জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
জুন ১-৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ৪৪-৪৫
“যোষেফ তার ভাইদের ক্ষমা করেন”
প্রহরীদুর্গ ১৫ জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৪-১৫
“আমি কি ঈশ্বরের প্রতিনিধি?”
এরপর তিনি যে-ফাঁদ পেতে রাখেন, সেটার জাল গোটাতে শুরু করেন। তিনি তার ভাইদের ধাওয়া করার জন্য লোক পাঠান। তারা তাদেরকে বন্দি করেন এবং রুপোর বাটি চুরি করার জন্য দোষারোপ করেন। বিন্যামীনের ছালার মুখে যখন সেই বাটি পাওয়া যায়, তখন তাদের সবাইকে যোষেফের কাছে নিয়ে আসা হয়। এখন যোষেফ জানতে পারবেন যে, তার ভাইয়েরা আসলে কী ধরনের ব্যক্তি। যিহূদা তাদের হয়ে কথা বলেন। তিনি ক্ষমা ভিক্ষা চান, এমনকী তারা ১১ জন ভাই-ই মিশরে দাস হবেন বলে কথা দেন। কিন্তু উত্তরে যোষেফ বলেন, কেবল বিন্যামীনই মিশরে দাস হিসেবে থাকবেন আর বাকি সবাই বাড়ি ফিরে যাবেন।—আদিপুস্তক ৪৪:২-১৭.
যিহূদা তখন কাতর হয়ে অনুরোধ জানান। যিহূদা বলেন, “সেইমাত্র তাহার মাতার অবশিষ্ট পুত্ত্র; এবং তাহার পিতা তাহাকে স্নেহ করেন।” সেই কথাগুলো নিশ্চয়ই যোষেফের হৃদয় স্পর্শ করেছিল, কারণ যোষেফ ছিলেন যাকোবের প্রিয় স্ত্রী রাহেলের বড়ো সন্তান, যিনি বিন্যামীনকে জন্ম দেওয়ার সময় মারা গিয়েছেন। স্পষ্টতই, তার বাবার মতো যোষেফেরও তার মায়ের কথা এখনও মনে আছে। সম্ভবত এই কারণেই বিন্যামীন যোষেফের খুব আদরের ভাই ছিলেন।—আদিপুস্তক ৩৫:১৮-২০; ৪৪:২০.
যিহূদা মরিয়া হয়ে যোষেফকে অনুরোধ করে চলেন, যাতে তিনি বিন্যামীনকে দাস হিসেবে আটকে না রাখেন। এমনকী বিন্যামীনের পরিবর্তে তিনি নিজে দাস হতে চান। অবশেষে তিনি এভাবে তার করুণ পরিস্থিতির কথা ব্যাখ্যা করেন: “এই যুবকটী আমার সহিত না থাকিলে আমি কি প্রকারে পিতার নিকটে যাইতে পারি? পাছে পিতার যে আপদ ঘটিবে, তাহাই আমাকে দেখিতে হয়।” (আদিপুস্তক ৪৪:১৮-৩৪) এখন যোষেফ বুঝতে পারেন যে, যিহূদা সত্যিই পরিবর্তিত হয়েছেন। তিনি কেবল অনুতাপই দেখাননি কিন্তু সেইসঙ্গে সহানুভূতি, নিঃস্বার্থপর মনোভাব এবং সমবেদনাও দেখান, যা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।
যোষেফ আর তার আবেগ আটকে রাখতে পারছিলেন না। এখন তিনি তা প্রকাশ করতে বাধ্য হন। তার সমস্ত দাসকে বের করে দিয়ে তিনি এত জোরে কাঁদতে শুরু করেন যে, সেই শব্দ ফরৌণের প্রাসাদ থেকেও শোনা যায়। অবশেষে, তিনি ভাইদের কাছে নিজের পরিচয় দেন: “আমি যোষেফ, তোমাদের ভাই।” এই কথা শুনে তার ভাইয়েরা হতবাক হয়ে যান, কিন্তু যোষেফ তাদের জড়িয়ে ধরেন এবং তার প্রতি করা তাদের অপরাধ সদয়ভাবে ক্ষমা করে দেন। (আদিপুস্তক ৪৫:১-১৫) এভাবে তিনি যিহোবার মতো মনোভাব দেখান, যিনি উদারভাবে ক্ষমা করেন। (গীতসংহিতা ৮৬:৫) আমরাও কি তা করি?
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৮১৩, ইংরেজি
পোশাক ছেঁড়া
প্রাচীন কালে যিহূদী ও প্রাচ্যের লোকেরা শোক প্রকাশ করার জন্য নিজেদের পোশাক ছিঁড়ত, বিশেষভাবে তাদের কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর শোনার পর। এটা করা তাদের মধ্যে একটা সাধারণ বিষয় ছিল। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা পুরোপুরিভাবে পোশাক ছিঁড়ে ফেলত, যেটা পরে ব্যবহার করা যাবে না। বেশিরভাগ সময়ে তারা বুক পর্যন্তই পোশাকের অংশটা ছিঁড়ত।
এই প্রচলনের যে-প্রথম উদাহরণ বাইবেলে পাওয়া যায়, সেটা হল যাকোবের জ্যেষ্ঠ পুত্র রূবেণের। তিনি যখন কুয়োর কাছে গিয়ে দেখেন যে, যোষেফকে সেটার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন তিনি তার পোশাক ছেঁড়েন আর বলেন: “যুবকটী নাই, আর আমি!—আমি কোথায় যাই?” পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসেবে নিজের ছোটো ভাইয়ের যত্নের দায়িত্ব তারই ছিল। পরে যখন তার বাবা যাকোব যোষেফের মৃত্যুর মিথ্যা খবর শোনেন, তখন তিনিও নিজের পোশাক ছেঁড়েন আর চট পরে শোক করতে শুরু করেন। (আদি ৩৭:২৯, ৩০, ৩৪) অন্যদিকে, মিশরে যখন যোষেফের সৎভাইয়েরা জানতে পারে যে, বিন্যামীনকে চুরির দায়ে দোষারোপ করা হয়েছে, তখন তারাও নিজেদের পোশাক ছিঁড়ে শোক প্রকাশ করে।—আদি ৪৪:১৩.
প্রহরীদুর্গ ০৪ ৮/১৫ ১৫ অনু. ১৫
অকারণে দ্বেষ করা হয়
১৫ যারা অকারণে আমাদের দ্বেষ করে, তাদের প্রতি তিক্ত না হতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? মনে রাখবেন যে, আমাদের প্রধান বিপক্ষ হচ্ছে শয়তান এবং মন্দ দূতেরা। (ইফিষীয় ৬:১২) যদিও কিছু মানুষ জেনে-শুনে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের তাড়না করে কিন্তু ঈশ্বরের লোকেদের বিরোধিতা করে এমন অনেকেই না জেনে তা করে অথবা অন্যেরা নিজেদের স্বার্থের জন্য তাদের কাজে লাগায়। (দানিয়েল ৬:৪-১৬; ১ তীমথিয় ১:১২, ১৩) যিহোবা চান যাতে ‘সমুদয় মনুষ্যের পরিত্রাণ পাইবার, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারিবার’ সুযোগ থাকে। (১ তীমথিয় ২:৪) বস্তুত, কিছু প্রাক্তন বিরোধী আমাদের নির্দোষ আচার-আচরণ দেখার ফলে এখন আমাদের খ্রিস্টান ভাই হয়েছে। (১ পিতর ২:১২) এ ছাড়া, যাকোবের ছেলে যোষেফের উদাহরণ থেকে আমরা শিখতে পারি। যদিও যোষেফ তার সৎ ভাইদের জন্য অনেক কষ্টভোগ করেছিলেন কিন্তু তিনি তাদের প্রতি বিদ্বেষ পুষে রাখেননি। কেন রাখেননি? কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই বিষয়ে যিহোবার হাত ছিল এবং তিনি তাঁর উদ্দেশ্যগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য ঘটনাগুলোকে কৌশলে কাজে লাগিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ৪৫:৪-৮) একইভাবে, আমাদের উপর আসা যেকোনো অন্যায্য কষ্টভোগকে যিহোবা তাঁর নামের গৌরবার্থে ব্যবহার করতে পারেন।—১ পিতর ৪:১৬.
জুন ৮-১৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ৪৬-৪৭
“দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি”
প্রহরীদুর্গ ৮৭ ৫/১ ১৫ অনু. ২, ইংরেজি
দুর্ভিক্ষের সময় জীবন রক্ষা করা
২ শস্যবাহুল্যের সাত বছর শেষ হয় আর দুর্ভিক্ষ শুরু হয়, ঠিক যেমন যিহোবা বলেছিলেন আর শুধুমাত্র মিশরেই নয়, কিন্তু “সমস্ত দেশেই দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল।” তাই, যখন মিশরের ক্ষুধার্ত লোকেরা ভক্ষ্য বা খাবারের জন্য কাঁদতে কাঁদতে ফরৌণের কাছে পৌঁছায়, তখন তিনি তাদের বলেন: “তোমরা যোষেফের নিকটে যাও; তিনি তোমাদিগকে যাহা বলেন, তাহাই কর।” যোষেফ তাদের টাকাপয়সা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মিশরের লোকদের কাছে শস্য বিক্রি করেন। তারপর তিনি টাকার বদলে তাদের পশুপাল নিয়ে খাবার দিতে লাগলেন। অবশেষে, তারা যোষেফের কাছে এসে বলে: “আপনি ভক্ষ্য দিয়া আমাদিগকে ও আমাদের ভূমি ক্রয় করিয়া লউন; আমরা আপন আপন ভূমির সহিত ফরৌণের দাস হইব।”—আদিপুস্তক ৪১:৫৩-৫৭; ৪৭:১৩-২০.
ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! ২৩৪-২৩৫ অনু. ১১-১২, ইংরেজি
এই রাজ্য পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করে
১১ শস্যবাহুল্য। এই জগতের লোকেরা আধ্যাত্মিক দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছে। বাইবেল এই সতর্কবাণী দেয়: “প্রভু সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন দিন আসিতেছে, যে দিনে আমি এই দেশে দুর্ভিক্ষ প্রেরণ করিব; তাহা অন্নের দুর্ভিক্ষ কিম্বা জলের পিপাসা নয়, কিন্তু সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণের।” (আমোষ ৮:১১) ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজারাও কি দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছে? যিহোবা তাঁর লোক ও তাঁর শত্রুদের মধ্যে থাকা পার্থক্য সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমার দাসেরা ভোজন করিবে, কিন্তু তোমরা ক্ষুধার্ত্ত থাকিবে; দেখ, আমার দাসেরা পান করিবে, কিন্তু তোমরা তৃষ্ণার্ত্ত থাকিবে; দেখ, আমার দাসেরা আনন্দ করিবে, কিন্তু তোমরা লজ্জিত হইবে।” (যিশা. ৬৫:১৩) আপনি কি এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হতে দেখেছেন?
১২ ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে মজবুত করার ক্ষেত্রে এখন আমাদের জন্য একাধিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা এমন একটা নদীর মতো, যেটা সবসময় বাড়তে ও আরও গভীর হতে থাকে। আমাদের কাছে বিভিন্ন বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা, রেকর্ডিং, ভিডিও, সভা, সম্মেলন আর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিষয়বস্তুর এমন শস্যবাহুল্য রয়েছে, যেগুলো এই জগতের আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্ত লোকেদের কাছে নেই। (যিহি. ৪৭:১-১২; যোয়েল ৩:১৮) আপনি কি দৈনন্দিন জীবনে শস্যবাহুল্যের বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখে রোমাঞ্চিত হন না? আপনি কি নিয়মিতভাবে যিহোবার মেজ থেকে খাবার উপভোগ করার চেষ্টা করেন?
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ২২০ অনু. ১, ইংরেজি
মনোভাব ও অঙ্গভঙ্গি
মৃত ব্যক্তির চোখে হস্তার্পণ করা। যিহোবা যাকোবকে বলেন, “যোষেফ তোমার চক্ষে হস্তার্পণ করিবে।” (আদি ৪৬:৪) কেন যিহোবা যাকোবকে এই কথা বলেছিলেন? কারণ সেই সময় যখন কোনো ব্যক্তি মারা যেতেন, তখন তার চোখ বন্ধ করার দায়িত্ব সাধারণত বাড়ির জ্যেষ্ঠ পুত্রের ছিল। এই কথার অর্থ হল, যাকোবের মৃত্যুর পর যোষেফ তার চোখ বন্ধ করবেন। তাই মনে হয়, যিহোবা যাকোবকে ইঙ্গিত দিতে চেয়েছিলেন, জ্যেষ্ঠাধিকার যোষেফেরই পাওয়া উচিত।—১বংশা ৫:২.
nwtsty স্টাডি নোট—প্রেরিত ৭:১৪
মোট ৭৫ জন: স্তিফান যখন উল্লেখ করেছিলেন যে, মিশরে যাকোবের পরিবারের মোট সংখ্যা ৭৫ ছিল, তখন তিনি ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে কোনো নির্দিষ্ট পদ উদ্ধৃতি করেননি। এই সংখ্যাটা ইব্রীয় শাস্ত্রের ম্যাসোরিটিক পাঠ্যাংশে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। আদি ৪৬:২৬ পদ বলে: “যাকোবের কটি হইতে উৎপন্ন যে প্রাণিগণ তাঁহার সঙ্গে মিসরে উপস্থিত হইল, যাকোবের পুত্ত্রবধূরা ছাড়া তাহারা সর্ব্বশুদ্ধ ছেষট্টি প্রাণী।” পদ ২৭ বলে: “মিসরে যোষেফের যে পুত্ত্রেরা জন্মিয়াছিল, তাহারা দুই প্রাণী। যাকোবের পরিজন, যাহারা মিসরে গেল, তাহারা সর্ব্বশুদ্ধ সত্তর প্রাণী।” এই দুটো পদে লোকেদের সংখ্যা দু-রকমভাবে গণনা করা হয়েছে। প্রথমত, ২৬ পদে সম্ভবত শুধুমাত্র যাকোবের বংশধরের সংখ্যা আর দ্বিতীয়ত, ২৭ পদে সেই সমস্ত লোকেদের সংখ্যা, যারা মিশরে বসবাস করতে এসেছিল। যাকোবের বংশধরের সংখ্যা যাত্রা ১:৫ পদে আর দ্বিতীয় ১০:২২ পদেও পাওয়া যায়, যেখানে সংখ্যা “৭০” উল্লেখ করা হয়েছে। স্তিফান সম্ভবত তৃতীয় সংখ্যা “৭৫” উল্লেখ করেন, যেটার মধ্যে যাকোবের যৌথ পরিবারের আরও অন্যান্য সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করে, এই সংখ্যায় যোষেফের দুই ছেলে মনঃশি এবং ইফ্রয়িমের ছেলে ও নাতিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের বিষয়ে আদি ৪৬:২০ পদের সেপ্টুয়াজিন্ট অনুবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার অন্যেরা বলে, এটার মধ্যে যাকোবের ছেলেদের স্ত্রীরা রয়েছে, যাদের সংখ্যা আদি ৪৬:২৬ পদে উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং, আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে, তাদের মোট সংখ্যা সম্ভবত “৭৫” ছিল। প্রথম শতাব্দীতে ইব্রীয় শাস্ত্রের যে-প্রতিলিপিগুলো পাওয়া যেত, হয়তো সেগুলোর উপর ভিত্তি এই সংখ্যাটা উল্লেখ করা হয়েছিল। বহু বছর ধরে পণ্ডিতেরা জানতেন যে, গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট-এর যাত্রা ১:৫ পদ আর আদি ৪৬:২৭ পদে সংখ্যা “৭৫” ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া, ১৯৫০ সালের দিকে যাত্রা ১:৫ পদের ইব্রীয় ভাষায় দুটো ডেড সী স্ক্রোল ফ্র্যাগমেন্ট পাওয়া গিয়েছিল আর সেগুলোতেও সংখ্যা “৭৫” রয়েছে। স্তিফানও সম্ভবত এই প্রাচীন পাঠ্যাংশের উপর ভিত্তি করেই এই সংখ্যা ব্যবহার করেছিলেন। সঠিক ধারণা যা-ই হোক না কেন, তার ব্যবহার করা সংখ্যা গণনা করার এক ভিন্ন পদ্ধতি সম্বন্ধে জানায়।
জুন ১৫-২১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ৪৮-৫০
“বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১২৪৬ অনু. ৮, ইংরেজি
যাকোব
যাকোবের মৃত্যুর কিছু সময় আগে, তিনি তার নাতিদের অর্থাৎ যোষেফের ছেলেদের আশীর্বাদ করেছিলেন এবং যিহোবার নির্দেশনা লাভ করে যোষেফের কনিষ্ঠ পুত্র ইফ্রয়িমকে প্রথমে আশীর্বাদ করেছিলেন, তারপর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মনঃশিকে। আর যোষেফ জ্যেষ্ঠ হওয়ার ফলে উত্তরাধিকারের দ্বিগুণ অংশ পেতেন, তাই যাকোব তাকে এই আশ্বাস দেন, “তোমার ভ্রাতাদের অপেক্ষা এক অংশ তোমাকে বেশী দিলাম; তাহা আমি আপন খড়গ ও ধনুর দ্বারা ইমোরীয়দের হস্ত হইতে লইয়াছি।” (আদি ৪৮:১-২২; ১বংশা ৫:১) যাকোব সেই জমির কথা বলছিলেন না, যেটা তিনি হমোরের ছেলেদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন। তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে, তিনি শিখিমের কাছ থেকে সেই জমি যুদ্ধ করে নয় বরং টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। (আদি ৩৩:১৯, ২০) তাই এটা মনে হয়, যাকোব যোষেফের কাছে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা আসলে এই ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, পরে যাকোবের বংশধর কনান দেশের উপর জয়ী হবে। যাকোব এই ভবিষ্যদ্বাণীর উপর এতটাই বিশ্বাস করেছিলেন যে, তিনি এমনভাবে এই কথাটা বলেন যেন তিনি নিজেই ইতিমধ্যে যুদ্ধ করে কনান দেশের উপর জয়ী হয়েছিলেন। পরে যখন ইস্রায়েলীয়রা কনানে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করে, তখন ইফ্রয়িম ও মনঃশি দুই ভাগ জমি পান। আর এভাবে, যোষেফ জ্যেষ্ঠাধিকার সূত্রে জমির দ্বিগুণ অংশ লাভ করেন।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২০৬ অনু. ১, ইংরেজি
শেষকাল
যাকোব মৃত্যুশয্যায় ভবিষ্যদ্বাণী করেন। যাকোব তার ছেলেদের বলেছিলেন, “তোমরা একত্র হও, উত্তর কালে তোমাদের প্রতি যাহা ঘটিবে, তাহা তোমাদিগকে বলিতেছি।” সেই সময় তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে, “উত্তর কালে” অর্থাৎ ভবিষ্যতে তার কথা পূর্ণ হবে। (আদি ৪৯:১) দু-শো বছরেরও বেশি সময় আগে যিহোবা যাকোবের পিতামহ অব্রামকে (অব্রাহাম) বলেছিলেন, তার সন্তানেরা ৪০০ বছর ধরে তাড়না ভোগ করবে। (আদি ১৫:১৩) তাই এটা বলা যেতে পারে যে, যাকোব যে-সময়ের কথা বলছিলেন, সেই ৪০০ বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা শুরু হবে না। পরে এই ভবিষ্যদ্বাণী আরেক বার “ঈশ্বরের ইস্রায়েলের উপরে” পরিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।—গালা ৬:১৬; রোমীয় ৯:৬.
বয়স্ক ব্যক্তিরা—অল্পবয়স্কদের জন্য এক আশীর্বাদস্বরূপ
১০ বয়স্ক ব্যক্তিরা সহবিশ্বাসীদের উপরও উত্তম প্রভাব ফেলতে পারে। যাকোবের ছেলে যোষেফ তার বৃদ্ধ বয়সে বিশ্বাসের এক সামান্য কাজ সম্পাদন করেছিলেন, যা তার পরে জীবিত লক্ষ লক্ষ সত্য উপাসকের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সেই সময় তার বয়স ছিল ১১০ বছর, যখন তিনি ‘আপন অস্থিসমূহের বিষয়ে আদেশ দিয়াছিলেন’ অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়রা যখন অবশেষে মিশর ত্যাগ করবে, তখন তাদেরকে সঙ্গে করে তার অস্থি নিয়ে যেতে হবে। (ইব্রীয় ১১:২২; আদিপুস্তক ৫০:২৫) সেই আদেশ যোষেফের মৃত্যুর পর, অনেক বছর ধরে চরম দাসত্ব ভোগ করার সময় ইস্রায়েলের জন্য এক আশার আলো হিসেবে কাজ করেছিল, এই নিশ্চয়তা জুগিয়েছিল যে, তারা উদ্ধার লাভ করবে।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ ০৪ ৬/১ ১৫ অনু. ৪-৫
যারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে তারা আশীর্বাদ লাভ করে
৪ প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার আগে, ইস্রায়েলীয় গাদ বংশের সদস্যরা অনুরোধ করেছিল যে তাদের যেন যর্দনের পূর্ব দিকে পশুপালনের স্থানে বসতি করতে অনুমতি দেওয়া হয়। (গণনাপুস্তক ৩২:১-৫) সেখানে থাকার অর্থ হতো গুরুতর প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো মোকাবিলা করা। পশ্চিমের বংশগুলোর যর্দন উপত্যকার সুরক্ষা থাকবে—সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে এক প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৩:১৩-১৭) কিন্তু, যর্দনের পূর্বাঞ্চল সম্বন্ধে জর্জ আ্যডাম স্মিথের লেখা পবিত্র ভূমির ঐতিহাসিক ভূগোল (ইংরেজি) বলে: “[সেগুলো] সবই বিস্তৃত, বৃহৎ আরবীয় মালভূমিতে বলতে গেলে কোনো মধ্যবর্তী আত্মরক্ষামূলক প্রতিবন্ধকতা নেই। ফলে, সেগুলো সবসময়ই লোভী যাযাবরদের আক্রমণের কাছে অরক্ষিত ছিল, যাদের মধ্যে কিছু দল প্রতি বছর চারণভূমির জন্য সেখানে আক্রমণ করত।”
৫ গাদ বংশ কীভাবে এই ধরনের অবিরাম চাপ মোকাবিলা করতে সফল হয়েছিল? কয়েক শতাব্দী আগে, মৃত্যুশয্যায় তাদের পূর্বপুরুষ যাকোব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “গাদকে সৈন্যদল আঘাত করিবে; কিন্তু সে তাহাদের পশ্চাদ্ভাগে আঘাত করিবে।” (আদিপুস্তক ৪৯:১৯) এই কথাগুলোর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে হয়তো হতাশাজনক মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, সেগুলো আসলে গাদীয়দের দ্বারা পালটা আক্রমণ করার এক আদেশের ইঙ্গিত করেছিল। যাকোব তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তারা যদি তা করে, তা হলে আক্রমণকারীদের এক অবমাননাকর উপায়ে অপসারণ করা হবে, গাদীয়রা তাদের পশ্চাদভাগে আঘাত করবে।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ২৮৯ অনু. ২, ইংরেজি
বিন্যামীন
মৃত্যুশয্যায় যাকোব তার প্রিয় পুত্র বিন্যামীনের বিষয়ে বলেছিলেন: “বিন্যামীন বিদারক নেকড়িয়ার তুল্য; প্রাতঃকালে সে শিকার ভক্ষণ করিবে, সন্ধ্যাকালে সে লুট দ্রব্য বণ্টন করিবে।” (আদি ৪৯:২৭) এই ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে, বিন্যামীনের বংশধর যুদ্ধে ক্ষমতাপন্ন হবে আর সেটাই হয়েছিল। তারা দু-হাতে গুলতি ঘোরাতে পারত আর এমনকী “কেশ লক্ষ্যে” গুলতিতে পাথর ভরে ছুড়তে পারত। (বিচার ২০:১৬; ১বংশা ১২:২) বিচারক এহূদও বিন্যামীনের বংশধর ছিলেন, যিনি বাঁ-হাতি ছিলেন এবং রাজা ইগ্লোনকে বধ করেছিলেন। (বিচার ৩:১৫-২১) এখান থেকে এও লক্ষ করা যায় যে, ইস্রায়েল রাজ্যের শাসনের “প্রাতঃকালে” অর্থাৎ শুরুতে বিন্যামীন কূল “ইস্রায়েল-বংশ সকলের মধ্যে ক্ষুদ্রতম” কূল ছিল। তারপরও ইস্রায়েলের প্রথম রাজা সেই কূল থেকেই এসেছিল, যার নাম ছিল শৌল এবং তার বাবার নাম ছিল কীশ। শৌল খুবই সাহসী ছিলেন আর তিনি বহু বার পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। (১শমূ ৯:১৫-১৭, ২১) একইভাবে, ইস্রায়েল জাতির শাসনের “সন্ধ্যাকালে” বিন্যামীন কূলের রানি ইষ্টের ও প্রধানমন্ত্রী মর্দখয় ইস্রায়েলীয়দের পারস্য সাম্রাজ্যে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন।—ইষ্টের ২:৫-৭.
জুন ২২-২৮
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
যাত্রাপুস্তক ১-৩
“আমি যা হতে চাই, তা-ই হব”
যিহোবার মহানামের প্রতি সম্মান দেখান
৪ পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৩:১০-১৫. মোশির বয়স যখন ৮০ বছর, তখন ঈশ্বর তাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “তুমি মিসর হইতে আমার প্রজা ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বাহির করিও।” ফল স্বরূপ, মোশি সম্মান সহকারে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন, যেটার এক গভীর তাৎপর্য ছিল। আসলে, মোশি জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘তোমার নাম কি?’ যেহেতু ঈশ্বরের নাম দীর্ঘসময় ধরে পরিচিত ছিল, তাই মোশির এই প্রশ্নের তাৎপর্য কী ছিল? স্পষ্টতই, তিনি এই নাম যে-ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাঁর সম্বন্ধে আরও জানতে চেয়েছিলেন—এমন বিষয়গুলো, যেগুলো ঈশ্বরের লোকেদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করবে যে, তিনি আসলেই তাদের উদ্ধার করবেন। মোশির উদ্বিগ্নতা যথার্থ ছিল কারণ ইস্রায়েলীয়রা অনেক সময় ধরে দাসত্বের অধীনে ছিল। তাদের হয়তো এই বিষয়ে সন্দেহ ছিল যে, তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করতে পারবেন কি না। সত্যি বলতে কী, কিছু ইস্রায়েলীয় এমনকী মিশরীয় দেবদেবীদের উপাসনা করা বেছে নিয়েছিল!—যিহি. ২০:৭, ৮.
ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! ৪৩, বাক্স, ইংরেজি
ঈশ্বরের নামের অর্থ
ইব্রীয় ভাষার একটা ক্রিয়া পদ অনুযায়ী যিহোবা নামের অর্থ হল “হওয়া।” অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে, এটা ইব্রীয় ক্রিয়া পদটার নিমিত্তবাচক রূপকে বোঝায়। আবার অন্যেরা মনে করে, ঈশ্বরের নামের অর্থ হল “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” তাই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে এই ব্যাখ্যাটা যিহোবার প্রতি একেবারে প্রযোজ্য। তিনি নিখিলবিশ্ব ও সমস্ত বিজ্ঞ প্রাণীদের সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়া, সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এমন কিছু কাজ করে চলেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করছেন।
তাহলে যাত্রাপুস্তক ৩:১৩, ১৪, NW পদে যিহোবা মোশিকে যে-উত্তর দিয়েছিলেন, সেটার অর্থ কী? মোশি যিহোবাকে জিজ্ঞেস করেন: “আমি যখন ইস্রায়েল-সন্তানদের নিকটে গিয়া বলিব, তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তোমাদের নিকটে আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তখন যদি তাহারা জিজ্ঞাসা করে, তাঁহার নাম কি? তবে তাহাদিগকে কি বলিব?” তখন যিহোবা উত্তর দেন: “আমি যা হতে চাই, তা-ই হব।”
লক্ষ করুন, এখানে মোশি যিহোবার নাম জানতে চাননি। কারণ তিনি ও ইস্রায়েলীয়রা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের নাম ভালোভাবে জানত। তিনি চেয়েছিলেন যেন যিহোবা নিজের বিষয়ে এমন কোনো তথ্য জানান, যাতে তাঁর উপর লোকেদের বিশ্বাস আরও মজবুত হয় এবং যিহোবার নামের অর্থও প্রকাশ পায়। তাই, “আমি যা হতে চাই, তা-ই হব,” এটা বলার মাধ্যমে যিহোবা তাঁর ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ দিক সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন, যেটা হল: যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি নিজের উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করার জন্য যা হওয়ার প্রয়োজন, তা-ই হন। উদাহরণ স্বরূপ, মোশি ও ইস্রায়েলীয়দের জন্য তিনি একজন উদ্ধারকর্তা, একজন আইনদাতা ও একজন জোগানদাতা আরও কত কী হয়েছিলেন। সুতরাং, নিজের লোকেদের কাছে নিজের উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করার জন্য যা হওয়ার প্রয়োজন, যিহোবা নিজেই তা-ই হন। কিন্তু যিহোবা নামের অর্থ শুধুমাত্র এটাই নয় যে, তিনি যা হতে চান, তা-ই হন। বরং এর মধ্যে এও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যে, তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য তিনি তাঁর সৃষ্টিকেও যেভাবে চান, সেভাবে ব্যবহার করেন।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
সজাগ হোন! ০৪ ৪/৮ ৬ অনু. ৫, ইংরেজি
সত্যিই কি মোশি নামের কোনো ব্যক্তি ছিলেন?
এই বিষয়টা জেনে আমাদের কি আশ্চর্য হওয়া উচিত যে, মিশরের রাজকন্যা একটি ইব্রীয় সন্তানকে দত্তক নিয়েছিলেন? না, কারণ মিশরীয়দের ধর্মে শেখানো হত যে, স্বর্গে প্রবেশ করার জন্য তাদের এমন ভালো কাজ করা প্রয়োজন। দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে একজন পুরাতত্ত্ববিদ যোয়েস টিলডেস্লি বলেছিলেন: “মিশরে মহিলা ও পুরুষদের সমমর্যাদা দেওয়া হত। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী মহিলাদেরও পুরুষদের মতো একই আইনগত ও অর্থনৈতিক অধিকার দেওয়া হত এবং . . . মহিলারা দত্তক নিতে পারত।” দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে একটা পুরাতন প্যাপিরাসে বলা হয়েছিল, একজন মিশরীয় মহিলা এমনকী তার দাসদেরও দত্তক নিয়েছিলেন। দি আ্যংকার বাইবেল ডিকশনারি অনুসারে, মোশির দেখাশোনা করার জন্য তার মাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এটা বলে: “মেসোপটেমীয় চুক্তি থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে, দত্তক নেওয়ার সময় বাচ্চার দেখাশোনা করার জন্য এই ব্যবস্থা করা হত এবং বেতন দেওয়া হত।”
যাত্রাপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো
৩:১—যিথ্রো কী ধরনের যাজক ছিলেন? কুলপতিদের সময়ে পরিবারের মস্তক তার পরিবারের একজন যাজক হিসেবে সেবা করতেন। যিথ্রো ছিলেন মিদিয়নীয় এক গোষ্ঠীর প্রধান কুলপতি। যেহেতু মিদিয়নীয়রা কটূরার মাধ্যমে অব্রাহামের বংশধর ছিল, তাই তারা সম্ভবত যিহোবার উপাসনা সম্বন্ধে জানত।—আদিপুস্তক ২৫:১, ২.
জুন ২৯–জুলাই ৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
যাত্রাপুস্তক ৪-৫
“আমি তোমার মুখের সহবর্ত্তী হইব”
অজুহাত—এগুলোকে যিহোবা কীভাবে দেখেন?
“আমি যথেষ্ট ভালো নই।” আপনি হয়তো এইরকমটা মনে করতে পারেন যে, সুসমাচারের একজন পরিচারক হওয়ার জন্য আপনি যোগ্য নন। বাইবেলের সময়ে যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত দাস মনে করেছিল যে, যিহোবা তাদেরকে যে-দায়িত্ব প্রদান করেছেন, তা সম্পাদন করার জন্য তারা যথেষ্ট ভালো নয়। উদাহরণ হিসেবে, মোশির কথাই বিবেচনা করুন। তিনি যখন যিহোবার কাছ থেকে একটা দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তখন মোশি বলেছিলেন: “হায় প্রভু! আমি বাক্পটু নহি, ইহার পূর্ব্বেও ছিলাম না, বা এই দাসের সহিত তোমার আলাপ করিবার পরেও নহি; কারণ আমি জড়মুখ ও জড়জিহ্ব।” যদিও যিহোবা মোশিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তবুও মোশি বলেছিলেন: “হে আমার প্রভু, বিনয় করি, যাহার হাতে পাঠাইতে চাও, পাঠাও।” (যাত্রা. ৪:১০-১৩) যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
প্রহরীদুর্গ ১৪ ৪/১৫ ৯ অনু. ৫-৬
আপনি কি “যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে” দেখতে পান?
৫ মিশরে ফিরে আসার আগে, ঈশ্বর মোশিকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক নীতি সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন, যে-নীতিটা মোশি পরবর্তী সময়ে ইয়োব বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছিলেন: “প্রভুর [ঈশ্বরের] ভয়ই প্রজ্ঞা।” (ইয়োব ২৮:২৮) এই ধরনের ভয় অর্জন করার এবং বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য যিহোবা মানুষ এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের মধ্যে এক বৈসাদৃশ্য তুলে ধরেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “মনুষ্যের মুখ কে নির্ম্মাণ করিয়াছে? আর বোবা, বধির, মুক্তচক্ষু বা অন্ধকে কে নির্ম্মাণ করে? আমি সদাপ্রভুই কি করি না?”—যাত্রা. ৪:১১.
৬ শিক্ষাটা কী ছিল? মোশির ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি যিহোবার দ্বারা প্রেরিত, যিনি মোশিকে ফরৌণের কাছে ঈশ্বরের বার্তা প্রকাশ করার জন্য যা-কিছু প্রয়োজন, তা-ই প্রদান করবেন। এ ছাড়া, ফরৌণ যিহোবার সমকক্ষ নন। সর্বোপরি, মিশরীয় শাসনাধীনে ঈশ্বরের দাসেরা যে এই প্রথমবারই বিপদের মুখোমুখি হয়েছে এমন নয়। মোশি হয়তো এটা নিয়ে ধ্যান করেছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা অতীতের ফরৌণদের শাসন আমলে অব্রাহাম, যোষেফ এবং এমনকী মোশিকেও সুরক্ষা করেছিলেন। (আদি. ১২:১৭-১৯; ৪১:১৪, ৩৯-৪১; যাত্রা. ১:২২–২:১০) ‘যিনি অদৃশ্য, তাঁহার’ অর্থাৎ যিহোবার উপর বিশ্বাস নিয়ে মোশি সাহসের সঙ্গে ফরৌণের সামনে গিয়েছিলেন এবং যিহোবা মোশিকে যা বলতে বলেছিলেন, তাঁর প্রতিটা বাক্য বলেছিলেন।
অজুহাত—এগুলোকে যিহোবা কীভাবে দেখেন?
যিহোবা মোশিকে দায়িত্ব পালন করা থেকে অব্যাহতি দেননি। তবে, যিহোবা হারোণকে নিযুক্ত করেছিলেন, যেন তিনি মোশিকে কাজে সাহায্য করতে পারেন। (যাত্রা. ৪:১৪-১৭) অধিকন্তু, বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবা মোশির পাশে পাশে ছিলেন এবং তার ঈশ্বর প্রদত্ত কার্যভার পালন করার ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু জুগিয়েছিলেন। বর্তমানে, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনার পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকেও সাহায্য করতে যিহোবা অভিজ্ঞ সহবিশ্বাসীদের অনুপ্রাণিত করবেন। সর্বোপরি, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যিহোবা আমাদেরকে সেই কাজ করার জন্য যোগ্য করে তুলবেন, যা করার জন্য তিনি আমাদের আদেশ দিয়েছেন।—২ করি. ৩:৫; ‘আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ বছরগুলো’ শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
“আমার পক্ষে তুমি রক্তের বর,” সিপ্পোরার এই অভিব্যক্তিটা অসাধারণ। এটা তার সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত করে? ত্বকচ্ছেদ চুক্তির চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে সিপ্পোরা যিহোবার সঙ্গে এক চুক্তির সম্পর্ক থাকাকে স্বীকার করেছিলেন। পরে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে করা ব্যবস্থা চুক্তি দেখিয়েছিল যে, এক চুক্তির সম্পর্কে যিহোবাকে একজন স্বামী এবং অন্য পক্ষকে এক স্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। (যিরমিয় ৩১:৩২) তাই, (তাঁর প্রতিনিধিত্বকারী দূতের মাধ্যমে) যিহোবাকে “রক্তের বর” হিসেবে সম্বোধন করে সিপ্পোরা সেই চুক্তির শর্তের প্রতি তার বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন বলে মনে হয়। এটা এমন ছিল যেন, তিনি ত্বকচ্ছেদ চুক্তিতে এক স্ত্রীতুল্য স্থানকে স্বীকার করেছিলেন ও সেইসঙ্গে যিহোবা ঈশ্বরকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। যা-ই হোক না কেন, ঈশ্বরের চাহিদার প্রতি তার বাধ্যতার চূড়ান্ত পদক্ষেপের কারণে তার ছেলের জীবন আর ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১২ অনু. ৫, ইংরেজি
যিহোবা
কোনো ব্যক্তির নাম জানার অর্থ এই নয় যে, আমরা তাকে ভালোভাবে “জানি।” মূর্খ নাবল দায়ূদের নাম জানতেন। কিন্তু, তিনি যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন “দায়ূদ কে?” তখন তিনি বলতে চেয়েছিলেন ‘তার কী অধিকার?’ (১শমূ ২৫:৯-১১; তুলনা করুন, ২শমূ ৮:১৩.) ফরৌণও মোশিকে একই কথা বলেছিলেন: ‘যিহোবা কে, যে আমি তাহার কথা শুনিয়া ইস্রায়েলকে ছাড়িয়া দিব? আমি যিহোবাকে জানি না, ইস্রায়েলকেও ছাড়িয়া দিব না।’ (যাত্রা ৫:১, ২) আসলে, ফরৌণ এই বলতে চেয়েছিলেন, তিনি সত্য ঈশ্বর যিহোবাকে জানেন না এবং মিশরের রাজা ও তার কাজে যিহোবার বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার নেই, এমনকী মোশি ও হারণের মাধ্যমে যে-উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন, তা পরিপূর্ণ করার শক্তিও তাঁর নেই। কিন্তু এই বার ফরৌণ, সমস্ত মিশর ও সমগ্র ইস্রায়েলের লোকেরা জানতে পারবে, যিহোবা কে। কীভাবে তা সম্ভব ছিল? যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন, তিনি ইস্রায়েলের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন, যেটার অন্তর্ভুক্ত ছিল, তাদের মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করা, প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের পূর্বপুরুষের সঙ্গে স্থাপিত চুক্তি কার্যকর করা। এভাবে ঈশ্বর বলেছিলেন, “তোমরা জানিতে পারিবে যে, আমি যিহোবা।”—যাত্রা ৬:৪-৮.