জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
আগস্ট ৩-৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
যাত্রাপুস্তক ১৩-১৪
‘সকলে স্থির হইয়া দাঁড়াও, সদাপ্রভু যে নিস্তার করেন, তাহা দেখ’
প্রহরীদুর্গ ১৩ এপ্রিল-জুন ৪
মোশি একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি
মোশির হয়তো কোনো ধারণাই ছিল না যে, ঈশ্বর লোহিত সাগরকে দু-ভাগ করে ইস্রায়েলীয়দের জন্য পালানোর এক পথ খুলে দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু, মোশির এই আস্থা ছিল, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করার জন্য কিছু একটা করবেন। আর মোশি চেয়েছিলেন যেন তার সহইস্রায়েলীয়দেরও একই দৃঢ়বিশ্বাস থাকে। আমরা পড়ি: “মোশি লোকদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না, সকলে স্থির হইয়া দাঁড়াও। সদাপ্রভু অদ্য তোমাদের যে নিস্তার করেন, তাহা দেখ।” (যাত্রাপুস্তক ১৪:১৩) মোশি কি সহইস্রায়েলীয়দের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পেরেছিলেন? নিশ্চিতভাবেই করতে পেরেছিলেন, কারণ বাইবেল শুধু মোশির বিষয়েই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বিষয়ে এই কথা বলে: “বিশ্বাসে লোকেরা শুষ্ক ভূমির ন্যায় লোহিত সমুদ্রের মধ্য দিয়া গমন করিল।” (ইব্রীয় ১১:২৯) মোশির বিশ্বাস শুধু তাকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সেইসমস্ত ব্যক্তিকেও উপকৃত করেছে, যারা তার বিশ্বাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
যিহোবা সর্বশক্তিমান হওয়া সত্ত্বেও বিবেচনা দেখান
১৩ যাত্রাপুস্তক ১৪:১৯-২২ পদ পড়ুন। কল্পনা করুন, সেই ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে আপনিও সেখানে রয়েছেন। আপনি আটকে গিয়েছেন। আপনার পিছনের দিকে মিশরীয় সৈন্যবাহিনী রয়েছে এবং সামনের দিকে সূফসাগর রয়েছে। এরপর ঈশ্বর পদক্ষেপ নেন। আপনার সামনে থাকা মেঘস্তম্ভটা স্থান পরিবর্তন করে শিবিরের পিছনে অর্থাৎ আপনাদের ও মিশরীয়দের মধ্যে গিয়ে অবস্থিতি করে। এর ফলে, তাদের শিবির অন্ধকারের মধ্যে থাকে কিন্তু আপনাদের শিবির অলৌকিকভাবে আলোকিত হয়ে ওঠে! তারপর, আপনি মোশিকে সাগরের উপর তার হাত বাড়াতে দেখেন আর এর ফলে, পূর্ব দিক থেকে প্রবল বাতাস আসে এবং সাগরের অপর পারে যাওয়ার জন্য এক চওড়া পথ তৈরি হয়ে যায়। তাই, বাকি লোকেদের সঙ্গে সঙ্গে আপনি, আপনার পরিবার ও আপনার পশুপাল সুসংগঠিতভাবে সেই পথে হাঁটতে শুরু করেন। আপনি এটা দেখে অবাক হয়ে যান যে, সেই পথে একটুও কাদা নেই আর তা একেবারেই পিচ্ছিল নয়। সেই পথ শুষ্ক ও বেশ দৃঢ় আর তাই, আপনাদের পক্ষে সেটার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া সহজ হয়। এর ফলে, যারা খুব ধীরে ধীরে হাঁটে, তারাও সুরক্ষিতভাবে অপর পারে পৌঁছে যায়।
প্রহরীদুর্গ ০৯ ৩/১৫ ৭ অনু. ৩-৪
যিহোবাকে কখনোই ভুলে যাবেন না
মিশরীয়রা যখন তাদের ভেঙে যাওয়া যুদ্ধবাহন চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন ইতিমধ্যেই সমস্ত ইস্রায়েল পূর্ব তীরে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই সময় মোশি সূফসাগরের উপর তার হস্ত বিস্তার করেছিলেন। ফলে, যিহোবা জলের দেওয়ালগুলোকে সেই পথের উপর পতিত হতে দিয়েছিলেন। লক্ষ লক্ষ টন জল ফরৌণ ও তার যোদ্ধাদের ওপর গর্জে উঠে আছড়ে পড়েছিল, তারা ডুবে গিয়েছিল। এই শত্রুদের মধ্যে কেউই রক্ষা পায়নি। ইস্রায়েল স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল!—যাত্রা. ১৪:২৬-২৮; গীত. ১৩৬:১৩-১৫.
এই ঘটনার খবর আশেপাশের জাতিগুলোর মধ্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য ভয় জাগিয়ে তুলেছিল। (যাত্রা. ১৫:১৪-১৬) চল্লিশ বছর পর যিরীহোর রাহব দু-জন ইস্রায়েলীয় পুরুষকে বলেছিলেন: “আমাদের উপরে মহাভয় উপস্থিত হইয়াছে, ও তোমাদের সম্মুখে এই দেশনিবাসী সমস্ত লোক গলিয়া গিয়াছে। কেননা মিসর হইতে তোমরা বাহির হইয়া আসিলে সদাপ্রভু তোমাদের সম্মুখে কি প্রকারে সূফসাগরের জল শুষ্ক করিয়াছিলেন, . . . তাহা আমরা শুনিলাম।” (যিহো. ২:৯, ১০) এমনকী সেই পৌত্তলিক জাতিগুলোও ভুলে যায়নি যে, কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেছিলেন। স্পষ্টতই, স্মরণে রাখার জন্য ইস্রায়েলীয়দের এমনকী আরও বেশি কারণ ছিল।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১১১৭, ইংরেজি
রাজপথ, রাস্তা
প্রাচীন সময়ে প্যালেস্টাইনের এলাকাতে একটা শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা একটা রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাতায়াত করার জন্য একাধিক রাজপথ ও রাস্তা ব্যবহৃত হত। অনেক রাস্তা আবার ব্যাবসা করার জন্য বেশি ব্যবহার করা হত। (গণনা ২০:১৭-১৯; ২১:২১, ২২; ২২:৫, ২১-২৩; যিহো ২:২২; বিচার ২১:১৯; ১শমূ ৬:৯, ১২; ১৩:১৭, ১৮) ব্যাবসা করার জন্য সবচেয়ে বেশি মিশর থেকে দম্মেশক যাওয়ার রাস্তা ব্যবহার করা হত। এই রাস্তাটা মিশর থেকে ঘসা ও অস্কিলোন নামক প্যালেস্টাইন শহর হয়ে যেত। তারপর সেটা উত্তরপূর্বাঞ্চল মগিদ্দো হয়ে যেত আর পরে হাৎসোর থেকে এগিয়ে গিয়ে গালীল সাগরের উত্তর দিকে আবার দম্মেশক যেত। মিশর থেকে প্রতিজ্ঞাত দেশে যাওয়ার জন্য প্যালেস্টাইন হয়ে এই রাস্তাটা সবচেয়ে ছোটো ছিল। কিন্তু, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যান, যাতে পলেস্টীয়রা তাদের উপর আক্রমণ করতে না পারে।—যাত্রা ১৩:১৭.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৭৮২ অনু. ২-৩, ইংরেজি
ইস্রায়েলীয়দের যাত্রা
সূফসাগরকে কোন জায়গায় দু-ভাগ করা হয়েছিল, যাতে ইস্রায়েলীয়রা সেটা পার হয়ে যেতে পারে?
লক্ষ করুন, ইস্রায়েলীয়রা যখন নিজেদের যাত্রার দ্বিতীয় পর্যায় এথম নামক জায়গায় পৌঁছায়, যেটা “প্রান্তরের প্রান্তে” ছিল, তখন যিহোবা মোশিকে, ‘ফিরে, পী-হহীরোতের অগ্রে . . . সমুদ্রের নিকটে’ যেতে বলেন। সেটা দেখে ফরৌণ মনে করতে পারতেন যে, ইস্রায়েলীয়রা “অবরুদ্ধ হইল [“এদিক ওদিক,” জুবিলী বাইবেল]” ঘুরে বেড়াতে লাগল। (যাত্রা ১৩:২০; ১৪:১-৩) কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি বলে থাকেন যে, যখন ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তারা এল হাজের রাস্তা হয়ে যাত্রা করেছিল। তারা এটা বলতে চান যে, যিহোবা যখন ইস্রায়েলীয়দের “ফির” অর্থাৎ পিছনে ঘুরে যেতে বলেন, তখন আসলে তিনি ইব্রীয় মূল পাঠ্যাংশ অনুযায়ী তাদের অন্য কোনো রাস্তা হয়ে যেতে বলেননি বরং পুরোপুরিভাবে দিক পরিবর্তন করতে বলেছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা ঠিক কোন জায়গায় তাদের দিক পরিবর্তন করে? পণ্ডিত ব্যক্তিদের মতামত অনুযায়ী, যখন তারা সুয়েজ খাড়ির উত্তর দিকে পৌঁছায়, তখন তারা নিজেদের দিক পরিবর্তন করে আর খাড়ির পশ্চিম এলাকার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। এখন তাদের এক দিকে জিবেল এল পর্বতমালার পূর্ব অংশ ছিল এবং আরেক দিকে সাগর। ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। সেই কারণে যদি মিশরীয়রা উত্তর দিক থেকে তাদের তাড়া করত, তা হলে দ্রুত সেখান থেকে পালানোর জন্য কোনো পথ তাদের কাছে ছিল না। ইস্রায়েলীয়রা পুরোপুরিভাবে আটকে পড়েছিল।
প্রথম শতাব্দীর যিহুদিরাও মনে করত যে, ইস্রায়েলীয়রা হয়তো এই রাস্তা হয়েই সূফসাগর পর্যন্ত পৌঁছেছিল। যদিও অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিরা এই কথায় একমত নন, কিন্তু বাইবেল বিবরণও এই বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ দেয়। (যাত্রা ১৪:৯-১৬) তাই আমরা বলতে পারি যে, ইস্রায়েলীয়রা সুয়েজ খাড়ির পূর্ব থেকে সূফসাগর পার করেনি। যদি তারা তা করে থাকত, তা হলে ফরৌণের সেনাবাহিনী খাড়ির প্রান্ত হয়ে সাগরের অন্য দিক থেকে ইস্রায়েলীয়দের আক্রমণ করতে পারত।—যাত্রা ১৪:২২, ২৩.
আগস্ট ১০-১৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
যাত্রাপুস্তক ১৫-১৬
“গান গাওয়ার মাধ্যমে যিহোবার প্রশংসা করুন”
প্রহরীদুর্গ ৯৫ ১০/১৫ ১১ অনু. ১১
এখনই কেন সত্য ঈশ্বরকে ভয় করবেন?
১১ মিশরীয় সামরিক শক্তির উপর যিহোবার আনা এই ধ্বংস, তাঁর উপাসকদের সামনে তাঁকে মহিমান্বিত করে আর তাঁর নাম ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:৯, ১০; ৪:২৩, ২৪) হ্যাঁ, তাঁর নাম অনেক উচ্চীকৃত হয় বিশেষকরে মিশরীয়দের সেই সব শক্তিহীন, মিথ্যা দেবতাদের চাইতে, যারা তাদের উপাসকদের রক্ষা করতে অসমর্থ প্রমাণিত হয়। নিজেদের দেবতা, মরণশীল মানুষ আর সামরিক শক্তির উপর নির্ভরতার ফল দাঁড়ায় এক তিক্ত হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি। (গীতসংহিতা ১৪৬:৩) এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে ইস্রায়েলীয়রা সেই প্রশংসা গীত করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল যা জীবন্ত ঈশ্বর, যিনি শক্তির সাথে তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেন, তাঁর প্রতি এক স্বাস্থ্যকর ভীতিকে প্রতিফলিত করে!
প্রহরীদুর্গ ৯৫ ১০/১৫ ১১-১২ অনু. ১৫-১৬
এখনই কেন সত্য ঈশ্বরকে ভয় করবেন?
১৫ সেই সময় আমরা যদি সুদৃঢ়ভাবে মোশির পাশে দাঁড়াতাম, তা হলে আমরাও সেই গান গাইতে অবশ্যই অনুপ্রাণিত হতাম: “হে সদাপ্রভু, দেবগণের মধ্যে কে তোমার তুল্য? কে তোমার ন্যায় পবিত্রতায় আদরণীয়, প্রশংসায় ভয়ার্হ, আশ্চর্য্য ক্রিয়াকারী?” (যাত্রাপুস্তক ১৫:১১) সেই সময় থেকে শতাব্দীগুলি ধরে এই অভিব্যক্তিটি প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে। বাইবেলের শেষ বইটিতে প্রেরিত যোহন, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত অভিষিক্ত দাসেদের একটি দলকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “তাহারা ঈশ্বরের দাস মোশির গীত ও মেষশাবকের গীত গায়।” এই মহান গীতটি কী? “‘মহৎ ও আশ্চর্য্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন্! হে প্রভু, কে না ভীত হইবে? এবং তোমার নামের গৌরব কে না করিবে? কেননা একমাত্র তুমিই সাধু।’”—প্রকাশিত বাক্য ১৫:২-৪.
১৬ তাই আজকের দিনেও স্বাধীন উপাসকেরা আছে যারা কেবলমাত্র ঈশ্বরের হস্তকৃত সৃষ্টিকেই নয়, কিন্তু তাঁর বিধিনিয়মকেও উপলব্ধি করে। সমস্ত জাতির লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে স্বাধীনপ্রাপ্ত হয়েছে, দূষিত জগৎ থেকে সরে এসেছে, কারণ তারা ঈশ্বরের ধার্মিক বিধিনিয়মকে স্বীকার করেছে ও তা প্রয়োগ করেছে। বছরে লক্ষাধিক ব্যক্তিরা যিহোবার উপাসকদের এক পরিচ্ছন্ন, ধার্মিক সংগঠনের মধ্যে বসবাস করার জন্য এই দূষিত জগৎ থেকে রক্ষা করছে। খুব শীঘ্রই, মিথ্যা ধর্ম ও বাদবাকি দুষ্ট বিধিব্যবস্থার উপর ঈশ্বরের অগ্নিরূপ বিচার বলবৎ হওয়ার পর, তারা এক ধার্মিক নতুন জগতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৪৫৪ অনু. ১, ইংরেজি
যন্ত্রসংগীত
হতে পারে যখন ইস্রায়েলীয়রা একসঙ্গে মিলিত হয়ে গান গাইত, তখন গায়কদের দুটো দল থাকত। প্রথমে একটা দল কোনো গান গাইত, তখন সেটার উত্তরে আরেকটা দল গান গাইত। অথবা কোনো একজন গায়ক গান গাইতে শুরু করতেন আর সেটার উত্তরে গায়ক দল অন্য গান গাইত। তারা পুরো গানটা এভাবেই গাইত। বাইবেলেও এই বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। (যাত্রা ১৫:২১; ১শমূ ১৮:৬, ৭) কিছু গীত, যেমন গীতসংহিতার ১৩৬ গীত এভাবেই লেখা হয়েছিল। বাইবেল বলে, নহিমিয়ের সময়েও যিরূশালেমের প্রাচীর প্রতিষ্ঠার উপলক্ষ্যে যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য গায়কদের বড়ো বড়ো দুটো দল ছিল। হতে পারে তারাও এভাবেই গান গাইত।—নহি ১২:৩১, ৩৮, ৪০-৪২.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৬৯৮, ইংরেজি
ভাববাদিনী
মরিয়ম হলেন সেই প্রথম স্ত্রী যাকে বাইবেলে ভাববাদিনী বলা হয়েছিল। মরিয়ম ঈশ্বরের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্ভবত যে-গান গেয়েছিলেন, সেগুলোর মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর লোকেদের কাছে নিজের বার্তা জানিয়েছিলেন। (যাত্রা ১৫:২০, ২১) বাইবেল বলে যে, তিনি ও হারোণ মোশিকে বলেছিলেন, ‘[যিহোবা] আমাদের সহিত কি কহেন নাই?’ (গণনা ১২:২) ভাববাদী মীখার মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন, তিনি যখন ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করে আনছিলেন, তখন “মোশিকে, হারোণকে ও মরিয়মকে” তিনি তাদের আগে পাঠিয়েছিলেন। (মীখা ৬:৪) যদিও মরিয়ম যিহোবার চিন্তাধারা সম্বন্ধে লোকেদের জানিয়েছিলেন, তবুও যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ততটাও মজবুত ছিল না, যতটা তার ভাই মোশির ছিল। যখন মরিয়ম যিহোবার দ্বারা মনোনীত নেতা মোশির বিরোধিতা করেন, তখন যিহোবা তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন।—গণনা ১২:১-১৫.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ ১১ ৯/১ ১৪, ইংরেজি
আপনি কি জানতেন?
কেন ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের প্রান্তরে খাওয়ার জন্য ভারুই পাখি দেন?
ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করে নিয়ে আসার পর, যিহোবা তাদের দু-বার খাওয়ার জন্য অনেক ভারুই পাখি জুগিয়ে দেন।—যাত্রাপুস্তক ১৬:১৩; গণনাপুস্তক ১১:৩১.
ভারুই এক ধরনের ছোট্ট পাখি। এটা প্রায় ৭ ইঞ্চি (১৮ সেন্টিমিটার) লম্বা হয় আর এটার ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম হয়। এই পাখি পশ্চিম এশিয়ায় ও ইউরোপে ডিম পাড়ে। এটা হল এক ধরনের পরিযায়ী পাখি আর শীত কালে এটা উত্তর আফ্রিকা ও আরব দেশে চলে যায়। পরিযান করার সময় তারা ঝাঁকে ঝাঁকে ভূমধ্যসাগরের পূর্বীয় সৈকত হয়ে সীনয় এলাকার উপর দিয়ে উড়ে যায়।
দ্যা নিউ ওয়েস্টমিনিস্টার ডিকশনারি অব দ্যা বাইবেল অনুযায়ী, ভারুই পাখি “খুবই দ্রুত ও ভালোভাবে উড়তে পারে। বেশিরভাগই তারা বাতাসের সাহায্যে উড়ে থাকে, কিন্তু যদি বাতাসের দিক পরিবর্তন হয় কিংবা তারা উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন সম্ভবত তাদের পুরো ঝাঁক মাটিতে পড়ে যায় আর কিছু সময় ধরে অচেতন হয়েই পড়ে থাকে।” পরিযান চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের মাটিতে পড়ে থেকেই এক বা দুই দিন আরাম করতে হয়। আর ঠিক এই কারণে শিকারিরা তাদের খুব সহজেই ধরে নিতে পারে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লক্ষ ভারুই পাখি খাওয়ার জন্য মিশর থেকে অন্য দেশে বিক্রি করা হয়েছিল।
দু-বারই যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বসন্ত কালে ভারুই পাখি জুগিয়েছিলেন। যদিও সেই সময় ভারুই পাখি সীনয় এলাকা হয়ে উড়ে যেত, তবে যিহোবা এমন জোরে বাতাস প্রবাহিত করেন যে, তারা ইস্রায়েলীয়দের শিবিরের চারপাশে পড়ে যায়।—গণনাপুস্তক ১১:৩১.
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে মুক্ত হওয়ার কিছু সময় পরই খাবারের জন্য বচসা করতে শুরু করেছিল। তাই, যিহোবা তাদেরকে মান্না দিয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ১২:১৭, ১৮; ১৬:১-৫) সেই সময়ে, মোশি হারোণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন: “তুমি একটা পাত্র লইয়া পূর্ণ এক ওমর পরিমাণ মান্না সদাপ্রভুর সম্মুখে রাখ; তাহা তোমাদের পুরুষপরম্পরার নিমিত্ত রাখা যাইবে।” সেই বিবরণ বলে: “তখন, সদাপ্রভু মোশিকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারে হারোণ সাক্ষ্যসিন্দুকের [গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণপত্র সুরক্ষিত রাখার সংরক্ষণাগারের] নিকটে থাকিবার জন্য তাহা তুলিয়া রাখিলেন।” (যাত্রাপুস্তক ১৬:৩৩, ৩৪) নিঃসন্দেহে, হারোণ যদিও সেই সময়ে একটা পাত্রে মান্না সংগ্রহ করেছিলেন কিন্তু এটাকে সাক্ষ্যসিন্দুকের নিকটে রাখার জন্য তাকে সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল, যতদিন পর্যন্ত না মোশি সিন্দুক তৈরি করেছিলেন এবং সেটার মধ্যে ফলকগুলো রেখেছিলেন।
আগস্ট ১৭-২৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
যাত্রাপুস্তক ১৭-১৮
“একজন বিনয়ী ব্যক্তি অন্যদের প্রশিক্ষণ দেন ও দায়িত্ব অর্পণ করেন”
প্রহরীদুর্গ ১৩ এপ্রিল-জুন ৬
মোশি একজন প্রেমময় ব্যক্তি
মোশি সহইস্রায়েলীয়দের প্রতিও প্রেম দেখিয়েছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মোশিকে ব্যবহার করছিলেন আর তাই তারা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মোশির কাছে আসত। আমরা পড়ি: “প্রাতঃকাল অবধি সন্ধ্যা পর্য্যন্ত লোকেরা মোশির কাছে দাঁড়াইয়া রহিল।” (যাত্রাপুস্তক ১৮:১৩-১৬) একটু কল্পনা করুন, ইস্রায়েলীয়রা যখন তাদের চিন্তার বিষয়গুলো খুলে বলত, তখন মোশির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে তা শোনা কতই না ক্লান্তিকর ছিল! কিন্তু, মোশি সেই লোকেদের ভালোবাসতেন বলে তাদের সাহায্য করতে পেরে খুশি ছিলেন।
এক সুখী জীবনের জন্য নির্ভরতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ
এই ব্যক্তিরা ছিল তারা, যারা নির্ভরযোগ্য পদে নিযুক্ত হওয়ার আগেই ঈশ্বরীয় গুণাবলি দেখিয়েছিল। তারা ইতিমধ্যেই প্রমাণ দিয়েছিল যে, তারা ঈশ্বরকে ভয় করে; সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের এক গঠনমূলক শ্রদ্ধা ছিল এবং তাঁকে অসন্তুষ্ট করার ভয় ছিল। এটা সকলের কাছে স্পষ্ট ছিল যে, এই লোকেরা ঈশ্বরের মানগুলো সমর্থন করার জন্য তাদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করেছিল। তারা অন্যায়-লাভকে ঘৃণা করেছিল, যা নির্দেশ করেছিল নৈতিক দৃঢ়তা, যা কিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করা থেকে তাদের রক্ষা করবে। তারা তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার্থে অথবা তাদের আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের জন্য তাদের নির্ভরযোগ্যতাকে নষ্ট করবে না।
নীতিনিষ্ঠা ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের পথ দেখায়
মোশিও একজন বিনয়ী বা নম্র ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন অন্যদের সমস্যা মীমাংসা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তখন তার শ্বশুর যিথ্রো তাকে বাস্তবসম্মত সমাধান বলে দিয়েছিলেন: কিছু কিছু দায়িত্ব অন্যান্য যোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ভাগ করে নাও। নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরে মোশি বুদ্ধির সঙ্গে পরামর্শ মেনে নিয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ১৮:১৭-২৬; গণনাপুস্তক ১২:৩) একজন নম্র ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে কর্তৃত্ব ভাগ করে নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন না বা এই ভেবে ভয় পান না যে, অন্যান্য যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে উপযুক্ত দায়িত্বগুলো ভাগ করে দিলে তিনি কিছুটা হলেও তার ক্ষমতা হারাবেন। (গণনাপুস্তক ১১:১৬, ১৭, ২৬-২৯) এর বদলে তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করতে তিনি অত্যন্ত আগ্রহী। (১ তীমথিয় ৪:১৫) আমাদের বেলায়ও কি তা সত্য হওয়া উচিত নয়?
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
“তোমার হস্ত শিথিল না হউক”
১৪ ইস্রায়েলীয়রা অমালেকীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় হারোণ ও হূর মোশির হাত দুটো ধরে রাখার মাধ্যমে সেগুলো সবল করতে সাহায্য করেছিলেন। বর্তমানে, আমরাও অন্যদের সাহায্য ও সমর্থন করার বিভিন্ন উপায় খুঁজতে পারি। আমাদের কোনো কোনো ভাই-বোন বার্ধক্য, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, পরিবারের কাছ থেকে তাড়না, একাকীত্ব অথবা প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে কষ্টভোগ করে থাকে। এ ছাড়া, আমরা অল্পবয়সিদেরও শক্তিশালী করতে পারি, যারা প্রায়ই মন্দ কাজ করার জন্য অথবা এই জগতে সফলতা খোঁজার জন্য চাপের মুখোমুখি হয়। (১ থিষল. ৩:১-৩; ৫:১১, ১৪) কিংডম হলে, ক্ষেত্রের পরিচর্যায়, একসঙ্গে খাবার খাওয়ার সময় অথবা টেলিফোনে কথা বলার সময়, অন্যদের প্রতি অকৃত্রিম আগ্রহ দেখানোর বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করুন।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৪০৬, ইংরেজি
প্রামাণিক অংশ
বাইবেলে এই বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, মোশির লেখা যে-বইগুলো পবিত্র শাস্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা হয়েছিল। আর এগুলো থেকে ঈশ্বরের বিশুদ্ধ উপাসনা কীভাবে করা যায়, তা আমরা শিখতে পারি। মোশি নিজের ইচ্ছায় ইস্রায়েলীয়দের নেতা হননি। এমনকী যখন যিহোবা তাকে ইস্রায়েলীয়দের নেতা হওয়ার জন্য বেছে নেন, তখনও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। (যাত্রা ৩:১০, ১১; ৪:১০-১৪) এই বিশেষ কার্যভার তাকে ঈশ্বর দিয়েছিলেন এবং অলৌকিক কাজ করার শক্তিও প্রদান করেছিলেন। সেই কারণেই মন্ত্রবেত্তারা যখন তাকে ফরৌণের রাজপ্রাসাদে অলৌকিক কাজ করতে দেখে, তখন তারা মানতে বাধ্য হয় যে, তিনি ঈশ্বরের শক্তি পেয়েই তা করেছিলেন। (যাত্রা ৪:১-৯; ৮:১৬-১৯) তাই, এটা বলা যেতে পারে যে, বই লেখার বা লোকেদের নির্দেশনা দেওয়ার মোশির কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। এর পরিবর্তে, তা করার আজ্ঞা ঈশ্বর তাকে দিয়েছিলেন। পবিত্র আত্মার নির্দেশনা লাভ করেই তিনি যিহোবার হয়ে কথা বলেছিলেন এবং সেই বইগুলো লিখেছিলেন, যেগুলো বাইবেলের এক প্রামাণিক অংশ।—যাত্রা ১৭:১৪.
আগস্ট ২৪-৩০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
যাত্রাপুস্তক ১৯-২০
“দশ আজ্ঞা আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে?”
প্রহরীদুর্গ ৮৯ ১১/১৫ ৬ অনু. ১, ইংরেজি
দশ আজ্ঞা আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে?
প্রথম চারটে আজ্ঞা যিহোবা ও তাঁর সেবা সম্বন্ধে জোর দেয়। (প্রথম) যিহোবা চান যেন আমরা একমাত্র তাঁকেই একাগ্র ভক্তি প্রদান করি। (মথি ৪:১০) (দ্বিতীয়) তাঁর উপাসকদের প্রতিমা ব্যবহার করা উচিত নয়। (১ যোহন ৫:২১) (তৃতীয়) আমাদের সবসময় সম্মানপূর্বক তাঁর নাম ব্যবহার করা উচিত। (যোহন ১৭:২৬; রোমীয় ১০:১৩) (চতুর্থ) একমাত্র যিহোবার সেবাকে আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এটা করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনার প্রতি নিজেদের ইচ্ছার চেয়ে বেশি মনোযোগ দিই আর এভাবে আমরা যেন এক অর্থে ‘বিশ্রামবার পালন’ করি।—ইব্রীয় ৪:৯, ১০.
প্রহরীদুর্গ ৮৯ ১১/১৫ ৬ অনু. ২-৩, ইংরেজি
দশ আজ্ঞা আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে?
(পঞ্চম) সন্তানেরা যদি বাবা-মায়ের আজ্ঞার বাধ্য হয়, তা হলে পরিবারে একতা বজায় থাকবে এবং যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করবেন। আর এই “প্রতিজ্ঞাসহযুক্ত প্রথম আজ্ঞা” কতই-না এক অপূর্ব আশা প্রদান করে! বাবা-মায়ের আজ্ঞার বাধ্য হওয়ার ফলে ‘আমাদের মঙ্গল হয় এবং আমরা দেশে দীর্ঘায়ু হব।’ (ইফিষীয় ৬:১-৩) এই প্রতিজ্ঞা থেকে বর্তমান এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার “শেষকালে” অল্পবয়সিরাও শিখতে পারে যে, তারা যদি এই আজ্ঞার বাধ্য হয়, তা হলে তাদের কখনো মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে না।—২ তীমথিয় ৩:১; যোহন ১১:২৬.
প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা কোনো রকমভাবেই তাদের ক্ষতি করা থেকে আমাদের বিরত রাখবে, যেমন (ষষ্ঠ) হত্যা করা, (সপ্তম) ব্যভিচার করা, (অষ্টম) চুরি করা এবং (নবম) তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। (১ যোহন ৩:১০-১২; ইব্রীয় ১৩:৪; ইফিষীয় ৪:২৮; মথি ৫:৩৭; হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) কিন্তু, এই আজ্ঞাগুলো কি শুধুমাত্র আমাদের আচরণ সম্বন্ধে জানায়? না কি এর মধ্যে আমাদের মনোভাবও জড়িত রয়েছে? (দশম) আজ্ঞায় আমাদের অন্য কারো জিনিসের প্রতি লোভ করতে বারণ করা হয়েছে। এটা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, যিহোবা চান যেন তাঁর দৃষ্টিতে আমাদের মনোভাব সবসময় সঠিক থাকে। “মানুষের সকল পথই নিজের দৃষ্টিতে সরল, কিন্তু সদাপ্রভু হৃদয় সকল তৌল করেন।”—হিতোপদেশ ২১:২.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৬৮৭ অনু. ১-২, ইংরেজি
যাজক
খ্রিস্টের যাজকত্ব। যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যদি তারা তাঁর আইন মেনে চলে, তা হলে তারা “যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।” (যাত্রা ১৯:৬) কিন্তু, হারোণ ও তার পুত্রের যাজকত্ব ভবিষ্যতের এক অসাধারণ যাজকত্বের ছায়া স্বরূপ ছিল। (ইব্রীয় ৮:৪, ৫) হারোণের যাজকত্ব ততদিন পর্যন্ত থাকত, যতদিন না মোশির ব্যবস্থা শেষ হয় ও নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হয়। (ইব্রীয় ৭:১১-১৪; ৮:৬, ৭, ১৩) যিহোবার রাজ্যের যাজক হিসেবে শাসন করার সুযোগ সবচেয়ে প্রথমে ইস্রায়েল জাতিকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে পরজাতীয়দেরও এই সুযোগ দেওয়া হয়।—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; ১৫:১৪; রোমীয় ১০:২১.
বেশিরভাগ যিহুদি যিশুর উপর বিশ্বাস করেনি, তাই ইস্রায়েল জাতি স্বর্গীয় রাজ্যের অধিকার পায় না এবং এক পবিত্র জাতি হতে ব্যর্থ হয়। (রোমীয় ১১:৭, ২০) ইস্রায়েল জাতি বার বার যিহোবার বিরুদ্ধে যায়, তাই যিহোবা তাদের ভাববাদী হোশেয়ের মাধ্যমে বলেন, “তুমি ত জ্ঞান অগ্রাহ্য করিয়াছ, এই জন্য আমিও তোমাকে নিতান্ত অগ্রাহ্য করিলাম, তুমি আর আমার যাজক থাকিবে না; তুমি আপন ঈশ্বরের ব্যবস্থা ভুলিয়া গিয়াছ, আমিও তোমার সন্তানগণকে ভুলিয়া যাইব।” (হোশেয় ৪:৬) একইভাবে, যিশু যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের বলেন, “তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।” (মথি ২১:৪৩) তবুও যতদিন যিশু পৃথিবীতে ছিলেন, ততদিন তিনি ব্যবস্থার বাধ্য হয়েছিলেন আর তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি হারোণের যাজকত্বকে সম্মান করতেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু যখন লোকেদের কুষ্ঠ রোগ ঠিক করে দিয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের বলেছিলেন, তারা যেন যাজকদের কাছে যায় আর বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য বলি উৎসর্গ করে।—মথি ৮:৪; মার্ক ১:৪৪; লূক ১৭:১৪.
যাত্রাপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো
২০:৫—কীভাবে যিহোবা “পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল” ভবিষ্যৎ বংশধরদের উপর নিয়ে আসেন? প্রত্যেক ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর, তার নিজের আচরণ ও মনোভাব অনুযায়ী বিচারিত হয়। কিন্তু ইস্রায়েল জাতি যখন প্রতিমাপূজায় জড়িত হয়েছিল, তখন পরবর্তী বংশধরেরাও এর মন্দ প্রতিফল ভোগ করেছিল। এমনকী বিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়রা সেই অর্থে এর প্রভাব অনুভব করেছিল যে, জাতির ধর্মীয় অপরাধ তাদেরকে নীতিনিষ্ঠার পথে স্থির থাকা কঠিন করে তুলেছিল।
আগস্ট ৩১–সেপ্টেম্বর ৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
যাত্রাপুস্তক ২১-২২
“জীবনকে যিহোবার মতো করে দেখুন”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ২৭১, ইংরেজি
মারধর করা
যদি কোনো ইব্রীয় দাস তার প্রভুর কথা না শুনতো কিংবা বিদ্রোহ করত, তা হলে তাকে চাবুক দিয়ে মারা হত। কিন্তু, তাকে মারধর করার সময় যদি সে মারা যেত, তা হলে তার প্রভুকেও শাস্তি দেওয়া হত। যদি সেই দাস এক বা দু-দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকত, তা হলে প্রমাণ হতো যে, প্রভু তাকে মেরে ফেলতে চাননি। প্রভুর কাছে দাসদের শাস্তি দেওয়ার অধিকার ছিল কারণ তারা “তাহার রৌপ্যস্বরূপ [“তার নিজেরই সম্পত্তি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” ছিল। কোনো ব্যক্তি জেনে-শুনে নিজের মূল্যবান বিষয়বস্তুর ক্ষতি করবে না, কারণ এতে তারই ক্ষতি হয়। যদি সেই দাস এক বা দু-দিন পর মারা যেত, তা হলে এটা বোঝা কঠিন হয়ে যেত যে, তার মৃত্যু প্রভুর শাস্তির জন্য হয়েছে, না কি অন্য কোনো কারণে। তাই, যদি সে এক বা দু-দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকত, তা হলে তার প্রভুকে শাস্তি দেওয়া হত না।—যাত্রা ২১:২০, ২১.
‘ঈশ্বরের প্রেম’ অধ্যায় ৭ অনু. ১৬
আপনি কি জীবনকে ঈশ্বরের মতো করে মূল্যবান বলে গণ্য করেন?
১৬ এমনকী মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর জীবনও ঈশ্বরের চোখে মূল্যবান। প্রাচীন ইস্রায়েলে, কোনো ব্যক্তি যদি গর্ভবতী মহিলার ক্ষতি করত আর এর ফলে হয় সেই মহিলা নতুবা তার শিশু যদি মারা যেত, তাহলে ঈশ্বর সেই দোষী ব্যক্তিকে নরঘাতক হিসেবে গণ্য করতেন আর তাকে “প্রাণের পরিশোধে প্রাণ” দিতে হতো। যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩ (NW) পদ বলে: “পুরুষরা যদি একে অন্যের সঙ্গে বিবাদ করে ও তারা একজন গর্ভবতী মহিলাকে প্রকৃতই আঘাত করে এবং তার সন্তান অকালে ভূমিষ্ঠ হয় কিন্তু কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা না ঘটে, তাহলে সেই ব্যক্তির উপর মহিলার কর্তা যা ধার্য করেন, সেই অনুসারে ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; আর সে বিচারকদের বিচারমতে তা দেবে। কিন্তু যদি কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলে তোমাকে অবশ্যই প্রাণের পরিশোধে প্রাণ দিতে হবে।” তাই, যিহোবা যখন দেখেন যে, নিজের স্বার্থ এবং অনৈতিকতার কারণে প্রতি বছর মায়ের গর্ভে থাকা অসংখ্য শিশুর জীবন ইচ্ছাকৃতভাবে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে, তখন তাঁর কেমন লাগে তা একটু কল্পনা করুন।
যিহোবা চান যেন আপনি “কুশলে” থাকেন
ব্যবস্থায় উল্লেখিত শাস্তিগুলো গৃহপালিত পশু যখন আঘাত করত সেই ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। একটা গরু বা ষাঁড় যদি শিং দিয়ে গুঁতিয়ে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করত, তাহলে সেই ষাঁড়ের মালিককে অন্য লোকদেরকে রক্ষা করার জন্য ষাঁড়টাকে মেরে ফেলতে হতো। যেহেতু তিনি সেটার মাংস খেতে পারতেন না অথবা খাদ্য হিসেবে অন্যদের কাছে বিক্রি করতে পারতেন না, তাই সেই পশুকে মেরে ফেলা অনেক লোকসানের ব্যাপার ছিল। কিন্তু ধরুন, একটা ষাঁড় একজন ব্যক্তিকে আঘাত করার পরও, সেটার মালিক সেই পশুটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখেননি। তাহলে কী হতো? সেই একই ষাঁড় যদি পরে অন্য কাউকে হত্যা করত, তাহলে সেই ষাঁড় এবং সেটার মালিক উভয়কেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। সেই আইন এমন যেকাউকে তার আচরণ পুনর্বিবেচনা করে দেখার সুযোগ দিয়েছিল, যিনি সাধারণত নিজ পশুপালের ব্যাপারে অসতর্ক ছিলেন।—যাত্রা. ২১:২৮, ২৯.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ ১০ ১/১৫ ৪ অনু. ৪-৫
কেন নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করবেন?
৪ খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণ হল এক গুরুগম্ভীর বিষয়। এটা নিছক এক প্রতিশ্রুতির চেয়ে আরও বেশি কিছু। কিন্তু, উৎসর্গীকরণ করা কীভাবে আমাদের উপকৃত করে? আসুন তুলনা করার মাধ্যমে আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, কীভাবে প্রতিশ্রুতি মানব সম্পর্ককে উপকৃত করে। একটা উদাহরণ হল বন্ধুত্ব। এক বন্ধু থাকার বিশেষ সুযোগ লাভ করার জন্য আপনাকে এক বন্ধু হওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। সেটার সঙ্গে এক প্রতিশ্রুতি জড়িত—আপনি আপনার বন্ধুর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে এক বাধ্যবাধকতা অনুভব করেন। বাইবেলে বর্ণিত উল্লেখযোগ্য বন্ধুত্বগুলোর মধ্যে একটা হল দায়ূদ ও যোনাথনের মধ্যে বন্ধুত্ব। তারা এমনকী একে অপরের কাছে বন্ধুত্বের এক নিয়ম বা চুক্তি করেছিল। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৭:৫৭; ১৮:১, ৩.) যদিও সেইরকম প্রতিশ্রুতিপূর্ণ বন্ধুত্ব খুবই বিরল, কিন্তু অধিকাংশ বন্ধুত্ব তখনই দৃঢ় হয়, যখন সঙ্গীরা একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় বা একে অন্যের প্রতি কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা বোধ করে।—হিতো. ১৭:১৭; ১৮:২৪.
৫ ঈশ্বর ইস্রায়েলকে যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, তা আরেকটা সম্পর্কের বিষয়ে বর্ণনা করে, যে-সম্পর্কের মধ্যে লোকেরা প্রতিশ্রুতি করার দ্বারা উপকৃত হতো। একজন দাস যদি স্থায়ীভাবে একজন উত্তম প্রভুর লোক হওয়ার নিরাপত্তা পেতে চাইত, তাহলে সে তার সঙ্গে এক স্থায়ী ও বাধ্যবাধকতাপূর্ণ চুক্তি করতে পারত। ব্যবস্থা বলে: “ঐ দাস যদি স্পষ্টরূপে বলে, আমি আপন প্রভুকে এবং আপন স্ত্রী ও সন্তানগণকে ভালবাসি, মুক্ত হইয়া চলিয়া যাইব না, তাহা হইলে তাহার প্রভু তাহাকে ঈশ্বরের নিকটে লইয়া যাইবে, এবং সে তাহাকে কপাটের কিম্বা বাজুর নিকটে উপস্থিত করিবে, তথায় তাহার প্রভু গুঁজি দ্বারা তাহার কর্ণ বিদ্ধ করিবে; তাহাতে সে চিরকাল সেই প্রভুর দাস থাকিবে।”—যাত্রা. ২১:৫, ৬.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১১৪৩, ইংরেজি
শিং
যাত্রাপুস্তক ২১:১৪ পদের অর্থ এটা হতে পারে যে, যদি একজন যাজক কারো হত্যা করতেন, তা হলে তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। অথবা এই পদের অর্থ এও হতে পারে যে, যদি কেউ জেনে-শুনে কাউকে হত্যা করত আর গিয়ে যজ্ঞবেদির শিং ধরত, তবুও সে রক্ষা পেত না।—তুলনা করুন, ১রাজা ২:২৮-৩৪.