সময় ও অনন্তকাল—এই বিষয়ে আমরা আসলে কতটুকু জানি?
“মানুষের জীবনে সময়কে সবচেয়ে রহস্যময় বিষয় বলে মনে হয়,” একটা এনসাইক্লোপিডিয়া বলে। সত্যিই, সোজা কথায় সময়ের সংজ্ঞা দেওয়া খুবই কঠিন। আমরা বলতে পারি যে সময় “চলে যাচ্ছে,” “কেটে যাচ্ছে,” “বয়ে যাচ্ছে,” এমনকি এও বলি যে আমরা নিজেরা “সময়ের প্রবাহে” ভেসে চলেছি। কিন্তু, আমরা আসলে কোন্ বিষয়ে কথা বলছি তা আমরা নিজেরাই ভাল করে জানি না।
সময়ের সংজ্ঞা হল, “দুটো ঘটনার মধ্যবর্তী ব্যবধান।” কিন্তু, আমাদের অভিজ্ঞতা দেখায় যে সময় কোন ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়; কিছু ঘটুক আর না ঘটুক, সময় তার নিজের মতোই বয়ে চলে। একজন দার্শনিক দাবি করেছিলেন যে সময় বলে আদৌ কিছু নেই, এটা শুধু কল্পনা। কিন্তু যে সময়কে ঘিরে আমাদের জীবনে এত অভিজ্ঞতা, এত ঘটনা রয়েছে সেটা কি শুধুই আমাদের কল্পনা?
সময় সম্পর্কে বাইবেল কী বলে
বাইবেলে সময়ের কোন সংজ্ঞা দেওয়া নেই, যা বোঝায় যে সময় সম্পর্কে পুরোপুরি বোঝার ক্ষমতা মানুষের নেই। এটা মহাশূন্যের অন্তহীন বিস্তারের মতো যেটাকে পুরোপুরি বোঝা আমাদের কাছে কঠিন মনে হয়। অতএব, এটা পরিষ্কার যে সময় হল এমন অনেক বিষয়গুলোর একটা যা শুধু ঈশ্বরই পুরোপুরি বুঝতে পারেন কারণ কেবল তিনি একা “অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল” পর্যন্ত আছেন।—গীতসংহিতা ৯০:২.
বাইবেলে সময়ের সংজ্ঞা না থাকলেও, সময় বলে যে আসলেই কিছু আছে এটা তা বর্ণনা করে। শুরুতেই বাইবেল আমাদের জানায় যে ঈশ্বর সময় নির্ধারক হিসেবে “জ্যোতির্গণ”—সূর্য, চাঁদ ও অনেক অনেক তারা সৃষ্টি করেছিলেন, যেগুলো ছিল “চিহ্নের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিবসের ও বৎসরের জন্য।” বাইবেলের অনেক ঘটনাতেই নির্দিষ্ট সময়ের কথা উল্লেখ আছে। (আদিপুস্তক ১:১৪; ৫:৩-৩২; ৭:১১, ১২; ১১:১০-৩২; যাত্রাপুস্তক ১২:৪০, ৪১) এছাড়াও বাইবেল সময়কে এমন কিছু বলে বর্ণনা করে যেটাকে অনন্তকাল অর্থাৎ চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে বুদ্ধির সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।—ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬.
অনন্ত জীবন কি যুক্তিসংগত?
সময় আসলে কী তা বুঝতে চেষ্টা করা যেমন খুবই শক্ত, তেমনই অনন্ত জীবন অথবা চিরকাল বেঁচে থাকার ধারণাও অনেকের কাছে খুবই জটিল। এর একটা কারণ হতে পারে যে সময় সম্বন্ধে আমাদের অভিজ্ঞতা শুধু জন্ম নেওয়া, বড় হওয়া, বুড়ো হওয়া এবং মারা যাওয়ার চক্রের মধ্যেই বাঁধা। তাই, আমরা সময় বয়ে চলার মানে বলতে বুড়ো হওয়ার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বুঝে থাকি। অনেকের কাছে, অন্যভাবে চিন্তা করার মানে হবে সময়ের প্রকৃত ধারণাকে লঙ্ঘন করা। তারা হয়তো জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘সমস্ত প্রাণীকূল যেখানে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার অধীন সেখানে মানুষ কেন ব্যতিক্রম হতে যাবে?’
এই যুক্তিতে, যে বিষয়টাকে প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয় তা হল মানুষেরা ইতিমধ্যেই বাকি সমস্ত সৃষ্টির চেয়ে অনেক দিক দিয়ে আলাদা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষের যে বুদ্ধি আছে তা পশুপাখিদের নেই। তাদের সৃজনীশক্তি নেই বলে তারা সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা চলে। তাদের না আছে কোন শিল্প বোধ, না আছে প্রেম ও উপলব্ধি করার ক্ষমতা যা মানুষের মধ্যে রয়েছে। জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার জন্য এই বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতাগুলোকে যদি মানুষের মধ্যে এত বেশি করে দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে, তাদের জীবনের জন্য কেন আরও বেশি সময় দেওয়া সম্ভব নয়?
অন্যদিকে, এটা কি অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয় যে গাছপালা, যাদের চিন্তা করার ক্ষমতা নেই তারা যদি কখনও কখনও হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকতে পারে তাহলে, বুদ্ধিবিশিষ্ট মানুষ কেন গড়ে মাত্র ৭০ কিংবা ৮০ বছর বেঁচে থাকে? এটা কি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে একটা কচ্ছপ যার কোন সৃজনীশক্তি বা শিল্প বোধ নেই সে ২০০ বছরেরও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে অথচ মানুষ যাদের মধ্যে এই ক্ষমতাগুলো প্রচুররূপে আছে, তারা কচ্ছপদের চেয়ে অর্ধেকেরও কম সময় বেঁচে থাকে?
সময় ও অনন্তকালের বিষয়টা মানুষ যদিও পুরোপুরি বুঝতে পারে না, তবুও অনন্ত জীবনের প্রতিজ্ঞা বাইবেলের এক সুপ্রতিষ্ঠিত প্রত্যাশা। বাইবেলে “অনন্ত জীবন” কথা প্রায় ৪০ বারের মতো পাওয়া যায়। ঈশ্বরের ইচ্ছা যদি এটাই হয়ে থাকে যে মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকবে, তাহলে কেন তা ইতিমধ্যেই সত্যি হয়নি? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নটা আলোচনা করা হবে।