ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w19 এপ্রিল পৃষ্ঠা ২৬-৩০
  • আমরা “মহামূল্য মুক্তা” খুঁজে পেয়েছি

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আমরা “মহামূল্য মুক্তা” খুঁজে পেয়েছি
  • প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৯
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “দ্বীপসমূহ আনন্দ করুক”
    ২০১৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৯
w19 এপ্রিল পৃষ্ঠা ২৬-৩০
উইনস্টান ও প্যাম পেন সমুদ্রের ধারে একটা পাথরের উপর বসে আছেন

জীবনকাহিনি

আমরা “মহামূল্য মুক্তা” খুঁজে পেয়েছি

উইনস্টান ও প্যামেলা পেনের সাক্ষাৎকার

ভাই উইনস্টান ও বোন প্যামেলা (প্যাম) পেন অস্ট্রেলেসিয়া শাখা অফিসে সেবা করেন। তাদের সুখী দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, যেমন তাদের ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছিল এবং তাদের সন্তান জন্মগ্রহণ করার আগেই মারা গিয়েছিল। এত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা সত্ত্বেও, তারা যিহোবা ও তাঁর লোকেদের প্রতি ভালোবাসা আর সেইসঙ্গে পরিচর্যায় আনন্দ বজায় রেখেছিলেন। আসুন, আমরা এই সাক্ষাৎকারে তাদের কিছু অভিজ্ঞতা শুনি।

ভাই উইনস্টান, আপনি যেভাবে ঈশ্বরের অনুসন্ধান করেছিলেন, সেই বিষয়ে আমাদের কিছু বলবেন?

আমি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের একটা বিচ্ছিন্ন এলাকায় খামারে বড়ো হয়ে উঠি। আমার পরিবারের সদস্যরা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করত না। যেহেতু আমরা বিচ্ছিন্ন এলাকায় থাকতাম, তাই পরিবারের সদস্যদের ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে আমার খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। প্রায় ১২ বছর বয়স থেকে আমি ঈশ্বর সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে শুরু করি। ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য জানার জন্য আমি তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। এরপর, আমি সেই খামার ছেড়ে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে চলে যাই এবং সেখানে একটা কাজ খুঁজে পাই। ২১ বছর বয়সে যখন আমি সিডনিতে ছুটি কাটাতে যাই, তখন প্যামের সঙ্গে আমার দেখা হয়। ও আমাকে ব্রিটিশ-ইজরায়েল ধর্মীয় দলের বিষয়ে বলে, যারা দাবি করে যে, ব্রিটিশরা ইজরায়েলের দশ বংশ থেকে এসেছে। সেই দলের লোকেরা বিশ্বাস করে, এই বংশই উত্তর রাজ্যের দশ বংশকে চিত্রিত করে, যারা অষ্টম খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্বাসনে গিয়েছিল। তাই, আমি যখন অ্যাডিলেডে ফিরে যাই, তখন সেখানে একজন সহকর্মীর কাছে সেই বিষয়ে কথা বলি, যিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। আমি তার সঙ্গে মাত্র কয়েক ঘণ্টা কথা বলি। আমরা বিশেষভাবে সাক্ষিদের বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলি। আমি উপলব্ধি করি যে, আমার ছোটো বেলায় করা প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হচ্ছে। আমি আমার সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে সত্য শিখছিলাম! আমি “মহামূল্য মুক্তা” খুঁজে পেয়েছিলাম।—মথি ১৩:৪৫, ৪৬.

বোন প্যাম, আপনিও তো ছোটো বেলা থেকেই সেই মুক্তার সন্ধান করতে শুরু করেছিলেন। কীভাবে আপনি সেটা খুঁজে পেয়েছিলেন?

আমি নিউ সাউথ ওয়েলসের কফ্‌স হারবার নামক একটা শহরে এক ধর্মীয় পরিবারে বড়ো হয়ে উঠি। আমার বাবা-মা ও দাদু-দিদিমা ব্রিটিশ-ইজরায়েল দলের শিক্ষায় বিশ্বাস করতেন। আমার নিজের দিদি, ভাই আর সেইসঙ্গে আমার অন্যান্য ভাই-বোনদের পাশাপাশি আমাকেও শেখানো হয়েছিল যে, ঈশ্বর সেই সমস্ত ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ দেখান, যাদের পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশ ছিল। তবে, আমি তা বিশ্বাস করিনি আর ঈশ্বরের নিকটবর্তী বোধ করিনি। আমার বয়স যখন ১৪ বছর হয়, তখন আমি বিভিন্ন স্থানীয় গির্জায় যাই, যেমন অ্যাংলিকান, ব্যাপটিস্ট ও সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেনটিস্ট। কিন্তু, তারা ঈশ্বরকে জানার বিষয়ে আমাকে সাহায্য করেনি।

কিছু সময় পর, আমরা সিডনিতে চলে যাই। সেখানেই উইনস্টানের সঙ্গে আমার দেখা হয়, ও সেখানে ছুটি কাটাতে এসেছিল। ও যেমন বলল, আমাদের ধর্মীয় আলোচনা ওকে সাক্ষিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা একে অপরকে চিঠি পাঠাতাম আর ওর চিঠিতে ভরতি শাস্ত্রপদ থাকত! সত্যি বলতে কী, প্রথমদিকে আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি, এমনকী রেগেও যাই। কিন্তু, ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারি, এটাই সত্য।

১৯৬২ সালে, ওর কাছাকাছি থাকার জন্য আমি অ্যাডিলেডে চলে যাই। টমাস ও জ্যানাস স্লোমান নামে এক সাক্ষি দম্পতির সঙ্গে ও আমার থাকার ব্যবস্থা করে। তারা এক সময়ে পাপুয়া নিউ গিনিতে মিশনারি হিসেবে সেবা করেছিলেন। তারা আমার প্রতি প্রচুর দয়া দেখান। সেই সময় আমার বয়স মাত্র ১৮ বছর ছিল আর তারা আমাকে যিহোবার বিষয়ে আরও বেশি জানতে সাহায্য করেন। তাই, আমিও ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করতে শুরু করি আর শীঘ্রই আমি উপলব্ধি করি যে, আমি সত্য খুঁজে পেয়েছি। এরপর আমরা বিয়ে করি আর শীঘ্রই একসঙ্গে পূর্ণসময়ের সেবা শুরু করি। বিভিন্ন পরীক্ষা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সেবার কারণে আমরা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করি, যেগুলো সেই মূল্যবান মুক্তার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

ভাই উইনস্টান, যিহোবার সেবায় আপনার শুরুর জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, সেই সম্বন্ধে কিছু বলবেন?

সীমার কাজ করার সময়ে পেন যে-জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করেছিলেন, সেটার একটা মানচিত্র; কয়েকটা দ্বীপের ডাকটিকিট; টুভালুর ফুনাফুটি দ্বীপে

১. সীমার কাজ করার সময় আমরা যে-জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করেছিলাম, সেটার মানচিত্র

২. কয়েকটা দ্বীপের ডাকটিকিট। কিরিবাটি ও টুভালু দ্বীপগুলো আগে গিলবার্ট ও এলিস নামে পরিচিত ছিল

৩. টুভালু দেশের ফুনাফুটিতে অপূর্ব প্রবালদ্বীপ। এই দ্বীপে মিশনারিদের কার্যভার দেওয়ার আগে আমরা পরিদর্শন করেছিলাম

আমাদের বিয়ের অল্প কিছু দিনের মধ্যেই যিহোবা আমাদের কার্যভারকে বৃদ্ধি করার জন্য ‘বৃহৎ দ্বার’ খুলে দেন। (১ করি. ১৬:৯) সেই ‘দ্বারগুলোর’ মধ্যে প্রথমটা ভাই জ্যাক পর্টার আমাদের খুঁজে পেতে সাহায্য করেন, যিনি আমাদের ছোটো মণ্ডলীতে সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করতেন। (বর্তমানে আমরা একসঙ্গে অস্ট্রেলেসিয়ার শাখা কমিটির সদস্য হিসেবে সেবা করি।) ভাই জ্যাক ও তার স্ত্রী রাসলিন আমাদের নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার জন্য উৎসাহিত করেন। আমরা পাঁচ বছর ধরে এই সেবা উপভোগ করি। আমার বয়স যখন ২৯ বছর, তখন প্যাম ও আমাকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে সীমার কাজে সেবা করার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়, যেটা ফিজি শাখা অফিসের যত্নাধীনে ছিল। সেই দ্বীপপুঞ্জগুলো হল আমেরিকান সামোয়া, সামোয়া, কিরিবাটি, নাউরু, নিউয়ে, টোকাল্যাউ, টোংগা, টুভালু ও ভানুয়াতু।

সেই সময়ে আরও প্রত্যন্ত দ্বীপগুলোতে বসবাসরত কোনো কোনো লোক যিহোবার সাক্ষিদের সন্দেহের চোখে দেখত, তাই আমাদের সতর্ক ও বিচক্ষণ থাকতে হতো। (মথি ১০:১৬) মণ্ডলীগুলো ছোটো ছিল আর কোনো কোনো মণ্ডলী আমাদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও করতে পারত না। তাই, আমরা থাকার জন্য স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে সাহায্য চাইতাম আর তারা সবসময়ই আমাদের প্রতি দয়া দেখিয়েছিল।

ভাই আপনি অনুবাদের কাজের বিষয়ে খুবই আগ্রহী। কোন বিষয়টা আপনার আগ্রহকে জাগিয়ে তুলেছিল?

সামোয়ায়, উইনস্টান পেন প্রাচীনদের স্কুল পরিচালনা করছেন

সামোয়ায়, প্রাচীনদের স্কুল পরিচালনা করার সময়ে

আমরা যখন টোংগা দ্বীপে সেবা করতে শুরু করেছিলাম, তখন সেখানকার ভাইদের কাছে টোংগা ভাষায় মাত্র কিছু ট্র্যাক্ট ও পুস্তিকা ছিল। পরিচর্যায় তারা অধ্যয়ন প্রকাশনা হিসেবে যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় শিরোনামের ইংরেজি বইটা ব্যবহার করত। তাই, চার সপ্তাহের প্রাচীনদের স্কুলে তিন জন স্থানীয় প্রাচীন এই বইটা টোংগা ভাষায় অনুবাদ করতে রাজি হন, যদিও ইংরেজি ভাষায় তারা খুব একটা দক্ষ ছিলেন না। প্যাম হাতে লেখা পুরো বইটা টাইপ করে আর আমরা সেটা ছাপানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শাখা অফিসে পাঠিয়ে দিই। এই কাজ শেষ করতে প্রায় আট সপ্তাহ লেগে যায়। যদিও সেই অনুবাদ খুব একটা ভালো ছিল না কিন্তু সেই প্রকাশনা অনেক টোংগানভাষী ব্যক্তিকে সত্য শিখতে সাহায্য করে। প্যাম আর আমি যদিও অনুবাদক নই কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা এই কাজের প্রতি আমাদের আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলেছিল।

বোন প্যাম, অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় এই দ্বীপপুঞ্জে জীবন কেমন ছিল?

উইনস্টান ও প্যাম পেন একটা বাসের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, যেখানে তারা সীমার কাজ করার সময় মাঝে মাঝে থাকতেন

সীমার কাজ করার সময় আমরা মাঝে মাঝে এখানে থাকতাম

একেবারে আলাদা ছিল! সেখানকার কোনো কোনো জায়গায় প্রচুর মশা, অতিরিক্ত গরম, আদ্রতা, ইঁদুর, অসুস্থতা আর কখনো কখনো পর্যাপ্ত খাবারের অভাবের কারণে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল। অন্যদিকে, প্রতিটা দিনের শেষে আমরা যখন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ফালে থেকে সমুদ্রের দিকে তাকাতাম, তখন আমাদের খুব ভালো লাগত। ফালে হল চারিদিক খোলা খড়ের ছাউনি দিয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরনের পলিনেশীয় বাড়ি। জ্যোৎস্না রাতে নারকেল গাছগুলো স্পষ্ট দেখা যেত আর সমুদ্রের জলে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হতো। সেই অপূর্ব সময়গুলোতে আমরা ধ্যান করার ও প্রার্থনা করার জন্য অনুপ্রাণিত হতাম, যেগুলো আমাদের নেতিবাচক বিষয়গুলো নয় বরং ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করত।

আমরা সেখানকার বাচ্চাদের ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক মজার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আমরা শ্বেতাঙ্গ হওয়ায়, তারা অনেক আগ্রহের সঙ্গে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। নিউয়ে নামে একটা জায়গায় পরিদর্শন করার সময়ে একটা ছোটো ছেলে একবার ওর হাতের উপর হাত বুলিয়ে বলেছিল, “আপনার পালকগুলো খুব সুন্দর তো!” আসলে, সেই ছেলেটি আগে কখনো কারো হাতে এত বেশি লোম দেখেনি আর তাই সে ভেবে পায়নি, কীভাবে সেটাকে ব্যাখ্যা করবে!

সেখানকার বেশিরভাগ লোক অত্যন্ত দরিদ্র ছিল আর সেটা দেখে আমরা খুবই দুঃখ পেতাম। যদিও সেখানকার চারপাশের পরিবেশ খুবই সুন্দর ছিল কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসাকেন্দ্র ও পানীয় জল ছিল না। তবে, আমাদের ভাই-বোনেরা এই বিষয়ে খুব একটা উদ্‌বিগ্ন ছিল না। এটা তাদের কাছে কোনো বড়ো বিষয় ছিল না। তারা তাদের পরিবারের লোকেদের মাঝে থাকতে পেরে, উপাসনার জন্য একটা স্থানে একত্রিত হতে পেরে এবং যিহোবার প্রশংসা করার বিশেষ সুযোগ পেয়ে আনন্দিত ছিল। তাদের উদাহরণ আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে এবং এক সাদাসিধে জীবনযাপন করতে সাহায্য করেছিল।

বোন, মাঝে মাঝে আপনাকেই জল ভরতে এবং খাবার তৈরি করতে হতো। কীভাবে আপনি তা করতেন?

টোংগা দ্বীপে, প্যাম একটা গামলা ও বালতি ব্যবহার করে জামাকাপড় ধুচ্ছেন

টোংগা দ্বীপে প্যাম জামাকাপড় ধুচ্ছে

আমি আমার বাবার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে অনেক ব্যাবহারিক বিষয় শিখিয়েছিলেন যেমন, কীভাবে খোলা জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে রান্না করা যায় এবং কীভাবে খুব অল্প বস্তুগত বিষয় থাকা সত্ত্বেও বেঁচে থাকা যায়। কিরিবাটিতে পরিদর্শন করার সময়ে আমরা একটা ছোটো বাড়িতে থেকে ছিলাম, যেটার খড়ের চাল, প্রবালের মেঝে আর বাঁশের দেওয়াল ছিল। রান্না করার উদ্দেশে আগুন জ্বালানোর জন্য আমি মেঝেতে একটা গর্ত করেছিলাম এবং সেটাতে নারকেলের ছোবড়া ভরে আগুন জ্বালিয়ে ছিলাম। আর জলের জন্য আমি একটা কুয়োর ধারে স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। জল তোলার জন্য তারা প্রায় ছয় ফুট লম্বা একটা লাঠি ব্যবহার করত, যেটার মাথায় একটা সরু দড়ি বাঁধা থাকত। এটা দেখতে অনেকটা মাছ ধরার ছিপের মতো, তবে দড়ির অন্য মাথায় বড়শির পরিবর্তে একটা পাত্র লাগানো থাকত। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলারা একে একে যেত। তারা তাদের হাতের কবজি এমনভাবে ঘুরাতো, যাতে পাত্রটা কাত হয়ে গিয়ে সেটাতে জল ভরে যায়। প্রথমে আমি এটাকে খুবই সহজ কাজ বলে ভেবেছিলাম কিন্তু যখন আমার পালা আসে, তখন বুঝতে পারি, এটা মোটেও সহজ কাজ নয়। আমি অনেক বার চেষ্টা করি কিন্তু সফল হতে পারিনি, পাত্রটা জলের উপরেই ভাসতে থাকে! আমার করুণ অবস্থা দেখে তারা সবাই হাসতে থাকে, তবে তাদের মধ্যে একজন মহিলা আমাকে সাহায্য করার প্রস্তাব দেন। তারা সবসময় সাহায্য করত এবং দয়া দেখাত।

আপনারা দু-জনেই দ্বীপপুঞ্জে আপনাদের কার্যভারকে উপভোগ করেছেন। আপনারা কি কিছু বিশেষ মুহূর্তের কথা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চান?

উইনস্টান: সেখানকার কিছু কিছু প্রথা সম্বন্ধে বুঝে ওঠতে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ভাইয়েরা যখন খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানাত, তখন তারা সাধারণত তাদের কাছে থাকা সমস্ত খাবারই পরিবেশন করত। প্রথম প্রথম আমরা এটা জানতাম না যে, সেই খাবারের মধ্যে থেকে তাদের জন্য কিছু খাবার রেখে দিতে হবে। আর তাই তারা আমাদের যা-কিছু খেতে দিত, তার সবটাই আমরা খেয়ে নিতাম! অবশ্য, আমরা যখন থেকে তাদের এই প্রথা সম্বন্ধে জানতে পারি, তখন থেকে আমরা আর সমস্ত খাবার খেতাম না। আমাদের এই বোকামি সত্ত্বেও ভাইয়েরা আমাদের প্রতি বিবেচনা দেখাত। আর প্রতি ছয় মাস পর অথবা আমরা যখন পরিদর্শনের জন্য সেখানে যেতাম, তখন তারা আমাদের দেখতে পেয়ে খুবই আনন্দিত হতো। স্থানীয় ভাই-বোনদের ছাড়া সাক্ষি বলতে তারা কেবল আমাদেরই দেখেছিল।

নিউয়ে দ্বীপে সেবা করার সময়ে উইনস্টান একটা দলকে পরিচর্যায় নিয়ে যাচ্ছেন, যারা সবাই মোটরসাইকেলে রয়েছে

নিউয়ে দ্বীপে একটা দলকে পরিচর্যায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে

আমাদের পরিদর্শন স্থানীয় লোকেদের উপরও ভালো প্রভাব ফেলেছিল। গ্রামের অনেকে মনে করত, স্থানীয় ভাইয়েরা কোনো নতুন ধর্ম পালন করতে শুরু করেছে। তাই, গ্রামের লোকেরা যখন আমাদের আসতে দেখেছিল, তখন তারা যে-কেবল আমাদের আন্তর্জাতিক সংগঠন সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল, এমন নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তারা অভিভূতও হয়ে গিয়েছিল।

প্যাম: আমি আমার সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতার মধ্যে একটা অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলতে চাই, যেটা কিরিবাটিতে ঘটেছিল। সেখানে একটা মণ্ডলীতে মাত্র কয়েক জন ভাই-বোন ছিল। সেখানকার একমাত্র প্রাচীন, ভাই সিনাকি মাটেরা আমাদের যত্ন নেওয়া জন্য যথাসাধ্য করেছিলেন। তিনি একদিন ঝুড়িতে করে একটা ডিম দেখিয়ে বলেছিলেন, “এটা আপনাদের জন্য।” সেইসময়ে মুরগির ডিম পাওয়া আমাদের কাছে একটা ভোজের মতো ছিল। সেই দানকে ক্ষুদ্র বলে মনে হলেও তার উদারতা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল।

বোন প্যাম, কয়েক বছর পর আপনি আপনার গর্ভের সন্তানকে হারান। কী আপনাকে সেই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল?

১৯৭৩ সালে আমরা যখন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছিলাম, তখন আমি গর্ভবতী হই। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সেখানে যাওয়ার চার মাস পর আমি আমার অজাত সন্তানকে হারাই। আমরা দু-জনেই দুঃখে ভেঙে পড়ি। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার হৃদয়ের যন্ত্রণা কিছুটা কমে ছিল ঠিকই কিন্তু আমি সম্পূর্ণরূপে স্বস্তি সেইসময় পেয়েছিলাম, যখন ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল”-এ জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “মায়ের গর্ভে মারা যাওয়া কোনো শিশুর কি পুনরুত্থানের কোনো আশা আছে?” সেই প্রবন্ধ আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে, এটা যিহোবার হাতে রয়েছে আর তিনি সবসময় যা সঠিক, তা-ই করেন। আমরা এই দুষ্ট জগতের কারণে জীবনে যে-সমস্ত কষ্ট ভোগ করি, সেগুলো তিনি সেইসময়ে দূর করে দেবেন, যখন তিনি প্রেমের সঙ্গে তাঁর পুত্রকে “দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ” করার নির্দেশ দেবেন। (১ যোহন ৩:৮) এ ছাড়া, এই প্রবন্ধ আমাদের সাহায্য করেছিল যেন আমরা যিহোবার লোক হিসেবে আমাদের কাছে থাকা মূল্যবান ‘মুক্তাকে’ আরও বেশি মূল্য দিই! আমাদের কাছে রাজ্যের আশা না থাকলে আমরা যে কী করতাম, কে জানে!

আমাদের সন্তানকে হারানোর পর আমরা আবারও পূর্ণসময়ের সেবা শুরু করি। আমরা কয়েক মাসের জন্য অস্ট্রেলিয়া বেথেলে সেবা করি আর তারপর পুনরায় সীমার কাজ শুরু করি। নিউ সাউথ ওয়েলস্‌ ও সিডনির প্রত্যন্ত এলাকায় চার বছর সেবা করার পর ১৯৮১ সালে আমাদের অস্ট্রেলিয়া শাখা অফিসে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় আর সেইসময় থেকে আমরা এখানেই সেবা করছি।

ভাই উইনস্টান, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে আপনি যে-অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, সেটা কি আপনাকে অস্ট্রেলেসিয়া শাখা কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করার সময় সাহায্য করেছিল?

হ্যাঁ, অনেক উপায়ে। প্রথমে অস্ট্রেলিয়া শাখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যেন তারা আমেরিকান সামোয়া ও সামোয়া দ্বীপের যত্ন নেয়। তারপর, নিউজিল্যান্ড শাখাকে অস্ট্রেলিয়া শাখার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এখন অস্ট্রেলেসিয়া শাখার অন্তর্ভুক্ত হল অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকান সামোয়া ও সামোয়া, কুক দ্বীপপুঞ্জ, নিউজিল্যান্ড, নিউয়ে, তিমর-লেস্তে, টোকাল্যাউ ও টোংগা। এগুলোর মধ্যে অনেক জায়গায় আমি শাখা প্রতিনিধি হিসেবে পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছি। সেই দ্বীপপুঞ্জে বিশ্বস্ত ভাই-বোনদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এখন আমাকে শাখা অফিস থেকে তাদের সেবা করার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করছে।

অস্ট্রেলেসিয়া শাখায় উইনস্টান ও প্যাম পেন

অস্ট্রেলেসিয়া শাখায় উইনস্টান ও প্যাম

আমি আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কেবল যে প্রাপ্তবয়স্করাই ঈশ্বরের অনুসন্ধান করে, এমন নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অল্পবয়সিরাও “মহামূল্য মুক্তা” অনুসন্ধান করে আর তা এমনকী পরিবারের সদস্যরা আগ্রহ না দেখালেও। (২ রাজা. ৫:২, ৩; ২ বংশা. ৩৪:১-৩) আমি পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলতে পারি, যিহোবা হলেন প্রেমময় ঈশ্বর আর তিনি চান যেন সবাই জীবন পায়, তা সে অল্পবয়সি অথবা বৃদ্ধ, যে-ই হোক না কেন!

প্রায় ৫০ বছর আগে আমরা যখন ঈশ্বরের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে শুরু করেছিলাম, তখন আমরা জানতাম না যে, আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করতে চলেছি। রাজ্যের সত্য হল এমন মূল্যবান মুক্তা, যেটার সঙ্গে কোনো সম্পদের তুলনা করা যেতে পারে না। আমরা এই মূল্যবান মুক্তাকে সমস্ত শক্তি দিয়ে ধরে রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ!

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার