প্রত্যেকটি উত্তম কাজের জন্য স্বেচ্ছায় নিজেদের উৎসর্গ করা
১ একটি জাগতিক প্রকাশনা যিহোবার সাক্ষীদের সম্বন্ধে এই উক্তি করেছিল: “সাক্ষীদের মত তাদের ধর্মের জন্য কঠোর পরিশ্রমী, অন্য যে কোন দলের সদস্যদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।” এইধরনের ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে কেন যিহোবার সাক্ষীরা এত পরিশ্রম করে?
২ একটি কারণ হল যে তারা সময়ের গুরুত্বতার দ্বারা অনুপ্রাণিত। যীশু উপলব্ধি করেছিলেন পৃথিবীতে তাঁর কাজ শেষ করতে সীমিত সময় ছিল। (যোহান ৯:৪) আজকে যখন ঈশ্বরের গৌরবান্বিত পুত্র তাঁর শত্রুদের পরাস্ত করতে চলেছেন, তখন যিহোবার লোকেরা উপলব্ধি করা যে তাদের কাজ সমাপ্ত করতে তাদেরও সীমিত সময় আছে। সেইজন্য, পবিত্র পরিচর্যার জন্য তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের উৎসর্গ করে। (গীত. ১১০:১-৩) যেখানে শস্য কাটাতে প্রচুর কর্মীর প্রয়োজন, সেখানে তাদের প্রচেষ্টায় ক্ষান্ত হওয়ার করাণ থাকতে পারে না। (মথি ৯:৩৭, ৩৮) তাই, তারা যীশুকে যিনি ইচ্ছার এবং তাঁর কাজে অধ্যবসায়ের এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, অনুকরণ করতে প্রচেষ্টা করে।—যোহান ৫:১৭.
৩ যিহোবার প্রতি যিহোবার সাক্ষীদের পূর্ণ-হৃদয়ে কাজ করার আর একটি কারণ হল যে তাদের জগদ্ব্যাপী সংগঠন অন্যান্য সমস্ত দল থেকে আলাদা। জাগতিক ধর্মীয় সংগঠনগুলি প্রতীকস্বরূপ, তাদের অনুগামীদের কাছ থেকে কেবলমাত্র ন্যূনতম সময় এবং প্রচেষ্টা আশা করে। তারা যা বিশ্বাস করে তা তাদের দৈনন্দিন জীবনে, অন্যদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে অথবা তাদের জীবনের অনুধাবনগুলিতে খুব কমই প্রভাব ফেলেছে অথবা কোন প্রভাব ফেলেনি। সত্য বিশ্বাসের প্ররোচিত ক্ষমতাকে হারিয়ে তারা দৃঢ়ভাবে বলেছে যে তাদের পালকের ‘তাহাদিগকে স্নিগ্ধ বাক্য বলে’ ও তাদের এই আশ্বাস দেয় যে তাদের নামমাত্র প্রচেষ্টাই যথেষ্ট। (যিশা. ৩০:১০) তাদের যাজকেরা ‘কানচুলকানি’ দ্বারা অনুগ্রহ দেখিয়েছে যা ঔদাস্য ও আধ্যাত্মিক অলসতার মনোভাবকে ধীরে ধীরে সঞ্চারিত করেছে।—২ তীম. ৪:৩.
৪ যিহোবার লোকেদের মধ্যে তা কতই না বিপরীত! আমাদের উপাসনা সম্বন্ধীয় প্রতিটি বিষয়ে প্রচেষ্টা, প্রয়াস এবং কাজ জড়িত রয়েছে। আমরা যা বিশ্বাস করি তা প্রতিটি দিন ও প্রতিটি বিষয়ে আমরা অভ্যাস করি। যদিও সত্য আমাদের জন্য প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে, তবুও এটি আমাদের কাছ থেকে যা আশা করে তা পরিপূর্ণ করতে “এক বিরাট সংগ্রামের মোকাবিলা করাকে” অন্তর্ভুক্ত করে। (তুলনা করুন ১ থিষলনীকীয় ২:২) শুধুমাত্র দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্বগুলির যত্ন নেওয়াই অধিকাংশ লোকেদের ব্যস্ত রাখার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু, রাজ্যের আগ্রহকে প্রথম স্থানে রাখা থেকে আমরা এই উদ্বিগ্নতাগুলিকে আমাদের পক্ষে বাধা হতে দিই না।—মথি ৬:৩৩.
৫ যিহোবার পরিচর্যায় আমাদের যা দেওয়া হয়েছে তা এত উপকারী ও জরুরি যে আমরা অন্যান্য অনুধাবনগুলি থেকে সময় ‘কিনে নিতে’ এবং তা আরও লাভজনকভাবে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলিকে ব্যবহার করতে পরিচালিত হই। (ইফি. ৫:১৬) আমাদের ঈশ্বরীয় ভক্তি ও ইচ্ছুক মনোভাব যিহোবাকে খুশি করে তা জানি বলে আমাদের বিরাট উদ্দীপনা রয়েছে কঠোর পরিশ্রমের সাথে তা চালিয়ে যেতে। এখন আমরা যে আশীর্বাদগুলি পাই তা এবং ভবিষ্যতে জীবনের প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের সংকল্প হল, রাজ্যের আগ্রহের জন্য ক্রমাগত “পরিশ্রম ও প্রাণপণ” করে যাওয়া।—১ তীম. ৪:১০.
৬ ভক্তি ও আত্ম-ত্যাগের মনোভাব: আজকের দিনে অধিকাংশ লোক সব কিছুর উপরে বস্তুগত প্রয়োজনীয়তা ও আগ্রহের উপর প্রাধান্য দেয়। তারা কী খাবে, পান করবে অথবা পরবে তার প্রতি মনোযোগ দেওয়াকে সম্পূর্ণরূপে ন্যায্য বলে মনে করে। (মথি ৬:৩১) প্রয়োজনীয়তাগুলির দ্বারা সন্তুষ্ট না হয়ে তারা এখনই পূর্ণরূপে উত্তম জীবনযাপন উপভোগ করার লক্ষ্যের দ্বারা প্ররোচিত হয় এবং ‘বহুবৎসরের নিমিত্ত অনেক দ্রব্য সঞ্চয় করে, যাতে করে তারা বিশ্রাম করতে, ভোজন পান করতে ও আমোদ প্রমোদ উপভোগ করতে পারে।’ (লূক ১২:১৯) প্রতীকরূপী একজন গির্জার লোক মনে করে যে, ধর্মের জন্য কোন ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা হল তার অধিকারের উপর অবৈধভাবে হস্তার্পণ করা। পরিত্যাগ অথবা এমনকি কিছু বস্তুগত অনুধাবনকে বাদ দেওয়ার ধারণাটি অথবা উপভোগ্য আগ্রহকে ছেড়ে দেওয়া হল বিরক্তিকর। নিজের উপর চিন্তাধারা কেন্দ্রীভূত করে আত্ম-ত্যাগের মনোভাব অর্জন করা হল অবাস্তব, অব্যবহারিক।
৭ আমরা বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের চিন্তাধারাকে উন্নীত করেছে যাতে করে আমরা মানুষের পরিবর্তে ঈশ্বরের চিন্তাধারা চিন্তা করি। (যিশা. ৫৫: ৮, ৯) জীবনে আমাদের লক্ষ্যগুলি রয়েছে যা মাংসিক অনুধাবনগুলিকে ছাড়িয়ে যায়। সমগ্র বিশ্বে যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতিপাদন এবং তাঁর নামের পবিত্রীকরণ করাই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়। এই বিচার্য বিষয়গুলির বিশালতা এত বড় যে, তুলনা করলে, সমস্ত জাতি “তাঁহার সম্মুখে . . . অবস্তুবৎ।” (যিশা. ৪০:১৭) এমন কোন লক্ষ্য নিয়ে জীবনযাপন করা যা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে তা অবশ্যই মূর্খতা হিসাবে দেখা হবে।—১ করি. ৩:১৯.
৮ সুতরাং আমাদের রাজ্যের কাজকে চালিয়ে নিয়ে যেতে যেখানে কিছু বস্তুগত জিনিসের প্রয়োজন আছে এবং যেখানে কিছু জিনিস কার্যকারী, সেখানে আমরা উপলব্ধি করি যে সেগুলি প্রকৃতপক্ষে “বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়” নয়। (ফিলি. ১:১০, NW) আমরা ১ তীমথিয় ৬:৮ পদের মনোভাবকে ধরে রাখি আমাদের বস্তুগত আগ্রহের অনুধাবনকে সীমিত রেখে এবং বিজ্ঞতার সাথে আমাদের হৃদয় ‘যা যা অদৃশ্য, যা অনন্তকালস্থায়ী’ তার প্রতি রাখতে প্রচেষ্টা করছি।—২ করি. ৪:১৮.
৯ ঈশ্বরের চিন্তাধারার বিষয়ে আমরা যত বেশি চিন্তা করি, বস্তুগত বিষয়গুলি সম্বন্ধে আমরা তত কম উদ্বিগ্ন হই। যিহোবা ইতিমধ্যেই আমাদের জন্য যা করেছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য যে অপূর্ব আশীর্বাদগুলি সম্বন্ধে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন তার বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমরা যে কোন ত্যাগ স্বীকার যা তিনি আমাদের কাছ থেকে চান করতে ইচ্ছুক হই। (মার্ক ১০:২৯, ৩০) আমাদের অস্তিত্বের জন্য আমরা তাঁর কাছে ঋণী। যদি তাঁর মধ্যে দয়া ও প্রেম না থাকত, তাহলে আমরা এখন জীবন উপভোগ করতে আর ভবিষ্যতে যা আছে তা পারতাম না। আমরা নিজেদের উৎসর্গ করা বাধ্যবাধকতা বলে মনে করি, কারণ প্রতিটি জিনিস যা আমরা তাঁর পরিচর্যায় করছি তা হল ‘যা করতে বাধ্য ছিলাম তাই করছি।’ (লূক ১৭:১০) যিহোবাকে ফিরিয়ে দিতে যা কিছু আমাদের কাছে চাওয়া হয়, আমরা প্রফুল্লচিত্তে তা পূরণ করি এই জেনে যে আমরা “আশীর্ব্বাদের সহিত শস্য” কাটব।—২ করি. ৯:৬, ৭.
১০ ইচ্ছুক কর্মীদের এখনই প্রয়োজন: খ্রীষ্টিয় মণ্ডলীর সূত্রপাতের প্রথম থেকেই এটি এক চরম কার্যের পর্যায়ে প্রবেশ করে। সা. শ. ৭০ সালে যিরূশালেম পদদলিত হওয়ার পূর্বে এক পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্যদানের প্রয়োজন হয়। সেই সময়ে যীশুরা শিষ্যেরা “বাক্যে নিবিষ্ট ছিলেন।” (প্রেরিত ১৮:৫) দ্রুত বৃদ্ধির ফলে আরও প্রচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার, পালকদের দক্ষ হওযার এবং তাদের সমর্থন লাভ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জাগতিক কর্তৃপক্ষের সাথে ব্যবহারে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ব্যক্তিরা, যারা বস্তুগত জিনিসগুলি সংগ্রহ ও বিতরণে তত্ত্বাবধান করতে সমর্থ তাদের প্রয়োজন ছিল। (প্রেরিত ৬:১-৬; ইফি. ৪:১১) যেখানে অল্পই উল্লেখযোগ্যরূপে কাজ করেছে, সেখানে বেশির ভাগই অলক্ষ্যে থেকে গেছে। কিন্তু তারা সকলেই ‘প্রাণপণে,’ কাজটি সমাপ্ত করতে সম্পূর্ণ-হৃদয়ে একত্রে কাজ করেছিল।—লূক ১৩:২৪.
১১ এর পরের শতাব্দীগুলিতে জগদ্ব্যাপী কাজে প্রাণপণ করার আপেক্ষিকভাবে অল্পই প্রয়োজন ছিল, কিন্তু পুনরায় এক ব্যাপক রাজ্যের কাজ শুরু হয় যখন ১৯১৪ সালে যীশু তাঁর রাজ্যের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সারা জগতের দেশগুলিতে লক্ষ লক্ষ ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সাহায্য করতে, রাজ্যের কাজের জন্য যে কর্মীর প্রয়োজন তা যে খুব বড় হবে সেটি অল্পজনই প্রথমে উপলব্ধি করেছিল।
১২ আজকে সংগঠন গভীরভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের এক ব্যাপক কাজে যুক্ত যা আমাদের সংস্থানের উপর সীমার শেষ পর্যন্ত চাপ দিয়েছে। রাজ্যের কাজ ব্যাপক মাত্রায় দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আমাদের সময়ের গুরুত্বতা আমাদের প্রাণপণ করতে এবং যে কাজ শেষ করার আছে তা সম্পাদন করতে আমাদের প্রতিটি সম্পদ ব্যবহার করতে পরিচালিত করে। সমগ্র দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ খুব কাছে আসার সাথে সাথে আমরা সামনের দিনগুলিতে আরও বেশি কাজের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি। এই জরুরি একত্রীকরণের কাজে নিজেকে স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করতে যিহোবার উৎসর্গীকৃত প্রত্যেক দাসকে আহ্বান করা হচ্ছে।
১৩ কী করার প্রয়োজন আছে? আমরা অকপটে বলতে পারি যে “প্রভুর কার্য্যে . . . উপচিয়া” পড়ার আছে। (১ করি. ১৫:৫৮) বহু এলাকায় শস্য পেকে গেছে, কিন্তু সেখানে কর্মী খুবই কম। আমাদের সকলকে আমন্ত্রণ করা হচ্ছে কেবলমাত্র আমাদের নিজস্ব এলাকায় সাক্ষ্যদানে পুঙ্খানুপুঙ্খ হয়ে নয় কিন্তু যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে পরিচর্যার জন্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও আমরা যেন আমাদের অংশটি করি।
১৪ পৃথিবীর সর্বত্র সাক্ষীরা অন্যান্য কাজকর্মে যেভাবে স্বেচ্ছায় নিজেদের উৎসর্গ করে তা দেখা প্রশংসনীয়। এগুলি হয়ত উপাসনার স্থানগুলির নির্মাণ প্রকল্প থেকে, সম্মেলনগুলিতে পরিচর্যা করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে ত্রাণকার্যে প্রচেষ্টার সাথে সাহায্য করা ও নিয়মিত ভিত্তিতে স্থানীয় কিংডম হলকে পরিষ্কার করা পর্যন্ত হতে পারে। শেষ কাজটির সাথে মিল রেখে একটা বিষয়ে সর্বদা নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন আছে যে প্রতিটি সভার শেষে যেন কিংডম হল পরিচ্ছন্ন এ সুশৃঙ্খল অবস্থায় ছেড়ে যাওয়া হয়। হয়ত দাসোচিত কাজ বলে বিবেচিত কাজগুলি সম্পন্ন করা লূক ১৬:১০ পদে যীশুর কথাগুলির এক সঠিক বোধগম্যতা প্রদর্শন করে যা বলে: “যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত; আর যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে অধার্ম্মিক, সে প্রচুর বিষয়েও অধার্ম্মিক।”
◼ মণ্ডলীর কাজকর্মগুলিকে সমর্থন করা: যদিও প্রতিটি মণ্ডলী সমগ্র সংগঠনের অংশ হিসাবে কাজ করে এবং “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর কাজ থেকে নির্দেশনা পায়, কিন্তু এটি রাজ্যের প্রতিটি প্রকাশকের দ্বারা গঠিত। (মথি ২৪:৪৫) এর সম্পাদন ব্যাপকভাবে নির্ভর করে প্রতিটি সাক্ষী কতটা ইচ্ছুক এ কতটা করতে সক্ষম তার উপর। মণ্ডলী তার এলাকার সুসমাচার প্রচার করা, নতুন শিষ্য তৈরি করা এবং তারপর তাদের আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় করার উপর দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করে। আমরা প্রত্যেকেই এর অংশ হতে পারি। এছাড়াও ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, সভাগুলিতে অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং মণ্ডলীতে প্রয়োজনে অন্যদের সাহায্য করা এই সব ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের জন্য লক্ষ্য স্থাপন করতে পারি। আমাদের ইচ্ছাকে প্রদর্শন করতে এই কাজগুলি আমাদের জন্য অনেক উত্তম সুযোগ দান করে থাকে।
◼ তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নেওয়া: যিহোবা মনোনীত প্রাচীনদের উপর প্রতিটি মণ্ডলীর দেখাশোনার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। (প্রেরিত ২০:২৮) এরা হলেন সেই সব ব্যক্তি যারা এই সুযোগের জন্য যোগ্য হতে এগিয়ে গেছেন। (১ তীম. ৩:১) মণ্ডলীতে প্রতিটি ভাইয়ের আরও কিছু দায়িত্ব অর্জন করার সম্ভাবনা থাকে। অনেক ভাইয়েরা আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করছেন আর মণ্ডলীর প্রেমময় প্রাচীনদের পরচালনা এবং সহায়তার তা বাড়িয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। এই ব্যক্তিদের বাইবেলের এবং আমাদের প্রকাশনাগুলির অধ্যবসায়ী ছাত্র হওয়া উচিত। আত্মায় নিযুক্ত প্রাচীনদের বশীভূত হয়ে, তাদের বিশ্বাসকে অনুকরণ করে এবং অধ্যক্ষদের মধ্যে যে গুণগুলি পরিলক্ষিত হয়, সেগুলিকে অর্জন করে তারা তাদের ইচ্ছুক মনোভাবকে প্রদর্শন করতে পারে।—ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭.
◼ পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা কাজ গ্রহণ করা: প্রাথমিকরূপে মণ্ডলীর কাজ হল সুসমাচার প্রচার করা। (মথি ২৪:১৪) অগ্রগামী হিসাবে তালিকার নাম লেখানোর দ্বারা যখন উদ্যোগী ব্যক্তিরা তাদের প্রচেষ্টাকে প্রবল করা তখন তা কতই না আশীর্বাদ! সাধারণত এটি তাদের ব্যক্তিগত জীবনে কিছু রদবদল করাকে অন্তর্ভুক্ত করে। পরিচর্যায় এই বিশেষ ক্ষেত্রটিকে চালিয়ে যেতে তাদের জন্য হয়ত অতিরিক্ত কিছুর রদবদল করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু যারা এক বছর অথবা তার পরেও সামরিক কিছু নিরুৎসাহের কারণের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে সেই সুযোগকে ধরে রাখে, তারা নিশ্চিতই যিহোবার প্রচুর আশীর্বাদ উপভোগ করে। প্রেমময় প্রাচীন এবং অন্যান্য পরিপক্ক ব্যক্তির কথায় ও কাজে তাদের উৎসাহদানের দ্বারা অগ্রগামীদের কাজকে সফল্যমণ্ডীত করতে পারেন। সেই সব যুবক যারা স্কুলের পাঠ শেষ করার পর সরাসরিভাবে অগ্যগামীর কাজে নামে তাদের দ্বারা কী অপূর্ব মনোভাবই না প্রদর্শিত হয়! একই বিষয় সত্য সেই সব প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রেও যারা তাদের জাগতিক কাজের দায়িত্ব কম হওয়ার সাথে সাথে নিয়মিত অগ্রগামী হিসাবে নাম লেখায়। একজন উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানের কাছে এটি কতই না পরিতৃপ্তি আনে যখন এইভাবে সে যিহোবার দ্রুতগতিতে একত্রীকরণের কাজে সহযোগিতা করে।—যিশা. ৬০:২২.
◼ নির্মাণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ এবং সভার স্থানগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা: আক্ষরিকভাবে শত শত কিংডম হল এবং সেইসঙ্গে অনেক অধিবেশন হল নির্মিত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের ভাইবোনেদের দ্বারা এক অসাধারণ পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে যারা স্বেচ্ছাকৃতভাবে তাদের সময় এবং দক্ষতা দান করেছেন। (১ বংশা. ২৮:২১) যেখানে হয়ত প্রয়োজন সেখানে তা সম্পাদন করার দ্বারা হাজার হাজার ইচ্ছুক কর্মীরা এই প্রকল্পগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণ করেছে। (২ বংশা. ৩৪:৮) যেহেতু কাজটির একটাই উদ্দেশ্য পবিত্র পরিচর্যা করা, তাই যারা নিজেদের স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করে সহযোগিতা করছে, তারা তাদের পরিচর্যার জন্য বেতন চায় না ঠিক যেমন তারা গৃহ থেকে প্রচারে জন্য, মণ্ডলীতে জনসাধারণের বক্তৃতা দেওয়ার জন্য অথবা অধিবেশনে বা সম্মেলনের কাজে সাহায্যের জন্য চায় না। এই স্বেচ্ছাসেবকেরা যিহোবার প্রশংসা করতে উপাসনার স্থানগুলির পরিকল্পনা ও নির্মাণ প্রকল্পে বিনামূল্যে তাদের পরিচর্যা উৎসর্গ করে থাকে। তারা আগ্রহের সাথে সেই সব বিষয়গুলিতে যেমন আইনের কাগজপত্রগুলি সম্পন্ন করতে, হিসাবের তালিকা রাখা, কেনাকাটার ক্ষেত্রে যোগাযোগ করা এবং প্রয়োজনীয় বস্তুগত জিনিসগুলির হিসাব রাখার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। যেহেতু তাদের সমস্ত কর্মদক্ষতা ও সম্পদ যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত, তাই যিহোবার এই বিশ্বস্ত দাসেরা উপরি ব্যয় যোগ করে না অথবা তাদের পরিচর্যা থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, যে কাজ তারা করে তার থেকে মুনাফা লাভ করে না। (মে ১৯৯২, আমাদের রাজ্যের পরিচর্য্যার, পৃষ্ঠা ৪, অনুচ্ছেদ ১০ দেখুন।) এই কাজের জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়ী কর্মীর যারা “প্রাণের সহিত . . . প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া” তাদের পরিচর্যা করে থাকে।—কল. ৩:২৩.
১৫ তাহলে এটি কী, যেটি যিহোবার লোকেদের ইচ্ছাকে অদ্বিতীয় করে? এটি হল দান করার মনোভাব। তাদের উদার দানের সাথে অর্থ অথবা বস্তুগত জিনিসগুলি ছাড়া আরও কিছু জড়িত—তা হল তারা “নিজেদের স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করে।” (গীত. ১১০:৩, NW) এটি হল যিহোবার প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের মূল উপাদান। আমরা একটি বিশেষ উপায়ে পুরস্কৃত। আমরা “বেশি সুখ” লাভ করি এবং আমরা “আশীর্ব্বাদের সহিত শস্যও কাটি” কারণ আমরা যা করি তা অন্যেরা উপলব্ধি করে যারা আমাদের ফিরিয়ে দেয়। (প্রেরিত ২০:৩৫, NW; ২ করি. ৯:৬; লূক ৬:৩৮) আমাদের মহান উপকারদাতা হলেন আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা, যিনি “হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভালবাসেন।” (২ করি. ৯:৭) তিনি আশীর্বাদের সাথে আমাদের শতগুণ ফিরিয়ে দেবেন যা হবে চিরস্থায়ী। (মালাখি ৩:১০; রোমীয় ৬:২৩) তাই যখন যিহোবার পরিচর্যায় আপনার সুয়োগ আসে, তখন আপনি কি স্বেচ্ছায় নিজেকে উৎসর্গ করেন এবং যিশাইয়ের মত উত্তর দেন: “এই আমি, আমাকে পাঠাও?”—যিশা. ৬:৮.