ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w18 ফেব্রুয়ারি পৃষ্ঠা ১৩-১৭
  • যিহোবার পক্ষে সকলই সম্ভব

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবার পক্ষে সকলই সম্ভব
  • প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৮
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • ভোর বেলা থেকে সন্ধ্যা বেলা পর্যন্ত কাজ করা
  • পূর্বে নির্বাসিত ব্যক্তিরা কিরগিজস্তানে সত্যের বীজ নিয়ে আসে
  • সত্য আমার নিজের শহরের আরও কাছে এগিয়ে আসে
  • আমার স্ত্রী দ্রুত সত্যকে শনাক্ত করে ফেলে
  • নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সভা ও বাপ্তিস্ম
  • আমরা পরিচর্যাকে বাড়ানোর জন্য সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করি
  • পরিবার ও পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকা
  • উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো
  • তিনি যৌবনকালের সিদ্ধান্তের জন্য আপশোস করেননি
    ২০১৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সূচিপত্র
    ২০১৬ সজাগ হোন!
প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৮
w18 ফেব্রুয়ারি পৃষ্ঠা ১৩-১৭
ব্যাশানবাই বাডিবাইয়েফ

জীবনকাহিনি

যিহোবার পক্ষে সকলই সম্ভব

বলেছেন ব্যাশানবাই বাডিবাইয়েফ

“মৃত্যু আর হবে না আর এমনকী মৃত ব্যক্তিরা আবার জীবন ফিরে পাবে।” আমার স্ত্রী মাইরামবুবু একটা বাসে করে যাওয়ার সময় এই কথাগুলো শুনতে পেয়েছিল। ও খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল এবং সেই বিষয়ে আরও জানতে চেয়েছিল। যখন বাসটা থেমেছিল এবং যাত্রীরা সকলে নেমে গিয়েছিল, তখন ও সেই মহিলার পিছন পিছন গিয়েছিল, যিনি শুরুতে বলা কথাগুলো বলেছিলেন। সেই মহিলার নাম ছিল আপুন মামবেটসাডিকোভা আর তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন। সেই সময়, সাক্ষিদের সঙ্গে কথা বলা বিপদজনক ছিল। কিন্তু, আমরা আপুনের কাছ থেকে পরবর্তী সময় যা শিখেছিলাম, সেটা আমাদের জীবনকে পুরোপুরি পালটে দিয়েছিল।

ভোর বেলা থেকে সন্ধ্যা বেলা পর্যন্ত কাজ করা

১৯৩৭ সালে কিরগিজস্তানের টাকমাক শহরের কাছাকাছি একটা কাল্ক্‌হস বা যৌথ খামারে আমার জন্ম হয়েছিল। আমার পরিবার কিরগিজ জাতির লোক আর আমরা কিরগিজ ভাষায় কথা বলি। আমার বাবা-মা চাষি ছিলেন আর তাদের ভোর বেলা থেকে সন্ধ্যা বেলা পর্যন্ত কাল্ক্‌হসে কাজ করতে হতো। চাষিদের নিয়মিতভাবে খাবার দেওয়া হতো কিন্তু বছরে কেবল এক বারই পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা দেওয়া হতো। মা আমার বোন ও আমার যত্ন নিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যেতেন। মাত্র পাঁচ বছর স্কুলে পড়ার পর আমিও কাল্ক্‌হসে পূর্ণসময় কাজ করতে শুরু করেছিলাম।

কিরগিজতানের মানচিত্র
টসকি আলা-টু পর্বতমালা

টেসকি আলা-টু পর্বতমালা

আমি যে-এলাকায় থাকতাম, সেখানে লোকেরা খুবই দরিদ্র ছিল এবং আমরা কেবল প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাভ করার জন্য কাজ করতে গিয়েই একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। অল্পবয়সে, আমি জীবনের উদ্দেশ্য অথবা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে খুব-একটা চিন্তা করতাম না। আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে, যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিভিন্ন চমৎকার সত্য আমার জীবনকে পুরোপুরি পালটে দেবে। কীভাবে সেই বার্তা কিরগিজস্তানে এসে পৌঁছেছিল এবং সেখানে ছড়িয়ে গিয়েছিল, সেটা সত্যিই এক রোমাঞ্চকর কাহিনি। সেই সমস্ত কিছু শুরু হয়েছিল উত্তর কিরগিজস্তানে, যেখানে আমি বড়ো হয়ে উঠেছি।

পূর্বে নির্বাসিত ব্যক্তিরা কিরগিজস্তানে সত্যের বীজ নিয়ে আসে

১৯৫০-এর দশকে কিরগিজস্তানে যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শিকড় বিস্তার করেছিল। তবে তা করার আগে, সত্যকে লোকেদের মধ্যে থাকা সাম্যবাদী মতবাদকে পরাজিত করতে হয়েছিল। কেন? যে-এলাকা এখন কিরগিজস্তান নামে পরিচিত, সেটা সেইসময় ইউনিয়ন অভ্‌ সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকস্‌-এর (ইউএসএসআর) অন্তর্ভুক্ত ছিল। সমগ্র ইউএসএসআর-এ যিহোবার সাক্ষিরা রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল। (যোহন ১৮:৩৬) ফল স্বরূপ, তাদের সাম্যবাদী রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে তাড়না করা হয়েছিল। কিন্তু, কোনো মতবাদই ঈশ্বরের বাক্যকে সৎ ব্যক্তিদের হৃদয়ে পৌঁছানো থেকে বিরত করতে পারে না। সত্যি বলতে কী, সারাজীবন ধরে আমি যে-সমস্ত মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেছি, সেগুলোর মধ্যে একটা হল, যিহোবার পক্ষে “সকলই সাধ্য” বা সম্ভব।—মার্ক ১০:২৭.

এমিল ইয়ান্টসেন

এমিল ইয়ান্টসেন

যিহোবার সাক্ষিদের উপর তাড়না নিয়ে আসার ফলে সাক্ষিরা কিরগিজস্তানে বৃদ্ধি লাভ করতে পেরেছিল। কেন? ইউএসএসআর-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল সাইবেরিয়ার এলাকা, যেখানে রাষ্ট্রের শত্রুদের নির্বাসনে পাঠানো হতো। এই নির্বাসিত ব্যক্তিদের যখন মুক্ত করা হয়েছিল, তখন তাদের মধ্যে অনেকে কিরগিজস্তানে এসেছিল এবং কেউ কেউ তাদের সঙ্গে করে সত্যের বীজ নিয়ে এসেছিল। এদের মধ্যে একজন ছিলেন এমিল ইয়ান্টসেন, যিনি ১৯১৯ সালে কিরগিজস্তানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এমিলকে একটা শ্রমশিবিরে পাঠানো হয়েছিল এবং সেখানেই সাক্ষিদের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছিল। তিনি সত্য গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৫৬ সালে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। এমিল জোকুলুক নামে এক এলাকার কাছে থাকতে শুরু করেছিলেন, যে-এলাকায় আমি বড়ো হয়ে উঠেছি। ১৯৫৮ সালে, এই জোকুলুকেই কিরগিজস্তানের প্রথম মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল।

ভিকটর ভিনটার

ভিকটর ভিনটার

প্রায় এক বছর পর, ভিকটর ভিনটার নামে একজন ভাই জোকুলুকে চলে এসেছিলেন। এই বিশ্বস্ত ভাই বার বার অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তাকে দু-বার তিন বছরের জন্য ও তারপর, আরও দশ বছরের জন্য কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল এবং পাঁচ বছর নির্বাসনে থাকতে হয়েছিল। এত কিছু হওয়া সত্ত্বেও, তাড়না সত্য উপাসনা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজকে বিরত করতে পারেনি।

সত্য আমার নিজের শহরের আরও কাছে এগিয়ে আসে

এডুওয়ার্ট ভার্‌টার

এডুওয়ার্ট ভার্‌টার

১৯৬৩ সালে কিরগিজস্তানে প্রায় ১৬০ জন সাক্ষি ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ইউক্রেন, জার্মানি ও রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন এডুওয়ার্ট ভার্‌টার নামে একজন নির্বাসিত ব্যক্তি, যিনি ১৯২৪ সালে জার্মানিতে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে নাতসিরা তাকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল এবং অল্প কয়েক বছর পর, ইউএসএসআর-এর সাম্যবাদীরা তাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। ১৯৬১ সালে এই বিশ্বস্ত ভাই কান্ট শহরে চলে এসেছিলেন, যেটা আমার নিজের শহরের খুবই কাছে অবস্থিত।

এলিজাবেট ফট; আকসামে সুলতানালিয়েওয়া

এলিজাবেট ফট; আকসামে সুলতানালিয়েওয়া

কান্ট শহরে এলিজাবেট ফট নামে যিহোবার আরেকজন অনুগত দাসীও থাকতেন। তিনি সেলাইয়ের কাজ করে নিজের ভরণ-পোষণ জোগাতেন। যেহেতু তিনি তার কাজে খুবই দক্ষ ছিলেন, তাই পেশাদার ব্যক্তিরা যেমন ডাক্তার ও শিক্ষকেরা তাকে জামাকাপড় বানাতে দিত। এই বোনের কাছে আকসামে সুলতানালিয়েওয়া নামে একজন মহিলা আসতেন, যিনি সরকারি উকিলের অফিসের একজন কর্মচারীর স্ত্রী ছিলেন। আকসামে জামাকাপড় বানানোর জন্য এলিজাবেটের কাছে আসতেন কিন্তু একইসময়ে আকসামে জীবনের অর্থ এবং মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধেও অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন। এলিজাবেট সরাসরি বাইবেল থেকে তার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতেন। পরবর্তী সময়, আকসামে একজন উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারক হয়ে উঠেছিলেন।

নিকালাই শিমপইশ

নিকালাই শিমপইশ

প্রায় সেই সময়েই, নিকালাই শিমপইশ নামে মলডোভার একজন ভাইকে সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে সীমার কাজ করে গিয়েছিলেন। নিকালাই কেবল মণ্ডলী পরিদর্শন করার কাজই করেননি কিন্তু এর পাশাপাশি, তিনি আমাদের সাহিত্যাদির প্রতিলিপি তৈরি করার এবং সেগুলো বিতরণ করার কাজকেও সুসংগঠিত করেছিলেন। তবে, তার কাজ কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে পারেনি। তাই, এডুওয়ার্ট ভার্‌টার নিকালাইকে উৎসাহজনক পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন: “যদি কর্তৃপক্ষ তোমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তা হলে তাদের খোলাখুলিভাবে বলবে যে, আমরা ব্রুকলিনের প্রধান কার্যালয় থেকে আমাদের সাহিত্যাদি পাই। কেজিবি-র (সোভিয়েত রাষ্ট্র নিরাপত্তা কমিটি) এজেন্টের চোখে চোখ রেখে কথা বলবে। তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”—মথি ১০:১৯.

এই কথোপকথনের কিছুসময় পরই, নিকালাইকে কান্ট শহরে কেজিবি-র প্রধান কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বর্ণনা করে বলেছিলেন যে, তারপর কী ঘটেছিল: “একজন এজেন্ট আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আমরা আমাদের সাহিত্যাদি কোথা থেকে পাই। আমি তাকে বলেছিলাম, আমরা ব্রুকলিন থেকে সাহিত্যাদি পাই। এটা শোনার পর তিনি আর কিছুই বলতে পারেননি। তিনি শুধু আমাকে চলে যেতে দিয়েছিলেন এবং তারপর আর কখনো আমাকে ডেকে পাঠাননি।” এইরকম নির্ভীক সাক্ষিরা উত্তর কিরগিজস্তানে অর্থাৎ যেখানে আমি বড়ো হয়ে উঠেছি, সেখানে কৌশলতার সঙ্গে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৮০-র দশকে যখন যিহোবার বিষয়ে মূল্যবান সত্যগুলো আমার পরিবারের কাছে এসে পৌঁছেছিল, তখন আমার স্ত্রী মাইরামবুবু প্রথমে সেই বিষয়ে জানতে পেরেছিল।

আমার স্ত্রী দ্রুত সত্যকে শনাক্ত করে ফেলে

মাইরামবুবু কিরগিজস্তানের ন্যার্ন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছে। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে একদিন ও আমার বোনের বাড়িতে এসেছিল, যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়। মাইরামবুবুকে প্রথম বার দেখেই আমার পছন্দ হয়ে যায়। আমরা সেই দিনই বিয়ে করি।

আপুন মামবেটসাডিকোভা

আপুন মামবেটসাডিকোভা

১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে, মাইরামবুবু যখন বাসে করে একটা স্থানীয় বাজারে যাচ্ছিল, তখন ও শুরুতে বলা সেই কথাগুলো শুনতে পেয়েছিল। আমার স্ত্রী সেই বিষয়ে আরও জানতে চেয়েছিল আর তাই, ও সেই মহিলার নাম-ঠিকানা জানতে চেয়েছিল। সেই মহিলা বলেছিলেন, ওনার নাম আপুন কিন্তু তিনি নিজের সম্বন্ধে তথ্য দেওয়ার বিষয়ে খুবই সতর্ক ছিলেন কারণ ১৯৮০-র দশকেও সাক্ষিদের কাজ নিষিদ্ধ ছিল। আপুন আমার স্ত্রীকে নিজের ঠিকানা দেওয়ার পরিবর্তে, আমাদের বাড়ির ঠিকানা লিখে নিয়েছিলেন। আমার স্ত্রী খুবই আনন্দিত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল।

মাইরামবুবু বাড়ি ফিরে আমাকে বলেছিল, ‘জানো, আমি আজ একটা চমৎকার বিষয় শুনেছি! একজন মহিলা আমাকে বলেছেন, খুব শীঘ্রই লোকেরা আর মারা যাবে না। আর এমনকী বন্যপশুরাও পোষ মানবে।’ ওর কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল যেন সেটা কোনো রূপকথার গল্প। আমি ওকে বলেছিলাম, “আগে দেখি, উনি এসে আমাদের কাছে কী কী তথ্য দেন।”

আপুন তিন মাস পর আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর, আমাদের বাড়িতে আরও অনেক সাক্ষি এসেছিল, যার ফলে আমরা কিরগিজ লোকেদের মধ্যে প্রথম কয়েক জন সাক্ষির সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলাম। এই বোনেরা আমাদের যিহোবা ও মানবজাতির জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে চমৎকার সত্যগুলো জানিয়েছিল। তারা হারানো পরমদেশ থেকে পুনরুদ্ধারকৃত পরমদেশ (ইংরেজি) শিরোনামের বইটা ব্যবহার করে আমাদের বাইবেল সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন।a আর যেহেতু টাকমাক শহরে এই বইয়ের কেবল একটাই কপি ছিল, তাই আমরা হাতে লিখে নিজেদের জন্য একটা প্রতিলিপি তৈরি করেছিলাম।

আমি সবচেয়ে প্রথমে যে-বিষয়গুলো শিখেছিলাম, সেগুলোর মধ্যে একটা হল আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে বলা ভবিষ্যদ্‌বাণীটা। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী ঈশ্বরের মশীহ রাজ্যের রাজা যিশুর মাধ্যমে পরিপূর্ণ হবে। এটা হল একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যেটা সকলেরই শোনা উচিত! এটা হল আমাদের এই ঘোষণার কাজে অংশ নেওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। (মথি ২৪:১৪) শীঘ্রই, বাইবেলের সত্য আমাদের জীবনকে পুরোপুরি পালটাতে শুরু করেছিল।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সভা ও বাপ্তিস্ম

টাকমাক শহরের একজন খ্রিস্টান ভাই আমাদের একটা বিয়েতে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর আমার স্ত্রী ও আমি শীঘ্রই লক্ষ করেছিলাম যে, সাক্ষিদের আচরণ অন্যদের চেয়ে আলাদা। সেই বিয়েবাড়িতে কোনো মদ্যপানের ব্যবস্থা ছিল না এবং অনুষ্ঠানটা সুসংগঠিত ছিল। এটা আমাদের দেখা অন্যান্য বিয়ের অনুষ্ঠানের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন ছিল, যেখানে অতিথিরা প্রায়ই মত্ত হয়ে পড়ত, খারাপ আচরণ করত এবং অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করত।

এ ছাড়া, আমরা টাকমাক শহরের মণ্ডলীর কয়েকটা খ্রিস্টীয় সভায় যোগ দিয়েছিলাম। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এই সভাগুলো বনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতো। ভাই-বোনেরা জানত যে, পুলিশ তাদের উপর নজর রাখত আর তাই, একজন ভাইকে পাহারা দেওয়ার কাজ দেওয়া হতো। শীত কালে, আমরা সভার জন্য ভাইদের বাড়িতে মিলিত হতাম। বেশ কয়েক বার, পুলিশ সেই বাড়িতে এসে জানতে চেয়েছিল যে, আমরা কী করছি। ১৯৮২ সালের জুলাই মাসে আমি ও মাইরামবুবু যখন শুই নদীতে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম, তখন আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হয়েছিল। (মথি ১০:১৬) ভাইয়েরা ছোটো ছোটো দলে এসে বনের মধ্যে মিলিত হয়েছিল। আমরা রাজ্যের একটা গান গেয়েছিলাম এবং তারপর, বাপ্তিস্মের বক্তৃতা শুনেছিলাম।

আমরা পরিচর্যাকে বাড়ানোর জন্য সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করি

১৯৮৭ সালে, একজন ভাই আমাকে বালিক্টশি শহরে একজন আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য বলেন। আমাদের বাড়ি থেকে ট্রেনে করে সেখানে যাওয়ার জন্য চার ঘণ্টা লাগত। প্রচারের জন্য বালিক্টশি শহরে বেশ কয়েক বার যাওয়ার পর আমরা বুঝতে পারি, সেখানকার অনেকেই সত্যের বিষয়ে আগ্রহী। স্পষ্টতই, এটা ছিল আমাদের পরিচর্যাকে বাড়ানোর একটা সুযোগ।

আমি ও মাইরামবুবু প্রায়ই বালিক্টশি শহরে যেতাম। প্রায় সময়ই, সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে আমরা সেখানে গিয়ে থাকতাম, পরিচর্যায় অংশ নিতাম এবং খ্রিস্টীয় সভার আয়োজন করতাম। সেখানে আমাদের প্রকাশনার চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছিল। আমরা টাকমাক শহর থেকে মিশক অর্থাৎ আলুর বস্তায় করে প্রকাশনাদি নিয়ে যেতাম। প্রতি মাসে দু-বস্তা ভরে প্রকাশনাদি নিয়ে যাওয়ার পরও, কোনোরকমে সাহিত্যাদির চাহিদা পূরণ হতো। এমনকী ট্রেনে করে বালিক্টশি শহরে যাওয়া-আসা করার সময়েও, আমরা যাত্রীদের কাছে সাক্ষ্য দিতে পেরেছিলাম।

বালিক্টশি শহরে প্রথম বার যাওয়ার আট বছর পর, ১৯৯৫ সালে সেখানে একটা মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। এত বছর ধরে টাকমাক থেকে বালিক্টশি শহরে যাতায়াত করার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়েছিল। আমাদের নিজেদের খুব বেশি অর্থ ছিল না। তা হলে, কীভাবে আমরা সেখানে যাতায়াত করতে পেরেছিলাম? একজন খ্রিস্টান ভাই আমাদের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করার জন্য নিয়মিতভাবে অর্থ দিতেন। যিহোবা লক্ষ করেছিলেন, আমরা আমাদের পরিচর্যাকে বাড়াতে চাই আর তাই, তিনি আমাদের জন্য “আকাশের দ্বার সকল” খুলে দিয়েছিলেন। (মালাখি ৩:১০) সত্যিই, যিহোবার পক্ষে সকলই সম্ভব!

পরিবার ও পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকা

১৯৯২ সালে আমাকে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল আর আমি হলাম আমাদের দেশের কিরগিজ ভাইদের মধ্যে প্রথম প্রাচীন। টাকমাক শহরে আমাদের মণ্ডলীতে, পরিচর্যার নতুন নতুন দিক খুলে গিয়েছিল। আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক অল্পবয়সি কিরগিজ ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলাম। তাদের মধ্যে একজন এখন শাখা কমিটির সদস্য হিসেবে সেবা করেন এবং দু-জন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেন। এ ছাড়া, আমরা সভাগুলোতে এগিয়ে গিয়ে অন্যদের সাহায্য করেছিলাম। ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে আমরা রাশিয়ান ভাষার প্রকাশনা ব্যবহার করতাম এবং আমাদের সভাগুলো রাশিয়ান ভাষায় পরিচালিত হতো। কিন্তু, মণ্ডলীতে অনেকে তাদের মাতৃভাষায় অর্থাৎ কিরগিজ ভাষায় কথা বলত। তাই, আমি তাদের জন্য অনুবাদ করতাম, যেটা তাদের আরও সহজে সত্য বুঝতে সাহায্য করেছিল।

ব্যাশানবাই বাডিবাইয়েফ তার ত্রী ও তাদের আট জন সন্তানের সগ

১৯৮৯ সালে আমার স্ত্রী ও আট জন সন্তানের সঙ্গে

এ ছাড়া, আমি ও মাইরামবুবু আমাদের সন্তানদের লালনপালন করার কাজেও ব্যস্ত ছিলাম। আমরা আমাদের সন্তানদের প্রচারে ও মণ্ডলীর সভায় নিয়ে যেতাম। আমাদের মেয়ে গুলসাইরা—যার বয়স সেইসময় মাত্র ১২ বছর ছিল—আনন্দের সঙ্গে রাস্তায় পথচারীদের সঙ্গে কথা বলত এবং বাইবেল সম্বন্ধে তাদের জানাত। আর আমাদের সন্তানরা শাস্ত্রপদ মুখস্থ করতে খুব ভালোবাসত। এভাবে, আমাদের সন্তানরা ও পরবর্তী সময়ে, নাতি-নাতনিরা মণ্ডলীর কাজে পূর্ণরূপে অংশ নিতে পেরেছিল। আমাদের যে-নয় জন ছেলে-মেয়ে ও এগারো জন নাতি-নাতনি এখন বেঁচে আছে, তাদের মধ্যে ষোলো জন হয় যিহোবাকে সেবা করে, না হয় তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে সভায় যোগ দেয়।

উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো

আমাদের যে-প্রিয় ভাই-বোনেরা ১৯৫০-এর দশকে আমাদের এলাকায় যিহোবার কাজ শুরু করেছিল, তারা সেই সময়ের পর থেকে ঘটা পরিবর্তনগুলো দেখে অবাক হয়ে যাবে। যেমন একটা বিষয় হল, ১৯৯০-এর দশক থেকে আমরা সুসমাচার প্রচার করার ও অনেকে একত্রে মিলিত হওয়ার বিষয়ে আরও বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করেছি।

ব্যাশানবাই বাডিবাইয়েফ ও তার ত্রী একজন দোকানদারের কাছ সাক্ষ্য দিচ্ছন

পরিচর্যায় আমার স্ত্রীর সঙ্গে

১৯৯১ সালে আমি ও আমার স্ত্রী প্রথম বার একটা বড়ো সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম। এটা কাজাখস্তানের আলমা-আটায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেটা বর্তমানে আলমাটি নামে পরিচিত। আর ১৯৯৩ সালে কিরগিজস্তানের ভাইয়েরা বিশকেকের স্পার্টাক স্টেডিয়ামে প্রথম বার সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। প্রকাশকরা তার আগে এক সপ্তাহ ধরে স্টেডিয়ামটা পরিষ্কার করেছিল। সেখানকার আধিকারিক আমাদের কাজ দেখে এতটাই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি আমাদের বিনা মূল্যে স্টেডিয়ামটা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

১৯৯৪ সালে আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় ঘটেছিল, যখন প্রথম বার আমাদের প্রকাশনা কিরগিজ ভাষায় ছাপানো শুরু হয়েছিল। বর্তমানে, বিশকেকে আমাদের শাখা অফিসে একটা অনুবাদ দলের মাধ্যমে আমাদের প্রকাশনা নিয়মিতভাবে কিরগিজ ভাষায় অনুবাদিত হয়। আনন্দের বিষয় হল, ১৯৯৮ সালে যিহোবার সাক্ষিদের কাজকে কিরগিজস্তানে বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। আমাদের এই সংগঠন বৃদ্ধি লাভ করেছে আর এখন কিরগিজস্তানে আমাদের সংখ্যা হল ৫,০০০-এর চেয়েও বেশি। বর্তমানে, আমাদের দেশে ইংরেজি, উজবেক, উয়িগুর, কিরগিজ, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান ও রাশিয়ান সাংকেতিক ভাষায় মোট ৮৩টা মণ্ডলী এবং ২৫টা দল রয়েছে। ভিন্ন পটভূমির এই সমস্ত ভাই-বোন একতাবদ্ধভাবে যিহোবার সেবা করে। যিহোবা এই সমস্ত উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো সম্ভবপর করেছেন।

এ ছাড়া, যিহোবা আমার জীবনও পুরোপুরি পালটে দিয়েছেন। আমি এক দরিদ্র চাষির পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলাম এবং মাত্র পাঁচ বছর স্কুলে পড়াশোনা করেছিলাম। তা সত্ত্বেও, যিহোবা আমাকে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার এবং আমার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষিত লোকেদের বাইবেলের মূল্যবান সত্যগুলো শেখানোর জন্য ব্যবহার করেছিলেন। সত্যিই, যিহোবা সবচেয়ে অসাধারণ বিষয়গুলো ঘটাতে পারেন। আমার নিজের অভিজ্ঞতা আমাকে অনুগতভাবে যিহোবার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে চলতে অনুপ্রাণিত করে, যাঁর পক্ষে “সকলই সাধ্য” বা সম্ভব।—মথি ১৯:২৬.

a যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত কিন্তু এখন আর ছাপানো হয় না।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার