লোকেদের কাছে প্রচার করার আরেকটা উপায়—টেলিফোন
১ আমরা যে আজকে “শেষ কালে” বাস করছি তার প্রমাণের কোন অভাব নেই। (২ তীম. ৩:১) আর তাই প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ করার জন্য আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই। লোকেদের ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসার জন্য আমাদের সবার এখন খুব মন দিয়ে প্রচার করা উচিত।
২ প্রেরিত পৌল জানতেন যে ঈশ্বরের “ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায় ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীম. ২:৪) পৌলের সত্যের জ্ঞান ছিল আর তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাকে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে লোকেদের জানানো দরকার। (রোমীয় ১০:১০) সুসমাচারের ব্যাপারে তিনি এমনকি মনে করতেন যে তিনি লোকেদের কাছে ঋণী। আর তাই তিনি সবসময় সুসমাচার প্রচার করতেন। তিনি বলেছিলেন: “আমার যতটা সাধ্য, আমি . . . সুসমাচার প্রচার করিতে উৎসুক। কেননা আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি।”—রোমীয় ১:১৪-১৭.
৩ আমরাও কি প্রেরিত পৌলের মতো নিজেদেরকে অন্যদের কাছে ঋণী বলে মনে করি এবং আমাদের এলাকার সবার কাছে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করি? এটা ঠিক যে আমরা লোকেদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে পছন্দ করি যেমন ঘরে-ঘরে গিয়ে ও রাস্তায় কিন্তু অন্যভাবেও তো তাদের কাছে প্রচার করা যায়। এখনও আমাদের এলাকায় এমন লোকেরা আছেন, যারা কখনও যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে কথাই বলেননি। কিন্তু কেন?
৪ যেখানে প্রচার করা হয়নি: আপনার এলাকায় কি বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট আছে যেখানে সবসময় পাহারাদার বসে থাকে আর ঘরে ঘরে গিয়ে লোকেদের সঙ্গে দেখা করতে দেয় না? এমন কোন পুলিশ কোয়ার্টারস আছে যেখানে একেবারেই ঢোকা মানা? এইসব লোকেরা হয়তো কখনোই ঈশ্বরের রাজ্যের কথা শোনেননি। আপনার এলাকায় এমন লোকেরাও কি আছেন যাদের কখনও ঘরে পাওয়া যায় না?
৫ এরকম ভেবে হতাশ হয়ে পড়বেন না যে এই লোকেদের কাছে আমরা হয়তো কোনদিনই যেতে পারব না। যিহোবা তাদের ব্যাপারে কী মনে করেন? প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা [যিহোবার] নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা। . . . আর আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান কর।” (২ পিতর ৩:৯, ১৫) এটা এমনই এক সময় যখন লোকেদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আর যিহোবার কাছে সবার জীবনই মূল্যবান। (মথি ১৮:১৪) তাহলে আমরা কী করে লোকেদেরকে যিহোবার মতো ভালবাসতে ও দয়া দেখাতে পারি? আমাদের এলাকার সবার কাছে প্রচার করা হয়েছে কিনা সে দিকে খেয়াল রেখে।—প্রেরিত ২০:২০, ২১; প্রকা. ১৪:৬, ৭.
৬ সবার কাছে ভাল করে প্রচার করার জন্য তৈরি হওয়া: আগে সোসাইটি বলত, যে ভাইবোনদের অসুস্থতা, অক্ষমতা বা অন্য কোন কারণে কিছু সময় বা সবসময়ের জন্য ঘরে থাকতে হয়, তারা টেলিফোনে প্রচার করতে পারেন। এই ভাইবোনেরা এখনও ফোনে প্রচার করেন। কিন্তু এছাড়াও এখন অনেক ভাইবোনেরা এবং নিয়মিত ও সহায়ক অগ্রগামীরা ঘরে-ঘরে প্রচার করা ছাড়াও টেলিফোনে প্রচার করছেন।
৭ কিছু মণ্ডলী টেলিফোনে প্রচার করার ব্যবস্থা করেছে। মণ্ডলীর প্রাচীনেরা যখন এতে নেতৃত্ব দেন তখন খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। চাইলে তিনি নিজে বা অন্য কোন ভাইদের দিয়ে প্রকাশকদের সাহায্য করতে পারেন। এই কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব পরিচর্যা অধ্যক্ষের। কিন্তু, এই কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য প্রাচীন গোষ্ঠী একজন যোগ্য প্রাচীন বা দায়িত্বপূর্ণ একজন পরিচারক দাসকে পরিচর্যা অধ্যক্ষের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলতে পারেন।
৮ যে প্রকাশকদের ফোনে কথা বলা বেশ অভ্যাস হয়ে গেছে তারা দেখেন যে টেলিফোনে প্রচার করে ভাল ফল পাওয়া যায়। প্রথম প্রথম হয়তো অল্প কয়েকজন প্রকাশক ও অগ্রগামীই টেলিফোনে কথা বলতে পারেন। কিন্তু তারা যখন ব্যাপারটাকে বেশ রপ্ত করে করে ফেলেন তখন তাদের অভিজ্ঞতা ও ভাল ফল দেখে অন্যেরাও হয়তো শিখতে চাইবেন যে কীভাবে তারাও এই উপায়ে প্রচার করতে পারেন।
৯ কোথা থেকে শুরু করবেন: বড় বড় অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে যারা থাকেন তাদের নাম গেটে বা চিঠির বাক্সগুলোতে লেখা থাকে আর এখান থেকেই এই লোকেদের নাম জেনে নিয়ে আপনি টেলিফোন ডাইরেক্টরি থেকে তাদের ফোন নাম্বার খুঁজে বের করতে পারেন। নতুন ফোন ডাইরেক্টরি থেকে কিছু পৃষ্ঠা ফটোকপি করে নিন আর সেগুলোকেই আপনার এলাকা বানিয়ে নিন। কিন্তু এলাকা যেন খুব বড় না হয়ে যায়।
১০ আমরা যেভাবেই প্রচার করি না কেন, বড় বিষয় হল যে তার ঠিক মতো রেকর্ড রাখা। আর তাই টেলিফোনে প্রচার করার সময়ও আমাদের রেকর্ড রাখতে হবে। ফোনে কথা বলার সময় আপনি কোন্ বিষয়ে কথা বলেছিলেন, কোন্ বিষয়টাতে গৃহকর্তা আগ্রহ দেখিয়েছেন ও পরের বার কোন্ বিষয়টা নিয়ে কথা বলবেন এই সবকিছু লিখে নিন। এটাও লিখে নিন যে পরের বার আপনি টেলিফোনেই কথা বলবেন না তার ঘরে গিয়ে দেখা করবেন।
১১ নিজের তালিকা থাকা দরকার: যদি আপনি নিয়মিত ফোনে প্রচার করেন, তাহলে আপনার সাহস বাড়বে। যখন লোকেরা ঘরে থাকেন সেই সময়ে ফোন করা ভাল, যেমন বিকেলে বা শনি-রবিবারে। প্রত্যেক সপ্তায় এর জন্য একটা সময় ঠিক করে নিন। কেউ কেউ দেখেছেন যে বুকস্টাডির আগে টেলিফোনে প্রচার করে খুব ভাল ফল পাওয়া গেছে। খুঁজে নিন যে আপনার এলাকায় ফোন করার সবচেয়ে ভাল সময় কখন।
১২ কীভাবে তৈরি হবেন: সেই ভাইবোনদের সঙ্গে কথা বলুন যারা ফোনে প্রচার করেছেন। আপনি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন। মনে করবেন না যে আপনি পারবেন না। যিহোবার কাছে শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করুন আর ভরসা রাখুন যে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। (গীত. ২৭:১৪; ফিলি. ৪:১৩) আর তারপর যেভাবে আপনি অন্যভাবে প্রচারের বেলাতে মনপ্রাণ চেষ্টা করেন, ফোনে প্রচারের সময়েও তা করুন।—মার্ক ১২:৩৩ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
১৩ অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে টেবিলের একপাশে বসে কথা বলার অনেক সুবিধা আছে। তখন আমরা ভাল করে চিন্তা করতে পারি আর আমাদের মন অন্যদিকে চলে যায় না। টেবিলে আপনি প্রচারের সব জিনিসপাতিগুলো হাতের কাছে নিয়ে বসুন যেমন ট্র্যাক্ট, সেই মাসে যা অর্পণ করতে হবে, নতুন বা আগ্রহ জাগিয়ে তোলে এমন কিছু পুরনো পত্রিকা, বাইবেল, যুক্তি (ইংরেজি) বই এবং মিটিংয়ের সময় ও কিংডম হলের ঠিকানা লেখা ইশতিহার, কলম বা পেনসিল এবং ঘরে-ঘরে প্রচারের রেকর্ড কার্ড। যদি পারা যায়, তাহলে হাতের কাছে কোন বই বা পত্রিকার প্রবন্ধ খুলেই রাখুন। আপনি কী বলবেন তা আগে থেকে ভেবে নিন। মনে রাখবেন যে আপনার টেলিফোন করার মূল কারণ হল সেই ব্যক্তির কাছে প্রচার করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার সঙ্গে দেখা করা।
১৪ কথা বলুন: স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলুন। টেলিফোনে প্রচার করে ভাল ফল পেতে চাইলে আপনাকে মিষ্টি স্বরে কথা বলতে হবে। আপনার মুখে যদি হাসি থাকে আপনার গলার স্বরে তা বোঝা যাবে। ধীরে ধীরে ও স্পষ্ট করে এবং যেন ভাল মতো শোনা যায় এমনভাবে কথা বলুন। ধৈর্য ধরে, ভদ্রভাবে ও বন্ধুর মতো কথা বলুন। আগে থেকেই এই ভেবে ভয় পাবেন না যে লোকেরা আপনার কথা শুনবেন না। মনে রাখুন যে যেমন ঘরে ঘরে প্রচারে হয় সেইরকমই ফোনে কথা বলার সময়ও হবে। কিছু লোকেরা আমাদের প্রচার শুনতে চাইবেন না।
১৫ শুরুতেই আপনার পুরো নাম বলুন। একথা না বলাই ভাল যে আপনি একটা কমপ্লেক্সের সব ঘরেই ফোন করছেন কারণ তা হয়তো বাধা নিয়ে আসতে পারে।
১৬ কথা বলার জন্য যুক্তি বইয়ে যে নমুনাগুলো দেওয়া আছে আপনি তা হুবহু বলতে পারেন শুধু আপনাকে নিজের কথায় তা বলতে হবে। যেমন আপনি হয়তো এভাবে নিজের পরিচয় দিতে পারেন: “নমস্কার, আমার নাম—। আমি আপনাকে ফোন করছি কারণ আপনার ঘরে এসে আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আমার নেই।” এরপর না থেমেই বলুন: “আমি এই বিষয়ে আপনার কী মতামত তা জানতে চাই যে আমাদের জীবনের মান কি কখনও ভাল হবে? আমরা সবাই-ই বেঁচে থাকতে পেরে খুশি কিন্তু তবুও আমরা অনেকেই ভাবি যে ‘সত্যিকারের সুখী হওয়া কি আদৌ সম্ভব?’ এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন? [উত্তরের জন্য অপেক্ষা করুন।] আপনার কি মনে হয় যে কোন্ সমস্যা আমাদের সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়?” অথবা নিজের পরিচয় দিয়ে আপনি হয়তো এভাবে বলতে পারেন: “আমি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আর আমি জানতে চাই যে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী বলে আপনি মনে করেন? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের জীবন কত ছোট। এই কি জীবন? আপনি কী মনে করেন?” (যুক্তি বইয়ের ১৩ পৃষ্ঠার “জীবন/সুখ” উপশিরোনাম দেখুন।) ১৯৯০ সালের জুলাই মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র (ইংরেজি) ৪ পৃষ্ঠায় টেলিফোনে প্রচার করার জন্য কীভাবে শুরু করতে হবে তা বলা আছে। আর এও বলা আছে যে ফোনে প্রচার করার সময় যে বাধাগুলো আসে, তা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়।
১৭ যত তাড়াতাড়ি পারা যায় বাইবেল ব্যবহার করুন। কথা বলার সময় যখন আপনি ঠিক বলে মনে করেন তখন তাকে বলুন যে আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি। গৃহকর্তাকেও কথা বলার সুযোগ দিন। সেই ব্যক্তি তার মতামত জানাতে চাইলে ভয় পাবেন না। তার মতামতের জন্য তাকে ধন্যবাদ দিন। দরকার হলে প্রশংসাও করুন। কিন্তু, কেউ যদি খুব বেশি কথা বলতে চান বা তর্ক শুরু করে দেন, তাহলে কৌশলে আলোচনা বন্ধ করে ফোন রেখে দিন। আমরা চাই যে ঈশ্বরের আত্মা আপনার এই চেষ্টায় সাহায্য করুক যাতে আপনি ভাল লোকেদের খুঁজে পান।
১৮ গৃহকর্তা কখন কথা বলা শেষ করবেন তার জন্য বসে না থেকে আপনি নিজেই শেষ করলে ভাল হবে। আপনি তাকে কিংডম হলে আসতে বলে কথা শেষ করতে পারেন। তাকে কিংডম হলের ঠিকানা ও মিটিংয়ের সময় জানাতে ভুলবেন না। আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, পরের বার কি আপনি তার ঘরে এসে তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। টেলিফোনে পত্রিকা সম্বন্ধেও ভাল করে জানানো যায়। তাকে পত্রিকার বিষয়ে বলে আপনি একটা পত্রিকা রুট শুরু করতে পারেন।
১৯ টেলিফোনে প্রচারের আনন্দ উপভোগ করুন: আপনি ফোনে যত লোকের সঙ্গে কথা বলেন তারা সবাই কি বাইবেল স্টাডি করতে রাজি হয়ে যাবেন? না, তবে সবাই না হলেও কেউ কেউ হয়তো রাজি হবেন। উদাহরণ হিসেবে এক বোনের কথা বলা যায়, যিনি এক মাসে ৩০০ জনেরও বেশি লোকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। নিজের পরিচয় দেওয়ার পর তিনি বুঝিয়ে বলতেন যে কেন তিনি সবার ঘরে-ঘরে না গিয়ে টেলিফোনে কথা বলছেন। এরপর তিনি অল্প কথায় প্রচার করতেন। তিনি ১২ জন লোককে পেয়েছিলেন যারা আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এখনও তিনি তাদের তিনজনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন আর চারজন বোনকে তাদের ঘরে আসার জন্য বলেছেন।
২০ যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদেরকে “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” প্রচার করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১:৮) কিছু কিছু এলাকায় এই আজ্ঞা মেনে চলার জন্য টেলিফোনে প্রচার করার দরকার হয়। এতক্ষণ ধরে আমরা যা আলোচনা করেছি তা দেখার পর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘“সর্ব স্তরের লোকের কাছে” প্রচার করার জন্য আমি কি আমার প্রচারের এলাকার সেই লোকেদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতে পারি যাদের কাছে কখনও প্রচার করা হয়নি?’ যে ভাইবোনেরা এই পরামর্শ মেনেছেন তারা ভাল ফল পেয়েছেন আর তাদের উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। তারা বুঝেছেন যে টেলিফোনে প্রচার করা ‘তাদের পরিচর্য্যা-পদের গৌরব’ করার এক বিশেষ উপায়। (রোমীয় ১১:১৩) তাই আমরা চাই যে টেলিফোনে প্রচার করে আপনিও এই একই আনন্দ পান।