ছেলেমেয়েদের যা প্রয়োজন তাদের তা জোগানো
এটা স্পষ্ট যে, ছোট ছেলেমেয়েদের যথেষ্ট মনোযোগের প্রয়োজন আর স্পষ্টতই তাদের মধ্যে অনেকেই যা প্রয়োজন তারা তা পায় না। আজকের ছোট ছেলেমেয়েদের অবস্থা ঠিক এইরকমই। “আমাদের ছোট ছেলেমেয়েদের কখনোই তাদের পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন রাখবেন না, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা ও ব্যবহারিক প্রজ্ঞা থেকে বঞ্চিত করবেন না,” একজন গবেষিকা দুঃখ করে বলেন, যা কানাডার টরেন্টোর দ্যা গ্লোব আ্যন্ড মেইল সংবাদপত্রে উদ্ধৃতি করা হয়েছিল।
কোন ভুল করা হয়েছে? সমস্যাটাকে কি কিছুটা হলেও একেবারে ছোট ছেলেমেয়েদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার গুরুত্বকে উপলব্ধি করার একটা ব্যর্থতা বলা যেতে পারে? “আমাদের সকলের শেখা প্রয়োজন যে, কীভাবে বাবামা হওয়া যায়,” একজন মনোবিজ্ঞানী ব্যাখ্যা করেন, যিনি স্বল্প আয়প্রাপ্ত মহিলাদের কীভাবে তাদের নবজাত শিশুর যত্ন নিতে হয়, তা শিখতে সাহায্য করেন। “আর আমাদের বোঝা দরকার যে, আমাদের বাচ্চাদের সঙ্গে এখন আমরা যে-সময় ব্যয় করি, তাতে অনেক অনেক প্রতিদান পাওয়া যাবে।”
এমনকি বাচ্চাদেরও নিয়মিত নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে। আর তা শুধু মাঝেমধ্যে কয়েক মিনিটের জন্য নয় কিন্তু নিয়মিতভাবে—হ্যাঁ, সারাদিন ধরে। ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একেবারে বাচ্চা থাকতেই, সময় ব্যয় করা তাদের গঠনমূলক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রস্তুতির প্রয়োজন
তাদের গুরু দায়িত্ব পরিপূর্ণ করার জন্য বাবামাদের তাদের ভাবী বাচ্চার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। তারা পূর্বেই পরিকল্পনা করার গুরুত্বের বিষয়ে যিশু খ্রিস্টের উল্লেখিত একটা নীতি থেকে শিখতে পারেন। তিনি বলেছিলেন: “দুর্গ নির্ম্মাণ করিতে ইচ্ছা হইলে তোমাদের মধ্যে কে অগ্রে বসিয়া ব্যয় হিসাব করিয়া না দেখিবে?” (লূক ১৪:২৮) সন্তান মানুষ করে তোলা—যেটাকে প্রায়ই ২০ বছরের একটা প্রকল্প বলা হয়—একটা দূর্গ নির্মাণ করার চেয়ে আরও বেশি জটিল। তাই, একটি সন্তানকে সফলভাবে মানুষ করে তোলার জন্য একটা পরিকল্পনার প্রয়োজন, ঠিক যেমন একটা কাজের জন্য তা করা প্রয়োজন।
প্রথমে, বাবামা হওয়ার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মানসিক এবং আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানিতে ২,০০০ গর্ভবতী মহিলার ওপর করা একটা গবেষণা দেখায় যে, যে-ছেলেমেয়েদের মায়েরা একটি পরিবার গড়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন, তাদের বাচ্চারা সন্তান চাননি এমন মায়েদের বাচ্চার চেয়ে—আবেগগত এবং শারীরিক দিক দিয়ে—আরও অনেক স্বাস্থ্যবান। অন্যদিকে, একজন গবেষক আনুমানিক হিসেব করে দেখেন যে, যে-মহিলা অটুট সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে, তার চেয়ে যে-মহিলা সমস্যাপূর্ণ বিয়ের ফাঁদে আটকা পড়েছেন, তার আবেগগত অথবা শারীরিক দিক দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চার জন্ম দেওয়ার শতকরা ২৩৭ ভাগ বিরাট ঝুঁকি রয়েছে।
তা হলে, স্পষ্টতই একটি সন্তানের সফল বৃদ্ধির জন্য বাবারা গুরুত্বপূর্ণ। ডা. থমাস ভারনি মন্তব্য করেন: “একজন বাবা তার গর্ভবতী স্ত্রীর সঙ্গে যে-দুর্ব্যবহার করেন অথবা তাকে অবহেলা করেন, সেগুলোর চেয়ে খুব কম বিষয়ই আছে, যা একটি সন্তানের জন্য আবেগগত ও শারীরিক দিক দিয়ে অত্যন্ত বিপদজনক।” বস্তুত, প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, একটি সন্তান যে-উত্তম উপহার পেতে পারে, তা হল এমন একজন বাবা, যে তার মাকে ভালবাসে।
মায়ের রক্তপ্রবাহে গুপ্ত থাকা, চিন্তা ও চাপের সঙ্গে জড়িত হরমোন ভ্রূণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু এটা মনে করা হয় যে, আকস্মিক নেতিবাচক আবেগ অথবা চাপপূর্ণ ঘটনাগুলোর চেয়ে শুধুমাত্র মায়ের প্রচণ্ড অথবা দীর্ঘস্থায়ী চিন্তা অনেক বিপদজনক। গর্ভবতী মা তার অজাত শিশুর বিষয়ে কেমন বোধ করেন, সেটাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করা হয়।a
আপনি যদি গর্ভবতী হন এবং আপনার স্বামী যদি সহযোগী না হন অথবা মা হওয়ায় আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ বোধ করেন, তা হলে কী? এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় যে, বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে একজন স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ায় বিষণ্ণ বোধ করতে পারেন। কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন যে, আপনার সন্তানের কোনো দোষ নেই। তা হলে, কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও আপনি এক শান্ত মনোভাব বজায় রাখতে পারেন?
ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে দেওয়া বিজ্ঞ পরামর্শ লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে সাহায্য করেছে। এটি বলে: “সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” আপনি অবাক হবেন যে, কীভাবে এই কথাগুলো প্রয়োগ করা আপনাকে এই পরামর্শ অনুসরণ করতে সাহায্য করে: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না।” (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) আপনি সৃষ্টিকর্তার সাহায্য অনুভব করতে পারবেন, যিনি আপনার যত্ন নিতে পারেন।—১ পিতর ৫:৭.
কোনো অসাধারণ অভিজ্ঞতা নয়
জন্ম দেওয়ার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ, কিছু নতুন মা অবর্ণনীয় দুঃখ এবং জড়তা ভোগ করে থাকে। এমনকি যে-মহিলা বাচ্চা হওয়ায় অত্যন্ত খুশি ছিলেন, তিনিও বিষণ্ণ হয়ে পড়তে পারেন। এই ধরনের মনের অস্থিরতা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ জন্ম দেওয়ার পর স্ত্রীলোকেরা তাদের হরমোনে বিরাট পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এ ছাড়া, একজন নতুন মার পক্ষে মাতৃত্বের যে-চাহিদা রয়েছে, সেটার দ্বারা জর্জরিত হওয়াও স্বাভাবিক বিষয়—খাওয়ানো, ডায়াপার বদলানো এবং বাচ্চার যত্ন নেওয়া, যার কোনো সময়জ্ঞান নেই।
একজন মা মনে করতেন যে, তার বাচ্চা শুধু তাকে জ্বালাতন করার জন্যই কাঁদত। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, জাপানের একজন শিশু তত্ত্বাবধায়ক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন: “সন্তান লালনপালনকরার সঙ্গে সঙ্গে যে-চাপ আসে, তা থেকে কেউই মুক্ত নন।” এই বিশেষজ্ঞের মতানুসারে, “একজন মায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, কখনও নিজেকে বিচ্ছিন্ন না করে রাখা।”
এমনকি একজন মা কখনও কখনও বিষণ্ণ বোধ করলেও, তিনি তার সন্তানকে তার মনের অস্থিরতার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। টাইম পত্রিকা রিপোর্ট করে: “যে-বিষণ্ণ মায়েরা তাদের বাচ্চাদের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে এবং আমোদপ্রমোদপূর্ণ খেলাধূলায় রত থেকে তাদের বিষাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, তারা তুলনামূলকভাবে আরও আনন্দপূর্ণ প্রকৃতির মানসিক কার্যক্রমসম্পন্ন সন্তান লাভ করেছিল।b
একজন বাবা যেভাবে সাহায্য করতে পারেন
একটি শিশুর প্রয়োজনীয় সাহায্য এবং সমর্থন জোগানোর জন্য বাবা সবচেয়ে উত্তম অবস্থানে রয়েছেন। বাচ্চা যখন মাঝরাতে কাঁদে, তখন অনেক ক্ষেত্রে বাবা বাচ্চার প্রয়োজনগুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে পারেন, যাতে তার সঙ্গী ঘুমাতে পারেন। বাইবেল বলে: “তাদের দুজনের জীবনে স্বামীদের সর্বদা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে বিবেচনাপূর্বক বাস করতে হবে।”—১ পিতর ৩:৭, দ্যা যিরূশালেম বাইবেল।
যিশু খ্রিস্ট স্বামীদের জন্য অনুকরণযোগ্য নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি এমনকি তার অনুসারীদের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন। (ইফিষীয় ৫:২৮-৩০; ১ পিতর ২:২১-২৪) তাই, যে-স্বামীরা সন্তান লালনপালন করার সময় কিছু পদক্ষেপ নিতে গিয়ে নিজেদের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে, তারা যিশুকে অনুকরণ করে। বস্তুত, সন্তান লালনপালন করা এক যৌথ কাজ, এক সহযোগিতাপূর্ণ প্রচেষ্টা, যেখানে বাবামা উভয়েরই অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।
এক যৌথ, সহযোগিতাপূর্ণ প্রচেষ্টা
“একজন স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি যে, কীভাবে আমাদের মেয়েকে লালনপালন করা উচিত,” দুই বছর বয়সী মেয়ের বাবা ইয়োচিরো বলেন। “প্রতিবার যখন কোনো বিষয় দেখা দেয়, তখন কীভাবে আমাদের অগ্রসর হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে আমরা কথা বলি।” ইয়োচিরো বুঝতে পারেন যে, তার স্ত্রীর বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে আর তাই তিনি যখন সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে বের হন, তখন প্রায়ই তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যান।
প্রাচীনকালে, পরিবারগুলো যখন সাধারণত বড় ছিল এবং মিলেমিশে বাস করত, তখন বাবামারা সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য বড় ছেলেমেয়ে এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে সাহায্য পেত। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, জাপানের কাওয়াসাকির চাইল্ড-রেয়ারিং সাপোর্ট সেন্টার এর একজন কর্মী বলেন: “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়েরা স্বস্তি পাবে, যখন তারা বিষয়টা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলবে। শুধু সামান্য সাহায্য পেয়েই অনেক মা বিভিন্ন বাধার মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছে।”
পিতামাতা (ইংরেজি) পত্রিকা বলে যে, বাবামাদের “সেই সমস্ত লোকের নেটওয়ার্ক প্রয়োজন, যাদের কাছে তারা তাদের উদ্বিগ্নতার কথা বলতে পারে।” এই ধরনের নেটওয়ার্ক কোথায় পাওয়া যেতে পারে? খোলাখুলি মনের হয়ে এবং তাদের নিজেদের বাবামা অথবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কথা শুনে, নতুন মা এবং বাবারা অনেক উপকার পেতে পারে। অবশ্য, দাদুদিদিমাদের এই বিষয়টা উপলব্ধি করা উচিত যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব নতুন দম্পতির।c
নতুন বাবামারা আরেকটা যে-উৎসের ওপর নির্ভর করতে পারে, তা হল ধর্মীয় সহবিশ্বাসীরা। যিহোবার সাক্ষিদের স্থানীয় মণ্ডলীতে আপনি হয়তো এমন লোকেদের খুঁজে পাবেন, যাদের সন্তান লালনপালন করার ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যারা আপনার সমস্যাগুলোর কথা শুনতে ইচ্ছুক। তারা কিছু সাহায্যকারী পরামর্শ দিতে পারে। প্রায়ই, আপনি সেই সমস্ত ‘প্রাচীনাদিগের’ সাহায্য চাইতে পারেন, বাইবেলে যাদের খ্রিস্টীয় জীবনযাপনে অনেক অভিজ্ঞ বলা হয়েছে এবং যারা যুবতীদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক।—তীত ২:৩-৫.
এটা ঠিক যে, বাবামারা যখন অন্যদের মতামত শোনে, তখন তাদের বাছাই করতে সমর্থ হতে হবে। ইয়োচিরো বলেন, “হঠাৎ করে আমাদের চারপাশের লোকেরা শিশু শিক্ষায় বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে।” তার স্ত্রী তাকাকো স্বীকার করেন: “অন্যদের দেওয়া পরামর্শ শুনে প্রথম প্রথম আমি বিরক্ত হতাম কারণ আমার মনে হতো যে, একজন মা হিসেবে আমার অনভিজ্ঞতার বিষয়ে তারা সমালোচনা করছে।” কিন্তু, অন্যদের কাছ থেকে শেখার মাধ্যমে অনেক স্বামী এবং স্ত্রী, তাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানোর ক্ষেত্রে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য সাহায্য পেয়েছে।
সবচেয়ে উত্তম সাহায্য নাগালের মধ্যেই রয়েছে
এমনকি আপনাকে সাহায্য করার জন্য কাউকে না পাওয়া গেলেও শক্তির এক নির্ভরযোগ্য উৎস রয়েছে। তিনি হলেন যিহোবা ঈশ্বর, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যাঁর চোখ এমনকি যারা পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে তাদের “পিণ্ডাকার” দেখতে পারে। (গীতসংহিতা ১৩৯:১৬) যিহোবা একবার তাঁর প্রাচীনকালের লোকেদের বলেছিলেন, যা তাঁর বাক্য বাইবেলে লিপিবদ্ধ রয়েছে: “স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে? আপন গর্ব্ভজাত বালকের প্রতি কি স্নেহ করিবে না? বরং তাহারা ভুলিয়া যাইতে পারে, তথাপি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাইব না।”—যিশাইয় ৪৯:১৫; গীতসংহিতা ২৭:১০.
না, যিহোবা বাবামাদের ভুলে যান না। বাইবেলে তিনি তাদের জন্য সন্তানদের লালনপালন করার বিষয়ে উত্তম নির্দেশাবলী দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে ঈশ্বরের ভাববাদী মোশি লিখেছিলেন: “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে।” এরপর মোশি বলেছিলেন: “এই যে সকল কথা [যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত যিহোবাকে ভালবাসার ও তাঁকে সেবা করার পরামর্শ] আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫-৭.
ঈশ্বরের বাক্যের এই নির্দেশনা থেকে আপনি কোন বিষয়টা পান? এটা কি নয় যে, আপনার সন্তানকে নির্দেশনা দেওয়া এক নিয়মিত ও চলমান প্রক্রিয়া, যা প্রতিদিন দেওয়া উচিত? আসলে আপনার সন্তানদের জন্য শুধু মাঝে মাঝে তথাকথিত গঠনমূলক সময়ের তালিকা করা যথেষ্ট নয়। যেহেতু ভাববিনিময় করার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো প্রায়ই হঠাৎ করে আসে, তাই নিয়মিতভাবে আপনাকে আপনার ছেলেমেয়েদের নাগালের মধ্যে রাখা প্রয়োজন। তা করলে আপনার পক্ষে বাইবেলের এই আদেশ পরিপূর্ণ করা সম্ভবপর হবে: “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও।”—হিতোপদেশ ২২:৬.
ছোট ছেলেমেয়েদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত তাদের সামনে জোরে জোরে পড়া। বাইবেল আমাদের বলে যে, প্রথম শতাব্দীর শিষ্য তীমথিয় ‘শিশুকাল অবধি পবিত্র শাস্ত্রকলাপ জ্ঞাত ছিলেন।’ তাই, স্পষ্টতই তিনি যখন একেবারে ছোট ছিলেন, তখন তার মা উনীকী এবং দিদিমা লোয়ী তার সামনে জোরে জোরে পড়ত। (২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৪, ১৫) আপনার শিশুর সঙ্গে আপনি যখন থেকে কথা বলা শুরু করেন, তখন থেকেই তা শুরু করা উত্তম। কিন্তু, আপনি কী পড়তে পারেন এবং কীভাবে আপনি এমনকি একটা শিশুকে সবচেয়ে উত্তম শিক্ষা দিতে পারেন?
সন্তানকে আপনার বাইবেল পড়া শুনতে দিন। স্পষ্টতই, তা তীমথিয়ের সামনে পড়া হয়েছিল। এমন বইও রয়েছে, যেগুলো ছোট ছেলেমেয়েদের রঙিন চিত্রের মাধ্যমে বাইবেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এগুলো একটি সন্তানকে বাইবেলের শিক্ষাগুলো মনের চোখ দিয়ে দেখতে সাহায্য করে। যেমন, আমার বাইবেলের গল্পের বই এবং সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন বইগুলো রয়েছে। এই ধরনের বইয়ের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ছোট ছেলেমেয়ে বাইবেলের যে-শিক্ষাগুলো লাভ করেছে, সেগুলো তাদের মন এবং হৃদয়ের ওপর ছাপ ফেলেছে।
বাইবেল বলে, “সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার, গর্ব্ভের ফল তাঁহার দত্ত পুরস্কার।” (গীতসংহিতা ১২৭:৩) আপনার সৃষ্টিকর্তা আস্থা সহকারে আপনাকে “অধিকার” অর্থাৎ এক প্রেমময় বাচ্চা দিয়েছেন, যে গর্ব এবং আনন্দের উৎস হতে পারে। ছেলেমেয়ে মানুষ করে তোলা, বিশেষভাবে তাদেরকে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসাকারী করে তোলা সত্যিই এক পুরস্কারজনক কেরিয়ার! (g০৩ ১২/২২)
[পাদটীকাগুলো]
a শুধুমাত্র স্ট্রেস হরমোনই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে নিকোটিন, মদ এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য ভ্রূণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের এই ধরনের যেকোনো বিপদজনক উপাদান থেকে দূরে থাকা উচিত। এ ছাড়া, ভ্রূণের ওপর ওষুধের প্রভাবের বিষয়েও ডাক্তারের সঙ্গে চেক করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
b একজন মা যদি গভীর দুঃখে দুঃখার্ত হন এবং নিরাশ হয়ে পড়েন ও সেইসঙ্গে বাচ্চা এবং এই জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করেন, তা হলে তিনি হয়তো পোস্টপারটাম ডিপপ্রেশনে ভুগছেন। যদি তা-ই হয়, তা হলে তার ধাত্রীবিদ্যাবিশারদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। দয়া করে ২০০২ সালের ২২শে জুলাই সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১৯-২৩ পৃষ্ঠা এবং ২০০৩ সালের ৮ই জুন সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ২১-২৩ পৃষ্ঠা দেখুন।
c দয়া করে ১৯৯৯ সালের ২২শে মার্চ সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “দাদুদিদিমা—তাদের আনন্দ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো” প্রবন্ধটি পড়ুন।
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
অজাত শিশুর প্রতি মায়ের অনুভূতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যদিও একজন নতুন মা সন্তান জন্মদানের পর মনের অস্থিরতা ভোগ করতে পারেন কিন্তু তার বাচ্চা যাতে ভালবাসা এবং নিরাপদ বোধ করে, তার জন্য তিনি অনেক কিছু করতে পারেন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
সন্তানের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে বাবাদেরও দায়িত্ব রয়েছে
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
সন্তানের সামনে পড়া শিশুকাল থেকেই শুরু করা উচিত