বাইবেল—সত্যের এক নির্ভরযোগ্য উৎস
ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন পটভূমির লোকেরা বাইবেলকে সত্যের এক নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করেছে। বর্তমানে, লক্ষ লক্ষ লোক এটির শিক্ষা মেনে চলে। তবে, অন্যেরা বাইবেলকে এক অপ্রাসঙ্গিক অথবা কাল্পনিক বই বলে মনে করে আর তাই, তারা সেটি বাতিল করে দেয়। আপনি কী মনে করেন? আপনি কি বাইবেলে সত্য খুঁজে পেতে পারেন?
যে-কারণগুলোর জন্য আপনি বাইবেলের উপর বিশ্বাস করতে পারেন
বাইবেলের উপর আপনি বিশ্বাস করতে পারেন কি না, তা আপনি কীভাবে নির্ধারণ করতে পারেন? উদাহরণ স্বরূপ: আপনার কোনো বন্ধু যদি বহু বছর ধরে সবসময় আপনাকে সত্য কথা বলে থাকেন, তা হলে আপনি হয়তো তাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করবেন। বাইবেলও কি, এক বিশ্বাসযোগ্য বন্ধুর মতো, সবসময় সত্য বলেছে? কয়েকটা উদাহরণ লক্ষ করুন।
সত্যবাদী লেখকেরা
বাইবেলের লেখকেরা খুবই সৎ ছিলেন, তারা প্রায়ই নিজেদের ভুল ও ব্যর্থতাগুলো প্রকাশ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, ভাববাদী যোনা নিজে তার অবাধ্যতার বিষয়ে লিখেছিলেন। (যোনা ১:১-৩) সত্যি বলতে কী, ঈশ্বর কীভাবে তাকে সংশোধন করেছিলেন, সেই বিষয়টা উল্লেখ করে তিনি তার বাইবেলের বই শেষ করেছিলেন, তবে তিনি নিজে কীভাবে তার মনোভাব ঠিক করেছিলেন, সেই বিষয়ে কোনো উল্লেখ করেননি। (যোনা ৪:১, ৪, ১০, ১১) বাইবেলের সমস্ত লেখকের সততা ইঙ্গিত দেয় যে, সত্যের বিষয়ে তারা কতটা আন্তরিক ছিলেন।
ব্যাবহারিক সত্য
বাইবেল কি ব্যাবহারিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সবসময় সঠিক পরামর্শ দেয়? নিশ্চিতভাবেই দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে বাইবেল কী বলে, তা লক্ষ করুন: “অতএব সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” (মথি ৭:১২) “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে, কিন্তু কটুবাক্য কোপ উত্তেজিত করে।” (হিতোপদেশ ১৫:১) হ্যাঁ, বাইবেলের সত্যগুলো যখন লেখা হয়েছিল, তখন যতটা ব্যাবহারিক ছিল, এখনও সেগুলো ততটাই ব্যাবহারিক।
ঐতিহাসিক সত্য
বহু বছর ধরে করা অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার, বাইবেলে উল্লেখিত বিভিন্ন জাতি ও জায়গার অস্তিত্ব সম্বন্ধে এবং এটিতে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর সঠিকতা সম্বন্ধে প্রমাণ দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, একটা সামান্য বিষয়ের প্রমাণ বিবেচনা করুন। বাইবেল জানায় যে, নহিমিয়ের সময় যিরূশালেমে বসবাসরত সোরের লোকেরা (সোরের ফৈনীকীয়রা) ‘মৎস্য ও সর্ব্বপ্রকার বিক্রেয় দ্রব্য আনিত।’—নহিমিয় ১৩:১৬.
বাইবেলের এই পদকে সমর্থন করার জন্য কোনো প্রমাণ কি রয়েছে? হ্যাঁ, রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা ইস্রায়েলে ফৈনীকীয় জিনিসপত্র আবিষ্কার করেছেন, যেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, এই দুই প্রাচীন নগরের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। এ ছাড়া, যিরূশালেমে মাটি খুঁড়ে ভূমধ্যসাগরীয় মাছের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন, বণিকেরা সেই মাছগুলো সেই দূরবর্তী উপকূল থেকে নিয়ে এসেছিল। এই প্রমাণ পরীক্ষা করার পর একজন পণ্ডিত এই উপসংহারে এসেছিলেন: “সোরের লোকেরা যে যিরূশালেমে মাছ বিক্রি করত, সেই বিষয়ে নহি[মিয়] ১৩:১৬ পদে যে-বিবৃতি পাওয়া যায়, সেটা বেশ যুক্তিসংগত।”
বৈজ্ঞানিক সত্য
বাইবেল মূলত এক ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বই। কিন্তু যখন এটি বৈজ্ঞানিক বিষয়ে উল্লেখ করে, তখন এটি বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলে যায়। একটা উদাহরণ লক্ষ করুন।
প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে বাইবেল জানিয়েছিল যে, পৃথিবী “অবস্তুর উপরে” ঝুলে আছে। (ইয়োব ২৬:৭) এটা সেই কাল্পনিক ধারণাগুলো থেকে খুবই আলাদা ছিল, যেগুলো বলেছিল যে, পৃথিবী জলের উপর ভাসছে অথবা এক বিশাল কচ্ছপ সেটাকে বহন করছে। ইয়োব বইটা লেখার প্রায় ১,১০০ বছর পরও লোকেরা মনে করত যে, পৃথিবী শূন্যের উপর ঝুলে থাকতে পারে না, বরং এটাকে কোনো কিছুর উপর থাকতে হবে। মাত্র তিন-শো বছর আগে, ১৬৮৭ সালে আইজাক নিউটন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্বন্ধে তার গবেষণা করা তথ্য প্রকাশ করেছিলেন এবং ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, এক অদৃশ্য শক্তি পৃথিবীকে নিজ কক্ষপথে ধরে রেখেছে। বিজ্ঞানের এই উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার, বাইবেল ৩,০০০ বছরেরও বেশি সময় আগে যা জানিয়েছিল, সেটাকে সত্য বলে প্রমাণ করেছিল!
ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সত্য
বাইবেলে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কতটা সঠিক? একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন: বাবিলের পতন সম্বন্ধে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী।
ভবিষ্যদ্বাণী: খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে বাইবেলের একজন লেখক, যিশাইয় ঘোষণা করেছিলেন যে, বাবিলকে—যা পরবর্তী সময় এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে—পরাজিত করা হবে এবং অবশেষে সেটা জনশূন্য হয়ে পড়বে। (যিশাইয় ১৩:১৭-২০) যিশাইয় এমনকী সেই ব্যক্তির নাম জানিয়েছিলেন, যিনি বাবিলকে পরাজিত করবেন—কোরস। নদনদী “শুকাইয়া” যাবে। এই কথা বলার দ্বারা যিশাইয় এমনকী কোরস কোন কৌশল ব্যবহার করবেন, সেই বিষয়েও বর্ণনা করেছিলেন। আর তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, নগরদ্বারগুলো খোলা থাকবে।—যিশাইয় ৪৪:২৭–৪৫:১.
পরিপূর্ণতা: যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রায় ২০০ বছর পর পারস্যের একজন রাজা বাবিল আক্রমণ করেন। তার নাম? কোরস। যেহেতু বাবিল খুবই সুরক্ষিত নগর ছিল, তাই কোরস ইউফ্রেটিস নদী ব্যবহার করবেন বলে ঠিক করেছিলেন, যেটা নগরের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। তার লোকেরা নদীর গতিকে পরিবর্তন করে জলাভূমির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা খাল খনন করেছিল। এর ফলে, নদীর জল এতটাই কমে গিয়েছিল যে, কোরসের সৈন্যবাহিনী নদীগর্ভের উরু সমান জল পার হয়ে যেতে পেরেছিল, যেটা নগরের প্রাচীরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, বাবিলীয়রা নদীর দিকে মুখ করা দ্বারগুলো খোলা রেখে দিয়েছিল! কোরসের সৈন্যবাহিনী সেই খোলা দ্বারগুলো দিয়ে বাবিলে প্রবেশ করেছিল এবং সেই নগরকে পরাজিত করেছিল।
তবে, একটা বিষয় বাকি রয়ে যায়: বাবিল কি জনশূন্য হয়ে পড়েছিল? কয়েক শতাব্দী ধরে, লোকেরা সেখানে বাস করেছিল। কিন্তু বর্তমানে, বাবিলের ধ্বংশাবশেষ—ইরাকের বাগদাদ শহরের কাছে অবস্থিত—প্রমাণ দেয় যে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণ হয়েছিল। হ্যাঁ, বাইবেল এমনকী সেইসময়ও নির্ভরযোগ্য, যখন এটি ভবিষ্যতের ঘটনাগুলোর বিষয়ে বলে থাকে।