-
আবার মন্দির পরিদর্শনসর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন
-
-
অধ্যায় ১০৩
আবার মন্দির পরিদর্শন
যীশু ও তাঁর শিষ্যরা যিরীহো থেকে আসার পর সবেমাত্র বৈথনিয়াতে তৃতীয় রাত্রি কাটিয়েছেন। এখন সোমবার সকাল বেলার প্রথম আলোয়, নিশান ১০ তারিখে, তারা যিরূশালেমের পথে পাড়ি দিয়েছেন। যীশু ক্ষুধার্ত। তাই তিনি যখন পাতা সমেত এক ডুমুর গাছ দেখতে পান, তিনি সেই গাছের কাছে যান দেখবার জন্য তাতে ডুমুর আছে কিনা।
গাছের পাতাগুলি সময়ের আগে পল্লবিত হয়েছে কারণ জুন না আসা পর্যন্ত ডুমুরের সময় নয়, আর তখন মাত্র মার্চ মাসের শেষের দিক। যাইহোক, যীশু মনে করেন যেহেতু পাতা বেরিয়েছে, তাই ডুমুর নিশ্চয় থাকবে। কিন্তু তিনি নিরাশ হন। এই পাতাগুলি গাছটিকে ছ রূপ দিয়েছে। যীশু সেই গাছকে অভিশাপ দেন, এই বলে: “আর কখনও তোমাতে ফল না ধরুক।” যীশু যা বলেন তার ফল পরের দিন সকালে দেখা যায়।
তারপর, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা যিরূশালেমে পৌঁছালেন। তিনি মন্দিরে যান, যা তিনি আগের দিন দুপুরে পরিদর্শন করেছিলেন। আজ, অবশ্য, তিনি সক্রিয় হন, যেমন তিনি হয়েছিলেন তিন বৎসর পূর্বে যখন তিনি ৩০ সা.শ. নিস্তারপর্বে এসেছিলেন। যীশু যারা মন্দিরে ব্যবসা করছিল তাদের বাইরে বার করে দেন ও যারা টাকা পয়সা লেনদেন করছিল তাদের টেবিল ও কপোত-বিআতাদের বেঞ্চ উল্টে দেন। তিনি এমন কি কাউকে মন্দিরের মধ্যে দিয়ে কোন পাত্রও নিয়ে যেতে দেন না।
যারা মন্দিরের মধ্যে টাকা পয়সা লেনদেন ও পশু নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের ভর্ৎসনা করে, তিনি বলেন: “ইহা কি লিখিত নেই, ‘আমার গৃহ প্রার্থনা-গৃহ হইবে’? কিন্তু তোমরা ইহা দস্যুগণের গহ্বর করিয়া তুলিয়াছ।” তারা দস্যু কারণ উৎসর্গের পশুগুলি কেনা ছাড়া যাদের অন্য কোন উপায় ছিল না তাদের কাছ থেকে তারা অত্যধিক দাম নেয়। তাই যীশু এই ধরনের ব্যবসাকে দস্যুবৃত্তি বা চুরির সাথে তুলনা করেন।
যখন প্রধান যাজকগণ, অধ্যাপকরা, ও প্রধানরা জানতে পারে যীশু কি করছেন, তারা উপায় খোঁজে কি করে তাঁকে হত্যা করবে। এর দ্বারা তারা প্রমাণ করে যে তাদের পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু, তারা জানে না কি করে যীশুকে বিনাশ করবে, কারণ লোকেরা সব সময় তাঁর চারিদিকে আছে তাঁর কথা শোনার জন্য।
স্বাভাবিক যিহূদী ছাড়াও, অনেক পরজাতীয়রাও নিস্তারপর্বে এসেছে। এরা ধর্মান্তরিত, এর অর্থ যে তাদের অন্য ধর্ম থেকে যিহূদী ধর্মে আনা হয়েছে। কিছু ধর্মান্তরিত গ্রীকরা, এখন ফিলিপের কাছে আসে ও যীশুকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ফিলিপ আন্দ্রিয়ের কাছে যান, জিজ্ঞাসা করতে যে এইরূপ সাক্ষাত উপযুক্ত কিনা। যীশু তখন মনে হয় মন্দিরে আছেন, যেখানে গ্রীকরা তাঁকে দেখতে পায়।
যীশু জানেন যে তাঁর জীবনের আর খুব অল্প সময় বাকি আছে, তাই তিনি পরিস্থিতি খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেন: “সময় উপস্থিত, যেন মনুষ্যপুত্র মহিমান্বিত হন। সত্য সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, গমের বীজ যদি মৃত্তিকায় পড়িয়া না মরে, তবে তাহা একটিমাত্র থাকে; কিন্তু যদি মরে, তবে অনেক ফল উৎপন্ন করে।”
একটি গমের বীজের মূল্য অনেক কম। কিন্তু যদি, তাহা মাটিতে পোঁতা হয় ও “মরে,” বীজ হিসাবে তার জীবন শেষ হয়, তাহলে কি? তা অঙ্কুরিত হয় ও গাছে পরিণত হয় ও অনেক ফল উৎপন্ন করে। তদ্রূপ, যীশু কেবল একজন সিদ্ধ ব্যক্তি। কিন্তু তিনি যদি ঈশ্বরের কাছে বিশ্বস্ত থেকে মারা যান, তিনি তাদের সকলের জন্য অনন্ত জীবনের উপায় স্বরূপ হন যারা বিশ্বস্ততায় তাঁর মত আত্ম ত্যাগমূলক জীবন যাপন করে। তাই, যীশু বলেন: “যে আপন প্রাণ ভালবাসে, সে তাহা হারায়; আর যে এই জগতে আপন প্রাণ অপ্রিয় জ্ঞান করে, সে অনন্ত জীবনের জন্য তাহা রক্ষা করিবে।”
যীশু অবশ্যই কেবল নিজের বিষয় ভাবছেন না, কারণ তিনি এরপর ব্যাখ্যা করেন: “কেহ যদি আমার পরিচর্য্যা করে, তবে সে আমার পশ্চাদগামী হউক; তাহাতে আমি যেখানে থাকি, আমার পরিচারকও সেইখানে থাকিবে। কেহ যদি আমার পরিচর্য্যা করে, তবে পিতা তাহার সম্মান করিবেন।” যীশুকে অনুকরণ করা ও তাঁর পরিচর্য্যা করা কি অপূর্ব পুরস্কার সকল নিয়ে আসে! ইহা হচ্ছে রাজ্যে খ্রীষ্টের সাথে সহযোগী হওয়ার জন্য পিতার কাছ থেকে গৌরব পাওয়ার পুরস্কার।
তাঁর জন্য যে কষ্ট ও বেদনাদায়ক মৃত্যু অপেক্ষা করছিল সেই সম্বন্ধে ভেবে, যীশু বলে চলেন: “এখন আমার প্রাণ উদ্বিগ্ন হইয়াছে; ইহাতে কি বলিব? পিতঃ, এই সময় পর্যন্ত আমাকে রক্ষা কর।” যা তাঁর জন্য প্রতীক্ষা করছিল তা যদি এড়ান যেত! কিন্তু, না, যেমন তিনি বলেন: “ইহারই নিমিত্ত আমি এই সময় পর্যন্ত আসিয়াছি।” যীশু তাঁর পিতার সমস্ত বন্দোবস্তের সাথে একমত, এমনকি তাঁর নিজের বলিরূপ মৃত্যুর জন্যও। মথি ২১:১২, ১৩, ১৮, ১৯; মার্ক ১১:১২-১৮; লূক ১৯:৪৫-৪৮; যোহন ১২:২০-২৭.
▪ কেন যীশু ডুমুর পাওয়ার আশা করেন যদিও তখন ডুমুরের সময় নয়?
▪ কেন যীশু যারা মন্দিরে ব্যবসা করছিল তাদের “দস্যু” বলে ডাকেন?
▪ কিভাবে যীশু ঠিক গমের বীজের মত যা মরে?
▪ তাঁর জন্য যে যাতনা ও মৃত্যু অপেক্ষা করছে যীশু সেই সম্বন্ধে কি মনে করেন?
-
-
তৃতীয়বার ঈশ্বরের স্বর শোনা যায়সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন
-
-
অধ্যায় ১০৪
তৃতীয়বার ঈশ্বরের স্বর শোনা যায়
যখন যীশু মন্দিরে ছিলেন, তাঁর প্রাণ উদ্বিগ্ন হয় আগত যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ভোগের জন্য। তাঁর প্রধান চিন্তা তাঁর পিতার নামের উপর তা কি প্রভাব ফেলবে, তাই তিনি প্রার্থনা করেন: “পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর।”
তখন, স্বর্গ থেকে, এই বাণী হয় জোরাল গলায় ও ঘোষণা করে: “আমি তাহা মহিমান্বিত করিয়াছি, আবার মহিমান্বিত করিব।”
যে জনতা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারা হতবুদ্ধি হয়। “কোন স্বর্গ দূত ইহাঁর সাথে কথা কহিলেন,” অনেকে বলে। অন্যরা দাবি করে যে মেঘগর্ড্জন করেছে। কিন্তু, আসলে, যিহোবা ঈশ্বর কথা বলেছিলেন! যীশুর ক্ষেত্রে, ঈশ্বরের স্বর, কিন্তু এই প্রথমবার মানুষ শুনছিল তা নয়।
যীশুর বাপ্তিস্মর সময়, সাড়ে তিন বৎসর পূর্বে, যোহন বাপ্তাইজক শোনেন যখন ঈশ্বর যীশুর সম্বন্ধে বলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।” তারপর, গত নিস্তারপর্বের পরে, যখন তিনি, যাকোব, যোহন এবং পিতরের সামনে রূপান্তরিত হন, ঈশ্বর ঘোষণা করেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতে আমি প্রীত, ইহাঁর কথা শুন।” আর এখন, তৃতীয়বার, নিশান ১০ তারিখে, যীশুর মৃত্যুর চারদিন পূর্বে, মানুষ আবার ঈশ্বরের স্বর শুনতে পায়। কিন্তু এবার যিহোবা এমনভাবে কথা বলেন যে বিরাট জনতা তা শুনতে পায়!
যীশু ব্যাখ্যা করেন: “ঐ বাণী আমার জন্য হয় নাই, কিন্তু তোমাদেরই জন্য।” ইহা প্রমাণ করে যে প্রকৃতপক্ষে যীশু ঈশ্বরের পুত্র, সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ। “এখন এ জগতের বিচার উপস্থিত,” যীশু বলে চলেন, “এখন এ জগতের অধিপতি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইবে।” যীশুর বিশ্বস্ত জীবনধারা, নিশ্চিত করে যে, জগতের অধিপতি, শয়তান দিয়াবল, “বাহিরে নিক্ষিপ্ত” হবার যোগ্য।
তাঁর আগত মৃত্যুর পরিণাম কি হবে সেই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে, যীশু বলেন: “আমি ভূতল হইতে উচ্চীকৃত হইলে সকলকে আমার নিকটে আকর্ষণ করিব।” তাঁর মৃত্যু কোন অর্থে হার স্বীকার নয়, কারণ এর মাধ্যমে, তিনি অন্যদের তাঁর কাছে টানবেন, যাতে তারা তাঁর সাথে অনন্ত জীবন উপভোগ করতে পারে।
কিন্তু সেই জনতা প্রতিবাদ করে: “আমরা ব্যবস্থা হইতে শুনিয়াছি যে খ্রীষ্ট চিরকাল থাকেন; তবে আপনি কি প্রকারে বলিতেছেন যে, মনুষ্যপুত্রকে উচ্চীকৃত হইতে হইবে? সেই মনুষ্যপুত্র কে?”
তাদের সব প্রমাণ দেওয়া সত্বেও, ও ঈশ্বরের স্বর শোনা সত্বেও বেশীর ভাগ বিশ্বাস করে না যে যীশুই হচ্ছেন সত্যই সেই মনুষ্যপুত্র, যিনি প্রতিজ্ঞাত মশীহ। তথাপি, ছয়মাস পূর্বে তিনি যেমন করেছিলেন কুটিরবাস পর্বে, পুনরায় যীশু নিজেকে “জ্যোতি” বলে বর্ণনা করেন ও তাঁর শ্রোতাদের উৎসাহ দেন: “যাবৎ তোমাদের কাছে জ্যোতি আছে, সেই জ্যোতিতে বিশ্বাস কর, যেন তোমরা জ্যোতির সন্তান হইতে পার।” এই কথা বলার পর, যীশু গোপনে থাকেন, কারণ তাঁর জীবন বিপন্ন।
যিহূদীদের যীশুতে বিশ্বাসের অভাব যিশাইয়ের ভাববাণীকে পূর্ণ করে ‘এই লোকেরা তাদের চোখ অন্ধ করেছে, তাদের হৃদয় কঠিন করেছে যাতে তারা পরিবর্তন হয়ে সুস্থ না হয়।’ যিশাইয় দর্শনে যিহোবার স্বর্গীয় প্রাঙ্গন দেখেছিলেন, আর সেখানে যীশুকে তাঁর মানব রূপে আসার পূর্বের মহিমায় দেখতে পেয়েছিলেন যিহোবার সাথে। অথচ, যিহূদীরা একগুঁয়ে ভাবে, যিশাইয় যা লেখেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সেই প্রতিজ্ঞাত মুক্তিদাতা রূপে অস্বীকার করে।
অন্যদিকে, অনেকে এমনকি শাসনকর্ত্তারাও (উচ্চ আদালত, যিহূদী মহাসভার সদস্যরাও) যীশুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। নীকদীম ও অরিমাথিয়ার যোষেফ এদের মধ্যে দুইজন। কিন্তু এই শাসকেরা, অন্তত বর্তমানে তাদের বিশ্বাস প্রকাশ করতে ভয় পায়, যে তাদের মহাসভার পদ থেকে বার করে দেওয়া হবে। কত কিছুই না তারা হারায়!
যীশু দৃষ্টি আকর্ষণ করেন: “যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে আমাতে নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাতেই বিশ্বাস করে; এবং যে আমাকে দর্শন করে, সে তাঁহাকেই দর্শন করে, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন। . . . আর যদি কেহ আমার কথা শুনিয়া পালন না করে, আমি তাহার বিচার করি না, কারণ আমি জগতের বিচার করিতে নয়, কিন্তু জগতের পরিত্রাণ করিতে আসিয়াছি। . . . আমি যে বাক্য বলিয়াছি, তাহাই শেষদিনে তাহার বিচার করিবে।”
যিহোবার মানবজাতির প্রতি প্রেম তাঁকে পরিচালনা করে যীশুকে পাঠাতে যাতে যারা তাঁর উপর বিশ্বাস করে তারা যেন রক্ষা পায়। তারা রক্ষা পাবে কিনা তা নির্ধারণ করা হবে যীশুর দ্বারা ঈশ্বর যা বলেছেন তারা তা পালন করেছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে। এই বিচার হবে “শেষের দিনে,” খ্রীষ্টের হাজার বৎসরের রাজত্বে।
যীশু এই বলে শেষ করেন: “কারণ আমি আপনা হইতে বলি নাই; কিন্তু কি কহিব ও কি বলিব, তাহা আমার পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমাকে আজ্ঞা করিয়াছেন। আর আমি জানি যে, তাঁহার আজ্ঞার অর্থ অনন্ত জীবন। অতএব আমি যাহা যাহা বলি, তাহা পিতা আমাকে যেমন কহিয়াছেন, তেমনি বলি।” যোহন ১২:২৮-৫০; ১৯:৩৮, ৩৯; মথি ৩:১৭; ১৭:৫; যিশাইয় ৬:১, ৮-১০.
▪ কোন তিন উপলক্ষে যীশুর ক্ষেত্রে লোকে ঈশ্বরের স্বর শোনে?
▪ কিভাবে ভাববাদী যিশাইয় যীশুর মহিমা দেখেন?
▪ সেই শাসনকর্ত্তারা কারা যারা যীশুর উপর বিশ্বাস রাখে, কিন্তু কেন তারা খোলাখুলি ভাবে তাঁকে স্বীকার করেনি?
▪ “শেষ দিন” কি, এবং কিসের উপর ভিত্তি করে লোকেরা বিচারিত হবে?
-