প্রচার করার সময় সাহস ও বিচক্ষণতা দেখানো
যত্ন করে রাখুন
১ বর্তমানে যে-পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে আমরা কাজ করছি, সেগুলোর জন্য সুসজ্জিত: সার্বভৌম শাসক হিসেবে যিহোবা ঈশ্বর এবং মণ্ডলীর মস্তক ও শাসনরত রাজা হিসেবে খ্রিস্ট যিশু আমাদের খ্রিস্টীয় কাজে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে। আমরা বাইবেলের মাধ্যমে এবং যিশুর দ্বারা ব্যবহৃত ‘বিশ্বস্ত দাসের’ কাছ থেকে পাওয়া উত্তম উপদেশের মাধ্যমে সুসজ্জিত।—২ তীম. ৩:১৭; মথি ২৪:৪৫-৪৭; ২৮:২০.
২ ‘জগতের দৃশ্যপট অনবরতভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে’ আর এখন আমরা আমাদের পরিচর্যায়, বিশেষ করে ঘরে ঘরে প্রচার কাজে আরও বেশি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। (১ করি. ৭:৩১, NW) প্রথম শতাব্দীতেও পরিবর্তনশীল বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিক শিষ্যরা যেভাবে তাদের পরিচর্যা চালিয়ে গিয়েছিল, তাতে এক রদবদল করার প্রয়োজন হয়েছিল। (লূক ২২:৩৫, ৩৬) আমাদের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যদিও আমাদেরকে বিচক্ষণতা দেখাতে হবে কিন্তু আমাদের কোনো ব্যাপারেই ভয় পাওয়া উচিত নয়, বরং আমাদেরকে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগানোর জন্য আমাদের অবশ্যই আস্থা সহকারে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে হবে।—ফিলি. ১:২৮.
৩ বিরোধিতার মুখেও যেভাবে পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়া যায়, সেই বিষয়ে ২০০৩ সালে বিভিন্ন চিঠি ও পরিচর্যা সভার অংশগুলোর মাধ্যমে সাহায্যকারী তথ্য জোগানো হয়েছিল। এখন আমাদের সেই নির্দেশনাগুলোকে পুনর্বিবেচনা ও নতুন করতে হবে। দেখা যায় যে, সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, অনেক মণ্ডলী এই নির্দেশনাগুলোর প্রতি ক্রমাগত মনোযোগ দেয়নি কিন্তু এখন আমাদের তা করতে হবে, যেহেতু আমরা পরিচর্যায় আরও বেশি বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছি। দেশের সমস্ত অঞ্চলই একই ধরনের অথবা একই মাত্রার বিরোধিতা ভোগ করছে না। তাই, আমাদের সকলকেই স্থানীয় প্রয়োজনগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে এই নির্দেশনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। মনে রাখবেন যে, ইতিমধ্যেই যে-পরিস্থিতিগুলো দেখা গিয়েছে, সেগুলোর প্রতি শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়, বরং আমরা সমস্যাগুলোকে এড়াতে চাই। তা করতে হলে, আমাদের এই প্রবন্ধের পরামর্শগুলো কাজে লাগানো উচিত এমনকি যদি আমরা এই মুহূর্তে সমস্যাগুলো ভোগ না-ও করে থাকি।
৪ এই প্রবন্ধে যে-শাস্ত্রীয় ও ব্যবহারিক পরামর্শগুলো রয়েছে সেগুলো ছাড়াও, শাখা অফিস শীঘ্রই সাধারণ আইন সংক্রান্ত তথ্য জোগাবে, যা সকলকে তাদের আইনগত অধিকার সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করবে আর প্রচার করার জন্য গ্রেপ্তার করা হলে কী করতে হবে, সেই বিষয়ের ওপর বিস্তারিত নির্দেশনা জোগাবে। এই তথ্য ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে এবং সেইসঙ্গে আপনাকে সাহায্য করার জন্য কী করা যায়, তা জানতে প্রাচীন গোষ্ঠীকে সাহায্য করবে।
৫ আমরা সকলেই উপলব্ধি করি যে, আমাদেরকে অবশ্যই বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার ও আমাদের নিজ নিজ নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। (২ তীম. ৩:১২) আমরা শাখা অফিসের পূর্ণ সমর্থন লাভ করার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারি। আমাদের অনেক ভাইবোন ইতিমধ্যেই যে-পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, আপনি যদি কখনো সেরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন, যেমন, এক উচ্ছৃঙ্খল জনতার মুখোমুখি হন এবং “বিচারসভায়” অথবা থানায় ‘সমর্পিত’ হন, তাহলে মথি ১০:১৭-২০ পদে লিপিবদ্ধ পরামর্শের কথা মনে রাখুন। প্রাচীনদেরকে ইতিমধ্যেই যে-নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাদের মেনে চলা ও সঙ্গে সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদেরকে সমর্থন করবেন।—যিশা. ৫৪:১৭; ফিলি. ১:৭, ২৭-২৯.
৬ যেকারণে আমরা আমাদের পরিচর্যায় বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছি: মূল কারণটা হল প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায়ের ১২ ও ১৭ পদে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে। শয়তান দিয়াবল তার ক্রোধ প্রকাশ করছে। এই “শেষ কালে,” সে বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন স্থানে বিরোধিতাকে জাগিয়ে তুলেছে। (২ তীম. ৩:৩) সে চায় অন্যেরা যেন জীবন-রক্ষাকারী প্রচার কাজের প্রতি সাড়া না দেয় এবং আমাদের প্রচার কাজ বন্ধ করার জন্য সে আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে অথবা আমাদেরকে ভয় দেখাতে চায়। সে অতীতে এই বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে এবং আমাদের ক্ষেত্রের কাজে তার বর্তমান প্রচেষ্টায়ও সে পুনরায় ব্যর্থ হবে। বিভিন্ন দেশে বার বার কীভাবে আমাদের ভাইবোনেরা বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে, যিহোবার শক্তিতে তা সহ্য করেছে এবং তাঁর সাক্ষি হিসেবে ক্রমাগত কাজ করেছে, ক্ষান্ত না হয়ে সুসমাচার প্রচার করেছে, সেই বিষয়ে জানার জন্য আমাদের কেবলমাত্র বিভিন্ন বর্ষপুস্তক (ইংরেজি) অথবা ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বই পড়তে হবে।—প্রেরিত ৫:৪২.
৭ কখনো কখনো স্থানীয় বাসিন্দাদের ধর্মীয় অনুভূতিগুলো হয়তো বিরোধিতার কারণ হতে পারে। (প্রেরিত ১৯:২৩-২৯) এমনটা প্রায়ই ঘটে থাকে, যখন বিরোধীরা মিথ্যাভাবে আমাদেরকে অবৈধ ধর্মান্তরিত করার কাজকর্মে রত আছি বলে অভিযুক্ত করে। অথবা আমরা যখন তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে শাস্ত্র থেকে যুক্তি দেখাই, তখন আমাদেরকে হয়তো এই বলে অভিযুক্ত করে যে, আমরা ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করছি। কিংবা তারা হয়তো বলে যে, আমরা তাদের দেবতাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি। এই ধরনের অভিযোগগুলো মিথ্যা কারণ আমরা শুধু আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সুসমাচার জানাই ও তারা সেইমতো পদক্ষেপ নিতে চায় কি না, তা স্থির করার দায়িত্ব আমরা তাদের ওপরই ছেড়ে দিই। আমরা সবসময় অনুগ্রহের সঙ্গে বা সদয়ভাবে কথা বলার চেষ্টা করি, অন্যদেরকে আঘাত দিই না।—প্রেরিত ১৭:২২-২৮; রোমীয় ১৪:১২; কল. ৪:৬.
৮ আমাদের সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুসরণ করার মতো নীতিগুলো: সাহসী হোন। যিহোবার সাক্ষিরা মানুষকে তুষ্ট করে না কিংবা মানুষকে ভয়ও করে না। (হিতো. ২৯:২৫; ইফি. ৬:৬; w-BE৯৩ ৭/১ পৃষ্ঠা ২৩) প্রেরিতদের মতো, আমরাও বিরোধীদেরকে আমাদের প্রচার করার ঈশ্বরদত্ত দায়িত্বকে পরিপূর্ণ করা থেকে আমাদেরকে বাধা দেওয়ার সুযোগ দিই না।—প্রেরিত ৫:২৯.
৯ সতর্ক হোন। যদিও যিশু এবং ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত দাস পরিস্থিতি অনুযায়ী তাড়নার প্রতি বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, তারা অযথা তাদের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলেনি। তারা যখন বিপদজনক পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে পড়েছিল, তখন তারা সাহসী ও সেইসঙ্গে সতর্ক ছিল। (মথি ১০:১৬, ২৩) তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রচার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং যিহোবার প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া সেইসমস্ত খ্রিস্টানের জন্য উদাহরণ জোগায়, যারা আজকে বিভিন্ন পরীক্ষা এবং তাড়নার মুখোমুখি হয়।—w-BE০৩ ১০/১ পৃষ্ঠা ১৪ অনু. ৪ দেখুন।
১০ প্রতিশোধ নেবেন না। যিশু এবং প্রেরিতরা চাপের মুখে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তা থেকে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ যে-নীতি আমরা শিখতে পারি, সেটা হল আমাদের তাড়নাকারীদের বিরুদ্ধে কখনো প্রতিশোধ না নেওয়া। বাইবেলের কোথাও আমরা এমন কোনো ইঙ্গিত পাই না যে, যিশু অথবা তাঁর অনুসারীরা তাদের তাড়নাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোনো ধরনের গুপ্ত দল গঠন করেছিল অথবা কোনো দৌরাত্ম্যের আশ্রয় নিয়েছিল। রোমীয় ১২:১৭-২১ পদে লিপিবদ্ধ প্রেরিত পৌলের পরামর্শ আমাদের কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।—হিতো. ২০:২২.
১১ সম্ভব হলে ঝামেলা এড়িয়ে চলুন। বাইবেল স্পষ্ট করে বলে যে, কোনো কোনো সময় দ্রুত প্রস্থান করা একই সঙ্গে বুদ্ধি ও সাহসের পরিচয়। যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের পরিচর্যায় পাঠানোর আগে এই বিষয়টা সমর্থন করে তাদের বলেছিলেন: “আর তাহারা যখন তোমাদিগকে এক নগরে তাড়না করিবে, তখন অন্য নগরে পলায়ন করিও।” (মথি ১০:২৩) হ্যাঁ, যিশুর শিষ্যদের তাদের তাড়নাকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে আসার চেষ্টা করতে হয়েছিল। তাদের ধর্মযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ও জোর করে কাউকে ধর্মান্তরিতকরণের চেষ্টা করার দরকার ছিল না। তারা শান্তির এক বার্তা বহন করেছিল। (মথি ১০:১১-১৪; প্রেরিত ১০:৩৪-৩৭) তাই, রাগ না দেখিয়ে বরং খ্রিস্টানদের পালিয়ে আসতে হতো, উত্তেজনার উৎস থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে হতো। এভাবে তারা তাদের সৎসংবেদ ও সেইসঙ্গে যিহোবার সঙ্গে মূল্যবান সম্পর্ককে বজায় রেখেছিল।—২ করি. ৪:১, ২; w-BE০২ ৪/১৫ পৃষ্ঠা ৩২ দেখুন।
১২ বাছাই করুন। যিশু তাঁর শিষ্যদের জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, কোনো একটা এলাকায় সমস্ত লোকই অনুকূলভাবে সাড়া দেবে না। তিনি বলেছিলেন: “আর তোমরা যে নগরে কি গ্রামে প্রবেশ করিবে, তথাকার কোন্ ব্যক্তি যোগ্য, তাহা অনুসন্ধান করিও।” সকলেই যদি রাজ্যের বার্তাকে গ্রহণ করত, তাহলে “অনুসন্ধান করিও” অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করার কোনো কারণ থাকত না। যারা বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি তাদের প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হতো? “আর যে কেহ তোমাদিগকে গ্রহণ না করে, এবং তোমাদের কথা না শুনে, সেই গৃহ কিম্বা সেই নগর হইতে বাহির হইবার সময়ে আপন আপন পায়ের ধূলা ঝাড়িয়া ফেলিও,” অর্থাৎ শান্তিতে সেই স্থান পরিত্যাগ করতে এবং ফলাফল যিহোবার বিচারের ওপর ছেড়ে দিতে হতো।—মথি ১০:১১, ১৪; w৮৮ ৭/১৫ পৃষ্ঠা ১১ অনু. ৯ দেখুন।
১৩ বিচক্ষণ হোন। ক্ষেত্রের পরিচর্যায় থাকার সময়ে যতটা সম্ভব সন্দেহজনক পরিস্থিতিগুলোকে এড়িয়ে চলুন। বাইবেল বলে: “সতর্ক লোক নিজ পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখে।” (হিতো. ১৪:১৫) এটি এও পরামর্শ দেয়: “উচ্চণ্ড হইবার পূর্ব্বে বিবাদ ত্যাগ কর।” (হিতো. ১৭:১৪) সতর্কতার সঙ্গে আপনার পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখা বলতে যে-জায়গাগুলোতে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে সেই জায়গাগুলো এড়িয়ে চলাকে বোঝায়। ক্ষেত্রের পরিচর্যায় কাজ করার সময় যেখানে একাকী থাকা বিজ্ঞতার কাজ নয়, সেক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে, আপনার সঙ্গে কাজ করার জন্য আপনি যেন আরেকজন প্রকাশকের ব্যবস্থা করেন। অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়, বেশ কয়েকজন প্রকাশকের একই তলায় কাজ করা হয়তো সুবিধাজনক হতে পারে, যেখানে ভাইয়েরা থাকলে তারাই নেতৃত্ব দেবে। ঘরের মধ্যে অথবা অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার আমন্ত্রণ গ্রহণ করার আগে বিচক্ষণতাকে কাজে লাগান।
১৪ প্রাচীন গোষ্ঠী এখনই যা বাস্তবায়িত করবে: নেতৃত্বদানকারী পরিচর্যা কমিটিসহ প্রাচীনদের মণ্ডলীর নির্বাচিত সমগ্র এলাকা পুনরালোচনা করা ও যে-এলাকাগুলোতে ধর্মীয় চরমপন্থীরা বাস করে বলে পরিচিত, সেই এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে, এই ধরনের লোকেরা একে অপরের কাছাকাছি বাস করে। এমনকি চরমপন্থীদের বাসভবন বলে পরিচিত আলাদা আলাদা বাড়িগুলোকেও মানচিত্রে চিহ্নিত করে রাখা উচিত। এই ধরনের এলাকা এবং বাড়িগুলো এড়িয়ে চলা দরকার। অন্যান্য এলাকা রয়েছে, যেখানে মণ্ডলী প্রচার করতে এবং সম্ভবত আরও ইতিবাচক ফলাফল লাভ করতে পারে।
১৫ ক্ষেত্রের পরিচর্যার জন্য মণ্ডলী ও সেইসঙ্গে দলগতভাবে যে-সভাগুলোর আয়োজন করা হয়, তা পুনরালোচনা করুন ও এই বিষয়ে নিশ্চিত হোন যে, স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অবস্থিত ভাইদের বাড়িগুলোকে যেন এই ধরনের সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা না হয়। এ ছাড়া এটাও লক্ষ রাখা ভাল যে, ক্ষেত্রের পরিচর্যার বড় দলগুলো যেন এলাকাতে একত্রিত না হয়। প্রচার কাজ করার সময় জোরে জোরে কথা না বলে, কোনো এলাকায় কাজ করার পর একত্রে মিলিত না হয়ে অথবা অন্যান্যভাবে অযথা মনোযোগ আকৃষ্ট না করে বিচক্ষণতা দেখানো হয়।
১৬ এই মন্তব্যগুলোর সঙ্গে মিল রেখে, ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র পাঁচ পৃষ্ঠা বলেছিল: “ভালভাবে সংগঠিত করলে, প্রচারের এলাকায় গিয়ে সবার নজরে পড়ার মতো খুব বড় দল হয়ে এক জায়গায় জটলা করাকে এড়ানো যেতে পারে। কিছু কিছু গৃহকর্তা তো বোধহয় ভয়ই পেতে পারে যদি তারা অনেক গাড়ি, মোটরসাইকেল, স্কুটার বা ভ্যান তাদের ঘরের সামনে জড়ো হতে দেখে। আমরা তাদের এইরকম ধারণা দিতে চাই না যে, আমরা তাদের এলাকায় ‘হামলা’ করতে এসেছি। তাই ক্ষেত্রের পরিচর্যার সভাতেই কে কোন দিকে যাবে, তা ঠিক করে দিলে ভাল হবে। একটা পরিবারের মতো প্রকাশকদের ছোট দল গৃহকর্তাদের কাছে ভয়ের কারণ হবে না আর ক্ষেত্রে কাজ করার সময় তাদের বারে বারে সামলানোরও প্রয়োজন হবে না।”
১৭ এ ছাড়া, প্রাচীনরা এটাও পরীক্ষা করে দেখবে যে, যেখানে একই এলাকার মধ্যে বিভিন্ন ভাষার দল অথবা মণ্ডলীগুলো প্রচার করে, সেখানে এলাকাতে কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে সমস্তকিছু যেন “শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে” হয়। (১ করি. ১৪:৪০) আবারও, এর কারণ হল এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যে, ক্ষেত্রের দলগুলোর প্রতি যেন অযথা মনোযোগ আকৃষ্ট না হয়।
১৮ ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে আমরা যে-বিষয়ে সচেতন হতে চাইব: মণ্ডলী যেভাবে ক্ষেত্রের কাজ করছে, সেক্ষেত্রে যেহেতু কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে, তাই সকলের সেই ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে বাধ্যতা দেখিয়ে কাজ করা আবশ্যক, যা স্থাপন করা হবে।
১৯ কোনো বই, পত্রিকা, ট্র্যাক্ট অথবা অন্য সাহিত্য অর্পণ করার আগে গৃহকর্তা শুনতে ও আমাদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক কি না, সেটা প্রথমে নির্ধারণ করা হবে বিজ্ঞতার কাজ। আমাদের মূল উপস্থাপনা হল, আমরা বাইবেল থেকে সুসমাচার নিয়ে যাচ্ছি। গৃহকর্তা শান্তিপ্রবণ এটা নির্ধারণ করার পর, আমরা হয়তো পড়ার জন্য কিছু অর্পণ করতে পারি।
২০ পরিচর্যায় রত থাকার সময় আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি সতর্ক থাকতে চাইব। যদি গৃহকর্তার মধ্যে বিরোধী মনোভাবের ইঙ্গিত লক্ষ করা যায়, তাহলে বিচক্ষণতার সঙ্গে আলোচনা শেষ করে চলে যান, এমনকি হয়তো সেই এলাকা ত্যাগ করুন। দুজন দুজন করে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়, যিনি কথা বলছেন না, তার আলোচনায় এতটা বেশি ডুবে যাওয়া উচিত নয় যে, আশেপাশে কী হচ্ছে তা তিনি লক্ষ রাখতে পারছেন না। পরিবর্তে, তিনি হয়তো চারিদিকে দৃষ্টি রাখতে পারেন। প্রায়ই এমন একজন ব্যক্তির দ্বারাই বিভিন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যিনি আমরা যে-কাজে রত থাকি তা লক্ষ করেন ও তারপর আশেপাশের অন্যদেরকে ডেকে জড়ো করেন।
২১ আমাদেরকে ভুল বুঝতে পারে এমন পরিভাষা ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা উচিত। উদাহরণ হিসেবে, আমরা বলতে পারি যে, আমাদের সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্য হল বাইবেল থেকে কিছু সুসমাচার ‘জানানো,’ তাদেরকে এমন কিছু ‘অর্পণ’ না করা যেটাকে হয়তো ধর্মান্তরিত করার এক সূত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। যদি তাদের উপাসনার ধরন সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অথবা তাদের প্রতিমার ব্যবহার সম্বন্ধে আমরা কী মনে করি সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, তাহলে আমরা বলতে পারি যে, এই বিষয়গুলো বিচার করার ও ধর্মীয় বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তাদের পছন্দ-অপছন্দকে অনুমোদন করার বা না করার জন্য আমরা এখানে আসিনি। এগুলো তাদের স্থির করার বিষয়। আমরা শুধু বাইবেল থেকে ভাল তথ্য জানাতে চাই। তারা শুনতে চায় কী চায় না, সেটা স্থির করা তাদের বিষয়।
২২ আমরা আমাদের পোশাক-আশাক ও আমাদের সাক্ষ্যদানের ব্যাগের দ্বারা লক্ষণীয় হতে চাই না, যা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের কাজের প্রতি অযথা মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পারে। আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত পোশাক পরা উচিত কিন্তু তাই বলে ক্ষেত্রের পরিচর্যার জন্য, সম্ভবত অন্যান্য দেশে আমাদের ভাইবোনদেরকে যা করতে দেখেছি, সেটা অনুকরণ করে প্রত্যক্ষকর কিছু মান অনুসরণ করার দরকার নেই। আমাদের প্রতি এবং আমরা যা করছি সেটার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করে এমন বড় ব্যাগ ব্যবহার করার চেয়ে বরং আমাদের নিজেদের কাছে অথবা সহজেই চোখে পড়ে না এমন একটা ফোল্ডারে আমাদের বাইবেল এবং কিছু সাহিত্য রাখা হয়তো ভাল হতে পারে।
২৩ গৃহকর্তাদের সঙ্গে জোরে জোরে কথা বলা এড়িয়ে চলা ভাল কারণ জোরে জোরে কথা বললে তা এমন ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করতে পারে যারা তা শুনতে পায়। অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে, জোরে জোরে কথা বলা আশেপাশের অন্যদেরকেও আমাদের নিকটবর্তী করে এবং আমরা যা করছি সেটার প্রতি করোর অসন্তুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে।
২৪ ঘরের মধ্যে ঢোকার আমন্ত্রণ গ্রহণ করা সম্বন্ধে সতর্ক থাকুন কারণ বিরোধীরা কখনো কখনো সেই এলাকায় প্রকাশকদের ধরে রাখার জন্য এই পদ্ধতিটা ব্যবহার করেছে, যে-সময়ের মধ্যে তারা টেলিফোন করে অন্য বিরোধীদের ডেকে জড়ো করে থাকে। আপনার কথা বলার সময় গৃহকর্তা যদি ফোন ব্যবহার করেন অথবা তিনি তার পরিবারের অন্য সদস্যকে তা করতে বলেন, তাহলে এটাকে স্থান ত্যাগ করার এক সংকেত হিসেবে নিন।
২৫ আমাদের উদ্দেশ্যর কথা স্মরণে রাখুন: উদ্দেশ্য হল যোগ্য ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করা, যারা কিনা আমরা যে-বার্তা বহন করি, তা শুনতে চায় কিন্তু সুসমাচার প্রচার করাকে যারা ব্যাহত অথবা বন্ধ করার চেষ্টা করে আমরা তাদের প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চাই না।
২৬ যিহোবার সমর্থনের ওপর নির্ভর করুন: আপনি যেভাবে আপনার পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে এই প্রয়োজনীয় রদবদলগুলো করার সময় যিহোবার ক্রমাগত সমর্থনের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন। (যিশা. ৫৪:১৭; ফিলি. ৪:১৩) বর্তমান পরিস্থিতি ও অবস্থাগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বিজ্ঞতার কাজ ও অনুসরণ করার মতো শাস্ত্রীয় পথ, ঠিক যেমন যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে পাঠানোর সময় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। (মথি ১০:৫-২৩) পরিচর্যায় রত থাকার সময়, হোক তা রীতিগত অথবা রীতিবহির্ভূতভাবে, উত্তম বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করুন ও আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। এই নির্ভরতা রাখুন যে, ঈশ্বরের দূতেরা আপনাকে সেই লোকেদের প্রতি পরিচালিত করবে, যাদের হৃদয় হয়তো জীবনের প্রতি যিহোবা ঈশ্বরের উষ্ণ আমন্ত্রণে সাড়া দেবে।—প্রকা. ১৪:৬.
২৭ আসন্ন মাসগুলোতে আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-য় আরও প্রবন্ধ প্রকাশ করা হবে, যেগুলো আপনাকে সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে আপনার পরিচর্যা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আসুন আমরা সকলে জোগানো সমস্ত পরামর্শ এবং কার্যকর করা হবে, এমন যেকোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা মেনে চলতে পরিকল্পনা করি।
[৩ পৃষ্ঠার বাক্স]
এই ইনসার্টটি যেভাবে ব্যবহার করতে হবে
এর বিষয়বস্তু মন দিয়ে পড়ুন ও সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। পরামর্শগুলোকে কাজ লাগনোর জন্য প্রস্তুত থাকুন। এই প্রবন্ধের পরামর্শ ও নির্দেশনাগুলোকে আমাদের কখন বাস্তবায়িত করতে শুরু করা উচিত? এখনই!