জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
মার্চ ৬-১২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ বংশাবলি ২৩–২৬
“মন্দিরে উপাসনা করার ব্যবস্থা খুব ভালোভাবে করা হয়”
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২৪১, ইংরেজি
লেবীয়
দায়ূদ লেবীয়দের কাজের ব্যবস্থা খুব ভালোভাবে করেন। তিনি লেবীয়দের দেখাশোনা করার কাজে এবং তাদের আধিকারিক, বিচারক, দারোয়ান এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এ ছাড়া, অনেক লেবীয় মন্দিরে ও প্রাঙ্গণগুলোতে যে-যাজকেরা কাজ করত, তাদের সাহায্য করত। আর তারা খাওয়ার ঘরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কাজে সাহায্য করত, যেমন বলি, উৎসর্গ, শুচি করার কাজ, ওজন করার এবং মাপার কাজ, সেইসঙ্গে বিভিন্ন পাহারাদারের কাজ করত। লেবীয় বাদকদের ২৪টা দলে গঠন করা হয়েছিল, যেমনটা যাজকদেরও করা হয়েছিল। আর সেই বাদকেরা পালা পালা করে সেবা করত। কিছু দায়িত্ব ঘুঁটি চেলে ঠিক করা হত।—১বংশা ২৩, ২৫, ২৬; ২বংশা ৩৫:৩-৫, ১০.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৬৮৬, ইংরেজি
যাজক
সহযাজকদের কাজে দেখাশোনা করার জন্য আধিকারিকদের নিযুক্ত করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট কিছু কাজের দায়িত্ব ঘুঁটি চেলে দেওয়া হত। যাজকদের ২৪টা দলে ভাগ করা হয়েছিল এবং তারা বছরে দু-বার কাজ করত আর একবারে এক সপ্তাহ করে কাজ করত। তবে, উৎসবের সময় যখন লোকেরা হাজার হাজার বলি উৎসর্গ করত, তখন সমস্ত যাজক কাজ করত।—১বংশা ২৪:১-১৮, ৩১; ২বংশা ৫:১১; তুলনা করুন, ২বংশা ২৯:৩১-৩৫; ৩০:২৩-২৫; ৩৫:১০-১৯.
প্রহরীদুর্গ ৯৪ ৫/১ ১৬-১৭ অনু. ৮
যিহোবার প্রশংসা গান করুন
৮ বাস্তবিকই, মন্দিরে উপাসনায় সঙ্গীত এমনি এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল যার জন্য ৪,০০০ জন লেবীয়কে বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনের জন্য পৃথক করে রাখা হয়েছিল। (১ বংশাবলি ২৩:৪, ৫) এরা গায়কদের সঙ্গী হত। সঙ্গীতে, বিশেষ করে গায়কেরা, নিয়মের গুরুতর বিষয়গুলি সঞ্চার করার জন্য নয় কিন্তু উপাসনার প্রকৃত মনোভাব প্রদান করতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান গ্রহণ করে। এটি ইস্রায়েলীয়দের যিহোবাকে প্রাণবন্ত উপাসনা করতে সাহায্য করেছিল। এই বিষয়ে প্রস্তুতি ও খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর যে মনোযোগ দেওয়া হয় তা লক্ষ্য করুন: “সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীতগানে শিক্ষিত তাহারা ও তাহাদের ভ্রাতৃগণ সংখ্যায় সর্ব্বশুদ্ধ দুই শত অষ্টাশী জন সঙ্গীতপারদর্শী লোক ছিল।” (১ বংশাবলি ২৫:৭) যিহোবার প্রশংসা গান করাকে তারা কত গুরুত্বপূর্ণভাবে গ্রহণ করেছিল তা লক্ষ্য করুন। তাদের গান গাইতে শিক্ষা দেওয়া হয় ও তারা ছিল পারদর্শী!
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৮৯৮, ইংরেজি
দারোয়ান
মন্দিরে। দায়ূদের সময়ে প্রায় ৪,০০০ জন দারোয়ান ছিল। প্রতিটা দল একবারে সাত দিনের জন্য আসত। তাদের দায়িত্ব ছিল যিহোবার গৃহ পাহারা দেওয়া এবং সঠিক সময়ে দরজা খোলা ও বন্ধ করা। (১বংশা ৯:২৩-২৭; ২৩:১-৬) দারোয়ানের কাজ ছাড়াও কেউ কেউ মন্দিরের জন্য লোকেরা যে-দান নিয়ে আসত, সেটার দেখাশোনা করত। (২রাজা ১২:৯; ২২:৪) পরে একটা সময়ে মন্দিরের দরজার কাছে বিশেষ পাহারাদারদের নিযুক্ত করা হয়েছিল, যাতে তারা অল্পবয়সি যিহোয়াশকে দুষ্ট রানি অথলিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। (২রাজা ১১:৪-৮) রাজা যিহোয়াশ যখন প্রতিমাপূজা দূর করে দিয়েছিলেন, তখন দারোয়ানেরা বাল উপাসনার জন্য ব্যবহৃত সমস্ত কিছু মন্দির থেকে দূর করে দেওয়ার কাজে সাহায্য করেছিল।—২রাজা ২৩:৪.
অমূল্য রত্ন
সত্য উপাসনা আপনার আনন্দ বৃদ্ধি করবে
১০ গান গাওয়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনা করি। (গীত. ২৮:৭) ইজরায়েলীয়রা গান গাওয়াকে তাদের উপাসনার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখত। রাজা দায়ূদ ২৮৮ জন লেবীয়দের মন্দিরে গান গাওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। (১ বংশা. ২৫:১, ৬-৮) বর্তমানে, আমরা যখন যিহোবার প্রশংসার্থে গান গাই, তখন আমরা তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি। তবে, আমরা কত ভালোভাবে গান গাইতে পারি, এটা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এই তুলনাটা বিবেচনা করুন: আমরা কথা বলার ক্ষেত্রে “বিভিন্ন সময় ভুল করে থাকি।” কিন্তু, তাই বলে কি আমরা মণ্ডলীতে ও প্রচারে কথা বলা বন্ধ করে দিই? (যাকোব ৩:২) একইভাবে, গান গাওয়ার সময় আমরা যে-ভুলগুলো করে থাকি, সেগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত নয় কারণ সেটা আমাদের যিহোবার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে।
মার্চ ১৩-১৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ বংশাবলি ২৭–২৯
“একজন বাবা তার ছেলেকে প্রেমের সঙ্গে উপদেশ দেন”
আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করা
৯ বাইবেলের সত্য নিজে পরীক্ষা করে দেখুন। যিহোবার একজন দাস হিসেবে আমাদের পরিচয়ের বোধশক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যদি না তা দৃঢ়ভাবে শাস্ত্রের জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে হয়। (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) প্রত্যেক খ্রিস্টানের—যুবক অথবা বৃদ্ধ সকলের—নিজের সন্তুষ্টির জন্য প্রমাণ করে দেখতে হবে যে, তিনি যা বিশ্বাস করেন, তা বাস্তবিকই সেই সত্য যা বাইবেলে পাওয়া যায়। পৌল সহবিশ্বাসীদের কাছে বিনতি করেছিলেন: “সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা কর; যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখ।” (১ থিষলনীকীয় ৫:২১) যে-অল্পবয়স্ক খ্রিস্টানরা ঈশ্বরভয়শীল পরিবারে রয়েছে, তাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, তারা তাদের বাবামার বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত খ্রিস্টান হতে পারে না। শলোমনের পিতা দায়ূদ তাকে ‘আপন পিতার ঈশ্বরকে জ্ঞাত হইবার, এবং একাগ্র অন্তঃকরণে তাঁহার সেবা করিবার’ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ বংশাবলি ২৮:৯) তার পিতা কীভাবে যিহোবার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলেন, শুধু সেটা দেখাই অল্পবয়স্ক শলোমনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাকেও যিহোবাকে জানতে হতো এবং তিনি তা-ই করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের কাছে বিনতি করেছিলেন: “আমি যেন এই লোকদের সাক্ষাতে বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে পারি, সে জন্য এখন আমাকে বুদ্ধি ও জ্ঞান দেও।”—২ বংশাবলি ১:১০.
প্রহরীদুর্গ ১২ ৪/১৫ ১৬ অনু. ১৩
যিহোবার প্রতি একাগ্র হৃদয় বজায় রাখুন
১৩ শিক্ষাটা স্পষ্ট। আমরা যদি নিয়মিতভাবে গঠনমূলক ও পরিতৃপ্তিদায়ক কার্যকলাপে অংশ নিই যেমন, মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিই এবং ক্ষেত্রে পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করি, তাহলে সেটা প্রশংসনীয়। কিন্তু, যিহোবাকে একাগ্র হৃদয়ে সেবা করার সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত। (২ বংশা. ২৫:১, ২, ২৭) একজন খ্রিস্টান যদি তার হৃদয়ের গভীরে “পিছনে” বা পিছনের বিষয়গুলোকে—অর্থাৎ জগতের জীবনধারার নির্দিষ্ট কিছু দিককে—ভালোবেসেই চলেন, তাহলে তিনি ঈশ্বরের কাছে তার সুনাম হারানোর বিপদের মুখে রয়েছেন। (লূক ১৭:৩২) একমাত্র যখন আমরা সত্যিকার অর্থেই ‘যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা করি এবং যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হই,’ তখনই আমরা “ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী” হতে পারব। (রোমীয় ১২:৯; লূক ৯:৬২) তাই, আমাদের সকলকেই এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে যে, শয়তানের জগতের কোনো কিছুই যেন আমাদেরকে সর্বান্তঃকরণে রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়া থেকে বিরত না করে, তা সেই বিষয়টা যত উপকারী অথবা সুখকর বলেই মনে হোক না কেন।—২ করি. ১১:১৪; পড়ুন, ফিলিপীয় ৩:১৩, ১৪.
প্রহরীদুর্গ ১৭.০৯ ৩২ অনু. ২০-২১
‘সাহস করুন, কার্য্য করুন’
২০ রাজা দায়ূদ শলোমনকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, যিহোবা মন্দির নির্মাণ কাজের একেবারে শেষ পর্যন্ত শলোমনের সহবর্তী হবেন। (১ বংশা. ২৮:২০) শলোমন নিশ্চিতভাবেই এই কথাগুলো নিয়ে ধ্যান করেছিলেন এবং তিনি তার অল্পবয়স ও কম অভিজ্ঞতার কারণে এই কাজ করা থেকে বিরত হননি। এর পরিবর্তে, তিনি প্রচুর সাহস দেখিয়েছিলেন এবং যিহোবার সাহায্যে সাড়ে সাত বছরের মধ্যে সেই চমৎকার মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করেছিলেন।
২১ যিহোবা শলোমনকে সাহায্য করেছিলেন আর তিনি আমাদেরও সাহসী হতে এবং পরিবারে ও মণ্ডলীতে, উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের কাজ সম্পাদন করার জন্য সাহায্য করতে পারেন। (যিশা. ৪১:১০, ১৩) আমরা যদি যিহোবাকে সেবা করার সময়ে সাহস দেখাই, তা হলে এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি বর্তমানে ও ভবিষ্যতে আমাদের আশীর্বাদ করবেন। তাই, ‘সাহস করুন, কার্য্য করুন।’
অমূল্য রত্ন
বন্ধুত্ব ধরে রাখুন যখন বন্ধুত্ব ঝুঁকির মুখে থাকে
দায়ূদের এমন আরও সহযোগী ছিলেন, যারা কঠিন সময়েও তার প্রতি অনুগত ছিলেন। এই ধরনের একজন সহযোগী ছিলেন হূশয়। বাইবেল তাকে “দায়ূদের মিত্র” বলে উল্লেখ করে। (২ শমূ. ১৬:১৬; ১ বংশা. ২৭:৩৩) তিনি হয়তো রাজসভার একজন কর্মচারী ছিলেন অর্থাৎ রাজার একজন ব্যক্তিগত বন্ধু ও সহযোগী ছিলেন আর এমনকী তিনি কখনো কখনো গোপনীয় নির্দেশপত্র বহন করতেন।
দায়ূদের পুত্র অবশালোম যখন সিংহাসন দখল করেছিলেন, তখন অনেক ইস্রায়েলীয় অবশালোমের পক্ষ নিলেও হূশয় তার পক্ষ নেননি। দায়ূদ যখন পালিয়ে গিয়েছিলেন, তখন হূশয় তার কাছে গিয়েছিলেন। নিজের পুত্র এবং তার নির্ভরযোগ্য কিছু ব্যক্তি তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল বলে দায়ূদ অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু হূশয় অনুগত ছিলেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি এমন একটা কার্যভার পালন করতে ইচ্ছুক ছিলেন, যা অবশালোমের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে। হূশয় রাজকর্মচারী হিসেবে কেবল কর্তব্যের খাতিরেই তা করেননি। বরং তিনি নিজেকে একজন অনুগত বন্ধু হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন।—২ শমূ. ১৫:১৩-১৭, ৩২-৩৭; ১৬:১৫–১৭:১৬.
মার্চ ২০-২৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ বংশাবলি ১–৪
“রাজা শলোমন এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১৭৪ অনু. ৫, ইংরেজি
সেনাবাহিনী
ইজরায়েলের মধ্যে শলোমন ছিলেন প্রথম রাজা, যার অনেক অনেক ঘোড়া ও রথ ছিল। আর এগুলো তার সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করত। বেশির ভাগ ঘোড়াই মিশর থেকে আনা হয়েছিল। শলোমনের এত ঘোড়া ও রথ ছিল যে, সেগুলো রাখার জন্য ইজরায়েলের পুরো এলাকাজুড়ে একটা করে নগর তৈরি করতে হয়েছিল। (১রাজা ৪:২৬; ৯:১৯; ১০:২৬, ২৯; ২বংশা ১:১৪-১৭) তবে, যিহোবা শলোমনের এই নতুন পরিকল্পনায় কখনো আশীর্বাদ করেননি।—যিশা ৩১:১.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৪২৭, ইংরেজি
রথ
শলোমনের রাজত্বের আগে ইজরায়েলে রথের এত বিশাল সেনাবাহিনী ছিল না। এর প্রধান কারণ ছিল, ঈশ্বর রাজাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন, যেন তারা ঘোড়ার সংখ্যা না বাড়ায়। একজন রাজা যদি ঘোড়ার সংখ্যা বাড়াত, তা হলে এর অর্থ ছিল, জাতির নিরাপত্তার জন্য তিনি ঘোড়ার উপর নির্ভর করছেন। যেহেতু রথ চালানোর জন্য ঘোড়া ব্যবহার করা হত, তাই কম ঘোড়া থাকলে স্বাভাবিকভাবেই কম রথের প্রয়োজন হত।—দ্বিতীয় ১৭:১৬.
রাজা শলোমন যখন তার সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছিলেন, তখন তিনি রথের সংখ্যা বাড়িয়ে ১,৪০০টা করেছিলেন। (১ রাজা ১০:২৬, ২৯; ২ বংশা ১:১৪-১৭) জেরুসালেম এবং অন্যান্য নগর, যেগুলো “রথের নগর” হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে, সেগুলোতে ঘোড়া ও রথের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু ছিল।—১রাজা ৯:১৯, NW, ২২; ২বংশা ৮:৬, ৯; ৯:২৫.
অমূল্য রত্ন
দ্বিতীয় বংশাবলি বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
১:১১, ১২. শলোমনের যাচ্ঞা যিহোবাকে দেখিয়েছিল যে, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান অর্জন করা রাজার আন্তরিক ইচ্ছা ছিল। ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের প্রার্থনা প্রকৃতপক্ষে প্রকাশ করে যে, আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা কী। আমাদের প্রার্থনার বিষয়বস্তু পরীক্ষা করা বিজ্ঞতার কাজ।
মার্চ ২৭–এপ্রিল ২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ বংশাবলি ৫–৭
‘এই স্থানে প্রতিনিয়ত আমার চিত্ত থাকিবে’
একত্রে মিলিত হওয়া পরিত্যাগ করবেন না
পরে দায়ূদ যখন যিরূশালেমের রাজা ছিলেন, তখন তিনি যিহোবার গৌরবার্থে একটা স্থায়ী গৃহ নির্মাণ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। যেহেতু দায়ূদ একজন যোদ্ধা ছিলেন, তাই যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “তুমি আমার নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিবে না।” এর পরিবর্তে, তিনি মন্দির নির্মাণ করার জন্য দায়ূদের পুত্র শলোমনকে বেছে নিয়েছিলেন। (১ বংশাবলি ২২:৬-১০) সাড়ে সাত বছর ধরে চলা নির্মাণ কাজের পর সা.কা.পূ. ১০২৬ সালে শলোমন মন্দির উদ্বোধন করেছিলেন। আর যিহোবা এই নির্মাণকাজকে অনুমোদন করে বলেছিলেন: “এই যে গৃহ তুমি নির্ম্মাণ করিয়াছ, ইহার মধ্যে চিরকালের জন্য আমার নাম স্থাপনার্থে আমি ইহা পবিত্র করিলাম, এবং এই স্থানে প্রতিনিয়ত আমার চক্ষু ও আমার চিত্ত থাকিবে।” (১ রাজাবলি ৯:৩) যতদিন পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়রা বিশ্বস্ত থাকবে, ততদিন পর্যন্ত যিহোবা এই গৃহের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ দেখিয়ে যাবেন। কিন্তু, তারা যদি সঠিক বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তা হলে যিহোবা সেই স্থান থেকে তাঁর অনুগ্রহ সরিয়ে নেবেন আর ‘এই গৃহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।’—১ রাজাবলি ৯:৪-৯, NW; ২ বংশাবলি ৭:১৬, ১৯, ২০.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১০৭৭-১০৭৮, ইংরেজি
মন্দির
ইতিহাস। কখনো কখনো ইজরায়েল যখন যিহোবাকে পরিত্যাগ করেছিল, তখন যিহোবা অন্যান্য জাতিকে মন্দির এবং এর ধনসম্পদ লুট করতে দিয়েছেন। যেমন, শলোমনের ছেলে রহবিয়ামের রাজত্বের সময় মিশরের রাজা শীশক (খ্রিস্টপূর্ব ৯৯৩ সাল) মন্দির উদ্বোধন করার প্রায় ৩৩ বছরের মধ্যেই মন্দিরের ধনসম্পদ লুট করেছিলেন। (১রাজা ১৪:২৫, ২৬; ২বংশা ১২:৯) অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে রাজা নবূখদ্নিৎসরের অধীনে ব্যাবিলনের সেনাবাহিনী পুরোপুরিভাবে মন্দির ধ্বংস করে দিয়েছিল।—২রাজা ২৫:৯; ২বংশা ৩৬:১৯; যির ৫২:১৩.
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ১১ এপ্রিল-জুন ১৯ অনু. ৭
তিনি “মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণ” জানেন
আমরা শলোমনের প্রার্থনা থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি। সহমানবরা হয়তো আমাদের অন্তরস্থ অনুভূতিগুলোকে—আমাদের “আপন আপন মনঃপীড়া” ও “মর্ম্মব্যথা”—পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না। (হিতোপদেশ ১৪:১০) কিন্তু যিহোবা আমাদের হৃদয় জানেন এবং আমাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন। প্রার্থনায় তাঁর কাছে আমাদের হৃদয় উজাড় করে দেওয়া আমাদের বোঝাকে বহন করার জন্য সহজ করে দিতে পারে। “তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও;” বাইবেল বলে, “কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”—১ পিতর ৫:৭.
এপ্রিল ১০-১৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ বংশাবলি ৮-৯
“তিনি প্রজ্ঞাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেছিলেন”
অনেক উদারতা
অবশ্য শলোমনের সঙ্গে দেখা করার জন্য শিবার রানিও অনেকখানি ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, অনেক সময় ব্যয় করেছিলেন এবং কঠোর পরিশ্রমও করেছিলেন। শিবা দেশ আজকের ইয়েমন প্রজাতন্ত্রের এলাকায় ছিল; তাই রানি এবং তার উটে টানা গাড়ি হয়তো ১,৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যিরূশালেমে এসেছিলেন। যেমন যীশু বলেছিলেন “তিনি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে আসিয়াছিলেন।” কেন শিবার রানি এত কষ্ট করে এসেছিলেন? তিনি মূলত “শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনিবার জন্য” এসেছিলেন।—লূক ১১:৩১.
প্রহরীদুর্গ ৯৯ ৭/১ ৩০ অনু. ৪-৫
এমন এক পরিদর্শন যা প্রচুর পুরস্কার এনেছিল
ঘটনা যাই হোক না কেন, রানি “অতি বিপুল ঐশ্বর্য্যসহ, সুগন্ধি দ্রব্য, অতি বিস্তর স্বর্ণ ও মণিবাহক উষ্ট্রগণ সঙ্গে লইয়া” যিরূশালেমে পৌঁছান। (১ রাজাবলি ১০:২ক) কেউ কেউ বলেন যে “অতি বিপুল” কথাটা বোঝায় যে তার সঙ্গে সশস্ত্র রক্ষিবাহিনীও ছিল। আর তা হবে নাই বা কেন, ভেবে দেখলেই বোঝা যায় যে রানি মান-মর্যাদায় প্রভাবশালী ছিলেন আর তিনি কোটি কোটি টাকার সঙ্গে মূল্যবান ধনরত্ন নিয়ে যাত্রা করেছিলেন।
কিন্তু, লক্ষ্য করুন যে শিবার রানি “সদাপ্রভুর নামের পক্ষে” শলোমনের কীর্ত্তি শুনেছিলেন। তাই তিনি শুধু ব্যাবসায়িক লেন-দেন করার জন্য শলোমনের কাছে ছুটে আসেননি। প্রকৃতই রানির আসার এক বড় কারণ ছিল, শলোমনের প্রজ্ঞার কথা শোনা আর সম্ভবত তার ঈশ্বর, যিহোবার সম্বন্ধে কিছু জানা। রানি সম্ভবত শেম বা হামের বংশধর ছিলেন যারা যিহোবার উপাসক ছিলেন। আর তিনি হয়তো জানতে চেয়েছিলেন যে তার পূর্বপুরুষদের ধর্ম কী ছিল।
এমন এক পরিদর্শন যা প্রচুর পুরস্কার এনেছিল
শিবার রানি শলোমনের বিজ্ঞতা এবং তার রাজ্যের সুখসমৃদ্ধি দেখে এতই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি “হতজ্ঞান হইলেন।” (১ রাজাবলি ১০:৪, ৫) কেউ কেউ এই বাক্যাংশটাকে এইভাবে অর্থ করেন যে রানি “শ্বাসরুদ্ধ” হয়ে যান। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি এমনকি এটা বলেন যে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান! সত্যি বিষয় যাই হোক না কেন, রানি যা কিছু দেখেছিলেন আর শুনেছিলেন তা তাকে বিস্মিত করে দিয়েছিল। তিনি শলোমনের দাসেদেরকে ধন্য বলেছিলেন কারণ তারা এই রাজার বিজ্ঞতার কথা শুনতে পেতেন আর সেইসঙ্গে তিনি যিহোবার প্রশংসা করেছিলেন যিনি শলোমনকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। এরপর তিনি শলোমনকে অনেক দামি দামি উপঢৌকন দিয়েছিলেন আর শুধু সোনাই এত ছিল যে, আজকে তার মূল্য প্রায় ৪,০০,০০,০০০ মার্কিন ডলারের সমান। আর শলোমনও রানিকে উপঢৌকন দেন, তিনি রানির “বাসনানুসারে তাঁহার যাবতীয় বাঞ্ছিত দ্রব্য” দিয়েছিলেন।—১ রাজাবলি ১০:৬-১৩.
মিথ্যা ঈশ্বরগুলির বিরুদ্ধে সাক্ষীবৃন্দেরা
১২ ইস্রায়েল যখন বিশ্বস্ত ছিল ইস্রায়েলের উপর যিহোবার মহৎ আশীর্বাদ পার্শ্ববর্তী জাতিগুলির কাছে এক সাক্ষ্যস্বরূপ ছিল। যিহোবার প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদ পুনর্বিবেচনা করার পর ঠিক যেমন মোশি বলেছিলেন: “পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতি দেখিতে পাইবে যে, তোমার উপরে সদাপ্রভুর নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, এবং তাহারা তোমা হইতে ভীত হইবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১০) শলোমনকে তার বিশ্বাসের হেতু প্রজ্ঞা এবং ধন দেওয়া হয়েছিল। তার অধীনে জাতিটি সমৃদ্ধিলাভ এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য শান্তি উপভোগ করেছিল। সেই সময়ের সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “আর পৃথিবীস্থ যে সকল রাজা শলোনের জ্ঞানের সংবাদ শুনিয়াছেন, তাঁহাদের নিকট হইতে সর্ব্বদেশীয় লোক শলোমনের জ্ঞানের উক্তি শুনিতে আসিত।” (১ রাজাবলি ৪:২৫, ২৯, ৩০, ৩৪) শলোমনের দর্শনার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শিবাদেশের রাণী। জাতি এবং রাজার প্রতি যিহোবার আশীর্বাদ নিজের চোখে দেখে, তিনি বলেন: “ধন্য আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিমিত্ত রাজা করণার্থে আপন সিংহাসনে আপনাকে বসাইবার জন্য আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছেন। ইস্রায়েল লোকদিগকে চিরস্থায়ী করণার্থে আপনার ঈশ্বর তাহাদিগকে প্রেম করেন।”—২ বংশাবলি ৯:৮.
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১০৯৭, ইংরেজি
সিংহাসন
ইজরায়েলের শাসকদের মধ্যে কেবলমাত্র শলোমনের তৈরি সিংহাসন সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। (১রাজা ১০:১৮-২০; ২বংশা ৯:১৭-১৯) সিংহাসন পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ছয় ধাপওয়ালা সিঁড়ি সম্বন্ধে বলার পর বিবরণ জানায়: “হাতার নিকটে দুই সিংহমূর্ত্তি দণ্ডায়মান ছিল, আর সেই ছয়টী সোপানের উপরে দুই পার্শ্বে বারোটী সিংহমূর্ত্তি দণ্ডায়মান ছিল।” (২বংশা ৯:১৭-১৯) সিংহের মূর্তিগুলো দিয়ে রাজা হিসেবে শলোমনের কর্তৃত্বকে বোঝানো হয়েছে। (আদি ৪৯:৯, ১০; প্রকা ৫:৫) ১২টা সিংহের মূর্তি দিয়ে সম্ভবত ইজরায়েলের ১২ বংশকে এবং তারা যে এই সিংহাসনের শাসককে সমর্থন করে, সেই বিষয়টা বোঝানো হয়েছে।
এপ্রিল ১৭-২৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ বংশাবলি ১০-১২
“প্রজ্ঞার সঙ্গে দেওয়া উপদেশ মেনে চললে উপকার পাওয়া যায়”
তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারতেন
রহবিয়াম একটা কঠিন সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি যদি লোকেদের অনুরোধ মেনে নেন, তা হলে তাকে ও তার পরিবারকে আর সেইসঙ্গে রাজপ্রাসাদের অন্যান্য ব্যক্তিদের হয়তো তাদের কিছুটা আরামআয়েশ ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু অন্যদিকে, তিনি যদি লোকেদের অনুরোধ না মানেন, তা হলে তারা হয়তো তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। তাই, তিনি কী করেছিলেন? তিনি প্রথমে সেই বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যারা তার বাবাকে সাহায্য করতেন। তারা রহবিয়ামকে লোকেদের অনুরোধ মেনে নিতে বলেছিলেন। কিন্তু এরপর, রহবিয়াম তার সমবয়সি ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আর লোকেদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমার পিতা তোমাদের যোঁয়ালি ভারী করিয়াছিলেন, কিন্তু আমি তাহা আরও ভারী করিব; আমার পিতা তোমাদিগকে কশা দ্বারা শাস্তি দিতেন, কিন্তু আমি বৃশ্চিক দ্বারা দিব।”—২ বংশা. ১০:৬-১৪.
যেভাবে আপনি সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারেন
এছাড়া মণ্ডলীতে যিহোবা পরিপক্ব ব্যক্তিদেরকে দিয়েছেন, যাদের সঙ্গে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি। (ইফিষীয় ৪:১১, ১২) কিন্তু, অন্যদের কাছে পরামর্শ নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কখনও তাদের মতো হওয়া উচিত নয়, যারা যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মনমতো কথা বলেন এমন ব্যক্তিদেরকে খুঁজে পান, ততক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে যেতে থাকেন। এরপর তারা তার পরামর্শ গ্রহণ করেন। এছাড়া, রহবিয়ামের সতর্কতামূলক উদাহরণও আমাদের মনে রাখা উচিত। তাকে যখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, তখন তিনি প্রাচীন ব্যক্তিদের কাছ থেকে অপূর্ব পরামর্শ পেয়েছিলেন, যারা তার বাবার সঙ্গে কাজ করতেন। কিন্তু তাদের পরামর্শ না শুনে তিনি সেই যুবকদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন, যারা তারই সঙ্গে বড় হয়েছিলেন। তাদের পরামর্শ মতো কাজ করে তিনি বোকার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং এর ফলে তার রাজ্যের এক বিরাট অংশ হারিয়েছিলেন।—১ রাজাবলি ১২:১-১৭.
পরামর্শের জন্য এমন ব্যক্তিদের কাছে যান, যাদের জীবন সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা ও শাস্ত্র সম্বন্ধে খুব ভাল জ্ঞান আছে এবং যারা সঠিক নীতিগুলোর প্রতি গভীর সম্মান দেখান। (হিতোপদেশ ১:৫; ১১:১৪; ১৩:২০) যখন সম্ভব হয়, তখন এর সঙ্গে জড়িত সমস্ত নীতি এবং আপনি যে তথ্যগুলো জোগাড় করেছেন সেগুলোর ওপর ধ্যান করার জন্য সময় করে নিন। বিষয়গুলোকে যখন আপনি যিহোবার বাক্যের আলোয় দেখতে পাবেন, তখন সঠিক সিদ্ধান্তটা হয়তো আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৭৬৮ অনু. ১, ইংরেজি
রহবিয়াম
রাজা রহবিয়াম খুব গর্বিতমনা ছিলেন এবং অন্যদের অনুভূতিকে কোনো মূল্যই দেননি আর এই কারণে বেশির ভাগ লোক তাকে সমর্থন করা বন্ধ করে দিয়েছিল। একমাত্র যিহূদা ও বিন্যামীন বংশের লোকেরা, এই দুই রাজ্যের যাজকেরা এবং দশ বংশের কিছু ব্যক্তি তাকে সমর্থন করে গিয়েছিল।—১রাজা ১২:১৬, ১৭; ২বংশা ১০:১৬, ১৭; ১১:১৩, ১৪, ১৬.
অমূল্য রত্ন
তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারতেন
যিহোবার কথা মেনে নেওয়া কি রহবিয়ামের পক্ষে সহজ ছিল? লোকেরা তাদের নতুন রাজা সম্বন্ধে কী চিন্তা করবে? তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তাদের “বৃশ্চিক দ্বারা” শাস্তি দেবেন কিন্তু এখন তিনি সেই চরম বিদ্রোহের বিষয়ে কিছুই করতে যাচ্ছিলেন না! (তুলনা করুন, ২ বংশাবলি ১৩:৭.) কিন্তু, লোকেরা তার বিষয়ে যা-ই চিন্তা করুক না কেন, রহবিয়াম ও তার সেনাবাহিনী “সদাপ্রভুর বাক্য মানিয়া সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে ফিরিয়া গেল।”
এই বিবরণে আমাদের জন্য কোন শিক্ষা রয়েছে? ঈশ্বরের কথা মেনে চলা সবসময়ই বিজ্ঞতার কাজ, এমনকী তখনও, যখন তা করার ফলে লোকেরা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে। আমরা যদি ঈশ্বরের কথা মেনে চলি, তা হলে তিনি সবসময় আমাদের আশীর্বাদ করবেন।—দ্বিতীয়. ২৮:২.
রহবিয়াম ঈশ্বরের কথা মেনেছিলেন বলে তাকে কি আশীর্বাদ করা হয়েছিল? রহবিয়াম তখনও যিহূদা ও বিন্যামীন বংশের উপর শাসন করতেন আর তিনি সেই দুই বংশের এলাকাগুলোতে নতুন নতুন নগর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি বেশ কয়েকটা নগরকে “অতিশয়” দৃঢ় করেছিলেন। (২ বংশা. ১১:৫-১২) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, কিছু সময়ের জন্য তিনি যিহোবার আইন মেনে চলেছিলেন। যেহেতু দশ বংশের রাজ্যে প্রতিমাপূজা শুরু হয়েছিল, তাই অনেকে রহবিয়ামকে ও সেইসঙ্গে সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার জন্য সেখান থেকে যিরূশালেমে এসেছিল। (২ বংশা. ১১:১৬, ১৭) রহবিয়াম যিহোবার কথা মেনে চলেছিলেন বলে তার রাজ্য আরও শক্তিশালী হয়েছিল।
এপ্রিল ২৪-৩০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ২ বংশাবলি ১৩-১৬
“সবসময় যিহোবার উপর নির্ভর করুন”
কিশোরবয়সি ভাইয়েরা—কীভাবে তোমরা অন্যদের আস্থা অর্জন করতে পার?
১২ রাজা আসা কিশোর বয়সে অনেক নম্র ও সাহসী ছিলেন। তার পিতা অবিয়ের পর যখন তাকে রাজা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, তখন তিনি দেশ থেকে মূর্তিপূজা দূর করার জন্য অনেক বড়ো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি “যিহূদার লোকদিগকে তাহাদের পিতৃপূরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণ এবং [তাঁহার] ব্যবস্থা ও আজ্ঞা পালন করিতে আদেশ করিলেন।” (২ বংশা. ১৪:১-৭) পরে, যখন কূশদেশীয় সেরহ ১০ লক্ষ সৈন্য নিয়ে যিহূদা আক্রমণ করতে এসেছিলেন, তখন আসা যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি ছাড়া এমন আর কেহ নাই, যে বলবানের ও বলহীনের মধ্যে সাহায্য করে; হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমাদের সাহায্য কর; কেননা আমরা তোমার উপরে নির্ভর করি।” এই প্রার্থনা থেকে বুঝতে পারি, আসা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাকে ও তার লোকদের রক্ষা করবেন। আসা তার স্বর্গীয় পিতার ক্ষমতার উপর নির্ভর করেছিলেন আর “সদাপ্রভু . . . কূশীয়দিগকে আঘাত করিলেন।”—২ বংশা. ১৪:৮-১২.
কিশোরবয়সি ভাইয়েরা—কীভাবে তোমরা অন্যদের আস্থা অর্জন করতে পার?
১৩ একটু ভেবে দেখো, ১০ লক্ষ সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করা কোনো সহজ বিষয় ছিল না। কিন্তু, যিহোবার উপর নির্ভর করার ফলে আসা সেই যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। তবে, যখন ইজরায়েলের রাজা বাশা কমসংখ্যক সৈন্য নিয়ে যিহূদা আক্রমণ করতে এসেছিলেন, তখন রাজা আসা যিহোবার উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, অরাম দেশের রাজার কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন। এর কারণে তাকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল। তখন থেকে রাজা আসা একটার পর একটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যিহোবা তাঁর ভাববাদী হনানির মাধ্যমে আসাকে বলেছিলেন: “আপনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর না করিয়া অরাম-রাজের উপরে নির্ভর করিলেন, এই জন্য অরাম-রাজের সৈন্য আপনার হস্ত এড়াইল।” (২ বংশা. ১৬:৭, ৯; ১ রাজা. ১৫:৩২) এই ঘটনা থেকে তুমি কী শিখতে পার?
কিশোরবয়সি ভাইয়েরা—কীভাবে তোমরা অন্যদের আস্থা অর্জন করতে পার?
১৪ নম্রতা বজায় রাখো এবং সবসময় যিহোবার উপর নির্ভর করো। তুমি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলে, তখন যিহোবার উপর তোমার সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছিলে। আর যিহোবাও তোমার এই সিদ্ধান্তের জন্য অনেক খুশি হয়েছিলেন। তাই, যিহোবার উপর আস্থা রাখা বন্ধ করে দিও না। এটা ঠিক যে, জীবনে যখন তোমাকে বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে হয়ে, তখন তুমি যিহোবার উপর নির্ভর কর। কিন্তু ছোটোখাটো বিষয়, যেমন আমোদপ্রমোদ ও চাকরি বাছাই করার এবং জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার বিষয় কী বলা যায়? এইরকম বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও নিজের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, যিহোবার উপর নির্ভর করো। বাইবেলের নীতি খোঁজো আর তারপর সিদ্ধান্ত নাও। (হিতো. ৩:৫, ৬) তুমি যদি তা কর, তা হলে যিহোবা খুশি হবেন এবং মণ্ডলীতে তুমি এক সুনাম বজায় রাখতে পারবে।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:১২.
অমূল্য রত্ন
একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করুন!
৭ আমরাও যিহোবার প্রতি একান্তভাবে নিয়োজিত কি না, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি? আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি কঠিন সময়ও যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকব? আমি কি তাঁর মণ্ডলীকে শুচি রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?’ চিন্তা করে দেখুন, তার ঠাকুরমাকে মাতারানির পদ থেকে সরানোর জন্য আসার কতটা সাহসের প্রয়োজন হয়েছিল! কখনো কখনো আপনাকেও হয়তো আসার মতো সাহসী হতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার পরিবারের কোনো সদস্য অথবা ঘনিষ্ঠ বন্ধু যদি পাপ করার পর অনুতপ্ত না হন এবং তাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়, তা হলে? আপনি কি সেই ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা না করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হবেন? আপনার হৃদয় আপনাকে কী করতে পরিচালিত করবে?