পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল
খ্রীষ্টানদের বাগ্দানকে কতখানি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত?
বাগ্দান এক আনন্দপূর্ণ ঘটনা কিন্তু এটা আবার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বটে। একজন পরিপক্ব খ্রীষ্টানের বাগ্দানকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় যে তিনি যে কোন সময়ে, ছোটখাটো কোন কারণেই তার খেয়ালখুশি মতো তা ভেঙে দিতে পারেন। বাগ্দানের পর সেই পুরুষ ও নারী সময় পান যখন তারা বিয়ের আগে একে অপরকে আরও ভালভাবে জেনে নিতে পারেন।
এই বিষয়ে আলোচনা করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে বিয়ে বা বাগ্দান সম্বন্ধে বিভিন্ন সমাজে তাদের নিজস্ব রীতি রেওয়াজ থাকে আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বদলায়ও। এই বিষয়টা বাইবেলেও দেখা যায়।
লোটের দুজন কন্যা “পুরুষের পরিচয় অপ্রাপ্তা” ছিল আর স্থানীয় দুজন ব্যক্তির সঙ্গে তাদের বাগ্দান হয়েছিল। লোটের ‘জামাতাদিগের’ যাদের তার “কন্যাদিগকে বিবাহ” করার কথা ছিল, তাদের বিষয়ে বাইবেল বলে না যে কেন বা কীভাবে এই বাগ্দান হয়েছিল। লোটের কন্যারা কি প্রাপ্তবয়স্কা ছিল? তারা কি তাদের জীবনসাথি নিজেরা পছন্দ করে নিয়েছিল? তাদের বাগ্দান কি সবার সামনে হয়েছিল? এই সব আমরা জানি না। (আদিপুস্তক ১৯:৮-১৪) আমরা এটা জানি যে যাকোব নিজে থেকে রাহেলের বাবার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন যে তিনি রাহেলের বাবার জন্য সাত বছর কাজ করার পর রাহেলকে বিয়ে করবেন। যাকোব যদিও বিয়ের আগেই রাহেলকে “আমার ভার্য্যা” বলেছিলেন কিন্তু সেই সাত বছরের মধ্যে তাদের ভিতর কোন দৈহিক সম্পর্ক ছিল না। (আদিপুস্তক ২৯:১৮-২১) যেমন আরেকটা উদাহরণ, শৌলের কন্যাকে বিয়ে করার আগে, দায়ূদকে পলেষ্টীয়দের ওপর জয় লাভ করতে হয়েছিল। শৌলের দাবি পূরণ করার পর তার কন্যা মীখলকে দায়ূদ বিয়ে করতে পেরেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৮:২০-২৮) ওই “বাগ্দানগুলো” একটা আরেকটার থেকে আর আজকে অনেক দেশে প্রচলিত বাগ্দানের প্রথা থেকে আলাদা।
মোশির ব্যবস্থায় বিয়ে ও বাগ্দান সম্বন্ধে বিভিন্ন নিয়ন-কানুন দেওয়া হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখতে পারতেন; তিনি বিভিন্ন কারণে বিবাহবিচ্ছেদও করতে পারতেন কিন্তু একজন স্ত্রী তা করতে পারতেন না। (যাত্রাপুস্তক ২২:১৬, ১৭; দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১-৪) একজন পুরুষ যদি এমন এক কুমারীকে ভ্রষ্ট করত যার বাগ্দান হয়নি তবে সেই কুমারীর বাবার সম্মতিক্রমে তাকে তার বিয়ে করতে হতো আর সে কখনও তাকে ছেড়ে দিতে পারত না। (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২৮, ২৯) বিয়ের ক্ষেত্রেও অন্যান্য ব্যবস্থা ছিল, যেমন কোন্ কোন্ সময় দৈহিক মিলন করা যাবে না। (লেবীয় পুস্তক ১২:২, ৫; ১৫:২৪; ১৮:১৯) তাহলে বাগ্দান সম্বন্ধে কোন্ নিয়ম-কানুনগুলো ছিল?
ইস্রায়েলে যে মেয়েদের বাগ্দান হয়ে যেত আইনগত দিক থেকে তাকে বাগ্দান হয়নি এমন একজন মেয়ের চেয়ে আলাদাভাবে দেখা হতো; তাকে কিছুটা বিবাহিতা বলেই ধরে নেওয়া হতো। (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২৩-২৯; মথি ১:১৮, ১৯) ইস্রায়েলীয়রা তাদের বিশেষ বিশেষ আত্মীয়ের সঙ্গে বাগ্দান বা বিয়ে করতে পারত না। বিশেষ করে রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে করা নিষেধ ছিল। আবার উত্তরাধিকারের কারণেও কোন কোন বাগ্দান ও বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। (লেবীয় পুস্তক ১৮:৬-২০; মার্চ ১৫, ১৯৭৮ সালের প্রহরীদুর্গ এর ২৫-২৮ পৃষ্ঠা দেখুন।) তাই এই ব্যাপারটা স্পষ্ট ছিল যে ঈশ্বরের দাসেরা বাগ্দানকে হালকাভাবে নেবেন না।
ইস্রায়েলীয়রা ব্যবস্থার এই জাতীয় সব নিয়ম-কানুনের অধীনে ছিল কিন্তু আজকে খ্রীষ্টানেরা ব্যবস্থার অধীন নয়। এই কারণে বাগ্দান বা বিয়ে সম্বন্ধে এর নিয়ম-কানুনগুলোও তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। (রোমীয় ৭:৪, ৬; ইফিষীয় ২:১৫; ইব্রীয় ৮:৬, ১৩) আসলে, যীশু শিক্ষা দিয়েছিলেন যে বিয়ের সম্বন্ধে খ্রীষ্টানদের নিয়ম মোশির ব্যবস্থায় দেওয়া নিয়ম থেকে একেবারে আলাদা। (মথি ১৯:৩-৯) কিন্তু তাই বলে তিনি বিয়ে বা বাগ্দান কোনটারই গুরুত্বকে কমিয়ে দেননি। তাহলে, খ্রীষ্টানদের মধ্যে বাগ্দানের যে বিষয়টা আমরা এখন আলোচনা করছি সে সম্বন্ধে কী বলা যায়?
অনেক দেশে ছেলেমেয়েরা নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করে। একবার যখন একজন পুরুষ ও নারী একে অপরকে বিয়ে করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয় তখন তাই-ই তাদের মধ্যে বাগ্দান বলে ধরে নেওয়া হয়। সাধারণত, বাগ্দানের জন্য আর কোন বিশেষ অনুষ্ঠানের দরকার হয় না। এটা ঠিক যে কোন কোন জায়গায় বাগ্দানের এক চিহ্নস্বরূপ একজন পুরুষ তার হবু স্ত্রীকে একটা আংটি পরিয়ে দেন। অথবা এমন প্রথাও রয়েছে যেখানে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের নেমতন্ন করে ছোট্ট কোন অনুষ্ঠান ও ভোজ করে বাগ্দানকে ঘোষণা করা হয়। এইসবই লোকেদের ব্যক্তিগত পছন্দ কিন্তু শাস্ত্র এই সমস্ত অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু বলে না। বিবাহ করার জন্য ছেলেমেয়ে দুজনের মধ্যে যে চুক্তি সেটাই বাগ্দানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।a
একজন খ্রীষ্টানের বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা, বাগ্দান অথবা বিয়ের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। আমরা বাইবেল-ভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় প্রকাশ করি যেগুলো অবিবাহিত ব্যক্তিদেরকে এইধরনের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে যে তার জন্য বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা শুরু করা ঠিক হবে কি না অথবা বাগ্দান বা বিয়ের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটা বুদ্ধির কাজ হবে কি না।b যা কিছু পরামর্শই দেওয়া হোক না কেন, তার প্রধান বিষয়টা হল এই যে একজন খ্রীষ্টানের জন্য বিয়েটা হল চিরবন্ধন।—আদিপুস্তক ২:২৪; মার্ক ১০:৬-৯.
যে দুজন খ্রীষ্টান বিয়ের কথা ভাবছেন তাদের বাগ্দানের আগে একে অন্যকে ভাল করে জানা উচিত। প্রত্যেকে নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘আমি যাকে বিয়ে করার কথা ভাবছি, আমি কি সত্যি তার আধ্যাত্মিকতা এবং ঈশ্বরের প্রতি তার কতখানি ভক্তি আছে সেই সম্বন্ধে ভালভাবে জানি? আমি তার সঙ্গে সারা জীবন ঈশ্বরের সেবা করে যেতে পারব তো? আমরা কি একে অন্যের ব্যক্তিগত দোষ ও গুণগুলো ভালভাবে দেখেছি? আমি কি নিশ্চিত যে আমরা সারাটা জীবন এক সঙ্গে মিলেমিশে কাটাব? আমরা কি একে অপরের অতীত ঘটনা ও বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে যথেষ্ট জানি?
একবার যদি দুজন খ্রীষ্টান তাদের মধ্যে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেলেন, তাহলেই তাদের আর অন্যদের আশা করা উপযুক্ত যে সামনে তাদের বিয়ে হবেই। যীশু পরামর্শ দেন: “তোমাদের কথা হাঁ, হাঁ, না, না, হউক।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মথি ৫:৩৭) তাই খ্রীষ্টানেরা যখন বাগ্দান করেন তাদের অবশ্যই সেটা পূর্ণ করা উচিত। কিন্তু, যদিও খুব কমই ঘটে, তবুও একজন বাগদত্ত খ্রীষ্টান হয়তো জানতে পারেন যে তার সঙ্গী কোন গুরুতর বিষয় তাকে আগে বলেননি বা বাগ্দানের আগে তা গোপন করেছেন। হতে পারে যে তার সঙ্গী আগে কোন খারাপ কাজ করেছিল হয়তো কোন অন্যায় বা অনৈতিক কাজ। একজন খ্রীষ্টান এটা জানতে পেরে কী করবেন সেটা তার নিজের সিদ্ধান্ত। সম্ভবত দুজনে মিলে ব্যাপারটা নিয়ে পুরোপুরি আলোচনা করে তারা স্থির করবেন যে তারা তাদের বাগ্দানের বন্ধনকে ধরে রাখবেন কি না। অথবা তারা হয়তো পরস্পর আলোচনা করে বিষয়টা মিটমাট করে বাগ্দানকে ভেঙে দিতে পারেন। এটা করা যদিও তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু তবুও মনে রাখা দরকার যে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আর অন্যদের এতে নাক গলানো বা সন্দেহের চোখে দেখা অথবা তাদের সিদ্ধান্ত ভুল বা ঠিক তা বিচার করা একেবারেই উচিত নয়। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি তার সঙ্গীর এই গুরুতর বিষয়টা জেনে হয়তো মনে করতে পারেন যে বাগ্দানকে ভেঙে দেওয়াই তার জন্য ঠিক হবে এমনকি যদিও অপর পক্ষ তা শেষ করে দিতে না চায়।—১৯৭৫ সালের ১৫ই জুন সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর “পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল” দেখুন।
বিয়ে করে ফেলার আগেই এইসব সমস্যাগুলোর সমাধান করে নিলে খুবই ভাল হয়। যীশু বলেছিলেন যে ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের জন্য একটাই মাত্র কারণ আছে, তা হল বিবাহের বাইরে যৌন অনৈতিক কাজ যাকে পরনিয়া বলা হয়। আর শুধু তখনই একজন ব্যক্তি বিবাহবিচ্ছেদ করে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারেন। (মথি ৫:৩২; ১৯:৯) কিন্তু তিনি এমন কথা বলেননি যে বৈধভাবে বিয়ে করার পর যদি কেউ জানতে পারেন যে তার স্বামী বা স্ত্রী বিয়ের আগে কোন অন্যায় বা গুরুতর পাপ করেছিলেন তবে সেই কারণে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে যীশুর দিনে কুষ্ঠরোগ ছিল সাংঘাতিক ছোঁয়াচে। একজন যিহূদী স্বামী যদি জানতে পারত যে তার স্ত্রীর বিয়ের সময় থেকেই কুষ্ঠ ছিল, (সেই স্ত্রী তার রোগের বিষয়ে জানুক বা নাই জানুক) তাহলে এই কারণে কি বিবাহবিচ্ছেদ করা যেত? ব্যবস্থার অধীনে একজন যিহূদী হয়তো তা করতে পারত কিন্তু যীশু বলেননি যে এই কারণে তাঁর শিষ্যরা বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন। আজকের পরিস্থিতির বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। এমন হতে পারে যে একজন ব্যক্তি এই সত্য কথাটা গোপন করে বিয়ে করেছেন যে তার সিফিলিস, কোন যৌন রোগ, এইচআইভি অথবা এই জাতীয় অন্য কোন রোগ আছে। হয়তো তিনি বাগ্দানের আগে বা ওই সময়ে অন্য কারও সঙ্গে যৌন অনৈতিকতার কারণে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার রোগ বা অতীত অনৈতিকতা (এমনকি বন্ধ্যাত্ব বা পুরুষত্বহীনতা) সম্বন্ধে স্ত্রীর পরে জানতে পারা এই বাস্তব বিষয়টাকে পাল্টে দেয় না যে এখন তারা স্বামী স্ত্রী। বিয়ের আগে কারও অতীত জীবনের কোন জঘন্য কাজকে কারণ হিসেবে নিয়ে বিয়ে চুকিয়ে দেওয়া বাইবেলের নীতি বিরুদ্ধ। আর এটা একইরকম যদি একজন মহিলার কোন ছোঁয়াচে রোগ থাকে বা এমনকি বিয়ে করার সময় তিনি পর পুরুষের মাধ্যমে গর্ভবতী হয়ে তা চেপে রাখেন। কিন্তু এখন তারা বিয়ে করেছেন আর একে অপরের সঙ্গে সারা জীবন কাটাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যদিও খুব কম লোকেদের ক্ষেত্রেই এইরকম দুঃখজনক ঘটনা ঘটে থাকে, তবুও এই উদাহরণগুলো থেকে এই মৌলিক বিষয়টা স্পষ্ট হওয়া উচিত: বাগ্দানকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। বাগ্দানের আগে ও এর মধ্যে, খ্রীষ্টানদের একে অন্যকে ভাল করে জানার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। অন্য পক্ষ কী জানতে চান বা তার যা জানার অধিকার আছে সেই সম্বন্ধে তাদের একে অন্যের প্রতি সৎ হওয়া উচিত। (কোন কোন দেশে আইন আছে যে বিয়ের পাত্রপাত্রী যেন চিকিৎসাগত পরীক্ষা করেন। অন্যেরা হয়তো নিজেরা জানার জন্য ওইধরনের পরীক্ষা করাতে চান।) আর তাহলেই আনন্দপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বাগ্দান, আরও আনন্দপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিয়ের জন্য একজন পুরুষ ও নারীকে প্রস্তুত করে তোলে।—হিতোপদেশ ৫:১৮, ১৯; ইফিষীয় ৫:৩৩.
[পাদটীকাগুলো]
a কোন কোন সমাজে এখনও বাবামায়েরাই তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে ঠিক করেন। এমনও হতে পারে যে এটা হয়তো সেই সময়ই করা হয়ে থাকে যখন ছেলেমেয়েরা বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়নি। আর এই সময়ে তাদের একজনকে অপরের বাগদত্ত বলে ধরে নেওয়া হয় তবে তারা এখনও বিবাহিত নয়।
b ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির দ্বারা প্রকাশিত, যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে উত্তরগুলো কাজ করে, (ইংরেজি) বইয়ের ২৮-৩২ অধ্যায় ও পারিবারিক সুখের রহস্য (ইংরেজি) বইয়ের ২ অধ্যায় দেখুন।