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য” দেখার অর্থ কি। যিহুদীরা যারা অন্য জাতির লোক তাদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখত না এবং তারা সেই যিহুদীদের অবজ্ঞা করত যারা রোমীয়দের জন্য কর গ্রহণ করত।a (যোহন ৪:৯; প্রেরিত ১০:২৮) সেই কারণে, যীশু এখানে তার শিষ্যদের উপদেশ দিচ্ছেন যে যদি মণ্ডলী কোন পাপীকে প্রত্যাখ্যান করে, তবে তাদের তার সাথে মেলামেশা করা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু যীশু, যে মাঝে, মাঝে, করগ্রাহীদের সাথে সময় ব্যায় করেছেন তার আমরা কি করে ব্যাখ্যা দেব?
৪. যীশু যে কথা মথি ১৮:১৭ পদে বলেন, তা মনে রেখে কেন তিনি কিছু পাপী ও করগ্রাহীদের সংস্পর্শে আসেন?
৪ লূক ১৫:১ পদ বলে: “আর করগ্রাহী ও পাপীরা সকলে তাঁহার বাক্য শুনিবার জন্য তাহার নিকটে আসিতেছিল।” সব করগ্রাহী ও পাপীরা যে তাহার কাছে এসেছিল তাহা নয়, কিন্তু “সকলে” বলতে অনেক এখানে বোঝাচ্ছে। (তুলনা করুন লূক ৪:৪০) এরা কারা? তারা যারা আগ্রহী ছিলেন তাদের পাপের ক্ষমা পেতে। এইরূপ কিছু ব্যক্তিরা এর আগে যোহন বাপ্তাইজকের মনপরিবর্ত্তনের বার্ত্তায় সাড়া দেন। (লূক ৩:১২; ৭:২৯) তাই যখন অন্যরা যীশুর কাছে আসে, তাদের কাছে প্রচার তার যে উপদেশ মথি ১৮:১৭ পদে তাকে খন্ডন করে না। লক্ষ্য করুন “অনেক করগ্রাহীরা ও পাপীরা তারা [যীশুর কথা শুনেছিল] এবং তার পশ্চাৎ চলিতে লাগিল।” (মার্ক ২:১৫, NW.) ইহারা সেই লোক ছিলেন না যারা তাদের খারাপ কাজের পথে চলতে চাইছিলেন, কোন সাহায্য নেওয়া উপেক্ষা করে। বরং, তারা যীশুর বার্ত্তা শুনেছিলেন ও তাহা তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। যদিও তারা তখনও পাপ করছিলেন, কিন্তু তারা চেষ্টা করছিলেন পরিবর্ত্তন করতে, “সেই উত্তম মেষপালক” তাদের কাছে প্রচার করার মাধ্যমে তার পিতার অনুকম্পা অনুকরণ করছিলেন।—যোহন ১০:১৪.
ক্ষমা করা, খ্রীষ্টীয় কর্ত্তব্য
৫. ঈশ্বর ক্ষমা সম্বন্ধে কি দৃষ্টিকোণ রাখেন?
৫ আমাদের কাছে আমাদের পিতার উষ্ণ আশা আছে যে তিনি ক্ষমা করতে ইচ্ছুক: “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্ম্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্ম্মিকতা হইতে শুচি করিবেন।” “হে আমার বৎসেরা, তোমাদিগকে এই সকল লিখিতেছি, যেন তোমরা পাপ না কর। আর যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট।” (১ যোহন ১:৯; ২:১) একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তির জন্য কি ক্ষমা পাওয়া সম্ভব?
৬. কি ভাবে একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে আবার ফিরিয়ে নেওয়া যেতে পারে?
৬ হাঁ। যখন কাউকে সমাজচ্যুত করা হয় তার অনুতাপহীন পাপের জন্য, প্রাচীণরা যারা মণ্ডলীকে প্রতিনিধিত্ব করেন তারা তাকে বুঝিয়ে দেন যে পরিবর্ত্তন করলে ঈশ্বরের ক্ষমা পাওয়া সম্ভব। সে সভায় যোগ দিতে পারে কিংডম হলে, যেখানে সে বাইবেলের যে উপদেশ তা শুনতে পারে যা তাকে হয়ত মন পরিবর্ত্তনে সাহায্য করবে। (তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ১৪:২৩-২৫) যথাসময় হয়ত সে ধীরে ধীরে মণ্ডলীতে ফিরৎ আসার জন্য চেষ্টা করতে পারে। প্রাচীণরা যখন তার সাথে দেখা করেন, তারা নির্ণয় করার চেষ্টা করেন যে সে তার পাপের কাজ ত্যাগ করেছেন কিনা। (মথি ১৮:১৮) যদি তাই হয়, তবে তাকে ফিরিয়ে নেওয়া যেতে পারে, ২ করিন্থীয় ২:৫-৮ পদের সাথে মিল রেখে। যদি সে অনেক বৎসর যাবৎ সমাজচ্যুত অবস্থায় আছে, তবে তাকে উন্নতি করার জন্য সুপরিকল্পিত চেষ্টা করতে হবে। তারপর হয়ত তার প্রয়োজন হবে অনেক সাহায্যের যেন সে তার বাইবেলের যে জ্ঞান এবং উপলব্ধি আছে তাহা আরও বৃদ্ধি করতে পারে যাতে সে একজন আত্মিক পরিপক্ক খ্রীষ্টান হয়ে উঠতে পারে।
যিহোবার কাছে ফিরে আসা
৭, ৮. ঈশ্বর তার বন্দিত্বে থাকা লোকদের সম্বন্ধে কি উদাহরণ স্থাপন করেন?
৭ কিন্তু প্রাচীণরা কি নিজেরা কোন ধাপ নিতে পারে সমাজচ্যুত ব্যক্তির কাছে যাবার জন্য? হাঁ। বাইবেল দেখায় যে অনুকম্পা কেবল শাস্তি না দিয়ে দেখান হয় না কিন্তু প্রায়ই সঠিক কাজ করার মাধ্যমে দেখান হয়। এই ব্যাপারে যিহোবার উদাহরণ আছে। তার অবিশ্বস্ত লোকদের তিনি বন্দিত্ত্বে পাঠাবার আগে, তিনি ভাববাণীমূলক ভাবে তাদের ফিরে আসার আশা রাখেন: “হে যাকোব, হে ইস্রায়েল, তুমি এই সকল স্মরণ কর, কেননা তুমি আমার দাশ, . . . আমি তোমার অধর্ম্ম সকল কুজ্ঝটিকার ন্যায়, তোমার পাপ সকল মেঘের ন্যায় ঘুচাইয়া ফেলিয়াছি; তুমি আমার প্রতি ফির, কেননা আমি তোমাকে মুক্ত করিয়াছি।”—যিশাইয় ৪৪:২১, ২২.
৮ তারপর, যখন তারা বন্দীত্ত্বে ছিল, যিহোবা আরও পদক্ষেপ নেন, তিনি বাস্তব ভিত্তিক ভাবে কাজ করেন। তিনি তাঁর ভাববাদীদের পাঠান, যারা ছিল তাঁর প্রতিনিধি, যাতে ইস্রায়েলকে আমন্ত্রণ করেন ‘তাঁকে খুঁজতে ও তাঁকে পেতে।’ (যিরমিয় ২৯:১, ১০-১৪) যিহিষ্কেল ৩৪:১৬ পদে তিনি নিজেকে এক মেষপালকের সাথে তুলনা করেন এবং ইস্রায়েল জাতিকে হারানো মেষের সাথে: “আমি হারানো মেষের অন্বেষণ করিব, দূরীকৃতকে ফিরাইয়া আনিব।” যিরমিয় ৩১:১০ পদে, যিহোবা নিজেকে কল্পিতরূপে ইস্রায়েলের পালক ভাবেন। না, তিনি নিজেকে সেইরূপ পালকরূপে ভাবেন না যিনি অপেক্ষা করে আছেন কখন তাঁর মেষ ফিরে আসবে তাঁর কাছে, বরং, তিনি নিজেকে সেইরূপ মেষপালক দেখান যিনি তাঁর হারিয়ে যাওয়া মেষেদের খোঁজ করেন। লক্ষ্য করুন যে যদিও লোকেরা সাধারণভাবে মনপরিবর্ত্তনকারী ছিল না এবং তাদের বন্দীত্ত্বে পাঠাতে হয়, ঈশ্বর পদক্ষেপ নেন যেন তারা ফিরে আসে। আর মালাখী ৩:৬ পদের সাথে মিল রেখে, ঈশ্বর তাঁর যে পথ তাহা পরিবর্ত্তন করবেন না খ্রীষ্টীয় ব্যবস্থায়।
৯. কি ভাবে ঈশ্বরের এই উদাহরণ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে অনুকরণ করা হয়?
৯ ইহা কি দেখায় না যে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে তাদের প্রতি যাদের সমাজচ্যুত করা হয়েছিল কিন্তু যারা এখন হয়ত তাদের মন পরিবর্ত্তন করেছেন? মনে রাখবেন যে প্রেরিত পৌল তিনি পরিচালনা দেন যেন সেই মন্দ ব্যক্তিকে করিন্থীয় মণ্ডলী থেকে দূরে রাখা হয়। কিন্তু পরে তিনি মণ্ডলীকে তার প্রতি প্রেম দেখাতে বলেন কারণ সে মন পরিবর্ত্তন করেছে সেই কারণে, যা পরিচালনা করে তাকে আবার মণ্ডলীতে ফিরিয়ে নিতে।—১ করিন্থীয় ৫:৯-১৩; ২ করিন্থীয় ২:৫-১১.
১০. (ক) কি মনোভাব আমাদের পরিচালিত করবে চেষ্টা করতে যাতে আমরা কোন সমাজচ্যুত ব্যক্তিদের সাথে দেখা করি? (খ) কেন যারা সেই খ্রীষ্টানের আত্মিয় তারা এই যোগাযোগের ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ নেবে না?
১০ যে এনসাক্লোপিডিয়া প্রথমে উদ্ধৃত করা হয়েছিল তাহা বলে: ‘প্রধান উদ্দেশ্য সমাজচ্যুত করার হল সেই দলের যে মান আছে তাকে রক্ষা করা: “অল্প তাড়ী সূজীর সমস্ত তাল তাড়ীময় করিয়া ফেলে।” (১ করিন্থীয় ৫:৬) এই বিষয়টি শাস্ত্র ও তার বাইরে অন্যান্য লেখায় পরিষ্কার, কিন্তু বহিষ্কারের পরেও সেই ব্যক্তির প্রতি চিন্তা, ছিল ভিত্তি পৌলের অনুরোধের ২ করিন্থীয় ২:৭-১০ পদে।’ (ইটালিকস আমাদের।) সেই কারণে, আজও এইরূপ চিন্তা মেষের পালকদের দেখান যুক্তিযুক্ত। (প্রেরিত ২০:২৮; ১ পিতর ৫:২) পূর্বের বন্ধু ও আত্মিয়রা হয়ত চাইবেন যে সমাজচ্যুত ব্যক্তিরা যেন ফিরে আসেন; কিন্তু আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে ১ করিন্থীয় ৫:১১ পদে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে সেইটিকে, তারা একজন ব্যক্তি যাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তার সাথে মেলামেশা করবে না।b তারা এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া মনোনীত প্রাচীণদের কাছে ছেড়ে দেয় যাতে তারা দেখতে পারে যে এইরূপ ব্যক্তি ফিরে আসতে আগ্রহী কিনা।
১১, ১২. কি ধরণের বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সাথে প্রাচীণরাও যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না, কোন ধরণের ব্যক্তিদের তারা পরিদর্শন করবেন?
১১ কিছু ব্যক্তিদের যেমন ধর্ম্মভ্রষ্টদের ক্ষেত্রে যাদের বহিস্কার করা হয়েছে আমরা লক্ষ্য করি যে প্রাচীনদেরও তাদের প্রতি পদক্ষেপ নেওয়া ফিরিয়ে আনার জন্য ঠিক হবে না, তারা হল ‘যারা মিথ্যা শিক্ষা দেয় এবং নিজেদের পশ্চাৎ লোককে টানতে চায়।’ এরা হল ‘ভাক্ত শিক্ষক যারা ধ্বংসকারী শিক্ষা নিয়ে আসতে চায় এবং মণ্ডলীকে নিজের কাজে লাগাতে চায় কৃত্রিম কথা বার্ত্তার দ্বারা।’ (প্রেরিত ২০:৩০; ২ পিতর ২:১, ৩) বাইবেল সেই ধরণের লোকদের খুঁজতে কোন ভিত্তি দেয় না যারা বিবাদে রত থাকতে ভালবাসে ও সক্রিয়ভাবে অন্যায় কাজকে উৎসাহিত করে।—২ থিষলনীকীয় ২:৩; ১ তীমথিয় ৪:১; ২ যোহন ৯-১১; যিহুদা ৪, ১১.
১২ যাহাহোক, অনেকে এইরকম নয়। অনেকে হয়ত সেই ভুল কাজ ত্যাগ করেছে যে জন্য তাকে সমাজচ্যুত করা হয়েছিল। অন্যরা হয়ত তামাক ব্যবহার করছিল, অথবা হয়ত বেশী মাত্রায় পান করত, কিন্তু সে এখন অন্যদের কোন ভুল কাজ করতে পরিচালিত করছে না। আপনার মনে থাকতে পারে যে বন্দিদশাতে ইস্রায়েলিয়রা ঈশ্বরের প্রতি ফেরার পূর্বে, তিনি তাদের কাছে তাঁর প্রতিনিধিদের পাঠান তাঁর কাছে ফিরে আসার জন্য। পৌল অথবা অন্য প্রাচীণরা করিন্থীয় মণ্ডলীতে সেই সমাজচ্যুত ব্যক্তির বিষয় খোঁজ নিয়েছিল কিনা, সেই সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের কিছু বলে না। যখন সেই ব্যক্তি তার অনৈতিক কাজ ত্যাগ করে, পৌল মণ্ডলীকে পরিচালনা করে তাকে ফিরিয়ে নিতে।
১৩, ১৪. (ক) কি দেখায় কোন সমাজচ্যুত ব্যক্তিরা এই অনুকম্পা যুক্ত প্রচেষ্টায় সাড়া দেবে? (খ) কি করে প্রাচীনদের গোষ্ঠি এই যোগাযোগের আয়োজন করতে পারেন?
১৩ বর্ত্তমান সময় এমন ঘটনা হয়েছে যে ক্ষেত্রে একজন প্রাচীণ এক সমাজচ্যুত ব্যক্তির সাথে দেখা করেন।c যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, পালক সংক্ষেপে কি ধাপ নেওয়া প্রয়োজন তাহা বলে দেবেন। অনেক ব্যক্তিরা এইরূপ মন পরিবর্ত্তন করে আবার ফিরে এসেছে। এই আনন্দ দায়ক ঘটনা প্রমাণ করে যে অনেকে যারা সমাজচ্যুত বা নিজেদের আলাদা করে রেখেছে মেলামেশা থেকে তারা হয়ত এইরূপ অনুকম্পাযুক্ত আহ্বান সাড়া দেবে যা পালকদের মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু কি করে এই বিষয়টিকে প্রাচীণরা দেখবেন? বৎসরে একবার প্রাচীণরা আলোচনা করে দেখবেন, যে তাদের এলাকায় এমন কেউ আছেন কিনা।d প্রাচীণরা তাদের উপর দৃষ্টি দেবেন যারা এক বৎসরের উপরে বহিষ্কৃত হয়েছেন। যদি পরিস্থিতি অনুসারে, তাহা উপযুক্ত মনে হয়, তারা দুইজন প্রাচীণকে মনোনীত করবেন (বিষেশ করে যারা সেই ঘটনার সাথে পরিচিত) যাতে তারা সেই ব্যক্তিকে পরিদর্শন করে। তাদের কোন পরিদর্শন করা হবে না যারা সমস্যা সৃষ্টিকারী, বা যাদের মনোভাব সঠিক নয় বা যারা জানিয়ে দিয়েছে যে তারা কোন সাহায্য চায় না।—রোমীয় ১৬:১৭, ১৮; ১ তীমথিয় ১:২০; ২ তীমথিয় ২:১৬-১৮.
১৪ দুইজন প্রাচীণ টেলিফোন করবেন জিজ্ঞাসা করার জন্য যাতে তারা তাদের পরিদর্শন করতে পারেন, বা তারা হয়ত তাদের সুবিধামত সময় যেতে পারেন। সাক্ষাত কালে, তাদের প্রয়োজন নেই খুব দৃঢ় মনোভাব দেখানোর বা একেবারে শিথিল মনোভাব রাখার কিন্তু তারা উষ্ণতার মনোভাব দেখাবে ও তাদের অনুকম্পার সাথে যে চিন্তা তাহা প্রদর্শন করবে। বিগত ঘটনা আলোচনা না করে, তারা সেই বাইবেলের পদগুলি আলোচনা করতে পারে যেমন যিশাইয় ১:১৮ এবং ৫৫:৬, ৭ এবং যাকোব ৫:২০। যদি সেই ব্যক্তি ঈশ্বরের যে পাল, তাতে ফিরে আসতে চায়, তাদের খুব দয়ার সাথে বুঝিয়ে দিতে হবে কি ধাপ তাদের নেওয়া প্রয়োজন, যেমন বাইবেল পড়া এবং ওয়াচটাওয়ার সমিতি দ্বারা প্রকাশিত সাহিত্যাদি পড়া এবং সভায় যোগ দেওয়া কিংডম হলে।
১৫. যে প্রাচীণগণ এই যোগাযোগ করছেন তাদের কি স্মরণে রাখতে হবে?
১৫ প্রাচীণদের নির্ণয় করতে হবে যে তারা কোন অনুশোচনা লক্ষ্য করতে পারছে কিনা এবং তাদের আবার ফিরে যাওয়া ঠিক হবে কিনা। তাদের অবশ্য মনে রাখা উচিত যে কিছু সমাজচ্যুত ব্যক্তিরা আছে যাদের ‘পশ্চাতাপ করানো সম্ভব নয়।’ (ইব্রীয় ৬:৪-৬; ২ পিতর ২:২০-২২) পরিদর্শনের পর, সেই দুইজন মণ্ডলীর যে সার্ভিস কমিটি আছে তাদের মৌখিক ভাবে এই বিষয় জানাবে। তারা, আবার, এই বিষয় পরবর্ত্তি সভায় প্রাচীণদের গোষ্ঠিকে জানাবে। প্রাচীণদের যে প্রেমপূর্ণ অনুকম্পা তা ঈশ্বরের যে মনোভাব তা প্রদর্শন করে: “‘আমার কাছে ফিরিয়া আইস, আমিও তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব,’ ইহা বাহিনীগণের যিহোবা কহেন।”—মালাখি ৩:৭, NW.
অনুকম্পা যুক্ত অন্য সাহায্য
১৬, ১৭. যে ব্যক্তি সমাজচ্যুত হয়েছে তার পরিবারের লোকদের আমরা কি ভাবে দেখব?
১৬ আমরা যারা অধ্যক্ষ নই এবং যারা সমাজচ্যুতদের প্রতি এইরূপ পদক্ষেপ নেব না তাদের সম্বন্ধে কি? আমরা এই ব্যবস্থার সাথে সমঞ্জস্য রেখে কি করতে পারি যা দেখাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করছি?
১৭ যতক্ষণ অবধি একজন যে সমাজচ্যুত বা নিজেকে আলাদা করে রেখেছে, তখন পর্য্যন্ত আমরা সেই আদেশ পালন করব: “ভ্রাতা নামে আখ্যাত কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারী কি লোভী কি প্রতিমাপূজক কি কটুভাষী কি মাতাল কি পরধনগ্রাহী হয়, তবে তাহার সংসর্গে থাকিতে নাই, এমন ব্যক্তির সহিত আহার করিতেও নাই।” (১ করিন্থীয় ৫:১১) কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি সমাজচ্যুত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি প্রযোজ্য নয় যারা তার সাথে থাকে। পুরাতন দিনের যিহুদীরা করগ্রাহীদের এত ঘৃণা করত যে তাদের ঘৃণা তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিও প্রসারিত ছিল। যীশু এই দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেননি। তিনি বলেন যে পাপী সাহায্য নিতে ইচ্ছুক নয় “সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক”; তিনি বলেননি যে খ্রীষ্টীয় তার যে পরিবার আছে তাদের সাথে সেইভাবে ব্যবহার করতে।—মথি ১৮:১৭.
১৮, ১৯. কতগুলি কি উপায়ে আমরা যাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তার বিশ্বস্ত আত্মিয়দের প্রতি আমাদের খ্রীষ্টীয়তত্ব প্রদর্শন করতে পারি?
১৮ যারা বিশ্বস্ত সদস্য আছে পরিবারের আমাদের অবশ্যই তাদের সাহায্য করা দরকার। তারা হয়ত অনেক কষ্ট ভোগ করছে ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সমাজচ্যুত ব্যক্তির সাথে থেকে যে তাদের আত্মিক প্রচেষ্টা তাতে তাদের নিরুৎসাহ করছে। সে হয়ত চায়না যে কোন খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি তাদের যে গৃহ সেখানে আসে; অথবা যখন তারা আসেন বিশ্বস্ত পরিবারের সদস্যদের দেখতে তখন হয়ত সে দূরে থাকার যে ভদ্রতা তাহা দেখায় না। সে হয়ত তার পরিবারের যে প্রয়াস সব সভায় ও অধিবেশনে যাবার তাতেও বাধা সৃষ্টি করে। (তুলনা করুন মথি ২৩:১৩) এইরূপ খ্রীষ্টানরা যারা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তারা সত্যই আমাদের অনুকম্পা প্রার্থী।
১৯ একভাবে আমরা তাদের সহানুভূতি দেখাতে পারি তাহা হল ‘তাদের সাথে কোমলভাবে কথা বলার দ্বারা’ এবং তাদের সাথে উৎসাহজনক কথাবার্ত্তা বলার দ্বারা। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) সভার আগে ও পরে, প্রচারে, অথবা অন্য সময় যখন আমরা তাদের সাথে একসাথে থাকি আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি। আমাদের সমাজচ্যুত হওয়া সম্বন্ধে কথা না বলে অন্য উৎসাহজনক কথাবার্ত্তা বলা প্রয়োজন। (হিতোপদেশ ২৫:১১; কলসীয় ১:২-৪) যদিও প্রাচীণরা পরিবারের সদস্যদের পালন করবেন, আমরাও হয়ত তাদের পরিদর্শন করতে পারি সেই সমাজচ্যুত ব্যক্তির সাথে কোন আদানপ্রদান না রেখে। যদি আমরা যখন তাদের পরিদর্শন করি বা টেলিফোন করি তখন সেই সমাজচ্যুত ব্যক্তি সাড়া দেয় তাহলে আমরা তাকে বলতে পারি সেই ব্যক্তির কথা যার সাথে আমরা কথা বলতে চাই। অনেক সময় হয়ত সেই পরিবারের সদস্যদের আমাদের গৃহে আমন্ত্রণ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। বিষয়টি হল: তারা—বয়সে কম অথবা বয়স্ক—তারা আমাদের সহদাস, ঈশ্বরের মণ্ডলীর প্রিয় সদস্য, তাদের আমরা আলাদা করতে চাই না।—গীতসংহিতা ১০:১৪.
২০, ২১. যখন একজনকে আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয় তখন তার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা দরকার?
২০ আরও এক ক্ষেত্র খুলে যায় অনুকম্পা দেখাবার যখন একজন বহিষ্কৃত ব্যক্তি আবার ফিরে আসে। যীশুর যে দৃষ্টান্ত তাহা দেখায় যে কি আনন্দই না স্বর্গে হয় যখন ‘একজন পাপী মন ফেরায়।’ (লূক ১৫:৭, ১০) পৌল করিন্থীয়দের সেই ব্যক্তির সম্বন্ধে লেখেন যাকে সমাজচ্যুত করা হয়েছিল: “অতএব তোমরা বরং তাহাকে ক্ষমা করিলে ও সান্ত্বনা করিলে ভাল হয়, পাছে অতিরিক্ত মনোদুঃখে তাদৃশ ব্যক্তি কবলিত হয়। এ কারণ বিনতি করি, তোমরা তাহার প্রতি প্রেম স্থির কর।” (২ করিন্থীয় ২:৭, ৮) আসুন আমরা এই উপদেশ প্রেমের সাথে ব্যবহার করি যে দিনগুলি ও সপ্তাহগুলি আসে একজন সংগঠনে ফিরে আসার পর।
২১ যীশু তার দৃষ্টান্তে সেই অপব্যয়ী পুত্রের একটি বিপদের কথা তুলে ধরেন যা আমরা এড়াতে চাইব। বড় ভাই সেই অপব্যয়ী পুত্রের ফিরে আসাতে আনন্দ করেনি কিন্তু ক্রুদ্ধ হয়। আমরা যেন সেই রকম না হই পূর্বের কোন ভুলের জন্য মনে আক্ষেপ রাখা বা কাউকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ঈর্ষা করা। কিন্তু, আমরা সেই পিতার মত হব, যিনি যিহোবার মনোভাব দেখান। সেই পিতা আনন্দ করেন যে তার পুত্র, যে হারিয়ে গিয়েছিল বা মৃতবৎ হয়েছিল, তাকে আবার পাওয়া গেছে, অথবা সে আবার জীবনে এসেছে। (লূক ১৫:২৫-৩২) তাই আমরা সেই ফিরে আসা ভাইয়ের সাথে, খোলাখুলিভাবে কথা বলব ও তাকে উৎসাহ দেব। হাঁ, আমরা প্রদর্শন করব যে আমরা অনুকম্পা দেখাচ্ছি, যেমন আমাদের ক্ষমাশীল ও অনুকম্পার পিতা করে থাকেন।—মথি ৫:৭.
২২. যিহোবাকে অনুকরণ করার সাথে কি জড়িত আছে?
২২ এই সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন নেই যে আমরা যদি আমাদের ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে চাই, আমাদের অনুকম্পা দেখানো উচিৎ তার উপদেশের সাথে ও তার ন্যায়বিচারের সাথে মিল রেখে। গীতরচক এইভাবে বর্ণনা করেন তার পথ সকল: “যিহোবা কৃপাময় ও স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্, যিহোবা সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে।” (গীতসংহিতা ১৪৫:৮, ৯) কি উত্তম উদাহরণ যা খ্রীষ্টানেরা অনুকরণ করতে পারে! (w91 4/15)
[পাদটীকাগুলো]
a “করগ্রাহীদের প্যালেষ্টাইনের অধিবাসীরা অনেক কারণের জন্য ঘৃণা করতেন: (১) তারা বিদেশী শক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করত যারা দেশ দখল করে রেখেছিল, তাই পরোক্ষভাবে তারা এই দখলের পক্ষে ছিল; (২) তারা খুব অসৎ ছিল, এবং তাদের নিজেদের লোকেদের ঠকিয়ে ধনবান হয়েছিল; এবং (৩) তাদের কাজের জন্য তাদের নিয়মিতরূপে পরজাতিয়দের সংস্পর্শে থাকতে হত, তা তাদের নিয়মের দিক দিয়ে অশুদ্ধ করেছিল। তাদের প্রতি ঘৃণা ন[তুন] নি[য়মে] ও রব্বীদের যে বইপত্র আছে উভয়তে পাওয়া যায় . . . রব্বীদের বই অনুসারে করগ্রাহীদের পরিবারকেও এইরূপ ঘৃণা প্রদর্শন করা হবে।—দ্যা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাণ্ডার্ড বাইবেল এনসাইক্লোপিডিয়া।
b যদি খ্রীষ্টীয় পরিবারে কোন সমাজচ্যুত সদস্য থাকে, তাহলে তাকে দৈনন্দিন, যে গৃহের কার্য্যগুলি তার অংশ নিতে দেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যে সে উপস্থিত থাকতে পারে যখন আত্মিক বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয় পরিবারগতভাবে।—দেখুন দ্যা ওয়াচটাওয়ার নভেম্বর ১৫, ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ১৯-২০.
c দেখুন ১৯৯১ সালের যিহোবার সাক্ষীদের ইয়ারবুক, পৃষ্ঠা ৫৩-৪.
d যদি কোন সাক্ষী, তাদের গৃহে-গৃহে প্রচার কার্য্যে বা অন্য কোনভাবে জানতে পারে, যে কোন সমাজচ্যুত ব্যক্তি তাদের এলাকায় আছেন, তাহলে তাদের সেই খবর প্রাচীণদের দেওয়া উচিত।
আপনি কি এই বিষয়গুলি লক্ষ্য করেছেন?
◻ কি ভাবে যিহুদীরা করগ্রাহী ও পাপীদের দেখত, কিন্তু কেন যীশু তাদের কোন কোন ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশা রাখেন?
◻ কি শাস্ত্রীয় ভিত্তি আছে এইরূপ হারিয়ে যাওয়াদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর?
◻ কি করে প্রাচীণদের গোষ্ঠী এই পদক্ষেপ নিতে পারে, এবং কাদের প্রতি?
◻ কি করে আমরা অনুকম্পা দেখাতে পারি যারা ফিরে এসেছে ও সমাজচ্যুতদের পরিবারের প্রতি?
[১৯ পৃষ্ঠার বাক্স]
একজন যে কখন ঈশ্বরের পরিস্কার ও সুখী মণ্ডলীর অংশ ছিল
কিন্তু এখন সমাজচ্যুত অথবা নিজেকে আলাদা করে রেখেছে তার সেই অবস্থায় থাকার দরকার নেই। তার বরং, পশ্চাতাপ করে যোগাযোগ করার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন মণ্ডলীর প্রাচীণদের সাথে। পথ খোলা আছে ফিরে আসার।
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Garo Nalbandian