ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • g৯৭ ৭/৮ পৃষ্ঠা ১৪-১৫
  • প্রবাল বিপদাপন্ন এবং বিলুপ্তির পথে

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • প্রবাল বিপদাপন্ন এবং বিলুপ্তির পথে
  • ১৯৯৭ সচেতন থাক!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • প্রাণবিহীন বিরঞ্জিত কঙ্কাল
  • প্রবাল প্রাচীরগুলিকে রক্ষা করতে কী করা যেতে পারে?
    ১৯৯৭ সচেতন থাক!
  • লোহিত সাগরের ঢেউয়ের তলায় বিস্ময়
    ১৯৯৪ সচেতন থাক!
১৯৯৭ সচেতন থাক!
g৯৭ ৭/৮ পৃষ্ঠা ১৪-১৫

প্রবাল বিপদাপন্ন এবং বিলুপ্তির পথে

ক্রান্তীয় অঞ্চল অপেক্ষা আর কোথাও সমুদ্র এত স্বচ্ছ নয়। স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ এবং নীল। ১৫ মিটার নিচের সাদা বালুময় তলদেশ এত কাছে মনে হয় যে আপনি তা স্পর্শ করতে পারেন! সাঁতারের ফ্লিপার এবং মুখোশ পরে নিন। বাতাস গ্রহণের নলগুলি সমন্বয় করে যখন আপনি উষ্ণ জলে ডুব দেবেন, তখন জলবুদ্‌বুদ্‌ এক মুহূর্তের জন্য আপনার দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দেবে। তারপর নিচের দিকে তাকান। এইতো এখানেই! দেখুন বড় বড় লাল ও নীল প্যারট মাছেরা প্রবালের উপর কামড়াচ্ছে এবং ছুড়ে ফেলছে, যা বালুময় তলদেশের অংশ হয়ে যায়। হঠাৎ, লাল, হলুদ, নীল, কমলা, বেগুনি ক্রান্তীয় মাছদের এক উজ্জ্বল রঙধনু ঝলসে উঠে। সর্বত্রই জীবন গতিশীল। তা আপনাকে অভিভূত করবে।

এটিই হচ্ছে প্রবাল অরণ্য। এইগুলি নিচের বালুময় তলদেশ হতে উৎপন্ন হয়ে, হাজার হাজার জীবন্ত বাহু প্রসারিত করে। ঠিক সামনেই ছয় মিটারের বেশি উঁচু এবং প্রায় একই প্রস্থবিশিষ্ট এল্‌কহর্ণ প্রবালের চমৎকার অবস্থান। প্রায় ২৩ মিটার দূরে, এল্‌কহর্ণের চেয়ে ছোট, স্ট্যাগ্‌হর্ণ প্রবালের, সরু শাখাগুলি অরণ্যের মত এলাকাটিকে পরিপূর্ণ করে রেখেছে। কী যথাযথভাবেই না এই প্রবালগুলির নামকরণ করা হয়েছে যেগুলি দেখতে, প্রায় পশুদের শিঙের মত! মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবেরা তাদের শাখাগুলির মধ্যে খাদ্য ও আশ্রয় খুঁজে পায়।

একসময়ে প্রবালকে জলজ উদ্ভিদের দ্বারা গঠিত বলে মনে করা হত, কিন্তু এখন তা চুনাপাথরের স্তরসমষ্টি হিসাবে পরিচিত যা পলিপ নামক প্রাণীগোষ্ঠীদের দ্বারা গঠিত। অধিকাংশ পলিপগুলি প্রস্থে ২.৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট। নরম দেহের প্রবাল কীট তার প্রতিবেশীর সাথে নিজেকে মিউকাস-আবৃত কোষ দ্বারা যুক্ত করে রাখে। দিনের বেলায় প্রবাল পাথরের মত দেখায়, কারণ পলিপগুলি নিজেদেরকে খাঁচার মধ্যে গুটিয়ে নেয়। কিন্তু রাতের বেলায় যখন এইগুলি রূপান্তরিত হয়ে তাদের প্রসারিত কর্ষিকাগুলি মৃদুভাবে দোলায় তখন তা প্রবাল প্রাচীরকে মসৃণ, অস্পষ্ট আকার দেয়। যে প্রস্তরময় “গাছ” পলিপগুলি ব্যবহার করে তা হল তাদের সংযুক্ত খাঁচা, যা সমুদ্রের জল হতে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দ্বারা পরস্পর যুক্ত।

প্রবাল গোষ্ঠীর প্রত্যেক শ্রেণী তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ খাঁচার আকার গঠন করে। সারা বিশ্বে বিস্ময়কর আকারের, মাপের ও বর্ণের ৩৫০ এর অধিক বিভিন্ন শ্রেণীর প্রবাল রয়েছে। তাদের প্রচলিত নামগুলি আপনাকে স্থলের বস্তুগুলিকে স্মরণ করিয়ে দেয় যেমন: গাছ, স্তম্ভ, টেবিল, বা ছাতা প্রবাল অথবা উদ্ভিদগুলি যেমন: কার্নেশন, লেটুস, স্ট্রবেরী, বা মাশ্‌রূম প্রবাল। মস্তিষ্কের আকারবিশিষ্ট ঐ বৃহৎ প্রবালকে দেখুন। কিভাবে এইগুলির নামকরণ করা হয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়।

জলের নিচে এই অরণ্যে আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ এবং প্রাণী থেকে শুরু করে রে মাছ, হাঙ্গর, বৃহৎ মোরে বান এবং কচ্ছপ সহ প্রচুর জীব রয়েছে। আর এখানে কিছু মাছ রয়েছে যেগুলির নাম আপনি হয়ত কখনও শোনেননি যেমন: উজ্জ্বল হলুদ ক্লাউন মাছ, বেগুনি বিউ গ্রেগরি, সাদাকালো মূরিশ্‌ আইডল, কমলা ট্রামপেট, গাঢ় নীল সারজিওন, ইনডিগো হ্যামলেট অথবা বাদামী ও তামাটে লায়ন। আর বার্‌বারশপ্‌ শ্রিম্প, পেইন্টেড্‌ লবস্টার বা গাঢ় লাল হক্‌ সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? সর্বপ্রকারের বর্ণ, মাপ এবং আকারের সমাহার। কয়েকটি সুন্দর, কয়েকটি উদ্ভট, কিন্তু সবগুলিই আগ্রহজনক। দেখুন, সেখানে একটি অক্টোপাস স্তম্ভ প্রবালের পিছনে লুকিয়ে আছে! এটি একটি ঝিনুক খুলে খাচ্ছে। স্থলভাগের অরণ্যের মত, এই সামুদ্রিক পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের জীবন পরস্পরের সঙ্গে জড়িত এবং এর সবগুলিই প্রবাল অরণ্যের বৈচিত্র্যর উপর নির্ভরশীল। ১৯৯১ সালের জুন ৮ সংখ্যার সচেতন থাক! (ইংরাজি) পত্রিকায় প্রবালের প্রজনন চক্র এবং নতুন প্রাচীর সমষ্টি গঠন করতে সমুদ্রের জলে এর চলার ক্ষমতা সম্বন্ধে পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হয়েছিল।

প্রবাল প্রাচীর হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জৈবিক গঠন। এদের মধ্যে একটি, গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ্‌ যা অষ্ট্রেলিয়ার উত্তরপূর্ব উপকূলের অদূরে অবস্থিত, ২,০১০ কিলোমিটার প্রসারিত এবং ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের যৌথ পরিমাণ এলাকাকে বেষ্টন করে আছে। একটি প্রবাল কয়েক টন ওজনের এবং সমুদ্র তল হতে নয় মিটারের অধিক উচ্চতাবিশিষ্ট হতে পারে। প্রবাল প্রাচীর সব অগভীর ক্রান্তীয় অঞ্চলের জলে ৬০ মিটার গভীরে জন্মাতে পারে। তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন, তাই বিশেষজ্ঞরা একটি প্রবাল পরীক্ষা করে সমুদ্র এবং এমনকি যে স্থানে সেটি জন্মেছে সেই স্থানকেও চিহ্নিত করতে পারেন। প্রবাল প্রাচীরের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জলে সীমিত পুত্ত্রষ্টকর পদার্থ থাকা, যা ব্যাখ্যা করে যে তাদের চারিপাশের এলাকায় সমুদ্র কেন এত অসাধারণভাবে স্বচ্ছ। পলিপগুলির আলোকভেদ্য দেহে বসবাসকারী শৈবাল (বৈজ্ঞানিকভাবে জুঅক্সানথেলা বলা হয়) আর এছাড়াও প্রবালের কর্ষিকায় আটককৃত আণুবীক্ষণিক প্রাণীরা প্রবালের পুত্ত্রষ্ট সরবরাহ করে থাকে। এর ফলে, অন্যথা আশ্রয়হীন সমুদ্রে, হাজার হাজার সামুদ্রিক প্রজাতির একটি আবাসস্থল সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও প্রবাল প্রাচীর সমস্ত সামুদ্রিক বাস্তব্যতন্ত্রের বৃহত্তম জৈবিক উৎপাদক। ইউ.এস.নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট এটিকে এইভাবে বর্ণনা করেছিল: “সামুদ্রিক প্রাচীরগুলি ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল বনভূমির সমতুল্য, যেখানে প্রচুর জীবন্ত প্রাণী রয়েছে যেমন: তরঙ্গায়িত সী ফ্যান এবং সী হুইপ, পালকতুল্য ক্রিনয়েড, উজ্জ্বল বর্ণের মাছ এবং স্পঞ্জগুলি, বাগদা চিংড়ি, গলদা চিংড়ি ও তারা মাছ, এবং ভয়ংকর হাঙর ও দৈত্যাকৃতি মোরে বান মাছ। সকলেই স্বাভাবিক বিচরণের জন্য প্রবালের ক্রমাগত উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল।” এছাড়াও প্রবাল প্রাচীর আঘাতকারী ঢেউ এবং উপকূলের মধ্যে দেওয়াল তৈরি এবং ক্রান্তীয় দ্বীপগুলির ভিত্তি স্থাপন করার দ্বারা স্থলের প্রাণীদের সাহায্য করছে।

আলোকভেদ্য প্রবাল-কীট পোষকের মধ্যে বসবাসকারী শৈবালের ধরনের উপর ভিত্তি করে, সুস্থসবল প্রবাল বাদামী, সবুজ, লাল, নীল অথবা হলুদ বর্ণের হয়। তাদের পুত্ত্রষ্টর জন্য, শৈবাল জাতীয় আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ তাদের মিথোজীবী প্রাণীদের মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত সূর্যালোক শক্তি ব্যবহার করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড সহ, পলিপগুলির বর্জ্য পদার্থ শুষে নেয়। একই সঙ্গে শৈবাল সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে প্রবালের কোষগুলির জন্য অক্সিজেন, খাদ্য এবং শক্তি যোগায়। শৈবালের সাথে এই অংশীদারিত্ব প্রবালকে আরও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে এবং পর্যাপ্ত পুত্ত্রষ্টবিহীন ক্রান্তীয় জলে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এরা উভয়েই উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগতের সর্বাধিক উপকারিতা উপভোগ করে। কী এক দক্ষতাপূর্ণ ও বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনা!

প্রাণবিহীন বিরঞ্জিত কঙ্কাল

এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে সমুদ্রের তলদেশ এত প্রাণবন্ত! কিন্তু ওটি কী? প্রাণবিহীন বিরঞ্জিত কঙ্কাল। শাখাগুলি ভেঙ্গে গেছে এবং টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে। কয়েকটি ইতিমধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। প্রবাল অরণ্যের এই অংশ বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তির পথে। কোন মাছ নেই। বাগদা চিংড়ি নেই। গলদা চিংড়ি নেই। কোন কিছুই নেই। এটি জলের নিচের মরুভূমি। অবিশ্বাসে আপনি তাকিয়ে থাকেন। কী এক প্রচণ্ড আঘাত! আপনার মনোরম অভিজ্ঞতা নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি যখন আপনি নৌকায় ফিরে আসেন, তখনও ভ্রান্তিজনক প্রশ্নগুলি থেকে যাবে। কী কারণে এইসব ধ্বংস হয়েছে? কোন দুর্ঘটনা? রোগ? প্রাকৃতিক কারণ? আপনি উত্তরগুলি চান।

যদিও প্রস্তরতুল্য প্রবালকে দৃঢ় মনে হয় কিন্তু এটি অত্যন্ত ভঙ্গুর। মানব স্পর্শ ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই অভিজ্ঞ সাঁতারুরা এটিকে স্পর্শ করা এবং সতর্ক নৌকাচালকেরা এটির উপর নঙ্গর ফেলাকে এড়িয়ে চলে। প্রবালের জন্য অন্যান্য বিপজ্জনক বিষয়গুলি হল রাসায়নিক দূষণ, সমুদ্রে তেল পড়া, পয়ঃনিষ্কাশন, জলে গাছের গুঁড়ি ভাসানো, জমি হতে কীটনাশক ও সারের নিঃসরণ, পলি নিষ্কাশন, তলানি জমা এবং বিশুদ্ধ জলের অবাঞ্চিত প্রবেশ। নৌকার তলির দ্বারা সরাসরি সংঘর্ষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। আর অত্যধিক বা অতি নিম্ন তাপমাত্রা প্রবালের ক্ষতি ও ধ্বংস করতে পারে। চাপের সম্মুখীন হলে, প্রবাল তার শৈবালগুলিকে ঘন মেঘের মত বের করে দেয় এবং মাছ এইগুলিকে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলে। যদি এই চাপ কয়েক সপ্তাহ অথবা কয়েক মাস বজায় থাকে, তবে বিরঞ্জন ক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং প্রবাল বিলুপ্ত হয়ে যায়। যখন প্রবাল বিলুপ্ত হয়ে যায় তখন প্রাচীরের পরিবেশও বিলুপ্ত হয়। প্রবালের উপর জীবজগৎ বিচ্ছিন্ন এবং অদৃশ্য হয়ে যায়।

বিরঞ্জন ক্রিয়া ক্রান্তীয় সমুদ্রের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ, সারা বিশ্বে সমুদ্র বিজ্ঞান সম্প্রদায়ে বিপদসংকেত ধ্বনিত হয়। অতিমাত্রায় বিরঞ্জন ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ায় যে ক্ষতি হয় তা অপূরণীয়। সম্প্রতি বছরগুলিতে পৃথিবীর ক্রান্তীয় সমুদ্রের সর্বত্র কী ঘটছে তার দ্বারা প্রবালের বিরঞ্জন ক্রিয়ার বিস্তার এবং এর ফলস্বরূপ সেইগুলির বিলুপ্তি বেদনাদায়কভাবে বিশ্বের সামনে প্রকাশ পেয়েছে। যদিও বহু বছর যাবৎ প্রবালের বিরঞ্জন ক্রিয়া নির্দিষ্ট এলাকায় মাঝে মাঝে সংঘটিত হয়ে আসছে, তবুও সম্প্রতি কালের প্রাদুর্ভাব নজিরবিহীনভাবে তীব্র এবং বিশ্বব্যাপী প্রসারিত। কিছু বিষয় পৃথিবীব্যাপী অধিকাংশ প্রজাতির জীবিত প্রবালগুলিকে আক্রমণ করছে, যার দরুন প্রবাল-প্রাচীর পরিবেশের ধ্বংস আসন্ন।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার