-
১ ইব্রীয় শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নামঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের জন্য এক সহায়িকা
-
-
১
ইব্রীয় শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নাম
প্রাচীন ইব্রীয় বর্ণে ঈশ্বরের নাম, যা বাবিলে নির্বাসিত হওয়ার আগে ব্যবহার করা হতো
ইব্রীয় বর্ণে ঈশ্বরের নাম, যা বাবিলে নির্বাসিত হওয়ার পরে ব্যবহার করা হতো
মূল ইব্রীয় শাস্ত্র-এ প্রায় ৭,০০০ বার ঈশ্বরের নাম রয়েছে, যা יהוה এই চারটে ইব্রীয় ব্যঞ্জনবর্ণ নিয়ে গঠিত। ইংরেজি ভাষার পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলে এই চারটে বর্ণ, যেগুলো টেট্রাগ্র্যামাটোন হিসেবে পরিচিত, সেগুলোকে “যিহোবা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। এই নামটা বাইবেলে সবচেয়ে বেশি বার এসেছে। যদিও বাইবেল লেখকরা ঈশ্বরকে নির্দেশ করার জন্য “সর্ব্বশক্তিমান,” “পরাৎপর” এবং “প্রভু” এইরকম বিভিন্ন উপাধি এবং বর্ণনামূলক অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছেন কিন্তু টেট্রাগ্র্যামাটোনই হল একমাত্র ব্যক্তিগত নাম, যা তারা ঈশ্বরকে শনাক্ত করার জন্য ব্যবহার করেছেন।
যিহোবা ঈশ্বর নিজে তাঁর নাম ব্যবহার করার জন্য বাইবেল লেখকদের পরিচালিত করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, ভাববাদী যোয়েলকে তিনি এই কথা লিখতে অনুপ্রাণিত করেছেন: “যে কেহ সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকিবে, সেই রক্ষা পাইবে।” (যোয়েল ২:৩২) আর ঈশ্বর একজন গীতরচককে এই কথাগুলো লিখতে পরিচালিত করেছিলেন: “[ইহারা] জানুক যে তুমি, যাঁহার নাম সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) সত্যি বলতে কী, কেবল গীতসংহিতা বইয়ের মধ্যেই ঈশ্বরের নাম প্রায় ৭০০ বার এসেছে। আর এই বইটা কবিতার আকারে লেখা হয়েছিল, যেগুলো ঈশ্বরের লোকেরা গেয়েছিল এবং আবৃত্তি করেছিল। তাহলে, কেন অনেক বাইবেল অনুবাদে ঈশ্বরের নামটা নেই? কেন নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলে “যিহোবা” নামটা ব্যবহার করা হয়েছে? আর ঈশ্বরের এই যিহোবা নামের অর্থ কী?
ডেড সি স্ক্রোল-এর মধ্যে পাওয়া গীতসংহিতা বইয়ের নির্বাচিত অংশ, যেটা ১ থেকে ৫০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। এই পাঠ্যাংশে যে-ইব্রীয় বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা সাধারণত বাবিলে নির্বাসিত হওয়ার পর ব্যবহার করা হতো কিন্তু প্রত্যেক বার টেট্রাগ্র্যামাটোন লেখার সময় প্রাচীন ইব্রীয় বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে
কেন অনেক বাইবেল অনুবাদে এই নামটা নেই? এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করে যে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে শনাক্ত করার জন্য তাঁর এক অদ্বিতীয় নামের প্রয়োজন নেই। অন্যেরা হয়তো যিহুদি রীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই নাম ব্যবহার করা এড়িয়ে চলেছে, যারা সম্ভবত অপবিত্র করার ভয়ে এই নাম ব্যবহার করত না। আবার কেউ কেউ মনে করে যে, যেহেতু ঈশ্বরের নামের একেবারে সঠিক উচ্চারণ সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে জানা নেই, তাই কেবল “প্রভু” অথবা “ঈশ্বর” এইরকম উপাধি ব্যবহার করা আরও উত্তম। কিন্তু, নীচের এই কারণগুলোর জন্য এই ধরনের আপত্তির কোনো ভিত্তি নেই:
যারা যুক্তি দেখায়, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এক অদ্বিতীয় নামের প্রয়োজন নেই, তারা এই প্রমাণ উপেক্ষা করে যে, শুরুতে তাঁর বাক্যের যে-অনুলিপিগুলো ছিল, সেগুলোতে ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম রয়েছে। আর এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু অনুলিপি খ্রিস্টের সময়েরও আগে থেকে সংরক্ষিত ছিল। ওপরে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, ঈশ্বর তাঁর বাক্যে তাঁর নামটা প্রায় ৭,০০০ বার লেখার জন্য পরিচালিত করেছেন। স্পষ্টতই, তিনি চান যেন আমরা তাঁর নাম জানি এবং সেটা ব্যবহার করি।
যে-অনুবাদকরা যিহুদি রীতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ঈশ্বরের নাম বাদ দিয়েছে, তারা একটা মূল বিষয় উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও কিছু যিহুদি অধ্যাপক সেই নাম উচ্চারণ করত না, কিন্তু তারা তাদের বাইবেলের অনুলিপিগুলো থেকে সেই নাম বাদ দিয়ে দেয়নি। ডেড সি-র কাছাকাছি কুমরানে পাওয়া প্রাচীন স্ক্রোলগুলোতে অনেক জায়গায় ঈশ্বরের নামটা রয়েছে। ইংরেজি ভাষার কিছু বাইবেল অনুবাদক ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, মূল পাঠ্যাংশে ঈশ্বরের নামটা ছিল, কারণ সেটা অনুবাদ করার সময় সেই জায়গাগুলোতে তারা বড়ো অক্ষরে “LORD” উপাধিটা ব্যবহার করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই অনুবাদকরা যেখানে স্বীকার করে যে, বাইবেলের পাঠ্যাংশে এই নাম হাজার হাজার বার পাওয়া যায়, সেখানে কেন তারা ঈশ্বরের নামের পরিবর্তে বিভিন্ন উপাধি ব্যবহার করেছে অথবা সেই নামটা বাদ দিয়েছে? কে এইরকম এক বড়ো পরিবর্তন করার অধিকার তাদেরকে দিয়েছে বলে তারা মনে করে? এর উত্তর কেবল তারাই জানে।
যারা এইরকমটা বলে থাকে যে, একেবারে সঠিক উচ্চারণটা জানা নেই বলে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা উচিত নয়, তারা আবার যিশুর নামটা ঠিকই স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করে। কিন্তু, বর্তমানে অধিকাংশ খ্রিস্টান যেভাবে যিশুর নাম উচ্চারণ করে থাকে, সেটার চেয়ে প্রথম শতাব্দীতে যিশুর শিষ্যদের উচ্চারণ বেশ আলাদা ছিল। খুব সম্ভবত যিহুদি খ্রিস্টানরা যিশুর নামকে ইশুয়া হিসেবে উচ্চারণ করত। আর “খ্রিস্ট” উপাধিকে ম্যাশিয়াক হিসেবে উচ্চারণ করা হতো, যেটার অর্থ হচ্ছে “মশীহ।” গ্রিকভাষী খ্রিস্টানরা তাঁকে ইসোয়াস খ্রিস্টস এবং ল্যাটিনভাষী খ্রিস্টানরা ইসাস ক্রিস্টাস বলে সম্বোধন করত। ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় বাইবেলে লিপিবদ্ধ তাঁর নামের গ্রিক অনুবাদ দেখায় যে, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা তাদের ভাষায় প্রচলিত নামটা ব্যবহার করে যুক্তিসংগত পদ্ধতিই অনুসরণ করেছিল। একইভাবে, নতুন জগৎ বাইবেল অনুবাদ কমিটি মনে করে যে, “যিহোবা” নামটা ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত; এমনকী যদিও এই অনুবাদ প্রাচীন ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের নাম যেভাবে উচ্চারণ করা হতো, একেবারে সেটার মতো নয়।
কেন নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলে “যিহোবা” নামটা ব্যবহার করা হয়েছে? টেট্রাগ্র্যামাটোনের চারটে বর্ণ (יהוה), ইংরেজিতে YHWH ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বারা নির্দেশ করা হয়। প্রাচীন ইব্রীয় ভাষায় লিখিত সমস্ত শব্দের মতো, টেট্রাগ্র্যামাটোনের মধ্যেও কোনো স্বরবর্ণ ছিল না। যখন দৈনন্দিন জীবনে প্রাচীন ইব্রীয় ভাষা ব্যবহার করা হতো, তখন পাঠকরা সহজেই এর মধ্যে উপযুক্ত স্বরবর্ণ যোগ করে নিত।
ইব্রীয় শাস্ত্র লেখা সম্পূর্ণ হওয়ার প্রায় এক হাজার বছর পর, যিহুদি পণ্ডিতরা উচ্চারণের নির্দেশিকা পদ্ধতি বা সংকেত উদ্ভাবন করে, যেটার দ্বারা বোঝা যেত যে, ইব্রীয় শব্দগুলো পড়ার সময় কোন স্বরবর্ণগুলো যুক্ত করতে হবে। কিন্তু, ততদিনে অনেক যিহুদির মধ্যে এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধারণা গড়ে উঠেছিল যে, জোরে জোরে ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম উচ্চারণ করা অন্যায় আর এই কারণে তারা বিকল্প অভিব্যক্তি ব্যবহার করত। তাই, খুব সম্ভবত তারা যখন টেট্রাগ্র্যামাটোনের অনুলিপি করেছিল, তখন তারা সেই বিকল্প অভিব্যক্তির স্বরবর্ণগুলোকে চারটে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যোগ করে, যেগুলো ঈশ্বরের নামকে নির্দেশ করে। সুতরাং, যে-পাণ্ডুলিপিগুলোতে সেই স্বরবর্ণগুলো ছিল, সেগুলো ইব্রীয় ভাষায় মূলত কীভাবে নাম উচ্চারণ করা হতো, তা বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্যকারী নয়। কেউ কেউ মনে করে, সেই নামকে “ইয়াওয়ে” হিসেবে উচ্চারণ করা হতো, আবার অন্যেরা মনে করে যে, সেটা অন্যভাবে উচ্চারণ করা হতো। একটা ডেড সি স্ক্রোলে, যেটাতে লেবীয় পুস্তক বইয়ের একটা অংশ রয়েছে, তাতে গ্রিক ভাষায় ঈশ্বরের নামের প্রতিবর্ণীকরণ রূপ হল ইয়াও (Iao)। এই নাম ছাড়াও, প্রাথমিক গ্রিক লেখকরা বলেছিল, এর উচ্চারণ ইয়াই (Iae), ইয়াবি (I·a·beʹ) এবং ইয়েওউয়ি (I·a·ou·eʹ)। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে একেবারে বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করার কোনো কারণ নেই। আমরা আসলে জানি না যে, প্রাচীন কালে ঈশ্বরের দাসেরা ইব্রীয় ভাষায় কীভাবে এই নাম উচ্চারণ করত। (আদিপুস্তক ১৩:৪; যাত্রাপুস্তক ৩:১৫) কিন্তু আমরা যা জানি, সেটা হল ঈশ্বর তাঁর লোকেদের সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার তাঁর নাম ব্যবহার করেছিলেন আর তাঁর দাসেরা তাঁকে সেই নামে ডাকত এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্বচ্ছন্দে সেই নাম ব্যবহার করত।—যাত্রাপুস্তক ৬:২; ১ রাজাবলি ৮:২৩; গীতসংহিতা ৯৯:৯.
তাহলে, কেন নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলে “যিহোবা” নামটা ব্যবহার করা হয়েছে? কারণ ইংরেজি ভাষায় ঈশ্বরের এই নাম ব্যবহার করার এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
১৫৩০ সালে উইলিয়াম টিনডেলের দ্বারা অনুবাদিত পেন্টাটিউক-এর আদিপুস্তক ১৫:২ পদে ঈশ্বরের নাম
১৫৩০ সালে উইলিয়াম টিনডেল যখন পেন্টাটিউক অনুবাদ করেন, তখন প্রথম বার ইংরেজি বাইবেলে ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি “ইহোয়ুআ” নামটা ব্যবহার করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি ভাষা পরিবর্তন হয় এবং ঈশ্বরের নামের বানানেরও আধুনিকীকরণ হয়। উদাহরণ স্বরূপ, ১৬১২ সালে হেনরি এইনস্ওয়ার্থ গীতসংহিতা বই অনুবাদ করার সময় সমস্ত জায়গায় “ইহোভা” নামটা ব্যবহার করেন। এরপর ১৬৩৯ সালে যখন পেন্টাটিউক-সহ সেই বই পরিমার্জিত ও মুদ্রিত করা হয়, তখন সেখানে “যিহোবা” নাম ব্যবহার করেন। ১৯০১ সালে যে-অনুবাদকরা অ্যামেরিকান স্ট্যান্ডার্ড ভারশন বাইবেল অনুবাদ করেন, তারা ইব্রীয় পাঠ্যাংশে যে-সমস্ত জায়গায় ঈশ্বরের নাম ছিল, সেখানে “যিহোবা” নাম ব্যবহার করেন।
১৯১১ সালে সম্মাননীয় বাইবেল পণ্ডিত জোসেফ ব্রায়েন্ট রদারয়েম স্টাডিজ ইন দ্যা সাম্স বইয়ে “ইয়াওয়ে” নামের পরিবর্তে “যিহোবা” নাম ব্যবহার করেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি এমন “একটা নাম” ব্যবহার করতে চান, “যা সাধারণ বাইবেল পাঠকদের কাছে আরও বেশি পরিচিত (ও সেইসঙ্গে একেবারে গ্রহণযোগ্য)।” ১৯৩০ সালে পণ্ডিত এ. এফ. ক্রিকপেট্রিক “যিহোবা” নামের ব্যবহার সম্বন্ধে একইরকম মন্তব্য করেন। তিনি বলেন: “আধুনিক দিনের ব্যাকরণবিদদের মতে এই নামটা ইয়াভে অথবা ইয়াহাভে হিসেবে উচ্চারিত হওয়া উচিত; কিন্তু ইংরেজি ভাষায় যিহোবা নামটা বহুল প্রচলিত আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটার উচ্চারণ নয় বরং এই বিষয়টা উপলব্ধি করা যে, এটা এক নামবাচক বিশেষ্য পদ, কেবল ‘প্রভু’ শব্দের মতো কোনো উপাধি নয়।”
টেট্রাগ্র্যামাটোন, YHWH: “তিনি অস্তিত্বে আনেন”
ক্রিয়াপদ HWH: “অস্তিত্বে আনা”
যিহোবা নামের অর্থ কী? ইব্রীয় ভাষায়, যে-ক্রিয়া পদ থেকে যিহোবা নামটা এসেছে, সেটার অর্থ হল “অস্তিত্বে আনা” আর অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে, এটা ইব্রীয় ক্রিয়া পদটার নিমিত্তবাচক রূপকে বোঝায়। তাই নতুন জগৎ অনুবাদ কমিটি-র বোধগম্যতা অনুসারে, ঈশ্বরের নামের অর্থ হল, “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” এই বিষয়ে বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তির বিভিন্ন মত রয়েছে, তাই এই অর্থের ব্যাপারে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করা উচিত নয়। তবে, এই অর্থ সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর উদ্দেশ্য সাধনকারী হিসেবে যিহোবার ভূমিকার সঙ্গে উপযুক্তভাবে মিলে যায়। তিনি শুধুমাত্র এই নিখিলবিশ্ব ও বুদ্ধিমান প্রাণীদেরই অস্তিত্বে আনেননি কিন্তু সেইসঙ্গে ধীরে ধীরে ক্রমাগতভাবে তাঁর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করেন।
তাই, যিহোবা নামের অর্থ শুধুমাত্র যাত্রাপুস্তক ৩:১৪ পদে (পাদটীকা) প্রাপ্ত সম্পর্কযুক্ত ক্রিয়া পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, যেখানে লেখা রয়েছে: “আমি যে হইব, সেই হইব।” সঠিকভাবে বললে, এটা ঈশ্বরের নামের সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে না। এর পরিবর্তে, এগুলো ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের একটা দিক প্রকাশ করে, যেটা দেখায় যে, তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য প্রতিটা পরিস্থিতিতে যা হওয়া প্রয়োজন, তা-ই হন। তাই যদিও যিহোবা নামের সঙ্গে এই অর্থটা যুক্ত রয়েছে, কিন্তু এটা কেবল তিনি নিজে যা হতে চান, তা হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর সৃষ্টির এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য তিনি যা ঘটাতে পারেন, সেটাও অন্তর্ভুক্ত।
-
-
২ খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নামঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের জন্য এক সহায়িকা
-
-
২
খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নাম
বাইবেল পণ্ডিতরা স্বীকার করে যে, টেট্রাগ্র্যামাটোন (יהוה) দ্বারা চিত্রিত ঈশ্বরের নাম ইব্রীয় শাস্ত্র-এর মূল পাঠ্যাংশে প্রায় ৭,০০০ বার এসেছে। কিন্তু, অনেকে মনে করে, এই নাম খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর মূল পাঠ্যাংশে আসেনি। এই কারণে আধুনিক সময়ে তথাকথিত অধিকাংশ নূতন নিয়ম অনুবাদে যিহোবা নামটা ব্যবহার করা হয়নি। এমনকী ইব্রীয় শাস্ত্র-এ যেখানে টেট্রাগ্র্যামাটোন রয়েছে, তা থেকে উদ্ধৃতি অনুবাদ করার সময়ও অধিকাংশ অনুবাদক ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নামের পরিবর্তে “প্রভু” শব্দটা ব্যবহার করে।
পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলে এই প্রচলিত রীতি অনুসরণ করা হয়নি। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ মোট ২৩৭ বার যিহোবা নামটা ব্যবহার করা হয়েছে। তা করতে গিয়ে অনুবাদকরা দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করেছে: (১) বর্তমানে আমাদের কাছে যে-গ্রিক পাণ্ডুলিপি রয়েছে, তা মূল পাণ্ডুলিপি নয়। বর্তমানে যে-হাজার হাজার অনুলিপি রয়েছে, সেগুলো মূল পাণ্ডুলিপি তৈরি করার প্রায় দুই শতাব্দী পর তৈরি করা হয়েছিল। (২) সেই সময় যারা পাণ্ডুলিপিগুলোর অনুলিপি করেছিল, তারা টেট্রাগ্র্যামাটোনের পরিবর্তে ‘প্রভুর’ জন্য ব্যবহৃত গ্রিক শব্দ কিরিওস (Kyʹri·os) ব্যবহার করেছে অথবা তারা সেই পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে অনুলিপি করেছিল, যেগুলোতে ইতিমধ্যেই তা করা হয়েছিল।
নতুন জগৎ বাইবেল অনুবাদ কমিটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, মূল গ্রিক পাণ্ডুলিপিতে যে টেট্রাগ্র্যামাটোন ছিল, সেটার জোরালো প্রমাণ রয়েছে। তারা নীচের এই প্রমাণগুলোর ওপর ভিত্তি করে সেই সিদ্ধান্তে এসেছিল:
যিশু ও তাঁর প্রেরিতদের সময়ে ইব্রীয় শাস্ত্র-এর যে-অনুলিপিগুলো ব্যবহৃত হতো, সেগুলোর সমস্ত জায়গায় টেট্রাগ্র্যামাটোন ছিল। অতীতে, কেউ কেউ এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিল। তবে, প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় শাস্ত্র-এর সেই অনুলিপিগুলো কুমরানের কাছে পাওয়ার পর এই বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকেনি।
যিশু ও তাঁর প্রেরিতদের সময়ে, ইব্রীয় শাস্ত্র-এর গ্রিক অনুবাদেও টেট্রাগ্র্যামাটোন ছিল। কয়েক-শো বছর ধরে পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করেছিল যে, ইব্রীয় শাস্ত্র-এর গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট অনুবাদের পাণ্ডুলিপিতে টেট্রাগ্র্যামাটোন ছিল না। এরপর, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যিশুর দিনে বিদ্যমান গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট ভারশনের বেশ পুরনো কিছু নথি পণ্ডিত ব্যক্তিদের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছিল। সেই নথিগুলোতে ইব্রীয় অক্ষরে লিখিত ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম রয়েছে। তাই, যিশুর দিনে গ্রিক শাস্ত্রের অনুলিপিগুলোতে ঈশ্বরের নাম ছিল। কিন্তু, চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট-এর প্রধান পাণ্ডুলিপিগুলোতে যেমন, কোডেক্স ভ্যাটিকানাস এবং কোডেক্স সাইনাইটিকাস-এর আদিপুস্তক থেকে মালাখি বইয়ে ঈশ্বরের নাম ছিল না (প্রাচীন পাণ্ডলিপিগুলোতে যেখানে কিনা ঈশ্বরের নাম ছিল)। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, সেই সময়ের পরে সংরক্ষিত পাঠ্যাংশগুলোতে অর্থাৎ বাইবেলের তথাকথিত নূতন নিয়ম অথবা গ্রিক শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নাম ছিল না।
যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “আমি আপন পিতার নামে আসিয়াছি।” এ ছাড়া, তিনি এই বিষয়ের ওপরও জোর দিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর কাজগুলো তাঁর “পিতার নামে” সম্পাদন করেন
খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র থেকে জানা যায় যে, যিশু প্রায়ই ঈশ্বরের নাম উল্লেখ করেছিলেন এবং তা অন্যদের জানিয়েছিলেন। (যোহন ১৭:৬, ১১, ১২, ২৬) যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “আমি আপন পিতার নামে আসিয়াছি।” এ ছাড়া, তিনি এই বিষয়ের ওপরও জোর দিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর কাজগুলো তাঁর “পিতার নামে” সম্পাদন করেন।—যোহন ৫:৪৩; ১০:২৫.
যেহেতু খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় পবিত্র ইব্রীয় শাস্ত্র-এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল, তাই হঠাৎ করে যিহোবার নাম উধাও হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে হবে। প্রথম শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি সময়ে, শিষ্য যাকোব যিরূশালেমের প্রাচীনদের বলেছিলেন: “ঈশ্বর আপন নামের জন্য পরজাতিগণের মধ্য হইতে এক দল প্রজা গ্রহণার্থে কিরূপে প্রথমে তাহাদের তত্ত্ব লইয়াছিলেন, তাহা শিমোন বর্ণনা করিয়াছেন।” (প্রেরিত ১৫:১৪) প্রথম শতাব্দীতে কেউ যদি ঈশ্বরের নাম না-ই জানত কিংবা ব্যবহার না-ই করত, তাহলে এই ধরনের উক্তি করা যাকোবের জন্য যুক্তিযুক্ত হতো না।
খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকাশিত বাক্য ১৯:১, ৩, ৪, ৬ পদে “হাল্লিলূয়া” শব্দের মধ্যে ঈশ্বরের নাম নিহিত রয়েছে। এটা এমন একটা ইব্রীয় অভিব্যক্তি থেকে এসেছে, যেটার আক্ষরিক অর্থ হল, “যাঃয়ের প্রশংসা করো।” “যাঃ” হচ্ছে যিহোবা নামের সংক্ষিপ্ত রূপ। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ ব্যবহৃত অনেক নাম ঈশ্বরের নাম থেকে এসেছে। সত্যি বলতে কী, বিভিন্ন তথ্যগ্রন্থ বলে যে, স্বয়ং যিশুর নামের অর্থ হচ্ছে, “যিহোবা হলেন পরিত্রাণ।”
প্রাচীন যিহুদি লেখাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, যিহুদি খ্রিস্টানরা তাদের লেখাগুলোতে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করেছিল। প্রায় ৩০০ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হওয়া মৌখিক আইনের এক লিখিত সংকলন তোসেফ্টা, বিশ্রামবারে পুড়িয়ে ফেলা খ্রিস্টান লেখাগুলো সম্বন্ধে বলে: “সুসমাচারের বইগুলো এবং মিনিম বইগুলোকে আগুন থেকে রক্ষা করা হয়নি। এর পরিবর্তে, সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল আর এর ফলে সেগুলোতে উল্লেখিত ঈশ্বরের নামও শেষ হয়ে গিয়েছিল।” সেই একই উৎস গালীলীয় রব্বি ইয়োসির এই কথাগুলো উদ্ধৃত করে যে, সপ্তাহের অন্যান্য দিনে “সেই লেখাগুলোতে [সম্ভবত খ্রিস্টান লেখাগুলোতে] যে-সমস্ত জায়গায় ঈশ্বরের নাম ছিল, সেগুলো কেটে আলাদা করা হয়েছিল এবং বাকিগুলো পুড়িয়ে ফেলেছিল।”
কিছু বাইবেল পণ্ডিত স্বীকার করে, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর মধ্যে ইব্রীয় শাস্ত্র-এর যে-উদ্ধৃতি ছিল, তাতে ঈশ্বরের নাম থাকা স্বাভাবিক। দি অ্যাংকর বাইবেল ডিকশনারি “নূতন নিয়ম-এ টেট্রাগ্র্যামাটোন” শিরোনামের মধ্যে বলে: “যখন প্রথম নূতন নিয়ম লেখা হয়েছিল, তখন নূতন নিয়ম-এ পুরাতন নিয়ম-এর যে-উদ্ধৃতি ছিল, সেগুলোর কিছু কিছু জায়গায় অথবা সমস্ত জায়গায় টেট্রাগ্র্যামাটোন অর্থাৎ ঈশ্বরের নাম ইয়াওয়ে এসেছিল।” পণ্ডিত জর্জ হাওয়ার্ড বলেন: “যেহেতু গ্রিক বাইবেলের [সেপ্টুয়াজিন্ট] অনুলিপিগুলোতে তখনও টেট্রাগ্র্যাম ছিল, যা শুরুর দিকের গির্জাগুলো ব্যবহার করত, তাই এটা মেনে নেওয়া যুক্তিসংগত যে, শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি করার সময় নূতন নিয়ম-এর লেখকরা বাইবেলের পাঠ্যাংশের মধ্যে টেট্রাগ্র্যাম ব্যবহার করেছিল।”
সুপরিচিত বাইবেল অনুবাদকরা খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করেছেন। এইরকম কিছু বাইবেল অনুবাদক নতুন জগৎ অনুবাদ প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগেই তা করেছেন। এইরকম কিছু অনুবাদক ও তাদের গ্রন্থ হল: হারম্যান হেইনফিটারের আ লিটারেল ট্রান্সলেশন অভ্ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট . . . ফ্রম দ্যা টেক্সট অভ্ দ্যা ভ্যাটিকান ম্যানুস্ক্রিপ্ট (১৮৬৩); বেঞ্জামিন উইলসনের দি এমফ্যাটিক ডায়াগ্লট (১৮৬৪); জর্জ বার্কার স্টিভেন্সের দি ইপিসলস্ অভ্ পল ইন মডার্ন ইংলিশ (১৮৯৮); ডব্লু. জি. রাদারফোর্ডের সেন্ট পলস্ ইপিসল টু দ্যা রোমান্স (১৯০০); লন্ডনের বিশপ জে.ডব্লু.সি. ওয়ান্ডের দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট লেটারস্ (১৯৪৬)। এ ছাড়া, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে স্প্যানিশ ভাষার এক অনুবাদে অনুবাদক পাব্লো বেসন লূক ২:১৫ পদে এবং যিহূদা ১৪ পদে “যিহোভা” (Jehová) নাম ব্যবহার করেছেন আর তিনি তার অনুবাদের পাদটীকাগুলোতে ১০০ বারেরও বেশি ইঙ্গিত দেন যে, ঈশ্বরের নাম হল সেগুলোর সম্ভাব্য অনুবাদ। এই অনুবাদগুলোর অনেক আগেই, ষোড়শ শতাব্দীর পর থেকে খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর ইব্রীয় অনুবাদগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় টেট্রাগ্র্যামাটোন ব্যবহৃত হয়েছে। শুধুমাত্র জার্মান ভাষাতেই, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর অন্ততপক্ষে ১১টা ভারশনে “যিহোবা” (অথবা ইব্রীয় “ইয়াওয়ে”-র প্রতিবর্ণীত রূপ) ব্যবহার করে আর চারটে অনুবাদ “প্রভু” শব্দের পর বন্ধনীর মধ্যে সেই নাম যোগ করে দেয়। জার্মান ভাষার ৭০টারও বেশি অনুবাদ হয় পাদটীকাতে নতুবা টীকাতে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করে।
বেঞ্জামিন উইলসনের দি এমফ্যাটিক ডায়াগ্লট (১৮৬৪) ভারশনে প্রেরিত ২:৩৪ পদে ঈশ্বরের নাম
খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর এক-শোরও বেশি ভাষার বাইবেল অনুবাদে ঈশ্বরের নাম রয়েছে। আফ্রিকান, আমেরিকান আদিবাসী, এশীয়, ইউরোপীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের ভাষাগুলো প্রচুররূপে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করে থাকে। (১২ ও ১৩ পৃষ্ঠায় দেওয়া তালিকাটা দেখুন।) এই সংস্করণগুলোর অনুবাদকরা ওপরে উল্লেখিত একই কারণগুলোর জন্য ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর এইরকম কিছু অনুবাদ সম্প্রতি বেরিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, রোটুমান বাইবেল-এ (১৯৯৯) ৪৮টা পদে ৫১ বার “যিহোভা” (Jihova) এবং ইন্দোনেশিয়ার বাটাক (তোবা) সংস্করণে (১৯৮৯) ১১০ বার “যাহোয়া” (Jahowa) ব্যবহৃত হয়েছে।
১৮১৬ সালের হাওয়াইয়ান ভাষার অনুবাদে মার্ক ১২:২৯, ৩০ পদে ঈশ্বরের নাম
নিঃসন্দেহে, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ পুনরায় ঈশ্বরের নাম যিহোবা ব্যবহার করার পিছনে এক স্পষ্ট ভিত্তি রয়েছে। আর নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলের অনুবাদকরা ঠিক তা-ই করেছে। ঈশ্বরের নামের প্রতি তাদের গভীর সম্মান রয়েছে এবং মূল পাঠ্যাংশ থেকে কোনো কিছু বাদ দেওয়ার ব্যাপারেও তাদের গঠনমূলক ভয় রয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৮, ১৯.
-