আইসক্রিমের ইতিহাস
আইসক্রিম তার উৎপত্তি কাল থেকে অনেক উন্নতি করেছে। প্রাচীন রোমীয়েরা সরবেট্ আবিষ্কার করেছিল। তুষার, ফল ও মধু দ্বারা প্রস্তুত অর্দ্ধ জমাট বাঁধা এই মিষ্ট খাদ্যটিকে অনেকসময় ধনীদের টেবিলে দেখা যেত। কাল অতিবাহিত হওয়ার সাথে সরবেট্ তার সম্পূর্ণ রূপ নেয় এবং মধ্যযুগের আরব বাবুর্চিদের হাতে সেটি সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেচে। সম্ভবত “সর্বেট্” এবং “শার্বেট্” (সরবৎ) শব্দের উৎস হল আরবী ভাষা।
বলা যেতে পারে যে সেই প্রাচীন সরবৎ প্রস্তুত হয়েছিল প্রধানত জল দিয়ে আর তা ছিল আধুনিক দিনের আইসক্রিমের পূর্বপুরুষ। দুধ, ডিম, চিনি ও সুগন্ধ উপাদান দিয়ে ক্রীমযুক্ত সুস্বাদু বস্তুটির প্রস্তুতির সাথে একটি পরিবর্তন আসে। আপনি যদি ১৬০০ শতাব্দীতে ফরাসী রাজা চতুর্দশ লুইয়ের রাজসভায় উপস্থিত থাকতেন তাহলে আপনি উচ্চবিত্ত সমাজে আইসক্রিমের প্রবেশ দেখতে পেতেন। সেই সময় ডাক্তার ও পণ্ডিতদের মধ্যে হজমের জন্য আইসক্রিম উত্তম কি না সেই নিয়ে বিবাদ ছিল।
আইসক্রিম জমাট বাঁধাবার জন্য কোন মেশিন না থাকলেও আইসক্রিম বানানো কিভাবে সম্ভব হয়েছিল? প্রথমে, কাঠ বা দস্তা নির্মিত দুটি পাত্র ব্যবহার করা হত, একটি অপরটির মধ্যে রাখা হত। আকারে ছোট পাত্রটির মধ্যে আইসক্রিম মিশ্রণটি প্রস্তুত করা হত আর দুটি পাত্রের মধ্যবর্তী অংশে বরফ ও লবণ ভরা হত। উপাদানগুলি মিশিয়ে পাত্রের মধ্যে রাখা হত আর আইসক্রিম তৈরি হয়ে যেত। কোথা থেকে বরফ এল? বহু শতাব্দী পূর্বে লোকে আবিষ্কার করে যে শীতকালে তুষার জমা করে গর্তে রেখে সেটিকে খড় ও ওক গাছের ডাল দিয়ে ঢাকা দিয়ে বরফ বানানো যেতে পারে। উনবিংশ শতাব্দীতে বরফ বানানোর মেশিন আবিষ্কার করা হয় এবং বৃহদাকারে প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়। ঘরে কাঠ এবং কর্কের তৈরি বরফের বাক্সে বরফ রাখা হত।
আইসক্রিম বানানোর কৌশলে এই শতাব্দী অনেক বেশি উন্নতি দেখেছে। ফ্রিজ, আইসক্রিম মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্র স্বাস্থ্যের উন্নত মানসহ ব্যবসায়িক ও ঘরোয়া আইসক্রিম প্রস্তুতিতে সাহায্য করে।
আইসক্রিম প্রস্তুতির শিল্পকলা
এক দক্ষ আইসক্রিম প্রস্তুতকারককে তার বৃত্তিকে জানা দরকার, যার অর্থ হল তাকে হতে হবে মিষ্টান্ন প্রস্তুকারক ও বাবুর্চি, অনেকসময় শিল্পী, কিছুটা রসায়নবিৎ ও ব্যাকটিরিয়াবিৎও। কিসের জন্য আইসক্রিম এত ঘন, ক্রীমযুক্ত ও সুস্বাদু হয়? উদাহরণস্বরূপ, ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রস্তুত আইসক্রিমের বিষয় বিবেচনা করুন। প্রস্তুতকালে, চর্বি ও তরি-তরকারি থেকে নিঃসৃত ঘন রস, মিশ্রণটিকে ঘন করতে মিশানো হয়। তার সাথে মিশানো হয় সঠিক পরিমাণে ডিম, চিনি ও প্রয়োজন হলে প্রাকৃতিক রং ও সুগন্ধ, যেমন কোকো, কফি ও ফলের সুগন্ধ। চিনেবাদাম-মাখনেরও আইসক্রিম আছে।
সেই নরম মিশ্রণটি ৭০° সেলসিয়াসে ভাল করে মিশানোর পর উপস্থিত কোন জীবাণুকে ধ্বংস করার জন্য সেটিকে ৯০° সেলসিয়াসে নিয়ে আসা হয়। কিছু ঘন্টার জন্য এটিকে ৪° সেলসিয়াসে ঠাণ্ডা করার পর এটি জমতে আরম্ভ করে। প্রণালীর দ্বিতীয় ধাপটি হল সম্পূর্ণ জমাট বাঁধানো। মিশ্রণটিকে আস্তে আস্তে নাড়াবার সময় তাপমাত্রা দ্রুত -৬° থেকে -১০° সেলসিয়াসে কমানো হয়। এতে মিশ্রণে বায়ু প্রবেশ করতে পারে, যা হল একটি কারণ যেটি আইসক্রিমকে সেই ক্রীমের রূপ দেয়।
রোমীয়েরা সরবেট্ উপভোগ করার পর ও চতুর্দশ লুইয়ের রাজসভায় আইসক্রিম পেশ হওয়ার পর বহু শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এরপরে আপনি যখন আপনার প্রিয় জমা মিষ্টান্নটি উপভোগ করবেন, তা সরবেট্ই হোক বা আইসক্রিম, তখন সেই প্রাচীন রোমীয়দের ধন্যবাদ দেবেন এই পরিতৃপ্তিকর কল্পনাটি আবিষ্কার করার জন্য! (g94 3/22)