ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • প্রাচীনরা, অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে আপনারা কী মনে করেন?
    ২০১৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
    • শমূয়েল এবং শৌল ছাদে বসে একসগ খাবার খাচ্ছন

      প্রাচীনরা, অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে আপনারা কী মনে করেন?

      “সকল বিষয়েরই সময় আছে।”​—উপ. ৩:১.

      আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

      • অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর এর কারণ কী?

      • প্রাচীনরা যখন অন্যদের প্রশিক্ষণ দেন, তখন মণ্ডলী কীভাবে উপকৃত হয়?

      • অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় প্রাচীনরা কীভাবে শমূয়েলের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন?

      ১, ২. সীমা অধ্যক্ষরা অনেক মণ্ডলীতে কোন বিষয়টা লক্ষ করেছেন?

      সীমা অধ্যক্ষ প্রাচীনদের সঙ্গে তার সভা শেষ করতে যাচ্ছেন। তিনি ভাইদের দিকে তাকান। এই কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে তার হৃদয় গভীর ভালোবাসায় পূর্ণ হয়। এই ভাইদের মধ্যে কেউ কেউ তার বাবার বয়সি। কিন্তু তারপরও, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তিনি চিন্তিত। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, “ভাইয়েরা, মণ্ডলীতে অন্যেরা যাতে আরও দায়িত্ব নিতে পারে, সেইজন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে আপনারা কী করেছেন?” এই ভাইয়েরা জানেন, গত পরিদর্শনের সময় সীমা অধ্যক্ষ তাদের উৎসাহিত করেছিলেন, যেন তারা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ব্যয় করেন। অবশেষে, একজন প্রাচীন স্বীকার করেন, “আমরা খুব সামান্যই করতে পেরেছি।” অন্য সব প্রাচীন তার সঙ্গে একমত হন।

      ২ আপনি যদি একজন প্রাচীন হয়ে থাকেন, তাহলে আপনিও সম্ভবত একইরকম উত্তর দেবেন। সীমা অধ্যক্ষরা এই বিষয়টা লক্ষ করেছেন, অনেক মণ্ডলীতে কমবয়সি ও বয়স্ক ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রাচীনদের আরও বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন, যাতে এই ভাইয়েরা মণ্ডলীর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু, তা করা অনেক কঠিন হতে পারে। কেন?

      ৩. (ক) বাইবেল কীভাবে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে আর কেন আমাদের সকলেরই এই প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া উচিত? (পাদটীকা দেখুন।) (খ) কোনো কোনো প্রাচীনের জন্য অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কেন কঠিন হতে পারে?

      ৩ একজন প্রাচীন হিসেবে আপনি জানেন, ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সময় ব্যয় করা গুরুত্বপূর্ণ।a আপনি জানেন, আরও বেশি ভাইয়ের প্রয়োজন, যাতে তারা বর্তমানে মণ্ডলীগুলোকে দৃঢ় রাখার ক্ষেত্রে এবং ভবিষ্যতে নতুন মণ্ডলীগুলোকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। (পড়ুন, যিশাইয় ৬০:২২.) বাইবেল বলে, আপনাকে “অন্য অন্য লোককেও শিক্ষা” দিতে হবে। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ২:২.) কিন্তু, তা করার জন্য সময় বের করা হয়তো কঠিন হতে পারে। কারণ আপনাকে পরিবারের যত্ন নিতে হয় এবং চাকরি করতে হয়। এ ছাড়া, আপনাকে মণ্ডলীর বিভিন্ন প্রয়োজন এবং অন্যান্য জরুরি বিষয়েরও দেখাশোনা করতে হয়। যেহেতু আমাদের অনেক কিছু করতে হয়, তাই আসুন আমরা এখন আলোচনা করি, অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সময় বের করে নেওয়া কেন আপনার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

      প্রশিক্ষণ জরুরি

      ৪. কখনো কখনো, কেন প্রাচীনরা ভাইদের প্রশিক্ষণ দিতে দেরি করেন?

      ৪ মণ্ডলীতে ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সময় বের করে নেওয়া কেন কঠিন হতে পারে? কেউ কেউ এইরকম চিন্তা করতে পারেন: ‘মণ্ডলীর অন্যান্য বিষয় আরও জরুরি আর এগুলোর প্রতি দ্রুত মনোযোগ দেওয়া দরকার। আমি যদি এখনই অন্যদের প্রশিক্ষণ না দিই, তাহলে মণ্ডলীর কোনো ক্ষতি হবে না।’ এইরকম চিন্তা করা কি ঠিক হবে? এটা ঠিক, অন্যান্য বিষয়ে হয়তো দ্রুত মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, আপনি যদি ভাইদের প্রশিক্ষণ দিতে দেরি করেন, তাহলে আপনি আসলে মণ্ডলীর ক্ষতি করে ফেলতে পারেন।

      ৫, ৬. একজন গাড়িচালকের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি আর এই বিষয়টাকে কীভাবে মণ্ডলীতে ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়?

      ৫ একটা উদাহরণ চিন্তা করুন। একজন গাড়িচালক জানেন, একটা গাড়ি যাতে ঠিকঠাক চলে, সেইজন্য তাকে নিয়মিতভাবে ইঞ্জিনের মোবিল পরিবর্তন করতে হবে। তারপরও, তিনি হয়তো মনে করতে পারেন, ট্যাঙ্কে পেট্রোল ভরার কাজ আরও জরুরি কারণ পেট্রোল ছাড়া গাড়ি চলবে না। তিনি হয়তো এমনও মনে করতে পারেন, তিনি যদি অনেক ব্যস্ত থাকেন, তাহলে মোবিল পরে পরিবর্তন করলেও সমস্যা নেই। কারণ গাড়িটা তো কিছুটা সময় হলেও চলবে। কিন্তু, এমন চিন্তাভাবনা বিপদজনক হতে পারে। গাড়িচালক যদি সঠিক সময়ে মোবিল পরিবর্তন না করেন, তাহলে আজ হোক বা কাল হোক, গাড়ির ক্ষতি হবেই। শেষপর্যন্ত, তাকে সেই গাড়ি মেরামত করার জন্য অনেক সময় ও টাকা খরচ করতে হবে। এখান থেকে কোন শিক্ষা লাভ করা যায়?

      ৬ প্রাচীনদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি দ্রুত মনোযোগ দিতে হবে। কারণ তারা যদি সেটা না করেন, তাহলে মণ্ডলী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে-গাড়িচালক নিয়মিত ট্যাঙ্কে পেট্রোল ভরেন, তার মতো প্রাচীনদেরও “যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“শ্রেয়ঃ,” পাদটীকা], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে” হবে। (ফিলি. ১:১০) কিন্তু, কোনো কোনো প্রাচীন হয়তো শ্রেয় বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে যেতে পারেন যে, অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের হাতে কোনো সময়ই থাকে না। এটা গাড়িতে মোবিল ভরার কাজকে উপেক্ষা করার মতো হতে পারে। প্রাচীনরা যদি ভাইদের প্রশিক্ষণ দিতে দেরি করেন, তাহলে আজ হোক বা কাল হোক, প্রয়োজনীয় বিষয়ের যত্ন নেওয়ার জন্য মণ্ডলীতে যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভাই থাকবে না।

      ৭. যে-প্রাচীনরা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সময় বের করে নেন, তাদেরকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

      ৭ তাই, কখনো এইরকম চিন্তা করবেন না, অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া অগ্রাধিকারের বিষয় নয়। যে-প্রাচীনরা মণ্ডলীর ভবিষ্যতের ব্যাপারে আগ্রহী ও অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সময় বের করে নেন, তারা হচ্ছেন বিজ্ঞ দাস এবং ভাই-বোনদের জন্য সাহায্যকারী। (পড়ুন, ১ পিতর ৪:১০.) এর ফলে মণ্ডলী কীভাবে উপকৃত হয়?

      সময়ের সদ্‌ব্যবহার করা

      ৮. (ক) কোন কোন কারণে প্রাচীনদের অন্যদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে? (খ) যে-প্রাচীনরা যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করেন, তাদের কোন জরুরি দায়িত্ব রয়েছে? (“জরুরি এক কাজ” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

      ৮ এমনকী যথেষ্ট অভিজ্ঞ প্রাচীনদেরও বিনয়ী হতে হবে আর এটা বুঝতে হবে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা হয়তো আর এখনকার মতো কাজ করতে পারবেন না। (মীখা ৬:৮) এ ছাড়া, প্রাচীনদের জানা উচিত, ‘কাল ও দৈবের’ বা অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে হঠাৎ করে তাদের জন্য দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। (উপ. ৯:১১, ১২; যাকোব ৪:১৩, ১৪) প্রাচীনরা যেহেতু যিহোবার লোকেদের ভালোবাসেন ও তাদের জন্য চিন্তা করেন, তাই তারা বছরের পর বছর ধরে যা শিখেছেন, সেগুলো কমবয়সি ভাইদের শেখানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন।​—পড়ুন, গীতসংহিতা ৭১:১৭, ১৮.

      ৯. ভবিষ্যতের কোন ঘটনার জন্য এখন থেকে ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

      ৯ যে-প্রাচীনরা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেন, তারা আরেকটা যে-কারণে সাহায্যকারী, তা হল তাদের প্রচেষ্টার ফলে মণ্ডলী দৃঢ় হয়। এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে আরও বেশিসংখ্যক ভাই, মণ্ডলীকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকবে, যাতে মণ্ডলীর সদস্যরা একতাবদ্ধ থাকতে এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারে। এই বিষয়গুলো এই শেষকালে গুরুত্বপূর্ণ আর আসন্ন মহাক্লেশের সময়ে তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হবে। (যিহি. ৩৮:১০-১২; মীখা ৫:৫, ৬) তাই, প্রিয় প্রাচীন ভাইয়েরা, আজকে থেকেই অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিয়মিতভাবে সময় বের করে নিন।

      ১০. অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রাচীনরা যেন সময় বের করতে পারেন, সেইজন্য তাদের হয়তো কী করতে হবে?

      ১০ আমরা বুঝতে পারি, ইতিমধ্যেই আপনার অনেক ব্যস্ত তালিকা রয়েছে কারণ আপনি মণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দেখাশোনা করছেন। তাই, আপনি সেই দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য যে-সময় ব্যয় করেন, আপনাকে হয়তো সেখান থেকেই কিছুটা সময় বের করে নিয়ে, তা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় করতে হবে। (উপ. ৩:১) তা করার মাধ্যমে আপনি নিজের সময়ের সদ্‌ব্যবহার করবেন আর ভবিষ্যতে মণ্ডলীও উপকৃত হবে।

      উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন

      ১১. (ক) বিভিন্ন দেশের প্রাচীনরা প্রশিক্ষণের বিষয়ে যে-সমস্ত পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো সম্বন্ধে আগ্রহজনক বিষয়টা কী? (খ) হিতোপদেশ ১৫:২২ পদ অনুযায়ী, অন্য প্রাচীনদের পরামর্শ আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

      ১১ সম্প্রতি, মণ্ডলীতে আরও বেশি কাজ করার ব্যাপারে ভাইদের প্রশিক্ষণ দিতে সফল হয়েছেন এমন কয়েক জন প্রাচীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তারা কীভাবে সফল হয়েছেন।b এই প্রাচীনরা সবাই একইরকম উপদেশ দিয়েছেন, যদিও তাদের পরিস্থিতি অনেক আলাদা। এটা কী প্রমাণ দেয়? বাইবেলভিত্তিক প্রশিক্ষণ “সর্ব্বত্র সর্ব্ব মন্ডলীতে” থাকা শিক্ষার্থীর জন্য উপকারী। (১ করি. ৪:১৭) তাই, এই প্রবন্ধে ও পরের প্রবন্ধে আমরা এই প্রাচীনদের দেওয়া কিছু পরামর্শ আলোচনা করব। (হিতো. ১৫:২২) এই প্রবন্ধগুলোতে, যারা প্রশিক্ষণ দেন, তাদের শিক্ষক হিসেবে আর যারা প্রশিক্ষণ লাভ করেন, তাদের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হবে।

      ১২. একজন শিক্ষককে কোন বিষয়টা তৈরি করতে হবে এবং কেন?

      ১২ প্রথমত, একজন শিক্ষককে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কেন তা গুরুত্বপূর্ণ? ঠিক যেমন বীজ বপন করার আগে একজন মালিকে মাটি প্রস্তুত করতে হয়, তেমনই শিক্ষা দেওয়ার আগে একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর হৃদয় প্রস্তুত করতে হয়। তাহলে, একজন শিক্ষক কীভাবে প্রশিক্ষণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারেন? তিনি অতীতের একজন দক্ষ শিক্ষকের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারেন। সেই শিক্ষক হলেন ভাববাদী শমূয়েল।

      ১৩-১৫. (ক) যিহোবা শমূয়েলকে কী করতে বলেছিলেন? (খ) কীভাবে শমূয়েল শৌলকে তার নতুন কার্যভারের জন্য প্রস্তুত করেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (গ) শমূয়েল সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ কেন বর্তমানে প্রাচীনদের জন্য উপকারী?

      ১৩ তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় আগের কথা। একদিন যিহোবা বয়স্ক ভাববাদী শমূয়েলকে বলেন: “কল্য এমন সময়ে আমি বিন্যামীন প্রদেশ হইতে এক জন লোককে তোমার নিকটে প্রেরণ করিব; তুমি তাহাকে আমার প্রজা ইস্রায়েলের নায়ক করিবার জন্য অভিষেক করিবে।” (১ শমূ. ৯:১৫, ১৬) শমূয়েল বুঝতে পারেন, তিনি আর ইস্রায়েল জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন না এবং যিহোবা চান যেন শমূয়েল একজন নতুন নায়ক বা নেতাকে অভিষিক্ত করেন। তাই, সেই ব্যক্তিকে নতুন কার্যভারের বিষয়ে প্রস্তুত করার জন্য শমূয়েল একটা উপায় খুঁজে পান এবং এক পরিকল্পনা তৈরি করেন।

      ১৪ পরদিন, শৌলের সঙ্গে শমূয়েলের দেখা হয় আর যিহোবা ভাববাদীকে বলেন: “দেখ, এ সেই ব্যক্তি।” শমূয়েল সঙ্গেসঙ্গে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন। শৌলের সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনি ভালো একটা উপলক্ষ্য তৈরি করেন। শমূয়েল শৌল ও তার দাসদের ভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং তাদের সবচেয়ে ভালো আসনে বসতে দেন ও মাংসের সবচেয়ে উত্তম অংশ পরিবেশন করেন। শমূয়েল বলেন: “ভোজন কর; কেননা নির্দ্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষাতে ইহা তোমার জন্য রাখা গিয়াছে।” ভোজনের পর, শমূয়েল শৌলকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। বাড়ি যাওয়ার পথে তারা দু-জন কথাবার্তা বলেন। শমূয়েলের বাড়িতে পৌঁছানোর পর, তারা ছাদে যান। ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত, শমূয়েল “গৃহের ছাদের উপরে শৌলের সহিত কথোপকথন করিলেন।” পরদিন, শমূয়েল শৌলকে অভিষিক্ত করেন, তাকে চুম্বন করেন এবং আরও নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর, শৌল চলে যান। যা ঘটতে যাচ্ছে, সেটার জন্য তিনি এখন প্রস্তুত।​—১ শমূ. ৯:১৭-২৭; ১০:১.

      ১৫ শমূয়েল শৌলকে একটা জাতির নেতা হওয়ার জন্য অভিষিক্ত করেছিলেন। অবশ্য, এই বিষয়টা আর মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন অথবা পরিচারক দাস হওয়ার জন্য ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টা এক নয়। তা সত্ত্বেও, শমূয়েল যেভাবে শৌলের হৃদয় প্রস্তুত করেছিলেন, তা থেকে প্রাচীনরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারেন। আসুন, আমরা এখন সেগুলোর মধ্য থেকে দুটো বিষয় আলোচনা করি।

      ইচ্ছুক শিক্ষক এবং উত্তম বন্ধু

      ১৬. (ক) ইস্রায়েলীয়রা যখন একজন রাজা চেয়েছিল, তখন শমূয়েল কেমন অনুভব করেছিলেন? (খ) যিহোবা যখন শৌলকে অভিষিক্ত করতে বলেছিলেন, তখন শমূয়েল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

      ১৬ ইচ্ছুক হোন, দ্বিধা করবেন না। প্রথমে শমূয়েল যখন জানতে পারেন, ইস্রায়েলীয়রা একজন মানব রাজা চায়, তখন তিনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং নিজেকে প্রত্যাখ্যাত বলে মনে করেন। (১ শমূ. ৮:৪-৮) শমূয়েল মানব রাজার বিষয়ে লোকেদের দাবি মানতে চাননি আর তাই যিহোবাকে তিন বার বলতে হয়েছিল, যেন শমূয়েল লোকেদের কথা শোনেন। (১ শমূ. ৮:৭, ৯, ২২) শমূয়েলের এইরকম অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও, তার জায়গায় যে-ব্যক্তি নেতা হবেন, তাকে তিনি ঈর্ষা করেননি অথবা তার প্রতি রাগ প্রকাশ করেননি। যিহোবা যখন শৌলকে অভিষিক্ত করতে বলেছিলেন, তখন শমূয়েল দ্বিধা করেননি। তিনি শুধু কর্তব্যের খাতিরেই নয় বরং যিহোবাকে ভালোবাসেন বলে স্বেচ্ছায় তাঁর বাধ্য হয়েছিলেন।

      ১৭. বর্তমানে প্রাচীনরা কীভাবে শমূয়েলকে অনুকরণ করেন আর এর ফলে তারা কোন আনন্দ লাভ করেন?

      ১৭ বর্তমানে এমন অনেক অভিজ্ঞ প্রাচীন আছেন, যারা শমূয়েলকে অনুকরণ করছেন এবং প্রেমের সঙ্গে অন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। (১ পিতর ৫:২) এই সদয় প্রাচীনরা অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছুক আর তারা মণ্ডলীতে তাদের যে-সমস্ত বিশেষ সুযোগ রয়েছে, সেগুলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ভয় পান না। এর পরিবর্তে, তারা মনে করেন, এই শিক্ষার্থী ভাইয়েরা হলেন চমৎকার “সহকারী,” যারা মণ্ডলীর প্রয়োজনগুলোর দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করবেন। (২ করি. ১:২৪; ইব্রীয় ১৩:১৬) আর এই নিঃস্বার্থপর প্রাচীনরা যখন দেখেন, যিহোবার লোকেদের সাহায্য করার জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মদক্ষতা ব্যবহার করছেন, তখন তারা অনেক আনন্দিত হন।​—প্রেরিত ২০:৩৫.

      ১৮, ১৯. কীভাবে একজন প্রাচীন প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগে একজন শিক্ষার্থীর হৃদয় প্রস্তুত করতে পারেন আর কেন তা করা গুরুত্বপূর্ণ?

      ১৮ বন্ধু হোন, শুধু শিক্ষক হবেন না। শৌলের সঙ্গে যখন শমূয়েলের দেখা হয়েছিল, তখন শৌলের মস্তকে তেল ঢেলে ভাববাদী তাকে সঙ্গেসঙ্গেই রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করতে পারতেন। তা করা হলে, নতুন রাজাকে অভিষিক্ত করা হতো ঠিকই, কিন্তু তিনি ঈশ্বরের লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতেন না। এর পরিবর্তে, শমূয়েল নতুন কার্যভারের জন্য শৌলের হৃদয় প্রস্তুত করতে সময় নিয়েছিলেন। শৌলকে অভিষিক্ত করার আগে, তারা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন, একটু হাঁটাহাঁটি করেছিলেন, দীর্ঘসময় কথা বলেছিলেন আর এমনকী কিছুটা বিশ্রামও নিয়েছিলেন। নতুন রাজাকে অভিষিক্ত করার আগে, শমূয়েল উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।

      একজন পাচীন এবং একজন পরিচারক দাস অবসর সময়ে কথাবার্তা বলছন

      অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ, বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে শুরু হয় (১৮, ১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

      ১৯ বর্তমানেও একই বিষয় প্রযোজ্য। একজন ভাইকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করার আগে, একজন প্রাচীনকে চেষ্টা করতে হবে যেন তিনি শিক্ষার্থীর বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন। একজন শিক্ষার্থী যেন কথাবার্তা বলতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন, সেইজন্য প্রাচীনকে কী করতে হবে, তা পরিস্থিতি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী আলাদা হবে। তা সত্ত্বেও, আপনি পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন, আপনি যদি শিক্ষার্থীর সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আপনার ব্যস্ত তালিকা থেকে সময় বের করে নেন, তাহলে সেই শিক্ষার্থী বুঝতে পারবেন, আপনার কাছে তার গুরুত্ব রয়েছে। (পড়ুন, রোমীয় ১২:১০.) তার প্রতি আপনার এই প্রেমপূর্ণ যত্ন ও মনোযোগ দেখে তিনি নিঃসন্দেহে অনেক কৃতজ্ঞ হবেন।

      ২০, ২১. (ক) আপনি কাকে একজন সফল শিক্ষক বলবেন? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

      ২০ এটা ঠিক যে, একজন সফল শিক্ষক অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে ভালোবাসেন। কিন্তু একইসময়ে, যাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই ব্যক্তির প্রতি সেই সফল শিক্ষকের ভালোবাসা থাকতে হবে। (তুলনা করুন, যোহন ৫:২০) কেন তা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ একজন শিক্ষার্থী যখন বুঝতে পারেন, আপনি সত্যিই তার জন্য চিন্তা করেন, তখন তিনি আপনার কাছ থেকে শিখতে ইচ্ছুক হবেন। তাই প্রাচীনরা, আপনারা শুধু শিক্ষা দেওয়ার জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে একজন উত্তম বন্ধু হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করুন।​—হিতো. ১৭:১৭; যোহন ১৫:১৫.

      ২১ শিক্ষার্থীর হৃদয় প্রস্তুত করার পর, একজন প্রাচীন তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে একজন প্রাচীন কোন কোন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন? পরের প্রবন্ধে তা আলোচনা করা হবে।

      a এই প্রবন্ধ ও পরের প্রবন্ধ বিশেষভাবে প্রাচীনদের উদ্দেশে লেখা হয়েছে। কিন্তু, আমাদের প্রত্যেকেরই এই তথ্যের বিষয়ে আগ্রহী হওয়া উচিত। কেন? কারণ এটা সকল ভাইকে বুঝতে সাহায্য করবে, মণ্ডলীতে আরও কাজ করার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। মণ্ডলীতে সাহায্য করার জন্য আরও বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভাই থাকলে, মণ্ডলীর সকলে উপকৃত হয়।

      b এই প্রাচীনরা অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, নাইজেরিয়া, ফ্রান্স, ফ্রেঞ্চ গায়েনা, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং রিইউনিয়নে থাকেন।

      জরুরি এক কাজ

      যেখানে পকাশকদের বেশি পয়োজন সেখানে গিয়ে সেবারত একজন ভাই, থানীয় ভাইদের পালক হয়ে ওঠার জন্য পশিক্ষণ দিচ্ছন

      বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাই-বোনেরা অন্য দেশে গিয়ে এমন মণ্ডলীগুলোতে সেবা করতে শুরু করেছেন, যেখানে প্রকাশকদের আরও বেশি প্রয়োজন। সেইসমস্ত জায়গায় তারা সুসমাচার প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন। কিন্তু, তাদের যদি সেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়, তাহলে? তখন অনেক জায়গায় মণ্ডলীর যত্ন নেওয়ার মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যথেষ্ট স্থানীয় ভাই থাকবেন না। আপনি কি এমন একজন প্রাচীন, যিনি যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করছেন? তাহলে আপনার জন্য একটা জরুরি কাজ হচ্ছে স্থানীয় ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা মণ্ডলীর যত্ন নিতে পারেন।

  • প্রাচীনরা যেভাবে অন্যদের যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য প্রশিক্ষণ দেন
    ২০১৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
    • এলিয় তার শাল দিয়ে যর্দন নদীর জলে আঘাত করার সময় ইলীশায় তা দেখছন

      প্রাচীনরা যেভাবে অন্যদের যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য প্রশিক্ষণ দেন

      “যে সকল বাক্য আমার কাছে শুনিয়াছ, সে সকল . . . বিশ্বস্ত লোকদিগকে সমর্পণ কর।”​—২ তীম. ২:২.

      আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

      • যিহোবার প্রতি কোনো ভাইয়ের প্রেম দৃঢ় করার জন্য একজন প্রাচীন কোন কোন উপায়ে সাহায্য করতে পারেন?

      • যে-ভাইকে মণ্ডলীতে আরও বেশি কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী বলে মনে হয় না, তাকে সাহায্য করার জন্য কোন শাস্ত্রপদগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে?

      • যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তারা কীভাবে ইলীশায়কে অনুকরণ করতে পারেন?

      ১. (ক) প্রশিক্ষণ সম্বন্ধে ঈশ্বরের দাসেরা সবসময়ই কী জেনে এসেছে আর এটা কীভাবে বর্তমানে প্রযোজ্য? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

      ঈশ্বরের লোকেরা সবসময়ই জেনে এসেছে, প্রশিক্ষণ সফলতা নিয়ে আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অব্রাম “আপন . . . অভ্যস্ত” দাসদের সুসংগঠিত করেছিলেন, যারা লোটকে উদ্ধার করার জন্য সফলভাবে যুদ্ধ করেছিল। (আদি. ১৪:১৪-১৬) রাজা দায়ূদের সময়ে, গায়কদের এমন “গীতগানে শিক্ষিত” করে তোলা হয়েছিল, যা যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে। (১ বংশা. ২৫:৭) বর্তমানে, শয়তান ও তার জগতের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। (ইফি. ৬:১১-১৩) এ ছাড়া, যিহোবার নাম সম্বন্ধে অন্যদের কাছে কথা বলার মাধ্যমে আমরা তাঁর প্রশংসা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। (ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬) তাই, সফল হওয়ার জন্য আমাদেরও প্রশিক্ষিত হতে হবে, যেমনটা অতীতে ঈশ্বরের দাসেরাও হয়েছিল। যিহোবা মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। (২ তীম. ২:২) যিহোবার লোকেদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রাচীনদের মধ্যে কেউ কেউ কোন পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেছেন?

      যিহোবার প্রতি শিক্ষার্থীর প্রেম দৃঢ় করুন

      ২. একজন শিক্ষার্থীকে নতুন নতুন বিষয় শেখানোর আগে একজন প্রাচীন হয়তো কী করতে চাইবেন আর কেন তিনি সেটা করবেন?

      ২ একজন প্রাচীনকে বাগানের মালির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বীজ বপন করার আগে একজন মালিকে হয়তো মাটিতে সার দিতে হয়, যাতে চারাগুলো বৃদ্ধি পায় ও দৃঢ় হয়। একইভাবে, একজন শিক্ষার্থীকে নতুন নতুন বিষয় শেখানোর আগে, একজন প্রাচীন হয়তো তার সঙ্গে বাইবেলের এমন কিছু নীতি আলোচনা করতে চাইবেন, যেগুলো শিক্ষার্থীকে তার শেখা বিষয়গুলো নিজের জীবনে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত করবে।​—১ তীম. ৪:৬.

      ৩. (ক) একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় মার্ক ১২:২৯, ৩০ পদে উল্লেখিত যিশুর কথাগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে? (খ) একজন প্রাচীনের করা প্রার্থনা শিক্ষার্থীকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে?

      ৩ সত্য কীভাবে শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির উপর প্রভাব ফেলে, তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। তা বোঝার জন্য আপনি হয়তো তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকরণ তার জীবনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে। এই প্রশ্ন করার ফলে, কীভাবে আমরা সর্বান্তঃকরণে যিহোবার সেবা করতে পারি, এমন বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করা যেতে পারে। (পড়ুন, মার্ক ১২:২৯, ৩০.) আপনি হয়তো সেই ভাইয়ের সঙ্গে প্রার্থনা করতে চাইবেন, যেন যিহোবা তাকে প্রশিক্ষণ লাভের জন্য প্রয়োজনীয় পবিত্র আত্মা দেন। সেই ভাই যখন শুনবেন, আপনি তার জন্য প্রার্থনা করছেন, তখন সম্ভবত সেটা তাকে আরও বেশি কিছু করার জন্য উৎসাহিত করবে!

      ৪. (ক) বাইবেলের এমন উদাহরণ তুলে ধরুন, যেগুলো একজন শিক্ষার্থীকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে। (খ) অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় প্রাচীনদের কোন লক্ষ্য থাকা উচিত?

      ৪ আপনি যখন প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন, তখন বাইবেলের সেই বিবরণগুলো থেকে আলোচনা করলে ভালো হবে, যেগুলো শিক্ষার্থীকে সাহায্যকারী, নির্ভরযোগ্য ও নম্র হওয়ার গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করবে। (১ রাজা. ১৯:১৯-২১; নহি. ৭:২; ১৩:১৩; প্রেরিত ১৮:২৪-২৬) মাটির জন্য যেমন সার গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই শিক্ষার্থীর জন্য এসব গুণ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো শিক্ষার্থীকে বৃদ্ধি পেতে অর্থাৎ আরও দ্রুত উন্নতি করতে সাহায্য করবে। ঝাঁ-ক্লোদ নামে ফ্রান্সের একজন প্রাচীন বলেন, প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় তার লক্ষ্য হচ্ছে, একজন শিক্ষার্থীকে বাইবেলের নীতির উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা। তিনি বলেন, “আমি সুযোগ খুঁজতাম, কখন আমরা এমন একটা শাস্ত্রপদ পড়তে পারি, যেটা ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে পাওয়া ‘আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য বিষয়’ দেখার জন্য শিক্ষার্থীর ‘নয়ন খুলিয়া’ দেবে।” (গীত. ১১৯:১৮) এ ছাড়া, আর কোন কোন উপায়ে একজন শিক্ষার্থীকে দৃঢ় হতে সাহায্য করা যায়?

      লক্ষ্য সম্বন্ধে কথা বলুন এবং কারণ ব্যাখ্যা করুন

      ৫. (ক) একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যিহোবার সেবায় তার লক্ষ্য সম্বন্ধে কথা বলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? (খ) কেন প্রাচীনদের সেই ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, যারা এখন অল্পবয়সি? (পাদটীকা দেখুন।)

      ৫ শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করুন, যিহোবার সেবায় তার কোন কোন লক্ষ্য রয়েছে। যদি তার কোনো লক্ষ্য না থাকে, তাহলে তাকে এমন লক্ষ্যস্থাপন করতে সাহায্য করুন, যে-লক্ষ্যে তিনি পৌঁছাতে পারবেন। আপনি একসময় যে-লক্ষ্যস্থাপন করেছিলেন আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর আপনার কতটা ভালো লেগেছে, সেই বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলার সময় উদ্যম প্রকাশ করুন। এটা একটা সাধারণ পদ্ধতি, তবে এটা কার্যকরী। ভিক্টর হলেন আফ্রিকার একজন প্রাচীন এবং অগ্রগামী। তিনি বলেন: “ছোটোবেলায় একজন প্রাচীন আমার লক্ষ্য সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। সেই প্রশ্নগুলো আমাকে নিজের পরিচর্যা সম্বন্ধে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে সাহায্য করেছে।” অভিজ্ঞ প্রাচীনরা বলে থাকেন, ভাইদের অল্পবয়সেই, সম্ভব হলে যখন তারা কৈশোরে পা দেয়, তখন থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো তাদের বয়স অনুযায়ী মণ্ডলীতে কিছু কাজ দিতে পারেন। ভাইদের যদি অল্পবয়স থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহলে তারা সেই সময়েও তাদের লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারবে, যখন তারা যৌবনে পৌঁছাবে ও তাদের সামনে বিভিন্ন বিক্ষেপ আসবে।​—পড়ুন, গীতসংহিতা ৭১:৫, ১৭.a

      কিংডম হলে একজন পাচীন একজন যুবক ভাইয়ের কাছ ব্যাখ্যা করছন, কেন কাজটা করা দরকার

      একজন ভাইকে আপনি যে-কাজ করতে দিয়েছেন, সেই কাজটা কেন করা দরকার, তা ব্যাখ্যা করুন এবং তার প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করুন (৫-৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

      ৬. অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য যিশু কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন?

      ৬ সেবা করার বিষয়ে শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করার জন্য, কী করতে হবে, কেবলমাত্র তা বলার চেয়ে আপনাকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। আপনাকে এটাও ব্যাখ্যা করতে হবে, কেন তা করা গুরুত্বপূর্ণ। মহান শিক্ষক যিশু তাঁর প্রেরিতদের প্রচার করতে বলেছিলেন। কিন্তু, তিনি প্রথমে কেন তাদের সেই আজ্ঞার বাধ্য হতে হবে, সেই কারণটা তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব আমাকে দত্ত হইয়াছে। অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৮, ১৯) যিশুর প্রশিক্ষণ দেওয়ার এই পদ্ধতি আপনি কীভাবে অনুকরণ করতে পারেন?

      ৭, ৮. (ক) বর্তমানে প্রাচীনরা কীভাবে যিশুর প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদ্ধতি অনুকরণ করতে পারেন? (খ) একজন শিক্ষার্থীকে প্রশংসা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? (গ) অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন পরামর্শগুলো প্রাচীনদের সাহায্য করতে পারে? (“অন্যদের যেভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

      ৭ আপনি যখন একজন ভাইকে কোনো কাজ করতে বলেন, তখন কেন এই কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ, তা বাইবেল থেকে তার কাছে ব্যাখ্যা করুন। তা করার মাধ্যমে আপনি তাকে এটা শিক্ষা দেন, তিনি শুধু নিয়মের খাতিরে নয় বরং বাইবেলের নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করেন। যেমন, আপনি যদি কোনো ভাইকে কিংডম হলের প্রবেশপথ পরিষ্কার করতে বলেন এবং নির্বিঘ্নে হাঁটাচলা করা যায় এমন অবস্থায় রাখতে বলেন, তাহলে তাকে তীত ২:১০ পদ দেখান। তারপর ব্যাখ্যা করুন, তার কাজ কীভাবে রাজ্যের বার্তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। এ ছাড়া, শিক্ষার্থীকে মণ্ডলীর বয়স্ক ব্যক্তিদের সম্বন্ধে এবং তার কাজ কীভাবে তাদের সাহায্য করবে, সেই বিষয়ে চিন্তা করতে বলুন। এইরকম কথাবার্তার ফলে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে, যা তাকে নিয়মের পরিবর্তে বরং লোকেদের সম্বন্ধে আরও বেশি চিন্তা করতে সাহায্য করবে। শিক্ষার্থী যখন দেখবেন, তার কাজের ফলে ভাই-বোনেরা উপকৃত হচ্ছেন, তখন অন্যদের সেবা করার সুযোগ পেয়ে তার ভালো লাগবে।

      ৮ এ ছাড়া, আপনার পরামর্শ কাজে লাগিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীর প্রশংসা করুন। তা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? জল যেমন একটা চারাগাছকে বৃদ্ধি পেতে ও সতেজ হতে সাহায্য করে, তেমনই আপনি যখন শিক্ষার্থীকে প্রশংসা করেন, তখন সেই প্রশংসা তাকে যিহোবার সেবায় আরও উন্নতি করতে সাহায্য করে।​—তুলনা করুন, মথি ৩:১৭.

      একটা বাড়তি প্রতিবন্ধকতা

      ৯. (ক) কেন ধনী দেশের প্রাচীনদের জন্য অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন হতে পারে? (খ) কোনো কোনো যুবক ভাইয়ের জীবনে ঈশ্বরের সেবা করার বিষয়টা কেন প্রথম স্থানে থাকে না?

      ৯ পৃথিবীর বিভিন্ন ধনী দেশের প্রাচীনরা একটা বাড়তি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে পারেন আর সেটা হল, তাদের মণ্ডলীর ২০ অথবা ৩০-এর কোঠার বয়সি ভাইদের কীভাবে আরও বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা যায়। প্রায় ২০টা দেশের অভিজ্ঞ প্রাচীনরা আমাদের জানিয়েছিলেন, কেন তারা মনে করেন, যুবক ভাইদের মধ্যে কেউ কেউ মণ্ডলীতে আরও বেশি কাজ করতে চায় না। তাদের মধ্যে অধিকাংশ প্রাচীন বলেছিলেন, এই ভাইদের মধ্যে কারো কারো বয়স যখন আরও কম ছিল, তখন তাদের বাবা-মা তাদেরকে যিহোবার সেবায় লক্ষ্যস্থাপন করার জন্য উৎসাহিত করেননি। আবার কোনো কোনো অল্পবয়সি ভাই যখন আরও বেশি কিছু করতে চেয়েছে, তখন তাদের বাবা-মা তাদেরকে উচ্চশিক্ষা অথবা জগতের কেরিয়ারের বিষয়ে লক্ষ্যস্থাপন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন! তাই ঈশ্বরের সেবা করার বিষয়টা তাদের জীবনে কখনোই প্রথম স্থানে ছিল না।​—মথি ১০:২৪.

      ১০, ১১. (ক) কীভাবে একজন প্রাচীন কোনো ভাইয়ের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করার জন্য ধীরে ধীরে সাহায্য করতে পারেন? (খ) কোনো ভাইকে অনুপ্রাণিত করার জন্য একজন প্রাচীন কোন শাস্ত্রপদগুলো ব্যবহার করতে পারেন এবং কেন? (পাদটীকা দেখুন।)

      ১০ কোনো ভাইকে যদি মণ্ডলীতে আরও বেশি কিছু করার ব্যাপারে আগ্রহী বলে মনে না হয়, তাহলে তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট কাজ করতে হয় এবং ধৈর্য ধরতে হয়। তবে তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা যেতে পারে। একজন মালি চারাগাছের কাণ্ড ধীরে ধীরে এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে সেই গাছটাকে সোজাভাবে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করেন। একইভাবে, আপনিও ধীরে ধীরে একজন ভাইকে এটা বুঝতে সাহায্য করতে পারেন, মণ্ডলীতে আরও দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু কীভাবে তা করা যায়?

      ১১ সেই ভাইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য সময় করে নিন। ধীরে ধীরে তাকে বুঝতে দিন, মণ্ডলীতে তার প্রয়োজন আছে। তার সঙ্গে বসে এমন শাস্ত্রপদগুলো থেকে যুক্তি করুন, যেগুলো তাকে যিহোবার প্রতি তার উৎসর্গীকরণের বিষয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করবে। (উপ. ৫:৪; যিশা. ৬:৮; মথি ৬:২৪, ৩৩; লূক ৯:৫৭-৬২; ১ করি. ১৫:৫৮; ২ করি. ৫:১৫; ১৩:৫) এই ধরনের প্রশ্ন করার মাধ্যমে তার হৃদয় স্পর্শ করুন: ‘যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার সময় আপনি কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? আপনি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন যিহোবার কেমন লেগেছিল?’ (হিতো. ২৭:১১) ‘তখন শয়তানের কেমন লেগেছিল?’ (১ পিতর ৫:৮) এই ধরনের শাস্ত্রপদ জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে আর একজন ভাইয়ের হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দিতে পারে।​—পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১২.b

      শিক্ষার্থীরা, নিজেদের বিশ্বস্ত প্রমাণ করুন

      ১২, ১৩. (ক) একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ইলীশায় কেমন মনোভাব দেখিয়েছিলেন? (খ) যিহোবা কীভাবে ইলীশায়ের বিশ্বস্ততার পুরস্কার দিয়েছিলেন?

      ১২ যুবক ভাইয়েরা, মণ্ডলীতে আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন! কোন ধরনের মনোভাব যিহোবার সেবায় আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে? উত্তরটা খোঁজার জন্য আসুন আমরা এখন অতীতের একজন শিক্ষার্থী, ইলীশায়ের জীবনের কয়েকটা ঘটনা আলোচনা করি।

      ১৩ প্রায় ৩,০০০ বছর আগে ভাববাদী এলিয়, যুবক ইলীশায়কে তার সাহায্যকারী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ইলীশায় সঙ্গেসঙ্গে রাজি হয়েছিলেন এবং ভাববাদীর জন্য বিশ্বস্ততার সঙ্গে নীচু কাজ করেছিলেন। (২ রাজা. ৩:১১) এলিয় ছয় বছর ধরে ইলীশায়কে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তারপর, ইস্রায়েলে এলিয়ের কাজ যখন শেষ হতে যাচ্ছিল, তখন ভাববাদী তার সাহায্যকারীকে বলেন, যেন তিনি তাকে সেবা করা বন্ধ করেন। কিন্তু, ইলীশায় তিন বার বলেন: “আমি আপনাকে ছাড়িব না।” তিনি যতক্ষণ সম্ভব তার শিক্ষকের সঙ্গে থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। আর এর ফলে, যিহোবা ইলীশায়কে তার আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার পুরস্কার দিয়েছিলেন। এলিয়কে যখন ঘূর্ণবায়ুতে উত্থিত করা হয়েছিল, সেই ঘটনা ইলীশায়কে দেখার সুযোগ যিহোবা দিয়েছিলেন।​—২ রাজা. ২:১-১২.

      ১৪. (ক) বর্তমানে শিক্ষার্থীরা কীভাবে ইলীশায়কে অনুকরণ করতে পারেন? (খ) একজন শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্বস্ত হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

      ১৪ একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, আপনি কীভাবে ইলীশায়কে অনুকরণ করতে পারেন? বিভিন্ন দায়িত্ব, এমনকী নীচু কাজ হলেও, তা গ্রহণ করার ব্যাপারে তৎপর হোন। মনে রাখবেন, আপনার শিক্ষক হলেন আপনার বন্ধু। তাই, তিনি আপনার জন্য যা করছেন, সেটা যে আপনি উপলব্ধি করেন, তা তাকে বলুন এবং আপনি যে তার কাছ থেকে আরও শিখতে চান, আপনার আচরণের মাধ্যমে তা দেখান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, বিশ্বস্ততার সঙ্গে আপনার দায়িত্ব পালন করুন। কেন? কারণ আপনি যখন নিজেকে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করবেন, তখন প্রাচীনরা এই ব্যাপারে আশ্বস্ত হবেন, যিহোবা আপনাকে মণ্ডলীতে আরও দায়িত্ব দিতে ইচ্ছুক।​—গীত. ১০১:৬; পড়ুন, ২ তীমথিয় ২:২.

      অভিজ্ঞ প্রাচীনদের সম্মান করুন

      ১৫, ১৬. (ক) ইলীশায় কোন কোন উপায়ে তার শিক্ষকের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) কেন অন্য ভাববাদীরা ইলীশায়ের প্রতি আস্থা গড়ে তুলেছিলেন?

      ১৫ এ ছাড়া, ইলীশায়ের বিবরণ তুলে ধরে যে, বর্তমানে ভাইদের জন্য অভিজ্ঞ প্রাচীনদের প্রতি সম্মান দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। এলিয় ও ইলীশায় যিরীহোর একদল ভাববাদীর সঙ্গে দেখা করার পর, যর্দন নদীর সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর “এলিয় আপন শাল ধরিয়া গুটাইয়া লইয়া জলে আঘাত করিলেন, তাহাতে জল এদিকে ওদিকে বিভক্ত হইল।” সেই দুই ব্যক্তি তখন যর্দন নদীর শুকনো ভূমির উপর দিয়ে পার হয়েছিলেন আর তারা ‘যাইতে যাইতে কথা কহিতেছিলেন।’ ইলীশায় তার শিক্ষকের বলা প্রতিটা কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন এবং ক্রমাগত শিক্ষা লাভ করেছিলেন। ইলীশায় কখনো এইরকম মনে করেননি, তিনি সব জানেন। তারপর, এলিয়কে ঘূর্ণবায়ুতে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল আর ইলীশায় যর্দন নদীর কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এলিয়ের শাল নিয়ে জলের উপর আঘাত করে বলেছিলেন: “এলিয়ের ঈশ্বর সদাপ্রভু কোথায়?” আবারও নদীর জল বিভক্ত হয়েছিল।​—২ রাজা. ২:৮-১৪.

      ১৬ আপনি কি লক্ষ করেছেন, ইলীশায়ের প্রথম অলৌকিক কাজ আর এলিয়ের শেষ অলৌকিক কাজ, হুবহু এক ছিল? এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? ইলীশায় এমনটা মনে করেননি, যেহেতু তিনি এখন দায়িত্ব পেয়েছেন, তাই তাকে এলিয়ের চেয়ে ভিন্ন উপায়ে কাজ করতে হবে। এর পরিবর্তে, এলিয়ের পদ্ধতি অনুকরণ করার মাধ্যমে ইলীশায় দেখিয়েছিলেন, তিনি তার শিক্ষককে সম্মান করেন। আর এই বিষয়টা অন্যান্য ভাববাদীকে ইলীশায়ের প্রতি আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। (২ রাজা. ২:১৫) ইলীশায় ৬০ বছর ধরে একজন ভাববাদী হিসেবে সেবা করেছিলেন আর যিহোবা তাকে এলিয়ের চেয়ে আরও বেশি অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। এখান থেকে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারেন?

      ১৭. (ক) বর্তমানে শিক্ষার্থীরা কীভাবে ইলীশায়ের মনোভাব অনুকরণ করতে পারেন? (খ) পরবর্তী সময়ে যিহোবা বিশ্বস্ত শিক্ষার্থীদের কীভাবে ব্যবহার করতে পারেন?

      ১৭ আপনি যখন মণ্ডলীতে আরও দায়িত্ব লাভ করেন, তখন এইরকম মনে করবেন না, আগে যেভাবে বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে, আপনাকে সেগুলোর চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন কোনো উপায়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখবেন, মণ্ডলীতে তখনই বিভিন্ন পরিবর্তন করা হয়, যখন সেটা মণ্ডলীতে প্রয়োজন অথবা সেই বিষয়ে যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে নির্দেশনা আসে। আপনি চান বলেই পরিবর্তন করতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। এলিয়ের পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে, ইলীশায় অন্য ভাববাদীদেরকে তার প্রতি আস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন এবং তার শিক্ষকের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। একইভাবে, আপনি যখন আপনার শিক্ষকের শেখানো বাইবেলভিত্তিক পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেন, তখন আপনি অভিজ্ঞ প্রাচীনদের প্রতি সম্মান প্রকাশ করেন এবং আপনার প্রতি ভাই-বোনদের আস্থা গড়ে ওঠে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৪:১৭.) আপনার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আপনি মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সেই পরিবর্তনগুলো করার জন্য সাহায্য করতে পারবেন, যেগুলো তাদের যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। যিহোবার সংগঠন সবসময়ই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আর পরবর্তী সময়ে, যিহোবা হয়তো আপনাকে আপনার শিক্ষকের চেয়ে আরও বড়ো বড়ো কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন, যেমনটা তিনি ইলীশায়কে করেছিলেন।​—যোহন ১৪:১২.

      ১৮. মণ্ডলীর ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি কেন?

      ১৮ আমরা আশা করি, এই প্রবন্ধে ও আগের প্রবন্ধে তুলে ধরা বিভিন্ন পরামর্শ, আরও বেশি প্রাচীনকে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আর আমরা এও প্রার্থনা করি, আরও বেশিসংখ্যক ভাই ইচ্ছুক মনোভাব সহকারে প্রশিক্ষণ নেবেন আর সেইসঙ্গে যিহোবার লোকেদের যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের শেখা বিষয়গুলো ব্যবহার করবেন। এই প্রশিক্ষণ বিশ্বজুড়ে মণ্ডলীগুলোকে আরও দৃঢ় করবে এবং আসন্ন রোমাঞ্চকর সময়ে আমাদের প্রত্যেককে বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করবে।

      a একজন অল্পবয়সি ভাই যদি তার আচরণে দেখায়, সে পরিপক্ব ও নম্র এবং মণ্ডলীতে সেবা করার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য গুণাবলিও তার রয়েছে, তাহলে প্রাচীনরা হয়তো তার বয়স ২০ বছর না হলেও তাকে একজন পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য সুপারিশ করতে পারেন।​—১ তীম. ৩:৮-১০, ১২; ২০০০ সালের মে মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র ৮ পৃষ্ঠা দেখুন।

      b আপনি এই প্রবন্ধগুলোতে পাওয়া বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতে পারেন: ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার পৃষ্ঠা ১৪-১৬, অনুচ্ছেদ ৮-১৩; “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের অধ্যায় ১৬, অনুচ্ছেদ ১-৩.

      অন্যদের যেভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়

      অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় সফল হয়েছেন এমন প্রাচীনরা এই পরামর্শ দিয়েছেন:

      1. আপনার কথায় এবং কাজে উদাহরণ দেখান।

      2. শিক্ষার্থীকে এক বছরের মধ্যে পুরো বাইবেল পড়ার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য উৎসাহিত করুন।

        একজন পাচীন একজন পরিচারক দাসকে টবিল ও লি ব্যবহার করে সাক্ষ্যদান করার বিষয়ে পশিক্ষণ দিচ্ছন
      3. ক্ষেত্রের পরিচর্যায় একসঙ্গে কাজ করুন। (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবি দেখুন।)

      4. তাকে ক্ষেত্রের পরিচর্যা সভা পরিচালনা করার বিষয়ে শিক্ষা দিন, যে-সভা থেকে ভাই-বোনেরা উপকৃত হয়।

        ১. একজন পাচীন জনসাধারণের উদশে বক্তৃতা দিচ্ছন; ২. একজন পাচীন একজন পরিচারক দাসকে সাহায্য করছন; ৩. একজন পরিচারক দাস বক্তৃতা দিচ্ছন
      5. আপনি যখন জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন, তখন তাকে সেই বক্তৃতার আউটলাইনের একটা কপি দিন, যাতে আপনি কীভাবে বিষয়টা আলোচনা করেন, তা তিনি বুঝতে পারেন।

      6. মাঝে মাঝে শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে আপনাদের পারিবারিক উপাসনায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

      7. শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে, আপনার ও আপনার পরিবারের সঙ্গে এমন এলাকায় গিয়ে প্রচার করার প্রস্তাব দিন, যেখানে অল্পসংখ্যক সাক্ষি রয়েছে অথবা কোনো সাক্ষিই নেই।c

      c অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার প্রাচীনরা এসব পরামর্শ কাজে লাগিয়ে উত্তম ফল পেয়েছেন।

বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
লগ আউট
লগ ইন
  • বাংলা
  • শেয়ার
  • পছন্দসমূহ
  • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
  • ব্যবহারের শর্ত
  • গোপনীয়তার নীতি
  • গোপনীয়তার সেটিং
  • JW.ORG
  • লগ ইন
শেয়ার