সাপ সম্বন্ধে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলি
ভারতের সচেতন থাক! সংবাদদাতা কর্তৃক
একটি মেয়ে তার চুলে জুঁই ফুল লাগিয়ে আপন মনে চলছিল আর একটি পিচ্ছিল গোখুরা সাপ ফুলের গন্ধে প্রলুব্ধ হয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছিল। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো এর লম্বা শরীর তরঙ্গায়িত হচ্ছিল। সেইসময় মেয়েটি এর মাথার উপর একটি নাগমণি জ্বলজ্বল করতে দেখে আর গোখুরা সাপটি এর সম্মোহিত দৃষ্টির মাধ্যমে মেয়েটিকে নিথর করে ফেলে। আর হঠাৎই, এটি লাফ দিয়ে তার হাতে এর বিষদাঁত ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
সত্য ঘটনা নাকি ভ্রান্ত ধারণা? উপরে বর্ণিত সম্পূর্ণ বিবরণটি মিথ্যা, প্রচলিত ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে তুলে ধরা এক চিত্র। এই ভ্রান্ত ধারণার কয়েকটি বিবেচনা করুন।
১. জুঁই ফুল, চন্দনকাঠ আর অন্যান্য সুগন্ধ সাপদের আকর্ষণ করে। মিথ্যা। সুগন্ধ পোকা-মাকড় আকর্ষিত হয়, পোকা-মাকড় দেখে ব্যাঙেরা আকর্ষিত হয় আর ব্যাঙ দেখে সাপেরা আসে যেটি তাদের খাদ্যের একটি অংশ।
২. সাপেরা তাদের দেহকে খাড়াভাবে তরঙ্গায়িত করার দ্বারা চলাচল করে। মিথ্যা। সাপেরা যখন বড় বড় পাথরের উপর দিয়ে চলাচল করে তখন এইরকম দেখতে লাগে কিন্তু গোখুরা সাপ ও অন্যান্য স্থলচর সাপেরা সাধারণত ভূমির সঙ্গে সমান্তরালভাবে সোজা লাইন ধরে চলে। তারা হয়তো তাদের দেহের অগ্রভাগ সামনে প্রসারিত করে ও পশ্চাদভাগ টেনে নিয়ে আসে নতুবা ভূমির উপর যে কোন অভিক্ষিপ্ত অঙ্গের সাহায্যে, পার্শ্বাভিমুখে ও সম্মুখে ধাক্কা দেয় যার ফলে এটিকে ইংরেজি বর্ণ S এর মতো দেখায়।
৩. কিছু সাপের মাথায় এক মূল্যবান মণি আছে। মিথ্যা। এটি একটি পৌরাণিক কাহিনী, এছাড়াও বিশ্বাস করা হয় যে গোখুরা সাপ প্রাচীন ভারতের মহাপুরুষদের রক্ষা করত।
৪. গোখুরা সাপ তাদের শিকারকে সম্মোহিত করে। মিথ্যা। সাপেরা সাধারণত ভয় পেলে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তাই মানুষের মনে এই ধারণাটি গড়ে উঠেছে যে যখন তারা একটি সাপের সম্মুখীন হয় সাপটি তাদের সম্মোহিত করার মতো স্থিরদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এটা তাদের শিকার ধরার কোন পন্থা নয়।
৫. গোখুরা সাপেরা তাদের শিকারের দিকে সজোরে লাফ দেয়। মিথ্যা। গোখুরা সাপ তার শিকার ধরার জন্য এর দেহের অগ্রভাগ সম্মুখে ছুঁড়ে দেয় কিন্তু তার দেহকে আঁটকে রাখার জন্য এর অধিকাংশই ভূমির উপরই থাকে। খুব বেশি হলে এটি এর দেহের এক তৃতীয়াংশ উঁচু করে তোলে ও আক্রমণ করে।
৬. গোখুরা সহ অন্যান্য সাপের ত্বক পিচ্ছিল ও সবসময় ঠাণ্ডা হয়। মিথ্যা। সাপের ত্বক, আঁশযুক্ত খোলস দিয়ে ঢাকা থাকে তা শুষ্ক আর স্পর্শ করলে নরম চামড়ার মতো মনে হয়। সাপেরা শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণি; তাদের দৈহিক তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
৭. গোখুরা সাপেরা বধির। মিথ্যা। অনেকের এই ভুল ধারণা রয়েছে। এই লোকেরা মনে করেন যে সাপেরা কেবল ভূমির স্পন্দন থেকে শুনতে পায় যা এর দেহের মধ্যে প্রবাহিত হয়। গীতসংহিতা ৫৮:৪, ৫ পদে বাইবেল যথার্থরূপে ইঙ্গিত দেয় যে গোখুরা সাপ বধির নয়। সাম্প্রতিক গবেষণা দেখিয়েছে যে গোখুরা বাতাসে প্রবাহিত শব্দ শুনতে পায় আর সেইজন্য তারা সাপুড়ের বাজনায় সাড়া দেয়।—এছাড়াও ১৯৯৩ সালের ৮ই নভেম্বর সচেতন থাক! (ইংরাজি) পত্রিকার ৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
উপরের সাপটি: Animals/Jim Harter/Dover publication, Inc.