অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৮
হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করার মাধ্যমে শান্তির অনুধাবন করুন
“যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, আমরা সেই সকলের অনুধাবন করি।”—রোমীয় ১৪:১৯.
গান সংখ্যা ৩৯ আমাদের শান্তির অধিকার
সারাংশa
১. কীভাবে হিংসা যোষেফের পরিবারকে প্রভাবিত করেছিল?
যাকোব তার সমস্ত ছেলেকেই ভালোবাসতেন, তবে তাদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সি যোষেফ ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয়। যোষেফের ভাইয়েরা এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখেছিল? তারা যোষেফের প্রতি হিংসা করতে শুরু করেছিল এবং এর ফলে তারা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিল। যোষেফ তার ভাইদের ঘৃণার পাত্র হওয়ার মতো কোনো কাজই করেননি। তারপরও, তার ভাইয়েরা তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল এবং বাবার কাছে এসে এই মিথ্যা কথা বলেছিল, কোনো বন্য পশু তার প্রিয় ছেলেকে মেরে ফেলেছে। হিংসার কারণে তাদের পরিবারের শান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল এবং তাদের বাবা অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিলেন।—আদি. ৩৭:৩, ৪, ২৭-৩৪.
২. গালাতীয় ৫:১৯-২১ পদ অনুযায়ী কেন হিংসা করা খুবই বিপদজনক?
২ শাস্ত্রে “মাংসের” মারাত্মক ‘কার্য্য সকলের’ তালিকায় মাৎসর্য বা হিংসাকেb অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যে-গুণটা একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য করে তুলতে পারে। (পড়ুন, গালাতীয় ৫:১৯-২১.) সাধারণত হিংসার কারণে এই ধরনের বিষাক্ত ফল উৎপন্ন হয় যেমন, বিরোধিতা, শত্রুতা ও প্রচণ্ড রাগ।
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?
৩ যোষেফের ভাইদের উদাহরণ দেখায় যে, কীভাবে হিংসা সম্পর্ককে ভেঙে দেয় এবং পরিবারের শান্তিকে বিঘ্নিত করে। এটা ঠিক যে, আমরা কখনোই যোষেফের ভাইদের মতো কাজ করব না, তবে আমরা যেন ভুলে না যাই, আমাদের এক অসিদ্ধ ও বঞ্চক অন্তঃকরণ বা হৃদয় রয়েছে। (যির. ১৭:৯) তাই, আমরা হয়তো কখনো কখনো অন্যদের দেখে হিংসা করতে পারি। আসুন, আমরা বাইবেলের কিছু সতর্কবাণীমূলক উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করি, যেগুলো আমাদের এটা শনাক্ত করতে সাহায্য করবে যে, কেন হিংসার মনোভাব আমাদের হৃদয়ে শিকড় বিস্তার করতে পারে। তারপর, আমরা হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং শান্তির অনুধাবন করার বিষয়ে কিছু ব্যাবহারিক উপায় নিয়ে বিবেচনা করব।
কোন কোন কারণে হিংসা জন্ম নিতে পারে?
৪. কেন পলেষ্টীয়রা ইস্হাককে দেখে হিংসা করত?
৪ যখন কেউ ধনী হয়। ইস্হাক একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন এবং পলেষ্টীয়রা তার সমৃদ্ধি দেখে ঈর্ষা বা হিংসা করত। (আদি. ২৬:১২-১৪) তারা এমনকী সেই কুয়োগুলো ভরাট করে দিয়েছিল, যেগুলো ব্যবহার করে ইস্হাক নিজের পশুপালকে জল পান করাতেন। (আদি. ২৬:১৫, ১৬, ২৭) পলেষ্টীয়দের মতো বর্তমানেও কোনো কোনো ব্যক্তি সেই ব্যক্তিদের দেখে হিংসা করে, যারা তাদের চেয়ে ধনী। এই হিংসুক ব্যক্তিরা কেবল অন্যদের কাছে থাকা বিষয়গুলোই লাভ করতে চায় না কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও চায় যেন অন্যেরা তাদের কাছে থাকা বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হয়।
৫. কেন ধর্মীয় নেতারা যিশুকে দেখে হিংসা করত?
৫ যখন কোনো ব্যক্তিকে অনেকে পছন্দ করে। যিহুদি ধর্মীয় নেতারা যিশুকে দেখে হিংসা করত কারণ অনেকে তাঁকে পছন্দ করত। (মথি ৭:২৮, ২৯) যিশু ঈশ্বরের প্রতিনিধি ছিলেন এবং তিনি সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তারপরও, যিশুর সুনাম নষ্ট করার জন্য সেই ধর্মীয় নেতারা যিশু সম্বন্ধে মিথ্যা কথা ছড়িয়েছিল। (মার্ক ১৫:১০; যোহন ১১:৪৭, ৪৮; ১২:১২, ১৩, ১৯) এই বিবরণ থেকে আমরা কোন সতর্কবাণীমূলক শিক্ষা লাভ করতে পারি? কোনো কোনো ব্যক্তির উত্তম গুণাবলির জন্য মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা যদি তাদের ভালোবাসে, তা হলে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা সেটা দেখে নিজেদের মধ্যে হিংসার মনোভাব গড়ে না তুলি। এর পরিবর্তে, আমরা যেন তাদের উত্তম গুণাবলি অনুকরণ করার চেষ্টা করি।—১ করি. ১০:৩৪;. ৩ যোহন ১১.
৬. কীভাবে দিয়ত্রিফি হিংসার মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন?
৬ যখন মণ্ডলীতে কোনো ব্যক্তির বিভিন্ন দায়িত্ব থাকে। প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে যে-ব্যক্তিরা নেতৃত্ব নিত, তাদের দেখে দিয়ত্রিফি নামে একজন ব্যক্তি হিংসা করতেন। তিনি মণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে ‘প্রাধান্য’ পেতে চেয়েছিলেন আর তাই তিনি প্রেরিত যোহন এবং অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদের সম্মান নষ্ট করার জন্য দুর্বাক্য বা বিদ্বেষপূর্ণ কথা ছড়িয়েছিলেন। (৩ যোহন ৯, ১০) দিয়ত্রিফির মতো চরম পর্যায়ে না গেলেও আমরা হয়তো কোনো সহখ্রিস্টানকে দেখে হিংসা করা শুরু করতে পারি, যিনি এমন কোনো কার্যভার লাভ করেছেন, যেটা আমরা লাভ করার আশা করেছিলাম। আর আমরা বিশেষভাবে সেইসময়ে এইরকম অনুভব করি, যখন আমরা সেই কার্যভার সেই ব্যক্তির মতোই অথবা তার চেয়েও ভালোভাবে পালন করতে পারব বলে মনে করি।
ঠিক যেমন একটা আগাছা ফুলকে বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়, একইভাবে হিংসা আমাদের প্রেম, সমবেদনা ও দয়ার মতো উত্তম গুণাবলি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বাধা দেয় (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৭. হিংসার মনোভাব আমাদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?
৭ হিংসা হল একটা ক্ষতিকর আগাছার মতো। একবার হিংসার বীজ আমাদের হৃদয়ে শিকড় বিস্তার করলে, সেটাকে উপড়ে ফেলা কঠিন হতে পারে। হিংসার মনোভাব এই ধরনের অন্যান্য ক্ষতিকর গুণের দ্বারা বৃদ্ধি পেতে পারে যেমন, অনুপযুক্ত ঈর্ষা, গর্ব ও স্বার্থপরতা। ঠিক যেমন একটা আগাছা ফুলকে বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে, একইভাবে হিংসা আমাদের প্রেম, সমবেদনা ও দয়ার মতো উত্তম গুণাবলি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে। হিংসাকে আমাদের হৃদয়ে অঙ্কুরিত হতে দেখা মাত্রই সেটাকে উপড়ে ফেলতে হবে। কীভাবে আমরা হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি?
নম্রতা ও সন্তুষ্টির মনোভাব গড়ে তুলুন
কীভাবে আমরা আগাছার মতো হিংসার মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি? ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা হিংসার মনোভাবকে উপড়ে ফেলে সেই জায়গা নম্রতা ও সন্তুষ্টির মনোভাবের দ্বারা পূরণ করতে পারি (৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৮. কোন গুণগুলো আমাদের হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সাহায্য করতে পারে?
৮ আমরা নম্রতা ও সন্তুষ্টির মনোভাব গড়ে তোলার মাধ্যমে হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। আমাদের হৃদয় যখন এই উত্তম গুণগুলোর দ্বারা পূর্ণ থাকে, তখন হিংসা আর বেড়ে উঠতে পারে না। নম্রতা আমাদের নিজেদের খুব বড়ো করে না দেখতে সাহায্য করে। একজন নম্র ব্যক্তি অন্যদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন না। (গালা. ৬:৩, ৪) সন্তুষ্টির মনোভাব রয়েছে এমন একজন ব্যক্তি তার কাছে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন এবং তিনি অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করেন না। (১ তীম. ৬:৭, ৮) নম্রতা ও সন্তুষ্টির মনোভাব রয়েছে এমন একজন ব্যক্তি সেইসময়ে আনন্দিত হন, যখন তিনি দেখেন যে, অন্য কোনো ব্যক্তি ভালো কিছু লাভ করেছেন।
৯. গালাতীয় ৫:১৬ এবং ফিলিপীয় ২:৩, ৪ পদ অনুযায়ী পবিত্র আত্মা আমাদের কী করার জন্য সাহায্য করবে?
৯ আমাদের মধ্যে যাতে হিংসার মনোভাব গড়ে না ওঠে এবং আমরা যাতে নম্রতা ও সন্তুষ্টির মনোভাব গড়ে তুলতে পারি, সেইজন্য আমাদের ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। (পড়ুন, গালাতীয় ৫:১৬; ফিলিপীয় ২:৩, ৪.) যিহোবার পবিত্র আত্মা আমাদের মর্ম্ম অর্থাৎ আমাদের অন্তরের চিন্তাভাবনা ও মনোভাব পরীক্ষা করে দেখার জন্য সাহায্য করতে পারে। ঈশ্বরের সাহায্যে আমরা আমাদের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিকে দূর করে দিয়ে সেই জায়গাটা গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির দ্বারা পূর্ণ করতে পারি। (গীত. ২৬:২; ৫১:১০) মোশি ও পৌলের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যারা হিংসার মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করায় সফল হয়েছেন।
একজন অল্পবয়সি ইস্রায়েলীয় এই বিষয়টা বলার জন্য মোশি ও যিহোশূয়ের দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন যে, দুই জন পুরুষ শিবিরে ভাববাদীর মতো আচরণ করছেন। যিহোশূয় যখন মোশিকে তাদের থামানোর বিষয়ে বলেছিলেন, তখন মোশি তা করেননি। এর পরিবর্তে, যিহোবা সেই দুই জন পুরুষকে তাঁর পবিত্র আত্মা দিয়েছেন বলে মোশি যিহোশূয়কে বলেছিলেন, তিনি আনন্দিত (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১০. কোন পরিস্থিতি মোশিকে পরীক্ষিত করতে পারত? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১০ মোশিকে ঈশ্বর তাঁর লোকেদের উপর কর্তৃত্ব করার জন্য প্রচুর ক্ষমতা দিয়েছিলেন কিন্তু মোশি স্বার্থপরভাবে সেই ক্ষমতাকে নিজের কাছে ধরে রাখতে চাননি। উদাহরণ স্বরূপ, একবার যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার কিছুটা অংশ মোশির কাছ থেকে নিয়ে সমাগম তাঁবুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একদল ইস্রায়েলীয় প্রাচীনকে দিয়েছিলেন। এর অল্পসময় পরে মোশি শুনতে পেয়েছিলেন যে, দুই জন প্রাচীন, যারা সমাগম তাঁবুর কাছে যাননি, তারাও পবিত্র আত্মা লাভ করেছেন এবং ভাববাদীর মতো আচরণ করছেন। যিহোশূয় যখন সেই দুই জন প্রাচীনকে থামানোর বিষয়ে মোশিকে বলেছিলেন, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? সেই দুই জন প্রাচীন যিহোবার কাছ থেকে আশীর্বাদ পেয়েছেন বলে মোশি ঈর্ষান্বিত হয়ে যাননি। এর পরিবর্তে, তিনি নম্রতা বজায় রেখেছিলেন এবং তারা ভাববাণী করতে পারছিলেন বলে মোশি আনন্দিত হয়েছিলেন। (গণনা. ১১:২৪-২৯) মোশির কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
কীভাবে খ্রিস্টান প্রাচীনরা মোশির মতো নম্র হতে পারে? (১১-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)c
১১. কীভাবে প্রাচীনরা মোশিকে অনুকরণ করতে পারেন?
১১ আপনি কি একজন প্রাচীন? যদি হয়ে থাকেন, তা হলে আপনাকে কি কখনো মণ্ডলীতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো বিশেষ কার্যভার পালন করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়েছে, যে-কার্যভারকে আপনি সত্যিই ভালোবাসেন? উদাহরণ স্বরূপ, আপনি হয়তো প্রতি সপ্তাহে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন পরিচালনা করার বিশেষ সুযোগকে উপভোগ করেন। কিন্তু, আপনি যদি মোশির মতো নম্র হন, তা হলে অন্য কোনো ভাইকে এই বিশেষ সুযোগ পালন করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আপনাকে বলা হলে আপনি এমনটা মনে করবেন না যে, আপনার গুরুত্ব কমে যাবে। এর পরিবর্তে, আপনি আপনার ভাইকে সাহায্য করতে পেরে খুশি হবেন।
১২. কীভাবে বর্তমানে অনেক খ্রিস্টান সন্তুষ্টি ও নম্রতার মনোভাব দেখিয়ে থাকে?
১২ আরেকটা পরিস্থিতির বিষয়ে বিবেচনা করুন, যেটার মুখোমুখি অনেক বয়স্ক ভাই হচ্ছেন। কয়েক দশক ধরে তারা প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর হিসেবে সেবা করেছেন। কিন্তু, তাদের বয়স যখন ৮০ বছর হয়ে যায়, তখন তারা ইচ্ছুক মনে কোঅর্ডিনেটর হিসেবে তাদের কার্যভার ছেড়ে দেন। সীমা অধ্যক্ষদের বয়স যখন ৭০ বছর হয়ে যায়, তখন তারা নম্রতার সঙ্গে তাদের এই কার্যভার ছেড়ে দেন এবং যিহোবার সেবায় অন্য কোনো কার্যভার গ্রহণ করেন। আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী বেথেল পরিবারের অনেক সদস্য ক্ষেত্রে নতুন কার্যভার শুরু করেছে। এই বিশ্বস্ত ভাই-বোনেরা একসময়ে বেথেলে যে-কার্যভার পালন করত, সেগুলো নতুন ব্যক্তিদের করতে দেখে তারা হিংসা করে না।
১৩. কেন পৌল সেই ১২ জন প্রেরিতের প্রতি হিংসা করার বিষয়ে প্রলুব্ধ হতে পারতেন?
১৩ প্রেরিত পৌল হলেন আরেক জন ব্যক্তি, যিনি সন্তুষ্টি ও নম্রতার মনোভাব গড়ে তোলার বিষয়ে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। পৌল তার হৃদয়ে হিংসার মনোভাব গড়ে ওঠার সুযোগ দেননি। তিনি পরিচর্যায় কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন কিন্তু তারপরও তিনি নম্রতার সঙ্গে বলেছিলেন: “প্রেরিতগণের মধ্যে আমি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র বরং প্রেরিত নামে আখ্যাত হইবার অযোগ্য।” (১ করি. ১৫:৯, ১০) যিশুর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে ১২ জন প্রেরিত তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন। তবে, পৌল যখন খ্রিস্টান হয়েছিলেন, তখন যিশু ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছিলেন এবং পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। যদিও পৌলকে এক সময়ে “পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত” হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তারপরও তিনি কখনো ১২ জন প্রেরিতদের মধ্যে একজন হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করেননি। (রোমীয় ১১:১৩; প্রেরিত ১:২১-২৬) এই কারণে পৌল সেই ১২জন প্রেরিতের প্রতি হিংসা করেননি অথবা তারা যিশুর সঙ্গে যে-ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছিলেন, সেটার কারণে পৌল তাদের প্রতি হিংসা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি নিজের কাছে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন।
১৪. আমাদের মধ্যে যদি সন্তুষ্টি ও নম্রতার মনোভাব থাকে, তা হলে আমরা কী করব?
১৪ আমাদের মধ্যে যদি সন্তুষ্টি ও নম্রতার মনোভাব থাকে, তা হলে আমরা পৌলের মতো হব এবং যিহোবা অন্যদের যে-কর্তৃত্ব দিয়েছেন, সেটার প্রতি সম্মান দেখাব। (প্রেরিত ২১:২০-২৬) তিনি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত ভাইদের ব্যবস্থা করেছেন। তারা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যিহোবা তাদের ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেন। (ইফি. ৪:৮, ১১) আমরা যখন এই নিযুক্ত পুরুষদের সম্মান করি এবং নম্রতার সঙ্গে তাদের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করি, তখন আমরা যিহোবার নিকটে থাকি এবং সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে শান্তি উপভোগ করি।
‘যে যে বিষয় শান্তিজনক, সেই সকলের অনুধাবন করিও’
১৫. আমাদের কী করতে হবে?
১৫ আমরা যদি অন্যদের দেখে হিংসা করি অথবা অন্যেরা যদি আমাদের দেখে হিংসা করে, তা হলে আমাদের মধ্যে কখনো শান্তি থাকবে না। আমাদের হৃদয় থেকে হিংসার আগাছাকে উপড়ে ফেলতে হবে এবং অন্যদের মধ্যে হিংসার মনোভাব রোপণ করা এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা যদি ‘যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, সেই সকলের অনুধাবন করিবার’ বিষয়ে যিহোবার আদেশের বাধ্য হতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিতে হবে। (রোমীয় ১৪:১৯) হিংসার মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অন্যদের সাহায্য করার জন্য আমরা নির্দিষ্টভাবে কী করতে পারি এবং কীভাবে আমরা শান্তির অনুধাবন করতে পারি?
১৬. কীভাবে আমরা হিংসার মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অন্যদের সাহায্য করতে পারি?
১৬ আমাদের মনোভাব ও কাজ অন্যদের উপর এক গভীর ছাপ ফেলতে পারে। এই জগৎ চায় যেন আমরা নিজেদের বস্তুগত বিষয়গুলো নিয়ে “দর্প” বা অহংকার করি। (১ যোহন ২:১৬) কিন্তু, এই মনোভাব অন্যদের মধ্যে হিংসাকে জাগিয়ে তোলে। আমরা নিজেদের কাছে থাকা বিষয়গুলো অথবা আমরা যা কিনতে চাই, সেই বিষয়ে সবসময় কথা না বলার মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে হিংসার মনোভাব জাগিয়ে তোলা এড়াতে পারি। এ ছাড়া, মণ্ডলীতে আমাদের যে-বিশেষ সুযোগ রয়েছে, সেই বিষয়ে বিনয়ী হওয়ার মাধ্যমে আমরা হিংসার মনোভাবকে জাগিয়ে তোলা এড়াতে পারি। আমরা যদি আমাদের কাছে থাকা বিশেষ সুযোগগুলোর প্রতি অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করাই, তা হলে আমরা এমন পরিবেশ তৈরি করব, যেখানে হিংসা বেড়ে উঠতে পারে। এর বিপরীতে, আমরা যখন ব্যক্তিগতভাবে অন্যদের প্রতি প্রকৃত আগ্রহ দেখাই এবং তাদের করা ভালো কাজগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাই, তখন আমরা তাদের সন্তুষ্ট থাকতে সাহায্য করি এবং আমরা মণ্ডলীতে একতা ও শান্তি গড়ে তোলায় অবদান রাখি।
১৭. যোষেফের ভাইয়েরা কী করতে পেরেছিল এবং কেন?
১৭ আমরা হিংসার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারি! যোষেফের ভাইদের উদাহরণ আবারও বিবেচনা করুন। যোষেফের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার বহু বছর পর মিশরে যোষেফের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। যোষেফ তার ভাইদের কাছে নিজের প্রকৃত পরিচয় দেওয়ার আগে তিনি তাদের পরীক্ষা করে দেখেছিলেন যে, তারা পরিবর্তিত হয়েছে কি না। তিনি এক ভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং সেখানে তাদের সবচেয়ে ছোটো ভাই বিন্যামীনকে বাকি ভাইদের চেয়ে অনেক বেশি খাবার দিয়েছিলেন। (আদি. ৪৩:৩৩, ৩৪) কিন্তু, এতে তার ভাইয়েরা বিন্যামীনের প্রতি হিংসা করেনি। এর পরিবর্তে, তারা তাদের ভাইয়ের প্রতি এবং তাদের বাবা যাকোবের প্রতি প্রকৃত আগ্রহ দেখিয়েছিল। (আদি. ৪৪:৩০-৩৪) যোষেফের ভাইয়েরা তাদের পরিবারে শান্তি পুনর্স্থাপন করতে পেরেছিল কারণ তারা হিংসার মনোভাব কাটিয়ে উঠেছিল। (আদি. ৪৫:৪, ১৫) একইভাবে, আমরাও যদি হিংসার মনোভাবকে উপড়ে ফেলি, তা হলে আমরা আমাদের পরিবার ও মণ্ডলীতে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করব।
১৮. যাকোব ৩:১৭, ১৮ পদ অনুযায়ী আমরা যদি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করি, তা হলে কী হবে?
১৮ যিহোবা চান যেন আমরা হিংসার মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করি এবং শান্তির অনুধাবন করি। আমাদের অবশ্যই এই দুটো ক্ষেত্রে কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা যেমন আলোচনা করেছি, আমাদের মধ্যে হিংসা করার প্রবণতা রয়েছে। (যাকোব ৪:৫) আর আমরা এমন এক জগতে বাস করি, যেটা হিংসাকে তুলে ধরে। কিন্তু আমরা যদি নম্রতা, সন্তুষ্টি ও উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলি, তা হলে আমরা হিংসাকে পরাজিত করতে পারব। এ ছাড়া, আমরা অন্যদের সঙ্গে শান্তিতে থাকব এবং আমরা আরও বেশি প্রেমময়, সমবেদনাময় ও দয়ালু ব্যক্তি হয়ে উঠব।—পড়ুন, যাকোব ৩:১৭, ১৮.
গান সংখ্যা ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা
a যিহোবার সংগঠন হল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু, আমরা যদি অন্যদের বিষয়ে হিংসা করি, তা হলে আমরা এই শান্তিকে বিঘ্নিত করতে পারি। এই প্রবন্ধে, আমরা হিংসার পিছনে থাকা কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করব। এ ছাড়া, আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব যে, কীভাবে এই মন্দ প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় এবং কীভাবে আমরা শান্তির অনুধাবন করতে পারি।
b এই অভিব্যক্তির অর্থ: বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী হিংসার কারণে একজন ব্যক্তি অন্যদের কাছে থাকা বিষয়গুলো কেবল লাভ করতেই চান না কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও চান যেন তারা তাদের কাছে থাকা বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হয়।
c ছবি সম্বন্ধে: প্রাচীনগোষ্ঠীর এক সভায় একজন বয়স্ক ভাইকে বলা হয় যেন তিনি তার চেয়ে কমবয়সি একজন প্রাচীন ভাইকে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন পরিচালনা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেন, যাতে সেই নতুন ভাই সেই বয়স্ক ভাইয়ের জায়গায় প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন পরিচালনা করতে পারেন। এই বয়স্ক ভাই যদিও তার কার্যভারকে ভালোবাসেন, তারপরও তিনি সেই নতুন ভাইকে ব্যাবহারিক পরামর্শ দেওয়ার এবং আন্তরিকভাবে তার প্রশংসা করার মাধ্যমে সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে প্রাচীনদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন।