তাদের উপচয়ে অভাব পূর্ণ হয়
সময়টা ছিল ৪৯ খ্রিস্টাব্দ। পিতর, যাকোব এবং যোহন—“যাঁহারা স্তম্ভরূপে মান্য”—প্রেরিত পৌল এবং তার সহকর্মী বার্ণবাকে একটা কার্যভার প্রদান করেছিল। পরজাতীয়দের কাছে প্রচার করার পাশাপাশি তাদেরকে দরিদ্র খ্রিস্টানদের কথাও মনে রাখতে হতো। (গালা. ২:৯, ১০) কীভাবে এই দায়িত্ব পরিপূর্ণ করা হয়েছিল?
এই বিষয়ে যে পৌল মনোযোগ দিয়েছিলেন, তা তার চিঠিগুলোর মধ্যে প্রকাশ পায়। উদাহরণস্বরূপ, করিন্থের খ্রিস্টানদের প্রতি তিনি লিখেছিলেন: “পবিত্রগণের নিমিত্ত চাঁদার সম্বন্ধে, আমি গালাতিয়া দেশস্থ মণ্ডলী সকলকে যে আজ্ঞা দিয়াছি, তদনুসারে তোমরাও কর। সপ্তাহের প্রথম দিনে তোমরা প্রত্যেকে আপনাদের নিকটে কিছু কিছু রাখিয়া আপন আপন সঙ্গতি অনুসারে অর্থ সঞ্চয় কর; যেন আমি যখন আসিব, তখনই চাঁদা না হয়। পরে আমি উপস্থিত হইলে, তোমরা যাহাদিগকে যোগ্য মনে করিবে, আমি তাহাদিগকে পত্র দিয়া তাহাদের দ্বারা তোমাদের সেই দান যিরূশালেমে পাঠাইয়া দিব।”—১ করি. ১৬:১-৩.
করিন্থীয়দের প্রতি তার দ্বিতীয় অনুপ্রাণিত চিঠিতে পৌল চাঁদা সংগ্রহের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে পুনরায় উল্লেখ করেছিলেন। সেই উদ্দেশ্য ছিল, “বর্ত্তমান সময়ে তোমাদের উপচয়ে উহাদের অভাব পূর্ণ হউক।”—২ করি. ৮:১২-১৫.
প্রায় ৫৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে পৌল যখন রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, তখন চাঁদা সংগ্রহ করা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: “পবিত্রদিগের পরিচর্য্যা করিতে যিরূশালেমে যাইতেছি। কারণ যিরূশালেমস্থ পবিত্রদিগের মধ্যে যাহারা দীনহীন, তাহাদের জন্য মাকিদনিয়া ও আখায়া দেশীয়েরা প্রীত হইয়া সহভাগিতা-সূচক কিছু চাঁদা সংগ্রহ করিয়াছে।” (রোমীয় ১৫:২৫, ২৬) এর অল্প কয়েক দিন পরই পৌল তার কার্যভার সম্পন্ন করেছিলেন, কারণ যিরূশালেমে ফিরে আসার এবং সেখানে বন্দী হওয়ার পর তিনি রোমীয় দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্সকে এই কথা বলেছিলেন: “আমি স্বজাতির কাছে দান লইবার এবং নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবার জন্য আসিয়াছিলাম।”—প্রেরিত. ২৪:১৭.
প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা যে-মনোভাব প্রদর্শন করেছিল, তা মাকিদনীয়দের সম্বন্ধে বলা পৌলের কথাগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। তিনি বলেছিলেন যে, তারা “বিস্তর অনুনয় সহকারে সেই অনুগ্রহের সম্বন্ধে আমাদের কাছে অনুরোধ করিয়াছিল।” প্রেরিত করিন্থীয়দেরকে সেই উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভালবাসেন।” কোন বিষয়টা মণ্ডলীগুলোকে এই ধরনের উদারতা দেখানোর জন্য পরিচালিত করেছিল? এর পিছনে কেবল ‘পবিত্রগণের অভাব পূর্ণ করিবার’ আকাঙ্ক্ষাই নয় ‘বরং অনেক ধন্যবাদের দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশেও উপচিয়া পড়িবার’ আকাঙ্ক্ষাও ছিল। (২ করি. ৮:৪; ৯:৭, ১২) আমাদের উদারতার পিছনেও যেন একই উদ্দেশ্য থাকে। নিশ্চিতভাবেই, যিহোবা ঈশ্বর এই ধরনের এক চমৎকার এবং নিঃস্বার্থপর মনোভাবের ওপর আশীর্বাদ করবেন—আর সত্যিই তাঁর আশীর্বাদ একজন ব্যক্তিকে ধনবান করে।—হিতো. ১০:২২.
[৯ পৃষ্ঠার বাক্স]
কেউ কেউ যে-উপায়গুলোতে বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য দান করে থাকে
প্রেরিত পৌলের দিনের মতো বর্তমানেও অনেকে “কিছু কিছু রাখিয়া” দেয় বা কিছু পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট করে রাখে এবং মণ্ডলীতে “বিশ্বব্যাপী কাজ” নামক দান বাক্সে সেটা দিয়ে থাকে। (১ করি. ১৬:২) প্রত্যেক মাসে, মণ্ডলীগুলো এই দান যিহোবার সাক্ষিদের সেই শাখা অফিসে পাঠিয়ে দেয়, যেটা তাদের দেশের জন্য কাজ করে থাকে। এ ছাড়া, আপনার দেশে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা ব্যবহৃত কোনো বৈধ সত্তার নামেও আপনি সরাসরি দান পাঠাতে পারেন।a আপনি সরাসরি যে-দানগুলো পাঠাতে পারেন, সেগুলো নীচে উল্লেখ করা হল:
শর্তহীন দান
• নগদ অর্থ, জুয়েলারি অথবা অন্যান্য মূল্যবান ব্যক্তিগত সম্পত্তি।
• নগদ অর্থ বা অন্যান্য জিনিস যে শর্তহীন দান, তা উল্লেখ করে একটা চিঠি অন্তর্ভুক্ত করুন।
শর্তযুক্ত দানের ব্যবস্থা
• এই শর্তে নগদ অর্থ দান করা হয় যে, যদি দাতার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা ফেরত দেওয়া হবে।
• এই দান যে শর্তযুক্ত, তা উল্লেখ করে একটা চিঠি অন্তর্ভুক্ত করুন।
দাতব্য পরিকল্পনাb
বিশ্বব্যাপী রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপহার হিসেবে অর্থ বা মূল্যবান ব্যক্তিগত সম্পদ পাঠানো ছাড়াও দান করার অন্যান্য উপায় রয়েছে। নীচে সেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি যে-উপায় বা উপায়গুলোই ব্যবহার করতে চান না কেন, দয়া করে প্রথমে আপনার দেশের জন্য যে-শাখা অফিস কাজ করে থাকে, সেখানে যোগাযোগ করুন যেন আপনি জানতে পারেন যে, নীচে উল্লেখিত কোন উপায়গুলো আপনার দেশে রয়েছে। যেহেতু, বৈধ চাহিদা এবং কর সংক্রান্ত আইনগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে, তাই দান করার জন্য সর্বোত্তম উপায়টা বেছে নেওয়ার আগে যোগ্য কোনো কর অথবা আইন উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
বিমা: কোনো জীবনবিমা প্রকল্পের অথবা অবসর গ্রহণ/পেনশন পরিকল্পনার স্বত্বভোগী হিসেবে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা ব্যবহৃত কোনো সত্তার নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দান করা।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ডিপোজিটের সার্টিফিকেট অথবা ব্যক্তির অবসর গ্রহণকালীন অ্যাকাউন্টগুলোকে স্থানীয় ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুসারে একটা ট্রাস্ট হিসেবে অথবা ব্যক্তির মৃত্যুর পর যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা ব্যবহৃত কোনো সত্তার নামে প্রদান করা যেতে পারে।
স্টক ও বন্ড: স্টক ও বন্ডগুলোকে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা ব্যবহৃত কোনো সত্তার নামে শর্তহীন উপহার হিসেবে অথবা মৃত্যুর পর হস্তান্তর করা হবে এই চুক্তির ভিত্তিতে দান করা যেতে পারে।
স্থাবর সম্পত্তি: বিক্রয়যোগ্য স্থাবর সম্পত্তি যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা ব্যবহৃত কোনো সত্তার নামে, হয় এক শর্তহীন উপহার হিসেবে অথবা আবাসিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে দাতার জন্য জীবনস্বত্ত্বরূপে সংরক্ষণ করে তা প্রদান করা যেতে পারে, এই শর্তে যে, তিনি তার জীবনকালে সেখানে বসবাস করতে পারবেন।
বার্ষিক বৃত্তি উপহার: অর্থ অথবা সম্পত্তির মালিকানাসূচক দলিলগুলো একটা চুক্তির মাধ্যমে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা ব্যবহৃত কোনো সত্তার নামেc দান করা যেতে পারে, যার ফলে দাতা কিংবা দাতার দ্বারা নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি জীবনভর প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট বার্ষিক বৃত্তি লাভ করেন। যে-বছর থেকে বার্ষিক বৃত্তি উপহার ব্যবস্থা চালু হয়, সেই বছরের জন্য দাতা আয়করের ক্ষেত্রেও ছাড় পেয়ে থাকেন।
উইল ও ট্রাস্ট: সম্পত্তি অথবা অর্থ আইনসম্মতভাবে সম্পন্ন উইলের সাহায্যে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা ব্যবহৃত কোনো সত্তার নামেd হস্তান্তর করা যেতে পারে অথবা ট্রাস্ট চুক্তির স্বত্বভোগী হিসেবে দান করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থা হয়তো কর প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা প্রদান করবে।
“দাতব্য পরিকল্পনা” শব্দটি যেমন ইঙ্গিত করে যে, এই ধরনের দানগুলো করার জন্য সাধারণত দাতার আগে থেকেই পরিকল্পনা করা দরকার। যে-ব্যক্তিরা কোনো ধরনের দাতব্য পরিকল্পনার মাধ্যমে যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বব্যাপী কাজে সাহায্য করতে চায়, তাদের সহযোগিতা করার জন্য ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় একটা ব্রোশার প্রস্তুত করা হয়েছে, যেটির শিরোনাম হল বাজ্যের কাজের জন্য দাতব্য পরিকল্পনা।e এই ব্রোশারটি উপহার দেওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্বন্ধে তথ্য জোগানোর জন্য লেখা হয়েছে, যেগুলো হয় এখনই বা মৃত্যুর পর উইলের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে। এই ব্রোশারে যে-তথ্যগুলো প্রদান করা হয়েছে, সেগুলো হয়তো আপনার দেশের কর অথবা অন্যান্য আইনের কারণে আপনার ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। তাই, এই ব্রোশারটি পড়ার পর আপনার নিজস্ব আইনগত অথবা কর উপদেষ্টার সঙ্গে আপনার আলোচনা করা উচিত। দান করার এই উপায়গুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে অনেকেই বিশ্বব্যাপী আমাদের ধর্মীয় এবং মানবিক কাজকে সমর্থন করার জন্য সাহায্য করতে সমর্থ হয়েছে আর তা করার ফলে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সুবিধাগুলো বৃদ্ধি করেছে। আপনার দেশে যদি পাওয়া যায়, তাহলে স্থানীয় মণ্ডলীর সচিবের কাছে অনুরোধ করার মাধ্যমে আপনি হয়তো এই ব্রোশারের একটি কপি পেতে পারেন।
আরও তথ্য জানার জন্য, আপনি হয়তো নীচে দেওয়া ঠিকানায় চিঠি লিখে অথবা টেলিফোনের মাধ্যমে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আপনার দেশের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের যে-অফিস কাজ করছে, সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন।
[পাদটীকাগুলো]
a ভারতে এটা “ভারতের যিহোবার সাক্ষিদের” প্রতি প্রদানযোগ্য হিসেবে পাঠানো উচিত।
b চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, দয়া করে স্থানীয় শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
c ভারতে, “দ্যা ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অভ্ ইন্ডিয়া” ব্যবহার করুন।
d ভারতে, “দ্যা ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অভ্ ইন্ডিয়া” ব্যবহার করুন।
e খুব শীঘ্র ভারতে “দাতব্য পরিকল্পনা লিফলেট” অসমিয়া, বাংলা, ইংরেজি, গুজরাটি, হিন্দি, কান্নাড়া, কোঙ্কানি, মালায়ালাম, মারাঠি, মিজো, নেপালি, পাঞ্জাবি, তামিল এবং তেলুগু ভাষায় পাওয়া যাবে।
Jehovah’s Witnesses of India
Post Box ৬৪৪০,
Yelahanka,
Bangalore ৫৬০ ০৬৪,
Karnataka.
Telephone: (০৮০) ২৮৪৬৮০৭২