জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
মে ২-৮
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ২৭-২৯
“দায়ূদ যেভাবে যুদ্ধ করেছিলেন”
প্রহরীদুর্গ ০৭ ৩/১ ২১ অনু. ৭-৮
আসুন আমরা একসঙ্গে যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করি
৭ দায়ূদ নোব থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে পল্টেষ্টীয় অঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং গলিয়াতের নিজ নগর গাতের রাজা আখীশের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। হতে পারে দায়ূদ এই যুক্তি করেছিলেন যে, সম্ভবত শৌল তাকে গাতে খুঁজবেন না। কিন্তু, শীঘ্রই গাতের রাজার দাসেরা দায়ূদকে চিনে ফেলেছিল। দায়ূদ যখন শুনতে পেয়েছিলেন যে, তাকে চিনে ফেলেছে, তখন তিনি “গাতের রাজা আখীশ হইতে অতিশয় ভীত হইলেন।”—১ শমূয়েল ২১:১০-১২.
৮ এরপর পলেষ্টীয়রা দায়ূদকে ধরে ফেলে। হয়তো এই সময়ই দায়ূদ সেই হৃদয়গ্রাহী গীত রচনা করেছিলেন, যেখানে তিনি যিহোবার কাছে এই সনির্বন্ধ আবেদন করেছিলেন: “আমার নেত্রজল তোমার কুপাতে রাখ।” (গীতসংহিতা ৫৬:৮ এবং শীর্ষলিখন) এভাবে তিনি তার এই আস্থা প্রকাশ করেছিলেন যে, যিহোবা তার দুঃখ ভুলে যাবেন না বরং প্রেমের সঙ্গে তার যত্ন নেবেন ও তাকে সুরক্ষা করবেন। এ ছাড়া, পলেষ্টীয় রাজাকে বিভ্রান্ত করার জন্য দায়ূদ একটা কৌশল বের করেছিলেন। তিনি পাগলের ভান করেছিলেন। এটা দেখে রাজা আখীশ তার সামনে একজন “ক্ষিপ্ত” বা উন্মত্ত ব্যক্তিকে নিয়ে আসার জন্য তার দাসদের তিরস্কার করেছিলেন। স্পষ্টতই, যিহোবা দায়ূদের কৌশলকে আশীর্বাদ করেছিলেন। দায়ূদকে সেই নগর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আর এভাবে তিনি আরেকবার একটুর জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন।—১ শমূয়েল ২১:১৩-১৫.
কিশোরবয়সি ভাইয়েরা—কীভাবে তোমরা অন্যদের আস্থা অর্জন করতে পার?
৮ দায়ূদকে আরেকটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পরও, দায়ূদকে যিহূদার উপর শাসন করার জন্য অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। (১ শমূ. ১৬:১৩; ২ শমূ. ২:৩, ৪) সেই সময় দায়ূদ কী করেছিলেন? তিনি কি নিরুৎসাহিতায় ডুবে গিয়েছিলেন? না। তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন এবং যা করতে পারেন, সেটার উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, দায়ূদ শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে পলেষ্টীয়দের দেশে চলে গিয়েছিলেন আর সেখানে থাকা সত্ত্বেও তিনি ইজরায়েলের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। আর এভাবে তিনি যিহূদা এলাকা সুরক্ষিত রেখেছিলেন।—১ শমূ. ২৭:১-১২.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২৪৫ অনু. ৬, ইংরেজি
মিথ্যা
বাইবেল বলে, মিথ্যা বলাকে যিহোবা কোনোভাবেই মেনে নেন না। কিন্তু, এর অর্থ এই নয় যে, একজন ব্যক্তি সেই লোকদের একেবারে ঠিক ঠিক তথ্য দিতে বাধ্য, যা জানার অধিকার তাদের নেই। যিশু খ্রিস্ট এই আদেশে দিয়েছিলেন: “কুকুরের সামনে পবিত্র বস্তু দিয়ো না। কিংবা শূকরের সামনে তোমাদের মুক্তো ফেলো না। যদি ফেল, তা হলে এরা হয়তো সেগুলো পা দিয়ে মাড়াবে এবং ফিরে এসে তোমাদের আক্রমণ করবে।” (মথি ৭:৬) এই কারণে, যিশু কখনো কখনো ইচ্ছে করেই পুরো তথ্য দিতেন না অথবা কোনো কোনো প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতেন না, যখন তিনি বুঝতে পারতেন, এতে ক্ষতি হতে পারে।—মথি ১৫:১-৬; ২১:২৩-২৭; যোহন ৭:৩-১০.
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ১০ ১/১ ২০ অনু. ৫-৬, ইংরেজি
মৃত ব্যক্তিরা কি জীবিত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে?
বাইবেল বলে, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর “মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে” এবং “তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” (গীতসংহিতা ১৪৬:৪) শৌল ও শমূয়েল জানতেন, মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমন ব্যক্তিদের কাছে যারা যায়, ঈশ্বর তাদের ঘৃণা করেন। এই কারণে, শৌল অনেক বছর আগে মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমন ব্যক্তিদের দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন।—লেবীয় পুস্তক ১৯:৩১.
আসুন আমরা ধরে নিই, শমূয়েল আসলেই একজন মৃত ব্যক্তি হিসেবে উঠে এসেছেন। শৌলের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি কি এমন ব্যক্তির সঙ্গে মিলে ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধে যাবেন, যিনি মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে? যিহোবা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তিনি শৌলের সঙ্গে কথা বলতে চান না। মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমন একজন ব্যক্তি কি আসলেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে মৃত শমূয়েলের মাধ্যমে শৌলের সঙ্গে কথা বলার জন্য জোর করতে পারেন? না। এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মৃত ব্যক্তি হিসেবে উঠে আসা এই শমূয়েল আসলে ঈশ্বরের ভাববাদী ছিলেন না। বরং, এটা ছিল এক মন্দ স্বর্গদূত, যে মৃত শমূয়েলের ভান করেছিল।
মে ৯-১৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ৩০-৩১
“আপনার ঈশ্বর যিহোবার সাহায্যে নিজেকে সবল করুন”
যিহোবাকে ভয় করুন—সুখী হোন!
১২ যিহোবার প্রতি ভয় দায়ূদকে কেবল অন্যায় করা থেকে বিরত রাখার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছিল। এটা তাকে কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে চূড়ান্তভাবে পদক্ষেপ নিতে ও বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতেও শক্তিশালী করেছিল। এক বছর চার মাস, দায়ূদ ও তার লোকেরা শৌলের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলেষ্টীয় জনপদ সিক্লগে বাস করেছিল। (১ শমূয়েল ২৭:৫-৭) একবার পুরুষরা যখন নগরের বাইরে ছিল, তখন লুটকারী অমালেকীয়রা এসে নগর পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং সেইসমস্ত পুরুষদের স্ত্রী, সন্তান ও পশুপাল নিয়ে গিয়েছিল। ফিরে এসে এবং যা ঘটেছিল, তা দেখে দায়ূদ ও তার লোকেরা অনেক রোদন করেছিল। সেই শোক শীঘ্রই তিক্ততায় পরিণত হয়েছিল এবং দায়ূদের লোকেরা তাকে পাথর মারার বিষয়ে বলেছিল। যদিও দায়ূদ চরম কষ্ট পেয়েছিলেন কিন্তু হতাশ হয়ে পড়েননি। (হিতোপদেশ ২৪:১০) ঈশ্বরের প্রতি তার ভয় তাকে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পরিচালিত করেছিল এবং তিনি ‘সদাপ্রভুতে আপনাকে সবল করিয়াছিলেন।’ ঈশ্বরের সাহায্যে দায়ূদ ও তার লোকেরা অমালেকীয়দের নাগাল পেয়েছিল এবং সমস্তকিছু উদ্ধার করেছিল।—১ শমূয়েল ৩০:১-২০.
প্রহরীদুর্গ ১২ ৪/১৫ ৩০ অনু. ১৪
যিহোবা আমাদেরকে পরিত্রাণের জন্য রক্ষা করেন
১৪ দায়ূদ জীবনে অনেক দুর্দশাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। (১ শমূ. ৩০:৩-৬) তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য প্রকাশ করে যে, যিহোবা তার অনুভূতি জানতেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:১৮; ৫৬:৮.) ঈশ্বর আমাদের অনুভূতিও জানেন। আমরা যখন ‘ভগ্নচিত্ত’ বা ‘চূর্ণমনা’ হই, তখন তিনি আমাদের নিকটবর্তী হন। সেটাই হয়তো আমাদের যথেষ্ট সান্ত্বনা দিতে পারে, যেমনটা দায়ূদকে দিয়েছিল, যিনি গেয়েছিলেন: “আমি তোমার দয়াতে উল্লাস ও অনন্দ করিব, কেননা তুমি আমার দুঃখ দেখিয়াছ, তুমি দুর্দ্দশাকালে আমার প্রাণের তত্ত্ব লইয়াছ।” (গীত. ৩১:৭) কিন্তু, যিহোবা আমাদের দুর্দশা কেবল লক্ষ করার চেয়েও আরও বেশি কিছু করেন। তিনি সান্ত্বনা ও উৎসাহ জোগানোর মাধ্যমে আমাদের সুস্থির করেন। একটা যে-উপায়ে তিনি তা জুগিয়ে থাকেন তা হল, খ্রিস্টীয় সভাগুলোর মাধ্যমে।
অমূল্য রত্ন
প্রথম শমূয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
৩০:২৩, ২৪. গণনাপুস্তক ৩১:২৭ পদের ওপর ভিত্তি করা এই সিদ্ধান্ত দেখায় যে, যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, যারা মণ্ডলীতে সহকারী ভূমিকা পালন করে। তাই, আমরা যা-ই করি না কেন, আসুন ‘প্রাণের সহিত কার্য্য করি, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] কর্ম্ম বলিয়া করি।’—কলসীয় ৩:২৩.
মে ১৬-২২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ শমূয়েল ১-৩
“‘ধনুক’ নামে শোকের গান থেকে আমরা কী শিখি?”
যাদের কর্তৃত্ব করার অধিকার আছে তাদেরকে সম্মান করুন
৯ শৌল যখন দায়ূদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন তখন কি তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন? নিশ্চয়ই, কারণ দায়ূদ যিহোবার কাছে কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন: “দুর্দ্দান্ত লোকেরা আমার প্রাণের অন্বেষণ করিয়াছে।” (গীতসংহিতা ৫৪:৩) তিনি যিহোবার কাছে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, আমার শত্রুগণ হইতে আমাকে উদ্ধার কর, . . . বলবানেরা আমার বিরুদ্ধে একত্র হইতেছে, হে সদাপ্রভু, আমার অধর্ম্মের জন্য নয়, আমার পাপের জন্য নয়। আমার বিনা অপরাধে তাহারা দৌড়িয়া আসিয়া প্রস্তুত হইতেছে; তুমি আমাকে দেখা দিবার জন্য জাগ্রৎ হও, দৃষ্টিপাত কর।” (গীতসংহিতা ৫৯:১-৪) আপনারও কি কখনও কখনও দায়ূদের মতো মনে হয় যে আপনি, কর্তৃত্ব করার অধিকার আছে এমন কারও কোন ক্ষতি করেননি অথচ সে আপনার পেছনে লেগে আছে? মনে রাখবেন দায়ূদ শৌলকে কখনও অসম্মান করেননি। শৌল মারা গেছে শুনে খুশি না হয়ে বরং তিনি শৌলের শোকে একটা গান লিখেছিলেন: “শৌল ও যোনাথন জীবনকালে প্রিয় ও মনোহর ছিলেন, . . . তাঁহারা ঈগল অপেক্ষা বেগবান ছিলেন, সিংহ অপেক্ষা বলবান ছিলেন। ইস্রায়েল-কন্যাগণ! শৌলের জন্য রোদন কর।” (২ শমূয়েল ১:২৩, ২৪) শৌল দায়ূদকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলেন, তবুও যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তিকে সত্যিকারের সম্মান দেখিয়ে দায়ূদ কত সুন্দর উদাহরণ রেখেছিলেন!
বিশ্বাসঘাতকতা—কালের এক অশুভ চিহ্ন!
৮ বাইবেল অনেক অনুগত ব্যক্তি সম্বন্ধেও বর্ণনা করে। আসুন আমরা তাদের মধ্যে থেকে দুজন ব্যক্তি সম্বন্ধে বিবেচনা করি এবং দেখি যে, তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি। শুরুতেই আমরা এমন একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে বিবেচনা করব, যিনি দায়ূদের প্রতি অনুগত বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন। যোনাথন অর্থাৎ রাজা শৌলের সবচেয়ে বড়ো ছেলেই সম্ভবত ইস্রায়েলের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হতেন—যদি একটা বিষয় না ঘটত। যিহোবা দায়ূদকে ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। যোনাথন ঈশ্বরের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে দায়ূদকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেননি। এর পরিবর্তে, যোনাথনের ‘প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইয়াছিল’ কারণ যোনাথন দায়ূদের প্রতি তার আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি এমনকী দায়ূদকে নিজের সজ্জা, খড়্গ, ধনুক ও কটিবন্ধন দিয়েছিলেন আর এভাবে তাকে রাজকীয় সম্মানে ভূষিত করেছিলেন। (১ শমূ. ১৮:১-৪) যোনাথন ‘দায়ূদের হস্ত সবল’ করার জন্য তার যথাসাধ্য করেছিলেন, এমনকী শৌলের সামনে দায়ূদের পক্ষসমর্থন করার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়েছিলেন। যোনাথন অনুগতভাবে দায়ূদকে এই কথা বলেছিলেন: “তুমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে, এবং আমি তোমার দ্বিতীয় হইব।” (১ শমূ. ২০:৩০-৩৪; ২৩:১৬, ১৭) তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যোনাথনের মৃত্যুর পর দায়ূদ একটা বিলাপগীতে যোনাথনের জন্য নিজের দুঃখ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন।—২ শমূ. ১:১৭, ২৬.
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৩৬৯ অনু. ২, ইংরেজি
ভাই
বাইবেলে “ভাই” শব্দটা সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে, যারা একই বিষয় নিয়ে চিন্তা করে অথবা যাদের একই লক্ষ্য রয়েছে। দায়ূদ যখন লিখেছিলেন: “দেখ, ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে!” তখন তিনি আপন ভাইদের কথা বলছিলেন না। এর অর্থ হল, রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও লোকেরা একতাবদ্ধ হতে পারে এবং তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে। (গীত ১৩৩:১) এই একই কারণে, যোনাথনকে দায়ূদ তার ভাই বলেছিলেন। তাদের দু-জনের একই বাবা-মা ছিল না, বরং একে অপরের প্রতি তাদের প্রেম ছিল এবং একইরকম চিন্তা ছিল বলে দায়ূদ যোনাথনকে ভাই বলেছিলেন।—২শমূ ১:২৬.
মে ২৩-২৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ শমূয়েল ৪-৬
“যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করবেন না”
দ্বিতীয় শমূয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
৬:১–৭. যদিও দায়ূদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল কিন্তু শকটে চড়িয়ে সিন্দুক স্থানান্তর করা ঈশ্বরের আদেশকে লঙ্ঘন করেছিল আর এর ফল ভাল হয়নি। (যাত্রাপুস্তক ২৫:১৩, ১৪; গণনাপুস্তক ৪:১৫, ১৯; ৭:৭-৯) উষের সিন্দুক ধরাও দেখায় যে, ভাল মনোভাব ঈশ্বরের চাহিদার পরিবর্তন করতে পারে না।
যিহোবা সবসময় যা ন্যায্য তা-ই করেন
২০ মনে রাখবেন যে, এই সম্বন্ধে উষের আরও ভালভাবে জানা উচিত ছিল। সিন্দুকটি যিহোবার উপস্থিতিকে প্রতিনিধিত্ব করত। ব্যবস্থায় নির্দিষ্টভাবে বলা ছিল যে, অনধিকারসম্পন্ন ব্যক্তিরা এটি স্পর্শ করবে না, সুস্পষ্টভাবে সাবধানবাণী ছিল যে, লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। (গণনাপুস্তক ৪:১৮-২০; ৭:৮৯) তাই, সেই পবিত্র সিন্দুক স্থানান্তরের কাজটা হালকাভাবে নেওয়ার মতো বিষয় ছিল না। উষ (যদিও যাজক ছিলেন না) স্পষ্টতই একজন লেবীয় ছিলেন, তাই তার ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা উচিত ছিল। তা ছাড়া, বেশ কিছু বছর আগে সিন্দুকটি নিরাপদে রাখার জন্য তার পিতার গৃহে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। (১ শমূয়েল ৬:২০–৭:১) এটা সেখানে প্রায় ৭০ বছর ছিল, যতদিন না দায়ূদ সেটি স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই, একেবারে ছেলেবেলা থেকেই উষ সম্ভবত সিন্দুক সম্বন্ধীয় নিয়মগুলোর বিষয়ে জানতেন।
যিহোবা সবসময় যা ন্যায্য তা-ই করেন
২১ আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, যিহোবা হৃদয় পড়তে পারেন। যেহেতু তাঁর বাক্য উষের কাজকে “হঠকারিতা” বলে অভিহিত করে, তাই যিহোবা নিশ্চয়ই কোনো স্বার্থপর উদ্দেশ্য দেখতে পেয়েছিলেন, যা সেই বিবরণে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এটা কি হতে পারে যে, উষ এক অহংকারী বা ধৃষ্ট ব্যক্তি ছিলেন, যিনি বৈধ সীমাগুলোকে লঙ্ঘন করতে উদ্যত হয়েছিলেন? (হিতোপদেশ ১১:২) তার পরিবার যেটিকে গোপনে রক্ষা করছিল সেই নিয়ম-সিন্দুকটিকে বহন করার সময় প্রকাশ্যে পরিচালনা দেওয়া কি তার মধ্যে আত্মগৌরবের অনুভূতি এনে দিয়েছিল? (হিতোপদেশ ৮:১৩) উষের কি এতটাই অবিশ্বাস ছিল যে তিনি ভেবেছিলেন যিহোবার হাত এতটাই সঙ্কুচিত যে, তাঁর উপস্থিতির প্রতীক সেই পবিত্র সিন্দুককে তিনি রক্ষা করতে পারবেন না? বিষয়টা যা-ই হোক না কেন, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা তা-ই করেছিলেন যা ন্যায্য ছিল। সম্ভবত তিনি উষের হৃদয়ে এমন কিছু দেখেছিলেন, যা তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে বিচার করতে পরিচালিত করেছিল।—হিতোপদেশ ২১:২.
অমূল্য রত্ন
সর্বদা যিহোবার উপর আপনার ভার অর্পণ করুন
রাজা হিসাবে দায়ূদকে এর জন্য কিছু দায়িত্ব বহন করতে হয়েছিল। তার প্রতিক্রিয়া দেখায় যে এমনকি যাদের সাথে যিহোবার ভাল সম্পর্ক আছে তারাও পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে কখনও কখনও মন্দ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। প্রথমত দায়ূদ ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন। তারপর তিনি ভীত হয়েছিলেন। (২ শমূয়েল ৬:৮, ৯) যিহোবার উপর তার নির্ভরশীলতার সম্পর্ক কঠোরভাবে পরীক্ষিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি পরিস্থিতি যখন আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয়েছিল যে তিনি যিহোবার উপর আপনার ভার অর্পণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যখন তিনি তাঁর আজ্ঞাসকল অনুসরণ করেননি। কখনও কখনও আমাদের সামনেও কি এইধরনের পরিস্থিতি আসতে পারে? তাঁর নির্দেশাবলী অবজ্ঞা করার ফলস্বরূপ যখন আমরা সমস্যার সম্মুখীন হই তখন কি আমরা কখনও যিহোবাকে দোষারোপ করি?—হিতোপদেশ ১৯:৩.
মে ৩০–জুন ৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ শমূয়েল ৭-৮
“দায়ূদের সঙ্গে যিহোবা একটা চুক্তি করেছিলেন”
‘তোমার রাজত্ব স্থির থাকিবে’
দায়ূদের আন্তরিক ইচ্ছা যিহোবার হৃদয় স্পর্শ করে। দায়ূদের ভক্তির প্রতি সাড়া দিয়ে ও ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিল রেখে, ঈশ্বর দায়ূদের সঙ্গে এই নিয়ম বা চুক্তি করেন যে, তিনি দায়ূদের রাজবংশে এমন একজনকে উৎপন্ন করবেন, যিনি চিরকাল রাজত্ব করবেন। নাথন দায়ূদের কাছে ঈশ্বরের এই গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে জানান: “তোমার কুল ও তোমার রাজত্ব তোমার সম্মুখে চিরকাল স্থির থাকিবে; তোমার সিংহাসন চিরস্থায়ী হইবে।” (১৬ পদ) কে এই চুক্তির স্থায়ী উত্তরাধিকারী—যিনি চিরকাল রাজত্ব করবেন?—গীতসংহিতা ৮৯:২০, ২৯, ৩৪-৩৬.
‘তোমার রাজত্ব স্থির থাকিবে’
নাসরতের যিশু ছিলেন দায়ূদের এক বংশধর। যিশুর জন্ম সম্বন্ধে ঘোষণা করার সময় একজন স্বর্গদূত বলেছিলেন: “প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; তিনি যাকোব-কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন, ও তাঁহার রাজ্যের শেষ হইবে না।” (লূক ১:৩২, ৩৩) এভাবে, দায়ূদের সঙ্গে করা চুক্তি যিশু খ্রিস্টতে পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাই, তিনি মানুষের মনোনয়নের দ্বারা নয় বরং ঈশ্বরের এক গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে রাজত্ব করেন, যেটা তাঁকে চিরকাল রাজত্ব করার অধিকার প্রদান করে। আসুন আমরা মনে রাখি যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সবসময়ই সত্য বলে প্রমাণিত হয়।—যিশাইয় ৫৫:১০, ১১.
প্রহরীদুর্গ ১৪ ১০/১৫ ১০ অনু. ১৪
রাজ্যের প্রতি অটল বিশ্বাস বজায় রাখুন
১৪ যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের কাছে একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। সেই প্রতিজ্ঞাকে বলা হয়, দায়ূদের সঙ্গে করা চুক্তি। (পড়ুন, ২ শমূয়েল ৭:১২, ১৬.) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, দায়ূদের একজন বংশধর মশীহ হবেন। (লূক ১:৩০-৩৩) এভাবে যিহোবা মশীহের বংশধারা সম্বন্ধে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছিলেন। যিহোবা বলেছিলেন, দায়ূদের এই বংশধরের মশীহ রাজ্যের রাজা হওয়ার “অধিকার” থাকবে। (যিহি. ২১:২৫-২৭) দায়ূদের রাজত্ব চিরকাল থাকবে কারণ দায়ূদের বংশধর যিশু ‘চিরকাল থাকিবেন, তাহার সিংহাসন সূর্য্যের ন্যায় হইবে।’ (গীত. ৮৯:৩৪-৩৭) তাই আমরা এই আস্থা রাখতে পারি, মশীহের শাসন কখনো কলুষিত হবে না এবং এই শাসনের উপকার চিরকাল স্থায়ী হবে!
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২০৬ অনু. ২, ইংরেজি
শেষকাল
বিলিয়মের ভবিষ্যদ্বাণী। ইজরায়েলীয়েরা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার আগে, বিলিয়ম মোয়াবের রাজা বালাক সম্বন্ধে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “আইসুন, এই জাতি উত্তরকালে আপনার জাতির প্রতি কি করিবে, তাহা আপনাকে জ্ঞাত করি। . . . যাকোব হইতে এক তারা উদিত হইবে, ইস্রায়েল হইতে এক রাজদণ্ড উঠিবে, তাহা মোয়াবের দুই পার্শ্ব ভগ্ন করিবে, কলহের সন্তান সকলকে সংহার করিবে।” (গণনা ২৪:১৪-১৭) এই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথম পরিপূর্ণতা স্বরূপ রাজা দায়ূদ ছিলেন সেই “তারা,” যিনি মোয়াবীয়দের পরাজিত করে তার দাস করেছিলেন।—২শমূ ৮:২.
জুন ৬-১২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ শমূয়েল ৯-১০
“দায়ূদ অটল প্রেম দেখিয়েছিলেন”
হ্যাঁ, আপনি সুখ খুঁজে পেতে পারেন
“ধন্য সেই জন, যে দীনহীনের পক্ষে চিন্তাশীল,” দায়ূদ লিখেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন: “বিপদের দিনে সদাপ্রভু তাহাকে নিস্তার করিবেন। সদাপ্রভু তাহাকে রক্ষা করিবেন, জীবিত রাখিবেন, দেশে সে আশীর্ব্বাদ পাইবে।” (গীতসংহিতা ৪১:১, ২) দায়ূদের প্রিয় বন্ধু যোনাথনের খোঁড়া ছেলে মফীবোশতের প্রতি দায়ূদের প্রেমময় চিন্তা বা বিবেচনা দেখানো হচ্ছে দীনহীনের প্রতি সঠিক মনোভাব রাখার এক সুন্দর উদাহরণ।—২ শমূয়েল ৯:১-১৩.
প্রহরীদুর্গ ০৫ ৫/১৫ ১৭ অনু. ১০
দ্বিতীয় শমূয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
৯:১, ৬, ৭. দায়ূদ তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছিলেন। আমাদেরও প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।
প্রহরীদুর্গ ০২ ২/১৫ ১৪ অনু. ১০
তারা তাদের মাংসের কন্টকগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন
১০ রাজা দায়ূদ যোনাথনকে অনেক ভালবাসতেন বলে কয়েক বছর পর মফীবোশতের প্রতি দয়া দেখিয়েছিলেন। দায়ূদ শৌলের সমস্ত সম্পত্তি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং ওই জমি দেখাশোনা করার জন্য শৌলের ভৃত্য সীবঃকে নিযুক্ত করেছিলেন। এছাড়াও দায়ূদ মফীবোশৎকে বলেছিলেন: “তুমি নিত্য আমার মেজে ভোজন করিবে।” (২ শমূয়েল ৯:৬-১০) কোন সন্দেহ নেই যে, দায়ূদের দয়া মফীবোশৎকে সান্ত্বনা দিয়েছিল এবং তার অক্ষমতার দুঃখকে অনেকটা লাঘব করেছিল। কত সুন্দর এক শিক্ষা! মাংসে কন্টকের সঙ্গে লড়াই করছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি আমাদেরও দয়া দেখানো উচিত।
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ২৬৬, ইংরেজি
দাড়ি
সেই সময়ের এবং যুগের লোকদের মধ্যে দাড়ি একজন পুরুষের জন্য মর্যাদা স্বরূপ ছিল। এ ছাড়া, যারা যিহোবাকে উপাসনা করত না, তাদের মধ্যে হয়তো দাড়ি কাটা অথবা ছাঁটা এক ধর্মীয় প্রথা ছিল। সম্ভবত, এই কারণে ঈশ্বরের আইনে “মস্তকপ্রান্তের কেশ” কাটা অথবা দাড়ির কোণ বা আগা ছাঁটা নিষেধ ছিল।—লেবীয় ১৯:২৭; ২১:৫.
জুন ১৩-১৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ শমূয়েল ১১-১২
“অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষা যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে”
আমরা শয়তানের ফাঁদ থেকে পালিয়ে আসতে পারি!
১০ যিহোবার আশীর্বাদের কারণে রাজা দায়ূদের কাছে অনেক ধনসম্পদ ও খ্যাতি ছিল আর তিনি অনেক যুদ্ধেও জয়ী হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যিহোবা তাকে এত আশীর্বাদ করেছিলেন, “সে সকল গণনা করা যায় না।” (গীত. ৪০:৫) কিন্তু, এমন একটা সময় আসে, যখন দায়ূদ যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া আশীর্বাদগুলো ভুলে গিয়েছিলেন এবং লোভী হয়ে উঠেছিলেন। তার অনেক স্ত্রী ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি অন্যের স্ত্রীর প্রতি নজর দিয়েছিলেন। তিনি বৎশেবার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করেছিলেন আর এর ফলে বৎশেবা গর্ভবতী হয়েছিলেন। দায়ূদ ব্যভিচার করে পাপ তো করেছিলেন, তবে বৎশেবার স্বামী ঊরিয়কে হত্যা করে তিনি আরও গুরুতর পাপ করেছিলেন। (২ শমূ. ১১:২-১৫) দায়ূদ দীর্ঘসময় ধরে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, কিন্তু লোভী হয়ে ওঠার ফলে তিনি কত বড়ো ভুল করে ফেলেছিলেন! দায়ূদকে এরজন্য চরম পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু পরে, তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন এবং অনুতপ্ত হয়েছিলেন। যিহোবা দায়ূদকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন বলে তিনি তাঁর প্রতি কতই-না কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন!—২ শমূ. ১২:৭-১৩.
ইচ্ছুক মনে যিহোবার বশীভূত হওয়া—কেন ও কীভাবে?
১৫ যিহোবা দায়ূদকে কেবল তার পরিবারের উপর নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সমগ্র ইস্রায়েল জাতির উপর মস্তক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। রাজা হিসেবে দায়ূদের অনেক ক্ষমতা ছিল। কখনো কখনো তিনি সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন এবং গুরুতর ভুলগুলো করেছিলেন। (২ শমূ. ১১:১৪, ১৫) কিন্তু, তিনি শাসন গ্রহণ করার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি বশ্যতা দেখিয়েছিলেন। তিনি হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। আর তিনি যিহোবার পরামর্শের বাধ্য হওয়ার জন্য নিজের সর্বোত্তমটা করার চেষ্টা করেছিলেন। (গীত. ৫১:১-৪) এর পাশাপাশি, তিনি এতটাই নম্র ছিলেন যে, তিনি শুধু পুরুষদের কাছ থেকে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে মহিলাদের কাছ থেকেও উত্তম পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। (১ শমূ. ১৯:১১, ১২; ২৫:৩২, ৩৩) দায়ূদ নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন এবং যিহোবার সেবা করাকে নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করে তুলেছিলেন।
ঈশ্বরের বিভিন্ন আইন ও নীতির দ্বারা আপনার বিবেককে প্রশিক্ষিত হতে দিন
৭ কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, তা জানার জন্য আমাদের যে ঈশ্বরের আইনগুলো লঙ্ঘন করার দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করতে হবে, এমন নয়। আমরা প্রাচীন কালের ব্যক্তিদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি। এই উদাহরণগুলো বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা আছে। হিতোপদেশ ১:৫ পদ বলে: “জ্ঞানবান শুনিবে ও পাণ্ডিত্যে বৃদ্ধি পাইবে।” এই পাণ্ডিত্য বা নির্দেশনা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে আর তাই, এটা হল সর্বোত্তম নির্দেশনা! উদাহরণ স্বরূপ চিন্তা করুন, দায়ূদ যিহোবার অবাধ্য হওয়ার ও বৎশেবার সঙ্গে অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার পর কতটা কষ্টভোগ করেছিলেন। (২ শমূ. ১২:৭-১৪) আপনি যখন সেই বিবরণটা পড়েন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘কীভাবে দায়ূদ এই সমস্যাগুলো এড়াতে পারতেন? দায়ূদের মতো একইরকম পরিস্থিতিতে পড়লে আমি কী করব? আমাকে যদি অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়, তা হলে আমি কি দায়ূদের মতো হব, না কি যোষেফের মতো হব?’ (আদি. ৩৯:১১-১৫) আমরা যদি পাপের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করি, তা হলে আমরা আরও বেশি করে ‘মন্দকে ঘৃণা করিব।’
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ০৭ ৯/১৫ ২৩ অনু. ১১
আমাদের পিতা করুণাময়
১১ দায়ূদ ও বৎশেবার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিচারটা লাঘব করার আগে, তাদের পাপকে ক্ষমা করতে হতো। ইস্রায়েলীয় যাজকদের তা করার অধিকার ছিল না। তাদেরকে যদি বিষয়টা মীমাংসা করতে দেওয়া হতো, তা হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। ব্যবস্থা অনুযায়ী সেটাই আবশ্যক ছিল। কিন্তু, দায়ূদের সঙ্গে তাঁর চুক্তির কারণে যিহোবা দেখতে চেয়েছিলেন যে, দায়ূদের পাপ ক্ষমা করার কোনো ভিত্তি আছে কি না। (২ শমূয়েল ৭:১২-১৬) তাই, “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” যিহোবা ঈশ্বর, যিনি ‘অন্তঃকরণের পরীক্ষা করিয়া থাকেন,’ তিনি নিজে বিষয়টা মীমাংসা করা বেছে নিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১৮:২৫; ১ বংশাবলি ২৯:১৭) ঈশ্বর একেবারে সঠিকভাবে দায়ূদের হৃদয় পড়তে, তার অনুতাপের অকৃত্রিমতা মূল্যায়ন করতে এবং ক্ষমা করতে সমর্থ ছিলেন।
প্রহরীদুর্গ ১২ ১১/১৫ ২২-২৩ অনু. ৯-১০
যিহোবার ক্ষমা আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?
৯ যিহোবা দায়ূদের পাপের বেদনাদায়ক পরিণতিগুলো দূর করে দেননি। তার বাকি জীবনে তিনি এর পরিণতিগুলো ভোগ করেছিলেন। কিন্তু, দায়ূদের অনুতপ্ত মনোভাব অর্থাৎ তার যে এক “ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ” রয়েছে, তা বুঝতে পেরে যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩২:৫; গীত. ৫১:১৭) সর্বশক্তিমান ঈশ্বর পাপের পিছনে যে-প্রকৃত মনোভাব এবং উদ্দেশ্য থাকে, তা বুঝতে পারেন। মোশির আইন অনুযায়ী মানব বিচারকদের দ্বারা ব্যভিচারের দোষে দোষী ব্যক্তিদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরিবর্তে, যিহোবা করুণার সঙ্গে বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন এবং নিজেই দায়ূদ ও বৎশেবার বিষয়টা দেখেছিলেন। (লেবীয়. ২০:১০) ঈশ্বর এমনকী তাদের ছেলে শলোমনকে ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।—১ বংশা. ২২:৯, ১০.
১০ সম্ভবত আরেকটা বিষয়ের জন্য যিহোবা দায়ূদকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন আর সেটা হল, দায়ূদ নিজে শৌলের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। (১ শমূ. ২৪:৪-৭) যিশু যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, অন্যদের সঙ্গে আমরা যেভাবে আচরণ করি, যিহোবা আমাদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করেন। “তোমরা বিচার করিও না, যেন বিচারিত না হও,” যিশু বলেছিলেন, “কেননা যেরূপ বিচারে তোমরা বিচার কর, সেইরূপ বিচারে তোমরাও বিচারিত হইবে; এবং যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদের নিমিত্ত পরিমাণ করা যাইবে।” (মথি ৭:১, ২) এটা জানা কতই না স্বস্তিদায়ক যে, যিহোবা আমাদের পাপ—এমনকী ব্যভিচারের ও হত্যার মতো গুরুতর পাপগুলোও—ক্ষমা করবেন! তিনি তা করবেন যদি আমাদের ক্ষমাশীল মনোভাব থাকে, যদি আমরা তাঁর কাছে আমাদের পাপগুলো স্বীকার করি এবং যদি আমরা আমাদের মন্দ কাজগুলোর প্রতি এক পরিবর্তিত মনোভাব প্রকাশ করি। পাপীরা যখন আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়, তখন যিহোবার কাছ থেকে “তাপশান্তির সময়” উপস্থিত হয়।—পড়ুন, প্রেরিত ৩:২০.
জুন ২০-২৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ শমূয়েল ১৩-১৪
“অম্নোনের স্বার্থপর মনোভাব দুঃখজনক পরিণতি নিয়ে এসেছিল”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৩২, ইংরেজি
অবশালোম
অম্নোনকে হত্যা করা হয়। অবশালোমের বোন তামর খুব সুন্দরী ছিলেন। এই কারণে তার সৎ দাদা তার প্রেমে পড়ে যান। অম্নোন অসুস্থ হওয়ার ভান করেন এবং তামরকে তার কাছে পাঠাতে বলেন। তামর তার কাছে এসে তার জন্য রান্না করেন। অম্নোন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে অম্নোনের এই কামনা পরিবর্তন হয়ে যায় আর তিনি তামরকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। তাই, তিনি তামরকে বের করে দেন।—২শমূ ১৩:১-২০
ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তুলুন
১১ এ ছাড়া, বাইবেলে এমন লোকেদের উদাহরণ পাওয়া যায়, যারা যৌন অনৈতিকতার প্রলোভন প্রতিরোধ করেনি। আর এটি দেখায় যে, আমাদের মধ্যে যখন ইন্দ্রিয়দমন গুণটা থাকে না, তখন কোন ধরনের খারাপ পরিণতি হতে পারে। আপনি যদি কিমের মতো একইরকম পরিস্থিতিতে থাকেন, তা হলে হিতোপদেশ ৭ অধ্যায়ে বর্ণিত সেই নির্বোধ যুবকের কথা চিন্তা করুন। এ ছাড়া, অম্নোন ও তার আচরণের ভয়াবহ পরিণতি নিয়েও চিন্তা করুন। (২ শমূ. ১৩:১, ২, ১০-১৫, ২৮-৩২) বাবা-মায়েরা পারিবারিক উপাসনার সময় এই উদাহরণগুলো নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধি করার জন্য সাহায্য করতে পারেন।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৩৩, ইংরেজি
অবশালোম
অম্নোন তামরকে ধর্ষণ করার পর দু-বছর কেটে গিয়েছে। তখন মেষের লোম কাটার সময়। এই উপলক্ষ্যে, অবশালোম জেরুসালেম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার (১৪ মাইল) উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাল্-হাৎসোরে এক ভোজের ব্যবস্থা করেন। তিনি দায়ূদ এবং তার সমস্ত ছেলেকে আমন্ত্রণ জানান। দায়ূদ বলেন, তিনি আসতে পারবেন না। তাই, অবশালোম দায়ূদকে অনেক অনুরোধ করেন যেন তিনি তার পরিবর্তে তার প্রথমজাত ছেলে অম্নোনকে পাঠান। (হিতো ১০:১৮) ভোজের সময় অম্নোন যখন “দ্রাক্ষারস পান করে অনেক আনন্দে” ছিলেন, তখন অবশালোম তার দাসদের তাকে হত্যা করার আদেশ দেন। —২শমূ ১৩:২৩-৩৮
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ০৮ ১১/১৫ ৫ অনু. ৩
আপনি কী ধরনের ব্যক্তি হতে চান?
আরেকটা যে-উপায়ে আমরা নির্ধারণ করতে পারি যে, আমাদের কোন পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন, তা হল বাইবেলে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো অধ্যয়ন করে এবং তাদের কোন বিষয়গুলো আকর্ষণীয় ছিল এবং কোনগুলো ছিল না, তা বিবেচনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কুলপতি যাকোবের ছেলে যোষেফের কথা চিন্তা করুন। অবিচারের শিকার হওয়া সত্ত্বেও, যোষেফ এক ইতিবাচক মনোভাব এবং ভিতরের সৌন্দর্য বজায় রেখেছিলেন। (আদি. ৪৫:১-১৫) অন্যদিকে, রাজা দায়ূদের ছেলে অবশালোম ভান করেছিলেন যে, প্রজাদের জন্য তিনি অনেক চিন্তা করেন আর তার সৌন্দর্যের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, তিনি ছিলেন একজন বিশ্বাসঘাতক ও খুনি। (২ শমূ. ১৩:২৮, ২৯; ১৪:২৫; ১৫:১-১২) ভাল হওয়ার ভান করা এবং দৈহিক সৌন্দর্য একজনকে প্রকৃত অর্থে আকর্ষণীয় করে তোলে না।
জুন ২৭–জুলাই ৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ শমূয়েল ১৫-১৭
“অবশালোম তার গর্বের কারণে বিদ্রোহ করেছিলেন”
যিহোবার অনুগত দাসদের কাছ থেকে শিখুন
১০ দায়ূদের ছেলে অবশালোম নম্র ছিলেন না আর তাই তিনি ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকেননি। তিনি রাজা হতে চেয়েছিলেন। এই কারণে তিনি “রথ, অশ্ব ও আপনার অগ্রে অগ্রে দৌড়িবার জন্য পঞ্চাশ জন লোক” রেখেছিলেন। (২ শমূ. ১৫:১) এ ছাড়া, তিনি প্রতারণা করে অনেক ইস্রায়েলীয় ব্যক্তির আনুগত্য লাভ করেছিলেন। এমনকী তিনি নিজের বাবাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, যদিও তিনি জানতেন, যিহোবা দায়ূদকে ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে মনোনীত করেছেন।—২ শমূ. ১৫:১৩, ১৪; ১৭:১-৪.
স্বাধীন ঈশ্বরের সেবা করুন
৫ বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির উদাহরণ রয়েছে, যারা অন্যদের ওপর মন্দ প্রভাব ফেলেছিল। এইরকম একটা উদাহরণ হল, রাজা দায়ূদের একজন পুত্র অবশালোম। অবশালোম অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন। কিন্তু, একসময় তার হৃদয়ও শয়তানের মতো লোভাতুর উচ্চাকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ হয়ে উঠেছিল কারণ তিনি তার পিতার সিংহাসনের প্রতি লোভ করেছিলেন, যা পাওয়ার অধিকার তার ছিল না। চালাকি করে রাজপদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য অবশালোম সহইস্রায়েলীয়দের প্রতি গভীর চিন্তা দেখানোর ভান করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে চতুরতার সঙ্গে এই চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে, রাজদরবারে তাদের প্রতি কোনো চিন্তা দেখানো হয় না। হ্যাঁ, ঠিক এদন উদ্যানের দিয়াবলের মতোই অবশালোম নিজেকে একজন পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন এবং একইসঙ্গে নিষ্ঠুরভাবে তার পিতা সম্বন্ধে কুৎসা রটিয়েছিলেন।—২ শমূ. ১৫:১-৫.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১০৮৩-১০৮৪, ইংরেজি
হিব্রোণ
কয়েক বছর পর, দায়ূদের ছেলে অবশালোম হিব্রোণে যান এবং তার বাবার কাছ থেকে রাজপদ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তিনি সফল হন না। (২শমূ ১৫:৭-১০) কেন তিনি হিব্রোণে গিয়েছিলেন? সম্ভবত, সেটা তার জন্মস্থান ছিল এবং যিহূদার রাজধানী ছিল আর তাই হিব্রোণ ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
অমূল্য রত্ন
আপনার কাছে কি সঠিক তথ্য রয়েছে?
১১ এমন সময় আসতে পারে, যখন আমরা ব্যক্তিগতভাবে এই কারণে আঘাত পাই যে, লোকেরা আমাদের বিষয়ে এমন গল্পগুলো ছড়িয়েছে, যেগুলো কেবল আংশিকভাবে সত্য। মফীবোশতের প্রতি এমনটাই ঘটেছিল। রাজা দায়ূদ উদারভাবে মফীবোশৎকে সেই সমস্ত জায়গাজমি দিয়েছিলেন, যেগুলো তার ঠাকুরদাদা শৌলের সম্পত্তি ছিল। (২ শমূ. ৯:৬, ৭) কিন্তু পরে, দায়ূদ মফীবোশতের বিষয়ে একটা নেতিবাচক গল্প শুনেছিলেন। সেই গল্পটা সত্য না কি মিথ্যা, সেটা পরীক্ষা করে না দেখেই, তিনি মফীবোশতের সমস্ত সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১৬:১-৪) পরবর্তী সময়ে, দায়ূদ যখন তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন দায়ূদ বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি ভুল করে ফেলেছেন। তিনি সেই সম্পত্তির কিছুটা অংশ মফীবোশৎকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১৯:২৪-২৯) দায়ূদ যদি অসম্পূর্ণ তথ্য শুনে সঙ্গেসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরিবর্তে, সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য সময় বের করে নিতেন, তা হলে মফীবোশৎকে এই অবিচার ভোগ করতেই হতো না।