নামিবিয়ায় জীবন্ত রত্ন আছে!
আফ্রিকার দক্ষিণপশ্চিম উপকূলের ১৫০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে নামিবিয়া দেশ। দেশের পুরো উপকূল বালিয়াড়ি, পাথুরে ঢিবি এবং নুড়ি কাঁকরে ভরা সমভূমি। সমুদ্র সৈকতের এই পাথরগুলোর মধ্যে রংবেরঙের রত্ন লুকিয়ে আছে। কখনও কখনও সেখানে হীরেও পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে এই দামি পাথরগুলোর চেয়েও আরও দামি কিছু আছে। নামিবিয়ায় জীবন্ত রত্ন আছে, যারা হল বিভিন্ন উপজাতির লোকেরা।
নামিবিয়ার আদি অধিবাসীরা কৈসান ভাষায় কথা বলত। তাদের কথার বিশেষত্ব ছিল যে তারা টিক-টিক আওয়াজ করে কথা বলত। আজকে কালো চামড়ার দামারা গোত্র, খাটো আকৃতির শ্যামবর্ণের নামা গোত্র এবং বিখ্যাত জংলী শিকারীরা কৈসান ভাষায় কথা বলে। সম্প্রতি অনেক কালো চামড়ার লোকেরা নামিবিয়াতে এসে বাস করতে শুরু করেছে। তাদেরকে তিনটে প্রধান গোত্রে ভাগ করা যায়: ওভাম্বো (নামিবিয়ার সবচেয়ে বড় গোত্র), হেরারো এবং কাভাঙ্গো। এরপর উনিশ শতকে ইউরোপের লোকেরা নামিবিয়াতে এসে বাস করতে শুরু করে। আর মরুভূমির বালিতে হীরে পাওয়া যাওয়ার পর আরও অনেক লোকেরা এখানে এসে থাকতে শুরু করে।
নামিবিয়ার সব লোকেরাই গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাদের জন্যও ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে দান করেছেন ও অনন্ত জীবনের পথ খুলে দিয়েছেন। (যোহন ৩:১৬) অনেক উপজাতি থেকে হাজার হাজার লোক এর মধ্যেই পরিত্রাণের সংবাদে সাড়া দিয়েছেন। তাদেরকে জীবন্ত রত্নের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে কারণ তারা “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল” যাদেরকে যিহোবার উপাসনার জন্য তাঁর গৃহে জড়ো করা হচ্ছে।—হগয় ২:৭.
আধ্যাত্মিক খনন কাজের শুরু
নামিবিয়ায় ১৯২৮ সালে আধ্যাত্মিক রত্নের খনন কাজ শুরু হয়েছিল। ওই বছর ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা অফিস ওই দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকেদের জন্য ৫০,০০০ কপি বাইবেল বিষয়ক বই-পত্রিকা ডাকে পাঠিয়েছিল। এর পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে লিনি টেরন নামে একজন অভিষিক্ত বোন আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছিলেন। চার মাসের মধ্যে তিনি একা ওই বিরাট দেশে প্রচার করেন এবং আফ্রিকান, ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় ৬,০০০ এরও বেশি বাইবেল অধ্যয়নের সহায়ক বই লোকেদের কাছে অর্পণ করেছিলেন। এই সমস্ত কাজ জলে যায়নি।
উদাহরণ হিসেবে একজন জার্মান খনি-শ্রমিক বার্নার্ড বেডের কথাই ভাবুন। ১৯২৯ সালে তিনি একজন কৃষকের কাছ থেকে ডিম নিতে শুরু করেন যিনি ডিমগুলোকে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির একটা বইয়ের পৃষ্ঠা দিয়ে মুড়িয়ে পাঠাতেন। বার্নার্ড খুব মন দিয়ে প্রতিটা পৃষ্ঠা পড়তেন এবং ভাবতেন কারা এগুলো লিখেছে। শেষ পর্যন্ত তিনি একেবারে শেষের পাতা পেয়েছিলেন যেখানে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির জার্মান শাখা অফিসের ঠিকানা ছিল। বার্নার্ড আরও বইপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিলেন এবং এইভাবে নামিবিয়ায় তিনিই প্রথম সত্যকে নিজের করে নিয়েছিলেন।
পূর্ণ-সময়ের কর্মীরা আসেন
১৯৫০ সালে ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েড থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া চারজন মিশনারি নামিবিয়াতে আসেন। ১৯৫৩ সালের মধ্যে মিশনারিদের সংখ্যা আটজনে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার এক দম্পতি ডিক ও কোরেলি ওয়ালড্রনও ছিলেন, যারা এখনও এখানে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে চলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অন্যান্য দেশ থেকে বেশ কয়েকজন পূর্ণ-সময়ের রাজ্য ঘোষণাকারীরা নামিবিয়ার আধ্যাত্মিক রত্নের জন্য খনন করেছিলেন। অন্যান্য মিশনারিরা এবং সেইসঙ্গে মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুলের গ্র্যাজুয়েটদেরকেও নামিবিয়াতে পাঠানো হয়েছিল।
নামিবিয়ায় আধ্যাত্মিক অগ্রগতির আরেকটা কারণ হল বাইবেলের বইগুলোর অনুবাদ ও সেগুলোকে ছাপানো। আর এখানকার প্রধান প্রধান আঞ্চলিক ভাষাগুলোতে তা করা হয় যেমন, হেরারো, কোয়াঙ্গালি, কোয়ানিয়ামা, নামা/দামারা এবং ডোঙ্গা। ১৯৯০ সাল থেকে, রাজধানী উইন্ডহোকে একটা সুন্দর অনুবাদের অফিস চালু করা হয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবীদের থাকার জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যারেন ডেপিস যিনি তার স্বামীর সঙ্গে নামিবিয়ার বিভিন্ন জায়গায় পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচার কাজ করেছেন তিনি বলেন: “অনেক লোকেরা অবাক হয়ে যান যখন আমরা তাদের নিজেদের ভাষায় বইপত্র দিই, বিশেষ করে সেই ভাষাগুলোতে যেগুলোতে খুব কম বই-ই ছাপা হয়।”
রত্নগুলোকে চকচকে করা
নামিবিয়ায় কিছু রত্ন বার বার সাগরের ঢেউ ও বালির ঘষায় ঘষায় চকচকে হয়ে ওঠে। কিন্তু, এইরকম প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া জীবন্ত রত্ন তৈরি করতে পারে না। “পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ” করতে এবং খ্রীষ্টের মতো নতুন ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে অসিদ্ধ মানুষদের অনেক প্রচেষ্টা করতে হয়। (ইফিষীয় ৪:২০-২৪) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নামিবিয়ার অনেক উপজাতিদের রীতি হল পূর্বপুরুষদের উপাসনা করা। যারা পূর্বপুরুষদের উপাসনা করেন না তাদের ওপর প্রায়ই পরিবারের লোকেরা ও প্রতিবেশীরা অত্যাচার করে থাকেন। যখন লোকেরা বাইবেল থেকে শেখেন যে মৃতেরা “কিছুই জানে না” তখন তারা যেন এক অগ্নিপরীক্ষার সামনে পড়েন। (উপদেশক ৯:৫) কীভাবে?
হেরারো গোত্রের একজন সাক্ষি বলেন: “সত্যের পথে চলা খুবই কঠিন। আমি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিলাম বটে কিন্তু আমি যে বিষয়গুলো শিখছিলাম তা কাজে লাগাতে আমার বেশ সময় লেগেছিল। প্রথমে আমাকে যাচাই করতে হয়েছিল যে আমার পরম্পরাগত বিশ্বাসগুলো ছেড়ে দিলে আমার কোন ক্ষতি হবে কি না। উদাহরণ হিসেবে আমি বলতে পারি, গাড়ি চালানোর সময় যখনই আমি কোন কবরের পাশ দিয়ে গিয়েছি আমি না থেমে সোজা চলে গিয়েছি, কবরে পাথর দেওয়ার জন্য আমি থামিনি অথবা মৃতদের সম্মান দেখানোর জন্য আমার টুপি খুলিনি। আস্তে আস্তে আমার বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে যে মৃত পূর্বপুরুষদের উপাসনা না করলেও আমার কোন ক্ষতি হবে না। আজ আমি কত খুশি যে যিহোবার আশীর্বাদে আমি আমার পরিবার ও অন্যান্য আগ্রহী ব্যক্তিদের সত্য শেখাতে পারছি!”
আধ্যাত্মিক খনি-শ্রমিক দরকার
১৯৫০ সালে মিশনারিরা আসার আগে নামিবিয়াতে মাত্র একজন সুসমাচার প্রচারক ছিলেন। সেই সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে এখন ৯৯৫ জনে পৌঁছেছে। কিন্তু আরও অনেক কাজ করার আছে। কিছু কিছু এলাকায় বলতে গেলে প্রচার করাই হয়নি। আপনি কি এমন কোন জায়গায় গিয়ে সেবা করতে পারেন যেখানে উদ্যোগী রাজ্যের ঘোষণাকারীদের অনেক বেশি দরকার? তাহলে, দয়া করে নামিবিয়াতে আসুন এবং আরও আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে পেতে ও তাদেরকে চকচকে করে তুলতে আমাদের সাহায্য করুন।—প্রেরিত ১৬:৯ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
[Map/Pictures on page 26]
আফ্রিকা
নামিবিয়া
[Pictures]
নামিবিয়া হল সুন্দর সুন্দর রত্নের এক দেশ
[Credit Lines]
মানচিত্র: Mountain High Maps® Copyright © 1997 Digital Wisdom, Inc.; হীরে: Courtesy Namdek Diamond Corporation
[Pictures on page 26]
নামিবিয়ার সমস্ত উপজাতীয় গোত্রের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি এমন কোন জায়গায় গিয়ে সেবা করতে পারেন যেখানে রাজ্যের ঘোষণাকারীদের অনেক বেশি দরকার?