“সত্যের অবয়ব” থেকে শিখুন
“[তুমি] ব্যবস্থায় জ্ঞানের ও সত্যের অবয়ব পাইয়াছ।”—রোমীয় ২:২০.
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করুন:
মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী যে-বলিদানগুলো করা হতো, সেগুলো কোন বিষয়কে চিত্রিত করেছিল?
ইস্রায়েলীয়দের কিছু নির্দিষ্ট বলিদান এবং বর্তমানে খ্রিস্টানদের বলিদানগুলোর মধ্যে কোন সাদৃশ্য রয়েছে?
কোন বিষয়গুলো নির্ধারণ করে যে, একটা বলিদান যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য নাকি গ্রহণযোগ্য নয়?
১. কেন আমাদের মোশির ব্যবস্থার তাৎপর্য বোঝার ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া উচিত?
প্রেরিত পৌলের অনুপ্রাণিত লেখাগুলো যদি না থাকত, তাহলে মোশির ব্যবস্থার বিভিন্ন দিকের তাৎপর্য বোঝা আমাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যেত। উদাহরণস্বরূপ, ইব্রীয়দের কাছে লেখা তার চিঠিতে, তিনি এই বিষয়টা স্পষ্ট করেন যে, “বিশ্বস্ত মহাযাজক” হিসেবে কীভাবে যিশু এক বারের ও চিরকালের জন্য এক “প্রায়শ্চিত্ত” প্রদান করার ফলে সেই ব্যক্তিদের জন্য “অনন্তকালীয় মুক্তি” উপার্জন করা সম্ভবপর করেছেন, যারা এটাতে বিশ্বাস দেখিয়ে চলে। (ইব্রীয় ২:১৭; ৯:১১, ১২) পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, আবাস কেবল ‘স্বর্গীয় বিষয়ের ছায়া’ মাত্র ও সেইসঙ্গে যিশু মোশির দ্বারা প্রবর্তিত চুক্তির চেয়ে “উৎকৃষ্টতর নিয়মের” বা চুক্তির মধ্যস্থতাকারী হয়ে উঠেছিলেন। (ইব্রীয় ৭:২২; ৮:১-৫) পৌলের দিনে, ব্যবস্থার এই ধরনের ব্যাখ্যা খ্রিস্টানদের কাছে অমূল্য ছিল আর সেগুলো এখনও রয়েছে। এগুলো আমাদেরকে, ঈশ্বর আমাদের জন্য যে-ব্যবস্থাগুলো করেছেন, সেগুলোর মূল্য পূর্ণরূপে বুঝতে সাহায্য করে।
২. পরজাতীয় খ্রিস্টানদের চেয়ে যিহুদি খ্রিস্টানদের কোন সুযোগ ছিল?
২ পৌল যখন রোমের খ্রিস্টানদের কাছে লিখেছিলেন, তখন তিনি মণ্ডলীর সেই সদস্যদের উদ্দেশে কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যারা যিহুদি বংশ থেকে এসেছিল এবং মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করেছিল। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, ঐশিক ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত থাকায় এই ধরনের ব্যক্তিদের, যিহোবা এবং তাঁর ধার্মিক নীতি সম্বন্ধীয় “জ্ঞানের ও সত্যের অবয়বের” অধিকারী হওয়ার সুযোগ ছিল। ‘সত্যের অবয়ব’ সম্বন্ধে উপলব্ধি করতে পারা ও সেইসঙ্গে এর প্রতি আন্তরিক সম্মান যিহুদি খ্রিস্টানদেরকে তাদের পূর্বের বিশ্বস্ত যিহুদিদের মতো নির্দেশনা দিতে, শিক্ষা প্রদান করতে এবং এমন ব্যক্তিদেরকে জ্ঞানালোকিত করতে সমর্থ করেছিল, যারা সেই ব্যবস্থা সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিল, যা যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে দিয়েছিলেন।—পড়ুন, রোমীয় ২:১৭-২০.
যিশুর বলিদানের বিভিন্ন ছায়া
৩. কীভাবে আমরা প্রাচীন যিহুদিদের বিভিন্ন বলি সম্বন্ধে অধ্যয়ন করা থেকে উপকার লাভ করি?
৩ পৌল সত্যের যে-অবয়ব সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, তা যিহোবার উদ্দেশ্যগুলো বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এখনও গুরুত্বপূর্ণ। মোশির ব্যবস্থার পিছনে যে-নীতিগুলো রয়েছে, সেগুলোর তাৎপর্য এবং মূল্য এখনও রয়েছে। এই বিষয়টা মনে রেখে, আসুন আমরা ব্যবস্থার মাত্র একটা দিক বিবেচনা করি—কীভাবে বিভিন্ন ধরনের বলি এবং উৎসর্গ নম্র যিহুদিদেরকে খ্রিস্টের দিকে পরিচালিত করেছিল এবং ঈশ্বর তাদের কাছে কী চান, তা বুঝতে সাহায্য করেছিল। আর যেহেতু যিহোবা তাঁর দাসদের কাছ থেকে যে-মৌলিক বিষয়গুলো চান, সেগুলো কখনো পরিবর্তন হয় না, তাই আমরা এও দেখব যে, বলি এবং উৎসর্গ সম্বন্ধে ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দেরকে যে-আইনগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো আমাদের পবিত্র সেবার গুণগত মান সম্বন্ধে বিশ্লেষণ করার ব্যাপারে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে।—মালাখি ৩:৬.
৪, ৫. (ক) মোশির ব্যবস্থা ঈশ্বরের লোকেদের কী স্মরণ করিয়ে দিত? (খ) বলিদান সম্পর্কিত ঈশ্বরের ব্যবস্থা কোন বিষয়টাকে নির্দেশ করেছিল?
৪ মোশির ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক যে তাদের পাপপূর্ণ অবস্থার ওপর জোর দিত, সেটা ভুলে যাওয়া প্রাচীন যিহুদিদের জন্য কখনোই সম্ভব ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি কোনো মানুষের মৃতদেহ স্পর্শ করত, তাহলে তাকে মুক্তপাপ করতে হতো। এর জন্য একটা নির্দোষ রক্তবর্ণা গাভী বধ করতে এবং সেটাকে পোড়াতে হতো। এর ভস্ম “অশৌচঘ্ন জলের নিমিত্ত” রাখা হতো, যা সেই ব্যক্তিকে মুক্তপাপ করার জন্য অশুচি হওয়ার তৃতীয় এবং সপ্তম দিবসে তার ওপর ছিটিয়ে দেওয়া হতো। (গণনা. ১৯:১-১৩) আর মানুষের প্রজনন ক্ষমতা যে অসিদ্ধতা ও পাপ ছড়িয়ে দেয়, সেটার অনুস্মারক হিসেবে, সন্তান প্রসব করতেন এমন একজন মহিলাকে নির্দিষ্ট অশৌচকাল পালন করতে হতো, যে-সময়ের পর তাকে একটা বলিদানের মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো।—লেবীয়. ১২:১-৮.
৫ পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য রোজকার জীবনে আরও অন্যান্য অনেক পরিস্থিতিতে পশুবলি দেওয়ার প্রয়োজন হতো। উপাসকরা বুঝতে পারুক বা না-ই পারুক, এই বলিগুলো—এবং পরে যেগুলো যিহোবার মন্দিরে দেওয়া হতো, সেগুলো—যিশুর সিদ্ধ বলিদানের ‘ছায়া’ ছিল।—ইব্রীয় ১০:১-১০.
বলিদানের পিছনে মনোভাব
৬, ৭. (ক) বলি উৎসর্গের পশু বাছাই করার সময় ইস্রায়েলীয়দের কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হতো আর এটা কোন বিষয়কে চিত্রিত করত? (খ) আর আমরা নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?
৬ যিহোবার উদ্দেশে বলি দিতে হতো এমন যেকোনো পশু সম্বন্ধে এক প্রধান মান ছিল যে, সেটাকে সমস্ত দিক দিয়ে “নির্দ্দোষ” হতে হতো—অন্ধ, ক্ষতবিক্ষত, বিকৃত অথবা রুগ্ন নয়। (লেবীয়. ২২:২০-২২) ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার উদ্দেশে ফলমূল ও শস্য উৎসর্গ করত, তখন সেগুলোকে তাদের ফসলের “অগ্রিমাংশ,” “উত্তম” হতে হতো। (গণনা. ১৮:১২, ২৯) নিম্নমানের বলিদান যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। পশুবলি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাটা চিত্রিত করেছিল যে, যিশুর বলিদান নিষ্কলঙ্ক এবং নির্দোষ হবে এবং মানবজাতিকে মুক্ত করার জন্য যিহোবা এমন কিছু বলি দেবেন, যা তাঁর কাছে সবচেয়ে উত্তম এবং প্রিয়।—১ পিতর ১:১৮, ১৯.
৭ যে-ব্যক্তি বলিদান করতেন, তিনি যদি যিহোবার সমস্ত মঙ্গলভাবের জন্য তাঁর কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকতেন, তাহলে তিনি কি তার সবচেয়ে উত্তম বিষয়টা বাছাই করে আনন্দিত হতেন না? বলিদানের গুণগত মান ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু, তিনি জানতেন যে, খুঁতযুক্ত কোনো বলিদান ঈশ্বরকে খুশি করবে না কারণ সেটা এই ইঙ্গিত দিত যে, সেই ব্যক্তি বলিদানকে নিছক আনুষ্ঠানিকতা, এমনকী এক বোঝা বলে মনে করেন। (পড়ুন, মালাখি ১:৬-৮, ১৩.) এই বিষয়টা আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সেবা নিয়ে চিন্তা করতে পরিচালিত করে: ‘আমি কোন মনোভাব নিয়ে যিহোবার সেবা করছি? আমার সেবার গুণগত মান এবং তাঁকে সেবা করার বিষয়ে আমার উদ্দেশ্য পুনর্বিবেচনা করে দেখা কি উপযুক্ত হবে?’
৮, ৯. ইস্রায়েলীয়রা যে-মনোভাব নিয়ে বলিদান করত, তা কেন আমাদের বিবেচনা করে দেখা উচিত?
৮ একজন ইস্রায়েলীয়ের বলিদান যদি যিহোবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতার এক স্বেচ্ছাকৃত প্রকাশ হতো অথবা হোমবলি উৎসর্গের মতো তাঁর অনুমোদনের এক অনুরোধ হতো, তাহলে উপযুক্ত পশু বাছাই করা সম্ভবত কোনো কঠিন বিষয় ছিল না। সেই উপাসক যিহোবাকে তার সবচেয়ে উত্তমটা দিতে পেরে আনন্দিত হতো। বর্তমানে, খ্রিস্টানরা মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী আক্ষরিক বলিদান করে না, তবে তারা এই অর্থে বলিদান করে যে, যিহোবাকে সেবা করার জন্য তারা তাদের সময়, শক্তি এবং সম্পদ ব্যবহার করে। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টীয় আশা সম্বন্ধে ‘স্বীকার’ করাকে এবং ‘উপকার ও সহভাগিতার কার্য্যকে’ এমন বলি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, যা ঈশ্বরকে খুশি করে। (ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬) যে-মনোভাব নিয়ে যিহোবার লোকেরা এই ধরনের কাজগুলো করে থাকে, তা দেখায় যে, ঈশ্বর তাদেরকে যা-কিছু প্রদান করেছেন, সেগুলোর জন্য তারা কতটা কৃতজ্ঞ। তাই, বর্তমানে যারা খ্রিস্টীয় সেবায় রত হয় এবং প্রাচীনকালে যারা স্বেচ্ছাকৃতভাবে বলিদান করত, তাদের মনোভাব ও উদ্দেশ্যের মধ্যে এক সাদৃশ্য রয়েছে।
৯ কিন্তু, সেই পরিস্থিতি সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে, যেখানে মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে তার কিছু অন্যায়ের জন্য পাপার্থক বলি অথবা দোষার্থক বলি প্রদান করার প্রয়োজন হতো? আপনার কী মনে হয় যে, বাধ্যতামূলকভাবে তা দিতে হতো বলে, সেই বলিদান কি একজন ব্যক্তির ইচ্ছা ও মনোভাবের ওপর কোনো প্রভাব ফেলত? এইরকম বলিগুলো কি অনিচ্ছুকভাবে প্রদান করা হতো? (লেবীয়. ৪:২৭, ২৮) না, যদি যে-ব্যক্তি বলিদান করতেন, তিনি যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে আন্তরিক থাকতেন।
১০. খারাপ সম্পর্ক পুনরায় ঠিক করার জন্য খ্রিস্টানদের হয়তো কোন “বলিদান” করতে হয়?
১০ একইভাবে, বর্তমানে আপনি হয়তো বুঝতে পারেন যে, আপনি অনিচ্ছাকৃতভাবে, অজান্তে অথবা অসতর্কভাবে একজন ভাইকে অসন্তুষ্ট করেছেন। আপনার বিবেক হয়তো বলতে পারে যে, আপনি আপনার আচরণে ভুল করেছেন। যিহোবাকে সেবা করার ব্যাপারে ঐকান্তিক এমন যেকোনো ব্যক্তি তার ভুল সংশোধন করার জন্য যথাসাধ্য করবেন, তা-ই নয় কি? এর অর্থ হতে পারে, যে-ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়েছেন, তার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া অথবা গুরুতর অন্যায়ের ক্ষেত্রে প্রেমময় খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের আধ্যাত্মিক সাহায্য চাওয়া। (মথি ৫:২৩, ২৪; যাকোব ৫:১৪, ১৫) তাই, কোনো সহমানব অথবা স্বয়ং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কৃত পাপ সংশোধন করার জন্য আমাদের মূল্য দিতে হয়। তা সত্ত্বেও, আমরা যখন এই ধরনের “বলিদান” করি, তখন আমরা যিহোবা এবং আমাদের ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে পুনর্স্থাপন করি আর এক উত্তম বিবেক অর্জন করি। এর ফলে, এটা আমাদের এই আশ্বাস প্রদান করে যে, যিহোবার উপায়ই হচ্ছে সর্বোত্তম উপায়।
১১, ১২. (ক) মঙ্গলার্থক বলিগুলো কী ছিল? (খ) আধুনিক দিনের বিশুদ্ধ উপাসনায় মঙ্গলার্থক বলির কোন তাৎপর্য রয়েছে?
১১ মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী নির্দিষ্ট বলিগুলোকে মঙ্গলার্থক বলি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এগুলো যিহোবার সঙ্গে শান্তি বজায় রাখাকে নির্দেশ করত। যে-ব্যক্তি এইরকম বলি উৎসর্গ করতেন, তিনি এবং তার পরিবার সম্ভবত মন্দিরের একটা কুঠরিতে উৎসর্গীকৃত পশুর মাংস ভোজন করতেন। যে-যাজক উৎসর্গের কাজ সম্পন্ন করতেন, তিনি সেই মাংসের একটা অংশ গ্রহণ করতেন, যেমনটা মন্দিরে সেবারত অন্যান্য যাজক গ্রহণ করত। (লেবীয়. ৩:১; ৭:৩১-৩৩) একজন উপাসক শুধু ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক উপভোগ করার ইচ্ছায় বলি উৎসর্গ করতেন। এটা এমন ছিল যেন, সেই উপাসক, তার পরিবার, যাজক এবং স্বয়ং যিহোবা আনন্দের সঙ্গে একত্রে শান্তিতে ভোজনে অংশগ্রহণ করত।
১২ রূপকভাবে বললে, যিহোবাকে এইরকম এক ভোজনে আমন্ত্রণ জানানোর এবং তিনি যে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন, সেটার মতো বড়ো সুযোগ আর কি হতে পারত? স্বাভাবিকভাবেই, একজন নিমন্ত্রণকর্তা এইরকম একজন সম্মানিত অতিথিকে সবচেয়ে উত্তমটা দিতে চাইবেন। মঙ্গলার্থক বলিদানের এই ব্যবস্থা, যা ব্যবস্থার সত্যের অবয়বের অংশ, তা এই বাস্তব বিষয়টাকে নির্দেশ করে যে, যিশুর মহৎ বলিদানের মাধ্যমে, তাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক অর্জন করতে আকাঙ্ক্ষী এমন সমস্ত মানুষ তা করতে পারে। বর্তমানে, আমরা যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সাহচর্য উপভোগ করতে পারি, যখন আমরা স্বেচ্ছায় তাঁর সেবায় আমাদের সম্পদ এবং শক্তি বলিদান হিসেবে দান করি।
বলিদান সম্বন্ধে বিভিন্ন সতর্কবাণী
১৩, ১৪. কেন রাজা শৌলের বলিদান যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না?
১৩ সাধারণত, যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে, মোশির ব্যবস্থায় উল্লেখিত বিভিন্ন বলি সঠিক মনোভাব এবং সঠিক হৃদয়ে উৎসর্গ করতে হতো। কিন্তু, বাইবেলে বলিদানের বিভিন্ন সতর্কতামূলক উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। কোন কারণে তিনি সেগুলো প্রত্যাখ্যান করতেন? আসুন আমরা দুটো পরিস্থিতি বিবেচনা করি।
১৪ ভাববাদী শমূয়েল রাজা শৌলকে বলেছিলেন যে, অমালেকীয়দের ওপর যিহোবার বিচার নিয়ে আসার সময় হয়েছে। এই কারণে শৌলের উচিত ছিল সেই শত্রু জাতিকে এবং তাদের সমস্ত পশুপালকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু, বিজয় লাভ করার পর শৌল তার সৈন্যদেরকে অমালেকীয়দের রাজা অগাগকে বাঁচিয়ে রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, শৌল তাদের উত্তম উত্তম পশুকে এই কারণে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, যেন সেগুলো যিহোবার উদ্দেশে বলিদান করা যেতে পারে। (১ শমূ. ১৫:২, ৩, ২১) যিহোবার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? তিনি শৌলের অবাধ্যতার কারণে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৫:২২, ২৩.) এটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে বলিদানের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আজ্ঞাগুলোর প্রতিও বাধ্য থাকতে হবে।
১৫. যিশাইয়ের দিনের কিছু ইস্রায়েলীয়, যারা বলি উৎসর্গ করেছিল, তাদের মন্দ আচরণ কী প্রদর্শন করেছিল?
১৫ যিশাইয় বইয়ের মধ্যেও একই ধরনের উদাহরণ পাওয়া যায়। যিশাইয়ের দিনে, ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উদ্দেশে দায়সারাভাবে বলি উৎসর্গ করত। কিন্তু, তাদের মন্দ আচরণ, তাদের বলিগুলোকে মূল্যহীন করে তুলেছিল। “তোমাদের বলিদানবাহুল্যে আমার প্রয়োজন কি?” যিহোবা জিজ্ঞেস করেছিলেন। “মেষের, হোমবলিতে ও পুষ্ট পশুর মেদে আমার আর রুচি নাই; বৃষের কি মেষের, কি ছাগের রক্তে আমার কিছু সন্তোষ নাই। . . . অসার নৈবেদ্য আর আনিও না; ধূপদাহ আমার ঘৃণিত।” সমস্যাটা কী ছিল? ঈশ্বর তাদেরকে বলেছিলেন: “যদ্যপি অনেক প্রার্থনা কর, তথাপি শুনিব না; তোমাদের হস্ত রক্তে পরিপূর্ণ। তোমরা আপনাদিগকে ধৌত কর, বিশুদ্ধ কর, আমার নয়নগোচর হইতে তোমাদের ক্রিয়ার দুষ্টতা দূর কর; কদাচরণ ত্যাগ কর।”—যিশা. ১:১১-১৬.
১৬. একটা বলি ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য কি না, তা কোন বিষয়টা নির্ধারণ করে?
১৬ অনুতাপহীন পাপীদের দ্বারা উৎসর্গীকৃত বলিদানে যিহোবা সন্তুষ্ট হতেন না। কিন্তু, যারা ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা করত, তাদের প্রার্থনা এবং বলিগুলো তাঁর কাছে গ্রাহ্য হতো। ব্যবস্থার অবয়ব এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে এই শিক্ষা দিত যে, তারা পাপী এবং তাদের ক্ষমা লাভ করার প্রয়োজন। (গালা. ৩:১৯) এই ধরনের উপলব্ধি উপযুক্তভাবেই এক অনুতপ্ত হৃদয় উৎপন্ন করত। একইভাবে, বর্তমানেও আমাদের যে খ্রিস্টের বলিদানের প্রয়োজন রয়েছে, সেটা উপলব্ধি করতে হবে, যা প্রকৃতপক্ষেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে সমর্থ। আমরা যদি এটা বুঝতে পারি এবং উপলব্ধি করি, তাহলে যিহোবার প্রতি নিয়োজিত সেবায় আমরা যা-কিছুই উৎসর্গ করি না কেন, সেই সমস্ত কিছুতে তিনি “প্রীত” হবেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৫১:১৭, ১৯.
যিশুর বলিদানে বিশ্বাস দেখিয়ে চলুন!
১৭-১৯. (ক) কীভাবে আমরা উপযুক্তভাবে যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের জন্য যিহোবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি? (খ) পরের প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?
১৭ যারা প্রাক্খ্রিস্টীয় যুগে বাস করত, তাদের চেয়ে আমাদের সুবিধা হল যে, আমাদের কেবল ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের ‘ছায়া’ দেখে সন্তুষ্ট থাকতে হয় না। (ইব্রীয় ১০:১) বলিদান সম্পর্কিত আইনগুলো যিহুদিদেরকে এমন মনোভাব গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করত, যা ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক অর্জন করার জন্য উপযুক্ত—তাঁর প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা, একজন ব্যক্তির সবচেয়ে উত্তমটা দান করার আকাঙ্ক্ষা এবং মুক্তি লাভ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়ার কারণে, আমরা এটা বুঝতে পারি যে, মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে যিহোবা পাপের প্রভাবগুলোকে স্থায়ীভাবে দূর করবেন আর এমনকী এখনই তিনি আমাদেরকে তাঁর সামনে এক উত্তম বিবেক বজায় রাখতে দিয়েছেন। যিশুর মুক্তির মূল্য এক অপূর্ব ব্যবস্থা!—গালা. ৩:১৩; ইব্রীয় ৯:৯, ১৪.
১৮ আমরা যদি মুক্তির মূল্য থেকে উপকার লাভ করতে চাই, তাহলে আমাদের কেবল এই সম্বন্ধে সাধারণ বোধগম্যতার চেয়েও আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। “ব্যবস্থা খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য আমাদের পরিচালক দাস হইয়া উঠিল, যেন আমরা বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (গালা. ৩:২৪) আর এই ধরনের বিশ্বাস কর্মবিহীন হতে পারে না। (যাকোব ২:২৬) এই কারণে পৌল প্রথম শতাব্দীর সেই খ্রিস্টানদেরকে, যারা মোশির ব্যবস্থার দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞানের অবয়বের অধিকারী ছিল, তাদেরকে সেই জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। তা করার মাধ্যমে তাদের আচরণ সেইসমস্ত ঐশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো, যেগুলো সম্বন্ধে তারা শিক্ষা লাভ করেছিল।—পড়ুন, রোমীয় ২:২১-২৩.
১৯ যদিও বর্তমানে খ্রিস্টানদেরকে মোশির ব্যবস্থা পালন করার প্রয়োজন হয় না, তবুও তাদের এমন বলি প্রদান করতে হয়, যা যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য। পরের প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, কীভাবে আমরা তা করতে পারি।
[১৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
যিহোবা তাঁর দাসদের কাছ থেকে যে-মৌলিক বিষয়গুলো চান, সেগুলো কখনো পরিবর্তন হয় না
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি যিহোবার কাছে কোন ধরনের পশু উৎসর্গ করতেন?
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যারা যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলি উৎসর্গ করে, তারা তাঁর অনুমোদন উপভোগ করে