আমাদের একটি নূতন জগৎ প্রয়োজন
আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন। আপনি যা দেখেন তা কি পছন্দ করেন?
হয়তো ব্যক্তিগতভাবে আপনার একটি সুন্দর বাসস্থান আছে, একটি মনোহর, পরিচ্ছন্ন জায়গায়। আপনার হয়তো একটি সচ্ছল কাজও আছে যা আপনি পছন্দ করেন। অধিকন্তু, আপনি ও আপনার প্রিয়জনেরা হয়তো সুস্বাস্থ্য উপভোগ করতে পারেন। মোটমুটিভাবে, আপনি আপেক্ষিকভাবে সুরক্ষিত ও সুখি বোধ করতে পারেন।
কিন্তু অন্য এলাকা, যে দেশে আপনি বাস করেন সেখানকার অন্য জায়গা, অন্য দেশের কথা চিন্তা করুন। সারা পৃথিবীর দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন। আপনি কি একটি মনোরম দৃশ্য দেখতে পান? সত্যই কি তা পরিতৃপ্তি, শান্তি ও সচ্ছলতার চিত্র?
এই শতাব্দীর প্রথম দিকের কিছু ভবিষ্যদ্বানী অনুযায়ী, এতদিনে বিজ্ঞানের উচিৎ ছিল সমস্ত প্রধান রোগব্যাধি দূর করে দেওয়া, সকলের জন্য যথেষ্ট খাদ্য উৎপন্ন করা, ও একটি শান্তিময় যুগ নিয়ে আসা। কিন্তু বাস্তবিকরূপে কি হয়েছে?
শান্তি যে আমাদের গ্রহটিকে এড়িয়ে চলেছে তা অনুমান করতে খুব বেশী চিন্তাশক্তির প্রয়োজন নেই। “বাইবেলের সময় থেকে, লোকেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খড়্গ ভেঙ্গে লাঙ্গলের ফাল গড়তে,” লেখেন মাইকেল রেনার স্টেট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড ১৯৯০ বইতে। “এই উপদেশ আর কোন সময়ে এত উপযুক্ত হয়নি। সামরিক শক্তি অর্জনের জন্য ক্রমাগত দৌড় মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার মুখে নিয়ে এসেছে।”
বহু গৃহযুদ্ধের ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায় যা বিশ্বব্যাপী বহু দেশে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু নিয়ে আসে। একটি সুত্র অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালেও ২২ যুদ্ধ চলছিল।a সেই যুদ্ধে কতজন মারা গেছে? সেই বছর অন্তর্গত করলে, “১৯৮৮ সালের সমস্ত যুদ্ধে মৃত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ সংখ্যা ৪,৬৪৫,০০০। মৃতদের মধ্যে ছিয়াত্তর শতাংশ অসামরিক ব্যক্তি,” জানায় সেন্ট লুই পোস্ট-ডিস্প্যাচ।
বর্তমানে জাগতিক ঘটনার গতিবিধি কি ভবিষ্যতে এক শান্তিপূর্ণ জগতের ইঙ্গিত দেয়? “আলোচনা করা হচ্ছে যে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটতে চলেছে ও শান্তিকে আর একটি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আর একবার দেখুন,” ক্যালিফোরনিয়া, ইউ. এস. এ.-র সান হোসে মারকারি নিউজ-এর একটি প্রবন্ধ বলে। “তৃতীয় বিশ্বে, যুদ্ধ ঝড়ের ন্যায় এগিয়ে চলেছে, নিবৃত্তির আশা খুবই কম। এগুলি পৃথিবীর গোপন যুদ্ধ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নিজের লোকেদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে: জমি, ধর্ম, জাতিগত ও উপজাতিগত মতভেদ, রাজনৈতিক ক্ষমতা, এমনকি মাদকদ্রব্য নিয়েও রক্তাক্ত সংঘর্ষ। . . . আফ্রিকার কেপ হর্ন থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ লোক তাদের গৃহ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। শষ্য বপন করা হয় না, স্বাস্থ্যকেন্দ্র আক্রমণ করা হয়, গৃহপালিত পশু ধ্বংস করা হয়, ছেলেমেয়েদের সামনে তাদের পিতামাতাদের নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়, ১০-বছর-বয়স্ক ছেলেদের বাহক ও তার পর সৈনিক হতে বাধ্য করা হয়, যুবতী মেয়েদের ধর্ষন করা হয়। এই সমস্ত ভুলে যাওয়া দেশগুলিতে যুদ্ধ এক ধ্বংসের ও সামাজিক বিশৃঙ্খলতার চিহ্ন রেখে গেছে যা হয়তো তারা সম্পূর্ণরূপে কখনও কাটিয়ে উঠতে পারবে না। . . . গবেষনা অনুযায়ী ১৯৮০-র দশক ইতিহাসে অন্য যে কোন দশকের চেয়ে বেশী যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে।”
অনেকে যারা উন্নত দেশে পালাতে সক্ষম হয়, হিংসাত্মক অপরাধের দ্বারা তাদের শান্তির আশা চূর্ণ হতে দেখে। “১৯৮০-র দশকে [যুক্ত রাষ্ট্রে] অপরাধের জোয়ার অবাধে এগিয়ে চলেছে যদিও আশা করা হয়েছিল যে তা কিছুটা কমবে,” ইউ. এস. নিউস অ্যাণ্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট জানায়। “যে কোন একটি বছরে: হত্যা, আক্রমণ ও চুরির মত ৮·১ মিলিয়ন গুরুতর অপরাধ ঘটে। . . . সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় এই রক্তপাত কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ও আকস্মিক হয়েছে। ইউ. এস. বূরো অফ জাস্টিস্ স্ট্যাটিস্টিক্স অনুমান করে যে যদি বর্তমান হারে অপরাধ চলতে থাকে তাহলে এখন যারা ১২ বছর বয়স্ক তাদের ৮৩ শতাংশ বাস্তবিক অথবা অপরাধের চেষ্টার দ্বারা আক্রান্ত হবে। . . . সমাজে ন্যয়ভঙ্গকারীদের শাস্তি তৎক্ষণাৎ অথবা নিশ্চিৎ নয়। সারা দেশব্যাপী পুলিশ শুধুমাত্র ৫টির মধ্যে ১টি গুরুতর অপরাধের সমাধান করতে পারে।” জগৎব্যাপী পরিস্থিতি একই রকম। ইউ. এন. জেনেরাল অ্যাসেম্বলী জানায় যে “জগতের বিভিন্ন অংশে অপরাধের ঘটনা ও গুরুত্ব উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।”
কিন্তু যদি সমস্ত যুদ্ধ, অস্ত্রসস্ত্র ও অপরাধ অবিলম্বে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তবুও জীবন বিপদমুক্ত হবে না। “সাংঘাতিক দারিদ্রতা, বিস্তৃত আকারে রোগব্যাধি, ও নিরক্ষরতা উন্নতিশীল দেশগুলিতে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোকের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে,” ওয়ার্ল্ডওয়াচ ইন্সটিটিউট মন্তব্য করে তাদের স্টেট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড ১৯৯০ রিপোর্টে। “সমস্ত মনুষ্যজাতি—ধনী অথবা দরিদ্র, সামরিক ক্ষেত্রে ক্ষমতাশালী অথবা ক্ষমতাহীন—পরিবেশ দূষনের ভয়ের ছায়া তাদের প্রত্যেকের সামনেই আছে।”
হ্যাঁ, যে জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থাগুলি যার ওপর সমস্ত মানবজাতি নির্ভরশীল তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। “সমগ্রভাবে পৃথিবী [১৯৭০ দশকের চেয়ে] অধিকতর খারাপ অবস্থায় রয়েছে,” সম্পাদক পল হফম্যান লেখেন ডিস্কভার পত্রিকায়। “আমাদের জঞ্জালাধার উপচে পড়ছে। গ্রীনহাউস বাষ্প আবহাওয়াকে উত্তপ্ত করে তুলছে। এই গ্রহটির ওজোন্ স্তর নিঃশেষ করা হচ্ছে। মরুভূমি বৃদ্ধি পাচ্ছে, চিরহরিৎ অরণ্যের অবসান ঘটছে। উদ্ভিদ ও প্রাণী জাতি ঘন্টায় ১৭টি এই হারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।”
তার সঙ্গে যোগ দিন জল ও স্থলের ক্রমাগত দূষিত হওয়া। পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, উর্ব্বর জমির ওপর ক্রমাগত বাড়ি অথবা রাস্তা তৈরী করা হচ্ছে, যার জন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বেড়ে চলেছে। পরিষ্কার জলের সরবরাহের ঘাটতি ও অ্যাসিড বর্ষন সম্বন্ধে চিন্তা করুন। তার সঙ্গে যোগ দিন সাংঘাতিক ভাবে দূষিত বাতাস ও বিষক্রিয় জঞ্জালের অস্বাস্থ্যকর প্রভাব। সর্বসমক্ষে, মানবজাতির ধ্বংস আসন্ন। আমরা যেই হই বা যেখানেই থাকি না কেন, বেঁচে থাকার জন্য আমাদের বাতাস, খাদ্য, জল, ও অন্যান্য সামগ্রী প্রয়োজন। এইসব আমাদের দরকার অদূষিত অবস্থায় ও যথেষ্ট পরিমাণে। ইতিমধ্যেই, “দরিদ্রদের জন্য আশির দশক অপ্রশমিত দুর্ভাগ্য নিয়ে এসেছে, যৎসামান্য খাদ্য ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি করেছে,” জানায় স্টেট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড ১৯৯০।
মানবজাতি এতরকম ভাবে জর্জরিত, কেউ কি অস্বীকার করতে পারবে যে একটি নূতন জগতের প্রয়োজন রয়েছে? কিন্তু তা কি সত্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? কোন উৎস থেকে সেই রকম জগৎ আসতে পারে? আমাদের গৃহটিকে নিরাপদ ও সুন্দর করে তোলার আগে কোন বাধাগুলি অতিক্রম করতে হবে? আসুন আমরা দেখি। (w90 10/1)
[পাদটীকাগুলো]
a “যুদ্ধের” ব্যাখ্যা এইভাবে দেওয়া হয় যে ইহা একটি দ্বন্দ্ব যার সঙ্গে অন্তত একটি সরকার জড়িত আছে ও যাতে বছরে অন্তত ১,০০০ লোক নিহত হয়।
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
WHO photo by P. Almasy