বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি
স্বেচ্ছাকৃত দান
একটি খ্রীষ্টীয় বাধ্যতা?
প্রায় দশ বছর আগে, পি.টি.এল. (প্রেইজ্ দ্যা লর্ড) ক্লাব, যার প্রধান অফিস দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত, ধর্মীয় দাতব্য সংস্থার জন্য দান চাইতে শুরু করে। স্যাটেলাইট-টিভি নেটওয়ার্ক এবং চিঠিপত্রের সাহায্যে তারা কোটি কোটি ডলার সংগ্রহ করে নিজেদের ভাণ্ডার পূর্ণ করে—সুসমাচার প্রচার করার ভান করে।
আ্যসোসিয়েটেড্ প্রেস ক্লাবের মত অন্যান্য সংবাদপত্রের বিবরণ পড়ে সেই হাজার হাজার লোকেদের মনের অবস্থা কল্পনা করুন যারা পি.টি.এল. ক্লাবে টাকা পাঠিয়েছিলেন। সেই বিবরণে লেখা ছিল যে পি.টি.এল.-এর প্রাক্তন সভাপতি, জিম বেকার এবং তার স্ত্রী, ট্যামি “১৯৮৬ সালে বেতন এবং বাড়তি আয় হিসাবে ১৬ লক্ষ ডলার পেয়েছিলেন।” বিবরণে আরও জানানো হয়: “মন্ত্রীসভার ঋণ ৫ কোটি ডলার হওয়া সত্ত্বেও এই অর্থ দেওয়া হয়েছিল . . . পি.টি.এল.-এর অর্থ থেকে প্রায় ২,৬৫,০০০ ডলার [জেসিকা] হানের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছিল, যাতে বেকারের সঙ্গে তার [যৌন] সম্পর্ক সম্বন্ধে তিনি চুপ করে থাকেন।”
তার অনুগামীদের ঠকানোর জন্য, বেকারকে জেলে পাঠাবার আগে, মোকদ্দমা চলাকালীন বিচারক বলেছিলেন: “আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করি, তারা কৌশলে অর্থ-অপহরণকারী প্রচারক এবং পাদ্রীদের শিকার হওয়ায় বিরক্ত হয়ে উঠেছি।”
অর্থদাতাদের মনে আবেগ জাগিয়ে তুলে, তারপর অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করার মধ্যে ধর্ম একা নেই। যে কোন উদ্দেশ্যে পাওয়া দানের ৯০ শতাংশেরও বেশি নিজেদের কাছে রেখে দেওয়া, কিছু অর্থসংগ্রহকারীদের মধ্যে সাধারণ।
সুতরাং, লোকে যে দাতব্য সংস্থাগুলির প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠছে তা কি কোন আশ্চর্যের বিষয়? কিন্তু খ্রীষ্টানেরা কি করবেন? সংগঠিত দাতব্য সংস্থাকে অর্থ দিতে কি তারা বাধ্য? অন্যদের সাহায্য করার জন্য দেওয়া অর্থ যাতে উপযুক্তরূপে ব্যবহৃত হয় সেই জন্য বাইবেল কী পরামর্শ দেয়? অন্যকে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে ভাল এবং ব্যবহারিক উপায় কী?
দান করা—হ্যাঁ এবং না
প্রকৃতপক্ষে, বাইবেলের উপদেশ হল যাদের প্রয়োজন আছে তাদের প্রতি দয়ালু এবং উদার হতে। প্রাচীনকাল থেকে, ঈশ্বরের ব্যক্তিদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে ‘দানশীল হতে, সহভাগীকরণে তৎপর হতে।’ (১ তীমথিয় ৬:১৮; দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:৭, ১০, ১১) এমনকি, ১ যোহন ৩:১৭ পদে খ্রীষ্টানদের বলা হয়েছে: “যাহার সাংসারিক জীবনোপায় আছে, সে আপন ভ্রাতাকে দীনহীন দেখিলে যদি তাহার প্রতি আপন করুণা রোধ করে, তবে ঈশ্বরের প্রেম কেমন করিয়া তাহার অন্তরে থাকে?”
দান করতে পারেন; তবে সাবধান! আমরা ক্রমাগত দাতব্য সংস্থা, ধর্ম এবং সামাজিক হিতৈষী সংস্থাগুলির কাছ থেকে অনুরোধের দ্বারা জর্জরিত হই; যার মধ্যে অধিকাংশই বার বার আবেদন জানায়। কিন্তু, সেই সংস্থাগুলির বিচার করার সময়ে বাইবেলের এই নীতিবাক্য মনে রাখা ভাল: “যে অবোধ সে সকল কথায় বিশ্বাস করে, কিন্তু সতর্ক লোক নিজ পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখে।” (হিতোপদেশ ১৪:১৫) অর্থাৎ, শুধুমাত্র কোন দাতব্য সংস্থার সুনামের উপরে নির্ভর করে তার আশ্বাসবাণী অথবা প্রতিজ্ঞাতে বিশ্বাস করা থেকে সাবধান থাকুন। সংগৃহীত অর্থ প্রকৃতই কিভাবে ব্যবহার করা হয়? যে সংস্থার প্রতি দান করা হচ্ছে তা কি একজন খ্রীষ্টানের সমর্থনের যোগ্য? তাদের কাজ কি রাজনীতি, জাতীয়তাবাদ, অথবা মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে জড়িত আছে? যে উদ্দেশ্যে দান করা হচ্ছে তা কি ব্যবহারিক এবং শাস্ত্রীয় নীতি অনুযায়ী অনুমোদনযোগ্য?
কিছু দাতব্য সংস্থা অভাবগ্রস্ত লোকেদের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা কোন মহামারীর সময়ে, অনেক বার খ্রীষ্টানেরা নিজেরা এই সংস্থাগুলির থেকে উপকার পেয়েছে। কিন্তু, অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রে, নিজেদের পরিচালনা করা এবং টাকা সংগ্রহ করার খরচ খুব বেশি হওয়ায়, সংগৃহীত দানের খুব অল্প অংশই প্রকৃত উদ্দেশ্যের পিছনে ব্যয় করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থাগুলির মধ্যে ১১৭টিকে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তার মধ্যে এক চতুর্থাংশেরও বেশি, তাদের পরিচালকদের $২,০০,০০০ অথবা তারও বেশি অর্থ বাৎসরিক বেতন হিসাবে দেয়। অডিট করার সময় প্রায়ই দেখা যায় যে বিলাসিতার দ্রব্যে অথবা প্রাচুর্যপূর্ণ জীবনধারা বজায় রাখতে প্রচুর অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে। সংস্থার নাম যাই হোক না কেন, এই ধরনের সংস্থাগুলিকে দান করলে যে অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা সম্বন্ধে বাইবেলের আদেশ পালন করা হবে না, তা বুঝতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।
ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি
যদিও কেউই চায় না যে তাদের অর্থ অপচয় করা হোক—অথবা তার চেয়েও খারাপ, স্বার্থান্বেষী লোকেদের ধনী করে তুলতে ব্যবহার করা হোক—তবুও দান করার ব্যাপারে অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণ হওয়া এড়িয়ে চলা উচিৎ। কিছু “দাতব্য সংস্থায়” সুব্যবস্থার অভাবে অথবা এমনকি তাদের প্রতারণাকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপেক্ষা করবেন না অথবা করুণার মনোভাবকে মুছে ফেলবেন না। হিতোপদেশ ৩:২৭, ২৮ উপদেশ দেয়: “যাহাদের মঙ্গল করা উচিত, তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিও না, যখন তাহা করিবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকে। তোমার প্রতিবাসীকে বলিও না, ‘যাও, আবার আসিও, আমি কল্য দিব,’ যখন দ্রব্য তোমার হস্তে থাকে।” (তুলনা করুন ১ যোহন ৩:১৮.) সমস্ত দাতব্য সংগঠনই যে অপচয় করে অথবা অর্থ অপব্যবহার করে, এমন ধারণা করে নেবেন না। পরীক্ষা করে দেখুন, তারপর দান করবেন কি করবেন না সেই বিষয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিন।
অনেকে অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা পরিবারকে সরাসরিভাবে ব্যক্তিগত উপহার দিতে পছন্দ করেন। এইভাবে দাতারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে তাদের অর্থ তৎক্ষণাৎ ব্যবহারিকভাবে ব্যয় করা হবে। আরও, এইভাবে কথায় এবং কাজে গড়ে তুলতে এবং করুণা দেখাতে সুযোগ পাওয়া যায়। দেবার জন্য আপনার কাছে অনেক কিছু না থাকলেও আপনি দান করার আনন্দ পেতে পারেন। পরের বার যখন আপনি শুনবেন যে প্রকৃতই কোথাও সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে, তখন ২ করিন্থীয় ৮:১২ পদের মনোভাব নিয়ে আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব, দান করতে পারেন: “যদি আগ্রহ থাকে, তবে যাহার যাহা আছে, তদনুসারে তাহা গ্রাহ্য হয়; যাহার যাহা নাই, তদনুসারে নয়।”
আরও, মনে রাখবেন যে কয়েক সময়ে অর্থ ছাড়াও অন্য কিছু আরও বেশি উপকার করতে পারে। যীশু তার অনুগামীদের বলেছিলেন: “তোমরা যাইতে যাইতে এই কথা প্রচার কর, ‘স্বর্গরাজ্য সন্নিকট হইল।’ . . . তোমরা বিনামূল্যে পাইয়াছ, বিনামূল্যেই দান করিও।” (মথি ১০:৭, ৮) একইভাবে বর্তমানেও, খ্রীষ্টানেরা উপলব্ধি করেন যে রাজ্যের কাজের জন্য ব্যয় করা সময়, উদ্যোগ এবং অর্থ—যা জীবন উন্নততর করে এবং ভবিষ্যতের জন্য আশা দেয়—তা হল সবচেয়ে ভাল দান।
সুতরাং, বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি হল দয়ালু, উদার এবং বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া। আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে এই ধরনের আর্থিক সাহায্যের প্রায়ই প্রয়োজন হয় এবং তা উপেক্ষা করা উচিৎ নয়। একই সঙ্গে, যে কেউ সাহায্য চায় তাদের যে দিতেই হবে এমন কোন কারণ নেই। আপনার অর্থ কিভাবে ব্যয় করলে ঈশ্বর সবচেয়ে খুশি হবেন এবং আপনার পরিবার ও অন্যদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য হবে তা বিবেচনা করুন। (১ তীমথিয় ৫:৮; যাকোব ২:১৫, ১৬) অন্যদের প্রয়োজন সম্বন্ধে সচেতন হতে এবং সাহায্য করতে চেষ্টা করতে যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করুন—আত্মিকভাবে এবং পার্থিব বিষয়ের দিক দিয়ে। ইব্রীয় ১৩:১৬ পদ যেমন বলে: “উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য ভুলিও না, কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।” (g93 6/8)