ক্রমাগতভাবে আমাদের দীপ্তিকে প্রজ্বলিত করা
১ দীপ্তি কী? অভিধান এটিকে “এমন কিছু যা দর্শনকে সম্ভব করে” এই বলে সংজ্ঞা করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, মানুষের প্রযুক্তিগত উন্নতি সত্ত্বেও, ইয়োব ৩৮:২৪ পদে যে প্রশ্নটি যিহোবা উত্থাপন করেছিলেন তার উত্তর সে এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে জানে না। আমরা কি দীপ্তি ছাড়া চলতে পারি? দীপ্তি না থাকলে আমরা অস্তিত্বেই থাকতে পারতাম না। দৈহিক দৃষ্টির জন্য দীপ্তি অত্যন্ত প্রয়োজন আর বাইবেল আমাদের বলে যে আধ্যাত্মিক অর্থে, “ঈশ্বর জ্যোতি।” (১ যোহন ১:৫) আমরা সম্পূর্ণরূপে তাঁর উপরে নির্ভরশীল যিনি “আমাদিগকে দীপ্তি দিয়াছেন।”—গীত. ১১৮:২৭.
২ দৈহিক অর্থে এটি সত্য কিন্তু এমনকি আধ্যাত্মিক অর্থে এটি আরও সত্য। মিথ্যা ধর্ম অধিকাংশ লোককে ভুল পরিচালনা দিয়েছে, ‘অন্ধ লোকদের ন্যায় ভিত্তির জন্য হাঁতড়াইতে’ তাদের আধ্যাত্মিক অন্ধকারে ছেড়ে দিয়েছে। (যিশা. ৫৯:৯, ১০) তাঁর অতীব উৎকৃষ্ট প্রেম ও করুণার দ্বারা প্রণোদিত হয়ে যিহোবা ‘তাঁর দীপ্তি ও সত্য প্রেরণ করেন।’ (গীত. ৪৩:৩) আক্ষরিকভাবে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা উপলব্ধি প্রকাশ করে সাড়া দিয়েছে, “অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে” এসেছে।—১ পিতর ২:৯.
৩ জগতে এই দীপ্তি আনয়ণের ক্ষেত্রে যীশু খ্রীষ্ট অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি জ্যোতিঃস্বরূপ হইয়া এই জগতে আসিয়াছি, যেন, যে কেহ আমাতে বিশ্বাস করে সে অন্ধকারে না থাকে।” (যোহন ১২:৪৬) সত্যের আলোকে পরিচিত করানোর জন্য তাঁর সমস্ত সময়, শক্তি এবং সম্পদ পরিচালিত হয়েছিল। তিনি তাঁর মাতৃভূমির সর্বত্র ভ্রমণ করে প্রচার করেছিলেন এবং প্রতিটি নগর ও গ্রামে শিক্ষা দিয়েছিলেন। সমস্ত দিক থেকে তিনি কঠোর নির্যাতন সহ্য করেছিলেন, কিন্তু সত্যের আলো ছড়িয়ে দিতে তাঁর কাজে তিনি দৃঢ় ছিলেন।
৪ মনের মধ্যে একটি নিদিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে মনোনয়ন করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং শিষ্যদের সংগঠিত করার উপর যীশু মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। মথি ৫:১৪-১৬ পদে তাদের প্রতি তাঁর নির্দেশ সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “তোমরা জগতের দীপ্তি; . . . তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক, যেন তাহারা তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিয়া তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে।” ঠিক যীশুর মত, তারা “জগতে জ্যোতির্গণের ন্যায়” হয়েছিল, বহুদূর পর্যন্ত সত্যের আলো ছড়িয়েছিল। (ফিলি. ২:১৫) এটিকে তাদের জীবনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হিসাবে মনে করে তারা আনন্দের সাথে সেই দায়িত্বকে গ্রহণ করেছিল। অল্প কিছুদিন পরে, পৌল বলতে সমর্থ হয়েছিলেন যে সুসমাচার “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে।” (কল. ১:২৩) সেই মহান কাজকে সম্পাদন করার ক্ষেত্রে সমগ্র খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ঐক্যবদ্ধ ছিল।
৫ যারা “অন্ধকারের ক্রিয়া সকল ত্যাগ” করেছে তাদের মাঝে আমরা আসতে পেরেছি বলে আজকের দিনে আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। (রোমীয় ১৩:১২, ১৩) যীশু এবং অতীতের খ্রীষ্টানদের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ অনুকরণ করার দ্বারা আমরা আমাদের উপলব্ধিবোধ প্রকাশ করতে পারি। মানব ইতিহাসের যে কোন সময়ের চাইতে অন্যদের সত্য শোনার প্রয়োজন এখন আরও বেশি জরুরি এবং অত্যাবশ্যকীয়। এর গুরুত্বতা ও সুদূর-প্রসারী উপকারগুলির পরিপ্রেক্ষিতে এই কাজের সাথে অন্য কোন কাজকে তুলনা করা যেতে পারে না।
৬ কিভাবে আমরা জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রজ্বলিত হতে পারি? আমাদের দীপ্তিকে তুলে ধরার প্রাথমিক উপায় হল রাজ্যের প্রচার কাজে অংশ নেওয়া। তার নির্বাচিত এলাকায় প্রচার করার জন্য প্রতিটি মণ্ডলীর নিয়মিত, সংগঠিত ব্যবস্থাদি রয়েছে। বিভিন্ন রকমের ও বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর পরিমাণে সাহিত্যাদি প্রাপ্তিসাধ্য করা হয়েছে। সভাগুলির মাধ্যমে ব্যাপক শিক্ষা এবং ব্যক্তিগতভাবে অন্যদের প্রশিক্ষণদানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা সহযোগিতা প্রদান করা হয়। পুরুষ, নারী, বয়স্ক ব্যক্তি এবং এমনকি ছোটদের অংশগ্রহণ করার সুযোগগুলি আছে। তাদের যতটুকু ক্ষমতা থাকুক না কেন ও পরিস্থিতি যতটুকু অনুকূল হোক না কেন মণ্ডলীতে প্রতিটি ব্যক্তিকে অংশ গ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। মণ্ডলীর সমস্ত কাজ কেন্দ্রীভূত হয় প্রচার করার উপর কোন না কোন এক উপায়ে অংশ গ্রহণ করতে প্রতিটি সদস্যকে সাহায্য করার ব্যবস্থার সাথে। নিয়মিত, মণ্ডলীর সাথে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা হল, আমাদের দীপ্তি যে প্রজ্বলিত সেবিষয়ে নিশ্চিত করার সবচেয়ে উত্তম উপায়।
৭ আমরা প্রজ্বলিত করতে পারি সেই উপায়গুলির মাধ্যমে যা হয়ত মৌখিক সাক্ষ্যদানের অন্তর্ভুক্ত নয়। সাধারণভাবে আমাদের আচরণের দ্বারা আমরা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারি। সেটিই পিতরের মনে ছিল যখন তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন: “পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ; তাহা হইলে তাহারা . . . স্বচক্ষে তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিলে সেই বিষয়ে . . . ঈশ্বরের গৌরব করিবে।” (১ পিতর ২:১২) অনেকেই কোন কাজ অথবা সংগঠনকে বিচার করে তার সাথে যারা সংযুক্ত তাদের আচরণের দ্বারা। যখন পর্যবেক্ষকেরা, লোকেদের যারা নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ, সৎ, শান্তিপ্রিয় এবং আইন-মান্যকারী লক্ষ্য করেন, তখন তারা এইধরনের লোকেদের আলাদা রূপে দেখে থাকেন এবং এই উপসংহার করেন যে তারা যে মানগুলির দ্বারা জীবনযাপন করে তা বেশির ভাগ লোকেরা যা মেনে চলে তার চাইতে অনেক উচ্চমানের। তাই যখন একজন স্বামী প্রেমপূর্ণ উপায়ে তার স্ত্রীকে সম্মান এবং স্নেহ করেন তখন তিনি তার দীপ্তিকে প্রজ্বলিত করেন, তার স্বামীর মস্তকব্যবস্থাকে সম্মান করে স্ত্রীও তাই করেন। ছেলেমেয়েরা ভিন্নরূপে বিশিষ্ট হয় যখন তারা তাদের পিতামাতাদের বাধ্য হয় এবং যৌন অনৈতিকতা ও ড্রাগের অপব্যবহার এড়িয়ে চলে। একজন কর্মচারী যে তার কাজ সম্বন্ধে সচেতন, সৎ এবং অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখায় তার মূল্য খুবই উচ্চ। এই খ্রীষ্টীয় গুণাবলিগুলি প্রদর্শন করার দ্বারা আমরা আমাদের দীপ্তিকে প্রকাশ করি, অন্যদের কাছে আমাদের জীবনের পথকে সুপারিশ করি।
৮ ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা যা শিখেছি সেই সম্বন্ধে অন্যদের কাছে কথা বলাই হল প্রচার করা। সেটি করা হয় সভাগুলিতে বক্তৃতা দিয়ে অথবা দ্বারে কথা বলে, কিন্তু এটি সেই ক্ষেত্রগুলিতে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের প্রত্যহিক কার্যাবলি আমাদের কোটি কোটি লোকেদের সান্নিধ্যে নিয়ে আসে। দিনে কতবার আপনি আপনার পাশের প্রতিবেশীর সাথে কথা বলেন? কতবার এসে কেউ আপনার দরজায় কড়া নাড়ে? কত রকমের লোকেদের সান্নিধ্যে আপনি আসেন যখন আপনি আপনার কেনাকাটা করেন, বাসে চড়েন অথবা যখন আপনার জাগতিক কর্মস্থলে কাজ করেন? যদি তুমি স্কুলের একজন অল্পবয়স্ক বিদ্যার্থী হও, তাহলে প্রতিদিন তুমি কতজনার সাথে কথা বলেছো তার সংখ্যা কি গুণতে পার? অন্যদের সাথে কথা বলার সুযোগগুলি মূলতঃ সীমিত নয়। সমস্ত কিছুই করার জন্য আপনার প্রয়োজন মনের মধ্যে কিছু শাস্ত্রীয় চিন্তাধারা রাখা, একটি বাইবেল এবং কিছু ট্র্যাক্ট রাখা এবং সুযোগ এলেই এগিয়ে গিয়ে কথা বলা।
৯ এমনকি যদিও রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদান সহজ, তবুও কেউ কেউ এটি করতে অনিচ্ছাবোধ করে। তারা হয়ত কথাবার্তায় চাপা হতে পারে এবং এই জোর দেয় যে তারা অপরিচিতের কাছে উপস্থিত হওয়ায় লাজুক অথবা খুব নার্ভাস। তারা হয়ত তাদের নিজেদের প্রতি মনোযোগ আনা সম্বন্ধে অথবা প্রতিকূল সাড়া পাওয়া সম্বন্ধে শঙ্কিত হতে পারে। যারা রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদানে অভিজ্ঞ তারা আপনাকে বলতে পারবে যে উদ্বিগ্নতার জন্য খুব কমই কারণ আছে। অন্যেরা মূলতঃ আমাদের মত; তাদেরও একই প্রয়োজনীয়তাগুলি রয়েছে, তারা একই উদ্বিগ্নতাগুলি অনুভব করে এবং তাদের নিজেদের ও তাদের পরিবারের জন্য একই জিনিসগুলি চায়। বেশির ভাগই একগাল হাসি অথবা বন্ধুত্বসুলভ সংবর্ধনার প্রতি সদয়তার সাথে সাড়া দেবে। শুরু করার জন্য আপনার হয়ত ‘সাহসী হওয়ার’ প্রয়োজন হতে পারে। (১ থিষল. ২:২) কিন্তু, একবার শুরু করলে, আপনি হয়ত ফল দেখে অবাক ও আনন্দিত হবেন।
১০ যখন আমরা আমাদের দীপ্তিকে প্রজ্বলিত করি, তখন আমরা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হই: রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদানের ফলস্বরূপ যে সতেজক অভিজ্ঞতাগুলি লাভ করা গিয়েছে এখানে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হল: ৫৫ বছর বয়সের একজন মহিলা রাস্তা পার হচ্ছিলেন। একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা মারার ঠিক মুহূর্তে, একজন বোন তার বাহু আঁকড়ে ধরে বাঁচানোর জন্য এই বলে তাকে টেনে নেন: “অনুগ্রহ করে যত্ন নেবেন। আমরা বিপজ্জনক সময়ে বাস করছি!” তারপর তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন এই সময়টি বিপজ্জনক। মহিলাটি জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কি একজন যিহোবার সাক্ষী?” তার দিদির কাছ থেকে আমাদের একটি বই পেয়ে মহিলাটি যিহোবার সাক্ষীদের কোন একজনের সাথে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন আর এই মুখোমুখি হওয়াটাই তা সম্ভব করেছিল।
১১ একজন বোন ডাক্তারখানায় অপেক্ষা করার ঘরে একটি স্ত্রীলোকের সাথে কথোপকথন শুরু করেন। স্ত্রীলোকটি মনোযোগসহকারে শোনেন এবং তারপর বলেন: “কিছু সময়ের জন্য আমি যিহোবার সাক্ষীদের সম্মুখীন হয়েছিলাম; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভবিষ্যতে যদি আমি নিজে একজন যিহোবার সাক্ষী হই, তাহলে তার কারণ হবে আপনি আমাকে যা বলেছিলেন তার জন্য। আপনার কথা শোনা যেন এক অন্ধকার জায়গায় আলো দেখতে শুরু করার মত।”
১২ অন্যদের সত্য শিখতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সদাশয়তার কাজ উন্নতির একটি উপায় হতে পারে। ক্ষেত্র পরিচর্যা থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুজন বোন যখন একটি বয়স্ক স্ত্রীলোককে বাস থেকে নামতে দেখেন, তাকে অসুস্থ বলে মনে হচ্ছিল। তারা থামেন এবং মহিলাটি কোন সাহায্য চান কি না জিজ্ঞাসা করেন। দুজন সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তি তার প্রতি যে আগ্রহ দেখাবে তাতে তিনি এত অবাক হন যে তিনি এটি জানতে দৃঢ়ভাবে জোর করতে থাকেন যে এইধরনের দয়ার ইঙ্গিতের পশ্চাতে কী ছিল। এটি সাক্ষ্যদানের সুযোগ প্রদান করে। মহিলাটি তৎক্ষণাৎ তার ঠিকানা দেন এবং তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তাদের উষ্ণ আমন্ত্রণ জানান। অধ্যয়ন শুরু হয়। শীঘ্রই মহিলাটি সভাগুলিতে যোগদান করতে শুরু করেন আর এখন অন্যদের সাথে সত্য বন্টন করছেন।
১৩ একজন বয়স্ক বোন সমুদ্রের ধারে ভোর-বেলায় সাক্ষ্যদানের সুযোগ নেন। তিনি গৃহপরিচারিকা, শিশু তত্ত্বাবধানকারী, ব্যাঙ্কের ক্লার্ক ও অন্যান্যেরা যারা সমুদ্রতটে তাদের প্রাতঃভ্রমণ করেন, তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বালির কাছে বেঞ্চের উপর বসে তিনি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেন। কিছুসংখ্যক লোক তার কাছ থেকে সত্য শেখে এবং এখন তারা যিহোবার সাক্ষী।
১৪ জাগতিক কর্মস্থলে এক বোন তার এক সহকর্মীকে কোন একটি রাজনৈতিক দল যা হয়ত জগতের সমস্যা সকল সমাধান করতে পারবে বলে সে বিশ্বাস করে, সেই সম্বন্ধে বলতে শোনেন। ঈশ্বরের রাজ্য কী করবে সেই সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞাগুলি বর্ণনা করে বোনটি কথা বলেন। কর্মস্থলে এই আলোচনা গৃহেতে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করতে পরিচালিত করে এবং পরিশেষে মহিলাটি ও তার স্বামী সাক্ষী হন।
১৫ কখনও ভুলে যাবেন না আপনি একজন সাক্ষী! যখন যীশু তাঁর শিষ্যদের “জগতের দীপ্তি” হিসাবে বর্ণনা করেন, তিনি যুক্তি করেছিলেন যে ঈশ্বরের বাক্যের আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোক থেকে অন্যদের উপকৃত করতে তাদের সাহায্যকারী হতে হবে। যদি আমরা যীশুর উপদেশ প্রয়োগ করি, তাহলে কিভাবে আমরা আমাদের পরিচর্যাকে দেখব?
১৬ কাজের সন্ধান করার সময়ে, কিছু লোক পার্ট-টাইমের কাজ বেছে নেয়। কতটা সময় ও প্রচেষ্টা তারা এতে দেবে, সেই বিষয়ে তারা সীমিত সময় দান করে কারণ তারা তাদের সময়ের বেশির ভাগ সেই সব অনুধাবনীয় কাজগুলিতে ব্যয় করা বেছে নেয় যাতে তারা আরও বেশি আনন্দ খুঁজে পায়। আমাদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমরা কি একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে থাকি? এমনকি যদিও আমরা হয়ত দায়বদ্ধ মনে করি এবং এমনকি পরিচর্যার জন্য কিছুটা সময় সরিয়ে রাখতে ইচ্ছুক থাকি, তবুও আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য কি অন্যত্র থাকে?
১৭ পার্ট-টাইম খ্রীষ্টান বলে কোন জিনিস নেই তা উপলব্ধি করে, ‘আপনাদিগকে অস্বীকার করে’ এবং “ক্রমাগতভাবে” যীশুকে অনুসরণ করতে সম্মত হয়ে আমরা আমাদের উৎসর্গীকরণ ঘোষণা করেছি। (বাঁকা আক্ষর আমাদের।) (মথি ১৬:২৪, NW) আমাদের আকাঙ্ক্ষা হল যেখানেই থাকুক না কেন লোকেদের কাছে আমাদের দীপ্তি প্রজ্বলিত করার জন্য তাদের কাছে পৌঁছাতে ক্রমাগত “সম্পূর্ণ-হৃদয়ে” প্রতিটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। (কল. ৩:২৩, ২৪, NW) আমাদের অবশ্যই জগতের মনোভাবগুলিকে প্রতিরোধ করতে হবে, শুরুতে যেমন ছিল আমাদের সেই উদ্যোগকে বজায় রাখতে হবে এবং নিশ্চিত হতে হবে যে আমাদের দীপ্তি ক্রমাগত উজ্জ্বলভাবে প্রজ্বলিত হচ্ছে। কেউ কেউ হয়ত তাদের উদ্যোগকে ঝিমিয়ে পড়তে দিতে অনুমতি দিয়েছে আর তাই তাদের দীপ্তি কেবলমাত্র ক্ষীণভাবে জ্বলে উঠে, কম দূরত্ব থেকে কদাচিৎ দেখা যায়। এইধরনের একজন ব্যক্তির হয়ত পরিচর্যার জন্য হারিয়ে যাওয়া উদ্যোগ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্যের প্রয়োজন।
১৮ অনেকের কাছে আমাদের বার্তা জনপ্রিয় নয় বলে কেউ কেউ পিছিয়ে যেতে পারে। পৌল বলেছিলেন যে খ্রীষ্ট সম্বন্ধীয় বার্তাটি ছিল “যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদের কাছে মূর্খতা।” (১ করি. ১:১৮) কিন্তু, অন্যেরা যাই বলুক না কেন, তিনি দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছিলেন: “আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি।” (রোমীয় ১:১৬) যে লজ্জিত সে নিকৃষ্ট অথবা অযোগ্য মনে করে। যখন আমরা বিশ্বের সর্বোচ্চ সার্বভৌমের সম্বন্ধে এবং আমাদের অনন্ত সুখের জন্য তিনি যে অপূর্ব আয়োজন করেছেন সেই সম্বন্ধে কথা বলি, তখন আমরা কী করে লজ্জিত বোধ করতে পারি? যখন আমরা এই সত্যগুলি অন্যদের কাছে বলি আমরা যে নিকৃষ্ট অথবা অযোগ্য মনে করি, তা চিন্তাতীত। বরঞ্চ, আমাদের যথাসাধ্য করতে আমাদের জোর করা উচিত, আমাদের দৃঢ় নিশ্চয়তা প্রদর্শন করা যে আমাদের “লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই।” (বাঁকা অক্ষর আমাদের।)—২ তীম. ২:১৫.
১৯ সত্যের আলো যা এখন জগতের চতুর্দিকে দেশগুলিতে প্রজ্বলিত হচ্ছে, তা উষ্ণভাবে এক পরমদেশ নতুন জগতে অনন্ত জীবনের আশা প্রদান করে। আসুন আমরা দেখাই যে ক্রমাগতভাবে আমাদের দীপ্তিকে প্রজ্বলিত করার যে উপদেশ তা আমরা হৃদয়ে গ্রহণ করেছি! যদি আমরা করি, তাহলে আমাদের শিষ্যদের মত আনন্দ করার কারণ থাকবে, যারা প্রতিদিন “উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।” (বাঁকা অক্ষর আমাদের।)—প্রেরিত ৫:৪২.