ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৫ ১/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭
  • ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার দ্বারা আপনার সন্তানদের যেভাবে রক্ষা করা যায়

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার দ্বারা আপনার সন্তানদের যেভাবে রক্ষা করা যায়
  • ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • গঠনমূলক মেলামেশা খোঁজ করা
  • মানিয়ে নেওয়ার চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করা
  • আমোদপ্রমোদের জোরালো আকর্ষণ
  • যিহোবার ওপর নির্ভর করুন
  • “আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই”
  • বাবামারা—আপনাদের সন্তানদের প্রেমের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দিন
    ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখান
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২২
  • আপনার পিতামাতার হৃদয়কে আনন্দিত করা
    আপনার পারিবারিক জীবন সুখী করা
  • বাবামায়েরা আপনাদের সন্তানদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ হোন
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৫ ১/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭

ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার দ্বারা আপনার সন্তানদের যেভাবে রক্ষা করা যায়

প্রতিদিন আমাদের দেহ যুদ্ধ করে চলেছে। দেহকে অসংখ্য ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র রোগজীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে হয়। আনন্দের বিষয় যে, আমাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই উত্তরাধিকারসূত্রে এক রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা পেয়েছি, যা আমাদের এই ধরনের আক্রমণ থেকে রক্ষা এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা করে।

একইভাবে খ্রিস্টানদের প্রথমে অশাস্ত্রীয় চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধগুলো এবং যে-চাপগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করতে দিতে পারে, সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। (২ করিন্থীয় ১১:৩) আমাদের মন ও হৃদয়ের ওপর এই দৈনন্দিন আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে।

এই ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আমাদের সন্তানদের জন্য বিশেষভাবে দরকার যেহেতু তারা সেই আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে জন্মায়নি, যা জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করতে পারে। (ইফিষীয় ২:২) সন্তানরা বেড়ে ওঠার সময় তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করা বাবামাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কীসের ওপর নির্ভর করে? বাইবেল ব্যাখ্যা করে: ‘সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তিনি আপন সাধুদের পথ সংরক্ষণ করেন।’ (হিতোপদেশ ২:৬, ৮) ঐশিক প্রজ্ঞা অল্পবয়সীদের পথকে সুরক্ষা করতে পারে, তা না হলে তারা ক্ষতিকর মেলামেশা, সঙ্গীসাথিদের চাপ অথবা অনিষ্টকর আমোদপ্রমোদের কাছে নতি স্বীকার করতে পারে। কীভাবে বাবামায়েরা যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করতে এবং ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা গেঁথে দিতে পারে?

গঠনমূলক মেলামেশা খোঁজ করা

স্বাভাবিকভাবেই কিশোর-কিশোরীরা অন্য কিশোর-কিশোরীদের সাহচর্য পছন্দ করে কিন্তু শুধু অনভিজ্ঞদের সঙ্গেই মেলামেশা করা ঐশিক প্রজ্ঞা অর্জন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে না। “বালকের হৃদয়ে অজ্ঞানতা বাঁধা থাকে,” হিতোপদেশ সতর্ক করে। (হিতোপদেশ ২২:১৫) তা হলে, কীভাবে কিছু বাবামা মেলামেশার ক্ষেত্রে ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে তাদের সন্তানদের সাহায্য করেছে?

ডনa নামে একজন বাবা বলেছিলেন: “আমাদের ছেলেরা তাদের বয়সী বন্ধুদের সঙ্গে যথেষ্ট সময় ব্যয় করত, তবে অধিকাংশ সময় আমাদের ঘরে ও আমাদের উপস্থিতিতেই। আমাদের ঘরে সবসময় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের আসা যাওয়া ছিল, যাদের আমরা খাওয়াতাম এবং এমন পরিবেশ তৈরি করতাম যেন তারা সহজ বোধ করে। আমাদের সন্তানরা যাতে উপভোগ করতে পারে সেইজন্য আমরা এক নিরাপদ পরিবেশ জোগাতে গিয়ে আমাদের বাড়িতে হইচই সহ্য করতাম।”

ব্রায়েন এবং মেরির তিনটে সন্তান আছে কিন্তু তারা খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে যে, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সবসময় সহজ ছিল না। তারা বলেছিল: “আমাদের মণ্ডলীতে আমাদের মেয়ে জেনের সঙ্গে মেলামেশার করার মতো অল্পবয়সী কিশোর-কিশোরী খুবই কম ছিল। কিন্তু, সুজান নামে তার একজন বান্ধবী ছিল যে খুবই বন্ধুত্বপরায়ণ, হাসিখুশি এক অল্পবয়স্ক মেয়ে। তবে, তার বাবামা আমাদের চেয়ে আরও বেশি স্বাধীনতা দিয়েছিল। সুজানের, জেনের চেয়েও বেশি সময় বাইরে থাকার অনুমতি ছিল, সে ছোট ছোট স্কার্ট পরত, আপত্তিকর গানবাজনা শুনত এবং বিভিন্ন অনুপযুক্ত সিনেমা দেখত। অনেক সময় ধরে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা জেনের পক্ষে কঠিন ছিল। তার কাছে সুজানের বাবামাকেই বেশি বিবেচক বলে মনে হয়েছিল আর আমাদেরকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণপ্রবণ মনে হয়েছিল। সুজান যখন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল, কেবল তখনই জেন বুঝতে পেরেছিল যে আমাদের দৃঢ়তাই তাকে রক্ষা করেছে। আমরা খুবই আনন্দিত যে, আমাদের মেয়ের জন্য আমরা যা ঠিক বলে মনে করেছিলাম, সেই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হইনি।”

জেনের মতো অনেক কিশোর-কিশোরী মেলামেশার বিষয়ে তাদের বাবামার নির্দেশনা খোঁজার প্রজ্ঞা সম্বন্ধে শিখতে পেরেছে। “যাহার কর্ণ জীবনদায়ক অনুযোগ শুনে, সে জ্ঞানীদের মধ্যে অবস্থিতি করিবে,” হিতোপদেশ বলে। (হিতোপদেশ ১৫:৩১) ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা অল্পবয়সীদের গঠনমূলক বন্ধুবান্ধবদের সাহচর্য খুঁজতে পরিচালিত করে।

মানিয়ে নেওয়ার চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করা

মেলামেশার মধ্যে সঙ্গীসাথিদের চাপ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সঙ্গীদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চাপ ক্রমাগত আমাদর সন্তানদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে আক্রমণ করে। যেহেতু তরুণ-তরুণীরা সাধারণত তাদের সমবয়সীদের অনুমোদন লাভ করতে চায়, তাই সঙ্গীসাথিদের চাপ তাদেরকে সেই বিষয়গুলো মেনে নিতে পরিচালিত করতে পারে, যেটাকে জগৎ আকর্ষণীয় বলে মনে করে থাকে।—হিতোপদেশ ২৯:২৫.

বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে।” (১ যোহন ২:১৭) তাই, বাবামাদের জগতের দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা তাদের সন্তানদের অতিরিক্ত প্রভাবিত হওয়াকে অনুমোদন করা উচিত নয়। কীভাবে তারা তাদের সন্তানদের এক খ্রিস্টীয় পথে চিন্তা করতে সাহায্য করতে পারে?

“অন্য অল্পবয়সীরা যেধরনের পোশাক পরত, আমার মেয়ে সবসময় সেগুলো পরতে চাইত,” রিচার্ড বলেন। “তাই আমরা ধৈর্য ধরে তার প্রত্যেকটা অনুরোধের উপকার এবং অপকারগুলো নিয়ে তার সঙ্গে যুক্তি করেছিলাম। এমনকি যে-ফ্যাশনগুলোকে আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছিল, সেই ক্ষেত্রেও আমরা কয়েক বছর আগে শোনা পরামর্শ অনুসরণ করেছিলাম, যা হল, ‘সেই ব্যক্তিই বিজ্ঞ যিনি নতুন ফ্যাশন গ্রহণ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম নন কিংবা সেটা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে শেষও নন।’”

পলিন নামে একজন মা, অন্যভাবে সঙ্গীসাথিদের চাপকে প্রতিরোধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি আমার সন্তানদের আগ্রহগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখাতাম এবং তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য নিয়মিত তাদের রুমে যেতাম। দীর্ঘ সময় ধরে এই কথাবার্তাগুলো আমাকে তাদের ধ্যানধারণাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বিষয়গুলোকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার অন্য উপায়গুলো বিবেচনা করার জন্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম করেছিল।”

সঙ্গীসাথিদের চাপ শেষ হবে না, তাই ‘জাগতিক বিতর্ক সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবার’ এবং তাদের সন্তানদের চিন্তাভাবনাকে ‘বন্দি করিয়া খ্রীষ্টের আজ্ঞাবহতায়’ নিয়ে আসতে সাহায্য করায় বাবামাদের বিরামহীন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে। (২ করিন্থীয় ১০:৫) কিন্তু, বাবামা এবং সন্তান উভয়ে ‘প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিবার’ দ্বারা এই অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য শক্তিশালী হবে।—রোমীয় ১২:১২; গীতসংহিতা ৬৫:২.

আমোদপ্রমোদের জোরালো আকর্ষণ

তৃতীয় যে-প্রভাবটার সঙ্গে মোকাবিলা করাকে বাবামায়েরা কঠিন বলে মনে করতে পারে, সেটা হল আমোদপ্রমোদ। স্বভাবতই অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা আনন্দ করতে ভালবাসে। বড় ছেলেমেয়েরাও অনেকে উৎসুকভাবে চিত্তবিনোদনের প্রতি আগ্রহ দেখায়। (২ তীমথিয় ২:২২) কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষা যদি অবিবেচনাপূর্ণ উপায়ে পূরণ করা হয়, তা হলে তাদের আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এই বিপদ প্রধানত দুটো উপায়ে আসে।

প্রথমত, বেশির ভাগ আমোদপ্রমোদ জগতের অধঃপতিত নৈতিক মানগুলোকে প্রতিফলিত করে। (ইফিষীয় ৪:১৭-১৯) তা সত্ত্বেও, এই আমোদপ্রমোদকে সবসময়ই রোমাঞ্চকর এবং আকর্ষণীয় উপায়ে তুলে ধরা হয়। এটা অল্পবয়সীদের জন্য এক প্রকৃত বিপদ হয়ে ওঠে, যারা হয়তো এই ফাঁদগুলো উপলব্ধি করে না।

দ্বিতীয়ত, আমোদপ্রমোদের জন্য যে-পরিমাণ সময় ব্যয় করা হয়, সেটাও বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। কারও কারও কাছে মজা করা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে, যা কিনা যথেষ্ট সময় এবং শক্তির অপচয় করে। হিতোপদেশ এই সতর্কবাণী দেয় যে, “অধিক মধু খাওয়া ভাল নয়।” (হিতোপদেশ ২৫:২৭) একইভাবে, মাত্রাতিরিক্ত আমোদপ্রমোদ আধ্যাত্মিক খাবারের জন্য ক্ষুধাকে নষ্ট করে দেবে এবং মানসিকভাবে আলস্যের দিকে পরিচালিত করবে। (হিতোপদেশ ২১:১৭; ২৪:৩০-৩৪) এই জগৎকে পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করা তরুণ-তরুণীদেরকে ‘প্রকৃতরূপে জীবন ধরিয়া রাখিতে’ বাধা দেবে, যা হল ঈশ্বরের নতুন পৃথিবীতে অনন্তজীবন। (১ তীমথিয় ৬:১২, ১৯) বাবামায়েরা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করেছে?

মারি কারমেন নামে তিন মেয়ের একজন মা বলেন: “আমরা চেয়েছিলাম আমাদের মেয়েরা গঠনমূলক বিনোদন বেছে নিক এবং সেগুলো উপভোগ করুক। তাই আমরা পরিবারের সকলে মিলে নিয়মিতভাবে বেড়াতে যেতাম আর তারা মণ্ডলীতে বন্ধুবান্ধবীদের সঙ্গেও সময় কাটাত। কিন্তু, আমরা বিনোদনকে সঠিক জায়গায় রেখেছিলাম। আমরা এটাকে খাবারের শেষে পরিবেশিত মিষ্টি জাতীয় খাবারের সঙ্গে তুলনা করেছিলাম কিন্তু প্রধান খাদ্যের সঙ্গে নয়। তারা ঘরে, স্কুলে এবং মণ্ডলীতে কর্মঠ হতে শিখেছিল।”

একইভাবে, ডন এবং রূৎ আমোদপ্রমোদকে এমনভাবে দেখেনি যে সুযোগ পেলে তা উপভোগ করবে। “আমরা শনিবারকে ‘পরিবার দিবস’ হিসেবে আলাদা করে রাখাকে এক অভ্যাসে পরিণত করেছিলাম,” তারা ব্যাখ্যা করেছিল। “আমরা সকালে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নিতাম, দুপুরে সাঁতার কাটতে যেতাম এবং সন্ধ্যায় বিশেষ খাবার খেতাম।”

এইসব বাবামার মন্তব্যগুলো গঠনমূলক আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা করা এবং একজন খ্রিস্টানের জীবনে এটাকে যথার্থ স্থানে রাখার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার মূল্যকে প্রদর্শন করে।—উপদেশক ৩:৪; ফিলিপীয় ৪:৫.

যিহোবার ওপর নির্ভর করুন

অবশ্য, আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে অনেক বছর সময় লাগে। এমন কোনো অলৌকিক ওষুধ নেই, যা ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা প্রদান করবে আর এর ফলে তা সন্তানদের তাদের স্বর্গীয় পিতার ওপর নির্ভর করতে অনুপ্রাণিত করবে। বরং, বাবামায়েদের ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুলিতে’ হবে। (ইফিষীয় ৬:৪) এই অবিরাম ‘চেতনা প্রদানের’ অর্থ হল, ঈশ্বর বিষয়গুলোকে যেভাবে দেখেন সেইভাবে দেখতে সন্তানদের সাহায্য করা। বাবামায়েরা তা কীভাবে সম্পন্ন করতে পারে?

সফলতার এক চাবি হল নিয়মিত পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়ন। এই অধ্যয়ন ‘সন্তানদের নয়ন খুলিয়া দেয়, যেন তাহারা ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য বিষয় দেখিতে পারে।’ (গীতসংহিতা ১১৯:১৮) দিয়েগো পারিবারিক অধ্যয়নকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন এবং এইভাবে তার সন্তানদের যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সাহায্য করেছিলেন। “আমি অধ্যয়নের জন্য খুব ভালমতো প্রস্তুতি নিতাম,” তিনি বলেন। “শাস্ত্রীয় প্রকাশনাগুলো গবেষণা করে আমি বাইবেলের চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলতে শিখেছিলাম। আমি সন্তানদেরকে বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে একাত্ম হতে উৎসাহ দিয়েছিলাম। এই বিষয়টা আমার সন্তানদের স্পষ্ট অনুস্মারক প্রদান করেছিল যে, কী যিহোবাকে খুশি করে।”

এ ছাড়া, সন্তানরা যেকোনো সময়েই শিখে থাকে। মোশি “গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে” সন্তানদেরকে যিহোবার অনুস্মারকগুলো বলার জন্য বাবামাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭) একজন বাবা বলেছিলেন: “আমার ছেলের মনের কথা খুলে বলার এবং তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার জন্য তার সময়ের দরকার। যখন আমরা একসঙ্গে হাঁটতে যাই বা কাজ করি, তখন সে সহজেই নিজের কথা প্রকাশ করতে পারে। এই ক্ষেত্রগুলোতে আমরা কিছু উত্তম কথাবার্তা বলি, যা আমাদের উভয়কে উপকৃত করে।”

বাবামায়ের বলা প্রার্থনাগুলোও তাদের সন্তানদের ওপর এক গভীর ছাপ ফেলে। তাদের বাবামায়েরা ঈশ্বরের সাহায্য ও ক্ষমা চাওয়ার জন্য নম্রভাবে প্রার্থনায় তাঁর নিকটবর্তী হয়, তা শোনা সন্তানদের বিশ্বাস করতে চালিত করে যে, “ঈশ্বর আছেন।” (ইব্রীয় ১১:৬) অনেক সফল বাবামা পারিবারিক প্রার্থনার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে থাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় স্কুলের বিষয় এবং আরও অন্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে থাকে, যেগুলো তাদের সন্তানদের উদ্বিগ্ন করে। একজন বাবা বলেছিলেন যে, সন্তানরা স্কুলে যাওয়ার আগে তার স্ত্রী তাদের সঙ্গে সবসময় প্রার্থনা করে।—গীতসংহিতা ৬২:৮; ১১২:৭.

“আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই”

সব বাবামাই ভুল করে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিগুলো তারা যেভাবে মোকাবিলা করেছিল সেটার জন্য হয়তো দুঃখ করতে পারে। তা সত্ত্বেও, বাইবেল আমাদের প্রচেষ্টা করে চলতে জোরালোভাবে উৎসাহ দেয়, ‘সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হইতে’ বলে।—গালাতীয় ৬:৯.

কিন্তু মাঝে মাঝে বাবামায়েরা যখন তাদের সন্তানদের বুঝতে পারে না, তখন তারা হয়তো হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে। এই উপসংহারে আসা সহজ যে, তরুণ প্রজন্ম আলাদা এবং তাদের সামলানো দুঃসাধ্য। কিন্তু, আসলে আজকে ছেলেমেয়েদের একই দুর্বলতাগুলো রয়েছে, যা পূর্ববর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েদেরও ছিল আর তারা একইরকম প্রলোভনগুলোর মুখোমুখি হয়, যদিও অন্যায় করার চাপ হয়তো বেড়ে গিয়েছে। তাই একজন বাবা তার ছেলেকে সংশোধন করার পর সদয়ভাবে এই কথাগুলো যোগ করেছিলেন: “তোমার হৃদয় সেই বিষয়গুলোই করতে চায়, যা তোমার মতো বয়সে আমিও করতে চেয়েছিলাম।” বাবামায়েরা হয়তো কমপিউটার সম্বন্ধে অনেক কিছু না-ও জানতে পারে কিন্তু তারা অসিদ্ধ মাংসের প্রবণতার বিষয়ে সবকিছুই জানে।—মথি ২৬:৪১; ২ করিন্থীয় ২:১১.

সম্ভবত কিছু ছেলেমেয়ে তাদের বাবামার নির্দেশনার প্রতি খুব কমই সাড়া দেয় আর এমনকি তারা যে-শাসন লাভ করে সেটার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। কিন্তু, এই ক্ষেত্রেও ধৈর্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম প্রথম অনিচ্ছুক হওয়া বা কখনও কখনও অবাধ্য হওয়া সত্ত্বেও অনেক ছেলেমেয়ে শেষ পর্যন্ত সাড়া দিয়ে থাকে। (হিতোপদেশ ২২:৬; ২৩:২২-২৫) ম্যাথিও নামে একজন যুবক সাক্ষি, যে বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসে কাজ করছে, সে বলেছিল: “যখন আমি একজন কিশোর ছিলাম, তখন আমি মনে করতাম যে আমার বাবামার নিষেধাজ্ঞাগুলো ঠিক ছিল না। সর্বোপরি, আমি যুক্তি দেখিয়েছিলাম যে, যদি আমার বন্ধুদের বাবামা কোনো ব্যাপারে অনুমতি দিতে পারে, তা হলে আমার বাবামা কেন দিতে পারবে না? আর আমি সেই সময়ে সত্যিই খুব বিরক্ত হতাম যখন মাঝে মাঝে তারা আমাকে ডিঙি নৌকায় চড়ার অনুমতি না দিয়ে শাস্তি দিত—যা করতে আমি খুবই ভালবাসতাম। কিন্তু, পিছনের কথা ভেবে আমি বুঝতে পারি যে, আমার বাবামা আমাকে যে-শাসন করেছিল, তা কার্যকর এবং প্রয়োজনীয় ছিল। আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে প্রয়োজনের সময় নির্দেশনা জুগিয়েছিল।”

এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, যদিও আমাদের সন্তানদের হয়তো কখনও কখনও অস্বাস্থ্যকর আধ্যাত্মিক পরিবেশে থাকতে হয়, তবুও তারা উত্তম খ্রিস্টান হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। বাইবেল যেমন প্রতিজ্ঞা করে, ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা তাদেরকে আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোগায়। “কেননা প্রজ্ঞা তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করিবে, জ্ঞান তোমার প্রাণের তুষ্টি জন্মাইবে, পরিণামদর্শিতা তোমার প্রহরী হইবে, বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে; যেন তোমাকে উদ্ধার করে দুষ্টের পথ হইতে।”—হিতোপদেশ ২:১০-১২.

একটা শিশুকে নয় মাস গর্ভে ধারণ করা সহজ কাজ নয়। আর পরবর্তী ২০ বছর হয়তো আনন্দ ও বেদনার সময় হতে পারে। কিন্তু খ্রিস্টান বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের ভালবাসে বলে তারা তাদের সন্তানদের ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার মাধ্যমে রক্ষা করার জন্য তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে। তারা তাদের সন্তানদের বিষয়ে বৃদ্ধ প্রেরিত যোহনের মতোই বোধ করে থাকে, যেমনটা তিনি তার আধ্যাত্মিক সন্তানদের জন্য করেছিলেন: “আমার সন্তানগণ সত্যে চলে, ইহা শুনিলে যে আনন্দ হয়, তদপেক্ষা মহত্তর আনন্দ আমার নাই।”—৩ যোহন ৪.

[পাদটীকা]

a এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

“আমাদের ঘরে সবসময় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের আসা যাওয়া ছিল”

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার সন্তানদের আগ্রহগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখান

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

“আমি অধ্যয়নের জন্য খুব ভালমতো প্রস্তুতি নিতাম”

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার