“ঈশ্বরের শান্তি” তোমার হৃদয়কে রক্ষা করুক
“যিহোবা তোমাদের প্রতি আপন মুখ উত্তোলন করুন, ও তোমাকে শান্তি দান করুন।”—গণনাপুস্তক ৬:২৬.
১. তার মৃত্যুর কিছু পূর্ব্বে পৌল তীমথিয়কে কি লেখেন, তা কি প্রকাশ করে?
প্রেরিত পৌল ৬৫ সাধারণ শতাব্দীতে রোমে একজন বন্দী হিসাবে ছিলেন। যদিও তিনি রোমীয় হত্যাকারীর হাতে হিংসাত্মক মৃত্যু বরণ করতে যাচ্ছিলেন, পৌল কিন্তু শান্তিতে ছিলেন। ইহা স্পষ্ট হয় যে কথাগুলি তিনি লেখেন তার থেকে বয়সে ছোট বন্ধু তীমথিয়কে, যখন তিনি বলেন: “আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি। এখন অবধি আমার নিমিত্ত ধার্ম্মিকতার মুকুট তোলা রহিয়াছে; প্রভু, সেই ধর্ম্মময় বিচারকর্ত্তা, সেই দিন আমাকে তাহা দিবেন।”—২ তীমথিয় ৪:৭, ৮.
২. কি পৌলের মনকে রক্ষা করে তার ঘটনা বহুল জীবনে, একেবারে তার মৃত্যু পর্য্যন্ত?
২ কি করে পৌল মৃত্যুর মুখেও এত শান্ত থাকতে পারেন? এর কারণ ছিল “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি” তা তার হৃদয়কে রক্ষা করছিল। (ফিলিপীয় ৪:৭) এই একই শান্তি তাকে রক্ষা করেছিল তার কার্য্য-বহুল বৎসরগুলিতে যথন থেকে তিনি খ্রীষ্টতত্বে ধর্ম্মান্তরিত হন। ইহা তাকে সাহায্য করে উন্মাদ জনতার সম্মুখীন হতে, কারাগারে, বেত্রাঘাত সহ্য করতে, ও প্রস্তরাঘাত সহ্য করতে। ইহা তাকে শক্তি যোগায় ধর্মভ্রষ্টতার বিপক্ষে ও যিহুদী প্রভাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। তা তাকে সাহায্য করে অদৃশ্য পৈশাচিক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। বাস্তবপক্ষে, তা তাকে শেষ অবধি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করে।—২ করিন্থীয় ১০:৪, ৫; ১১:২১-২৭; ইফিষীয় ৬:১১, ১২.
৩. ঈশ্বরের শান্তি সম্বন্ধে কি প্রশ্ন তোলা হয়েছে?
৩ কি শক্তিশালী শক্তি এই শান্তি তিনি অনুভব করেছিলেন! আমরা কি আজ শিখতে পারি তাহা কি? তাহা কি আমাদের সাহায্য করবে হৃদয়কে রক্ষা করতে ও শক্তি যোগাবে “বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ” করতে এই “শেষ কালে বিষম সময়”?—১ তীমথিয় ৬:১২; ২ তীমথিয় ৩:১.
ঈশ্বরের সাথে শান্তি—কি করে তা হারিয়ে যায়
৪. বাইবেলে “শান্তি” কথার কি, কি মানে দেওয়া হয়েছে?
৪ বাইবেলে এই শব্দ “শান্তি” তার অনেক অর্থ আছে। এখানে কিছু তালিকা দেওয়া হল যেমন পাওয়া যায় দ্যা নিউ ইর্ণ্টারন্যাশানল ডিক্সনারী অফ নিউ টেস্টামেন্ট থিওলজি: “সমস্ত [পুরাতন নিয়মে], [সা.লোম’] (শান্তি) শুভ-কামনা কথার পূর্ণ অভিব্যক্তি (বিচারকর্তৃগণ ১৯:২০); সাফল্য (গীত ৭৩:৩), যেখানে ঈশ্বর জড়িত নেই; দৈহিক স্বাস্থ্য (যিশাইয় ৫৭:১৮[, ১৯]; গীত ৩৮:৩); পরিতৃপ্তি . . . (আদি ১৫:১৫ ইত্যাদি); দুই জাতি ও মানুষের মধ্যে ভাল সর্ম্পক ( . . . বিচারকর্তৃগণ ৪:১৭; ১ বংশা ১২:১৭, ১৮); মুক্তি ( . . . যির ২৯:১১; cf. যির ১৪:১৩)।” সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল যিহোবার সাথে শান্তিপূর্ণ সর্ম্পক, যা ছাড়া অন্য যে কোন শান্তি, খুব ভাল যদি হয়, তবে ক্ষনিকের ও সীমাবদ্ধ।—২ করিন্থীয় ১৩:১১.
৫. কি ভাবে সৃষ্টির আরম্ভে শান্তি বিদ্ধিত হয়?
৫ সৃষ্টির সময়, সমস্ত সৃষ্টি যিহোবার সাথে সম্পূর্ণ শান্তিতে ছিল। সেই জন্য উত্তম কারণে ঈশ্বর ঘোষণা করেন যে তার সকল সৃষ্টির কাজ অতি উত্তম। সত্যই, সেই স্বর্গীয় দূতরা তা দেখে আনন্দে জয়ধ্বনি করে। (আদিপুস্তক ১:৩১; ইয়োব ৩৮:৪-৭) সেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডব্যাপী শান্তি কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তা ভেঙ্গে যায় যখন সেই আত্মিক প্রাণী যে এখন শয়তান নামে পরিচিত সে ঈশ্বরের বুদ্ধিদীপ্ত নতুন সৃষ্টি, হবাকে, ঈশ্বরের বাধ্যতা থেকে সরিয়ে নেয়। হবার স্বামী, আদম, তাকে অনুকরণ করে, এবং এই তিন বিদ্রোহীর মাধ্যমে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে গোলযোগ দেখা দেয়।—আদিপুস্তক ৩:১-৬.
৬. ঈশ্বরের সাথে মনুষ্য যে শান্তি হারায় তার ফল কি হয়?
৬ ঈশ্বরের শান্তি হারান আদম ও হবার জন্য ক্ষতিকারক হয়, যারা এখন দৈহিক দিক দিয়ে অবনতির দিকে যেতে থাকে যা শেষ হয় মৃত্যুতে। পরমদেশে শান্তি উপভোগ করার পরিবর্ত্তে, আদমকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এদোনের বাইরে সেই অপ্রস্তুত জমিকে ফলবান করতে যাতে তার পরিবারকে খাওয়াতে পারে। এক সিদ্ধ মানবজাতির জননী হবার পরিবর্ত্তে, হবা নিয়ে আসে অসিদ্ধ সন্তানাদি, কষ্টে ও বেদনায়। ঈশ্বরের সাথে শান্তির অভাব নিয়ে আসে অপরাধ ও হিংসা মনুষ্যদের মধ্যে। কয়িন তার ভাই হেবলকে হত্যা করে, আর প্লাবনের সময়, সমস্ত পৃথিবী অপরাধে পূর্ণ হয়। (আদিপুস্তক ৩:৭–৪:১৬; ৫:৫; ৬:১১, ১২) আমাদের প্রথম পিতামাতা যখন মারা যায়, তারা নিশ্চয় তাদের কবরে পরিতৃপ্ত হয়ে যায়নি, “শান্তিতে,” যেমন অব্রাহাম করেন অনেক শত বৎসর পরে।—আদিপুস্তক ১৫:১৫.
৭. (ক) কি ভাববাণী ঈশ্বর করেন যা দেখায় সম্পূর্ণ শান্তি আবার ফিরে আসবে? (খ) ঈশ্বরের শত্রু শয়তান কত প্রভাবশালী হয়?
৭ আদম ও হবা শান্তি হারানোর পর, আমরা দেখি বাইবেল প্রথম শত্রুতার বর্ণনা দেয়। ঈশ্বর শয়তানের সাথে কথা বলেন এবং বলেন: “আর আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) সময় যত অতিবাহিত হয়, শয়তানের প্রভাব সেই পর্য্যায় যায় যে প্রেরিত যোহন বলতে পারেন: “সমস্ত জগত পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) যে জগত শয়তানের অধীনে আছে তা নিশ্চয় ঈশ্বরের সাথে শান্তিতে নাই। সঠিকভাবে তাই, প্রেরিত যাকোব খ্রীষ্টানদের সতর্ক করেন: “তোমরা কি জাননা যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা?”—যাকোব ৪:৪.
শত্রুভাবাপন্ন জগতে শান্তিতে থাকা
৮, ৯. আদম পাপ করার পর, মনুষ্যরা কিভাবে ঈশ্বরের সাথে শান্তিতে আসতে পারে?
৮ যখন ঈশ্বর এদোনে, প্রথম “শত্রুতা” কথাটি উল্লেখ করেন, তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেন যে কিভাবে সম্পূর্ণ শান্তি সৃষ্টিতে ফিরে আসবে। ঈশ্বরের নারীর সেই প্রতিজ্ঞাত বীজ আদি শান্তিভঙ্গকারির মস্তক চূর্ণ করবে। এদোন থেকে যারা সেই প্রতিজ্ঞাতে বিশ্বাস দেখিয়েছে তারা ঈশ্বরের সাথে শান্তির এক সম্বন্ধ উপভোগ করেছে। অব্রাহামের জন্য, তা বন্ধুত্বে পরিণত হয়।—২ বংশাবলী ২০:৭; যাকোব ২:২৩.
৯ মোশির সময়, যিহোবা অব্রাহামের পৌত্র ইস্রায়েলের সন্তানদের, এক জাতিতে পরিণত করেন। তিনি তাঁর যে শান্তি তা সেই জাতিকে প্রদান করেন, যা পরিলক্ষিত হয় যখন হারণ, মহাযাজক তাদের উপর যে আশীর্ব্বাদ ঘোষণা করেন তার দ্বারা: “যিহোবা তোমাকে আশীর্ব্বাদ করুন ও তোমাকে রক্ষা করুন তোমার প্রতি আপন মুখ উজ্জ্বল করুন, ও তোমাকে অনুগ্রহ করুন; যিহোবা তোমার প্রতি আপন মুখ উত্তোলন করুন, ও তোমাকে শান্তি দান করুন।” (গণনাপুস্তক ৬:২৪-২৬) যিহোবার শান্তি উত্তম পুরস্কার নিয়ে আসবে, কিন্তু তার শর্ত ছিল।
১০, ১১. ইস্রায়েলের জন্য শান্তি কিসের উপর নির্ভরশীল ছিল, আর তার ফল কি হবে?
১০ যিহোবা সেই জাতিকে বলেন: “যদি তোমরা আমার বিধিপথে চল, আমার আজ্ঞা সকল মান ও সে সমস্ত পালন কর, তবে আমি যথাকালে তোমাদিগকে বৃষ্টি দান করিব; তাহাতে ভূমি শস্য উৎপন্ন করিবে, ও ক্ষেত্রের বৃক্ষ সকল স্ব স্ব ফল দিবে। আর আমি দেশে শান্তি প্রদান করিব; তোমরা শয়ন করিলে কেহ তোমাদিগকে ভয় দেখাইবে না; এবং আমি তোমাদের দেশ হইতে হিংস্র জন্তুদিগকে দূর করিয়া দিব; ও তোমাদের দেশে খড়গ ভ্রমণ করিবে না। আর আমি তোমাদের মধ্যে গমনাগমন করিব ও তোমাদের ঈশ্বর হইব, তোমরা আমার প্রজা হইবে।” (লেবীয়পুস্তক ২৬:৩, ৪, ৬, ১২) ইস্রায়েল যে শান্তি উপভোগ করে তার অর্থ হচ্ছে যে তারা শত্রুদের কাছ থেকে নিরাপত্তা পাবে, জাগতিক প্রাচুর্য্য, ও যিহোবার সাথে এক নিকট সম্বন্ধ। কিন্তু এই সব নির্ভর করবে তারা যিহোবার আজ্ঞা পালন করবে কিনা তার উপরে।—গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫.
১১ তাদের ইতিহাসে, যখন ইস্রায়েলিয়রা বিশ্বস্ততার সাথে যিহোবার আজ্ঞা সকল পালন করে তারা তাঁর সাথে শান্তি উপভোগ করে, আর তা প্রায়ই নিয়ে আসে অনেক আশীর্ব্বাদ। রাজা শলোমনের প্রথমের দিকে রাজত্বকালে, ঈশ্বরের সাথে শান্তি নিয়ে আসে জাগতিক সমৃদ্ধি এবং ইস্রায়েলের যে প্রতিবেশীরা ছিল তাদের সাথে যুদ্ধ করা থেকে শান্তি। সেই সময়ের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে, বাইবেল আমাদের বলে: “শলোমনের সমস্ত অধিকার-সময়ে দান অবধি বের-শেবা পর্য্যন্ত যিহুদা ও ইস্রায়েল প্রত্যেক জন আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুর বৃক্ষের তলে নির্ভয়ে বাস করিত।” (১ রাজাবলী ৪:২৫) যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সাথে যুদ্ধবিগ্রহ দেখা দেয়, বিশ্বস্ত ইস্রায়েলিয়দের সেই শান্তি ছিল ঈশ্বরের সাথে যা সত্যই গুরুত্ত্বপূর্ণ। সেই কারণে, রাজা দায়ূদ, যিনি একজন বিখ্যাত যোদ্ধা ছিলেন, লেখেন: “আমি শান্তিতে শয়ন করিব, নিদ্রাও যাইব; কেননা, হে যিহোবা, তুমিই একাকী আমাকে নির্ভয়ে বাস করিতে দিতেছ।”—গীতসংহিতা ৪:৮.
শান্তির এক শ্রেষ্ঠতর ভিত্তি
১২. ইস্রায়েল অবশেষে ঈশ্বরের সাথে শান্তি কি ভাবে উপেক্ষা করে?
১২ অবশেষে, যে বীজ সম্পূর্ণ শান্তি নিয়ে আসবে তিনি উপস্থিত হন যীশু রূপে, এবং তার জন্মের সময় দূতেরা গীত গান করে: “উর্দ্ধলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে তাঁহার প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।” (লূক ২:১৪) যীশু ইস্রায়েলে অবির্ভূত হন, কিন্তু যদিও তারা ঈশ্বরের নিয়মের অধিনে ছিল, সেই জাতি তাকে উপেক্ষা করে, এবং তারা তাকে রোমীয়দের হাতে তুলে দেয় যাতে তিনি হত হন। তার মৃত্যুর কিছু পূর্ব্বে, যীশু ক্রন্দন করে যিরুশালেমের বিষয় বলেন: “তুমি, তুমিই যদি আজিকার দিনে, যাহা যাহা শান্তিজনক, তাহা বুঝিতে—কিন্তু এখন সে সকল তোমার দৃষ্টি হইতে গুপ্ত রহিল।” (লূক ১৯:৪২; যোহন ১:১১) যেহেতু ইস্রায়েল যীশুকে উপেক্ষা করে, তারা ঈশ্বরের সাথে সমস্ত শান্তি হারায়।
১৩. কি নতুন আয়োজন ঈশ্বর করেন যাতে মনুষ্য তার সাথে আবার শান্তিতে ফিরে আসতে পারে?
১৩ যাহাহোক, ঈশ্বরের যে উদ্দেশ্য তা বিফল হয়নি। যীশু মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থান পান, এবং তার জীবনের সিদ্ধ মূল্য প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ যিহোবার কাছে অর্পণ করেন সমস্ত ধার্ম্মিক হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য। (ইব্রীয় ৯:১১-১৪) যীশুর প্রায়শ্চিত্ত মনুষ্যদের জন্য নতুন ও উত্তম পথ হয়—উভয় মাংশিক ইস্রায়েল ও পরজাতীয়দের জন্য—যাতে তারা ঈশ্বরের সাথে শান্তি খুজে পেতে পারে। পৌল তার পত্রে রোমীয় খ্রীষ্টানদের লেখেন: “কেননা যখন আমরা শত্রু ছিলাম, ঈশ্বরের সহিত তাঁহার পুত্রের মৃত্যুর দ্বারা সম্মিলিত হইলাম।” (রোমীয় ৫:১০) প্রথম শতাব্দীতে, যারা এইরূপ শান্তি করে তাদের মনোনিত করা হয় পবিত্র আত্মার মাধ্যমে ও ঈশ্বরের দত্তক সন্তান করা হয় এবং নতুন আত্মিক জাতির সদস্য করা হয় যাদের বলা হয় “ঈশ্বরের ইস্রায়েল।”—গালাতীয় ৬:১৬; যোহন ১:১২, ১৩; ২ করিন্থীয় ১:২১, ২২; ১ পিতর ২:৯.
১৪, ১৫. ঈশ্বরের যে শান্তি তা বর্ণনা করুন, ও ব্যাখ্যা করুন কি করে তা একজন খ্রীষ্টানকে রক্ষা করতে পারে যখন সে শয়তানের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়।
১৪ এই নতুন আত্মিক ইস্রায়েলিয়রা শয়তান ও তার জগতের ঘৃণার বস্তু হবে। (যোহন ১৭:১৪) যাহাহোক, “তারা পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট থেকে শান্তি পাবে।” (২ তীমথিয় ১:২) যীশু তাদের বলেন: “এই সমস্ত তোমাদিগকে বলিলাম, যেন তোমরা আমাতে শান্তি প্রাপ্ত হও। জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।”—যোহন ১৬:৩৩.
১৫ এই শান্তি পৌল ও তার সাথী খ্রীষ্টানদের সাহায্য করে সব বাধা সহ্য করে যেতে। ইহা প্রদর্শন করে এক শান্ত মনোভাব, ও যোগবন্ধন ঈশ্বরের সাথে যা সম্ভব হয় যীশুর প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে। যার মধ্যে তাহা আছে তা তাকে মনের শান্তি দেয় যখন সে অবিহিত হয় যিহোবা তার জন্য যে চিন্তা রাখে তার জন্য। এক শিশু যে তার প্রেমময় পিতার বাহুতে থাকে সে এইরূপ শান্তি অনুভব করে, কারণ প্রশ্নাতিত ভাবে সে জানে যে কেউ তার প্রতি লক্ষ্য রাখছে যে তার যত্ন নেয়। পৌল ফিলিপীয়দের উৎসাহ দেন: “কোন বিষয় ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাঞ্চা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মনকে খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।”—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.
১৬. ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি কিভাবে প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতি প্রভাব ফেলে?
১৬ ঈশ্বরের সাথে মানুষ যে শান্তি হারায় তার একটি ফল হয় ঘৃণা ও গোলোযোগ। প্রথম শতাব্দীতে যে খ্রীষ্টানরা, ঈশ্বরের সাথে শান্তি খুজে পেয়েছিল তাদের জন্য ফল হয় ঠিক তার বিপরীত: তাদের মধ্যে ছিল শান্তি ও একতা, যাকে পৌল বলেন “শান্তির যোগবন্ধন।” (ইফিষীয় ৪:৩) তাদের ‘চিন্তায় ছিল একতা এবং তারা শান্তিতে বসবাস করত, আর শান্তির ও প্রেমের ঈশ্বর তাদের সাথে ছিল।’ আরও, তারা “শান্তির সুসমাচার প্রচার করত,” যা ছিল, পরিত্রাণের সুসমাচার তাদের জন্য যারা ‘শান্তির বন্ধু,’ যারা এই সুসমাচারে সাড়া দেয়।—২ করিন্থীয় ১৩:১১; প্রেরিত ১০:৩৬; লূক ১০:৫, ৬.
শান্তির এক নিয়ম
১৭. ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাথে আজ কি করেছেন?
১৭ এইরূপ শান্তি কি আজ খুজে পাওয়া যায়? হাঁ, যায়। যখন থেকে গৌরবান্বিত যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে ১৯১৪ সাল থেকে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপিত হয়েছে, যিহোবা ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশদের একত্র করে এই জগত থেকে আলাদা করেন ও তাদের সাথে শান্তির এক নিয়ম স্থাপন করেন। তার মাধ্যমে তিনি যিহিষ্কেলকে করা তার যে ভাববাণী তা পূর্ণ করেন: “আমি তাহাদের জন্য শান্তির নিয়ম স্থির করিব, তাহাদের সহিত তাহা চিরস্থায়ী নিয়ম হইবে; আমি তাহাদিগকে বসাইব ও বাড়াইব, এবং আপন ধর্ম্মধাম চিরকালের জন্য তাহাদের মধ্যে স্থাপন করিব।” (যিহিষ্কেল ৩৭:২৬) যিহোবা এই নিয়ম মনোনীত খ্রীষ্টানদের সাথেও করেন, যারা তাদের প্রথম শতাব্দীর ভাইদের মত, যীশুর বলিদানের উপর বিশ্বাস প্রদর্শন করে। সমস্ত আত্মিক দুষন থেকে পরিস্কৃত হয়ে, তারা নিজেদের তাদের আত্মিক পিতার কাছে উৎসর্গ করেছে এবং চেষ্টা করে চলেছে তাদের স্বর্গীয় পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য, বিশেষভাবে সারা বিশ্বে স্থাপিত রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে ঘোষণা করার দ্বারা।—মথি ২৪:১৪.
১৮. কোন ব্যক্তিরা যখন জানতে পেরেছে যে ঈশ্বরের নাম এখন ঈশ্বরের ইস্রায়েলের উপরে আছে তখন তারা কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?
১৮ ভাববাণী বলে চলে: “আর আমার আবাস তাহাদের উপরে অবস্থিতি করিবে, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে। তখন আমি যে ইস্রায়েলের পরিত্রাণকারী যিহোবা, তাহা জাতিগণ জানিবে।” (যিহিষ্কেল ৩৭:২৭, ২৮) এর সাথে তাল রেখে, সহস্র সহস্র, হাঁ, লক্ষ লক্ষ লোকেরা, “জাতিগণের” মধ্যে থেকে মেনে নিয়েছে যে যিহোবার নাম ঈশ্বরের ইস্রায়েলের উপরে আছে। (সখরিয় ৮:২৩) সমস্ত জাতিগণের মধ্যে থেকে, তারা এসে একত্র হয়েছে সেই আত্মিক জাতির সাথে যিহোবাকে সেবা করার জন্য, প্রকাশিতবাক্যে সেই “বিরাট জনতা” যা দেখা যায় তা গঠন করে। তারা “তাদের বস্ত্র ধৌত করেছে মেষশাবকের রক্তে,” তারা মহাক্লেশের মধ্যে দিয়ে পার হয়ে যাবে এক শান্তিপূর্ণ নতুন জগতে।—প্রকাশিতবাক্য ৭:৯, ১৪.
১৯. ঈশ্বরের লোকেরা আজ কি ধরনের শান্তি উপভোগ করে?
১৯ একসাথে, ঈশ্বরের ইস্রায়েল ও সেই বিরাট জনতা সেই আত্মিক শান্তি উপভোগ করে যা ইস্রায়েলিয়রা করেছিল রাজা শলোমনের রাজত্বকালে। তাদের সম্বন্ধে মীখা ভবিষ্যৎবাণী করেন: “আর তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্ত্যা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না। কিন্তু প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” (মীখা ৪:৩, ৪; যিশাইয় ২:২-৪) এর সাথে মিল রেখে, তারা যুদ্ধ ও বিগ্রহ থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে, রূপকভাবে তাদের খড়্গ ভেঙ্গে লাঙ্গলের ফাল ও বড়শা ভেঙ্গে কাস্ত্যা গড়েছে। সেই কারণে, তারা তাদের আন্তরর্জাতিক ভ্রাতৃত্বের মধ্যে শান্তি পায়, তাদের ভাষা, বর্ণ, আর্থিক পরিস্থিতি ও জাতি যাই হোক না কেন। তারা আনন্দ পায় যিহোবা যে যত্ন তাদের উপর নেন তার জন্য। ‘কেহ তাদের ভীত করে না।’ সত্যই, ‘যিহোবা তার লোকদের শান্তি দিয়েছেন। যিহোবা তার লোকদের শান্তি দ্বারা আশীর্ব্বাদ করেছেন।—গীতসংহিতা ২৯:১১.
২০, ২১. (ক) কেন আমাদের কাজ করতে হবে ঈশ্বরের সাথে শান্তি বজায় রাখার জন্য? (খ) শয়তান যে চেষ্টা করে চলেছে ঈশ্বরের লোকদের শান্তি ভঙ্গ করার জন্য সেই সম্বন্ধে আমরা কি বলতে পারি?
২০ যেমন প্রথম শতাব্দীতে হয়েছিল, সেইভাবে, ঈশ্বরের লোকদের শান্তি শয়তানের ক্রোধ নিয়ে এসেছে। ১৯১৪ সালে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হবার পর থেকে, শয়তান যুদ্ধ করে চলেছে “বংশের সেই অবশিষ্ট [নারীর] বীজের সাথে।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) এই বর্ত্তমান দিনে, পৌল আমাদের সতর্ক করেন: “কেননা রক্তমাংসের সহিত নয়, . . . স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” (ইফিষীয় ৬:১২) শয়তান যেহেতু এখন এই পৃথিবীর চৌহদ্দির মধ্যে বাঁধা, এই সর্তকবাণী আরও গুরুত্বপূর্ণ।
২১ শয়তান তার কাছে যত কৌশল আছে তা ব্যবহার করেছে ঈশ্বরের লোকদের শান্তিকে বিঘ্নিত করার জন্য, কিন্তু সে বিফল হয়েছে। ১৯১৯ সালে, ১০,০০০ জনও ছিল না যারা চেষ্টা করছিল ঈশ্বরকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করতে। আজ, প্রায় চল্লিশ লক্ষের উপর ব্যক্তিরা তাদের বিশ্বাসের মাধ্যমে জগতকে জয় করছে। (১ যোহন ৫:৪) এদের জন্য, শান্তি ঈশ্বরের সাথে ও একে অপরের সাথে বাস্তব, যদিও তাদের শয়তান ও তার বীজের ক্রোধ সহ্য করতে হয়। কিন্তু এই ক্রোধের কথা চিন্তা করে, এবং আমাদের অসিদ্ধতার কথা চিন্তা করে এবং যে “শেষ কালে বিষম সময়” যার মধ্যে আমরা বাস করছি তার কথা চিন্তা করে, আমাদের অধ্যবসায়শীল হতে হবে শান্তিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। (২ তীমথিয় ৩:১) এর পরের প্রবন্ধে, আমরা দেখব এর সাথে কি জড়িত। (w91 3/1)
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ কেন মানুষ ঈশ্বরের সাথে তার আদি শান্তি হারায়?
◻ ইস্রায়েলের জন্য, শান্তি কিসের উপর নির্ভরশীল ছিল?
◻ ঈশ্বরের সাথে শান্তি আজ কিসের উপরে নির্ভরশীল?
◻ “ঈশ্বরের শান্তি” কি যা আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করে?
◻ যদি আমরা ঈশ্বরের সাথে শান্তি বজায় রাখি তবে আরও কি আশীর্ব্বাদ পাব?