অম্মোনীয়রা—একটি জাতি যারা দয়ার প্রতিদানে শত্রুতা করেছিল
আধুনিক শহর অম্মোন, হশেমীয় রাজ্য যর্দ্দনের রাজধানী, যা পৃথিবীর দৃশ্যপট থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া একটি জাতির কথা স্মৃতিতে সংরক্ষিত রাখে। তাদের অম্মোনীয় বলা হত। তারা কারা ছিল এবং তাদের পতন থেকে আমরা কী শিক্ষা অর্জন করতে পারি?
অম্মোনীয়রা ছিল ধার্মিক ব্যক্তি লোটের বংশধর। (আদিপুস্তক ১৯:৩৫-৩৮) যেহেতু লোট অব্রাহামের ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন, আপনি বলতে পারেন অম্মোনীয়রা ইস্রায়েলীয়দের আত্মীয় ছিল। যাইহোক, লোটের বংশধরেরা, মিথ্যা ঈশ্বরের উপাসনায় লিপ্ত হয়েছিল। তবুও, যিহোবা ঈশ্বর তাদের প্রতি এক আগ্রহ বজায় রেখেছিলেন। যখন ইস্রায়েল জাতি প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশের জন্য অগ্রসর হচ্ছিল, ঈশ্বর তাদের সতর্ক করেছিলেন: “[অম্মোনীয়দের] ক্লেশ দিও না, তাহাদের সহিত বিরোধ করিও না; কারণ আমি তোমাকে অধিকারার্থে অম্মোন-সন্তানদের দেশের অংশ দিব না, কেননা আমি লোটের সন্তানগণকে তাহা অধিকার করিতে দিয়াছি।”—দ্বিতীয় বিবরণ ২:১৯.
অম্মোনীয়রা কি এই দয়া উপলব্ধি করেছিল? পরিবর্তে, যিহোবার দেওয়া সমস্ত বিষয়গুলিকে স্বীকার করতে তারা অসম্মত হয়েছিল। তাদের প্রতি ঈশ্বরের সদয় আগ্রহের প্রতিদানে তারা ঈশ্বরের জাতি ইস্রায়েলের সাথে তীব্র শত্রুতা করেছিল। যদিও ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার আজ্ঞার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন রকম আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয়নি, তবুও অম্মোনীয় ও তাদের মোয়াবীয় ভ্রাতারা ভীত হয়েছিল। এটি যদিও সত্য যে অম্মোনীয়রা কোন সামরিক আক্রমণ করেনি, কিন্তু তারা বিলিয়ম নামে এক ভবিষ্যৎ বক্তাকে উৎকোচ দিয়েছিল এবং ইস্রায়েলকে অভিশাপ দিতে বলেছিল!—গণনাপুস্তক ২২:১-৬; দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:৩-৬.
সেই সময় এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। বাইবেলের বিবরণ জানায় যে বিলিয়ম তার অভিশাপ বাক্য উচ্চারণ করতে অসমর্থ হয়েছিল। সে তাদের কেবলমাত্র এই বলে আশীর্বাদই করতে পেরেছিল: “যে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে, সে আশীঃপ্রাপ্ত, যে তোমাকে শাপ দেয়, সে শাপগ্রস্ত।” (গণনাপুস্তক ২৪:৯) যারা এর সাথে যুক্ত ছিল, যার অন্তর্ভুক্ত হল অম্মোনীয়রা, তাদের এর থেকে এক উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করা উচিত ছিল: যখন ঈশ্বরের লোকেরা জড়িত ছিল তখন তিনি তাদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য সুসজ্জিত ছিলেন!
তবুও অম্মোনীয়রা, ইস্রায়েলের বিরোধিতা করবার জন্য ক্রমাগত পথ খুঁজতে থাকে। বিচারকর্তৃগণের সময়কালে অম্মোন, মোয়াব ও অমালেকের সাথে সঙ্গবদ্ধ হয়েছিল ও প্রতিজ্ঞাত দেশ আক্রমণ করার জন্য যিরিহো পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু, এই জয় স্বল্পকাল স্থায়ী ছিল, কারণ ইস্রায়েলীয় বিচারক এহূদ আক্রমণকারীদের প্রতিহত করেছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৩:১২-১৫, ২৭-৩০) বিচারক যিপ্তহের সময় পর্যন্ত অস্বস্তিপূর্ণভাবে এক সাময়িক যুদ্ধবিরতি ছিল। সেই সময়ের মধ্যে ইস্রায়েল জাতি প্রতিমাপূজায় লিপ্ত হয়েছিল, সুতরাং যিহোবা তাঁর সুরক্ষা অপসারণ করেছিলেন। তাই প্রায় ১৮ বছরের জন্য ঈশ্বর “অম্মোন-সন্তানদের হস্তে তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন।” (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১০:৬-৯) আবার অম্মোনীয়রা শোচনীয় পরাজয় ভোগ করে যখন ইস্রায়েলীয়রা প্রতিমাপূজা পরিত্যাগ করে ও যিপ্তহের নেতৃত্বের অধীনে পুনরায় একত্রিত হয়।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১০:১৬–১১:৩৩.
ইস্রায়েলের প্রথম রাজা শৌলের রাজ্যাভিষেকের দ্বারা, ইস্রায়েলের উপর বিচারকর্তৃগণের শাসনের যুগ শেষ হয়। শৌল রাজত্ব শুরু করার অল্প কিছু পরেই অম্মোনদের শত্রুতা আবার শুরু হয়। রাজা নাহশ ইস্রায়েলীয় শহর যাবেশ-গিলিয়দে অতর্কিত আক্রমণ করে। যখন নগরের লোকেরা শান্তি স্থাপনের জন্য আবেদন করেছিল, অম্মোনীয় নাহশ এক সাঙ্ঘাতিক দাবি জানায়: “আমি এই পণে তোমাদের সহিত নিয়ম স্থির করিব যে, তোমাদের সকলের দক্ষিণ চক্ষু উৎপাটন করিতে হইবে।” ইতিহাসবেত্তা ফ্লেভিয়াস যোসেফাস দাবি করেন যে এটি সামরিক দিক দিয়ে পক্ষপাতপূর্ণভাবে করা হয়েছিল যাতে “যখন তাদের বাঁ চোখ ঢাল দিয়ে ঢাকা থাকবে, তারা যুদ্ধে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকারী হয়ে পড়বে”। এই নিষ্ঠুর চূড়ান্ত শর্তের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল এই ইস্রায়েলীয়দের প্রতি অপমানকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।—১ শমূয়েল ১১:১, ২.
আবার অম্মোনীয়রা যিহোবার দয়ার প্রতিদানে শত্রুতা করেছিল। যিহোবা এই বিদ্বেষপূর্ণ ভীতি প্রদর্শনকে অবজ্ঞা করেননি। “[নাহশের] ঐ কথা শুনিলে পর ঈশ্বরের আত্মা শৌলের উপরে সবলে আসিলেন, এবং তাহার ক্রোধ অতিশয় প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠিল।” ঈশ্বরের আত্মার নির্দেশনার অধীনে শৌল ৩,৩০,০০০ জন যোদ্ধার এক বাহিনী একত্র করে অম্মোনীয়দের এমন সম্পূর্ণভাবে ছত্রভঙ্গ করেছিল যে “তাহাদের দুই জন এক স্থানে থাকিল না।”—১ শমূয়েল ১১:৬, ১১.
স্বার্থপরভাবে তাদের নিজেদের আগ্রহ সর্বাগ্রে পূর্ণ করা, তাদের নির্মমতা এবং তাদের লোভ পরিশেষে অম্মোনীয়দের সম্পূর্ণ ধ্বংসে পরিচালিত করেছিল। যেমন যিহোবার ভাববাদী সফনিয় ভাববাণী করেছিলেন যে তারা “ঘমোরার তুল্য . . . নিত্য ধ্বংসস্থান” হয়েছিল এমনকি অনির্দিষ্ট কালের জন্য, “কেননা তাহারা টিটকারি দিয়াছে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর প্রজাদের বিরুদ্ধে আপনাদিগকে বড় করিয়াছে।”—সফনিয় ২:৯, ১০.
আজকে জগতের নেতাদের লক্ষ্য করা উচিত যে অম্মোনদের প্রতি কী ঘটেছিল। অনুরূপভাবে ঈশ্বর জাতিগণের প্রতি প্রচুর মাত্রায় দয়া দেখিয়েছেন তাঁর পাদপীঠ, এই পৃথিবীতে তাদের জীবন যাপনের অনুমতি দিয়ে। কিন্তু পৃথিবীর প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরিবর্তে স্বার্থপর জাতিগণ এটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এমনকি পারমানবিক ধ্বংসের দ্বারা এই গ্রহকে আঘাত করার ভীতি প্রদর্শন করেছে। পৃথিবীতে যিহোবার উপাসকদের প্রতি দয়া দেখানোর পরিবর্তে তাদের কঠোর তাড়নার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করে জাতিগণ প্রায়ই তাদের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করে। সুতরাং অম্মোনীয়দের বিষয় থেকে শিক্ষাজনক বিষয়টি হল এই যে, যিহোবা তাঁর দয়ার প্রতিদানে শত্রুতাকে কখনই হালকাভাবে নেন না। আর তাঁর নিরূপিত সময়ে তিনি পদক্ষেপ নেবেন, ঠিক যেমন তিনি প্রাচীনকালে নিয়েছিলেন।—তুলনা করুন গীতসংহিতা ২:৬-১২.
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
অম্মোনে রোমীয় ধ্বংসাবশেষ, রাব্বার একটি অঞ্চল, অম্মোনীয়দের রাজধানী
[সজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অম্মোনীয়রা এই অঞ্চলে বাস করত
[সজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.