ডেড সী স্ক্রোল অভূতপূর্ব সম্পদ
ওয়াদি কুমরানের পদতলে, লোহিত সাগরের উত্তরপূর্ব দিকে, কিছু প্রাচীণ ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত রয়েছে। বহু দিন ধরে প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করে যে তা একটি রোমীয় দুর্গের অবশিষ্টাংশ ও তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। ১৯৪৭ সালে ডেড সী স্ক্রোলের আবিষ্কার অবশ্য তাদের সেই স্থানটি পুনর্বিবেচনা করে দেখতে উৎসাহ দিল।
শীঘ্রই বিজ্ঞানীরা সেই দুর্গটিকে যিহুদীদের একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্পত্তি বলে সনাক্ত করল। সঙ্গে সঙ্গে অনুমান করা হল যে এই ব্যক্তিরা কাছের গুহাতে পাণ্ডুলিপিগুলি লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু পরবর্তী আবিষ্কার এই ধারনার প্রতি সন্দেহ জাগায়।
এক অভূতপূর্ব আবিষ্কার
যে পাণ্ডুলিপিগুলি তারা ইতিমধ্যে পেয়েছে তার মুল্য সম্বন্ধে বেদুইনরা সচেতন ছিল। তাই, ১৯৫২ সালে, যখন এক বৃদ্ধ লোক জানায় যে ছোটবেলায় সে একটি আহত পাট্রিজ পাখিকে তাড়া করে যতক্ষণ না সেটি পাহাড়ের গায়ে একটি ফাটলের মধ্যে ঢুকে যায়, যেখানে সে কিছু মাটির পাত্র ও প্রাচীণ একটি তেলের বাতি দেখতে পায়, তখন আবার নতুন করে খোঁজা শুরু হয়।
বৃদ্ধ লোকটি এখনও পাহাড়ের বহু গভীর খাঁজের মধ্যে সেইটিকে চিনতে পেরেছিল। দেখা যায় যে সেটি একটি মনুষ্যনির্মিত গুহা, এখন যা কেভ ৪ নামে চিহ্নিত। সেখানে বেদুইনটি পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ খুঁজে পায় তখনকার জমির কয়েক ফুট নিচে। কোন অংশই পাত্রে ভরে রাখা হয়নি, তাই বেশীর ভাগ খুব জীর্ণ, কালো ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। পরবর্তীকালে প্রায় ৪০,০০০ টুকরো খুঁজে পাওয়া যায়, প্রায় ৪০০ পাণ্ডুলিপির অংশ। একশ বাইবেল পাণ্ডুলিপির মধ্যে ইষ্টের ছাড়া ইব্রীয় শাস্ত্রের সমস্ত বইয়ের কিছু অংশ তাতে রয়েছে। কেভ ৪ থেকে প্রাপ্ত অধিকাংশ বস্তুই এখনও প্রকাশিত করা হয়নি।
একটি গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপি শমূয়েলের পুস্তক, একটিমাত্র পুঁথিতেই লেখা। এর ইব্রীয় লেখা, সম্ভাব্য ৫৭টির মধ্যে যে ৪৭টি অবশিষ্ট আছে, গ্রীক সেপ্টুয়াজিন্ট সংস্করণের অনুবাদকরা যা ব্যবহার করেছে তার সঙ্গে অনেকটা মেলে। লেবীয়পুস্তক ও গণনাপুস্তকের গ্রীক সেপ্টুয়াজিন্টের টুকরোও আছে, যা খ্রীষ্ট পূর্ব প্রথম শতাব্দীর লেখা। লেবীয়পুস্তক IAO ব্যবহার করে, ইব্রীয় חרחי, ঈশ্বরের নাম হিসাবে, গ্রীক কাই’রি·ওস, “প্রভুর” বদলে।a
দ্বিতীয় বিবরণের একটি জায়গায়, ইব্রীয় লেখার একটি অংশ অধ্যায় ৩২, পদ ৪৩ অন্তর্ভুক্ত করে, যা সেপ্টুয়াজিন্ট-এ পাওয়া যায় ও যেখান থেকে ইব্রীয় ১:৬ উদ্ধৃতি করে: “ঈশ্বরের সকল দূত ইহাঁর ভজনা করুক।” এই প্রথম কোন ইব্রীয় পাণ্ডুলিপিতে এই লাইনের উল্লেখ আছে, ও এই শাস্ত্রটি প্রত্যক্ষরূপে গ্রীক অনুবাদকে সমর্থন করছে। গবেষকরা তাই সেপ্টুয়াজিন্ট-কে বুঝতে নতুন সাহায্য পেয়েছে, যেখান থেকে খ্রীষ্টিয় গ্রীক শাস্ত্রে বহুবার উদ্ধৃতি করা আছে।
যাত্রাপুস্তকের একটি লিপির সময় ধার্য্য করা হয়েছে খ্রীষ্ট পূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর তৃতীয় চতুর্থাংশের দিকে, শমূয়েলের বই সেই একই শতাব্দীর শেষের দিকে, ও যিরমিয়র একটি পুস্তক ২২৫ ও ১৭৫ সাধারণ শতাব্দী পূর্বের মধ্যে। তৃতীয় থেকে প্রথম শতাব্দীর মধ্যে যথেষ্ট লিপি পাওয়া গেছে যার থেকে লেখার ধরণ ও ইব্রীয় ও অ্যারামিক বর্ণমালার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, পাণ্ডুলিপির সময় নির্ণয় করতে ইহা খুবই মূল্যবান।
কেভ ১১-র বিস্ময়
প্রকৃতপক্ষে, কুমরানের কাছাকাছি সমস্ত জায়গা স্থানীয় বেদুইনরা ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা, ভালভাবে খুঁজেছে। তবুও, ১৯৫৬ শালের এক দিন, কয়েকজন বেদুইন লক্ষ্য করে কেভ ১-এর উত্তর দিকে পাহাড়ের ফাটল থেকে বাদুড়দের বেরিয়ে আসতে। ওপরে উঠে তারা আরেকটি গুহা দেখতে পায়, যার প্রবেশপথ রুদ্ধ ছিল। দুই টন গড়িয়ে পড়া পাথর সরিয়ে সেটিকে মুক্ত করতে হয়। ভিতরে যা পাওয়া যায় তা অত্যাশ্চর্য্য—দুটি সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি ও অন্য কিছুর পাঁচটি বড় টুকরো।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল গীতসংহিতার একটি সুন্দর পাণ্ডুলিপি। চামড়ার ঘনত্ব দেখে বোঝা যায় যে সেটি হয়তো বাছুরের চামড়া, ছাগলের নয়। পাঁচটি পাতা, চারটি আলগা পাতা, ও চারটি টুকরো, সর্বসমেত সেটি দৈর্ঘ্যে ১৩ ফুটেরও বেশী। যদিও পাণ্ডুলিপির উপরিভাগ ভালভাবে সংরক্ষিত আছে, শেষের অংশ বেশ জীর্ণ হয়ে পড়েছে। ইহার সময় খ্রীষ্টাব্দ প্রথম শতাব্দীর প্রথম দিকে ও ৪১টি গীতের অংশ এর অন্তর্ভুক্ত। টেট্রাগামাটন প্রায় ১০৫ বার প্রাচীণ প্যালেও-ইব্রীয় অক্ষরে লেখা রয়েছে, যাতে অন্য চৌকো লেখার থেকে সেটি বেশী দৃষ্টিগোচর হয়।
আরেকটি লেবীয়পুস্তকের পাণ্ডুলিপি, সম্পুর্ণ প্রাচীণ ইব্রীয় অক্ষরে লেখা, কিন্তু কেন তা এখনও ভালভাবে জানা যায় নি। এই ধরনের লেখার এটিই বৃহত্তম নিদর্শন, যা ব্যবহৃত হত যখন যিহুদীরা সপ্তম শতাব্দী খ্রীষ্টপূর্বে বাবিলনে বন্দীত্বে ছিল।
তারজুমের একটি নকল করা লিপি, ইয়োবের পুস্তকের অ্যারামিক সংক্ষিপ্ত বিবরণও পাওয়া যায়। ইহা লিখিত তারজুমগুলির প্রাচীণতমদের মধ্যে একটি। বিভিন্ন গুহায় বিভিন্ন বাইবেল বইয়ের ওপর বিবরণীও পাওয়া যায়। কিভাবে এই পাণ্ডুলিপিগুলি এই গুহাগুলিতে এত ভালভাবে গুপ্ত রাখা হয়?
যেমন পূর্বে উল্লিখিত, কিছু হয়তো কুমরান সম্প্রদায়ের লোকেরা লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু প্রমাণ অনুযায়ী, ইহা সম্ভব যে বেশীর ভাগ পাণ্ডুলিপি যিহুদীরা সেখানে রেখেছিল ৬৮ খ্রীষ্টাব্দে রোমানদের যীহুদা আক্রমণ থেকে পালাবার সময়, প্রকৃত ধ্বংস আসার দুই বছর পূর্বে। পাণ্ডুলিপিগুলি নিরাপদ রাখার জন্য যীহুদার পার্বত্য অঞ্চলে শুধুমাত্র কুমরানের গুহা নয়, কিন্তু উত্তরে বহু মাইল দূরে যেরিকোর আসেপাশে, এবং দক্ষিণে মাসাডার কাছের জায়গাও যোগ্য ছিল। এইগুলি সংরক্ষিত রাখার জন্য আমরা কত কৃতজ্ঞ! যিহোবার অনুপ্রাণীত বাক্য যে অপরিবর্তনশীল তার আরও প্রমাণ এগুলি। সত্যই, “আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে।”—যিশাইয় ৪০:৮।
[পাদটীকাগুলো]
a রেফারেন্স বাইবেল, অ্যাপেণ্ডিক্স 1C (5) ও লেবীয়পুস্তক ৩:১২ পদের ফুটনোট দেখুন, যেখানে পাণ্ডুলিপিটিকে 4Q LXX Lev/b হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
[৩২ পৃষ্ঠার বাক্স]
শীঘ্রই আরও কিছু জানা যাবে?
যদিও কয়েক দশক আগে আবিষ্কৃত হয়েছে, ডেড সী স্ক্রোলগুলির অধিকাংশই এখনও অপ্রকাশিত রয়েছে। ডিসেম্বর ২৩, ১৯৯০ সালের নিউ ইয়র্ক টাইমস্ অভিযোগ করে: “এমনকি এগুলির চিত্রও কিছু ছাত্রদের দল আটক করে রেখেছে যারা তাদের সহকর্মীদের প্রত্যাখান করেছে ও তাদের আয়ত্বে থাকা অধিকাংশ বিষয় প্রকাশিত করতে অস্বীকার করেছে।” সংবাদপত্রটি অবশ্য উল্লেখ করে যে সম্প্রতি সম্পাদকীয় সদস্যদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে যা হয়তো “এই পাণ্ডুলিপিগুলি প্রকাশ্যে নিয়ে আসবে . . . ও জগৎ ইতিহাসের এক অত্যাশ্চর্য্য কাল সম্বন্ধে আরও কিছু জানতে পারবে।”
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.