“অবিভক্ত মনোযোগ”
অল্প মাত্রায় দেওয়া
খুব অল্পসংখ্যক পিতামাতারা আজকাল তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে যথেষ্ট সময় কাটায়। অনেকে একা থাকে এবং কোন সঙ্গীর সাহায্য ছাড়াই ছেলেমেয়েদের অন্ন-সংস্থান করার জন্য কষ্ট করে। আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমাগত আরও খারাপ হয়ে আসার জন্য, বহু বিবাহিত পিতামাতাদের দুজনকেই বাড়ির বাইরে কাজ করতে হয় পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন মেটাবার জন্য। সেইজন্য, অবিভক্ত মনোযোগের প্রশ্ন যে উঠেছে তা আশ্চর্যের কিছু নয়।
সাধারণত, অবিভক্ত মনোযোগের অর্থ হল শিশুর সাথে কিছু সময় ব্যয় করার জন্য আলাদা করে রাখা, প্রায়ই কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে—বিশেষ উদ্দেশ্যে বাইরে বেড়াতে যাওয়া, যেমন চিড়িয়াখানায়। এই ব্যবস্থার কিছু উপকার অবশ্যই আছে। ছোটদের প্রতি যতটা সম্ভব মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, শিশুদের যত্ন নেওয়া সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে পড়ছে যে অবিভক্ত মনোযোগ সম্বন্ধে জনপ্রিয় ধারণায় কিছু ত্রুটিও আছে।
আপাতদৃষ্টিতে, বহু ব্যস্ত, জাগতিক-দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন পিতামাতার ভুল ধারণা আছে যে নিয়মিত, সময়সূচী অনুযায়ী কিছু সময় শিশুর সাথে কাটালেই, তাদের মনোযোগ পাওয়ার জন্য শিশুর সমস্ত প্রয়োজনীয় চাহিদা পূর্ণ হয়। সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি মেডিকাল স্কুলের অধ্যাপক, ডাঃ লী সল্ক্-এর কথা উদ্ধৃতি করে নিউ ইয়র্ক ডেইলী নিউজ্ বলে: “অবিভক্ত মনোযোগের ধারণা হল অর্থহীন।” তিনি ব্যাখ্যা করেন: “পিতামাতার ত্রুটিবোধ থেকে এই শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আরও কম সময় কাটানোর জন্য লোকেরা নিজেদের অনুমতি দিচ্ছে।”
কিন্তু শিশুর প্রতি পিতামাতার অবিভক্ত মনোযোগের জন্য দেওয়া সেই সময়ের গুরুত্ব, আরও বেশি সময় না দেওয়ার ক্ষতি কি পূরণ করে না? না, কারণ খুবই সাধারণ—উদাহরণের মাধ্যমে পিতামাতারা তাদের ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে ভাল শিক্ষা দিতে পারে। এই সত্যের অন্ধকার দিকটি প্রমাণিত হয় যখন শহরের পুরানো অঞ্চলের কিশোর-কিশোরীদের সম্বন্ধে সম্প্রতি একটি পরীক্ষা করা হয়। বড় হয়ে উঠবার সময়ে যাদের পরিবারের সদস্যেরা জেলে ছিল, তাদেরও জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের থেকে দুইগুণ বেশি। একইভাবে, যারা মদ অথবা নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার করে, তাদের কাছে বড় হয়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে সেই একই অভ্যাস গড়ে ওঠার সম্ভাবনা অন্যদের থেকে দুইগুণ বেশি।
পিতামাতাদের ভাল উদাহরণও একইরকম শক্তিশালী হতে পারে। সমস্যা হল যে ভাল উদাহরণ স্থাপন করার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়, একসঙ্গে অনেকক্ষণ সময়ের প্রয়োজন হয়, শুধুমাত্র অবিভক্ত মনোযোগের ছোট ছোট পর্ব নয়। নিউ ইয়র্ক ডেইলী নিউজ্ যেমন বলেছিল: “অবিভক্ত মনোযোগের ধারণায় সমস্যা হল যে পিতামাতা এবং শিশুর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলি—যে আলোচনা এবং সিদ্ধান্তগুলি নিরাপত্তা, নীতিবোধ এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে, তা স্বতঃস্ফুর্তভাবেই আসে।” স্বাভাবিকভাবে আসা এই মুহূর্তগুলি কেউ সময়সূচী অনুযায়ী আনতে পারে না। একজন পিতা অথবা মাতা হয়ত ছেলেমেয়ের সঙ্গে ১৫ মিনিট অবিভক্ত মনোযোগ দিয়ে কাটাবেন বলে ঠিক করতে পারেন, কিন্তু কে বলতে পারে যে সেই সময়ের মধ্যে পিতামাতা এবং সন্তানের মধ্যে খোলাখুলি একটি উত্তম সম্পর্ক গড়ে উঠবে? আর উদাহরণ থেকেই বা শিশুরা কিভাবে শিখবে, যদি সারা দিনে একমাত্র সেই কয়েক মিনিটই পিতামাতা শিশুর সঙ্গে কাটায়?
যেহেতু পিতামাতাদের হাতে খুবই অল্প সময় থাকে, সুতরাং এর সমাধান কী? এর কোন সহজ উত্তর নেই। এই জগতে ছেলেমেয়েদের বড় করে তোলা যে খুব কঠিন কাজ, এই বাস্তব ঘটনাটি কিছুতেই পরিবর্তন করা যাবে না। কিছু পিতামাতা হয়ত তাদের কর্মজীবনের প্রতি একটু কম মনোযোগ দিতে পারেন। ছেলেমেয়েদের যত্ন নেওয়া সম্বন্ধে একটি সাম্প্রতিক বইয়ের লেখক, যে পিতামাতারা কাজের প্রতি মনোযোগ একটু কমাতে পারেন, তাদের ঠিক তাই করতে বলেন—ছেলেমেয়েদের সাথে বাড়িতে থাকতে বলেন। কিন্তু বহু পিতামাতার সেই সুযোগ নেই। আর এমনকি যাদের কার্যসূচীতে কিছুটা পরিবর্তন করা যায় অথবা যারা কোন বেতনসহ কাজ করে না, তাদের পক্ষেও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটানো মুস্কিল হয়ে ওঠে।
কিছু বিশেষজ্ঞরা পিতামাতাকে পরামর্শ দেন যে বাড়ির কাজকর্ম, যেমন পরিষ্কার করা, রান্না করা, জিনিসপত্র সারানো, গাড়ির যত্ন নেওয়া, জামাকাপড় ধোয়া, বাজার করা, ইত্যাদি, তারা তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে করতে পারে কিনা। খুব সাধারণ কাজও একসঙ্গে করে অথবা এমনকি একসঙ্গে বিশ্রাম নিয়ে, কথাবার্তা বলার জন্য অথবা গঠনমূলক উদাহরণ স্থাপন করার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন, তা পিতামাতারা পেতে পারে। খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের আরও অন্য কাজ থাকে যা তারা তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে করতে পারে। খ্রীষ্টীয় সভায়, পরিচর্যায়, পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়নে, সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করায়—এই সমস্ত কিছুতেই পিতামাতারা তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটাতে পারে।
আগ্রহজনকভাবে, ইস্রায়েল জাতির নিয়মে, ৩,০০০ বছর আগে একই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭ পদে লেখা আছে: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” প্রাচীনকালেও জীবন খুব সহজ ছিল না। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য কত সময় দিতে হত সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন—পরিবারের সংস্থান করার জন্য একজন পিতাকে কত পরিশ্রম করতে হত, অথবা রান্না করা বা জামাকাপড় ধোয়াতে কত সময় দিতে হত! কিন্তু যে পিতামাতারা যিহোবাকে ভালবাসতেন তারা তাদের ছেলেমেয়েদের নিজেদের কাছে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন এবং তাই সারা দিনে তাদের নবীন হৃদয়ে ঈশ্বরের নিয়ম যত্নপূর্বক শিক্ষা দিতে অনেক সময় পেতেন।
বর্তমানেও খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের এইরকমই করা উচিৎ। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সময় কাটানোর ব্যাপারে, সহজ পথটি বেছে নেওয়া থেকে তাদের বিরত হতে হবে। “পরিমান নয়, কিন্তু গুণমানই গুরুত্বপূর্ণ” এই পুরনো প্রবাদবাক্য ছেলেমেয়েদের বড় করে তোলার ক্ষেত্রে খাটে না। বিশেষত গড়ে উঠবার বছরগুলিতে ছেলেমেয়েদের শুধুমাত্র বিশেষ সময় নয়, কিন্তু “একসঙ্গে” সময় কাটানোরও প্রয়োজন থাকে। (g93 5/22)
বাড়িতে ব্যস্ত পরিবার, ছেলেমেয়েরাও অংশ নিয়েছে
একসঙ্গে যিহোবার সেবা করা