ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৫ ১০/১৫ পৃষ্ঠা ১৬-২০
  • ‘ঈগলের দেশে’ যিহোবার বাক্য সমৃদ্ধি লাভ করে

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ‘ঈগলের দেশে’ যিহোবার বাক্য সমৃদ্ধি লাভ করে
  • ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • একজন বিখ্যাত মিশনারির পরিদর্শন
  • এক রোমাঞ্চকর আধুনিক শুরু
  • এক নাস্তিকবাদী রাজ্য
  • তাড়নার মুখে নির্ভীক থাকা
  • কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার আশা
  • উদ্যোগী বিদেশি অগ্রগামীরা কাজের অগ্রভাগে
২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৫ ১০/১৫ পৃষ্ঠা ১৬-২০

‘ঈগলের দেশে’ যিহোবার বাক্য সমৃদ্ধি লাভ করে

“ঈগলের দেশ।” আলবানিয়ার অধিবাসীরা তাদের ভাষায় তাদের দেশকে এভাবেই বলে থাকে। এড্রিয়াটিক সমুদ্রের অভিমুখে এই দেশ গ্রিস এবং প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়ার মধ্যবর্তী বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত। যদিও আলবানিয়ার উৎপত্তি সম্বন্ধে অনেক মতবাদ রয়েছে কিন্তু অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা একমত যে, আলবানিয়ার অধিবাসী এবং তাদের ভাষা প্রাচীন ইলিরিয়ানদের কাছ থেকে এসেছে, যাদের সংস্কৃতি দি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুসারে সা.কা.পূ. ২০০০ সাল থেকে বিদ্যমান।

আলবানিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে রয়েছে, সুদূর উত্তরে বিস্তৃত খাঁজকাটা পাহাড় এবং দক্ষিণে দীর্ঘ, তুষারশুভ্র এড্রিয়াটিকের বালুকাময় সমুদ্রসৈকত। কিন্তু, সর্বোত্তম সৌন্দর্য লোকেদের মধ্যে পাওয়া যায়। তারা হল আন্তরিক এবং অতিথিপরায়ণ, হাসিখুশি এবং খোলাখুলি স্বভাবের ও দ্রুত শিখতে পারে এমন লোক, যারা প্রাণবন্ত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আবেগপূর্ণভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করে থাকে।

একজন বিখ্যাত মিশনারির পরিদর্শন

লোকেদের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এবং চমৎকার দৃশ্যাবলি নিঃসন্দেহে কয়েকশো বছর আগে একজন অদ্বিতীয় ভ্রমণকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। সা.কা. প্রায় ৫৬ সালে প্রেরিত পৌল, যিনি অনেক ভ্রমণ করেছিলেন তিনি লিখেছিলেন: “ইল্লুরিকা পর্য্যন্ত চারিদিকে আমি খ্রীষ্টের সুসমাচার সম্পূর্ণরূপে প্রচার করিয়াছি।” (রোমীয় ১৫:১৯) ইলিরিকামের (ইল্লুরিকার) দক্ষিণ অংশ আধুনিক দিনের আলবানিয়ার মধ্য এবং উত্তর অংশের অনুরূপ। পৌল ইলিরিকামের দক্ষিণে গ্রিসের করিন্থ থেকে লিখছিলেন। তিনি “ইল্লুরিকা পর্যন্ত চারিদিকে” সম্পূর্ণরূপে প্রচার করেছিলেন, এই কথা বলার দ্বারা বুঝিয়েছিলেন যে, তিনি একেবারে সীমানা পর্যন্ত অথবা ঠিক সেই অঞ্চল পর্যন্ত গিয়েছিলেন। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি বর্তমান দিনের আলবানিয়ার দক্ষিণাংশে প্রচার করেছিলেন। তাই, আলবানিয়ায় সবচেয়ে প্রথমে যিনি রাজ্যের প্রচার কাজ করেছিলেন বলে জানা যায়, তিনি হলেন পৌল।

শত শত বছর পার হয়ে গিয়েছে। সম্রাটদের উত্থান-পতন হয়েছে। ১৯১২ সালে আলবানিয়া এক স্বাধীন রাজ্য হওয়ার আগে পর্যন্ত ইউরোপের এই ছোট্ট কোণে বিভিন্ন বিদেশি ক্ষমতা শাসন করেছে। প্রায় এক দশক পরে, যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধীয় বাক্য আবারও আলবানিয়ায় শোনা গিয়েছিল।

এক রোমাঞ্চকর আধুনিক শুরু

১৯২০ এর দশকে, যুক্তরাষ্ট্রে আলবানিয়ার অল্পসংখ্যক অভিবাসী আন্তর্জাতিক বাইবেল ছাত্র—যে-নামে যিহোবার সাক্ষিরা তখন পরিচিত ছিল—তাদের সঙ্গে মেলামেশা করে যা শিখেছিল, তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য আলবানিয়ায় ফিরে এসেছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন নাশো ইড্রিজি। কিছু লোক অনুকূলভাবে সাড়া দিয়েছিল। বেড়ে চলা আগ্রহের যত্ন নেওয়ার জন্য ১৯২৪ সালে আলবানিয়ায় প্রচার কাজের দেখাশোনা করতে রোমানিয়া অফিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

থানাস ডুলি (আথান ডুলিস) ছিলেন সেই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, যারা আলবানিয়ায় ওই বছরগুলোতে যিহোবা সম্বন্ধে শিখেছিল। তিনি স্মরণ করে বলেছিলেন: “১৯২৫ সালে আলবানিয়াতে তিনটে সংগঠিত মণ্ডলী ও সেইসঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন বাইবেল ছাত্র এবং আগ্রহী ব্যক্তিরা ছিল। তাদের চারপাশের লোকেদের . . . বৈসাদৃশ্যে তাদের নিজেদের মধ্যে অনেক প্রেম ছিল!”a

রাস্তাঘাটের অবস্থা ভাল না হওয়ায় ভ্রমণ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু, উদ্যোগী প্রকাশকরা সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ভ্লোরের দক্ষিণ উপকূলের আরেটি পিনা ১৯২৮ সালে বাপ্তিস্ম নেন, যখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। তিনি এবড়োখেবড়ো পাহাড়ের মধ্যে ওঠানামা করে বাইবেল হাতে নিয়ে প্রচার করতেন। ১৯৩০ এর দশকের শুরুর দিকে তিনি ভ্লোরের একটা উদ্যোগী মণ্ডলীর অংশ ছিলেন।

১৯৩০ সালের মধ্যে আলবানিয়ার প্রচার কাজ গ্রিসের এথেন্সের শাখা অফিস পরিচালনা করত। ১৯৩২ সালে গ্রিসের একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ ভাইদেরকে উৎসাহিত এবং শক্তিশালী করার জন্য আলবানিয়া পরিদর্শন করেছিলেন। সেই সময় যারা বাইবেলের সত্য শিখেছিল, তাদের অধিকাংশেরই স্বর্গীয় আশা ছিল। শুদ্ধ এবং ন্যায়নিষ্ঠ লোক হিসেবে তাদের সুনাম সমস্ত জায়গায় তাদের জন্য গভীর সম্মান এনে দিয়েছিল। এই বিশ্বস্ত ভাইদের কাজ অনেক ফল নিয়ে এসেছিল। ১৯৩৫ এবং ১৯৩৬ সালে, আলবানিয়াতে প্রায় ৬,৫০০ বাইবেল সাহিত্য অর্পণ করা হয়েছিল।

একদিন ভ্লোরের কেন্দ্রে, নাশো ইড্রিজি গ্রামোফোনে জে. এফ. রাদারফোর্ডের একটা বক্তৃতা বাজান। লোকেরা তাদের ব্যাবসাপাতি বন্ধ করে এসে সেই বক্তৃতাটা শুনতে থাকে, যখন ভাই ইড্রিজি আলবানিয়া ভাষায় তা অনুবাদ করেন। প্রথম দিকের, অক্লান্ত বাইবেল শিক্ষকদের উদ্যোগ আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিল। ১৯৪০ সালের মধ্যে আলবানিয়াতে ৫০ জন সাক্ষি ছিল।

এক নাস্তিকবাদী রাজ্য

১৯৩৯ সালে, ইতালীয় ফ্যাসিস্টরা দেশ দখল করে। যিহোবার সাক্ষিদের বৈধ স্বীকৃতি বাতিল করা হয় এবং তাদের প্রচার কাজ নিষিদ্ধ করা হয়। এর পর পরই, জার্মান সেনাবাহিনী দেশ আক্রমণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর একজন প্রভাবশালী সামরিক নেতা, এনভের হোজার আবির্ভূত হন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তার সাম্যবাদী দল জয়ী হয় এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। এর পরের বছরকে স্বাধীনতার বছর বলা হয় কিন্তু যিহোবার লোকেদের জন্য এর অর্থ একেবারে বিপরীত ছিল।

ধীরে ধীরে, ধর্মের প্রতি সরকারের সহিষ্ণুতা কমতে থাকে। আলবানিয়ার যিহোবার সাক্ষিরা তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার সঙ্গে মিল রেখে অস্ত্র হাতে নিতে এবং রাজনীতিতে জড়াতে প্রত্যাখ্যান করে। (যিশাইয় ২:২-৪; যোহন ১৫:১৭-১৯) অনেককে জেলে ভরা হয়, সেখানে তাদেরকে কোনো খাবারদাবার অথবা জীবনের মৌলিক বিষয়গুলো দেওয়া হয় না। অনেক বার জেলের বাইরে থাকা তাদের আধ্যাত্মিক বোনেরা তাদের কাপড়চোপড় ধুয়ে দিত এবং তাদের জন্য রান্না করে দিত।

তাড়নার মুখে নির্ভীক থাকা

১৯৪০ এর দশকের প্রথম দিকে, পারমেটের কাছাকাছি একটা গ্রামে সেই সময় ফ্রোসিনা জেকাহ্‌ নামে একজন কিশোরী তার নিজের দাদারা, নাশো ডোরি নামে একজন যিহোবার সাক্ষি জুতো প্রস্তুতকারীর কাছ থেকে যা শিখেছিল, তা শুনেছিলেন।b কর্তৃপক্ষ যিহোবার সাক্ষিদের প্রতি কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছিল কিন্তু তার বাবামা অখুশি হওয়া সত্ত্বেও ফ্রোসিনার বিশ্বাস দৃঢ়তর হয়েছিল। “তারা আমার জুতো লুকিয়ে রাখত এবং আমি যদি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যেতাম, আমাকে মারধর করত। তারা একজন অবিশ্বাসীর সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করেছিল। আমি যখন প্রত্যাখ্যান করেছিলাম, তখন তারা আমাকে জোর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। সেই দিন তুষারপাত হচ্ছিল। নাশো ডোরি, গিরোকাস্টারের ভাই গোলে ফ্লোকোকে বলেছিলেন যেন তিনি আমাকে সাহায্য করেন। তারা তার পরিবারের সঙ্গে আমার থাকার ব্যবস্থা করে। আমার দাদারা তাদের নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য দুই বছর জেলে ছিল। তারা ছাড়া পাওয়ার পর, আমি তাদের সঙ্গে থাকার জন্য ভ্লোরে যাই।

“পুলিশ আমাকে রাজনৈতিক কাজকর্মে অংশ নেওয়ার জন্য জোর করেছিল। আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। তারা আমাকে গ্রেপ্তার করে একটা কামরার মধ্যে নিয়ে যায় এবং আমাকে ঘিরে ধরে। তাদের মধ্যে একজন আমাকে ভয় দেখায়: ‘তুই কি জানিস তোকে আমরা কী করতে পারি?’ আমি উত্তর দিয়েছিলাম: ‘আপনারা কেবল তা-ই করতে পারেন, যা করার জন্য যিহোবা আপনাদের অনুমতি দেবেন।’ জবাবে তিনি বলেছিলেন: ‘তোর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে! এখান থেকে দূর হয়ে যা!’”

সেই বছরগুলোতে আলবানিয়ার ভাইয়েরা একইরকম অনুগত মনোভাব দেখিয়েছিল। ১৯৫৭ সালের মধ্যে রাজ্যের প্রকাশকের শীর্ষ সংখ্যা ৭৫ জনে পৌঁছায়। ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে, যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে আলবানিয়ার একজন অভিবাসী জন মার্কসকে খ্রিস্টীয় কাজ সংগঠিত করার জন্য তিরানা পরিদর্শন করতে পাঠায়।c কিন্তু, শীঘ্রই লুচি জেকাহ্‌, মিহাল স্ভেজি, লেওনিদা পোপে এবং অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইকে শ্রম শিবিরে পাঠানো হয়।

কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার আশা

১৯৬৭ সালের আগে পর্যন্ত আলবানিয়াতে কোনো ধর্মই অনুমোদিত ছিল না। এরপর এই পরিস্থিতিকে আর সহ্য করা হয়নি। ক্যাথলিক, অর্থোডক্স অথবা মুসলিম ধর্মীয় গুরুরা কোনো ধর্মসংক্রান্ত কাজ সম্পাদন করতে পারত না। গির্জা এবং মসজিদগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অথবা শরীরচর্চার কেন্দ্র, জাদুঘর বা বাজারে পরিণত হয়েছিল। কাউকেই বাইবেল রাখার অনুমতি দেওয়া হতো না। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস থাকার ধারণা প্রকাশ করা যেত না।

একসঙ্গে প্রচার এবং সভা করা একপ্রকার অসম্ভব ছিল। একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও, আলাদা আলাদা সাক্ষি হিসেবে যিহোবাকে সেবা করার জন্য তারা তাদের যথাসাধ্য করত। ১৯৬০ এর দশক থেকে ১৯৮০ এর দশক পর্যন্ত, সাক্ষিদের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে হাতে গোনা কয়েক জনে পরিণত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, তারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দৃঢ় ছিল।

১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে আলবানিয়াতে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পরিবর্তন হচ্ছিল। খাদ্য এবং বস্ত্র দুর্লভ ছিল। লোকেরা সুখী ছিল না। পূর্ব ইউরোপের সংস্কারসাধনের ছোঁয়া ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে আলবানিয়াতে এসে লাগে। একদলীয় শাসনের ৪৫ বছর পর, এক নতুন সরকার আবারও ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়।

যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠীর নির্দেশনায় অস্ট্রিয়া এবং গ্রিসের শাখা অফিস আলবানিয়ার স্থানীয় ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। যে-গ্রিক ভাইয়েরা আলবানিয়া ভাষা জানত, তারা তিরানায় এবং বিরাটে নতুন অনুবাদিত কিছু বাইবেল সাহিত্য নিয়ে আসে। আগে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা স্থানীয় ভাইয়েরা বিদেশ থেকে আসা ভাইবোনদের সঙ্গে যখন সেই বছরগুলোতে প্রথমবারের মতো মিলিত হয়েছিল, তখন তাদের হৃদয় আনন্দে ভরে গিয়েছিল।

উদ্যোগী বিদেশি অগ্রগামীরা কাজের অগ্রভাগে

১৯৯২ সালের শুরুর দিকে পরিচালক গোষ্ঠী মাইকেল এবং লিন্ডা ডিগ্রিগোরিও নামে আলবানিয়ার এক মিশনারি দম্পতিকে আলবানিয়াতে আসার ব্যবস্থা করে। তারা বয়স্ক বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদেরকে আবারও এক আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক পরিবারের অংশ হওয়ার জন্য সাহায্য করে। ১৬ জন পরিশ্রমী ইতালীয় বিশেষ অগ্রগামী অথবা পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারকের একটা দল চার জন গ্রিক অগ্রগামীর সঙ্গে নভেম্বর মাসে এখানে এসে উপস্থিত হয়। তাদেরকে স্থানীয় ভাষা শিখতে সাহায্য করার জন্য ভাষার কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়।

এই বিদেশি অগ্রগামীদের জন্য দৈনন্দিন জীবন অনেক কঠিন ছিল। সবসময় বিদ্যুৎ থাকত না। শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এবং স্যাঁতসেঁতে ছিল। খাবার এবং জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য লোকেদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। কিন্তু, সবচেয়ে বড় যে-সমস্যার মুখোমুখি ভাইয়েরা হয়েছিল সেটা হল যে, সত্যের প্রতি সাড়া দিচ্ছে এমন আগ্রহী ব্যক্তিদের বড় বড় দলকে জায়গা দেওয়ার মতো যথেষ্ট বড় দালান খোঁজা।

যে-অগ্রগামীরা আলবানীয় ভাষা শেখার জন্য সংগ্রাম করছিল, তাদের একটা ভাষা শেখাই ছিল কিছু সম্পাদন করার একমাত্র উপায়। একজন অভিজ্ঞ বাইবেল শিক্ষক তাদেরকে বলেছিলেন: “আন্তরিকভাবে হাসার অথবা আমাদের ভাইদের জড়িয়ে ধরার জন্য আমাদের একেবারে সঠিক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করার দরকার নেই। আলবানিয়ার অধিবাসীরা আপনাদের হৃদয় থেকে দেখানো ভালবাসার প্রতি সাড়া দেবে, সঠিক ব্যাকরণের প্রতি নয়। তাই চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই, তারা বুঝে নেবে।”

প্রথম ভাষা শেখার কোর্সের পরে, অগ্রগামীরা বিরাট, ডুরিস, গিরোকাস্টার, শ্কোডার, তিরানা, ভ্লোরে কাজ করতে শুরু করে। শীঘ্রই সেই শহরগুলোতে দ্রুত মণ্ডলী গড়ে উঠতে থাকে। আরেটি পিনা, যার বয়স তখন ৮০-র কোঠায় ছিল এবং স্বাস্থ্য খুব একটা ভাল ছিল না, তিনি তখনও ভ্লোরে ছিলেন। দুজন অগ্রগামীকে সেখানে আরেটির সঙ্গে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। বিদেশিদের আলবানীয় ভাষায় কথা বলতে দেখে লোকেরা অবাক হয়ে গিয়েছিল: “আমরা যদি কিছু শিখতে চাই, তা হলে অন্যান্য ধর্মীয় দলের মিশনারিরা আমাদেরকে ইংরেজি অথবা ইতালীয় শিখতে বাধ্য করে। আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের ভালবাসেন এবং আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার আছে কারণ আপনারা সত্যি সত্যি আলবানীয় ভাষা শিখেছেন!” আরেটি ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে তার পার্থিব জীবন শেষ করেন, যিনি জীবনের একেবারে শেষ মাসেও প্রচার কাজে সক্রিয় ছিলেন। তিনি এবং অগ্রগামীরা যে-উদ্যোগ দেখিয়েছেন, তা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছে। ১৯৯৫ সালে ভ্লোরে মণ্ডলী পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকে সেই সমুদ্র বন্দরে তিনটে উদ্যোগী মণ্ডলী প্রচার কাজে ব্যস্ত রয়েছে।

সারা দেশে, লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্ত এবং তাদের সামান্য ধর্মীয় কুসংস্কার রয়েছে। সাক্ষিদের কাছ থেকে পাওয়া যেকোনো এবং সমস্ত বাইবেলভিত্তিক সাহিত্য তারা সাগ্রহে গ্রহণ করতে ও পড়তে ইচ্ছুক। অনেক অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে অধ্যয়ন করতে শুরু করেছে এবং দ্রুত উন্নতি করে চলেছে।

৯০টারও বেশি মণ্ডলী এবং দল ক্রমাগত ‘দৃঢ়ীকৃত হইয়া, এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইয়া’ চলেছে। (প্রেরিত ১৬:৫) আলবানিয়ায় ৩,৫১৩ জন সাক্ষির এখনও অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে। ২০০৫ সালের মার্চ মাসে খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় ১০,১৪৪ জন লোক উপস্থিত ছিল। প্রচার কাজে অতিথিপরায়ণ লোকেদের আলোচনার কারণে ৬,০০০রেরও বেশি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা হচ্ছে। স্পষ্টতই, হাজার হাজার লোক সম্প্রতি আলবানিয়া ভাষায় প্রকাশিত নতুন জগৎ অনুবাদ থেকে উপকৃত হবে। সত্যিই, যিহোবার বাক্য ‘ঈগলের দেশে’ যিহোবার প্রশংসা করার জন্য সমৃদ্ধি লাভ করছে।

[পাদটীকাগুলো]

a থানাস ডুলির জীবন কাহিনীর জন্য ১৯৬৮ সালের ১লা ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকা দেখুন।

b নাশো ডোরির জীবন কাহিনীর জন্য ১৯৯৬ সালের ১লা জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকা দেখুন।

c জন মার্কসের স্ত্রী হেলেনের জীবন কাহিনীর জন্য ২০০২ সালের ১লা জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকা দেখুন।

[২০ পৃষ্ঠার বাক্স]

কসোভোতে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব অদৃশ্য হয়ে যায়!

১৯৯০ এর দশকের দিকে কসোভোর কথা প্রায়ই উল্লেখ করা হতো যখন ভূখণ্ড নিয়ে কলহ এবং দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক ঘৃণা যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দিকে পরিচালিত করেছিল।

বলকানের যুদ্ধের সময়ে অনেক সাক্ষিকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। যুদ্ধ শান্ত হয়ে যাওয়ার পর তাদের একটা ছোট্ট দল কসোভোতে ফিরে আসে এবং কাজের জন্য তৈরি হয়। আলবানিয়ার এবং ইতালীর বিশেষ অগ্রগামীদের সেখানকার ২৩,৫০,০০০ অধিবাসীকে সাহায্য করার জন্য কসোভোতে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। চারটে মণ্ডলী এবং ছয়টা সক্রিয় দল মিলে প্রায় ১৩০ জন প্রকাশক এই এলাকায় যিহোবার সেবা করছে।

২০০৩ সালের বসন্তকালে প্রিসটিনায় এক বিশেষ সম্মেলন দিন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে ২৫২ জন উপস্থিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল আলবানীয়, ইতালীয়, জার্মান, জিপসি এবং সার্বীয় পটভূমির লোকেরা। আর বাপ্তিস্মের বক্তৃতার শেষে বক্তা দুটো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিন জন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছিল: একজন আলবানীয়, একজন জিপসি এবং একজন সার্বীয়।

শ্রোতারা তিন জন বাপ্তিস্ম প্রার্থীর কাছ থেকে উচ্চরবে বলা “ভা!,” “ডা!,” এবং “পো!” শোনার পর অনেক হাততালি দিয়েছিল। তারা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিল। তারা দৃঢ়ভাবে স্থাপিত সাম্প্রদায়িক সমস্যার উত্তর খুঁজে পেয়েছিল, যা দেশকে জর্জরিত করেছিল।

[১৭ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ভূমধ্যসাগর

ইতালি

আলবানিয়া

গ্রিস

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

অল্পবয়স্ক সাক্ষিরা বয়স্ক ব্যক্তিদের উদ্যোগকে অনুকরণ করে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আরেটি পিনা ১৯২৮ সাল থেকে ১৯৯৪ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্তভাবে সেবা করেছেন

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিদেশি অগ্রগামীদের প্রথম দলটা, ভাষা শেখার কোর্সে যোগদান করছে

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ঈগল: © Brian K. Wheeler/VIREO

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার