উত্তম ভবিষ্যতের জন্য এক প্রকৃত আশা
আপনার কি মনে হয়, ভবিষ্যতে পৃথিবীর অবস্থা ভালো হবে? বর্তমানে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও অনেকে মনে করে যে, হ্যাঁ, পরিস্থিতি ভালো হবে। কিন্তু সত্যি কি তা হবে? অবশ্যই, বাইবেল উত্তম ভবিষ্যতের বিষয়ে এক প্রকৃত আশা দেয়।
বাইবেল কী আশা দেয়?
বাইবেল যদিও স্বীকার করে যে, আজ মানুষ চরম সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, কিন্তু এটি এও বলে, এই সমস্যা চিরকাল থাকবে না। কয়েকটা উদাহরণের কথা চিন্তা করুন।
সমস্যা: বাসস্থানের অভাব
বাইবেল যা বলে: “তারা বাড়ি তৈরি করবে এবং সেখানে থাকবে আর তারা আঙুর গাছ লাগাবে এবং সেগুলোর ফল খাবে।”—যিশাইয় ৬৫:২১.
ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী: প্রত্যেকের নিজের বাড়ি থাকবে।
সমস্যা: বেকারত্ব ও দরিদ্রতা
বাইবেল যা বলে: “আমার বেছে নেওয়া লোকেরা সম্পূর্ণ মাত্রায় নিজেদের হাতের কাজের ফল উপভোগ করবে।”—যিশাইয় ৬৫:২২.
ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী: প্রত্যেকে এমন কাজ করবে, যেটা তাদের পরিতৃপ্তি দেবে, খুশি করবে এবং সেই কাজের ফল তারা উপভোগ করবে।
সমস্যা: অবিচার
বাইবেল যা বলে: “অধ্যক্ষেরা ন্যায়বিচার সহকারে শাসন করবেন।”—যিশাইয় ৩২:১.
ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী: জাতিগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে-অবিচার রয়েছে, সেগুলো আর থাকবে না। সবাইকে সমান চোখে দেখা হবে।
সমস্যা: অপুষ্টি ও খাদ্যের অভাব
বাইবেল যা বলে: “পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে শস্য হবে, পর্বতের চূড়ায় শস্য উপচে পড়বে।”—গীতসংহিতা ৭২:১৬.
ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী: প্রত্যেকের জন্য প্রচুর স্বাস্থ্যকর খাবার থাকবে। কেউ খালি পেটে থাকবে না কিংবা অপুষ্টিতে ভুগবে না।
সমস্যা: অপরাধ ও দৌরাত্ম্য
বাইবেল যা বলে: “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—মীখা ৪:৪.
ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী: প্রত্যেকে সুরক্ষিত থাকবে কারণ তাদের চারিদিকে আর কোনো দুষ্ট লোক থাকবে না। এর পরিবর্তে, “ধার্মিকেরা পৃথিবীর অধিকারী হবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ২৯.
সমস্যা: যুদ্ধ
বাইবেল যা বলে: “এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে আর তলোয়ার তুলবে না, তারা আর যুদ্ধ শিখবে না।”—যিশাইয় ২:৪.
ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী: সারা পৃথিবীতে শান্তি থাকবে। (গীতসংহিতা ৭২:৭) প্রিয়জনকে যুদ্ধে হারিয়েছে বলে কেউ আর দুঃখ করবে না অথবা কাউকে যুদ্ধের জন্য দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হবে না।
সমস্যা: অসুস্থতা ও রোগ
বাইবেল যা বলে: “কোনো বাসিন্দা বলবে না: ‘আমি অসুস্থ।’”—যিশাইয় ৩৩:২৪.
ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী: শারীরিক অক্ষমতা কিংবা অসুস্থতার জন্য কাউকে আর কষ্ট পেতে হবে না। (যিশাইয় ৩৫:৫, ৬) বাইবেল এমনকী এও প্রতিজ্ঞা করে যে, “মৃত্যু আর থাকবে না।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.
সমস্যা: পরিবেশ দূষণ
বাইবেল যা বলে: “প্রান্তর এবং শুকনো ভূমি আনন্দ করবে, মরুভূমি উল্লসিত হবে এবং ফুলে ভরে যাবে।”—যিশাইয় ৩৫:১.
ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী: সারা পৃথিবী পরমদেশে পরিণত হবে, যেখানে মানুষ বসবাস করতে পারবে। আসলে এটাই ছিল ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য।—আদিপুস্তক ২:১৫; যিশাইয় ৪৫:১৮.
বাইবেল যে-আশা দেয়, সেগুলোকে কি সত্যিই বিশ্বাস করা যায়?
আপনার মনেও হয়তো এই প্রশ্নটা আসতে পারে। কিন্তু আমরা চাই, বাইবেল ভবিষ্যতের বিষয়ে যা বলে, তা আপনি একবার পরীক্ষা করে দেখুন। কিন্তু কেন? এর কারণ হল, মানুষেরা সাধারণত ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যা বলে থাকে, সেটার থেকে বাইবেলের প্রতিজ্ঞাগুলো একেবারেই আলাদা। আসলে বাইবেলে যা লেখা রয়েছে, সেগুলো ঈশ্বরেরই প্রতিজ্ঞা। কেন আমরা তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করতে পারি, তার কিছু কারণ লক্ষ করুন:
ঈশ্বর যা বলেন, তা-ই করেন। বাইবেল বলে ঈশ্বর “মিথ্যা বলতে পারেন না।” (তীত ১:২) এ ছাড়া, একমাত্র ঈশ্বরই বলতে পারেন, ভবিষ্যতে কী হবে। (যিশাইয় ৪৬:১০) বাইবেলে এমন অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে, যেগুলো দেখায় যে, ঈশ্বর যা বলেছেন, পরে তা সত্যিই ঘটেছে। আরও তথ্য জানার জন্য কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, বাইবেল সত্য? শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।
আমাদের সমস্ত সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা ঈশ্বরের রয়েছে। বাইবেল জানায়, ঈশ্বর “যা চান, তা-ই করেন।” (গীতসংহিতা ১৩৫:৫, ৬) অন্য কথায় বলতে গেলে, কোনো কিছুই ঈশ্বরকে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে না। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, তিনি আমাদের ভালোবাসেন বলে আমাদের সাহায্য করতে চান।—যোহন ৩:১৬.
স্বাভাবিকভাবেই আপনি হয়তো ভাবছেন, “ঈশ্বর যদি সত্যিই আমাদের সাহায্য করতে চান আর তা করার ক্ষমতা যদি তাঁর থাকে, তা হলে কেন আমরা এখনও সমস্যার মুখোমুখি হই?” এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন? শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।
কীভাবে এই আশা বাস্তবে পরিণত হবে?
ঈশ্বর তাঁর রাজ্য অর্থাৎ এক স্বর্গীয় সরকারের মাধ্যমে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন। তিনি এই রাজ্যের শাসক হিসেবে যিশুকে নিযুক্ত করেছেন আর তাঁকে পৃথিবী এবং এর মধ্যে থাকা লোকদের দেখাশোনা করার ভার দিয়েছেন। পৃথিবীতে থাকার সময় যিশু অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন, ক্ষুধার্তদের খাইয়েছিলেন, আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন এবং মৃত ব্যক্তিদের আবার জীবিত করে তুলেছিলেন। (মার্ক ৪:৩৯; ৬:৪১-৪৪; লূক ৪:৪০; যোহন ১১:৪৩, ৪৪) এভাবে তিনি দেখিয়েছিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে তিনি কী করবেন।
ঈশ্বরের রাজ্য আপনার জীবনে কী কী উপকার আনতে পারে, সেই বিষয়ে আরও জানার জন্য ঈশ্বরের রাজ্য কী? শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।
কখন এই আশা পরিপূর্ণ হবে?
খুব তাড়াতাড়ি। কীভাবে আমরা এতটা নিশ্চিত হতে পারি? বাইবেলে এমন কিছু ঘটনার কথা বলা রয়েছে, যেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ঈশ্বরের রাজ্য খুব শীঘ্র পৃথিবীর উপর শাসন করতে শুরু করবে। (লূক ২১:১০, ১১) বাইবেলের কথাগুলো বর্তমান জগতের পরিস্থিতির সঙ্গে একেবারে মিলে যায়।
এই সম্বন্ধে আরও জানার জন্য কখন ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীতে শাসন করবে? শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ুন।
বাইবেলে দেওয়া আশা কীভাবে আপনাকে বর্তমানে সাহায্য করতে পারে?
বাইবেলে যে-আশার কথা বলা হয়েছে, সেই সম্বন্ধে বাইবেলেরই একজন লেখক এটাকে “জীবনের জন্য এক নোঙরের” সঙ্গে তুলনা করেছেন। (ইব্রীয় ৬:১৯) ঠিক যেমন একটা নোঙর ঝড়ের মধ্যে জাহাজকে স্থির রাখে, তেমনই বাইবেলের নিশ্চিত আশা আজ আমরা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এই আশা আমাদের শান্ত, স্থির ও আনন্দে থাকতে আর এমনকী শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।—১ থিষলনীকীয় ৫:৮.