এক রাজনৈতিক অস্থিরতা, যেটা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করে
বর্তমানে রাজনীতির বিষয়ে বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। দেশের আইনকানুন নিয়ে একেক জনের এক এক মত আর তা নিয়ে অনেকে বিরূপ মন্তব্য করতেও ছাড়ে না। সরকারীভাবে যারা আইন তৈরি করে আর সেইসঙ্গে অন্য কর্মকর্তারা একে অন্যের কথা শুনতে চায় না বরং বিরোধিতা করে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে আর এর ফলে দেশের প্রতি সরকারের যা করা উচিত ছিল, তারা তা করতে পারে না।
যদিও সারা পৃথিবীতেই এই ধরনের পরিস্থিতি দেখা যায়, কিন্তু বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে (যুক্তরাজ্য হিসেবেও পরিচিত) এই ধরনের অস্থিরতা সবচেয়ে বেশি। কেন? এর কারণ হল, বাইবেলে অনেক আগে থেকেই বলা ছিল যে, যখন ঈশ্বরের রাজ্যের মাধ্যমে পৃথিবীর পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করার সময় আসবে, তখন এই দুই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে।
“উত্তরকালে” রাজনৈতিক অস্থিরতা
বাইবেলের দানিয়েল বইয়ে খুবই আগ্রহজনক একটা ভবিষ্যদ্বাণী লেখা রয়েছে। সেই ভবিষ্যদ্বাণীতে ঈশ্বর শেষকালে অর্থাৎ “উত্তরকালে যাহা যাহা ঘটিবে” তা জানিয়েছিলেন। (দানিয়েল ২:২৮) দানিয়েল লিখেছিলেন, মানব ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ সময় কিছু লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যাবে।
ঈশ্বর ব্যাবিলনের রাজাকে একটা স্বপ্নের মাধ্যমে দেখান যে, ভবিষ্যতে কোন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে। এই স্বপ্নে রাজা একটা বিশাল মূর্তি দেখতে পান, যেটা বিভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি ছিল। পরে ভাববাদী দানিয়েল ব্যাখ্যা করেন, মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাতু বিভিন্ন বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে, যারা ইতিহাসজুড়ে একের পর এক আসবে আর চলে যাবে।a শেষে, একটা পাথর এসে মূর্তির পায়ে আঘাত করবে আর সেটা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই পাথর ঈশ্বরের দ্বারা স্থাপিত এক রাজ্য অর্থাৎ সরকারকে চিত্রিত করে।—দানিয়েল ২:৩৬-৪৫.
ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঈশ্বরের রাজ্য সমস্ত মানব সরকারকে সরিয়ে দেবে। এটাই হল সেই রাজ্য, যেটার বিষয়ে যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমার রাজ্য আসুক।”—মথি ৬:১০.
কিন্তু আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, এই ভবিষ্যদ্বাণীতে কোথায় রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে? লক্ষ করুন, এই মূর্তির পা “কিছুটা লোহা ও কিছুটা মাটি দিয়ে তৈরী।” (দানিয়েল ২:৩৩, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) এই পর্যন্ত এক একটা বিশ্বশক্তিকে বোঝানোর জন্য এক একটা নির্দিষ্ট ধাতুর উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু শেষের বিশ্বশক্তিকে বোঝানোর সময় মিশ্রিত পদার্থের উল্লেখ রয়েছে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, এমন একটা বিশ্বশক্তি আসবে, যেটা অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। এই বিষয়ে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যাখ্যা করে:
ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মূর্তির পা যে-বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে, সেটা যখন শাসন করবে, তখন রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যাবে। এই সময়ে যে-লোকেরা থাকবে, তারা এমন কাজগুলো করবে, যেটা এর শক্তিকে দুর্বল করে দেবে।
বর্তমানে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে
মূর্তির পা বর্তমানে যে-বিশ্বশক্তি শাসন করছে, সেটাকে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের জোটকে চিত্রিত করে। কীভাবে আজকের ঘটনাগুলো প্রমাণ দেয় যে, দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে?
মূর্তির পা “কিছুটা লোহার ও কিছুটা … মাটির,” তাই স্বাভাবিকভাবেই এটা দুর্বল। (দানিয়েল ২:৪২) আজ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন, এই উভয় দেশের ক্ষমতাই ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে আর এর কারণ হল, দেশের লোকেরা কেউ কারো কথা মানছে না। যেমন, দুটো দেশেই নাগরিকদের মধ্যে লড়াই-ঝগড়া লেগে রয়েছে। এ ছাড়া, লোকেরা নিজেদের অধিকার রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ করার সময় হিংস্র হয়ে উঠছে। এমনকী যাদের তারা ভোটে নির্বাচিত করছে, তারাও একে অন্যের সঙ্গে আপোশ করছে না। লোকেরা যেহেতু এত বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাই এই দুই দেশের সরকারই সেই কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারে না, যেগুলো তারা করতে চায়।
দানিয়েল ২ অধ্যায়ে উল্লেখ করা শাসনরত সরকার
আসুন, দানিয়েলের এই ভবিষ্যদ্বাণীর কিছু বিষয়ের অর্থ আরও ভালোভাবে বিবেচনা করে দেখি আর এটাও বোঝার চেষ্টা করি, কীভাবে সেগুলো বর্তমানে পরিপূর্ণ হচ্ছে:
ভবিষ্যদ্বাণী: “তা হল একটা ভাগ করা রাজ্য … সেই রাজ্যে লোহার মত কিছু শক্তি থাকবে।”—দানিয়েল ২:৪১.
এর অর্থ: যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের লোকদের মধ্যে নিজেদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তা সত্ত্বেও এই দুই দেশের সেনাবাহিনী কিন্তু খুবই শক্তিশালী। এই কারণে পৃথিবীর বাকি দেশগুলোর উপর অধিকার ফলানোর জন্য এরা নজরদারি করে আর এভাবে তারা দেখায় যে, তারা লোহার মতো শক্ত।
পরিপূর্ণতা
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন মিলিতভাবে যুদ্ধের খাতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে। এত পরিমাণ অর্থ পৃথিবীর বাকি ১২টা শক্তিশালী দেশের পক্ষে একত্রিতভাবেও ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।—স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
“যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা … এই পর্যন্ত যেকোনো দুটো দেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, ঘনিষ্ঠ ও উন্নত সম্পর্ক তৈরি করেছে। … আমরা একসঙ্গে কাজ করি, একসঙ্গে কারো বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, একসঙ্গে যুদ্ধ করি।”—স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড, ইউ.কে. মিনিস্ট্রি অভ্ ডিফেন্স, এপ্রিল ২০২৪.
ভবিষ্যদ্বাণী: ’পায়ের পাতা ও আংগুলগুলো যেমন [কিছু অংশ মাটি ও কিছু অংশ লোহা দিয়ে তৈরী] ছিল তেমনি সেই রাজ্যের কিছু অংশ হবে শক্তিশালী ও কিছু অংশ দুর্বল।’—দানিয়েল ২:৪২.
এর অর্থ: যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনী খুবই শক্তিশালী, কিন্তু তারা যা করতে চায়, তা করতে পারে না আর এর কারণ হল তাদের গণতান্ত্রিক সরকার তা করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। কোনো প্রস্তাবে যদি বেশিরভাগ আধিকারিক ভোট না দেয়, তা হলে সরকার সেই কাজ করতে পারে না।
পরিপূর্ণতা
“কিছু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার রাজনীতির মধ্যে থাকা মতভেদ [যুক্তরাষ্ট্রকে] এমন কাজগুলো করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়, যেগুলো তারা পৃথিবীর বাকি দেশগুলোর কাছে করার দাবি করে, যেমন সুরক্ষা ও ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে।”—“দ্যা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।”
“ক্রমশ বেড়ে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নেতারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে আর এর ফলে সিভিল সার্ভিসেরb ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং [ব্রিটিশ] সরকার দেশের উন্নতিতে যা কিছু করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা করতে পারছে না।”—ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্ট।
ভবিষ্যদ্বাণী: ‘রাজ্যের লোকেরা হবে মিশানো এবং তারা এক হয়ে থাকবে না।’—দানিয়েল ২:৪৩.
এর অর্থ: এই শাস্ত্রপদে “লোকেরা” বলতে “সাধারণ লোককে” বোঝানো হয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সাধারণ লোক কিছুটা ক্ষমতা দেখাতে পারলেও পুরোপুরিভাবে সরকারের কাজে প্রভাব ফেলা তাদের পক্ষে অসম্ভব।
পরিপূর্ণতা
“আজ আমেরিকার বেশিরভাগ নাগরিক রাজনীতি ও নেতাদের ভালো চোখে দেখে না।”—পিউ রিসার্চ সেন্টার।
“সরকার এবং রাজনৈতিক নেতাদের উপর আর তাদের সরকারি ব্যবস্থার উপর ব্রিটেনের লোকদের আস্থা এতটাই কমে গিয়েছে, যেটা গত পঞ্চাশ বছরেও দেখা যায়নি।”—“ন্যাশনাল সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চ।”
যেভাবে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী আগামী দিনে পরিপূর্ণ হবে
দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ঈশ্বরের রাজ্য যখন সমস্ত মানব সরকারকে সরিয়ে দেবে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন একত্রিতভাবে বিশ্বশক্তি হিসেবে পৃথিবীর উপর রাজত্ব করবে।—দানিয়েল ২:৪৪.
এই একই সময়কাল সম্বন্ধে বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বইয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। সেখানে এইরকম লেখা আছে, ’পুরো পৃথিবীর রাজারা’ যিহোবাc ঈশ্বরের বিরুদ্ধে হর্মাগিদোনের যুদ্ধে একত্রিত হবে, যেটাকে ’সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের মহাদিনের যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬; ১৯:১৯-২১) এই যুদ্ধে যিহোবা সমস্ত মানব সরকারকে ধ্বংস করে দেবেন আর তা করার ফলে সেই বিশ্বশক্তিগুলোর কাউকেই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেগুলো দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে দেখানো মূর্তি চিত্রিত করে।
এই বিষয়ে আরও জানার জন্য “আরমাগিদোনের যুদ্ধ কী?” শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ুন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা যে-উপকার পাই
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে যে-রাজনৈতিক অস্থিরতা হবে, তা বাইবেলে আগে থেকেই সঠিকভাবে বলা ছিল। আপনি এতদিন বর্তমানে ঘটা ঘটনাগুলোকে যে-দৃষ্টিতে দেখছিলেন, বাইবেলের সত্য জানার পর আপনি বিষয়গুলোকে একেবারে আলাদা দৃষ্টিতে দেখতে পাবেন।
আপনি বুঝতে পারবেন, কেন যিশু চেয়েছিলেন, যেন তাঁর অনুসারীরা জগতের রাজনীতিতে কারো পক্ষ না নেয়। (যোহন ১৭:১৬) আপনি আরও জানতে পারবেন, কেন যিশু, যাঁকে ঈশ্বর তাঁর রাজ্যের রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন, তিনি এই কথা বলেছিলেন: “আমার রাজ্য তো এই জগতের নয়।”—যোহন ১৮:৩৬.
আপনি এই আশার বিষয়ে জেনে উৎসাহিত হবেন যে, খুব তাড়াতাড়ি ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করবে আর তিনি যেমনটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই অনুযায়ী সমস্ত মানুষ চমৎকার আশীর্বাদ লাভ করবে।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
আপনি ভবিষ্যতের বিষয়ে আস্থা রাখতে পারবেন। আপনি এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারবেন যে, দেশে দেশে এই লড়াই-ঝগড়া পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারবে না।—গীতসংহিতা ৩৭:১১, ২৯.
দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী দেখায় যে, মূর্তির পা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের জোটই হল শেষ বিশ্বশক্তি, যেটা মানুষের উপর শাসন করবে। এর ঠিক পরেই আসবে ঈশ্বরের রাজ্য—এক নিখুঁত সরকার, যেটা স্বর্গ থেকে পৃথিবীর উপর শাসন করবে।
ঈশ্বরের রাজ্য মানবজাতির জন্য আরও কী কী করবে, তা জানার জন্য ঈশ্বরের রাজ্য কী? শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।
a “দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে কোন কোন বিশ্বশক্তির বিষয় বর্ণনা করা হয়েছিল?” নামক বাক্সটা দেখুন
b সিভিল সার্ভিস বলতে, “সমস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বোঝায়, যারা জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকে।”—মেরিয়াম-ওয়েবস্টারস্ আনঅ্যাব্রিজড্ ডিকশনারি।
c যিহোবা হল ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) “যিহোবা কে?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।