ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w14 ৫/১৫ পৃষ্ঠা ১৬-২০
  • যিহোবা সত্যিই আমাকে সাহায্য করেছেন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা সত্যিই আমাকে সাহায্য করেছেন
  • ২০১৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • তিনি একটি বাইবেল এবং কালো রঙের একটা নোটবুক ব্যবহার করেন
  • যিহোবা আমাকে সাহসী হতে সাহায্য করেন
  • “ভাই-বোনদের বুঝতে দিন যে, আপনি তাদের জন্য চিন্তা করেন”
  • আমার স্ত্রী অনুগত প্রেম দেখায়
  • বেথেল—শিক্ষা লাভ করার এবং শিক্ষা দেওয়ার এক স্থান
  • তিনটে সম্মেলন যেভাবে আমার জীবনকে প্রভাবিত করেছে
    ২০০৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • পূর্ণসময়ের পরিচর্যা এটা আমাকে যেখানে নিয়ে এসেছে
    ২০১৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সত্তর বছর ধরে এক এক যিহুদির বস্ত্রের অঞ্চল ধরে থাকা
    ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সঠিক বাছাইগুলো চিরস্থায়ী আশীর্বাদগুলোর দিকে চালিত করে
    ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০১৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w14 ৫/১৫ পৃষ্ঠা ১৬-২০
কেনেথ ও এভলিন লিটল্‌

জীবনকাহিনি

যিহোবা সত্যিই আমাকে সাহায্য করেছেন

বলেছেন কেনেথ লিটল্‌

বিয়ের অল্পসময় পরেই আমি আর আমার স্ত্রী এভলিন কানাডার অন্টারিওর উত্তরে অবস্থিত হর্নপেন শহরে এসে ট্রেন থেকে নামি। সেই এলাকাটা ঝোপজঙ্গলে পূর্ণ ছিল। তখন ভোর বেলা আর বাইরে প্রচণ্ড শীত। স্থানীয় একজন ভাই আমাদের গাড়িতে করে নিয়ে যান আর আমরা সেই ভাই, তার স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে পেটভরে সকালের খাবার খাই। তারপর, আমরা তুষারের ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘরে ঘরে প্রচার করি। সেই দিনই দুপুর বেলা আমি সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে আমার প্রথম বক্তৃতা দিই। সেখানে কেবল আমরা পাঁচ জন উপস্থিত ছিলাম; আর কেউ আসেনি।

কেনেথ লিটল্‌

সত্যি বলতে কী, ১৯৫৭ সালে আমার সেই বক্তৃতায় এত কমসংখ্যক শ্রোতা উপস্থিত হয়েছিল বলে আমার একটুও খারাপ লাগেনি। বুঝতেই পারছেন, আমি ছোটোবেলা থেকেই অনেক লাজুক স্বভাবের ছিলাম। এমনকী ছোটোবেলায় আমাদের ঘরে যখন কোনো চেনাজানা অতিথি আসত, তখনও আমি লুকিয়ে থাকতাম।

আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন, যিহোবার সংগঠনে আমার বেশিরভাগ দায়িত্ব এমন ছিল যে, এগুলোর কারণে আমাকে অনেক লোকের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার বন্ধু, আবার কেউ কেউ একেবারেই অপরিচিত। কিন্তু, আমি যেহেতু লাজুক স্বভাব ও আত্মবিশ্বাসের অভাবের সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করেছি, তাই সেইসমস্ত দায়িত্ব সফলভাবে পালন করার কৃতিত্ব আমি নিজে নিতে পারি না। এর পরিবর্তে, আমি যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার সত্যতা দেখতে পেয়েছি: “আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব; আমি আপন ধর্ম্মশীলতার দক্ষিণ হস্ত দ্বারা তোমাকে ধরিয়া রাখিব।” (যিশা. ৪১:১০) একটা যে-প্রধান উপায়ে যিহোবা আমাকে সাহায্য করেছেন, তা হল সহখ্রিস্টানদের সহযোগিতা। তাদের মধ্যে কয়েক জনের কথা আমি আপনাদের বলতে চাই। আমার ছোটোবেলা থেকেই শুরু করছি।

তিনি একটি বাইবেল এবং কালো রঙের একটা নোটবুক ব্যবহার করেন

কেনেথ লিটল্‌ ছাটাবেলায় তাদের পারিবারিক খামারে

অন্টারিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে আমাদের পারিবারিক খামারে

১৯৪০ সালের কোনো এক রোদ ঝলমলে রবিবার। সে-দিন সকালে এলসি হান্টিংফোর্ড নামে একজন বোন অন্টারিওর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আমাদের পারিবারিক খামারের দরজায় কড়া নাড়েন। আমার মা দরজা খোলেন কিন্তু বাবা আমার সঙ্গে ভিতরে বসে কথা শুনতে থাকেন। তিনিও আমার মতো লাজুক স্বভাবের ছিলেন। বাবা ভেবেছিলেন, বোন হান্টিংফোর্ড হয়তো কিছু বিক্রি করতে এসেছেন আর মা অপ্রয়োজনীয় কিছু কিনে ফেলবেন। তাই, আমরা যে আগ্রহী নই, তা বলার জন্য বাবা অবশেষে দরজার কাছে যান। কিন্তু, বোন হান্টিংফোর্ড জিজ্ঞেস করেন, “আপনারা কি বাইবেল অধ্যয়ন করতে আগ্রহী নন?” বাবা উত্তর দেন, “অবশ্যই আমরা সেই ব্যাপারে আগ্রহী।”

বোন হান্টিংফোর্ড একেবারে ঠিক সময়ে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আমার বাবা-মা ইউনাইটেড চার্চ অভ্‌ কানাডা-র সক্রিয় সদস্য ছিল কিন্তু সম্প্রতি তারা সেই গির্জা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কেন? কারণ গির্জার একজন যাজক দরজার সামনে সমস্ত দাতার নাম তাদের দানের পরিমাণ অনুযায়ী তালিকা করে টাঙিয়ে দিয়েছিলেন। আমার বাবা-মায়ের আয় খুব সীমিত ছিল আর তাই তাদের নাম সাধারণত তালিকার শেষের দিকে থাকত আর গির্জার যাজকরা তাদেরকে আরও বেশি টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিত। আরেকজন যাজক স্বীকার করেছিলেন, তার চাকরি বাঁচানোর জন্য তিনি সেই বিষয়গুলো শিক্ষা দিতে পারেন না, যেগুলো তিনি সত্যিই বিশ্বাস করেন। তাই, আমরা সেই গির্জা ত্যাগ করেছিলাম আর আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটানোর জন্য উপায় খুঁজছিলাম।

কানাডায় যেহেতু সেই সময় যিহোবার সাক্ষিদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাই বোন হান্টিংফোর্ড শুধুমাত্র বাইবেল এবং একটা ছোটো কালো নোটবুকে লেখা কিছু নোট ব্যবহার করে আমাদের পরিবারের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতেন। পরে তিনি যখন বুঝতে পেরেছিলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে ধরিয়ে দেব না, তখন তিনি আমাদেরকে বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি দেখিয়েছিলেন। প্রতি বার অধ্যয়ন করার পর আমরা সযত্নে সেই প্রকাশনাগুলো লুকিয়ে রাখতাম।a

কেনেথ লিটলের বাবা-মা

আমার বাবা-মা ঘরে ঘরে প্রচারের প্রতি সাড়া দিয়েছিল এবং ১৯৪৮ সালে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল

বিরোধিতা এবং অন্যান্য বাধা সত্ত্বেও বোন হান্টিংফোর্ড উদ্যমের সঙ্গে রাজ্যের বার্তা প্রচার করতেন। তার উদ্যম দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম এবং সত্যের পক্ষসমর্থন করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আমার বাবা-মা যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নেওয়ার এক বছর পর, আমিও ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। ১৯৪৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, আমাকে এমন একটা ধাতব পাত্রের মধ্যে বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়, যে-পাত্রটা কৃষকরা গৃহপালিত পশুদের জল খাওয়ানোর জন্য ব্যবহার করত। সেই সময় আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। তখন থেকে আমি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।

যিহোবা আমাকে সাহসী হতে সাহায্য করেন

কেনেথ লিটল্‌ বেথেলে সেবা করছন

১৯৫২ সালে বেথেলে সেবা করার আমন্ত্রণ পেয়ে আমি অবাক হয়ে যাই

তবে বাপ্তিস্মের পর পরই অগ্রগামী সেবা শুরু করার ব্যাপারে আমি দ্বিধাবোধ করি। কিছু সময়ের জন্য আমি একটা ব্যাঙ্কে এবং একটা অফিসে কাজ করি কারণ আমি নিজেকে আশ্বস্ত করতাম যে, আমার অগ্রগামী কাজকে সমর্থন করার জন্য আমাকে কিছু টাকা আয় করতে হবে। কিন্তু বয়স কম হওয়ায়, আমি যত তাড়াতাড়ি আয় করতাম, তত তাড়াতাড়িই তা খরচ করে ফেলতাম। তাই, টেড সার্জেন্ট নামে একজন ভাই আমাকে বলবান হতে এবং যিহোবার ওপর বিশ্বাস বজায় রাখতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। (১ বংশা. ২৮:১০) তার কাছ থেকে সেই মৃদু ঠেলা পেয়ে আমি ১৯৫১ সালের নভেম্বর মাসে অগ্রগামী সেবা শুরু করি। তখন আমার কাছে কেবল ৪০ ডলার, একটা পুরোনো সাইকেল এবং একটা নতুন ব্রিফকেস ছিল। কিন্তু যিহোবা সবসময় আমার যা প্রয়োজন, সেটাই জুগিয়েছেন। আমাকে অগ্রগামী সেবা শুরু করার ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য আমি ভাই টেডের কাছে কতই-না কৃতজ্ঞ! এর ফলে, আমি আরও আশীর্বাদ লাভ করেছি।

১৯৫২ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে এক সন্ধ্যায় আমি টরোন্টো থেকে একটা ফোন কল পাই। যিহোবার সাক্ষিদের কানাডার শাখা অফিস আমাকে সেপ্টেম্বর মাস থেকে বেথেলে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। যদিও আমি অনেক লাজুক স্বভাবের ছিলাম এবং কখনোই কোনো শাখা অফিস দেখতে যাইনি, কিন্তু আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম কারণ অন্যান্য অগ্রগামীরা আমাকে বেথেল সম্বন্ধে অনেক ভালো ভালো তথ্য দিয়েছিল। তাই বেথেলে যাওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই আমি সেই নতুন পরিবেশে স্বচ্ছন্দ বোধ করতে শুরু করেছিলাম।

“ভাই-বোনদের বুঝতে দিন যে, আপনি তাদের জন্য চিন্তা করেন”

বেথেলে আসার দুই বছর পরেই আমি টরোন্টোর শ ইউনিট-এর মণ্ডলীর দাস হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলাম, যেটাকে এখন প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর বলা হয়।b আমার আগে ভাই বিল ইয়েকস এই দায়িত্ব পালন করতেন। তখন আমার বয়স মাত্র ২৩ বছর আর আমি নিজেকে খামারের একজন সাধারণ ছেলে হিসেবেই মনে করতাম। ভাই ইয়েকস নম্রভাবে এবং প্রেমের সঙ্গে আমাকে কী করতে হবে, তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আর যিহোবা সত্যিই আমাকে সাহায্য করেছেন।

ভাই ইয়েকস দেখতে ছোটোখাটো ছিলেন আর তিনি সবসময় অনেক হাসিখুশি থাকতেন। তিনি লোকেদের ব্যাপারে অনেক আগ্রহী ছিলেন। তিনি ভাই-বোনদের ভালোবাসতেন আর তারাও তাকে ভালোবাসত। তিনি কেবল সমস্যার সময়ে নয় বরং অন্যান্য সময়েও ভাই-বোনদের বাড়িতে সাক্ষাৎ করতে যেতেন। ভাই বিল ইয়েকস আমাকে একইরকম করার জন্য এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় ভাই-বোনদের সঙ্গে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “কেন্‌, ভাই-বোনদের বুঝতে দিন যে, আপনি তাদের জন্য চিন্তা করেন। তাহলে তারা অসংখ্য ভুলত্রুটিকে আচ্ছাদন করবে।”

আমার স্ত্রী অনুগত প্রেম দেখায়

১৯৫৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে যিহোবা আমাকে বিশেষ উপায়ে সাহায্য করে এসেছেন। সেই মাসে আমি এভলিনকে বিয়ে করি। সে গিলিয়েড স্কুলের ১৪তম ক্লাস থেকে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছিল। আমাদের বিয়ের আগে থেকে সে কুইবেকের ফ্রেঞ্চভাষী একটা অঞ্চলে সেবা করত। সেই সময় কুইবেকে রোমান ক্যাথলিক চার্চ-এর আধিপত্য ছিল। তাই, এভলিনের জন্য সেই এলাকায় দায়িত্ব পালন করা অনেক কঠিন ছিল, কিন্তু তারপরও সে তার দায়িত্বের প্রতি ও যিহোবার প্রতি অনুগত ছিল।

কেনেথ ও এভলিন লিটল্‌ তাদের বিয়ের দিন

১৯৫৭ সালে এভলিন এবং আমি বিয়ে করি

এভলিন আমার প্রতিও অনুগত ছিল। (ইফি. ৫:৩১) আসলে, বিয়ের ঠিক পর পরই তার আনুগত্য পরীক্ষিত হয়েছিল! আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু বিয়ের পরদিনই আমাকে শাখা অফিস থেকে ফোন করে বলা হয় যেন আমি কানাডা বেথেলে এক সপ্তাহব্যাপী একটা সভায় যোগ দিই। যদিও এই সভা আমাদের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল, কিন্তু তারপরও এভলিন এবং আমি যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান, তা-ই করতে চেয়েছিলাম। তাই, আমরা আমাদের হানিমুনের পরিকল্পনা বাতিল করেছিলাম। সেই সপ্তাহে এভলিন শাখা অফিসের কাছাকাছি এলাকায় প্রচার করেছিল। যদিও এই এলাকা কুইবেকের চেয়ে বহুগুণে আলাদা ছিল, কিন্তু সে ধৈর্য ধরে কাজ চালিয়ে গিয়েছিল।

সেই সপ্তাহের শেষে আমি এক অপ্রত্যাশিত সংবাদ পাই। আমাকে অন্টারিওর উত্তরাঞ্চলে একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আমি সবেমাত্র বিয়ে করেছি, বয়স মাত্র ২৫ বছর আর আমার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে কিছুই নেই, কিন্তু তারপরও যিহোবার ওপর আস্থা রেখে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কানাডার শীতের একেবারে মাঝামাঝি সময়ে আমরা রাতের একটা ট্রেনে চড়ে বেশ কয়েক জন অভিজ্ঞ ভ্রমণ অধ্যক্ষের সঙ্গে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তারাও তাদের কার্যভারের এলাকায় ফিরে যাচ্ছিল। তারা আমাদের অনেক উৎসাহিত করেছিল! এমনকী আমাদের যেন সারারাত গাড়িতে বসে থাকতে না হয়, সেইজন্য একজন ভাই তার সেই সংরক্ষিত আসনটা ব্যবহার করার জন্য বার বার অনুরোধ করেছিলেন, যেখানে ঘুমানো যায়। পরের দিন সকালে অর্থাৎ আমাদের বিয়ের মাত্র ১৫ দিন পরে আমরা হর্নপেনে একটা ছোটো দল পরিদর্শন করি, যেমনটা আমি শুরুতে বর্ণনা করেছি।

এভলিন এবং আমাকে অন্যান্য পরিবর্তনেরও মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ১৯৬০ সালের শেষের দিকে আমরা যখন জেলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমি গিলিয়েড স্কুলের ৩৬তম ক্লাসে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাই। এটা ছিল দশ মাসের একটা কোর্স, যা ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে শুরু হতে যাচ্ছিল। আমি অনেক আনন্দিত হয়েছিলাম, কিন্তু আমার আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছিল কারণ এভলিনকে এই ক্লাসে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এর পরিবর্তে, গিলিয়েড-এ আমন্ত্রিত অন্যান্য ভাইদের স্ত্রীদের মতো এভলিনকেও এই বিষয়টা উল্লেখ করে চিঠি লেখার জন্য বলা হয়েছিল যে, কমপক্ষে দশ মাসের জন্য আমাদের পৃথক থাকার ব্যাপারে তার কোনো আপত্তি নেই। যদিও এভলিন কান্নাকাটি করেছিল, কিন্তু তারপরও আমরা এই ব্যাপারে একমত হয়েছিলাম, আমার স্কুলে যোগ দেওয়া উচিত। আর আমি গিলিয়েড থেকে যে-মূল্যবান প্রশিক্ষণ লাভ করব, সেটার কথা চিন্তা করে সে অনেক খুশি হয়েছিল।

এই সময়টাতে এভলিন কানাডার শাখা অফিসে সেবা করেছিল। সেখানে সে আমাদের একজন প্রিয় অভিষিক্ত বোন মার্গারেট লোভেলের সঙ্গে একই রুমে থাকার এক বিশেষ সুযোগ পেয়েছিল। এটা ঠিক যে, এভলিন আর আমি একে অন্যের অভাব বোধ করতাম, কিন্তু যিহোবার সাহায্যে আমরা নিজেদের এই সাময়িক কার্যভারের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলাম। যিহোবা এবং তাঁর সংগঠন যেন আমাদেরকে আরও বেশি ব্যবহার করতে পারে, সেইজন্য এভলিন আমরা একত্রে যে-সময় কাটাতে পারতাম, তা ত্যাগ করার ব্যাপারে ইচ্ছুক মনোভাব দেখিয়েছিল। তার সেই মনোভাব আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল।

গিলিয়েড-এ তিন মাস পার হয়ে যাওয়ার পর ভাই নেথেন নর, যিনি সেই সময় বিশ্বব্যাপী কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তিনি আমাকে এক বিশেষ আমন্ত্রণ জানান। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি সেই অবস্থায় গিলিয়েড স্কুল ত্যাগ করে কানাডায় ফিরে গিয়ে শাখা অফিসে অনুষ্ঠিত রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে চাই কি না। ভাই নর বলেছিলেন, আমাকে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতেই হবে, এমন নয়। আমি চাইলে গিলিয়েড কোর্স শেষ করতে পারি এবং তারপর হয়তো মিশনারি কাজে নিযুক্ত হতে পারি। তিনি এও বলেছিলেন, আমি যদি কানাডায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে আমাকে হয়তো আর কখনো গিলিয়েড-এ আমন্ত্রণ জানানো হবে না। আর এই সময়ের মধ্যে আমাকে হয়তো কানাডার ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য নিযুক্ত করা হবে। তিনি বিষয়টা আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, যেন আমি এই বিষয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিই।

যেহেতু এভলিন আমাকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছিল, ঈশতান্ত্রিক কার্যভারকে সে কতটা মূল্যবান বলে মনে করে, তাই আমি সঙ্গেসঙ্গে ভাই নরকে বলেছিলাম, “যিহোবার সংগঠন আমাদেরকে যা-ই করতে বলুক না কেন, আমরা আনন্দের সঙ্গে তা করতে রাজি আছি।” আমরা সবসময় এইরকমটা মনে করেছি, আমাদের নিজেদের বাছাই যা-ই হোক না কেন, যিহোবার সংগঠন আমাদেরকে যেখানে নিযুক্ত করবে, আমাদের সেখানেই যেতে হবে।

তাই, ১৯৬১ সালের এপ্রিল মাসে আমি ব্রুকলিন থেকে কানাডায় রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ শিক্ষা দেওয়ার জন্য ফিরে গিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে, আমরা বেথেল পরিবারের সদস্য হিসেবে সেবা করতে শুরু করি। তারপর, এই বিষয়টা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই যে, আমাকে গিলিয়েড-এর ৪০তম ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যেটা ১৯৬৫ সালে শুরু হবে। আবারও এভলিনকে আমাদের পৃথক থাকার ব্যাপারে রাজি হওয়ার বিষয় উল্লেখ করে একটা চিঠি লিখতে হয়েছিল। কিন্তু, কয়েক সপ্তাহ পরে আমরা দু-জনই এই বিষয়টা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম যে, এভলিনকে আমার সঙ্গে স্কুলে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

গিলিয়েড স্কুল-এ পৌঁছানোর পরে ভাই নর আমাদের ফ্রেঞ্চভাষী ক্লাসের ছাত্রদের বলেছিলেন, আমাদেরকে আফ্রিকায় পাঠানো হবে। কিন্তু আমাদের গ্র্যাজুয়েশনের দিনে আমাদেরকে পুনরায় কানাডায় নিযুক্ত করা হয়েছিল! আমাকে নতুন শাখা অধ্যক্ষ করে নিযুক্ত করা হয়েছিল, যেটাকে এখন শাখা কমিটির কোঅর্ডিনেটর বলা হয়। আমার বয়স তখন মাত্র ৩৪ বছর আর তাই আমি ভাই নরকে বলেছিলাম, “আমার বয়স এখনও অনেক কম।” কিন্তু তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আর একেবারে শুরু থেকেই যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আমি বেথেলের বয়স্ক এবং আরও অভিজ্ঞ ভাইদের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করতাম।

বেথেল—শিক্ষা লাভ করার এবং শিক্ষা দেওয়ার এক স্থান

বেথেল সেবা আমাকে অন্যদের কাছ থেকে শেখার বিভিন্ন অপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছে। আমি শাখা কমিটি-র অন্যান্য সদস্যদের সম্মান এবং প্রশংসা করি। এ ছাড়া, এমন শত শত খ্রিস্টান নারী-পুরুষ আমাকে উত্তম উপায়ে প্রভাবিত করেছিল, যাদের সঙ্গে আমাদের এই শাখা অফিসে এবং আমরা যে-মণ্ডলীগুলোতে সেবা করেছি, সেখানে দেখা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অল্পবয়সি আবার অন্যেরা বয়স্ক ব্যক্তি।

কেনেথ লিটল্‌ সকালের উপাসনা পরিচালনা করছন

কানাডার বেথেল পরিবারে সকালের উপাসনা পরিচালনা করার সময়

বেথেল সেবা আমাকে অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার এবং তাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন: ‘তুমি যাহা যাহা শিখিয়াছ, তাহাতেই স্থির থাক।’ তিনি এও বলেছিলেন: “অনেক সাক্ষীর মুখে যে সকল বাক্য আমার কাছে শুনিয়াছ, সে সকল এমন বিশ্বস্ত লোকদিগকে সমর্পণ কর, যাহারা অন্য অন্য লোককেও শিক্ষা দিতে সক্ষম হইবে।” (২ তীম. ২:২; ৩:১৪) মাঝে মাঝে সহখ্রিস্টানরা আমাকে জিজ্ঞেস করে, বেথেলে আমার ৫৭ বছরের সেবায় আমি কী শিখতে পেরেছি। তাদের উদ্দেশে আমার সহজ উত্তরটা হল, “যিহোবার সংগঠন আপনাকে যা করতে বলে, সাহায্যের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করে ইচ্ছুক হৃদয়ে ও অবিলম্বে তা করুন।”

মনে হয় যেন মাত্র গতকালই আমি বেথেলে এসেছি, যে এখনও লাজুক স্বভাবের এবং অনভিজ্ঞ যুবক। কিন্তু এত বছর ধরে যিহোবা ‘আমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ’ করে রেখেছেন। বিশেষভাবে সহবিশ্বাসীদের দয়া এবং সময়োপযোগী সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি ক্রমাগত আমাকে এই আশ্বাস দিয়েছেন: “ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশা. ৪১:১৩.

a কানাডার সরকার ১৯৪৫ সালের ২২ মে আমাদের কাজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল।

b সেই সময়, যদি একটা শহরে একাধিক মণ্ডলী সক্রিয় থাকত, তাহলে প্রতিটা মণ্ডলীকে একটা ইউনিট বলা হতো।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার